ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

ফের সচল হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ এএম
গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ফের সচল হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলছে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি। যদিও বিচারকশূন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ কয়েক মাস ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে গত ১৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলেই আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। 

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে গত রবিবার নতুন চিফ প্রসিকিউটরসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর যোগদান করায় তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। অভিযোগের সূত্র ধরে গণহত্যার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে হতাহতদের তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বড় বড় কবরস্থান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হচ্ছে। 

অবশ্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অন্তত ৬৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

গণহত্যার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আসামি পক্ষ প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আইনজীবী আনলেও প্রসিকিউশন পক্ষ আপত্তি করবে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

তিনি গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে শেখ হাসিনাসহ গণহত্যা মামলার আসামিরা চাইলে বিদেশি আইনজীবী রাখতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন টিমের কোনো আপত্তি থাকবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রসিকিউশন টিমের যা যা করা দরকার, সেটা করবে। প্রসিকিউশন টিম কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতাল পরিচালকদের কাছেও তথ্য চাওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে জেলা প্রশাসক, গণমাধ্যম, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা ভিডিও-ছবির জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করার জন্যই এই উদ্যোগ। যাতে করে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকে। ক্ষতিগ্রস্তরা এই গণহত্যার বিচারের জন্য মুখিয়ে আছেন। সাক্ষীরাও আগ্রহী। আলামত তাজা থাকতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। সে সময় মামলার তদন্ত ও বিচারকাজে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও তৈরি হয়। বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এ সময়ের মধ্যে অনেক আলোচিত মামলার রায় হয় এবং সেসব রায় কার্যকর করা হয়। 

গত ১৪ বছরে ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় ১৪৯ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ৬ জনের। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ৫ জন এবং একজন বিএনপির নেতা। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে স্থবিরতা তৈরি হয় গত বছরেই। সর্বশেষ চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নকলার তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সেই সময় ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার চলছিল। এরপর আর কোনো মামলার বিচারকাজ পরিচালনা হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের মধ্যে একজন অবসরে যান, আরেকজনকে হাইকোর্টে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং সর্বশেষ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ-পিআরএল ভোগরত) এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া গত ২৭ আগস্ট অব্যাহতি নিলে বিচারকাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়। 

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী ও বেশ কিছুসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ১১টি অভিযোগ দায়ের হয়। এরপর তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম পুনরায় জোরদার হয়। বিচারকাজ শুরু করতে এখন অপেক্ষা শুধু বিচারক নিয়োগের। 

এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান এ বছর শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুদককে এবার সেই ভেন্যু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ শিল্পকলার নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। 

বিষয়টি জানতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কয়েকবার সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল আলম মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগের কারণ জানতে চান। 

শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদককে ‘না’ করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলে সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) দুদকের ডিজি পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা শিল্পকলার ডিজি স্যারের কাছে এসেছিলেন। স্যার (ডিজি) তাদের বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’ এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন সোহেল আলম। 

এদিকে শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলার ডিজি সেখানকার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদক কর্মকর্তাদের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করেছেন। দুদকের এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এসব শোনার পরও শিল্পকলার ডিজি বলেছেন, আল্লাহর ফেরেশতা নেমে এলেও মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন না পাওয়ায় দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা রবিবারেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের কয়েকটি মিলনায়তন পরিদর্শন করে এসেছেন। প্রতিবছর শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ জনের আয়োজন করা যায় এবং সেটি দুদক প্রধান কার্যালয়সংলঘ্ন ছিল।

আবুল কালাম আজাদ আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক অনেক মন্ত্রী-আমলা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কিছু কথা জানিয়েছেন।

সাবেক আমলা আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ এলাকায় ভুরিভোজের আয়োজন করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। 

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী বা এমপি অথবা কোনো উপদেষ্টার দলীয় প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করার সুযোগ ছিল না। দলীয় প্ল্যাটফর্মে কেউ খোলাখুলি মতামত দিলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হতো। এ জন্য কেউ মুখ খুলতেন না। শেখ হাসিনা দল ও সরকার পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটাই সবাই অনুসরণ করতেন। 

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমলারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন। তারা কোনো মন্ত্রীর কথা শুনতেন না। এমপিদের পাত্তা দিতেন না। একাধিক মন্ত্রী ও এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এতে দিন দিন সচিবরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আবুল কালাম আজাদের মামলার তদন্তের কাজে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গত শনিবার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে পল্টনে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করেন পল্টন থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘আবুল কালাম আজাদকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আবুল কালাম আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেননি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি সেগুলো জানার চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, ১৪ সালের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশের তদবির বেড়ে যায়। তার কাছেও কয়েকজন কর্মকর্তা ডিএমপিসহ আরও কয়েকটি জেলায় বদলির সুপারিশের জন্য এসেছিলেন। পরে ওই সব কর্মকর্তার সুপারিশের জন্য তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পুলিশ তদবিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের কাছে আসত। তিনি কয়েকজনের বদলির জন্য সুপারিশ করলেও ধনঞ্জয়ের জন্য তা হয়নি বলে দাবি করেন। গতকাল সচিবালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর ধনঞ্জয় আর সচিবালয়ে আসেন না। 

তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আবুল কালাম আজাদ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, পল্টন থানার যে হত্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক ছিলেন। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক বলে তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্মে তিনি তার মতামত বলতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। তবে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন যে অন্যদের মতো তার দেশ ছাড়ার কোনো উদ্যোগ ছিল না।

সুস্থ হতে যুদ্ধ চলছে এমদাদের

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
সুস্থ হতে যুদ্ধ চলছে এমদাদের
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চোখ হারিয়েছেন এমদাদ

‘আমার এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে আমার দুঃখ নেই। নিজের জন্য চিন্তা করি না। কষ্টের জায়গা হচ্ছে, আমার ভাইয়েরা এখন সরকারে আছে। তবুও আহত ভাইদের চিকিৎসার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরও সুরাহা পেলাম না। কষ্টের জায়গাটা এখানেই।’ 

আক্ষেপের সুরে সোমবার (৭ অক্টোবর) কথাগুলো বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান চোখ হারানো রাজধানীর সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ। তিনি চট্টগ্রামের চকবাজার ডিসি রোড এলাকার মো. বেল্লাল হোসেন ছেলে। 

আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে আঘাতপ্রাপ্ত বামহাতে গামছা পেঁছিয়ে পুলিশের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে তর্ক করছি। এ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন থেকেই পুলিশ আমাকে টার্গেট করে। পরে আমি চট্টগ্রামে চলে আসি। এরপর আমাকে আটকের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার মেসে এবং চট্টগ্রামের বাসায় কয়েকবার খোঁজ নেয়। তার পরও আমি চট্টগ্রামে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিউমার্কেট মোড়ে পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়া থেকে রক্ষা পেলেও রাবার বুলেট থেকে বাঁচতে পারিনি। বুলেটের আঘাতের পর একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। প্রাথমিক চিকিৎসায় আমার জ্ঞান ফিরে। তবে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বুলেটের ক্ষত সারাতে হাসপাতালে যাইনি। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। এরপর ৫ আগস্ট বিজয়ের দিন আমি মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। বিকেলে দামপাড়া পুলিশলাইনস এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের এক দফা সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, এমনকি গুলিও করে। অনেক সাধারণ মানুষ ছিল যারা চায়নি পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘাত হোক। তারা গেটে গিয়ে হিউম্যান চেইন তৈরি করে, জনতাকে পুলিশলাইনসের ভিতরে যেতে বাধা দেন। একপর্যায়ে পুলিশ এগ্রেসিভ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গুলি করে। এ সময় আমি পাশের পেট্রলপাম্পের একটি পিলারের পাশে গিয়ে আশ্রয় নিই। লাইনস থেকে পুলিশ বের হয়ে আমাকে একা পেয়ে যায়। আমাকে লক্ষ্য করে পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এরপর পুলিশের এক সদস্য গুলি করে। এতে আমি গুলিবিদ্ধ হই। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে আমি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। পরে ঢাকার পিজি হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ, ল্যাবএইড হাসপাতাল, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, জাতীয় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।

এমদাদ বলেন, ‘আমি এখন ডান চোখে দেখি না। চিকিৎসকরা চোখের বিষয়ে বলেছেন, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তুমি ডান চোখে দেখবে পাবে না। চিকিৎসকরা চান অন্তত চোখটি যেন কেটে ফেলে দিতে না হয়। তারা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন।’

চিকিৎসা খরচ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে এক টাকাও না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ২০ সেপ্টেম্বর আমি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমার ৩ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তবে টাকা পায়নি। এটা (টাকা) যদি সঠিক সময়ে দেওয়া না হয়, তাহলে কোনো কাজে আসবে না। আমি আমার কথা বলছি না। আমি বলছি আহত সব সহযোদ্ধার কথা। এখানে অনেক আহত আছেন, যাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো প্রয়োজন। তা না হলে তাদের অঙ্গহানি হবে। নতুবা মৃত্যুবরণ করবে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা সহযোগিতা করা অতীব জরুরি। আমার আহত ভাইরা যদি বিনা চিকিৎসায় হারিয়ে যায়, পরে হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা কি করব?’

স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা
ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পগুলো এখন হয়ে গেছে গলার কাঁটা।

কথা ছিল এ বছরের অক্টোবরে অর্থাৎ চলতি মাসেই ‘স্বল্প পরিসরে’ চালু হবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো বিগত সরকারের এই মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে ২০২৬ সাল লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল অঙ্কের বাজেটের এ প্রকল্পের বিদেশি ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে আগামী ডিসেম্বর থেকেই। তাই সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো এ মেগা প্রকল্পই যেন এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে তাড়াহুড়ো করে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং (একাংশের উদ্বোধন) করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন জানানো হয়েছিল, ২০২৩ সালের শেষে পরীক্ষামূলকভাবে আর ২০২৪ সালের শেষ ভাগে পুরোদমে শুরু হবে টার্মিনালের কার্যক্রম। পরে গত ৩০ মে সরেজমিন পরিদর্শন গিয়ে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছিলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে স্বল্প পরিসরে চালু হবে। ওই সময় পর্যন্ত টার্মিনাল ভবনের ৩ শতাংশের মতো কাজ বাকি আছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

বলা হয়েছিল, অত্যাধুনিক এই টার্মিনালে থাকবে যাত্রীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা, যা দেশের এভিয়েশন খাতের চিত্রই পাল্টে দেবে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই যেন বেরিয়ে আসছে প্রকল্পের পদে পদে পরিকল্পনার ভুল আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও প্রথমে অর্থসংকট এবং এখন চুক্তিগত নানা জটিলতা আর দক্ষ জনবলের অভাব দেখিয়ে টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হওয়া পেছাতে পেছাতে এখন ঠেকেছে ২০২৬ সালে। 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করে। টার্মিনালটি পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস ও ভেন্ডরের নাম সুপারিশ করার কথা ছিল আইএফসির। টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে পরিচালন ব্যয় নির্ধারণে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তিও করা যায়নি। 

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্পের শুরু থেকেই বলে এসেছি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে প্যারালালি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কীভাবে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যাবে, সে কাজগুলো যেন করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা শোনেনি। তারা বিল্ডিং নির্মাণে জোর দিয়েছে, কিন্তু এই যে পিপিপি চুক্তি করা, দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য কে কাজ করবে সেসব ঠিক করা, এগুলোতে জোর দেয়নি। ফলে এখন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার যদি এখন তাড়াহুড়ো করে অদক্ষ জনবল বা অদক্ষ প্রতিষ্ঠানের হাতে এই টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বে আমাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ফলে এই টার্মিনাল দিয়ে যে আমরা আমাদের সেবার মান উন্নত হয়েছে, এটা দেখিয়ে যে একটি বাজার তৈরি করতে চাচ্ছিলাম তা ব্যাহত হবে। আবার এটিকে এভাবে ফেলে রাখলে যদি ভালোভাবে মেইনটেইন না করা হয়, তবে এখানে যেসব যন্ত্রাংশ সেট করা হয়ছে, সেগুলো নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।’ 

২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাইকা। যে ঋণ পরিশোধের প্রথম কিস্তি আগামী ডিসেম্বর থেকেই দিতে হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিকল্পনার শুরু থেকেই কার্যক্রম কীভাবে চলবে তা নিয়ে প্যারালালি কাজ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ এই প্রকল্পের একটি বড় টাকা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যার কিস্তি আমাদের এ বছরের ডিসেম্বর থেকেই দেওয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে এখন যা হচ্ছে তাতে ডিসেম্বরে এখান থেকে কোনো টাকা তো আসা সম্ভবই না, বরং এটির মেনটেন্যান্সের জন্য সরকারকে টাকা গুনতে হবে। না হলে যা তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। পাশাপাশি ঋণের কিস্তির বোঝা তো আছেই।’

থার্ড টার্মিনালের কাজ কতটা শেষ হয়েছে এবং কবে কার্যক্রম শুরু হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাজ ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। থার্ড টার্মিনালের অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স কে করবে, আমরা এ সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে দফায় দফায় মিটিং হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায়।’ অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলেই মূলত কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তবে অপারেশন শুরু করতে করতে সামনের বছরটা অর্থাৎ ২০২৫ সাল চলে যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

বেবিচক জানায়, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর জনবল নিয়োগ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপর ট্রায়াল শুরু হবে, প্রণয়ন করা হবে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)। সব মিলিয়ে প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ। টার্মিনালে ৬ ঘণ্টা করে চার শিফটে মোট ছয় হাজার লোক কাজ করবেন। এর মধ্যে র‍্যাব-পুলিশ, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), এপিবিএন, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ নিরাপত্তা রক্ষাতেই কাজ করবেন প্রায় চার হাজার সদস্য। তাদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও কাজের জন্য প্রস্তুত করতেও প্রায় এক বছর সময় লাগবে।

এর আগে এ প্রকল্পের শেষ কিস্তির অর্থছাড়ে জটিলতা দেখা দিলে গত ১ জুলাই থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক-পিডি এ কে এম মাকসুদুর ইসলাম একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বেবিচককে। সেখানে বেবিচকের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে প্রকল্পটির জন্য। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পকাজের স্বার্থে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে জিওবি খাতে বরাদ্দ করা তহবিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের আয়কর ও ভ্যাট এবং আমদানি করা মালামালের কাস্টম ডিউটি পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ঋণ দেওয়ার জন্য এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঋণের অর্থ ছাড় করে বেবিচক। অর্থাৎ সে হিসেবে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা সম্পূর্ণ অর্থই প্রকল্পে চলে গেছে এবং তাদের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটাই শেষ হয়েছে। ফলে অর্থসংকটের কোনো বিষয় নেই এখন। 

এতকিছুর পরও প্রকল্পটির সুবিধা পেতে এত দেরির বিষয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের মেগা প্রকল্প হওয়ার পরও কেন এ প্রকল্পের শুরু থেকেই এর পরিকল্পনায় আয়-ব্যয় নির্ধারণ এবং এর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শুরু করার বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং যারা গাফিলতি করেছেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবিও জানান তারা। বলেন, এর জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হওয়া প্রয়োজন। যেখানে বেবিচকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশিষ্টজনরা থাকবেন। তারা মূলত এই প্রকল্পের বিভিন্ন ভাগের যারা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবেন। তাহলে হয়তো এর কার্যক্রম শুরু ত্বরান্বিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বর্তমানে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী বহনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের তৃতীয় টার্মিনালটি যুক্ত হলে বছরে ২ কোটি পর্যন্ত যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। টার্মিনালটিতে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। ১৬টি ব্যাগেজ বেল্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে নতুন এ টার্মিনালে।

মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম শরীরের ২৫৩ টি ছোররা গুলি লাগে আন্দোলনের সময়। ১০টি বের করা হলেও বাকিগুলো এখনো রয়ে গেছে শরীরে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন ১৮ বছরের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। চলতি বছরের নভেম্বরে তার সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এখন অনিশ্চিত। গত ৫ আগস্ট গুলিতে আহত হওয়ার পর নাজমুল সাকিব মাহিমের ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালের বিছানা। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হই। শরীরে আমার ২৫৩টি ছররা বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। একটি বুলেট পিঠের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে পেটের নাড়িভুঁড়িসহ বেরিয়ে আসে। আর শরীরে বিদ্ধ হওয়া বাকি বুলেটগুলোর মধ্যে মাত্র ১০টি এ পর্যন্ত অপারেশন করে বের করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে বের করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা আরও জানিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আমার অন্তত এক বছর সময় লাগবে। আগামী নভেম্বরে আমার শরীরে আরও একটি অপারেশন করা হবে। তাই এবার হয়তো সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।’ 

কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হোস্টেলে থাকার সময়ই আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। বিভিন্ন মিছিলেও অংশ নিই। পরে আমাদের ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হলে আমি কুমিল্লার দেবিদ্বারে আমার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয় বন্ধুবান্ধব ও বড় ভাইদের উৎসাহে মিছিল-সমাবেশে অংশ নিই। ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেবিদ্বার শহরের মিছিলে যোগ দিলে গুলি লাগে। শরীরের সামনের দিকে চারটা রাবার বুলেট, আর পেছন থেকে শটগানের ছররা গুলি লাগে। এতে আমি সড়কে লুটিয়ে পড়ি। সঙ্গে থাকা বন্ধুরা আমাকে তখন স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর থাকায় বিকেলে আমাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ইমার্জেন্সি ও পোস্ট অপারেটিভে থাকতে হয় ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। সে সময় আমার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। পরদিন ১৫ আগস্ট থেকে এই ওয়ার্ডে আমাকে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই আমার চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে। পরিবারকে বহন করতে হচ্ছে না।’ 

আন্দোলনে গিয়ে আহত হলেন এ পর্যন্ত ছাত্র সমন্বয়কদের কেউ কি আপনাদের দেখতে এসেছেন? এ প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, ‘হ্যাঁ এসেছেন। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সমন্বয়ক সারজিস আলম আমাদের দেখতে এসেছিলেন। তারা চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামের কয়েকজন নেতাও এসেছিলেন দেখতে।’ 

তারা কোনো আর্থিক সহায়তা করেছেন কি না জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘উপদেষ্টা নাহিদ, জামায়াতে ইসলাম ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। তবে ডাক্তাররা বলেছেন, আমার চিকিৎসা চালাতে হবে দীর্ঘদিন। ভালো লাগছে না। আমি পরীক্ষা দিতে চাই, ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই, হাসপাতাল আর ভালো লাগছে না।’ 

পরিবারে কে কে আছেন জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘তার বাবা হারুনুর রশীদ দুবাইপ্রবাসী। মা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। আমার আহত হওয়ার খবরে বাবা এসেছিলেন। এক মাস ছিলেন। পরিবারের সবাই আবার জন্য চিন্তিত। আমার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচ কীভাবে চালাবেন, আমার পড়ালেখা চালাতে পারব কি না- এসব ভেবে। আমি সুস্থ হয়ে পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের কতজন ভর্তি আছেন জানতে চাইলে ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ হান্নান জানান, প্রথমদিকে ওই ওয়ার্ডে ৮০ জনের মতো ভর্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭ জন আহত ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী আর বাকিরা বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ। শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. শফিউর রহমান খবরের কাগজকে জানান, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে আন্দোলনে আহত যারা এই হাসপাতালে এসেছেন তাদের ফান্ড এবং সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন। এসব রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে বলেও জানান তিনি।