রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দেশে গত রবিবার আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। ৫৫ সদস্য নিয়ে গঠিত এই কমিটি প্রথম দিনেই তাদের আট দফার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে তরুণদের নিয়ে গঠিত এ দলের ব্যাপারে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্টজনেরা।
তারা বলেছেন, যে ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এ কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটল, তাতে মনে হলো তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় রয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই দেশের পরিবর্তিত এই সময়ে তাদের এই কমিটি গঠন। দলটির নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা- অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের সব ধরনের কার্যক্রমে তারা শক্তিশালী প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও ভূমিকা রাখবে। এই ভূমিকার প্রতি তারা সজাগ থাকলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। একই সঙ্গে নবগঠিত এই দলের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটলে আরও ভালো হতো বলেও মনে করেন তারা।
আবুল কাসেম ফজলুল হক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সমাজ বিশ্লেষক
দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন সংগঠন আসতেই পারে। যে ধরনের কর্মসূচি তারা ঘোষণা করেছেন তাতে মনে হলো এই সংগঠনটির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় রয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই তাদের এই কমিটি গঠন। তবে দেশের রাজনীতি যাতে দীর্ঘদিনের ঘুণে ধরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সেই ধারায় আসতে হবে। তারা কী পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর গতানুগতিক পথ ধরেই হাঁটবেন, না নতুন ধারা তৈরি করতে পারবেন সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নতুন এই সংগঠনের ঘোষণায় মনে হলো তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও কাজ করবে, যা ইতিবাচক। তবে মনে রাখতে হবে, আবার যেন দেশে মাইনাস টু-জাতীয় কোনো ফর্মুলার আবির্ভাব না ঘটে। এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
এম হাফিজ উদ্দিন খান
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
তরুণ প্রজন্মের সমন্বয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে নতুন সংগঠনের সূচনাকে ইতিবাচক মনে করছি। কারণ তারা বলেছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনে তারা কাজ করতে চান। এই দলের নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে তদারকি করবেন, সজাগ থাকবেন- এমনটিই মনে করি। দলটিতে যাদের নাম দেখলাম তাদের বেশির ভাগই তরুণ। তারা এ সময়ে একটি শক্তিশালী প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও দেশে ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করি। নতুন করে সংগঠিত এই কমিটিকে বলতে চাই তাদের সজাগ থাকতে হবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিও। আর তারা যদি সজাগ থাকেন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
জেড আই খান পান্না
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী
নবগঠিত নাগরিক কমিটি দেখে বোঝা গেল তারা সবাই বয়সে তরুণ। নিশ্চয়ই তারা ভালো ও ইতিবাচক কিছু করার চেষ্টা করবে। তবে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের মতো ক্যাচি স্লোগান নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু, তা এত সহজ বিষয় নয়। এর দায়-দায়িত্ব রক্ষা করা খুব কঠিন। সেটা করতে হলে ব্রিটিশ আমলের অনেক আইন- যেমন পুলিশ আইন পরিবর্তন, ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন, হেলথ সেক্টরেও পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের মন্ত্রী-এমপিসহ ভিভিআইপি লোকরা যাতে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসবের পাশাপাশি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতন্ত্রের অনুকূলে এনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে করে সেই বিষয়েও চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ আমি মনে করি, নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করাই এই সরকারের প্রধান কাজ।
আবু আলম মো. শহীদ খান
সাবেক সচিব
শত ফুল ফুটতে দাও- কাজেই যেকোনো নতুনকে স্বাগত জানাতে হবে। সারা দেশের মানুষ রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে- কাজেই তাদের যে ঘোষণা সেটা ইতিবাচক। তবে পর্যবেক্ষণ করার দরকার রয়েছে। নতুন এই সংগঠনে আমরা দেখছি বয়সে সবাই তরুণ। আমি মনে করি, তাদের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটলে আরও ভালো হতো। চিন্তাধারায় আরও ডাইভারিসিটি আসতে পারত। তার পরও তরুণ উদ্যোগ যদি সরকারের প্রতি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা রাখে তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে আশা করাই যায়। কারণ দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনেক বেশি আশা করছে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তারা রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, সেটা আসলে সময়ই বলে দেবে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক সমাবেশ থেকে এই কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও এবি পার্টির সাবেক গবেষণা ও তথ্যবিষয়ক সহকারী সম্পাদক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাবি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেনকে কমিটির সদস্যসচিব ঘোষণা করা হয়। আর কমিটির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করবেন ঢাবি চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রচিন্তার সাবেক সদস্য সামান্তা শারমীন।