‘আগে লাগেজ পেতে কত সময় লাগবে, তা বলা মুশকিল ছিল। কিন্তু বিমান থেকে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে গেছি। সবচেয়ে বড় কথা, লাগেজগুলোকে ছুড়ে ফেলা হয়নি, তাই লাগেজ ভালো আছে।’ এভাবেই সৌদি আরব ফেরত মো. হোসেন জানাচ্ছিলেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তার লাগেজ পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা।
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মোরশেদ। তিনি কলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সময় লাগত, তবে এখন তা কমে এসেছে। আজ (রবিবার) তো আরও দ্রুত পেলাম। বলা চলে ২০ মিনিটেই লাগেজ পেয়ে গেছি।’
রবিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরেজমিন গিয়ে দেখা মেলে সুন্দর এ লাগেজ ব্যবস্থাপনার। এ ছাড়া প্রবাসী ও নতুন যাত্রীদের সহযোগিতার জন্য বিমানবন্দরটিতে চালু করা হয়েছে হেল্পডেস্ক, আছে ফ্রি কল করা ও ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধাও। বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বসানো রয়েছে ফ্রি কল করার ব্যবস্থা।
সেখানকার ফোন ব্যবহার করে কথা বলা সৌদি আরব থেকে দেশে আসা মো. মনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটা প্রবাসীদের বেশ সুবিধা দিয়েছে। কারণ আমরা দেশে এসে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম না। ফলে বুঝতে পারতাম না তারা কোথায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এই সুবিধার ফলে এখন আমরা দেশে এসেই স্বজনদের জানাতে পারি আমি পৌঁছেছি। তারা কোথায় আছেন তাও জানতে পারি। ফলে ভোগান্তি হয় না।’
অন্যদিকে মো. মাসুদ মিয়া যাচ্ছেন সৌদি। কিন্তু তার ফোনের চার্জ প্রায় শেষের দিকে। তাই দেখা গেল তিনি এয়ারপোর্টের ফোনচার্জ বুথে তার মোবাইল ফোনটি চার্জ দিচ্ছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ ধরনের সেবা যাত্রীদের স্বস্তি দেয়। দুশ্চিন্তামুক্ত করে। চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়তো অনেক আগে থেকেই আছে, কিন্তু অনেকেই তা জানেন না।’
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগেই দেখা মিলল বেশ কয়েকটি হেল্পডেস্কের। যেখানে লেখা আছে- ‘আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’ প্রশ্নটি। আর তার আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন কয়েকজন সাহায্যকারী। নতুন কোনো যাত্রী সেখানে এলে বা তাকে কিছু খুঁজতে দেখলে এই ব্যক্তিরা নিজে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছেন কোনো সাহায্য লাগবে কি না।
হেল্পডেস্ক সম্পর্কে মো. ইফাদ হাসান শুভ বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম উড়োজাহাজে ভ্রমণ করছি। তাই ঠিক কোথায় গিয়ে কী করতে হবে জানি না। এই হেল্পডেস্কে এসে জিজ্ঞেস করলাম। তারা আমাকে জানিয়ে দিল কোথায় যেতে হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা কী। সুতরাং এটি আমার জন্য অনেক বড় সাহায্য। আমার মতো যারা নতুন তাদের জন্য এই হেল্পডেস্ক অনেক উপকারে আসবে।’
হেল্পডেস্ক ছাড়াও যাত্রীরা যেন যেকোনো তথ্য, পরামর্শ এবং অভিযোগ জানাতে পারেন সে জন্য চালু করা হয়েছে ১৩৬০০ ও ০৯৬১৪০১৩৬০০ ফোন নম্বর। এ ছাড়া www.hsia.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারবেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের সেবার মান উন্নত করতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এরই অংশ হিসেবে যাত্রীদের যেকোনো তথ্য ও অভিযোগ জানানোর জন্য ‘১৩৬০০’ নম্বরের কল সেন্টার, নতুন ওয়েব পোর্টাল (www.hsia.gov.bd), কাস্টমার রিলেশনশিপ মডিউল সফটওয়্যারসহ আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের সহযোগিতা করতে হেল্পডেস্কসহ অনেক সুবিধা চালু হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যেহেতু এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে তাই যাত্রীরা যেন দ্রুত সময়ে লাগেজ পান সে জন্য বিমানবন্দরের অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি এবং আনসারদের বদলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’ পাশাপাশি লাগেজ যেন অক্ষত থাকে বা আমাদের বিমানবন্দরে এসে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় অন্য বিমানবন্দর থেকে লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমাদের কাছে আসে, কিন্তু এতে তো আমাদের কিছু করার নেই। তাই যাত্রীদেরও খেয়াল রাখতে হবে তার লাগেজ কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তারা আমাদের কল সেন্টারে (১৩৬০০) ফোন করে জানাতে পারেন।
এ ছাড়া এখন বিমান অবতরণের পর ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই লাগেজ আমরা যাত্রীদের কাছে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছি। বাকিটাও দ্রুত সময়ে করার চেষ্টা করছি।’ এটি একটি টিম ওয়ার্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জবাবদিহি বাড়ায় এখন কাজে অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। ফলে কাজে গতি এসেছে। আমরা আমাদের বর্তমান এ সেবা কার্যক্রমগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখতে চাই।’
খবরের কাগজের মাধ্যমে তিনি যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান, “আপনারা এই সেবাগুলো নিয়ে আপনাদের মতামত আমাদের জানান। আমরা সেবার মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করব, কারণ আমাদের মূল মন্ত্রই হচ্ছে ‘সম্মানিত যাত্রীই সর্বাগ্রে’।”