ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
রাঙামাটির ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি এখন তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ফলে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই কারণে গত ২৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেতু এলাকায় ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। গত ২২ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় করে থাকে প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং এবং ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মিত হয়। রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় এসে পর্যটকরা প্রথমেই সেতুটি দেখতে যান। কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

পাবনা থেকে পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম। কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল, সেতুতে ছবি তুলবে। তা আর হলো না। এখন সবারই মন খারাপ।’ 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেতু ডুবে আছে। খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না।’

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি এবং পর্যটকরা টিকিট ছাড়াই ঘুরে যাচ্ছেন।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুর পাটাতন বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেতু ডুবতে শুরু করে। হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে পানি বের করা হয়। কিন্তু উজান থেকে পানি নামতে ধীরগতিতে চলায় হ্রদের পানির উচ্চতা কমছে খুবই ধীরে।

এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান এ বছর শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুদককে এবার সেই ভেন্যু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ শিল্পকলার নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। 

বিষয়টি জানতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কয়েকবার সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল আলম মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগের কারণ জানতে চান। 

শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদককে ‘না’ করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলে সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) দুদকের ডিজি পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা শিল্পকলার ডিজি স্যারের কাছে এসেছিলেন। স্যার (ডিজি) তাদের বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’ এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন সোহেল আলম। 

এদিকে শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলার ডিজি সেখানকার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদক কর্মকর্তাদের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করেছেন। দুদকের এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এসব শোনার পরও শিল্পকলার ডিজি বলেছেন, আল্লাহর ফেরেশতা নেমে এলেও মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন না পাওয়ায় দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা রবিবারেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের কয়েকটি মিলনায়তন পরিদর্শন করে এসেছেন। প্রতিবছর শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ জনের আয়োজন করা যায় এবং সেটি দুদক প্রধান কার্যালয়সংলঘ্ন ছিল।

আবুল কালাম আজাদ আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক অনেক মন্ত্রী-আমলা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কিছু কথা জানিয়েছেন।

সাবেক আমলা আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ এলাকায় ভুরিভোজের আয়োজন করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। 

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী বা এমপি অথবা কোনো উপদেষ্টার দলীয় প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করার সুযোগ ছিল না। দলীয় প্ল্যাটফর্মে কেউ খোলাখুলি মতামত দিলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হতো। এ জন্য কেউ মুখ খুলতেন না। শেখ হাসিনা দল ও সরকার পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটাই সবাই অনুসরণ করতেন। 

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমলারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন। তারা কোনো মন্ত্রীর কথা শুনতেন না। এমপিদের পাত্তা দিতেন না। একাধিক মন্ত্রী ও এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এতে দিন দিন সচিবরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আবুল কালাম আজাদের মামলার তদন্তের কাজে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গত শনিবার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে পল্টনে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করেন পল্টন থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘আবুল কালাম আজাদকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আবুল কালাম আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেননি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি সেগুলো জানার চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, ১৪ সালের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশের তদবির বেড়ে যায়। তার কাছেও কয়েকজন কর্মকর্তা ডিএমপিসহ আরও কয়েকটি জেলায় বদলির সুপারিশের জন্য এসেছিলেন। পরে ওই সব কর্মকর্তার সুপারিশের জন্য তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পুলিশ তদবিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের কাছে আসত। তিনি কয়েকজনের বদলির জন্য সুপারিশ করলেও ধনঞ্জয়ের জন্য তা হয়নি বলে দাবি করেন। গতকাল সচিবালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর ধনঞ্জয় আর সচিবালয়ে আসেন না। 

তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আবুল কালাম আজাদ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, পল্টন থানার যে হত্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক ছিলেন। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক বলে তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্মে তিনি তার মতামত বলতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। তবে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন যে অন্যদের মতো তার দেশ ছাড়ার কোনো উদ্যোগ ছিল না।

স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
স্বপ্নের মেগা প্রকল্প এখন গলার কাঁটা
ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পগুলো এখন হয়ে গেছে গলার কাঁটা।

কথা ছিল এ বছরের অক্টোবরে অর্থাৎ চলতি মাসেই ‘স্বল্প পরিসরে’ চালু হবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো বিগত সরকারের এই মেগা প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে ২০২৬ সাল লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল অঙ্কের বাজেটের এ প্রকল্পের বিদেশি ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে আগামী ডিসেম্বর থেকেই। তাই সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখানো এ মেগা প্রকল্পই যেন এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০২৩ সালের অক্টোবরে তাড়াহুড়ো করে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং (একাংশের উদ্বোধন) করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন জানানো হয়েছিল, ২০২৩ সালের শেষে পরীক্ষামূলকভাবে আর ২০২৪ সালের শেষ ভাগে পুরোদমে শুরু হবে টার্মিনালের কার্যক্রম। পরে গত ৩০ মে সরেজমিন পরিদর্শন গিয়ে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছিলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চলতি বছরের শেষ দিকে বা আগামী বছরের শুরুতে স্বল্প পরিসরে চালু হবে। ওই সময় পর্যন্ত টার্মিনাল ভবনের ৩ শতাংশের মতো কাজ বাকি আছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

বলা হয়েছিল, অত্যাধুনিক এই টার্মিনালে থাকবে যাত্রীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা, যা দেশের এভিয়েশন খাতের চিত্রই পাল্টে দেবে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই যেন বেরিয়ে আসছে প্রকল্পের পদে পদে পরিকল্পনার ভুল আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও প্রথমে অর্থসংকট এবং এখন চুক্তিগত নানা জটিলতা আর দক্ষ জনবলের অভাব দেখিয়ে টার্মিনালটির কার্যক্রম শুরু হওয়া পেছাতে পেছাতে এখন ঠেকেছে ২০২৬ সালে। 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে একটি চুক্তি করে। টার্মিনালটি পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিস ও ভেন্ডরের নাম সুপারিশ করার কথা ছিল আইএফসির। টার্মিনালটি পরিচালনার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে পরিচালন ব্যয় নির্ধারণে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তিও করা যায়নি। 

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্পের শুরু থেকেই বলে এসেছি বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে প্যারালালি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম কীভাবে নির্ধারিত সময়ে শুরু করা যাবে, সে কাজগুলো যেন করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা শোনেনি। তারা বিল্ডিং নির্মাণে জোর দিয়েছে, কিন্তু এই যে পিপিপি চুক্তি করা, দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য কে কাজ করবে সেসব ঠিক করা, এগুলোতে জোর দেয়নি। ফলে এখন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার যদি এখন তাড়াহুড়ো করে অদক্ষ জনবল বা অদক্ষ প্রতিষ্ঠানের হাতে এই টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বে আমাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ফলে এই টার্মিনাল দিয়ে যে আমরা আমাদের সেবার মান উন্নত হয়েছে, এটা দেখিয়ে যে একটি বাজার তৈরি করতে চাচ্ছিলাম তা ব্যাহত হবে। আবার এটিকে এভাবে ফেলে রাখলে যদি ভালোভাবে মেইনটেইন না করা হয়, তবে এখানে যেসব যন্ত্রাংশ সেট করা হয়ছে, সেগুলো নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।’ 

২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায় তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাইকা। যে ঋণ পরিশোধের প্রথম কিস্তি আগামী ডিসেম্বর থেকেই দিতে হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পরিকল্পনার শুরু থেকেই কার্যক্রম কীভাবে চলবে তা নিয়ে প্যারালালি কাজ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ এই প্রকল্পের একটি বড় টাকা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যার কিস্তি আমাদের এ বছরের ডিসেম্বর থেকেই দেওয়া শুরু করতে হবে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে এখন যা হচ্ছে তাতে ডিসেম্বরে এখান থেকে কোনো টাকা তো আসা সম্ভবই না, বরং এটির মেনটেন্যান্সের জন্য সরকারকে টাকা গুনতে হবে। না হলে যা তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা আছে। পাশাপাশি ঋণের কিস্তির বোঝা তো আছেই।’

থার্ড টার্মিনালের কাজ কতটা শেষ হয়েছে এবং কবে কার্যক্রম শুরু হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘কাজ ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। থার্ড টার্মিনালের অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স কে করবে, আমরা এ সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে দফায় দফায় মিটিং হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায়।’ অপারেশন ও মেইন্টেন্যান্স করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হলেই মূলত কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তবে অপারেশন শুরু করতে করতে সামনের বছরটা অর্থাৎ ২০২৫ সাল চলে যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

বেবিচক জানায়, পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর জনবল নিয়োগ করতে হবে, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপর ট্রায়াল শুরু হবে, প্রণয়ন করা হবে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)। সব মিলিয়ে প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ। টার্মিনালে ৬ ঘণ্টা করে চার শিফটে মোট ছয় হাজার লোক কাজ করবেন। এর মধ্যে র‍্যাব-পুলিশ, এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক), এপিবিএন, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ নিরাপত্তা রক্ষাতেই কাজ করবেন প্রায় চার হাজার সদস্য। তাদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও কাজের জন্য প্রস্তুত করতেও প্রায় এক বছর সময় লাগবে।

এর আগে এ প্রকল্পের শেষ কিস্তির অর্থছাড়ে জটিলতা দেখা দিলে গত ১ জুলাই থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক-পিডি এ কে এম মাকসুদুর ইসলাম একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বেবিচককে। সেখানে বেবিচকের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে প্রকল্পটির জন্য। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পকাজের স্বার্থে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে জিওবি খাতে বরাদ্দ করা তহবিল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের আয়কর ও ভ্যাট এবং আমদানি করা মালামালের কাস্টম ডিউটি পরিশোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ঋণ দেওয়ার জন্য এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঋণের অর্থ ছাড় করে বেবিচক। অর্থাৎ সে হিসেবে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা সম্পূর্ণ অর্থই প্রকল্পে চলে গেছে এবং তাদের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটাই শেষ হয়েছে। ফলে অর্থসংকটের কোনো বিষয় নেই এখন। 

এতকিছুর পরও প্রকল্পটির সুবিধা পেতে এত দেরির বিষয় উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের মেগা প্রকল্প হওয়ার পরও কেন এ প্রকল্পের শুরু থেকেই এর পরিকল্পনায় আয়-ব্যয় নির্ধারণ এবং এর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শুরু করার বিষয়ে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং যারা গাফিলতি করেছেন তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবিও জানান তারা। বলেন, এর জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি হওয়া প্রয়োজন। যেখানে বেবিচকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশিষ্টজনরা থাকবেন। তারা মূলত এই প্রকল্পের বিভিন্ন ভাগের যারা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবেন। তাহলে হয়তো এর কার্যক্রম শুরু ত্বরান্বিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বর্তমানে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রী বহনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের তৃতীয় টার্মিনালটি যুক্ত হলে বছরে ২ কোটি পর্যন্ত যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। টার্মিনালটিতে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। ১৬টি ব্যাগেজ বেল্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা রয়েছে নতুন এ টার্মিনালে।

মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
মাহিমকে হাসপাতালে থাকতে হবে দীর্ঘদিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম শরীরের ২৫৩ টি ছোররা গুলি লাগে আন্দোলনের সময়। ১০টি বের করা হলেও বাকিগুলো এখনো রয়ে গেছে শরীরে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন ১৮ বছরের শিক্ষার্থী মো. নাজমুল সাকিব মাহিম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। চলতি বছরের নভেম্বরে তার সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এখন অনিশ্চিত। গত ৫ আগস্ট গুলিতে আহত হওয়ার পর নাজমুল সাকিব মাহিমের ঠিকানা হয়েছে হাসপাতালের বিছানা। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হই। শরীরে আমার ২৫৩টি ছররা বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। একটি বুলেট পিঠের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে পেটের নাড়িভুঁড়িসহ বেরিয়ে আসে। আর শরীরে বিদ্ধ হওয়া বাকি বুলেটগুলোর মধ্যে মাত্র ১০টি এ পর্যন্ত অপারেশন করে বের করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে বের করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা আরও জানিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আমার অন্তত এক বছর সময় লাগবে। আগামী নভেম্বরে আমার শরীরে আরও একটি অপারেশন করা হবে। তাই এবার হয়তো সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই।’ 

কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হোস্টেলে থাকার সময়ই আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। বিভিন্ন মিছিলেও অংশ নিই। পরে আমাদের ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা হলে আমি কুমিল্লার দেবিদ্বারে আমার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয় বন্ধুবান্ধব ও বড় ভাইদের উৎসাহে মিছিল-সমাবেশে অংশ নিই। ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেবিদ্বার শহরের মিছিলে যোগ দিলে গুলি লাগে। শরীরের সামনের দিকে চারটা রাবার বুলেট, আর পেছন থেকে শটগানের ছররা গুলি লাগে। এতে আমি সড়কে লুটিয়ে পড়ি। সঙ্গে থাকা বন্ধুরা আমাকে তখন স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর থাকায় বিকেলে আমাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে ইমার্জেন্সি ও পোস্ট অপারেটিভে থাকতে হয় ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। সে সময় আমার চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। পরদিন ১৫ আগস্ট থেকে এই ওয়ার্ডে আমাকে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই আমার চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে। পরিবারকে বহন করতে হচ্ছে না।’ 

আন্দোলনে গিয়ে আহত হলেন এ পর্যন্ত ছাত্র সমন্বয়কদের কেউ কি আপনাদের দেখতে এসেছেন? এ প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের উত্তরে সাকিব বলেন, ‘হ্যাঁ এসেছেন। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও সমন্বয়ক সারজিস আলম আমাদের দেখতে এসেছিলেন। তারা চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামের কয়েকজন নেতাও এসেছিলেন দেখতে।’ 

তারা কোনো আর্থিক সহায়তা করেছেন কি না জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘উপদেষ্টা নাহিদ, জামায়াতে ইসলাম ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। তবে ডাক্তাররা বলেছেন, আমার চিকিৎসা চালাতে হবে দীর্ঘদিন। ভালো লাগছে না। আমি পরীক্ষা দিতে চাই, ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাই, হাসপাতাল আর ভালো লাগছে না।’ 

পরিবারে কে কে আছেন জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, ‘তার বাবা হারুনুর রশীদ দুবাইপ্রবাসী। মা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। আমার আহত হওয়ার খবরে বাবা এসেছিলেন। এক মাস ছিলেন। পরিবারের সবাই আবার জন্য চিন্তিত। আমার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার খরচ কীভাবে চালাবেন, আমার পড়ালেখা চালাতে পারব কি না- এসব ভেবে। আমি সুস্থ হয়ে পড়াশোনা শেষ করে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের কতজন ভর্তি আছেন জানতে চাইলে ওয়ার্ড মাস্টার মোহাম্মদ হান্নান জানান, প্রথমদিকে ওই ওয়ার্ডে ৮০ জনের মতো ভর্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭ জন আহত ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী আর বাকিরা বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ। শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. শফিউর রহমান খবরের কাগজকে জানান, সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে আন্দোলনে আহত যারা এই হাসপাতালে এসেছেন তাদের ফান্ড এবং সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সব ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন। এসব রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ফান্ডের ব্যবস্থা করেছে বলেও জানান তিনি।

বিপদগ্রস্ত রাজনীতিকরাই

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
বিপদগ্রস্ত রাজনীতিকরাই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভেদের বিষয়টি দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আলোচনায় আছে। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই আলোচনা আরও ব্যাপকতা পেয়েছে। বলা হচ্ছে, ১৭ বছর ধরে বিপদে ছিল এবং চরম কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের মিত্ররা। আর এখন বিপদে পড়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ দলটির মিত্ররা। অবশ্য ২০০৭ সালে এক-এগারোর পর বড় দুই দলের নেতা-কর্মীরাই বিপদে পড়েছিলেন। তবে ওই ঘটনা থেকে কেউ শিক্ষা নেননি বলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে। 

তবে বিভেদের রাজনীতি যে দেশ ও সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেটি কিছুদিন আগেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় ছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো রওনক জাহান গত ফেব্রুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইনের শাসন ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে। সমাজ ও রাজনীতিতে বিভাজন বেড়ে চলেছে। মুষ্টিমেয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সরকারের নীতিনির্ধারণ ও প্রয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর অশুভ প্রভাব বিস্তার করছে। এসব সমস্যার সমাধান করা সরকারের সামনে বিরাট রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।’

পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৯৯১ সাল থেকে গত ৩৩ বছরে বড় দুটি রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বিরোধে মোটাদাগে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হামলা-মামলা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকারও হয়েছেন তারাই। প্রশাসনে বা পেশাজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ বিপদগ্রস্ত হলেও তাদের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে এ বিষয়ে দলগুলোর কোনো আত্মোপলব্ধি হয়নি। আত্মোপলব্ধি ঘটে কেবল ক্ষমতা হারিয়ে বিপদে পড়লে। 

শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে দলটির মাঠপর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হলে দলটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এর আগে এক-এগারোর পর উদ্ভূত পরিস্থিতি, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস ঘটনার পরও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই ঘটনায় ২৫ হাজারের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করার পর দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছিল। আত্মগোপনে ছিল জামায়াতসহ বিএনপির মিত্র দলগুলোও। ৫ আগস্টের পর দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অনেকের মতে, ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে বিএনপির। 

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দলটির সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হচ্ছে। এর আগে গত ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল লাখ লাখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ দলটির অনেক নেতাকে সাজাও দেওয়া হয়েছে। এক-এগারোর পর বড় দুটি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের এবং তারেক রহমানকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতায় যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মামলা প্রত্যাহার করা হলেও বিএনপির মামলাগুলো সচল রাখা হয়। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য সরকারের ইঙ্গিতে ওই সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে দেশের রাজনীতিতে আলোচনা আছে। 

পরিস্থিতি এক-এগারোর তুলনায় এখন আরও বেশি কঠিন হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে ইতোমধ্যে জনগণের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, বিপদগ্রস্ত হওয়ায় আত্মোপলব্ধি থেকে আওয়ামী লীগ এখন ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা রাজনৈতিক মীমাংসা চাইছে। গত ১০ আগস্ট রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির সঙ্গে যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, আসুন আমরা অতীতকে ভুলে সামনের দিকে অগ্রসর হই, প্রতিশোধের রাজনীতিকে প্রশ্রয় না দিই।

১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আট দল, বিএনপির নেতৃত্বে সাত দল এবং বামপন্থিদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দল মিলে এরশাদ-পরবর্তী সরকারব্যবস্থা কী হবে তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। 

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, তিন জোটের রূপরেখায় বর্ণিত অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করলে দেশে বিভেদের রাজনীতি এড়ানো যেত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কোনো অঙ্গীকারই পরবর্তী সরকারগুলোর সময় রক্ষা করা হয়নি। এ কারণে জনমনেও সে বিষয়টি ঢাকা পড়ে গেছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্বে তিন জোটের রূপরেখা হারিয়ে গেছে।’

১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর ওই তিনটি জোট আলাদা সমাবেশে সেই রূপরেখা তুলে ধরে। এরপর ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। তিন জোটের বাইরে জামায়াত তখন যুগপৎ আন্দোলনে শামিল ছিল। 

রূপরেখার প্রধান দিক ছিল মৌলবাদ ও স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে প্রত্যয়। ছিল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। ওই রূপরেখাকে কেউ কেউ জাতীয় সনদ বলেও তখন উল্লেখ করেছিলেন।

রূপরেখায় জাতীয় সংসদের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ভোটারদের ইচ্ছামতো ভোট দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশে আবার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ আমলে পরপর তিনটি নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেছেন, ‘বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা এবং আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি নেতাদের গুম হওয়ার ঘটনাকে মানুষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই মনে করেন।’

তিন জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারনামার তিন নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল, ‘আমাদের তিনটি জোটভুক্ত দলসমূহ ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা এবং অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকবে। আমাদের জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেবে না। এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ভালো সম্পর্ক থাকলে সংঘাতের রাজনীতি থাকত না। ১৯৯১ সালের পর কে কীভাবে ক্ষমতায় যাবে, দলগুলো এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মধ্যে সংঘাত বেড়ে যায়। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেও ‘রিকনসিলিয়েশন’ বা রাজনীতিতে মীমাংসা করার আলোচনা বহুবার সামনে এসেছে। ফলে আজকের এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো বা এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত কি না, সে আলোচনা এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেই বেশি হচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দল বা শক্তির মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকেই সমাজে আজকে বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে।

একই সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন ক্ষমতার স্বার্থে দ্বন্দ্ব-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্য-অরাজকতা লালন করা হয় তখন সেটিই বিভাজনের রাজনীতি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো জাতীয়তাবাদের নিরিখে একটি বা সমগোত্রীয় (হোমোজিনিয়াস) দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্য-অরাজকতার কারণ মূলত ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার অনৈতিক মানসিকতা থেকেই উদ্ভূত।

অনৈতিক রাজনীতির প্রবক্তা নিকোলো ম্যাকিয়াভ্যালি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য প্রিন্স’-এ বৈদেশিক শক্তি ও সমভাবে অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের ক্ষেত্রে বিভাজনের রাজনীতিকে সিদ্ধ মনে করেছেন। তার মতে, যুদ্ধজয়ে কূটকৌশল ও বিভাজন নীতি অন্যায় নয়। তিনি শাসককে কুবুদ্ধি দেন যে, বিরোধী শক্তি সম্পর্কে সন্দেহপরায়ণতা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ তৈরি করতে পারলে শাসক সফল হতে পারেন। এভাবে রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা সহজতর হয়ে উঠবে। বিরোধী শক্তি ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিরোধী শক্তিগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে; এমন আলোচনা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ছিল।

জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পারপিচুয়াল পিস’ গ্রন্থে বিভাজনের রাজনীতির কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিভাজনের রাজনীতির প্রবক্তারা তাদের ক্ষমতা শক্তপোক্ত করার জন্য যা ইচ্ছা তাই করে। পরে এমন সব অজুহাত বানায় যাতে মনে হবে, বিষয়টি বাস্তব ছিল। তারা অন্যায় করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা অস্বীকার করে। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার একটি বিশেষ আবেদন রইল। নতুন জাতীয় সংসদকে কেন্দ্র করে আপনারা এমন রাজনৈতিক রীতি-রেওয়াজ গড়ে তুলুন, যেন ভবিষ্যতে আর কোনো দিন রাজনৈতিক কোনো সমস্যা সমাধানে রাজপথের আশ্রয় নিতে না হয়। কিছুদিন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যে সীমাহীন অসহিষ্ণুতা দেখেছি, ভবিষ্যতে যেন আর কাউকে অসহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখতে না হয়, তার প্রক্রিয়া সৃষ্টি করুন।’

তার এই ভাষণের কথা উল্লেখ করে ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ গ্রন্থে অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে হাবিবুর রহমানের আহ্বানকে আমলে নেয়নি, পরবর্তী রাজনীতিই তার প্রমাণ। গত ২৭ বছরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ও অসহযোগিতা আরও বেড়েছে। আগে তারা সমস্যা সমাধানে লোকদেখানো হলেও কথাবার্তা বলতেন। এখন সেটিও নেই।’

যতদূর জানা যায়, বামপন্থি দু-একজন নেতা এবং সুধী সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতায় থাকতে শেখ হাসিনাকে এ বিষয়টি বলারও চেষ্টা করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকবার তার বক্তব্যেও বিষয়টি সামনে এনেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে রাজি হননি। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরকালে মার্কিন প্রাক-পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকসহ গত ১৫ বছরে বিদেশিদের সঙ্গে সবগুলো বৈঠকে রাজনৈতিক মীমাংসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও আওয়ামী লীগ তা নাকচ করে দিয়েছে। প্রতিবারই বলেছে, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বিএনপি অতীতে বহুবার বলেছে! আমরা দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ অব্যাহত রাখার পক্ষে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সমঝোতার বদলে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে! গুম-খুন ও গণহত্যা করে তারা শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করেছে! ফলে সবকিছুর আগে এখন এই গণহত্যার বিচার আগে হতে হবে!’ 

এদিকে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মনে করেন, রাজনৈতিক মীমাংসা চাইতে হলে দুই দলকেই ছাড় দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটিই জাতীয়তাবাদী দল। বাঙালি ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। যদি এখনো দুটি দল সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করে তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তির উন্মাদনা বেড়ে যাবে। 

তার মতে, এমন কতগুলো কাজ অতীতে হয়েছিল, সেগুলো ভুলে গিয়ে আমাদের আত্মোপলব্ধি হতে হবে। কারণ আমাদের জানার বাইরে রাজনীতিতে কতগুলো গুণগত পার্থক্য ঘটে গেছে। সবাই এখন রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান, সহমর্মিতা ও জাতীয় প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়ার পক্ষে। আমাদের প্রতিবেশী দেশেও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সামনে এগোতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হতে হবে। রাজনীতিকদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে।’

আরও পড়ুন

আওয়ামী লীগ এখন সাধু সাজছে: ড. মাহবুব উল্লাহ