ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনে আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের

আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

বিগত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের (দক্ষিণ) করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৭০টি প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনের তথ্য খতিয়ে দেখে গরমিল পাওয়া গেছে। শাস্তি হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত এবং ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধান চলছে। 

সরকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই। জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে এসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও শুল্ক না দিয়ে আমদানি করা কাঁচামালের সবটা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন ছিল, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি করেছে। আমদানি করা অতিরিক্ত কাঁচামাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, শুধু বন্ড অনিয়মে সরকার বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রপ্তানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক না দিয়ে আনলে কম দাম পড়ছে। অন্যদিকে একই জাতীয় কাঁচামাল দেশি প্রতিষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে রাজস্ব পরিশোধ করে উৎপাদন করে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামালের চেয়ে বেশি দাম পড়ছে। কম দামে পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতা বেশি দিয়ে কিনছেন না। আর এভাবেই দেশি শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। আমদানিকারক অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশি শিল্প। এরা সংঘবদ্ধ চক্র। বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, যারা শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদনে না লাগিয়ে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করছেন তারা অসাধু ব্যক্তি। এদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ছেন। তবে এদের একার পক্ষে এ অপকর্ম করা সম্ভব না। এদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি সহযোগিতা করছেন। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বন্ড কমিশনারেটের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনা শুল্কে সুতা, কাপড়, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, শার্টের কলার, হাতায় ব্যবহৃত শক্ত কাগজ, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার আমদানি করেছে। বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, সকেট, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, রাসায়নিক দ্রব্য, রডও আমদানি করেছে।

প্রসঙ্গত, বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, রপ্তানির জন্য পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন, ঠিক ততটাই আমদানি করতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি আনা যাবে না। আমদানির সবটা কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য উৎপাদনের পর কাঁচামাল অবশিষ্ট থাকে, তবে তা এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে হিসাব কষে শুল্ক-কর-ভ্যাট দিতে হবে। এসব নিয়ম না মানলে বন্ড সুবিধা বাতিল হবে। রাজস্ব আইন অনুসারে শাস্তি হবে। ৭০টি প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকরা আড়ালে থেকে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনা ও পরিবহনে তুলে দেওয়ার কাজ করিয়েছেন। পরিবহনচালকের কাছে ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়া করা লোকরা সরে পড়েছেন। চালক নির্দিষ্ট ঠিকানামতো কাঁচামাল পৌঁছে দিয়েছেন। গুদামের দায়িত্বে থাকা অন্য ব্যক্তিরা এসব মাল বুঝে নিয়েছেন। এসব ভাড়া করা লোকের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরা কেউই প্রকৃত মালিকদের খোঁজ জানেন না। গুদামের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে পাওয়া অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং বা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। এসব পণ্য এনে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, হাতেম টাওয়ার, উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, চট্টগ্রামের বকশীবাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন; যা এসব দোকান থেকে সাধারণ ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। 

নরসিংদীর বাবুরহাট, মাধবদী, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, সোহাগপুর ও বেলকুচিতে বন্ডের সুতা বিক্রি করা হয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিনা শুল্কে আনা কাঁচামাল কোনো রাখঢাক ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। ৭০টি প্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিকরা নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে অধিকাংশ সময়ে আগেই জেনে নিয়েছেন কোন দোকানে কোন পণ্য কতটা প্রয়োজন। অনেক সময় অগ্রিমও নিয়ে নিয়েছেন। কৌশলে সুবিধামতো সময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাওয়ায় খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে আগ্রহের সঙ্গেই এসব কিনেছেন।

সাংবাদিকরা কোণঠাসা ছিলেন দবিরুলের প্রভাবে

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১২ পিএম
সাংবাদিকরা কোণঠাসা ছিলেন দবিরুলের প্রভাবে
দবিরুল ইসলাম

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন শাকিল আহমেদ। তিনি জানতে পারেন ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী, হারিপুর ও রাণীশংকৈল) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম, তার স্বজন ও সমর্থকরা দখল করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি। 

এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন শাকিল আহমেদ। প্রতিবেদনটি নিউজপোর্টাল বিডিনিউজে প্রকাশ পেলে ক্ষিপ্ত হন এমপি দবিরুল ইসলাম। তিনি নিজেই বাদী হয়ে ২০১৬ সালে ২৮ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী থানায় তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ আইনে বিডিনিউজের তৎকালীন সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী ও শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ দীর্ঘ সময় তদন্ত করে। প্রমাণ হয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমপি দবিরুলের মামলায় আনা অভিযোগ মিথ্যা। আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর আগে সামাজিকভাবে পদে পদে হেনস্তা হতে হয় সাংবাদিক শাকিলকে।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ছিল আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের নেতা-কর্মীদের রাজত্ব। এ রাজ্যে অনেকটা রাজার মতোই চলতেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি মমিনুল ইসলাম ভাসানী। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৬৩০ বস্তা চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। নাম আসে মমিনুল ইসলাম ভাসানীরও। এ নিয়ে বিডিনিউজ ও জাগো নিউজ সংবাদ প্রচার করে। এতে ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা করেন মমিনুল। এ মামলায় বিডিনিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী, জাগো নিউজের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও স্থানীয় তিন সাংবাদিক শাওন আমিন, তানভির হাসান তানু ও রহিম শুভকে আসামি করা হয়। এ মামলা আদালতে এখনো বিচারাধীন।

২০২০ সালে করোনার সময়ে বেকার হয়ে পড়েন মজুর শ্রেণির হাজারও মানুষ। সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ঠাকুরগাঁওয়ে। অভিযোগ ওঠে যতটা না সহযোগিতা করা হয়, তার চেয়ে বেশি প্রচারণা চালায় স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এ তথ্য আসে সাংবাদিকদের কাছে। স্থানীয় সাংবাদিক আল মামুন জীবন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে সমালোচনা করে একটি পোস্ট দেন। এ নিয়ে বিরক্ত হন তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। একপর্যায়ে সেবছর ১৪ এপ্রিল সাংবাদিক জীবনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাব-ইন্সপেক্টর জহুরুল হক।

মামলার বিষয়ে জীবন খবরের কাগজকে বলেন, ‘মামলায় আমার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দেয় পুলিশ। মামলাটি এখনো চলছে।’ 

করোনায় হাসপাতালগুলোতে পুস্টিকর খাবার দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন স্থানীয় সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, রহিম শুভ ও আব্দুল লতিফ লিটু। তাদের পাঠানো খবর প্রচার হলে বিরক্ত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। পরে ঠাকুরগাঁও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিম চপল বাদী হয়ে মামলা দেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের নির্দেশেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয় বলে সাংবাদিকরা জানান।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েন তিন সাংবাদিক মো. আব্দুল আলীম, আবু তারেক বাঁধন ও ফরিদুল ইসলাম। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার পীরগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল আলীম। ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন পীরগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই মামলায় তাকে কারাগারে রাখা হয় প্রায় চার মাস। বের হওয়ার পর তাকে হাজিরা দিতে যেতে হতো ঢাকায়। এখন অন্যদের মতো তাকে রংপুরে হাজিরা দিতে হচ্ছে। 

এ মামলার নেপথ্যের কারণ কী এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমি আমার পত্রিকায় পীরগঞ্জে মাদক ব্যবসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করি। এতে বিরক্ত হন পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রভাশালীরা। এর জেরেই সম্ভবত আমার বিরুদ্ধে ওই মামলা করে পুলিশ। তবে পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা কাটা নিয়ে এক সময় গুজব ছড়ায়। আমি তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যামে একটি পোস্ট করি। এ কারণে ওই মামলা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে মামলাটি দেওয়া হয়।’

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের অন্তত ৮ জন সাংবাদিককে এখনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নিয়মিত রংপুরে গিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

জাহিরের ত্রাসে তটস্থ ছিল হবিগঞ্জ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম
জাহিরের ত্রাসে তটস্থ ছিল হবিগঞ্জ
আবু জাহির

হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) অ্যাডভোকেট আবু জাহির। আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে তিনি হবিগঞ্জজুড়ে কায়েম করেছেন ত্রাসের রাজত্ব। হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগকে ‘পারিবার লীগে’ পরিণত করা, নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন নেওয়া, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ ঘুষ-বাণিজ্য, শিল্পাঞ্চলে একক অধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তি ও সরকারি মালিকানাধীন জমি-বাড়ি দখল করাসহ অর্থনৈতিক এমন কোনো খাত নেই, যেখানে আবু জাহিরের হাত ছিল না। এ ছাড়া আবু জাহির নিজের প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাগনে আতাউর রহমান সেলিমকে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, শ্যালক কামরুজ্জামান আল বশিরকে বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান এবং চাচাতো ভাই আবদুর রহিমকে রিচি ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। অতিসম্প্রতি তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

আবু জাহিরের উত্থান 
আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের প্রবীণ রাজনীতিকদের তথ্যমতে, ছাত্র ইউনিয়নের হাত ধরে রাজনীতিতে পা রাখেন জাহির। তার কিছু দিন পর যোগ দেন ছাত্রলীগে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। একই সময় তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। আর এখান থেকে আবু জাহিরের মূল উত্থান শুরু।

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। এ সময় আবু জাহির গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর কপাল খুলে যায় তার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আবু জাহির। 

অবৈধ আয়েই ‘লাল’ জাহির
এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে আবু জাহির ছিলেন আয়কর আইনজীবী। এ পেশার আয় দিয়ে তার সংসার চলত। ওই সময় হবিগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের একটি টিনশেড বাসায় পরিবার নিয়ে তিনি ভাড়ায় থাকতেন। নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হতো তাকে। তবে এমপি হওয়ার পর যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান তিনি। শহরে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ছয়তলা বাড়ি। মালিক হয়েছেন আড়াইশ ভরি সোনার। সেই সঙ্গে ছিল একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন একাধিক জমি ও বাড়ি দখলের। এমনকি হবিগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের কোয়ার্টার এবং মার্কেট তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সে সব দখল করে দিয়েছেন নিজের ভাইকে। এ ছাড়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পেছনের পুকুরের ১৮ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে করে নিয়েছেন। এসব ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন, শহরে বিরোধপূর্ণ জমি-জমার মীমাংসায় কমিশন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ ঘুষের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন জাহির। তা ছাড়া কেদারা কোর্ট এলাকায় শত কোটি টাকা মূল্যে স্ত্রী আলেয়া আক্তার, ছেলে ইফাদ জামিল, ভাই বদরুল আলম, ভাতিজা সাঈদুর রহমান এবং নিজের পিএস সুদ্বীপ দাসের নামে ২০০ শতাংশ জমি কিনে ছিলেন তিনি। পরে ওই এলাকায় বাল্লা স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে, সেই জমি তিনি চারগুণ মূল্যে সরকারের কাছে বিক্রি করেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ বিসিকে ছেলের নামে রয়েছে বিশাল প্লট। সেই সঙ্গে রাজউকেও প্লট রয়েছে আবু জাহিরের।

শিল্পাঞ্চলে আবু জাহিরের অধিপত্য
গত এক যুগে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক শিল্প কারখানা। সেখানেও ছিল আবু জাহিরের অধিপত্য। জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে তাকে দিতে হতো মোটা অঙ্কের কমিশন। তাকে কমিশন না দিয়ে এক বিঘা জমিও রেজিস্ট্রি করতে পারেনি কোনো কোম্পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিল্প কারখানার জমি কেনার সময় আবু জাহিরের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকত। তার কমিশন বুঝিয়ে না দেওয়ার আগে জমি রেজিস্ট্রি হতো না। এমনকি হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় যত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, সে সবের মালিকদের আবু জাহিরকে বিশেষ সুবিধা দিতে হতো। কেউ তাকে এড়িয়ে গেলে, কারখানা চালু হতে দেওয়া হতো না। এমন উদাহরণও অনেক আছে।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘শিল্প এলাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু এখানে কোনো শ্রমিক সংগঠন নেই। তাই শ্রমিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণের জন্য কোম্পানিগুলো থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন আবু জাহির।’

বালু ও জলমহালে নিয়ন্ত্রণ
চুনারুঘাট ও বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন সরকারি বালুমহালে নিয়ন্ত্রণ ছিল জাহিরের। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ভাই বদরুল আলমকে দিয়ে ইজারা নিতেন বালুমহাল। এ ছাড়া প্রভাব খাটিয়ে ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকেও বালু উত্তোলন করত তার ভাই। 

বাহুবলের অধিকাংশ টিলা সমতল ভূমিতে পরিণত 
খোয়াই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে আবু জাহির জড়িত থাকায় নীরব ছিল প্রশাসন। একইভাবে জেলা তাঁতী লীগ সভাপতি মুদ্দত আলীকে দিয়ে বাহুবলের অধিকাংশ টিলার মাটি কেটে বিক্রি করেছেন। সাড়ে ১৫ বছরে সেগুলো সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে হুমকিতে পড়েছে স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। 

জলমহালে নিয়ন্ত্রণ
আওয়ামী লীগ নেতা ও লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদকে দিয়ে জলমহাল নিয়ন্ত্রণে রেখে ছিলেন জাহির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাখাই এলাকার একটি সমবায় সমিতির নেতা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জলমহাল ইজারা নিতে হলে সমবায় সমিতির সনদ লাগে। যে কারণে এ এলাকার সমিতিগুলোকে কখনো হুমকি-ধমকি, কখনো কমিশনের মাধ্যমে সনদ নিয়ে জলমহাল ইজারা নিতেন মুশফিউল আলম। এতে সরাসরি জড়িত থাকতেন আবু জাহির।

স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য
জেলাজুড়ে ওপেন সিক্রেট, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানেই আবু জাহিরের পকেট গরম।’ এমপি থাকা অবস্থায় পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। জেলায় তার অপছন্দের ব্যক্তি পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার নজির খুব একটা নেই। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার পরও নির্বাচনে পল্টি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একজনকে মনোনয়ন দিয়ে, গোপনে গুজিবাজি করে বিজয়ি করেছেন অন্য প্রার্থীকে।

রাজনৈতিক দমন-পীড়ন
দমন-পীড়ন ছিল আবু জাহিরের প্রধান অস্ত্র। গত সাড়ে ১৫ বছরে তার দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন দলের নেতা-কর্মীসহ ভিন্ন মতের লোকজন। যারাই তার মতের বিরুদ্ধে গেছেন, তারা রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়েছেন।

২০১৯ সালের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে আবু জাহিরের বিপক্ষে থাকায় জেলা আওয়ামী লীগে ঠাঁই হয়নি তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, সাবেক নারী এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়াসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার। যদিও পরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বাদ দেওয়াদের কয়েকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আবু জাহিরের ছবি ওপরে না লাগিয়ে একটি শুভেচ্ছা পোস্টারও লাগাতে পারেননি আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী। যারা আবু জাহিরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তারা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। আবার তাকে হুজুর হুজুর করে অনেক বহিরাগতও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।’

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মতো স্বৈরাচার দেখিনি। এই সাড়ে ১৫ বছরে তারা আমাদের সঙ্গে যা করেছে, তা ভোলার না। আমরা ভালোভাবে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতে পারিনি। শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে আমাদের দমানো হয়েছে।’

হবিগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর হবিগঞ্জের মানুষ একটা আতঙ্কের মাঝেই ছিলেন। অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন, হয়রানি করেছেন আবু জাহির।’

আওয়ামী লীগকে ‘পারিবার লীগে’ পরিণত
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব ছিল জাহিরের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের হাতে। আবু জাহিরের স্ত্রী জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক, বছরের পর বছর দেশের বাইরে থাকা ছেলে ইফাত জামিল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ভাই বদরুল আলম জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ভাতিজা ফয়জুর রহমান জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ভাতিজা সাঈদুর ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি।

দুদকের অনুসন্ধান শুরু 
জাহিরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তথ্যানুসন্ধানকালে তার নিজ নামে ব্যাংকে নগদ টাকা, সঞ্চয়পত্র, রাজউকে প্লট, স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, ‘মানুষ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন কিছু চাটুকার তৈরি হয়। এই চাটুকাররা ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে এমনভাবে বুঝায়, ‘যে তার ক্ষমতা পৃথিবী জুড়ে।’ ফলে চেয়ারে যিনি থাকেন, তারও একটা ভাব হয় যে আমিই সব। এই অহংকারের জন্য জনপ্রতিনিধিরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর প্রতিফলনই এবার আমরা দেখলাম।’

বাজার সিন্ডিকেটে অসহায় ক্রেতারা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
বাজার সিন্ডিকেটে অসহায় ক্রেতারা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

কাঁচাবাজারে ক্রেতার স্বস্তি নেই অনেক দিন ধরেই। বৃষ্টির অজুহাতে বেগুনের কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। অন্য সবজির দামও বেড়েছে। ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ডিমের ডজন ১৮০ টাকা, ব্রয়লারের কেজি ২০০ টাকা। দাম বেঁধে দেওয়ার পরও এসব জিনিসের দাম বাড়ছে। বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সবাই। 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছে নতুন সরকার। অন্তর্বর্তী এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের ইঙ্গিত দয়ে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। শুধু হাত বদল হয়েছে।

পরিসংখ্যান বিবেচনায়, বছরের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে বাজারে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ‘কম’ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মানুষ এখন বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করছেন। বছরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। নিত্যপণ্য থেকে শাকসবজির দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি, রাজধানীর টাউন হল বাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাড়তি দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক চিনি ছাড়া সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বছরের ব্যবধানে ১৪০ টাকার মুগডাল ১৮০ টাকা হয়েছে। ছোলার দামও কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা, পেঁয়াজ, আলুর দামও অনেক বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু ও পেঁয়াজে শুল্ক কমালেও দাম কমছে না। আমরা পাইকারিতে কম দামে পেলে ভোক্তাদের কম দামেই দিতে পারব। সিন্ডিকেট বন্ধ করলে কমবে দাম। তা ছাড়া সম্ভব না।’

এ সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জয়নাল আবেদিন নামে এক ক্রেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘কী আর বলব, কচুরলতি ১৪০ টাকা কেজি। বরবটি ১৬০ টাকা কেজি। বেগুন ১৪০ টাকা। পেঁয়াজ ১২০ টাকা। আলু ৫৫-৬০ টাকা। মগের মুল্লুক চলছে। আন্দোলন করে সরকার বদলের সময় প্রথম প্রথম অনেক কিছু বলা হয়। কিন্তু বাজারে ঢোকা যায় না। এটা তারা দেখে না। দেখলে ব্যবস্থা নেয় না কেন? তারা সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে না কেন? সাবেক মন্ত্রী, সচিব, ব্যবসায়ীসহ অনেককে গ্রেপ্তার করতে পারলে সিন্ডিকেট চক্রকে ধরতে পারে না কেন? গোয়েন্দারা কী করছে।’ এভাবেই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে যা-ই বলুক, গোড়াতে কেউ হাত দেয় না।’

সবজির দাম কেমন জানতে চাইলে এই বাজারের বিক্রেতা নূরে আলম বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম কিছু একটা হবে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের দুই মাস হয়ে গেল। তার পরও দেখছি দাম আগের মতো। মানুষ আমাদের গালাগাল করে। পাইকারিতেই আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেগুন ১২০-১৪০ টাকা কেজি, শসা ৮০, মরিচ ৩৪০, শিম ৩০০, ঢ্যাঁড়স ও পটোল ৭০-৮০, পেঁপে ৪০ টাকা। গত বছরও বৃষ্টি, বন্যা ছিল দেশে। তার পরও বছরের ব্যবধানে বলা যায় প্রায় সবজির দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে।’ এ সময় জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আগে যে অবস্থা ছিল। এখন দেখছি একই দশা। যে যার মতো দাম নিচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যদি থাকত তাহলে এখনো ১২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ও ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে আলু কিনতে হতো না। সাধারণ মানুষকে তো স্বস্তি দিতে হবে। আমরা তো বাজারে ঢুকতে পারছি না।’ কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। সব পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

ডিমের ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা
ডিমের দামেও চরম ভুগতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজনের দাম ১৪৪ টাকা বেঁধে দিয়েছে। তবে বাস্তবতা এর ধারে কাছেও নেই। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তাই বাড়তি দাম। করার কিছু নেই। পাইকারিতে ১২ টাকা ৮০ পয়সা পিস বা ১৫৪ টাকা ডজনে কিনে সেই ডিম ১৬৫-১৭০ টাকা ডজন বিক্রি করা হলেও ছোট বাজার, পাড়া-মহাল্লায় ১৮০ টাকার কমে পাওয়া যায় না।’ টাউন হল বাজারের ডিম ব্যবসায়ী কামাল বলেন, ‘তেজগাঁও থেকে বেশি দামে কেনা। ১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। এর কম হবে না। গত বছর এ সময়ে ডজন ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।’ অপর ডিম ব্যবসায়ী শফিকও তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। 

স্বস্তি ফেরে না মুরগিতে 
দাম বাড়তে থাকায় অন্য পণ্যের মতো সরকার ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও বেঁধে দিয়েছে। তবে তা মানা হয় না। দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি সরকার ব্রয়লার মুরগির দাম ১৮০ টাকা ও সোনালির দাম ২৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে গতকাল বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার ১৯০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সোনালি বিক্রি হয়েছে ২৬০-২৭০ টাকায়। হাতিরপুল বাজারের মায়ের দোয়া পোলট্রি হাউজের দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার ওপর দাম কমবেশি হচ্ছে। তাই বেশি দামেই ব্রয়লার বিক্রি করতে হচ্ছে।’

গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব জিনিসের দাম বেশি। তাহলে গরুর মাংসের দাম কমবে কীভাবে? আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাতিরপুল হল বাজারের পাপ্পু বলেন, ‘গরু আমদানি করলে ও সিন্ডিকেট ভাঙলে হয়তো দাম কমতে পারে। তা না হলে কমবে না।’

ইলিশ কেজিতে ২০০ টাকা বেশি
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শক্তভাবে না ধরলে কমবে না ইলিশের দাম। এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের মাছ বিক্রেতা রাজু বলেন, ‘আড়তে কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব। আগের চেয়ে দাম কিছুটা কমেছে। এক কেজি ওজনের ওপরের কেজি ১ হাজার ৮০০ টাকা, ৯৫০ গ্রাম ওজনের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা। সিন্ডিকেট না ভাঙলে কমবে না দাম। গত বছরের চেয়ে কেজিতে ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। রুইসহ অন্য মাছের দামও কমেনি বলে বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন। 

চালের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দুই মাস পরও ভাঙেনি চালের সিন্ডিকেট। আগের মতোই বেশি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। গতকালও মিনিকেট ৭০-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা আওয়াল বলেন, ‘সরকার অনেককে ধরছে। জেলে দিচ্ছে। কিন্তু বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এটা করতে না পারলে চালের দাম কমবে না।’

দাম না কমার ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হারুন অর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ছাত্র-জনতার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা ভোক্তাদের মনে অনেক আশা জাগিয়েছে। কিন্তু দুই মাস চলে গেলেও ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি ফেরেনি। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ হয়নি। তারা কেন দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এটা আমাদের কাছেও বোধগম্য নয়। কারণ আগে যারা চাঁদাবাজি করত। এখন তো তারা নেই। শুধু হাত বদল হয়েছে। আগের মতোই মহাসড়ক-ঘাটে, সব জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে। এটা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখে না। ভোক্তা অধিদপ্তর নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করছে। এতে কাজ হবে না। থানা পর্যায়ে সরকারের অভিযান চালাতে হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যারা বেশি লাভ করে বা ভোক্তাদের ঠকায়, তারা ব্যবসায়ী হতে পারে না। অসাধু ব্যবসায়ী বলে কিছু নেই। তারা ডাকাতের চেয়েও খারাপ। তাই বেশি করে অভিযান চালিয়ে তাদের আরও বেশি করে ধরা দরকার।’ বছরের ব্যবধানে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ছিল। গত মাসে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমেছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা যারা রিপোর্ট করেছে তারাই জানে। কারণ সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাহলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমে। সরকারকে খুশি করার জন্য তারা এ রিপোর্ট দিয়েছে।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমলারা কেন বিপদে

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
আমলারা কেন বিপদে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বদিউর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগ আবু আলম মো. শহীদ খান ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম এবং সাবেক ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের পর গ্রেপ্তার হন সাবেক ত্রাণ সচিব শাহ কামাল। তারা কি নির্দোষ ছিলেন, নাকি ‘সুবিধা’ আদায়ের জন্য প্রশাসনিক রীতিনীতি ভঙ্গ করেছিলেন? খবরের কাগজের সিটি এডিটর আবদুল্লাহ আল মামুন ও নিজস্ব প্রতিবেদক জয়ন্ত সাহা এ নিয়ে কথা বলেছেন তিন প্রশাসন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে।

পচন ধরেছে প্রশাসনেও: বদিউর রহমান

রাজনীতি হচ্ছে মাথা। এই মাথায় পচন ধরেছে। তারই প্রভাব পড়েছে প্রশাসনেও। আমাদের সময় প্রশাসন দলীয়করণ হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় দলীয়করণ হয়নি। তার একক নেতৃত্ব ছিল। তাই কর্মকর্তাদের ভাগাভাগি করা হয়নি। সব তার লোক ছিল। জিয়াউর রহমানের আমলেও দলীয়করণ ছিল না। যোগ্য ব্যক্তির পদোন্নতি হতো। বিচারপতি সাত্তারের আমলেও দলীয়করণ হয়নি। খালেদা জিয়ার আমলে দলীয়করণ শুরু হলো। তখন থেকেই প্রচলন হলো ‘মনাগিরি’। তখন থেকেই কর্মকর্তাদের কেনাবেচা এবং ঝামেলা শুরু। এরা আওয়ামী লীগমনা, এরা বিএনপিমনা- এইভাবে ভাগ হলো। তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক বানিয়ে একদল কর্মকর্তাকে বঞ্চিত ও বিতাড়িত করল। এরপর শেখ হাসিনার আমলেও হলো একই অবস্থা। তার আমলে বিএনপি সমর্থক বানিয়ে আরেক দল কর্মকর্তাকে বঞ্চিত ও বিতাড়িত করা হলো। 

তারা যার যার ব্যক্তিগত ও দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। বিএনপি আমলে জনতার মঞ্চ আর আওয়ামী লীগের আমলে উত্তরা ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন আহমদ একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল যারা স্বেচ্ছায় দুর্নীতির তথ্য স্বীকার করবেন, যারা টাকা দিয়ে দেবেন, তারা পার পেয়ে যাবেন। পরে শেখ হাসিনার আমলে তিনি নিজেই সংসদে সে তালিকা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ব্যবস্থা কী নেওয়া হলো? কিছু হয়নি।

সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান

অন্ধ আনুগত্যে নেমেছে ধস: আবু আলম শহীদ খান 

আসলে গত ৫৪ বছরে আমাদের গণকর্মচারীদের কাউকে কাউকে এমনভাবে ব্যবহৃত হতে দেখেছি, যা সব নীতি-নৈতিকতা ও আইন-কানুনের পরিপন্থি। ৯০ এর দশকে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনের পতনের পরে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হলো। এরপর দেশের গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সব সীমারেখা অতিক্রম করে গণকর্মচারী তথা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দলীয় কাজে ব্যবহার শুরু করলেন। আমাদের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে কিংবা পদোন্নতির প্রত্যাশায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অন্ধ আনুগত্য স্বীকার করেন। এতে করে আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোই শুধু নয়, বিচারব্যবস্থা ও সেনাবাহিনীর কাঠামোতেও ধস নেমে এসেছে। এখন সেখানে স্থবিরতা ও নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামালের বাসা থেকে তিন কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও সাবেক শিক্ষা-সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিনকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মামলার ভিত্তি কী- এসব নিয়ে কোনো তথ্য প্রশাসন বা সরকার এখনো বলেনি। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানোর ঘটনায় তাদের যদি হুকুমের আসামি করা হয়, তবে সেই মামলাগুলোও যে ভিত্তিহীন হয়ে যাবে প্রাথমিক শুনানিতে সে কথা তো আইনজীবীরা বলছেন।

সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ
 
ভাবমূর্তি নষ্ট করেছি আমরাই: ফিরোজ মিয়া

সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির মূল কারণ রাজনৈতিক। সরকার আমলাদের নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করে। যারা নিরপেক্ষ তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়। কারণ তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো যায় না। আর যারা দলবাজ তারা সবই করেন। এদের অনেকের কারণে আমলাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। আসলে বলতে গেলে আমরা নিজেরাই আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছি।

অবশ্য সরকারি চাকরি ও কর্মচারী শৃঙ্খলা আইনে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ দুই আইনে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা কম। দু-একটা ঘটনা তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না। এ কারণে প্রশাসন দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা এখান থেকে বার্তা পাচ্ছে, ঘটনা যা-ই হোক, চাকরি যাবে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৯৮৫ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা কঠোর ছিল। ওই বিধিমালা বহাল থাকলে দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়া কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে বিধিমালাটি দুর্বল করে ফেলায় দুর্নীতি করেও কঠোর শাস্তি পাচ্ছেন না দুর্নীতিবাজরা। এটা প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে না।

যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দুঃখজনক। কিছু অভিযোগ সত্য হলেও হতে পারে। তবে তদন্ত ও বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আমরা তাকে দুর্নীতিবাজ বলতে পারি না। 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব

ইউনূস-ইব্রাহিমের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে পাচার অর্থ ফেরানোর ইস্যু

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৮ এএম
ইউনূস-ইব্রাহিমের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে পাচার অর্থ ফেরানোর ইস্যু
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মালেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করবেন। পাচারকারীদের তালিকা এবং পাচার করা অর্থে ওই দেশে কেনা সম্পদের খোঁজ পেতেও আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। 

দুই দেশের সরকারপ্রধানদের এবারের বৈঠকে অন্যান্য ইস্যুর মধ্যে অর্থ পাচারের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি হবে কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর। সফরের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। বৈঠকে দুই সরকারপ্রধানের আলোচনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের কাঠামোর মধ্যে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চাওয়া হবে। 

মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার 
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদন্তে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সরকারের কাছের লোক বলে পরিচিত ব্যবসায়ীদের অনেকের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যে দেশগুলোতে অর্থ পাচার বেশি হয়েছে, তার মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। 

চলতি বছরের ২৯ মার্চ মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতিমন্ত্রী টিয়ং কিং সিং এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএমটুএইচ) কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন, যেখানে ভারতের ১ হাজার ২২৩ জন আছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে পিভিআইপি নামে প্রিমিয়াম ভিসা চালু করেছে, যা প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। পিভিআইপি প্রোগ্রামে আবেদন করেছেন মোট ৪৭ জন বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারী, যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। এমএমটুএইচ প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য পঞ্চাশের নিচের বয়সের ব্যক্তির জন্য প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করতে হয়। মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) তৈরি প্রতিবেদনে হিসাব কষে বলা হয়েছে, শুধু এমএমটুএইচ কর্মসূচির মাধ্যমেই প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। অথচ এসব অর্থের ৯০ শতাংশই এনবিআরের কাছে অঘোষিত। অর্থাৎ কর অনারোপিত অর্থ।

পেনাং ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ সালে এমএমটুএইচ প্রকল্পের মোট বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ করেছিলেন বাংলাদেশিরা। এ ছাড়া ২০০৯ সালে ৫ শতাংশ, ২০১০ সালে ১০ শতাংশ, ২০১১ সালে ১২ শতাংশ, ২০১২ সালে ১২ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করেছিলেন। পরের বছরগুলোতেও বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে।

বাংলাদেশের কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়েছেন, তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল কয়েক বছর আগে। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। এনবিআর থেকেও মালয়েশিয়ার কাছে একটি তালিকা চেয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

সে সময়ে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটি মালয়েশিয়া সরকারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ। বাংলাদেশ সরকার যদি প্রমাণ দিতে পারে যে কারা মানি লন্ডারিং করেছেন বা কাদের বিরুদ্ধে এ-সংক্রান্ত মামলা আছে, তাহলে তাদের তথ্য তারা (মালয়েশিয়া) দেবে। পরে বিগত সরকারের আমলে এ বিষয়ে কার্যকরী কিছু হয়নি। 

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে বাংলাদেশ থেকে দুইভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রথমত আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত, সরাসরি হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচার হচ্ছে। এসব অর্থের বড় অংশই অবৈধভাবে আয় করা। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসাসহ অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই অর্থ আয় হয়েছে। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে পুরো টাকাই অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধানের সঙ্গে তার অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক। এবারে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে আশা করা যায়। যদি পাচারকারীদের তালিকা পাওয়া যায় এবং পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যায়, তবে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’ 

শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা
২০০৮ সালে বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, আট বছর পর তা চালু হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ফের ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। তিন বছর পর ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সেই বাজার খোলে। ২০২২ সালের আগস্টে দেশটিতে আবারও বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১ জুন থেকে বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। নতুন নিয়মে কর্মী পাঠাতে হলে আবারও সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এবারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নতুনভাবে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় আনতে পারেন বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর 
দু-দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে শুক্রবার বিকেলে তিনি ঢাকা সফর করবেন। এদিন দুপুর ২টা বা তার পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেন।  বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার কথা আছে। তাকে স্বাগত জানাতে প্রধান উপদেষ্টা যাবেন নিজেই। এরপর তিনি সরাসরি একটি হোটেলে যাবেন বলে জানা যায়। সেখানে তিনি প্রায় চার ঘণ্টা অবস্থান করবেন। প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। 

মালয়েশিয়ার নেতা গত আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানান। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে।

মালয়েশিয়ার অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার রয়েছে, যা সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং তার থ্রি-জিরো ধারণাকে প্রচার করে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি মালয়েশিয়ার কোম্পানি বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং এখন শিক্ষাসহ আরও বিনিয়োগে আগ্রহী। মালয়েশিয়ার একটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাড়ি বিতরণ ও সংযোজনের জন্য চুক্তি করেছে।

গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার সদস্য, উপমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল থাকবে। ঢাকায় অবস্থানকালে আনোয়ার ইব্রাহিম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। 

তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত এই সফরের আয়োজন করা হয়। আমরা সব বিষয়ে আলোচনা করব এবং আশা করব আসিয়ান সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে আসিয়ানের মালয়েশিয়ার সভাপতিত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোতে আরও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রত্যাশা নিয়েও আলোচনা হবে। এ সফর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অংশীদারত্ব আরও জোরদার করবে, একাধিক খাতে সহযোগিতা বাড়াবে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।