ঢাকা ২১ কার্তিক ১৪৩১, বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ব শিশু দিবস ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সব মানুষই শিশু এবং বাংলাদেশও মেনে চলে এ সংজ্ঞা। সে অনুযায়ী দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (এসভিআরএস) ২০২৩ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫ বছর থেকে ১৫ বছর বয়সী মোট জনগোষ্ঠীর ৫৯.৯ শতাংশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন রয়েছে। আর এদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এদের অধিকাংশই জানে না নিরাপদ ও কার্যকরীভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে। ফলে প্রতিদিনই শিশুদের মাঝে বাড়ছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়া। এমন অবস্থায় ‘প্রতিটি শিশুর অধিকার, রক্ষা করা আমাদের অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। 

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশের ৯৫ শতাংশ শিশুই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় ভুগছে। যেখানে বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল ডিমেনশিয়াকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- স্ক্রিনে অতিরিক্ত টাইম দেওয়ার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয় যেমন- আচরণে পরিবর্তন, দুর্বল স্মৃতিশক্তি, ফোকাস করতে অক্ষমতা, আগ্রাসী আচরণ, বিরক্তিভাব, দুর্বল সামাজিক দক্ষতা, ক্লান্তি এবং কম ঘুম ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। এগুলোকেই ডিজিটাল ডিমেনশিয়া বলা হচ্ছে। এ গবেষণা বলছে, বর্তমানে শিশুদের একটি ডিভাইস ব্যবহার করার গড় সময় দিনে ৭.৫ ঘণ্টা। কিছু কিছু কিশোরের ক্ষেত্রে এটি দিনে ৮-১২ ঘণ্টাও হয়ে যায়। আর ফোনের অত্যধিক ব্যবহার এবং তার ওপর নির্ভরশীল এসব বাচ্চারাই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার শিকার হচ্ছে। সেই কারণে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হচ্ছে তাদের।

বাংলাদেশে বাড়ছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়া
ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার এসব লক্ষণ এখন বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার আগেও এ ধরনের সমস্যা নিয়ে তেমন শিশু আসত না মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবে এখন অভিভাবকরা যেমন ভুলে যাওয়া, বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা ও দুর্বল সামাজিক দক্ষতার অভিযোগ নিয়ে শিশুদের নিয়ে আসছেন। 

এর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, মূলত তিনটি কারণে শিশুদের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো করোনাকালে অনলাইন স্কুলিং হওয়ায়, তখন অভিভাবকরা শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়েছেন। সেই সময় শিশুরা মোবাইল নিজে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে যা পরে আর পরিবর্তন করা হয়নি। অন্যটি হলো, অভিভাবকরা প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকে এখনকার দিনে। কারণ তাদের চাকরি, বাসার কাজে সাহায্যকারী না থাকা, যৌথ পরিবারে না থাকা। ফলে তারা সময় দিতে পারছেন না সন্তানকে, তখন তারা শিশুদের ব্যস্ত রাখার জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। এ ছাড়া যেহেতু অনেক বাচ্চাই এখন মোবাইল ব্যবহার করে, তাই সচেতন বাবা-মা যারা শিশুর হাতে মোবাইল দিচ্ছেন না তারাও এখন তার বাচ্চাদের কাছে চাপের মুখে পড়ছে যে তাদের বন্ধুরা মোবাইল ব্যবহার করছে কিন্তু সে কেন মোবাইল ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে ওই অভিভাবকরাও বাচ্চাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। 

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানসিক অসুস্থতা, যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা আমাদের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন বা ডিজিটাল আসক্তি সবার মধ্যেই কমবেশি দেখা যায়। কখনো কাজ, তো কখনো সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, কখনো বা সিনেমা দেখা, কখনো আবার গেম খেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসক্ত থাকে। যার ফলে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। বিশেষ করে ডিজিটাল ডিভাইসের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সীদের আক্রান্ত করছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা।

একাগ্রতা এবং ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ছে
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের কাছে অভিভাবকরা শিশুদের মধ্যে বেশিক্ষণ কোনো বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা বা একাগ্রতা রাখতে না পারা এবং পড়ার কিছুক্ষণ পর বা কিছুদিন পরই তা ভুলে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসছেন।’ 

বিশেষজ্ঞরা জানান, স্ক্রিন টাইম দিনে তিন ঘণ্টার বেশি হলে তা আসক্তি হয়ে যায়। বিশেষ করে অনেকের স্ক্রিন টাইম ১২-১৫ ঘণ্টা, যা বেশ বিপজ্জনক। পাশাপাশি রাতে বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে তা ঘুমের ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। স্ক্রিনের নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে এবং ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা কমায়।

বাঁচার উপায়
এসব সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে ডিজিটাল ডিটক্সের নিয়ম মেনে চলা উচিত। অর্থাৎ এ সময় কোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। স্ক্রিন টাইম নির্ধারণের পাশাপাশি বিরতিও নিতে হবে। একজনকে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বেরিয়ে বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। আর সেই সঙ্গে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত এবং স্ক্রিন টাইম ৩ ঘণ্টারও কম রাখা উচিত। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা মোবাইল ব্যবহার করে কিন্তু সেটি হয় ইতিবাচক ব্যবহার। আমাদের দেশের শিশুরাও যদি ইতিবাচক ব্যবহার করতে পারে তবে শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে মোবাইলের নিরাপদ, যৌক্তিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ সে যে মোবাইল ব্যবহার করছে সেটি কতটা কার্যকরী হচ্ছে তার জন্য তা দেখতে হবে এবং কার্যকরী ব্যবহার তাকে শেখাতে হবে। পাশাপাশি শিশুটি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজে বা অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে কি না তাও তাকে শেখাতে হবে। পরিমিত ব্যবহার তাকে শেখাতে হবে যেন সে একটি নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার করে। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় অভিভাবকদেরকেও মোবাইলের ব্যবহারে পরিমিত হতে হবে।’ 

অনেকটা একই মত দিয়ে অধ্যাপক সালমা আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে যে রেস্ট্রিকশনটা আছে সেটা রাখা, এবং বাচ্চাদের জন্য হেলদি প্লে-টাইম বের করতে হবে। এ ছাড়া স্কুলেও যদি তাদের বিতর্ক, খেলা, ছবি আঁকা বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলেও তাদের যোগাযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বাচ্চাদেরকে বেশি সময় দিতে হবে, তাদের বাইরে খোলা জায়গায় খেলতে নিয়ে যেতে হবে।’ 

এখনো হয়নি ওপি অনুমোদন, স্বাস্থ্যসংকটের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম
এখনো হয়নি ওপি অনুমোদন, স্বাস্থ্যসংকটের শঙ্কা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

গত জুনে হওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনায় অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) এখনো অনুমোদন হয়নি। যে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উন্নয়নসংশ্লিষ্ট খাতগুলোয় কিছু কিছু সংকট ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। দ্রুত ওপি অনুমোদন না হলে সামনে আরও সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ আশাবাদী, সংকট উত্তরণে সরকারের কোনো না কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ওপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে হতে পারে অনুমোদন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওপি অনুমোদন না হওয়ায় জুলাই থেকে বেতন পাচ্ছেন না সারা দেশের ১৪ হাজার কর্মরত কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। 

বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বদনিভাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘চার মাস হলো বেতন পাই না। কবে নাগাদ যে বেতন পাব তারও কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। জিনিসপত্রের যে দাম, ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। কতদিনই বা ধারদেনা করে চলব। এভাবে মাসের পর মাস চলাও কষ্টকর। কী যে করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কবে নাগাদ বেতন পাব তাও যদি জানতে পারতাম, তাহলেও একটু নিশ্চিন্ত হতাম।’

কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি ডা. আবু মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের যারা আছেন, আশা করি তারা জানুয়ারিতে গিয়ে বেতন পাবেন। ওপি অনুমোদন না হওয়ার কারণে তাদের বেতন হচ্ছে না। আশা করি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটা সময় যেটা করা হতো, তা হলো আগে প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান (পিআইপি) অনুমোদন হতো। তারপর ওপি হতো। কিন্তু মাঝখানে তারা এটা উল্টে আগে ওপি অনুমোদন দিয়ে তারপর পিআইপি অনুমোদন দিত। এখন আবার সেই আগের মতোই পিআইপি অনুমোদন হবে। তারপর ওপি অনুমোদন। নভেম্বরে হয়তো পিআইপি অনুমোদন হবে। তারপর ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ওপি অনুমোদন হবে। আশা করি, কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা জানুয়ারিতে বেতন পাবেন। ওপি অনুমোদনে বিলম্ব হওয়ায় শুধু সিএইচসিপিরা নন, ওপিসংশ্লিষ্ট সবাই সমস্যায় আছেন।’ 

সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘শিশুদের টিকা, জরুরি ওষুধ, নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন ইত্যাদি জরুরি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ওপি অনুমোদন করা উচিত।’ 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে ওপি অনুমোদন হয়ে চলে আসে, এবার এখনো আসেনি। আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। সরকারও নিশ্চয়ই একটা উদ্যোগ নেবে। সরকারের একটা পরিকল্পনা অবশ্যই আছে।’ 

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ ১২টি ওপির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেগুলো হলো কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি), নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি), হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট (এইচএসএম), অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি), লাইফস্টাইল অ্যান্ড হেলথ এডুকেশন (এলঅ্যান্ডএইচএ), টিবি লেপ্রোসি অ্যান্ড এসডিটিএইডস প্রোগ্রাম (টিবিএল অ্যান্ড এএসপি), কমিউনিটি ক্লিনিক অ্যান্ড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি), পিএমআর (প্রাইমারি হেলথ কেয়ার), হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম অ্যান্ড ই-হেলথ, উপজেলা হেলথ কেয়ার (ইউএইচসি), ন্যাশনাল নিউট্রেশন সার্ভিস (এনএনএস) এবং ম্যাটারনাল, নিউবর্ন, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্ট হেলথ (এমএনসিঅ্যান্ড এইচ)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওপি অনুমোদন না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য খাতের সব এমএসআরের (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিক্যুইজিট) কেনাকাটা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে টিকাদান, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন, সাপেকাটা রোগীদের অ্যান্টিভেনম, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়ার, র‌্যাবিস (কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক) টিকা, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের টিকা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা কেনা । ফলে বিগত অর্থবছরে কেনা টিকার মজুত ফুরিয়ে গেলে দেশের মানুষকে এসব টিকা বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করতে হবে। তবে এগুলোর দাম অনেক বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না।

কোভিড মহামারি, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ, বন্যা, খরা ও শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের সব ব্যবস্থা করা হয় ওপির টাকা দিয়ে। এবার ওপি অনুমোদন না হওয়ায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়েছে। আসন্ন শীতকালের রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া, নিপাহ, সিওপিডি (ক্রনিক অবসট্রাকক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ), শিশুদের নিউমোনিয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। মুখ থুবড়ে পড়বে মরণব্যাধি এইডস ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এতে এই ভয়াবহ রোগগুলো ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

ওপি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, ‘নতুন ওপি না হওয়া পর্যন্ত রোগীর স্বার্থে পুরোনো ওপির বরাদ্দ অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে বড় রকমের সংকট তৈরি হবে।’

ওপি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাবের খসড়া

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাবের খসড়া
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জরিমানা বাড়িয়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ই-সিগারেট, ভ্যাপার ও হিটেড টোব্যাকোসহ কয়েকটি তামাকজাত দ্রব্য সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কয়েকটি ধারায় জেল-জরিমানা আড়াই গুণ থেকে সাড়ে ৬ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫’ অধিকতর সংশোধনের জন্য ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন-২০২৩’ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন হতে পারে বলে জানা গেছে। 

প্রস্তাবিত সংশোধনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে অনধিক ৫ লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধনীতে নতুন ধারা ৬(ছ) যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে মিষ্টিদ্রব্য, মসলা, সুগন্ধি (ফ্লেভার), আসক্তিমূলক দ্রব্য, রং ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের সঙ্গে এসব উপাদানসহ অন্য কোনো মিশ্রণ যুক্ত করতে পারবেন না বা করাতে পারবেন না। কেউ এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার বা বারবার একই ধরনের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিক দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন।

৬(ঙ) ধারায় ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম, ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টস ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম, যন্ত্রাংশ বা অংশ বিশেষ (ই-সিগারেট, ভ্যাপ, ভ্যাপিং, ভ্যাপার ও ই-লিক্যুইড ইত্যাদি), হিটেক টোব্যাকো প্রডাক্টস বা ইমার্জিং টোব্যাকো প্রডাক্টস যে নামেই অভিহিত হোক না কেন- উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণা, প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতা, বিপণন, বিতরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন করতে পারবেন না। হিটেড টোব্যাকোর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন তামাকজাত দ্রব্য, যা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করে এবং ব্যবহারকারী যা শ্বাসের মাধ্যমে মুখে টেনে গ্রহণ করে। এই ধারায় অপরাধ প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কোম্পানির মালামাল জব্দসহ দায়ীদের কমপক্ষে ৬ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন এবং কোম্পানির ক্ষেত্রে উৎপাদন ও বিক্রয়ের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খেলাধুলার স্থান ও শিশুপার্কের সীমানার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সময়ে সময়ে আদেশ দিয়ে সীমানার পরিধি বাড়াতে পারবে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হারে দণ্ড দেওয়া হবে। সরকারের নিবন্ধন ছাড়া কেউ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারবে না। এই বিধান লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিক দ্বিগুণ হারে দণ্ড দেওয়া হবে। 

নিষিদ্ধ কুম্ভি পাতা, টেন্ডু পাতা বা অন্য কোনো গাছের পাতা দ্বারা মোড়ানো বিড়ি উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও কেনাবেচা করলে সর্বোচ্চ ৩ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিক দ্বিগুণ হারে দণ্ড দেওয়া হবে। কোম্পানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স বাতিল, আর্থিক লেনদেন স্থগিত বা জব্দসহ আর্থিক জরিমানা আরোপ করা যাবে। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে কুম্ভি পাতা, টেন্ডু পাতা বা অন্য কোনো গাছের পাতা দ্বারা মোড়ানো বিড়ি শুধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কাগজে মোড়ানো প্রচলিত বিড়ি এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

সংশোধনীতে তামাকজাত দ্রব্যের সব মোড়ক, কার্টন, বস্তা ও কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা যেসব প্যাকেটে দুটি প্রধান পার্শ্বদেশ নেই সেই সব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের ওপরে কমপক্ষে ৯০ ভাগ স্থানে বাংলায় তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতি সম্পর্কে সতর্কবাণী ও উৎপাদনের তারিখ লিখতে হবে। এ বিধান লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানির মালামাল জব্দসহ কোম্পানির মালিক ও দায়ীদের সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হারে দণ্ড এবং কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং ছাড়া তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের নতুন একটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘তামাক’ বলতে কোনো নিকোটিয়ানা টাবাকাম বা নিকোটিয়ানা রাসটিকার শ্রেণিভুক্ত উদ্ভিদ বা এ-সম্পর্কিত অন্য কোনো উদ্ভিদ বা এসব উদ্ভিদের কোনো পাতা বা ফল, শিকড়, ডাল বা তার কোনো অংশ বোঝাবে। ‘তামাকজাত দ্রব্য’ বলতে তামাক, তামাক পাতা বা এটার নির্যাস হতে প্রস্তুত করা যেকোনো দ্রব্য, যা চুষে বা চিবানোর মাধ্যমে গ্রহণ করা যায় বা ধূমপানের মাধ্যমে শ্বাস দিয়ে টেনে নেওয়া যায় বা অন্য কোনোভাবে সেবন করা যায় এবং বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার, হুক্কা বা পাইপের ব্যবহার্য মিশ্রণ এবং নতুন তামাকজাত দ্রব্য যেমন ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম, হিটেড টোব্যাকো দ্রব্য ইত্যাদি নিকোটিন দ্রব্য। এসব যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, এসব তামাকজাত দ্রব্য হিসেবে এর অন্তর্ভুক্ত হবে।

পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিদ্যমান আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের শাস্তি ৩০০ টাকা জরিমানা থাকলেও তা বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বার বা বারবার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হারে বাড়বে দণ্ড। 

বিদ্যমান আইনে টিভি, সংবাদপত্র, বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেটেও প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইন্টারনেট বলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ধারা ২-এর দফা (৮)-এ প্রদত্ত সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী ইন্টারনেটকে বোঝানো হয়েছে। 

সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে কোনো তামাক বা তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক ও প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। কোনো বাণিজ্যিক গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে অথবা কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়া যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘনে ১ লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনে অভিযোগ দায়ের ও মামলা নিষ্পত্তিসহ সব ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ‘মুহূর্তেই পরিবেশ নীরব’

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ‘মুহূর্তেই পরিবেশ নীরব’
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় গত সোমবার রাতে চেকপোষ্ট বসিয়ে ডিএমপির ডগ স্কোয়াড দিয়ে দূরপাল্লার বাসে তল্লাশী চালানো হয়। ছবি: খবরের কাগজ

ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান ও তল্লাশি চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে সেনাবাহিনী। যৌথ বাহিনী যেখানেই অভিযান চালাচ্ছে, সেখানেই মুর্হূতেই পরিবেশ নীরব হয়ে যাচ্ছে। তাদের দেখে লোকজনের আনাগোনা কমে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিকল্প পথে গাড়ি চলাচল। অপরাধীরা দ্রুতই ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার ধরাও পড়ছে। 

যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে দখলদাররা তাদের দখলদারত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তবে নিরীহ লোকজন যৌথ বাহিনীর অভিযানকে স্বাগত জানাচ্ছে। কেউ আবার সেনাসদস্যদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলছেন। তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কিছু বিষয়ে অভিযোগ করছেন সরাসরি। সেই সব অভিযোগ লিখে রাখছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানী ঢাকার ৩ এলাকায় সরেজমিনে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। 

মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, যৌথ বাহিনীর তিনটি গাড়ি শাহ আলী প্লাজার সামনে এসেছে।

সেনাবাহিনীর গাড়িতে একজনকে হান্ডকাফ পরা অবস্থায় দেখা গেল। তার কাছে স্বল্প পরিমাণ গাঁজা পেয়েছে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীর তিনটি গাড়ি দেখে ঘিরে ধরেছেন পথচারীরা। লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়। সেনাসদস্যরা তাদের চলে যেতে জোরে ধমক দিলে মুহূর্তেই মানুষের ভিড় কমে যায়। চার সেনাসদস্যের হাতে লাঠি দেখা যায়। তারা ওই লাঠি দিয়ে সড়কে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে এক সেনাসদস্য ও এক পুলিশের সদস্য গাড়ির কাগজপত্র দেখছেন।

সোহেল নামে এক মোটরসাইকেলচালকের কাগজ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে তাকে মামলা দিল ট্রাফিক পুলিশ। আরেক মোটরসাইকেলচালককে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। জানা গেল তার নাম সুমন। কেন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তার হেলমেটটি ভাঙা। গলায় বাঁধানোর ফিতা নেই। এ জন্য তাকে দাঁড় করানো হয়েছে। তিনি বারবার যৌথ বাহিনীর সদস্যদের কাছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কাকুতি-মিনতি করছিলেন, কিন্তু তাকে ছাড়া হয়নি। 

তাকে বলা হয় দেড় ঘণ্টা একস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তবেই তাকে ছাড়া হবে। এর আগে তাকে ছাড়া হবে না। এ ছাড়া যৌথ বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে যানবাহনের কাগজ পরীক্ষা করতে দেখা গেল। গাড়ির ভেতর কোনো মাদক বা বিস্ফোরক পণ্য আছে কি না, তা তন্নতন্ন করে খোঁজ করলেন। 

যৌথ বাহিনীতে পুলিশের সদস্য এসআই নাজমুল জানান, বর্তমানে অপরাধের মাত্রা কমানোর জন্য অভিযান চলছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য মানুষের মন থেকে ভয় দূর করা। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি অপরাধীদের কাছে বার্তা দেওয়া যে, কোনো ধরনের অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। 

আরিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ৫ বছর আগে এক ব্যবসায়ীর কাছে তিনি ৩ লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি ফেরত দিচ্ছিলেন না। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আসার পরেই ওই ব্যবসায়ী তার দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত অক্টোবর মাস থেকে একটি প্রভাবশালী দল তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা বিষয়টি যৌথ বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছেন। কারা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন তাদের নাম জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। 

গতকাল বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার এনবিআরের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেল, যৌথ বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি বুলডোজার দিয়ে সেগুলো ভাঙা হচ্ছে। আতঙ্কে ওই ফুটপাত থেকে তাদের দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যরা। পাশাপাশি ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে তল্লাশি চালাতে দেখা গেল। সাদা রঙের একটি গাড়িকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। 

জানা যায়, ওই প্রাইভেট কারের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চালকের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। এ জন্য তাকে দাঁড় করানো হয়েছে। তাকে একটি মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেল। স্থানীয় এক পান দোকানি জানান, ফুটপাতে কিছু দোকান থাকার কারণে পথচারীদের হাঁটতে কষ্ট হয়। বিষয়টি যৌথ বাহিনীর নজরে দিয়েছিল তারা। 

গত রবিবার রাতে খিলক্ষেত এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, খিলক্ষেত থানার একটু দূরেই যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীর ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড, ট্রাফিক পুলিশ এবং খিলক্ষেত থানার পুলিশকে ওই অভিযানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ওই সড়কে চলাচলকারী সব গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। একাধিক গাড়িকে মামলাও দেওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব গাড়ি বিমানবন্দরে যাচ্ছে এবং বিমানবন্দর দিয়ে আসছে সেই সব গাড়িতে বিশেষ করে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুরের বিষফোড়া জেনেভা ক্যাম্প

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
মোহাম্মদপুরের বিষফোড়া জেনেভা ক্যাম্প
রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে জেনেভা ক্যাম্পের টোল মার্কেট। ছবি: খবরের কাগজ

মোহাম্মদপুরের বাবর রোড, হুমায়ুন রোডসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের জন্য জেনেভা ক্যাম্প এখন একটি ‘বিষফোড়া’য় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় জনগণের মতে, মোহাম্মদপুরে যত অপরাধ সংঘটিত হয়, তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই জেনেভা ক্যাম্প। এখানকার টোল মার্কেট বিহারিদের দখলে চলে গেছে। মুরগিপট্টিতে জেঁকে বসেছে মাদক কারবার। এ ছাড়া প্রতিরাতেই শোনা যায় গুলির শব্দ। এ জন্য ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখেন স্থানীয়রা।

বাবর রোডের বাসিন্দারা বিভিন্ন সময়ে বিহারিদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে মোহাম্মদপুর থানা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, র‌্যাব-২, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর- এই চার সংস্থা বরাবর তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা খবরের কাগজকে জানান, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়াকে নিরুৎসাহিত করতে, সর্বোপরি তাদের শান্ত রাখা এবং মানবিক কারণেই এখানে বিহারিদের বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

রিকশার ব্যাটারি চার্জ চলছে অবৈধভাবে 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেনেভা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক অত্যন্ত সরু। ফলে আগুন লাগলে তা সবার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেই এই এলাকায় ক্যাম্পের বাসিন্দারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করছেন। প্রতিদিনই এই এলাকা থেকে কয়েক শ রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য সন্ধ্যা থেকেই লোকজনকে লাইন ধরতে দেখা যায়। কিন্তু বিল দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু না থাকায় এখান থেকে সরকার কোনো আয় পাচ্ছে না। প্রতিটি রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া বাবদ ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়, যা চলে যায় বিহারিদের কয়েকজন সর্দার বা নেতার কাছে।

পরিবেশের কারণে অনেকেই বাসা ছাড়ছেন
সরেজমিনে দেখা যায়, বাবর রোডে পশু জবাই ছাড়াও এই সড়কের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা কয়েক শ মুরগির দোকান ও কাঁচাবাজারের জন্য এই এলাকার পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। ফলে এখানে বসবাস করা বাসিন্দাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্য এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠছেন।

১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৫ একর জায়গায় এখন ৬০ হাজারের মতো মানুষ বসবাস করছে এই জেনেভা ক্যাম্পে। এলাকার জনসংখ্যাও ক্রমেই বেড়ে চলছে। ক্যাম্পের উত্তরে বাবর রোডের অভিজাত আবাসিক এলাকা, দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় মোহাম্মদপুর হাইস্কুল ও আবাসিক এলাকা এবং পূর্ব পাশে হুমায়ুন রোডের আবাসিক এলাকা। মাঝখানে ১৫ একর জায়গাজুড়ে জেনেভা ক্যাম্প। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময়ই খারাপ ছিল। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আবারও অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, অবস্থাটা এমন, মনে হচ্ছে সবাই যেন স্বাধীন হয়ে গেছে। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করছে না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর তিনটি ক্যাম্প ছাড়াও সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অস্ত্রের ঝনঝনানি, মাদক কারবার, বাজার-ফুটপাত দখল, হত্যা, ছিনতাই ও গুলিবিনিময় নৈমিত্তিক ঘটনা। গত দুই মাসে রীতিমতো আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠেছে এই এলাকা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চার সংস্থাকে যেসব অভিযোগ দিয়েছিলেন স্থানীয়রা
২০২২ সালের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, ফ্ল্যাট-বাড়ির সামনে রাস্তায় বিহারিদের হোটেল, মুরগির দোকান, কসাইখানাসহ বিভিন্ন দোকান রয়েছে। মুরগি, গরু, ছাগলের রক্ত, মলমূত্রে রাস্তা সব সময় নোংরা থাকে। বর্জ্যের কারণে স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে নোংরা পানিতে রাস্তা ভেসে যায়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার করেন না বলেও তারা লিখিত অভিযোগ করেন। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি অভিযোগে অসমাপ্ত রাস্তার কাজ শেষ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও সিটি করপোরেশনের টোল প্রদান না করা দোকান উচ্ছেদ করার আবেদন করা হয়। এ ছাড়া বাবর রোডের দক্ষিণ পাশের সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা টোল মার্কেট উচ্ছেদ করার দাবিও জানানো হয়। 

চলতি বছরের মার্চে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগে বাসিন্দারা জানান, ক্যাম্পের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, চোরাই গ্যাস লাইন, হিটার ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ। এ ছাড়া বিয়ে, উরস ও জিয়াফতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাঠ জ্বালিয়ে রান্নার কাজ করা হয়। এসব কারণে এই এলাকা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। 

এ ছাড়া র‌্যাব-২ ও মোহাম্মদপুর থানায় আরও জানানো হয়, অতিরিক্ত শব্দ করে সারা রাত গানবাজনা হয়। এছাড়া রাস্তায় মাদক বিক্রি করা হয়। 

বাবর রোডের একাধিক বাসিন্দা খবরের কাগজকে জানান, প্রতিদিন রাতে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। যে কারণে সব সময়ই তারা জানালা-দরজা বন্ধ রাখেন। এ ছাড়া বাসার সামনে  মাদক কারবারিদের আনাগোনা সব সময়ই থাকে। বাসা থেকে বের হলেই মাদক কেনার জন্য চারপাশ থেকে কারবারিরা ঘিরে ধরেন। ফলে দিনের বেলায় বিশেষ প্রয়োজনে বের হলেও সন্ধ্যার পরে তারা বাসা থেকে বের হন না। 

তারা আরও জানান, ক্যাম্পের বাসিন্দারা এখন তাদের জন্য বিষফোড়া। মুরগিপট্টির গোলাম কসাই, বাবু, আজগর, নাদিম, চট্টি, সোনিয়াসহ আরও বেশ কয়েকজন এই ব্যবসার আড়ালে আসলে মাদক ব্যবসা করেন। এ ছাড়া মাদক বিক্রি, রাস্তায় ময়লা ফেলা, পশু জবাই ও গাড়িতে হামলা করা প্রতিদিনের ঘটনা। এসবের প্রতিবাদ করলেই বাসিন্দাদের গায়ে হাত তোলা থেকে হত্যার হুমকিও দিয়ে থাকে দুর্বৃত্তরা। 

এ ধরনের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান এই রোডের বাসিন্দারা। তবে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হওয়ার পর এখন তারা স্বস্তিবোধ করছেন।

সম্প্রতি বাবর রোডের মুরগিপট্টির পাশে নিজ ফ্ল্যাট ছেড়ে ভাড়া বাসায় উঠেছেন নাজমুল ইসলাম। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিহারিরা কোনো শৃঙ্খলা মানতে চায় না। তারা সারা রাত জেগে গানবাজনা করে ও দিনের বেলায় ঘুমায়। বাসার সামনে নোংরা করে রাখে। আর মাদক বিক্রি তো সাধারণ ঘটনা। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে তাদের বিষয়ে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তো বসবাস করা যায় না। এখন ভাড়া বাসায় থাকছি।’ 

বাবর রোডের অবসরে যাওয়া আরেক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার আমাদের জন্য প্লটগুলো দিয়েছিল। এখানে বাড়ি বানিয়ে বিপদে পড়েছি। এই বিহারি ক্যাম্প এখান থেকে না সরালে কোনোভাবেই বসবাস সম্ভব নয়। সরকারের কাছে জোর দাবি, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।’

জেনেভা ক্যাম্পের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দখলে নিয়ে বিহারিরা গড়ে তুলেছে একটি টোল মার্কেট। এখানে মুদি দোকান দেওয়ার পাশাপাশি কাঁচাবাজারের ব্যবসা করছে তারা। এই টোল মার্কেটের দোকানগুলো তাদের আয়ের অন্যতম উৎস।

টোল মার্কেটে ৩৬৫টি দোকান রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মুদি দোকানদার। টোল মার্কেটের ভাই ভাই জেনারেল স্টোরের আবু তালেব খবরের কাগজকে বলেন, এই মার্কেটের দোকানগুলোর একাধিক মালিক ও তারা সবাই বিহারি। ৮ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দেন। এ ছাড়া মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয় বলে জানান এ প্রতিবেদককে। 

এখানে তো প্রতিদিনই মাদক বিক্রি নিয়ে গোলাগুলি হয়, কীভাবে ব্যবসা করেন- উত্তরে আবু তালেব বলেন, ‘এইডা কোনো ব্যাপার না। এই হানে এইডা সাধারণ ঘটনা।’ 

বাবর রোডে প্রতিদিনই ভোর থেকে কয়েক শ গরু জবাই করা হয়। এই গরুর মাংস রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। গরু জবাইয়ের কাজটি করে থাকেন গোলাম কসাইসহ বেশ কয়েকজন। গোলাম কসাই খবরের কাগজকে বলেন, ‘এতটুকু জায়গার মধ্যে এত মানুষ থাকে। জায়গা না থাকায় রাস্তায় গরু জবাই করি।’ তবে কসাই পেশার আড়ালে মাদক বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায় বেশি জড়িত নারীরা। এই কাজে তারা কোলের শিশুদেরও ব্যবহার করেন। মুরগিপট্টিতে ইয়াবা কারবারি হিসেবে পরিচিত চট্টি ও তার বোন সোনিয়া। সম্প্রতি ইয়াবাসহ সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোনিয়ার বিষয়ে চট্টি খবরের কাগজকে বলেন, ‘হুদাই (শুধু শুধু) ধরছে, ধরলে টাকা পাওন যায়।’ মাদকসহ ধরছে বলতেই তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘কী মাদক, কিচ্ছু না, ভুয়া।’ 

সম্প্রতি যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোহাম্মদপুরসহ জেনেভা ক্যাম্পে শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বুনিয়া সোহেল নামের একজন নেতা রয়েছেন। 

মোহাম্মদপুর প্রধান সেনাক্যাম্পের একজন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে জানান, জেনেভা ক্যাম্প হচ্ছে অপরাধীদের আশ্রয়স্থল। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। তবে ক্যাম্পে প্রচুর অলিগলি থাকায় অপরাধীদের ধরতে বেগ পেতে হয়। অভিযানের পর এই এলাকায় অপরাধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। 

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুর এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। যোগদানের পর থেকে আমি অপরাধ দমনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জেনেভা ক্যাম্পসহ পুরো মোহাম্মদপুরে পুলিশ প্রতিদিনই টহল দিচ্ছে। অপরাধ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।’

তিনি বলেন, ‘মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে গোলাগুলি তাদের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দমনে পুলিশ কাজ করছে। খবর পাওয়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই থানাতে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ মামলা হতো। আমি আসার পর শক্ত হাতে অপরাধ দমনের চেষ্টা করছি। ফলে মামলার সংখ্যাও কমে এসেছে।’ 

বাবর রোডের বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা থানা থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তবে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা না গেলে এই এলাকার অপরাধ পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হবে না।’

প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি কমিশন গঠনে শঙ্কা

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি কমিশন গঠনে শঙ্কা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশের ১৪তম নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে গত ৩১ অক্টোবর ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার। কিন্তু ২০২২ সালে করা বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংস্কারের আগেই এই কমিটি গঠন হওয়ায় এবারও ইসিতে যথাযথ ব্যক্তিদের মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

তবে যে আইনেই গঠিত হোক, এবারের সার্চ কমিটি জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, সার্চ কমিটি গঠনের পরও আইনি সংস্কারে কোনো বাধা নেই। তার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কাজ অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংস্কারকাজ একসঙ্গে এগিয়ে নিতে চলমান আইনেই সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনমতকে প্রাধান্য দিয়েই গঠিত হবে নতুন নির্বাচন কমিশন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আগে কোনো ধরনের আইন ছাড়াই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। মূলত ক্ষমতাসীন সরকারের পছন্দ-অপছন্দের তালিকা অনুসারে তখন নির্বাচন কমিশন গঠিত হতো। ২০২২ সালের আগে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে একটি সার্চ কমিটি হলেও তার ফলাফল ছিল ‘রাতের ভোটের’ নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী সময়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে যে কমিশন গঠিত হয়, সেটিও একটি প্রহসনের নির্বাচন উপহার দেয়। ফলে পুরোনো আইনে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে এবারে কেমন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় এবং তারা নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কতটা ভালো নির্বাচন উপহার দেয়, তার ওপরেই দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। 

তারা বলছেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রথম ধাপ হলো ইসি গঠনের সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ। আর ২০২২ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের বিদ্যমান আইনটি নানা মহলে বিতর্কিত। কারণ আইনটিতে রয়েছে নানা অসংগতি ও ফাঁকফোকর। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রস্তাব পাওয়ার আগেই কেন তাড়াহুড়ো করে সার্চ কমিটি গঠন করা হলো তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে। অনেকে বিতর্কিত আইনে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নতুন ইসি কমিশন গঠন হলে নতুন করে বিতর্ক উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। 

২০২২ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা আইনটি সম্পর্কে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই আইনে রয়েছে নানা অসংগতি ও ফাঁকফোকর। সেটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ আইন-২০২২’ নয়; শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল, ‘নির্বাচন কমিশন আইন-২০২২’। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে পূর্ণাঙ্গ আইন তথা ‘নির্বাচন কমিশন আইন-২০২৪’ প্রণয়ন করা জরুরি ছিল। অথচ সেটি না করে ওই আইনেই সার্চ কমিটি করা হলো। এতে নতুন ইসি কমিশনে যথাযথ ব্যক্তির মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেল। নতুন আইন হলে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের স্পষ্ট বিধান অনুযায়ী ইসির কাজ, সংবিধান নির্দেশিত ক্ষমতার প্রয়োগ এবং স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণের নানা আইনি ও আইনবহির্ভূত রাজনৈতিক বাধা দূর হতো। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিধানাবলি সংযোজন, কমিশনের অর্থায়ন, নিয়োগ, নির্বাচনকালে নিজ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট আইনি বিধান সংযুক্ত করা দরকার ছিল। আর সেটা হলে কমিশন যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে তাদের সাহসী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে সক্ষম হতো বলে মনে করি।’ 

ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থার আইনি সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বিষয় হচ্ছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠনের বিধান করা। যতটুকু জানি সংস্কার কমিশন বিতর্কিত আইনটি সংস্কারের জন্য প্রস্তাব তৈরি করছে। অথচ সেই প্রাথমিক পদক্ষেপে সরকার তাড়াহুড়ো করায় জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আর সংস্কার কমিশন তার রিপোর্ট শেষ করার আগেই পুরোনো আইনে সার্চ কমিটি গঠন হওয়ায় বোঝা গেল এখনো কোনো সংস্কার বাস্তবায়িত হয়নি। এটি সংস্কার কমিশন এবং সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যাপার। তারপরও বলতে চাই, যেহেতু সার্চ কমিটি হয়েছে, তাই নির্বাচনি সংস্কার কমিশন যেন একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠায় করতে সার্চ কমিটিকে সহযোগিতা করে। নতুন কমিশন গঠনের পুরো প্রক্রিয়ায় যেন স্বচ্ছতা থাকে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের মতামতকে যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়।’

রাজনৈতিক দলগুলোও চলমান আইনের সমালোচনা করে তা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছিল। এই আইন পাসের আগে একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও গণফোরামের ১২ জন সংসদ সদস্য ৭৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২২টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছিল, যার সবই ছিল মূলত শব্দগত পরিবর্তন। পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব আমলে নেওয়া হয়নি।

সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সিইসিসহ কমিশনাররা তো অনেক দিন আগেই পদত্যাগ করেছেন। ফলে সরকার চাইলে এই কমিটি অনেক আগেই করতে পারত। একই সঙ্গে নির্বাচনের অন্যান্য প্রস্তুতিও নেওয়া যেত। দেশের জনগণ নির্বাচন চায়। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এখনো যদি সরকার নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে, তাহলে দেশের জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। তাই সংস্কার ও নতুন ইসি কমিশন গঠনের পাশাপাশি সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

সার্চ কমিটি গঠনকে সরকারের ইতিবাচক ও গঠনমূলক পদক্ষেপ উল্লেখ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ইসি গঠনে আইনি পুরোনো সব ফাঁকফোকর রয়েই গেল। এখনো যদি বিদ্যমান আইনেই সার্চ কমিটি করা হয়, তাহলে এতসব সংস্কার উদ্যোগের উদ্দেশ্য কী ছিল? এই কমিটি গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তাড়াহুড়ো করে গঠিত এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কমিশন সম্পর্কে জনগণের উদ্বেগ পুরোপুরি সমাধান কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

এদিকে যে আইনেই গঠিত হোক না কেন, এবারের সার্চ কমিটি নিয়ে আশাবাদী সংস্কার কমিশন। কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা অত্যন্ত সম্মানিত এবং সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত। আশা করি এই কমিটির সদস্যরা নতুন নির্বাচন কমিশনে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করবেন।’ 

বর্তমান আইনটি প্রকৃতপক্ষে দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি সংস্কারের বিকল্প নেই। সার্চ কমিটি তার নিজস্ব গতিতে কাজ করবে এবং আমরা আমাদের মতো কাজ করব। যে প্রস্তাবগুলো দেব তার কিছু সরকার এবং কিছু নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। তাই সার্চ কমিটির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় ওই কমিটি গঠনের পর সংস্কারে কোনো বাধা নেই। সার্চ কমিটি আইনে সংশোধনীর প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে।’ 

সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। তবে বলতে পারি আইনে বিদ্যমান সব ঘাটতি পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারে আমাদের লক্ষ্য, অংশীজনদের (রাজনৈতিক দল) কাছ থেকে পাওয়া মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রস্তাব তৈরি করা।’

আইনি সংস্কারের আগেই কেন সার্চ কমিটি- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘উদ্বেগ সম্পর্কে আমরা অবগত। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কাজ একযোগে এগোবে। যদিও সংস্কারকাজ চলছে, নির্বাচনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নিতে হবে। কারণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার কাজে সময় বাঁচাতে আমরা সার্চ কমিটি গঠন ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল সময়মতো নির্বাচনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আমরাও সময় বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চলমান আইনে গঠিত হলেও এবারের সার্চ কমিটিতে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সবার পরিচিত, জ্ঞানী এবং নিরপেক্ষ। তাদের লক্ষ্য সিইসি এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এমন প্রার্থীদের মনোনীত করা; যারা সবার কাছে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।’

গত আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩ অক্টোবর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ ৯০ দিন আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে কমিশনকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারে প্রস্তাবিত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। একই মাসে গত ৩১ অক্টোবর, সরকার হঠাৎ করে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর অধীনে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। 

২০২২ সালে করা আইনে প্রথম গঠিত হয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক মাসের মাথায় শিক্ষার্থী-জনতার চাপের মুখে ৫ সেপ্টেম্বর বিদায় নেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন, যাদের অধীনে এ বছরের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল।