ঢাকা ২৫ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান এ বছর শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুদককে এবার সেই ভেন্যু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ শিল্পকলার নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। 

বিষয়টি জানতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কয়েকবার সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল আলম মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগের কারণ জানতে চান। 

শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদককে ‘না’ করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলে সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) দুদকের ডিজি পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা শিল্পকলার ডিজি স্যারের কাছে এসেছিলেন। স্যার (ডিজি) তাদের বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’ এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন সোহেল আলম। 

এদিকে শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলার ডিজি সেখানকার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদক কর্মকর্তাদের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করেছেন। দুদকের এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এসব শোনার পরও শিল্পকলার ডিজি বলেছেন, আল্লাহর ফেরেশতা নেমে এলেও মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন না পাওয়ায় দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা রবিবারেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের কয়েকটি মিলনায়তন পরিদর্শন করে এসেছেন। প্রতিবছর শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ জনের আয়োজন করা যায় এবং সেটি দুদক প্রধান কার্যালয়সংলঘ্ন ছিল।

রাসিকের সড়কবাতি: খ্যাতির খেসারত ৪৩ কোটি টাকা!

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
রাসিকের সড়কবাতি: খ্যাতির খেসারত ৪৩ কোটি টাকা!
রাজশাহী নগরের বিলাসবহুল সড়কবাতি। ফাইল ছবি

উন্নত বিশ্বের নামিদামি শহরের মতো আধুনিক দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতির সংযোজন রাতের আঁধার কাটিয়ে রাজশাহী নগরকে করে তোলে আলোকিত। দেশের প্রথম সিটি হিসেবে রাজশাহী নগরের সড়কে প্রজাপতির মতো ডানা মেলে আলো দেয় সড়কবাতি। আবার কোথাও স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে মুকুটবাতি। সিল্কসিটি, ক্লিনসিটি, গ্রিনসিটির পাশাপাশি সড়কবাতির কারণে রাজশাহী নতুন করে তকমা পায় ‘আলোর শহর’ হিসেবে। তবে বিদেশ থেকে আনা দৃষ্টিনন্দন এই সড়কবাতি দিয়ে শহরকে আলোকিত করতে গিয়ে বর্তমানে বিপাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। মাত্র ২৩ কিলোমিটার পথ আলোকিত করতে গিয়ে ঘারে চেপে বসেছে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া। বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে রাসিকের সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বেশি বকেয়া পড়েছে বলে জানিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃপক্ষ।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্প শুধু সরকারি সম্পদের অপব্যবহার নয়, এটা অপচয়ও বটে। এর দায়ভার বহন করতে হবে জনসাধারণকে। এদিকে বকেয়া বিলের কারণ হিসেবে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের উদাসীনতাকে দুষছেন রাসিকে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। শুধু মধ্যশহরে অতিরিক্ত সড়কবাতি লাগিয়ে অর্থের অপচয় করা হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। এখন বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে রাসিক। তারা জানায়, বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কমানো হচ্ছে সড়কে আলোকবাতির সংখ্যাও।

রাসিক সূত্রে জানা যায়, নগর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১০৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে নান্দনিক সড়কবাতিগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। আলোর ঝলকানিতে শহর সাজাতে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা-বন্ধগেট, তালাইমারী-কোর্ট, তালাইমারী-কাটাখালী ও আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথে আছে আধুনিক এসব সড়কবাতি। আলোর তীব্রতা বিশ্লেষণ করে প্রায় ১৫ মিটার দূরত্বে বসানো হয় এসব বাতি। নান্দনিক এসব সড়কবাতি আনা হয় তুরস্ক, চীন ও ইতালি থেকে।

আরও জানা গেছে, নগরের ১৮টি পয়েন্টে উঁচু উঁচু ফ্লাডলাইটও বসানো হয়েছে বিদেশ থেকে এনে। এতেই করপোরেশনের কাঁধে সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল। এদিকে এরই মধ্যে সড়কের বাতি কমিয়ে ফেলেছে সিটি করপোরেশন। একটির পর একটি বাতি জ্বালাছেন তারা। অন্যদিকে নান্দনিক বাতির অনেকগুলোই নষ্ট হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে। প্রতিদিনই রক্ষণাবেক্ষণ করে এগুলো সচল রাখা হচ্ছে।

নেসকোর বাণিজ্যিক পরিচালন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, রাসিকের বকেয়া বিল আগে থেকেই থাকত। তবে কয়েক বছর ধরে সড়কবাতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বকেয়া বিলের পরিমাণও বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে এখন বকেয়া সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বকেয়া পরিশোধে মাঝেমধ্যেই রাসিকে চিঠি পাঠানো হয়। তবে বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। নাগরিক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নও করা হচ্ছে না।

তবে নাম না প্রকাশ করে নেসকোর এক উপমহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, রাসিকের বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি এতদিন রাজনৈতিক সমঝোতায় চলেছে। তবে এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাই এসব বকেয়া উদ্ধারে আমরা তৎপর হয়েছি।

তবে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেছেন, ‘শুধু সড়কবাতি নয়, এই বকেয়া নগরের চারটি জোনের পানির পাম্প, বিভিন্ন স্থাপনা ও আরবান হেলথ কেয়ারে ব্যবহৃত বিদ্যুতের। প্রতি মাসের বকেয়া পুঞ্জীভূত হতে হতে একটা বিরাট অঙ্কে এসে দাঁড়িয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য রাসিকের নেই। সে কারণে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা বকেয়া বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার ও রাসিকের প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কমানো হচ্ছে অতিরিক্ত সড়কবাতি। কেননা, এগুলো ঘিঞ্চিভাবে লাগানো হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অর্থ অপচয় করা হয়েছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যেখানে যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে ঠিক করব।’

রাজশাহী জেলা সুজনের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই সড়কবাতিগুলো ছিল রাজনৈতিক প্রকল্প। অথচ যে বাড়তির টাকা বকেয়া হয়েছে তা সিটি করেপারেশনের জনগণের হল্ডিং ট্যাক্স ও অন্যন্য কর থেকে আদায় করা হবে। কিন্তু এমন বিলাসিতার খেসারত নগরবাসীকে কেন দিতে হবে। এটি কাম্য নয়।’

নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চায় বিএনপি

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চায় বিএনপি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপি যে একমাত্র বড় রাজনৈতিক দল এবং ক্ষমতায় আসার জন্য তাদেরই একমাত্র সক্ষমতা রয়েছে- এ বিষয়টি নানাভাবে বোঝাতে চাইছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি একদিকে ধৈর্ষের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে জানান দেওয়ার মতো কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গত শুক্রবার ঢাকায় বড় শোডাউন করেছে দলটি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এটাই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ শোভাযাত্রাটি প্রদক্ষিণ করে। এতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলো জনগণের সামনে আনতে, বিশেষ করে ৩১ দফা নিয়ে আগামী ২৩ নভেম্বর সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীর একটি হোটেলে এই সেমিনার হবে। ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, ‘নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রভৃতি। ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনমত গড়তে জেলা ও মহানগরে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভা করবে দলটি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু খবরের কাগজকে বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা এখন এলাকায় এলাকায় যাচ্ছেন। আগামী দিনে বিএনপি কী করতে চায় এবং ৩১ দফা রূপরেখা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন তারা। 

তিনি বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগের মতো বড় ধরনের ভুলত্রুটি বিএনপি করেনি। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখনো কাজ করছে। আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে স্বচ্ছ বিএনপিকে পাবে জনগণ। এ জন্যই শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী করবে, আগের ভুলত্রুটি সংশোধন করে কীভাবে এগোবে- এ বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে তারা ইতিবাচক বার্তা দিতে চান। বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে জনসাধারণের উন্নয়নের লক্ষ্যেই কাজ করবে। ইতোপূর্বে বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হয়েছে, তা এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন নেতারা। ফলে সব ভুলত্রুটি দূর করে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোনোর পক্ষে দলটি। 

সূত্রমতে, দলের মধ্যে অতিরিক্ত দলবাজি, দুর্নীতি এবং ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করা সনাতন পদ্ধতি চালু রয়েছে- এখান থেকেও বেরিয়ে আসতে চায়। ইতোমধ্যে দখল ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১ হাজার ১০০-এর বেশি নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের বার্তা গেছে- আগের মতো একই কাজ করা যাবে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেসব দোষে সমালোচিত হয়েছে ওই ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা বা থামাতে চায় হাইকমান্ড। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই দলের কোনো রকমের দুর্নাম হোক চাইছেন না। ইতোমধ্যে প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শোকজ করা হয়েছে। যাদের উত্তর সন্তোষজনক হয়নি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করা যাবে না- এমন বার্তাও গেছে নেতা-কর্মীদের কাছে। 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত তিন মাসে যে পরিমাণ বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা বিএনপির ইতিহাসে ঘটেনি। আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন ছাত্ররা। কিন্তু বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর যে ভূমিকা রয়েছে তাও অস্বীকার করছেন না পর্যবেক্ষকরা। 

অবশ্য তারা এও বলছেন, একটি দেশের মূল বিষয় হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক চর্চা। আর গণতান্ত্রিক চর্চা মানে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। কিন্তু আগামী নির্বাচনে দলটি বড় শক্তি নিয়ে রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে পারবে- এটাও কেউ মনে করছেন না। ফলে বিএনপি হচ্ছে একমাত্র বড় রাজনৈতিক দল। যদিও বিএনপির সঙ্গে যেসব দল শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে ছিল তাদের আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে নির্বাচন বিএনপি এককভাবেই করবে বলে মনে হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপির সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা আছে এগুলোও বলছেন নেতারা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে এমনও আলোচনা রয়েছে- আওয়ামী লীগ বিগত তিন টার্ম নির্বাচনগুলো সঠিকভাবে দিলে এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ না করলে তাদের এ রকম পরিণতি ভোগ করতে হতো না। মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতো না। সুতরাং দ্রুত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং তাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা- এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএনপি। তবে নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, এটি বিএনপি চাইছে না। যে কারণে সব ধরনের সংঘাত এড়ানোর পক্ষে। পাশাপাশি দলকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার পক্ষে। 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতীতের ভুলত্রুটি শোধরানোর জন্য বিএনপি নিয়মিত ক্লাস করছে। সেই পরীক্ষার ফলই হলো রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা। এই ৩১ দফায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা ৩১ দফার আলোকে নিজেদের তৈরি করতে পারেন এবং আগামী দিনে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ 

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে বিএনপিকে জনগণ আরও স্বচ্ছভাবে পাবে। জনগণের কাছে আরও বেশি দায়বদ্ধ থাকবে বিএনপি। আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খবরের কাগজকে বলেন, গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। ফলে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা আগামী দিনে কাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাবে। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারও কিছু সংস্কারের কথা বলেছে। তারা কিছু সংস্কারও করবে। বাকি কাজ নির্বাচিত সরকার করবে। বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করার আগে চার-পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে স্ট্যাডি করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রয়োজনে আরও কিছু সংস্কার বা সংশোধন করা হবে। আগামী দিনে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে পথচলা বিএনপির টার্গেট। 

সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় ঘটে। এরপর থেকেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। এই সরকারে সুশীল সমাজের পাশাপাশি ছাত্রদের অংশীদারত্ব রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংবিধান সংশোধনসহ চলমান সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দেবে নাকি সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচন দেবে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। 

গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি। অর্ধলাখ মানুষ রক্ত দেয়নি। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিস্টেমগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অতিদ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এক বছর নাকি আরও বেশি সময় লাগবে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের দাবিতে চাপ অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেহেতু এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নেই সেহেতু তারাই বড় দল। আজ বা কাল হোক নির্বাচন তো দিতে হবেই। বিএনপি নির্বাচনের দিন-তারিখ, বিশেষ করে রোডম্যাপের তাগিদ দেবে- এটা স্বাভাবিক বিষয়। তিনি মনে করেন, তারা ক্ষমতায় যেতেও প্রস্তুত। এ জন্য দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘুষ দিয়ে কাজ হাসিলই ছিল মূল টার্গেট

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
ঘুষ দিয়ে কাজ হাসিলই ছিল মূল টার্গেট
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

অন্তত ৩০ বছর ধরে সব সরকারের আমলে ঘুষ-বাণিজ্য করেই ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রুগ্‌ণ কোম্পানি কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডকে কৌশলে লিজ নিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটানো শুরু করেন।

জানা গেছে, তিনি ওই সময়ে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবিত করে দরপত্র ও প্রতিযোগিতা ছাড়াই কোম্পানিটি হাতিয়ে নেন। এরপর প্রতিটি সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের গোপনে ও প্রকাশ্যে ঘুষ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী আমলাদের নানা রকম আর্থিক সুবিধা দিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটান। এরপর আর থামেনি ঘুষ-বাণিজ্য।

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপিকে ঘুষ হিসেবে নগদ টাকা ছাড়াও দিয়েছেন বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নানাভাবে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ তার বিরুদ্ধে ১৪টিরও বেশি মামলা হয়। এর মধ্যে ৩ মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় । তবে ২০০৯ থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপিকে নামমাত্র শেয়ারে ব্যবসায়ী পার্টনার বানিয়েছেন। তাদের বদৌলতে বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টসহ ঠিকাদারি কাজে নানা রকম দুর্নীতি-অনিয়ম করেও টিকে ছিলেন ১৫ বছর। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ওবায়দুল করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১৪টি মামলার মধ্যে কয়েকটি মামলার রায়ে ঘুষ-বাণিজ্যের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে রাজধানীর ধানমন্ডির রাস্তায় প্রায় এক দিন পড়ে থাকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি বিএমডব্লিউ। তৎকালীন দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্স গাড়িটি উদ্ধার করে মালিককে খুঁজতে থাকে। পরে জানা যায় গাড়িটির মালিক বিএনপির সাবেক হুইপ আশরাফ হোসেন। পরে ওই গাড়িটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে গাড়িটি ঘুষ হিসেবে দিয়েছিলেন ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম। এ নিয়ে ওই সময়ে আশরাফ হোসেন, ওবায়দুল করিম, হারিছ চৌধুরীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়। বিচারিক আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০১২ সালে যখন চার্জ গঠন হয় ততক্ষণে ওবায়দুল করিম কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিকে নামমাত্র শেয়ারে ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে ফেলেন। ফলে ওই সরকারের প্রভাবশালী মহলের পরামর্শে চার্জ গঠনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ওবায়দুল করিম। একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। তবে অপর চার আসামির বিরুদ্ধে মামলা চলবে বলে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিলও করে দুদক। আপিল চলাকালে ২০০০ সালের জুলাই আশরাফ হোসেন এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হারিছ চৌধুরী মারা যান। 

দুদক সূত্র জানায়, নানা কারণে দুদকের আপিলটি এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছে। 

এদিকে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চের দেওয়া রায়ে ওবায়দুল করিম ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করা হয়েছিল। ২৭৩ পৃষ্ঠার ওই রায়ে উল্লেখ করা হয়, ওরিয়নের ডিজিটাল পাওয়ার অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড অনৈতিকভাবে কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাগিয়ে নিতে ২০০৫ ও ২০০৬ সালের বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন। এর মধ্যে ওবায়দুল করিম তার সাউথইস্ট ব্যাংকের ১১১০০০১২৮১৪ অ্যাকাউন্ট নম্বর থেকে ৮১৯১৩৫৪ নম্বর চেকের মাধ্যমে ইকবাল মাহমুদ টুকুকে ৫০ লাখ টাকা দেন। এ ছাড়া ২০০৬ সালের ৬ জুন ওবায়দুল করিমের ঘুষ বিতরণের প্রতিষ্ঠান ওয়ান এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে ভারতে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের আইএফআইসি ব্যাংকের ০২৩৩০২২৬১৩ ও ০৫১৩০৯৫৯২০০১ নম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে অন্তত ১ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৯ টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব টাকার ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৬ টাকায় একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেওয়া হয়েছে, ৭৪ লাখ ৮ হাজার ৩০০ টাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৩ কাঠার একটি প্লট কিনে দেওয়া হয়। বাকি ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৩ টাকা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ইকবাল হাসান মাহমুদকে দেওয়া হয়েছে। তবে ওবায়দুল করিম দাবি করেছেন, সেই টাকা ওই সময়ে ভারতে অবস্থানরত তার ভাইকে বাড়ি ভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে ২০০৫ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়ান এন্টারটেইনমেন্ট থেকে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক কারওয়ান বাজার শাখার পে-অর্ডার নম্বর ০৩৯২৯৫৯ মাধ্যমে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী রুমানা মাহমুদকে ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এই পে-অর্ডারে রিসিভার হিসেবে ওবায়দুল করিমের জামাতা মেহেদী হাসানের নাম থাকলেও পরে তার নাম কেটে দিয়ে সেখানে রুমানা মাহমুদ লেখা হয় এবং পার্টিকুলার রিসিভার হিসেবে রুমানা মাহমুদ ওই টাকা উঠিয়ে নেন। এর আগে একই বছরের ২৮ মার্চ রুমানা মাহমুদকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরও ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন সময়ে ওবায়দুল করিম অন্তত ২৫ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে রায়ের বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে। বিচারের সময় সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক এ এফ এম শরিফুল ইসলাম, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখার ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সাক্ষীরা অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য দেন। ফলে অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। 

পুরো রায়টি লেখেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার। রায়ে সমর্থন জানান বিচারপতি খিজির হায়াত। 

অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন, প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ ১৪টিরও বেশি মামলা এবং এর মধ্যে ৩ মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে ওবায়দুল করিম ২০০৯ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করলে সব অপকর্মের দায় থেকে বাঁচতে ওবং ওই সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিসহ ক্ষমতাধর নেতাদের বাগে আনতে তার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পার্টনার করে নেন। এর মধ্যে ওরিয়নের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের পরিচালকের পদ দেন সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকে। ডাচ্‌-বাংলা পাওয়ার অ্যাসোসিয়েট লিমিটেডের পরিচালকের পদ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে। ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের পরিচালক পদ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে। এমন অনেক মন্ত্রী-এমপিকে তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পার্টনার বানিয়ে গত ১৬ বছরে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ওবায়দুল করিম, তার পরিবারের সদস্যদের এবং ওরিয়ন গ্রুপের কর্ণধারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনুসন্ধান ও তদন্ত চালাচ্ছে। তবে বসে নেই ওবায়দুল করিম ও ওরিয়নের কর্ণধাররা। তারা বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদেরও আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হওয়ার এখনো কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি।

সম্পদের পাহাড় গড়া ছিল হানিফের নেশা

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ এএম
সম্পদের পাহাড় গড়া ছিল হানিফের নেশা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

মাহবুবউল আলম হানিফ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং টানা তিন বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আর এই তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত চার জেলায় অনুসন্ধানে তার সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানা গেছে। মূলত রাজনীতির আড়ালে অর্থ আয় করা ছিল তার নেশা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন মাহবুবউল আলম হানিফ। তার দোসররাও পালিয়ে গেছে।

এদিকে হানিফের ক্ষমতাকে পুঁজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। মাত্র কয়েক বছরেই নিজের আখের গুছিয়েছেন তিনি। অল্পদিনেই হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। হাট ঘাট বা টেন্ডারবাজি সব ছিল তার দখলে। আতার ইশারা ছাড়া যেন কুষ্টিয়ার কোনো গাছের পাতাও নড়ত না। যার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী এবং দুর্দিনের কান্ডারিরা হয়ে পড়েন একঘরে। সরকার পতনের পর থেকে আতাও আত্মগোপনে চলে যান।

হানিফের উত্থান যেভাবে

মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম শেখ পরিবারের জামাই। সেই সূত্র ধরেই হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন পান তিনি। তবে পরাজিত হন। এরপর আরও একবার মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়নবঞ্চিত হন। মনোনয়ন দেওয়া হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। দল ক্ষমতায় আসে। হানিফকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। ওই বছর দলীয় কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি। বাড়তে থাকে প্রভাব-প্রতিপত্তি। দলে তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয় একাধিকবার একই পদ পেয়ে যাওয়ার কারণে। যদিও মন্ত্রী হওয়ার খায়েস থাকলেও আশা পূরণ হয়নি নানা অভিযোগের কারণে।

দলের নেতা-কর্মীদের পাত্তা না দিলেও বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন। এভাবে গত ১৫ বছরে প্রচুর সম্পদের মালিকবনে গেছেন হানিফ। তার পুরো পরিবার থাকে কানাডায়। এ ছাড়া সেখানে তার কয়েকজন ভাইবোনও বাস করেন। কানাডায় হানিফের গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে।

নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়

হানিফের কপাল খুলে যায় শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার কারণে। দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই তার কাছে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক নানা কাজের তদবিরও করতেন। দলের পদ-পদবি দেওয়ার নামে যেমন অর্থ বাণিজ্য করেছেন তেমনি নানা তদবির, টেন্ডার বাণিজ্য, বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। হানিফের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল। কারওয়ান বাজারে বিএমটিসি ভবনে তার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অফিস। সেই অফিস ও কুষ্টিয়ার বাসায় বসেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হানিফের আয়ের টাকার বড় অংশ পাচার করেছেন কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। আর দেশে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এ ছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। 

কুষ্টিয়ায় হানিফ ও তার ভাই আতার নামে মার্কেট, দোকান ও শপিং মলে দোকান আছে বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া শহরের তমিজ উদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘খেলার মাঠের পাশে দুই তলা নতুন যে মার্কেট হয়েছে সেখানে ৮টি দোকান আছে তাদের নামে। দোকানের ভাড়াটিয়ারা জানান, প্রতি মাসে আতা টাকা তুলতেন।’

জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় মহাসড়কের পাশে ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তার ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে।

শহরের বহুতল বিপণিবিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। ভাড়া ওঠে প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা। এ ছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্ল্যাট। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হাউজিংয়ের জমির সঙ্গে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। আতার নামে হলেও এর পেছনে ছিলেন হানিফ। পিটিআই রোডে ৪ কাঠা জমির ওপর তিন তলা বাড়ি কাগজে-কলমে আতা ও তার স্ত্রীর নামে হলেও হানিফের অর্থে করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। প্রথম দিকে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড এ বাড়িতে লাগানো হয়। 

আতার সম্পদ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করার পর সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার, ব্যাংকে ডিপোজিট আছে।

দল ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ী অজয় সুরেকার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় কোটি কোটি লগ্নি করা আছে হানিফের। এসব কারণে অজয় সুরেকাকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ করেন হানিফ। এসব বিষয়ে জানতে মুঠো ফোনে অজয় সুরেকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জোর করে দলীয় পদ দেওয়া ছাড়া হানিফের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। আর ওই পদ-পদবির পরিচয়ও তিনি দিতেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হানিফ প্রভাব খাটিয়ে নদী খননের বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন সারা দেশে। তার নিজের একাধিক ড্রেজার আছে খননের জন্য। সর্বশেষ গড়াই খননের একটি কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। সরকারি খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচে তিনি কাজ করেন। এতে তার নিজের ৩টি ড্রেজার কাজে লাগান। প্রতি ড্রেজারের দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা আছে হানিফের। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হানিফের নগদ টাকার পরিমাণ বহু গুণ বেড়েছে বলে দেখা গেছে।

২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে একটি সাধারণ মানের গাড়িতে চড়লেও পরে তিনি একাধিক দামি গাড়ি ক্রয় করেন। যার প্রতিটির দাম কোটি টাকার ওপরে। রাজধানীর গুলশানে তার বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে, আছে বনানীতেও। এ ছাড়া খুলনায় তার মাছের ঘেরের সঙ্গে আছে রিসোর্ট। জমি আছে পাবনার ঈশ্বরদী, কক্সবাজারের টেকনাফে। পার্টনারে গাজীপুরে নির্মাণ করেছেন একাধিক রিসোর্ট।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিতর্কিত একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে বেনামে যৌথ ব্যবসা আছে তার। নদী খনন ও শাসনের কাজ করতেন তারা দুজন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। তবে হানিফের কারণে পার পেয়ে গেছেন ঠিকাদার।

সর্বশেষ কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় পদ্মা নদীশাসনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। কাজ ভাগাভাগি হয় হানিফের ঢাকার অফিসে বসে। সেখানে হানিফ একাই ৫০০ কোটি টাকার কাজ নিজের কবজায় নিয়ে নেন। এসব কাজ পরে কমিশনে বিক্রি করে দেন। এ কাজ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ। তার সময় কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প, কুষ্টিয়া শহরে ফোর লেন করা, কুষ্টিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ, শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতু নির্মাণ, মুজিবনগর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া সম্প্রতি পদ্মা নদীশাসনে বড় একটি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিটি থেকেই হানিফ আগাম বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকার কমিশন। প্রতিটি প্রকল্প থেকে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ কমিশন আদায় হতো। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, বালুর ঘাটের কমিশনসহ অন্যান্য কাজ থেকে যে আয় হতো তা চাচাতো ভাই আতার মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়া মেডিকেলের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে হানিফের পছন্দের প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ।

কুষ্টিয়ার সব ঠিকাদারি কাজ, হাট-ঘাটের ইজারা, সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে নিয়োগ, পদ্মা ও গড়াই নদীর বালু মহাল থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্র থেকে কমিশন আদায় করেছেন হানিফ। এমন কি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পদ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে হানিফের বিরুদ্ধে।

প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন

হানিফের অত্যাচার নির্যাতন থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা যেমন বাদ যাননি তেমনি বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েন তার বাহিনী দিয়ে। জেলা যুবদল নেতা আল আমিন কানাই বলেন, গত নির্বাচনের আগে একজন কাউন্সিলর আমার বাসায় গিয়ে বলেন, হানিফের ভাই আতা সাহেব চা খাবেন। আমি বলি এত বড় নেতার সঙ্গে চা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর থেকে তারা আমার বাড়িতে মাস্তান পাঠিয়ে হেনস্তা করেছে, আমার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন আমি ব্রেন স্ট্রোকের রোগী। মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা আমাকেসহ দলের বহু নেতাকে গত ১৬ বছরে শেষ করে দিয়েছে।

সাংবাদিক নির্যাতন

আওয়ামী লীগ ও হানিফের নামে নিউজ করে মামলা ও হামলার স্বীকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-ছাড়া হয়েছেন একাধিক সংবাদকর্মী। মামলা দিয়ে জেলে পাঠান যুগান্তর প্রতিনিধি এ এম জুবায়েদ রিপনসহ বেশ কয়েকজনকে। এর বাইরে জুয়েল আহম্মেদ শাহিন ও অঞ্জন শুভ নামের স্থানীয় দুই সাংবাদিক হানিফের রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে যান। 

৫ আগস্টের পর

হানিফ ও আতাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। গা-ঢাকা দিয়েছেন সব নেতা। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় বর্তমান পরিস্থিতি ও হানিফের বিষয়ে। বেশির ভাগই বলছেন, হানিফ রাজনীতি করার জন্য কুষ্টিয়ায় আসেননি। এসেছেন বাণিজ্য করতে। 

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন বলেন, হানিফ-আতা এই দুই ভাইয়ের কারণে কুষ্টিয়ার রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। একক আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছেন। 

বিপুল সম্পদের মালিক আতা

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন আতা। ঘষলেই বেরুত টাকা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামের প্রয়াত আবদুস সাত্তারের ছেলে। আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাবা আফসার আলীর চাচাতো ভাই। সেই সূত্রে হানিফ আর আতা চাচাতো ভাই। হানিফের পর আতা ছিলেন কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি। দুই ভাই মিলে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সব সরকারি কাজ ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এভাবে আতা জিরো থেকে বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। একসময় মোটরসাইকেলে চড়লেও এখন তার কোটি টাকা দামের একাধিক গাড়ি আছে। স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেও স্বামীর টাকায় তিনিও কোটিপতি। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে আতার।

দলের পদ-পদবি ও টেন্ডারে কাজ পেতে আতার কাছে ধরনা দিতে হতো সবাইকে। তার অত্যাচার ও নির্যাতনে দল ছেড়েছেন অনেকে। এমনকি ঠিকাদারি কাজও ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। অবৈধ বালুঘাট, হাট-বাজার, বিল ও বাঁওড় নিয়ন্ত্রণ করতেন আতা। তিনি এভাবে গত ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আতা গা-ঢাকা দেন। তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে। একই অবস্থা হানিফের বাড়িরও। আতার স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে দুনীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। আতার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময় মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।

২০২২ সালে আতার বিপুল অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে বলা হয়, ১০ বছরের ব্যবধানে বাড়ি-গাড়িসহ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিকবনে গেছেন আতা। এই অভিযোগ ওঠার পর ২০২২ সালে দুদক তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।

আতা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া অফিস থেকে সাড়ে ৫ কাঠার প্লট নিয়েছেন। শহরের হাউজিং এলাকায় ওই জমিতে ৭ তলা ভবনের কাজ চলছে। স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রীর নামে তিনি ওই সম্পদ করেছেন। এখানে বিনিয়োগের ব্যাপারে আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। অথচ ভবন করতেই খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। আতা-ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা এ তথ্য দেন। 

আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এবং মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে মাহাবুবউল আলম হানিফ এবং তার ভাই আতাউর রহমান আতার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিএনপি নেতার হাতে ‘পলাতক’ আ.লীগ নেতার পত্রিকা-ব্যবসা!

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পিএম
আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
বিএনপি নেতার হাতে ‘পলাতক’ আ.লীগ নেতার পত্রিকা-ব্যবসা!
সিলেট নগরীর আবাসিক এলাকা হাউজিং এস্টেটে বিএনপি নেতার কাযালয় এখন আওয়ামী লীগ নেতার পত্রিকা অফিস। শুক্রবার সকালে তোলা। ইনসেটে আ.লীগ নেতা সরওয়ার ও বিএনপি নেতা কয়েস লোদী। খবরের কাগজ

৫ আগস্টের পর হয়েছে ক্ষমতার পালাবদল। দলীয় কোনো সরকার এখনো নির্বাচিত হয়নি। তারপরও দলীয় প্রভাব খাটানো শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে জায়গা জমি পর্যন্ত দখল হচ্ছে। এমনকি মিডিয়া হাউসের মালিকানার হাত বদল হয়েছে। সম্প্রতি সিলেটে একটি আঞ্চলিক পত্রিকার মালিকানা বদল নিয়ে চলছে তোলপাড়।

জানা গেছে, কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন সিলেটের আঞ্চলিক পত্রিকা ‘শুভ প্রতিদিন’-এর মালিক। ১৩তম বর্ষে পা রাখা এই পত্রিকার সম্পাদক প্রকাশকও তিনি। পত্রিকার মালিক দেখিয়ে সরওয়ার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেলেও তিনি দলীয় নির্দেশে সিলেট-৬ আসনে ডামি প্রার্থী হয়েছিলেন। আওয়ামী সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হওয়ায় তিনি এখন পলাতক। এরপরই গুঞ্জন উঠেছিল এই পত্রিকার মালিকানা বদলের। এই গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগে যখন সিলেট মহানগর বিএনপির সদ্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর কার্যালয়ে ‘সম্পাদকীয় কার্যালয় শুভ প্রতিদিন’ লেখা সাইনবোর্ড সাঁটানোর পর।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিসিকের প্যানেল মেয়র ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। এই ওয়ার্ডের হাউজিং স্টেট এলাকায় তার কার্যালয়। সম্প্রতি সেই কার্যালয়ে পত্রিকার নামে উঠেছে নতুন সাইনবোর্ড। তাই অনেকেই বলছেন, ক্ষমতার দাপটে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দখল করেছেন এই পত্রিকা। অনেকে আবার বলছেন মালিক সরওয়ার হোসেনে দল ক্ষমতায় নেই, তাই কয়েস লোদীকে সাময়িকভাবে চালাতে দিয়েছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড খুলে ‘সম্পাদকীয় কার্যালয় শুভ প্রতিদিন’ সাইনবোর্ড লাগালেও এখনো পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কোনো আসবাবপত্র বা অন্য কোনো সামগ্রী এখানে সাজানো হয়নি। কাউন্সিলরের কার্যালয় থাকা অবস্থায় ভিতরে যে সাজসজ্জা ছিল এখনো তাই আছে। পত্রিকাটির কার্যালয় নগরীর নেহার মার্কেটে রয়েছে। 

প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মীদের মাধ্যমে জানা গেছে, কয়েস লোদী পলাতক সরওয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পত্রিকাটির সত্ত্ব নিজ নামে করে নিয়েছেন। বিদেশে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠাকালীন একজন কর্মী বলেন, ‘পত্রিকাটি ডিএফপি তালিকাভুক্ত। সরকার বদলের সঙ্গে ডিএফপি তালিকাভুক্ত যাতে থাকে, এ জন্য মালিকানা বদল করা হয়েছে। এতে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পত্রিকার মালিক বদলের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন একটি ডেন্টাল কলেজ ও একটি ওষুধ কোম্পানিরও পার্টনারশিপ মালিকানায় ছিলেন। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাও কয়েস লোদী নিয়েছেন। এর বিনিময়ে তার ওপর মামলাসহ রাজনৈতিক দমনপীড়নে ক্ষমতাসীন বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন। 

সরওয়ার হোসেন পলাতক থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরিবার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছেন, তিনি কয়েস লোদীর কাছে মালিকানা দিয়েই কানাডা পাড়ি দিয়েছিলেন। 

যোগাযোগ করলে বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী খবরের কাগজকে কেবল পত্রিকার মালিকানা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে ওষুধ কোম্পানি ও ডেন্টাল কলেজের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানি ও ডেন্টাল কলেজ সম্পর্কে আমি বলতে পারব না। এগুলোতে প্রায় ৫৬ থেকে ৬০ জনের শেয়ার আছে।’

পত্রিকার বিষয়ে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘পত্রিকাটি আমি অনেকদিন আগে কিনেছি। তাই এই পত্রিকার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। এটা উনি আমার কাছে বিক্রি করেছেন, অফিসিয়াল নিয়মনীতি মেন্টেইন করে। জেলা প্রশাসকের কাছে ডকুমেন্ট সাবমিট করে তারপর সেটির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।’

কবে কিনেছেন পত্রিকা? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দিন তারিখ কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। অনলাইনের জন্য ডকুমেন্ট সাবমিট করা হয়েছে ঢাকায়। এটা এখনো ট্রান্সফার হয়ে আসেনি।’ 

ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতার পত্রিকার মূল মালিক বনে যাওয়া ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদারির মালিকানা নেওয়ায় কয়েস লোদী বিতর্কের মুখ পড়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়টি তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত হিসেবে দেখছেন। এরমধ্যে আঁতাত বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক নুরুল হক শিপু। 

তার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস সূত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘পালাবদলে সিলেটে কতকিছুর হাতবদল হচ্ছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ নেতার এক মিডিয়ার হাতবদলে তলে তলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের এই পত্রিকাটির মালিকানা বদল হয়েছে ৫ আগষ্ট পরবর্তী বাস্তবতায়। এখন মালিক যিনি, তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সদ্য ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।‘ 

ফেসবুক পোস্টটিতে আরও লেখা হয়, ‘আগের মালিক সরওয়ার হোসেন পলাতক। সরওয়ারের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রেখে মিডিয়া হাউসটি লিখিয়ে নিয়েছেন বিএনপি নেতা কয়েস লোদী। পলাতক সরওয়ার কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর আছে কয়েস লোদীর কাছে! সিলেটে এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রভাব হাইজ‍্যাক করে এখন বিএনপির হয়ে যাচ্ছে। এই দেশে কে বলে আওয়ামী লীগ নাই? তলে তলে সরওয়ার হয়ে কয়েস লোদীরাই টিকিয়ে রাখবে আওয়ামী লীগকে।...’

ফোনে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাংবাদিক নুরুল হক শিপু খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েস লোদী সম্প্রতি সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন। যদি তিনি এ পদে না থাকতেন, তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হতো না। এখন যেন ব্যাটে-বলে লেগে গেছে! বিষয়টি বিএনপি-আওয়ামী লীগে আঁতাতের উদাহরণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে!’