ঢাকা ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম
বিকল্পের অপেক্ষায় ভোক্তারা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সারা দেশের সুপারশপসহ কাঁচাবাজারে পলিথিন সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। তবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করায় পণ্যসামগ্রী বহনে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। গ্রাহকদের দাবি পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় পণ্যবহন ছিল সুবিধাজনক। কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় প্রয়োজনীয় পণ্য বা ছোটখাট কেনাকাটা করে পলিথিনে আনা সহজ ছিল। এখন পলিথিনের বিকল্প কী হবে, এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল।

এ ব্যাপারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ সুপারশপ, কাঁচাবাজারসহ সংশ্লিষ্টদের সরবরাহ করবে।

পলিথিনের বিকল্প কী হবে বা প্রয়োজনীয় ব্যাগের সংকট হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারিক খান বলেন, সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাট, কাপড় ও কাগজের পর্যাপ্ত ব্যাগের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ব্যাগের কোনো সংকট হবে না। বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। কাজেই পলিথিনের বিকল্প থাকবে না, এটা অচিন্তনীয়। পাটপণ্য বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী। 

পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের সংকট প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পাটের ব্যাগের ব্যবহার ও সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা হবে।’ 

পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণ বন্ধ কার্যক্রম মনিটরিং করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও আইন অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম সচিব (পরিবেশ-১ অধিশাখা), উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ-১ ও ২) এবং সিনিয়র সহকারী সচিব (পরিবেশ-৩)।

মনিটরিং টিম রাজধানীর বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সারা দেশের মাঠপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনে মাঠ কার্যক্রম পরিদর্শন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যসহ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। তাদের মতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে। ফলে ক্যানসারের মত ভয়াবহ রোগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। তাছাড়া পলিথিনের রাসায়নিক উপাদান বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটস মানবদেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যার মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। এর ধোঁয়া বায়ুদূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পলিথিন ও মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্র বিনষ্ট করে। ফলে প্রাণীদেহে অপুষ্টি, অনাহার, ক্ষুধামান্দ্য হওয়ায় দেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে।

পলিথিন মাইক্রোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়ে মাটির ঊর্বরতা হ্রাস করে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ে তেমনই এর বড় অংশ চলে যায় নদী, সাগরে। ফলে বিভিন্ন জলজপ্রাণীর খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে তাদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটায়। এমনকি শ্বাসতন্ত্র আটকে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এভাবে মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এসব কারণে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, কোনো সুপারশপ বা কাঁচাবাজারে পলিথিন শপিংব্যাগ সরবরাহ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। 

ইতোমধ্যে পরিবেশ উপদেষ্টা সারা দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিআইজি), জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ সুপারদের প্লাস্টিক পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মতে, পলিথিন বন্ধ হলে ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বাধ্য হয়েই ব্যবহার করবেন।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি আগারগাঁও পরিবেশ অধিদপ্তর ভবনে পলিথিনের বিকল্প পণ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় অংশ নেওয়া ২৪টি স্টলে পাট, কাগজ ও কাপড়ের মতো পচনশীল দ্রব্যের তৈরি ব্যাগ প্রদর্শিত হয়। ২০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সাইজ এবং কোয়ালিটির ব্যাগ প্রদর্শন করা হয়।

মেলায় অংশ নেওয়া জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) মার্কেটিং হেড জানিয়েছেন, তারা এ পর্যন্ত বিভিন্ন সুপারশপ থেকে এক কোটির বেশি পাটের ব্যাগের কার্যাদেশ পেয়েছেন।

পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণসংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা পলিথিনের বিকল্প তৈরিতে আরও সক্রিয় হলে বাজারে ব্যাগের সংকট হবে না।’

বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব জানিয়ে বিজেএমএর পরিচালক বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত মিলগুলোর কাছে পাটের বস্তা-ব্যাগের চাহিদা দিলে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতভাগ সরবরাহ করা সম্ভব।’ 

এখন প্রায় সব প্রয়োজনের পাটপণ্য দেশেই উৎপাদিত হয় জানিয়ে বিজেএমএর সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারিক খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশে ২৮২টি পাটপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। জনজীবনের প্রায় সব প্রয়োজনেই এসব পণ্য প্রয়োজন হয়। তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতেই হবে বা সহজ ও সুলভ, এমন দাবি করাটা ভিত্তিহীন।’

আরও পড়ুন

১ম পর্ব: থেমে নেই পলিথিন উৎপাদন

নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া মোড় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হয়নি ওভারব্রিজ

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হয়নি ওভারব্রিজ
পাখির চোখে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া মোড়। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জ নগরীর ব্যস্ততম মোড় চাষাঢ়া। দিনে অন্তত ৩০ হাজার ছোট-বড় যানবাহন ত্রিমুখী এ মোড়ের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে গত ২১ বছরে এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই পথচারীদের রাস্তা পারাপার হতে হয়। এখানে পথচারীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তার ওপর এখানে দিনভর যানজট লেগে থাকে। 

চাষাঢ়া দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের যানবাহনগুলো এ সড়ক দিয়ে পারাপার হয়। আদমজী ও বিসিক শিল্পনগরীর রপ্তানিমুখী যানবাহনও চাষাড়া মোড় দিয়ে চলাচল করে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কসহ শহরে যেতে হলে ত্রিমুখী এ পথ পাড়ি দিতে হয়। চাষাঢ়াতেই রয়েছে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফলে স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য চাষাঢ়া মোড়ই মূল সড়ক। 

জানা গেছে, ২০২৩ সালে চাষাড়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে পাশে থাকা রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম, পথচারী আমজাদ হোসেন ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম নিহত হন। রিকশার যাত্রী ও পথচারীসহ আরও ৮ জন আহত হন। তার আগে ২০২১ সালে চাষাঢ়ায় ট্রাকের চাপায় প্রবাসী আলতাব হোসেন ও তার মেয়ে বেলী আক্তারের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। 

২০০৩ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে নাগরিক কমিটি তার কাছে চাষাড়া ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেখানে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। ২০১১ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রথম মেয়র নির্বাচিত হলে স্থানীয়রা আবারও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি তোলেন। তবে ২০২২ সালে চতুর্থবারের মতো আইভী মেয়র হলেও আর ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই সেলিম ওসমান ও প্রয়াত নাসিম ওসমান টানা ২০ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন কিন্তু এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শামীম ওসমান আর আইভী একে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেননি।

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘চাষাঢ়ায় যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদের চাপ থাকে। হুটহাট করে গাড়িগুলো মানুষের ওপর উঠে যায়। ছোট বাচ্চারা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দীর্ঘ বছর ধরে এমনই দেখে আসছি। অথচ এখানে ফুটওভার ব্রিজ করার জন্য দাবি উঠলেও কেউই বাস্তবায়ন করেনি।’

নারায়ণগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক বলেন, ‘এখানে একই সময় যানবাচন চলে, আবার পথচারীরা রাস্তা পার হন। ফলে ট্রাফিক পুলিশ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ কারণে আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট লেগে যায়। এর মধ্যেই আবার দুর্ঘটনা ঘটে। আমার কলেজের পক্ষ থেকে চাষাঢ়া ফুটওভার ব্রিজ করার জন্য অনেকবার আবেদন জানিয়েছি।’

চাষাঢ়া খাজা মার্কেটের দোকানি সেলিম মিয়া বলেন, ‘২৪ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। দিনরাত কত দুর্ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি তা সংখ্যায় প্রকাশ করার মতো না। দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয়রা আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যান আর পুলিশ এসে গাড়ি আটক করে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান কেউ করেন না।’ 

সড়ক পারাপারে নিরাপত্তার দাবিতে নানা সময় আন্দোলন করে আসা সংগঠন নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘শামীম ওসমানের বাড়ি চাষাঢ়া আর আইভীর বাড়ি দেওভোগ। এলাকাবাসীকে তাদের দুজনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মাশুল দিতে হয়েছে। তারা একে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে এসব এলাকায় উন্নয়ন করেননি। তার প্রমাণ হলো, গত ২১ বছর ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসার পরও চাষাঢ়ায় একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের কাছে গেলে তারা সিটি করপোরেশনের কাছে যেতে বলে। সেখানে গেলে তারা সড়ক বিভাগে যেতে বলে। সড়ক বিভাগে গেলে তারা এমপির কাছে যেতে বলে। এভাবে শুধু সময় গেছে কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হয়নি।’

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ করতে আমরা নাসিককে অনেকবার অনুরোধ করেছি। তাহলে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা কমবে, অন্যদিকে সড়ক হবে নিরাপদ, পাশাপাশি যানজটও কমে আসবে।’ 

নাসিকের পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম জানান, বিগত সময় ছোট সড়কে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ছিল না বলে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ২০২৫ সাল মেয়াদি নগর পরিকল্পনার আলোকে এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

দ্রুত সময়ের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক।

নগরীর মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ঘটনাসহ যানজট কমাতে হলে দ্রত সময়ের মধ্যে চাষাঢ়া মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল। তিনি বলেন, ‘অনেকবার দাবি জানানো হয়েছে। এখন আর দাবি নয়, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য আন্দোলনে নামব।’

মুসলিমের শরীরে অসংখ্য গুলি, ব্যথায় কাতর

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
মুসলিমের শরীরে অসংখ্য গুলি, ব্যথায় কাতর
দিনাজপুরের মুসলিম উদ্দিনের শরীরে এখনো রয়ে গেছে প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০টির মত ছোড়ড়া গুলি। যার বেশ করেকটি বের করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

‘শরীর থেকে ৫৭টা ছররা গুলি বের করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন স্থানে ১৫o থেকে ১৬০টি গুলি রয়েছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ওষুধ লাগছে। একদিন ওষুধ না খেলে শরীর ফুলে উঠে, তীব্র ব্যথায় ছটফট করতে হয়। টিয়ার শেলের কারণে চোখে মাঝে মাঝে এখন ঝাপসা দেখি। আবার মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ দেখতে পাই না। শরীরের এই অবস্থার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারি না। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা শুধু আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু কেউ একটি টাকা দিয়েও সহযোগিতা করেনি।’ 

শনিবার (৩০ নভেম্বর) খুব আপেক্ষের সুরে খবরের কাগজকে কথাগুলো বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত দিনাজপুর সদর উপজেলার মুসলিম উদ্দীন (৪৭)। তিনি চেহেলগাজী ইউনিয়নের বড়ইল গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। মুসলিম উদ্দীন জুয়েলারি দোকানের কর্মচারী। তিন ছেলে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তার সংসার।

মুসলিম উদ্দীন বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আমি পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছি। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে যাইনি। ৪ আগস্ট গভীর রাতে রক্তাক্ত শরীর নিয়েই লুকিয়ে বাড়িতে আসি। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা আমাকে পার্শ্ববর্তী আমার বোনের বাসায় লুকিয়ে রাখেন। সারা রাত যন্ত্রণায় ছটফট করেছি। সেই রাতের কথা কোনো দিন ভুলব না। এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়ে রাস্তায় বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছি। এদিকে তীব্র যন্ত্রণার কারণে শরীর ফুলে ওঠে। পরের দিন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। টানা ৪২ দিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে ৫৭টি গুলি বের করলেও এখনো শরীরে ১৫০ থেকে ১৬০টি গুলি রয়ে গেছে। এখনো যন্ত্রণা হয়, শরীর ফুলে উঠে, জ্বর আসে, কাঁপুনি হয়। চোখে মাঝেমধ্যে ঝাপসা দেখি। এমন শরীর নিয়ে এখন কাজে যেতে হচ্ছে। এক দিন কাজ করতে পারলে, অন্যদিন করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাকে দেখতে বাড়িতে এসেছিলেন। দেখা করেছেন, গলা মিলিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ বা পরিবারের ভরণপোষণ কীভাবে চলছে, তারা সেসব বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। আর্থিক সহায়তাও করেননি। সরকারি সহায়তায় আমি এখনো চিকিৎসাসেবা কিংবা কোনো অনুদান পাইনি। শরীরে গুলি নিয়ে কয়েক বার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ছিলাম। হাসপতাল থেকে সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তবে বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এমনকি প্রাইভেট ক্লিনিকে করাতে হয়েছে টেস্ট। ৮ থেকে ১০ বার আলট্রাসনোগ্রাম থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন টেস্ট করেছি। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমার গলায়, ঘাড়ে, হাতে, পায়ে, উরুতে, এমন কি পুরুষাঙ্গেও গুলি রয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, শরীর যেন আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছে।’

খুব কাঁপা কাঁপা গলায় মুসলিম উদ্দীন বলেন, আমার বড় ছেলে বিপ্লব হোসেন (১৫) স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মেজো ছেলে মেহেরাজ হোসেন (১৩) স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ছে। আর ছোট ছেলে জুনায়েদ হোসেনের বয়স ৫ বছর। আমার আয়ের ওপর পরিবার চলছে। এখন নিজের চিকিৎসা ও পরিবারের খাবার টাকা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। তার মধ্যে দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমার স্থায়ী কোনো সম্পদ নেই। আমরা তিন ভাই বাবার রেখে যাওয়া ৮ শতক জমিতে বাড়ি করে বসবাস করছি। আমার কিছু হয়ে গেলে বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের ৫ সদস্যের জীবনে চরম অন্ধকার নেমে আসবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল। আমি চাই, প্রতিটি আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হোক। যে যে কাজের প্রতি পারদর্শী, তাকে সেই কাজ দেওয়া হোক। এতে পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমরা চাই কর্মসংস্থান। চাই অধিকার, চাই মর্যাদা, চাই সম্মান।’

এ বিষয়ে মুসলিমের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘দিন যতই যাচ্ছে, অন্ধকার তত ঘনীভূত হয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই অনেক টাকা ঋণ করেছি। স্বামীর ওষুধের জন্য প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকার ওষুধ লাগছে, দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ। আগামী বছর থেকে ছোট ছেলেও স্কুলে ভর্তি হবে, তার খরচ। আমার স্বামীর শরীরে এখনো অসংখ্য গুলি রয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, ‘বেশ কিছু ছররা গুলি বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু গুলি বের করতে না পারলে আমার স্বামীর শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধবে।’ এই অবস্থায় আমার স্বামীর চিকিৎসা আর সংসার খরচ কীভাবে চলবে, ভেবে কূল পাচ্ছি না। আমার তিন সন্তানের ভবিষ্যৎই বা কী হবে? এমন দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না।’

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অডিট আপত্তির পাহাড়

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পিএম
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অডিট আপত্তির পাহাড়

আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গরূপে উদ্বোধনের প্রহর গুনছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। কিন্তু এখনো অডিট আপত্তির পাহাড়। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১০৮টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। নিষ্পন্ন হয়েছে ৩৩টি। এখনো অনিষ্পন্ন ৭৫টি অডিট আপত্তি। এই প্রকল্পে নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই দুর্বল, চুরি হচ্ছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঠিক ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পদ্মা রেলসেতু প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে- এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। তার অনুমতি নেওয়ার পরই পূর্ণাঙ্গরূপে উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। কোন রুটে চলবে, আয় কেমন হবে- এসব বিবেচনা করেই তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।’ আইএমইডির প্রতিবেদনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কাজ দেখভাল করার জন্য প্রকল্প পরিচালক আছেন, কনসালট্যান্ট আছেন। আইএমইডি তাদের সঙ্গে কথা বলেই রিপোর্ট করে। কাজেই কোনো ভুলত্রুটির ব্যাপারে তারা বেশি ভালো বলতে পারবেন।’ এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

আইএমইডির সচিব মো. আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সতর্কতার সঙ্গে টাকা খরচ না করলে যেকোনো প্রকল্পে ত্রুটি থাকতে পারে। এই প্রকল্পে তেমন কিছু ধরা পড়েনি। কিন্তু অনেক অডিট আপত্তি রয়েছে। প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সে ব্যাপারে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জবাব দেবেন, যেন নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটে। প্রকল্প ভালোভাবে তৈরি করা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তার গাউডলাইন নির্ধারণ করা হবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে।’ 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ছয় বছরে বাস্তবায়ন করার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালের ৩ মার্চ এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। প্রকল্প শেষের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ ধরা হয়েছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে খরচ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ২২ মে সংশোধন করে খরচ বাড়িয়ে ধরা হয় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ সময় খরচ বাড়ানো হয় ১২ শতাংশ। সময়ও বাড়ানো হয় দুই বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কাজ শেষ না হওয়ায় গত ২১ মার্চ আবারও এক বছর সময় বাড়ানো হয়, অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলার ১৪টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘ সময় স্থায়ী পিডির দায়িত্বে কেউ ছিলেন না। প্রথমে রেলওয়ে ক্যাডারের এস কে চক্রবর্তী ২০১৫-এর ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত সুকুমার ভৌমিক পিডির হাল ধরেন। এরপর অতিরিক্ত সচিব গোলাম ফকরুদ্দিন চৌধুরী ২০১৭-এর ৯ জুন থেকে ২০২১ সালের ১০ জুন পর্যন্ত পিডির দায়িত্ব পালন করেন। এর পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মো. আফজাল হোসেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে ১৭৩ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ। লুপ, সাইডিংসহ মোট ২৩৬ কিলোমিটার রেল ট্র্যাকের কাজ করতে হবে। ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৬০টি মেজর ব্রিজ, ২৭২টি মাইনর ব্রিজ (কালভার্ট ও আন্ডারপাস) নির্মাণ করা হবে। র‌্যাম্প রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার। এসব কাজের জন্য পরিকল্পনায় রয়েছে ২ হাজার ৪২৬ একর ভূমি গ্রহণ। এর মধ্যে কিছু ভূমি পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া যাত্রীদের ওঠানামার জন্য ১৪টি নতুন রেলস্টেশন নির্মাণ ও ছয়টি বিদ্যমান রেলস্টেশন সংস্কার-সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এসব স্টেশনে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহের কথা বলা আছে প্রকল্পে। 

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯৪ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া অংশে ৯৮ শতাংশ, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে ৯৯ দশমিক ৬০ এবং ভাঙ্গা-যশোহর অংশে ৯৮ শতাংশ। প্রকল্পটি ভালোভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য প্রতি তিন মাস পরপর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ৩২টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৯টি। আবার প্রতি চার মাস পরপর প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী ২৪টি পিএসসি হওয়ার কথা, কিন্তু হয়েছে মাত্র ১০টি। বর্তমানে প্রকল্পের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ঢাকার টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস নির্মাণ, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, অফিস ভবন, সিটিসি ভবন নির্মাণকাজ। এগুলো নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে যশোর-খুলনা রেলপথে যাতায়াতে সময় কমবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা এবং ঢাকা থেকে যশোর-বেনাপোল রেলপথে সময় কমবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে প্রথম বাণিজ্যিক আন্তনগর ট্রেন চালানো হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন পর্যন্ত। সে সময় পুরো প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে উদ্বোধন করা হয় মাত্র ৮২ কিলোমিটার।

বিআরটিসির তিন অর্থবছরে লোকসান ২৫ কোটি

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
বিআরটিসির তিন অর্থবছরে লোকসান ২৫ কোটি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিআরটিসির ট্রাক ডিপো, মতিঝিল-কল্যাণপুর-মিরপুর-জোয়ার সাহারা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ চারটি জেলায় বাস ডিপো ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিন অর্থবছরে। চালক, কন্ডাক্টর, সার্ভিস অপারেটর ও ব্যক্তি লিজ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা না করায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ তিন অর্থবছরে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারিয়েছে। প্রাপ্য বকেয়ার কিছু অর্থ আদায় করতে পারলেও নানা মামলা-মোকাদ্দমায় বিআরটিসিকে এখনো হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ এই তিন অর্থবছরে ২৪ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ৫০৯ টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। 

বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া ও মো. এহসান এলাহীর সময়কালে এসব দুর্নীতির দায় এখনো টানতে হচ্ছে বিআরটিসিকে। সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘নানা অনিয়ম, দুর্নীতি করে বিআরটিসিতে বিপুল পরিমাণ বকেয়া রেখে গেছেন সাবেক কর্মকর্তারা। আমার দায়িত্বকালে (২০২১ সালের পর থেকে) এই বকেয়ার পরিমাণ এখন ৯ কোটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছি। চাপ দিয়ে, বিভাগীয় মামলা দায়ের করে পুরোনো বছরগুলোর বকেয়া আদায় করছি। কিন্তু বকেয়ার পুরো টাকা আদায় করা খুব কঠিন।’

ডিপো ব্যবস্থাপকরা আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা
তিন অর্থবছরে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মতিঝিল, ঢাকা ট্রাক ডিপো, কল্যাণপুর, মিরপুর, জোয়ার সাহারা, গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা এবং রংপুর বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অডিট নিরীক্ষায় ধরা পড়েছে। এসব ডিপোর ব্যবস্থাপকরা সার্ভিস চার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি। এর মধ্যে ট্রাক সার্ভিস থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৫ টাকা। আর বিভিন্ন চালক, কন্ডাক্টর, সার্ভিস অপারেটর ও ব্যক্তি লিজ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের পরিমাণ ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার ১৩০ টাকা। বিআরটিসির বিভাগীয় কর্মকর্তারাও এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেননি বলে নিরীক্ষায় ধরা পড়ে। 

ব্যবসার ধরন পরিবর্তন, বিআরটিসি রাজস্ব হারিয়েছে ১২ কোটি টাকা
বিআরটিসির কল্যাণপুর বাস ডিপোর জায়গায় ৩৭টি দোকান বরাদ্দে নানা অনিয়ম ধরা পড়েছে অডিট প্রতিবেদনে। দোকান বরাদ্দের চুক্তিতে বলা হয়েছে, বাস ডিপোর অধীনে বরাদ্দ পাওয়া দোকানগুলো শুধু কনফেকশনারি ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে। ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করতে হলে তা বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। পাশাপাশি দোকান ভাড়ার চার মাসের সমপরিমাণ অর্থ ব্যবসার ধরন পরিবর্তন ফি দিতে হবে। তবে চুক্তির সব শর্ত লঙ্ঘন করে কল্যাণপুরের দোকানগুলো কনফেকশনারির স্টোরের পরিবর্তে বাস কাউন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যবসার ধরন পরিবর্তনের ফি জমা না হওয়ায় বিআরটিসি ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে ওই তিন অর্থবছরে। 
 
দোকান ও স্থাপনা থেকে ভাড়া আদায় হয়নি ৬ কোটি টাকা
উল্লিখিত তিন অর্থবছরে চট্টগ্রাম, মতিঝিল, কল্যাণপুর বাস ডিপো এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও স্থাপনা থেকে বিআরটিসি ভাড়া আদায় করতে পারেনি যথাসময়ে। এতে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৮ টাকা রাজস্ব হারায় বিআরটিসি। এই ব্যর্থতার দায়ভার আছে বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়েরও। নিরীক্ষায় বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ৫ কোটি ৯৪ লাখ ২ হাজার ৭৯৪ টাকা আদায় করতে পারেনি প্রধান কার্যালয়। এসব অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ে বিআরটিসি বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের করেছে। বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ফুলবাড়িয়া সিবিএস-২ মার্কেটের দোকান ও স্থাপনা বকেয়া ভাড়া আদায়ে নানা জটিলতা রয়েছে এখনো। অভিযোগের তির যাচ্ছে প্রধান কার্যালয়ের এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকে। 

এ বিষয়ে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মার্কেটের বিষয়ে মহাজটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা এস্টেট ডিপার্টমেন্টটা শেষ করে ফেলছেন। এটাকে এখন সিস্টেমে নিয়ে আসতে হচ্ছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক সংসদ সদস্য যিনি আবার সাবেক মেজর জেনারেল, তিনি বিআরটিসির জোয়ার সাহারা ডিপোর জায়গা নিয়ে দেনাদরবার করতে আসেন। কিন্তু আমি নড়িনি। এস্টেট ডিপার্টমেন্টের এসব বিষয় নিয়ে অনেক মামলা চলছে। অনেক মামলার রায় আমাদের পক্ষে এসেছে।’
 
ইজারার অর্থ আদায় হয়নি, বিআরটিসি হারিয়েছে ৬ কোটি টাকার রাজস্ব
তিন অর্থবছরে মতিঝিল, কল্যাণপুর, জোয়ার সাহারা, বরিশাল, খুলনা, বগুড়া বাস ডিপো এবং প্রধান কার্যালয় বিআরটিসির বাস রুট বিভিন্ন রুটে ইজারা দেয়। এতে বিআরটিসির ৬ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের কথা থাকলেও তা আদায় করা যায়নি।

তিন অর্থবছরে ইজারার অর্থ বকেয়া থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর জোয়ার সাহারা বাস ডিপো থেকে কেটিআর এন্টারপ্রাইজকে ৯টি বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। অডিট নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, দৈনিক ১ হাজার ২০০ টাকা চুক্তিতে তৌহিদুর রহমান খানের মালিকানাধীন কেটিআর তিন বছর মেয়াদে ৯টি বাস ইজারা দেয় জোয়ার সাহারা ডিপো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিআরটিসি কেটিআর থেকে ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৮০০ টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৪০ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয় কেটিআর। 

সার্ভিস চার্জ বাবদ বকেয়া ৪ কোটি টাকা 
তিন অর্থবছরে বিআরটিসির ঢাকা ট্রাক ডিপো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪ কোটি ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৫ টাকার রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। এর মধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর, বিসিআইসি এবং বিজি প্রেসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে। এ তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পরিবহন সার্ভিস বাবদ কত টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে সে হিসাবও পাওয়া যায়নি অডিট নিরীক্ষায়। 

ট্রিপের টাকা জমা হয়নি ব্যাংকে, আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা
বিআরটিসির চট্টগ্রাম ট্রাক ডিপোর কর্মকর্তারা তিন অর্থবছরে ট্রিপ থেকে আদায় করা অর্থ ব্যাংকে জমা দেননি। এতে বিআরটিসির ১ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৫ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৯ সালের পাঁচ মাস ও ২০২০ সালের দুই মাসে বিভিন্ন ট্রিপের টাকা আদায়ের রসিদের বিল পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ট্রিপে বিআরটিসি ৩ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৫ টাকা আদায় করেছে। অথচ ওই ডিপোর কর্মকর্তারা ক্যাশ বইতে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা লিপিবদ্ধ করেছেন। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। অডিট নিরীক্ষায় ধরা পড়ে গরমিলের এই অর্থ সংস্থার ব্যাংক হিসাবেও জমা করা হয়নি।

রয়্যালটি বাবদ বিআরটিসি হারিয়েছে ২৪ লাখ টাকা 
ঢাকা থেকে আগরতলা, কলকাতা, শিলং, গুয়াহাটি বা খুলনা থেকে কলকাতা রুটে বিআরটিসির ব্যানারে যাত্রী পরিবহন করছে রয়েল কোচ, এনআর ট্রাভেলস ও শ্যামলী পরিবহন। এই তিন বাস কোম্পানি তিন অর্থবছরে র‌য়্যালটি ফি বাবদ বিআরটিসিকে ২৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেনি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তিন পরিবহনের যাত্রীসেবা বন্ধ হয়ে গেলেও তারা সেই অর্থ পরিশোধ করেনি বিআরটিসিকে।

বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন বিআরটিসির ১৯টি বাস লিজ দেওয়া আছে। আস্তে আস্তে লিজ দেওয়া বন্ধ করে দেব। লিজের মেয়াদ শেষ হলে আর নবায়ন করতে দেব না। ২০২১ সালে আমি যখন দায়িত্ব নিই, এসে দেখি সব নিয়মকানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিআরটিসির বাস সব স্বত্ব ত্যাগ করে বেসরকারি কোম্পানির মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বছরের পর বছর লিজ নেওয়া মালিকরা বিআরটিসিকে রাজস্ব দেয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যে গাড়িগুলো বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছিল, সেগুলো ভাঙারি ঘরে গিয়েছে।’

১৩৯টি অকেজো বাস ফেলে রাখা হয়েছে
চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মিরপুর, জোয়ার সাহারা, গাজীপুর বাস ডিপো, গাজীপুর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও বগুড়া বাস ডিপোতে ১৩৯টি নিলামযোগ্য অকেজো বাস ফেলে রাখা হয়েছিল। এতে সরকারি সম্পদের অপচয় হয়েছে। অকেজো ঘোষিত গাড়ি প্রধান কার্যালয়ের ক্রয় বিভাগের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করতে হয়। ডিপো কর্তৃপক্ষের নিলামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। বাসগুলোর যন্ত্রাংশ মেরামতযোগ্য হলেও বাইরের অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। 

এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাস লিজ দেওয়ার সময় শর্ত ছিল, ৬ মাস অন্তর বাসমালিকরা বিআরটিসিতে এসে বাসগুলোর পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে তা মেরামত করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাসমালিকরা আসেননি। এতে অনেক গাড়ি হারিয়ে গেছে।’

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গাড়ি লিজ দেওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জানে, বিআরটিসির গাড়িতে মাইলেজ ধরা আছে। তারা সে মোতাবেক টাকা দেবে। বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করতে গেলে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার কঠিন হবে। বিআরটিসির গাড়িতে তেমন সমস্যা নেই। আর সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করছে। বিআরটিসিকেও তো তার লাভের দিকটি দেখতে হবে।’

পুলিশে এখনো ‘অজানা ভয়’!

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পিএম
পুলিশে এখনো ‘অজানা ভয়’!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

২০ নভেম্বর বেলা ২টা, রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করছিলেন ইব্রাহিম নামের একজন ট্রাফিক পুলিশ। ওই সিগন্যালে দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলে থাকা একজন পুলিশ অফিসার তাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন পিবিআইয়ের হেড অফিস কোন দিকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। জবাবে ওই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ‘চেনেন না’ বলে জানান। ধানমন্ডির ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত পিবিআইয়ের অফিস। কলাবাগান থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ হলেও ওই দুই পুলিশ সদস্যের কেউ ঢাকার রাস্তা চেনেন না। কারণ তারা দুজনই সম্প্রতি অন্য জেলা থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় এসেছেন।

শুধু এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাই নন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডিএমপিতে যোগ দেওয়া ৯০ শতাংশ সদস্যেরই কর্মস্থল দীর্ঘদিন ছিল ঢাকার বাইরে। গত তিন মাসে ঢাকায় পুলিশের বদলি ও পদায়ন হয়েছে ঝড়ের গতিতে। ডিএমপি জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অন্তত ৩২ হাজার সদস্য কাজ করেন। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরের রাস্তাঘাট ও অলিগলি না চেনার এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলমও। গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদর দপ্তর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রায় সব পুলিশকে আমরা চেঞ্জ করছি। তাদের কিন্তু অলিগলি চিনতেও সময় লাগবে। তাদের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সময় লাগবে।’

সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ মনে করেন, ‘পুলিশে বদলি এটা নিয়মিত চিত্র। যখন কাউকে বদলি করা হয়, তখন নতুন এলাকায় গিয়ে সব বুঝতে পাঁচ-ছয় দিনের বেশি লাগার কথা না।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকার কীভাবে তাদের ব্যবহার করছে, এখন তাদের কী অবস্থা। সংগত কারণে এখন আর তারা পুরোপুরি মারামারি করতে যেতে চায় না।’

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে বলে খোদ পুলিশের মধ্যেই আলোচনা আছে। এ সময় সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান। ওই সময় ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় পুলিশের ওপর দফায় দফায় হামলার কারণে পুরো বাহিনী বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন বিভাগে পুলিশে রদবদল শুরু হয়। পুলিশের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নানা উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশের মনোবল চাঙা হয়নি।

পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, সরকার পতনের পর পুলিশে বড় ধরনের বিপর্যয় হয়েছে। অতীতের কতিপয় উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। পুলিশকে দেশের অনেক মানুষ অবিশ্বাস করে। তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। যে কারণে পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে, তারা সক্রিয় হতে পারছে না। 

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘থানায় গেলে মানুষ পুলিশের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না- এমন অভিযোগ অনেকে করে থাকেন। অনেকে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন বলেও অভিযোগ আছে। 

তাই আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একজন কনস্টেবল পর্যন্ত যোগাযোগ বাড়িয়েছি। তাদের মনোবল ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমরা বলেছি আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সবাই অপরাধী নয়, বেআইনিভাবে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না। যারা অপরাধী শুধু তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সদস্যদের আমরা বলেছি আমাদের সেবার মান বাড়াতে হবে। তাহলে আপনারা মানুষের আস্থার জায়গায় ফিরতে পারবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘থানাকে চাঙা করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে। সে জন্য প্রত্যেক থানায় আমি আসার আগেই যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেছেন। সেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই কাজ করছেন। আমরা চেষ্টা করছি। তবে পুলিশের যে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে তা ফিরতে সময় লাগবে।’ 

ডিএমপির সূত্রগুলো আরও জানায়, বদলি হওয়া পুলিশের রাজধানীর বস্তি, ঘুপচি ও অলিগলি না চেনা ছাড়াও পরিচিত লোকদের মাধ্যমে অপরাধ জগতে তারা নতুন সোর্স এখনো তৈরি করতে পারেনি। ফলে সোর্স নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। এর ফলে আসামি ধরা বা মামলার তদন্তে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে কাজে এসেছে ধীরগতি।

প্রায় একই চিত্র ট্রাফিক পুলিশেও। বেশির ভাগ সদস্যেরই রাজধানীতে আগে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে সারা দেশে মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার। 

সংস্থাটির আরেক হিসাবমতে, ঢাকায় নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ রয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৩৬টি। নিবন্ধন ছাড়া এর দ্বিগুণ রয়েছে বলে মনে করা হয়।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) হিসাবে ঢাকার সড়কে সাড়ে তিন হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। রিকশাচালকদের বিভিন্ন সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় ইজিবাইক, প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার মোট সংখ্যা ১৫ লাখ। আর শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশা ১০ লাখের বেশি। বিভিন্ন বাহনের চালকদের নানা ধরনের মনস্তত্ত্ব রয়েছে; যেটি দীর্ঘদিনের কাজের মধ্য দিয়ে পুলিশ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু নতুন বদলি হওয়া পুলিশ সদস্যরা বিষয়গুলো এখনো বুঝে উঠতে না পারায় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

এ কারণে সড়কে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। ট্রাফিক ও মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বাড়লেও তারা এখনো পূর্ণোদ্যমে কাজে ফেরেননি। এ ছাড়া কিশোর গ্যাং এখনো পুরোপুরি দমন হয়নি। সরকার পতনের পর কারাগার থেকে সুব্রত বাইন, ‘পিচ্চি হেলাল’, ‘কিলার আব্বাস’সহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মুক্তি পাওয়ার পর তাদের অনুসারীদের মধ্যে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে। 

শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। মাত্র তিন মাসের মধ্যে সাবেক আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বাহারুল আলম। এ ছাড়া সাবেক ডিএমপির কমিশনার মাইনুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শেখ সাজ্জাত আলী। ফলে বদলি-আতঙ্কে রয়েছেন বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য। তারা কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা জানান, নতুন কর্মস্থলে অচেনা অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা কঠিন হচ্ছে। এ ছাড়া আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র এখনো অপরাধীদের হাতে থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর।

ডিএমপি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ঢাকার বিভিন্ন থানায় খুনের মামলা হয়েছে ৪৬০টি, এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই হয়েছে সর্বোচ্চ ১৪৮টি। 

সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার জেরে যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলার পর দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলেও পুলিশকে কোনো অ্যাকশনে দেখা যায়নি। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের মতে, পুলিশ এখনো নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যে আছে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে একধরনের সংশয় কাজ করছে। তারা মনে করছেন, আন্দোলন দমাতে গিয়ে তারা আবার না কোন বিপদে পড়েন! তাই পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।

চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। গত ২৮ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি বলেছেন, পুলিশের প্ররোচনায় সেদিন হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ড আদালত ভবনে সংঘটিত হয়েছে।

নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে যখন কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো, তখন পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল। কাদের ইন্ধনে চিন্ময় কৃষ্ণকে ৩ ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে হ্যান্ডমাইক দেওয়া হয়েছিল। প্রিজন ভ্যান থেকে তিনি কীভাবে বক্তৃতা দিলেন। এসব বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

পুলিশের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, পুলিশের পুরোনো সুনাম ফেরাতে ও কাজে গতি আনতে এই বদলি। বিগত সরকারের আমলে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায় পুলিশ। গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও দেখা গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। 

এ ছাড়া অল্প সময়ে এতসংখ্যক পুলিশ সদস্যের কর্মস্থল বদলের ঘটনা নজিরবিহীন। ঢাকার বাইরে থেকে এসে পুলিশ সদস্যরা ডিএমপির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ঢুকছেন। এসব পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ ও উদ্দীপনা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় আসা নতুন অনভিজ্ঞ পুলিশ সদস্যদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এতে করে মহানগরে অপরাধ বাড়ছে।

সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশের মনোবলে-জনবলে তো আঘাত লেগেছে। এই মনোবলটা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আপনি (সরকার) বলবেন তাদের পেটাতে। যেটা সবচেয়ে খারাপ কাজ, নেগেটিভ কাজগুলো তো সরকার পুলিশকে দিয়ে করায়। বিক্ষোভটা দমন করাতে হবে, ব্যারিকেড ভাঙতে হবে। সমাবেশটা বন্ধ করতে হবে। পেটানোর কাজটা পুলিশকে দিয়ে সরকার করায়। যখন এই কাজ করে তখন মার খায়, প্রাণ যায়। আন্দোলনে পুলিশ মারা হলো, এসব তো তাদের মাথায় থাকবে। তার পরও আমি মনে করি পুলিশের মনোবল ফিরে আসবে।’ 

পুলিশ কেন এখনো চাঙা হতে পারছে না। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান  শাহরিয়া আফরিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘মোল্লা কলেজের ঘটনার কথা যদি বলি, তাহলে দেখবেন ওই দিন পুলিশ কিন্তু তেমন কোনো অ্যাকশনে যায়নি। কারণ গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের মধ্যে এখনো ভীতি কাটেনি। কারণ ওই সময়ে অনেক পুলিশ সদস্য নিহত হন, অনেক মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশ এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি কোথাও মব অপরাধ সংঘটিত হলে সেখানে প্রায় ১০ হাজার লোক মিলে এটি করছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের একার পক্ষে সেটি সামাল দেওয়া সম্ভব না।’

পুলিশের বদলির বিষয়ে তিনি বলেন, বদলির কারণে পুলিশ সদস্যরা নতুন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে সময় নিচ্ছেন। এ ছাড়া কাজেও বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে গতি কমে গেছে। 

তিনি বলেন, পুলিশ তো নিজে বলতে পারছে না তাদের সমস্যার কথা। তাই সবার উচিত তাদের সহযোগিতা করা। গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে থানায় আগুন দেওয়া, পুলিশের গাড়ি, মামলার নথি পুড়িয়ে দেওয়া ও অস্ত্র লুট করা হয়েছিল। এ ছাড়া পুলিশের আনুষঙ্গিক অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান হলে মনোবল ফিরবে, পুলিশ মানুষের আস্থার জায়গায় যেতে পারবে। তবে অবশ্যই সেটি সময়ের ব্যাপার। পুলিশকে চাঙা হতে সময় দিতে হবে।