ঢাকা ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

গণ-অভ্যুত্থানে আহত বার্ন বিভাগে ভর্তি ৫ জনকে বিদেশ পাঠানোর সুপারিশ

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পিএম
বার্ন বিভাগে ভর্তি ৫ জনকে বিদেশ পাঠানোর সুপারিশ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ১৩ জন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে এদের সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হতে পারে। বাকি আটজনের চিকিৎসা দেশে বিদ্যমান ব্যবস্থায় করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে।

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড গত ৩১ অক্টোবর এক সভা করে। সভায় প্রতি রোগীর বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও হালনাগাদ তথ্য বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ওই দিনই মেডিকেল বোর্ড এই পাঁচজন রোগীকে বিদেশ পাঠানোর লিখিত সুপারিশ ঢামেক পরিচালকের কাছে জমা দেয়। ঢামেকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ওই সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাক আহাম্মদ সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ রায়হান, অর্থোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল ইসলাম আকন ও মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকারিয়া আল আজিজ উপস্থিত ছিলেন। 

যাদের বিদেশ পাঠাতে সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পাকুল্লা গ্রামের পরেশ চন্দ্র বালার ছেলে দীপংকর বালা (২৬), রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমোহর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩১), দিনাজপুর সদর উপজেলার জোতসাতনালা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে মো.হাফিজুর রহমান হাবিব (১৭), ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শালীহর গ্রামের মো. নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোশাররফ হোসেন (৪০)। আরেকজন রোগী আছেন। যাকেও বিদেশ পাঠানো লাগতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। তার অবস্থা এসব রোগীর তুলনায় কম গুরুতর। তাকে ফলোআপ করা হচ্ছে। ওই রোগীর পরিচয় নিশ্চিত করে জানা যায়নি। 

জানা গেছে, দীপংকর বালার বাম পায়ে গুলি লেগে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সেখানে চামড়া-মাংস কিছু ছিল না। অর্থোপেডিক সার্জনরা একধরনের এক্সটার্নাল ফিক্সেটর দিয়ে ফিক্সড করেন। পরে ওই জায়গা মাংস দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার পা এখনো ঠিক হয়নি। আরও কিছু সার্জারির প্রয়োজন আছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘একটা ইয়াং ছেলে। তার পা সম্পূর্ণ ঠিক হওয়া নিয়ে আমরা কিছুটা চিন্তিত। লম্বা সময় লাগবে। বিদেশে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায় কি না, আমরা বিবেচনা করছি। আমাদের চেয়ে আরও অ্যাডভান্স কান্ট্রিতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে তার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

মোশাররফের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার ডান পায়ের উরুতে গুলি লেগেছে। পায়ের প্রধান রক্তনালি ছিঁড়ে গেছে। আমাদের এখানে তাকে কৃত্রিম রক্তনালি দিয়ে গ্রাফ করা হয়। গ্রাফ করে প্রাইমারি কাজ চালু করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এই গ্রাফটা টেকেনি। রক্তনালি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটা কমিটি গঠন করা হয়। তারা তার বিদেশ যাওয়া বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই রোগীর বিষয়ে যতটুকু পেরেছি আমরা করেছি। বিষয়টা অনেক জটিল, বিদেশে গিয়েও পরিপূর্ণ সুস্থ হবে কি না, সেই বিষয়ে আমরা চূড়ান্ত কথা বলে তারপরেই পাঠাব।’

আরেকজন আনোয়ার হোসেন। চিকিৎসকরা জানান, তার কাঁধে গুলি লেগে ওপরের দিকে স্পাইনাল কর্ডে ইনজুরি হয়েছে। যে কারণে তার শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে গেছে। চলাচল করতে পারে না। এরই মধ্যে তার পিঠেও একটি ঘা হয়। যেটি প্লাস্টিক সার্জারি করে ঠিক করা হয়। কিন্তু নিচের অংশ ঠিক হয়নি। 

ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এটা খুবই জটিল। সারা পৃথিবীতে এর চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি কেউ সুস্থতার নিশ্চয়তা দিতে পারে না। আমাদের নিউরো সার্জন যারা আছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন।’ 

হাবিবের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, তার পিঠে গুলি লেগেছে। তারও স্পাইনাল কর্ডে ইনজুরি হয়েছে। নিচের অংশ অবশ হয়ে গেছে। হাঁটাচলা করতে পারে না। এরই মধ্যে তার পিঠে একটি ঘা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার সেখানে প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। এটার বিষয়েও একই সিদ্ধান্ত। বিদেশে নিয়ে স্টেমসেল থেরাপি দিয়ে দেখা যেতে পারে। স্টেমসেল থেরাপি দিলে কখনো কাজ হয় আবার কখনো কাজ হয় না। এটা অনেক ব্যয়বহুল। 

এসব রোগীকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চললেও বিষয়টি জানেন না রোগীরা। দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে তাদের মধ্যে একধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জানি না কী হবে। কত দিন থাকতে হবে। কত দিনে সুস্থ হব, কত দিনে হাঁটতে পারব। এভাবে থাকা ভীষণ কষ্টের।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যে উদ্যোগই নিক না কেন, যেন একটু দ্রুত নেয়। আমার ওপর আমার পরিবার নির্ভরশীল। আমি এভাবে বিছানায় পড়ে থাকলে আমার পরিবার শেষ হয়ে যাবে। তাদের পথে বসে যেতে হবে। আমার আয়ের ওপরই নির্ভর সাতজন। গার্মেন্টে কাজ করে ২০-২২ হাজার টাকা পেতাম, তা দিয়েই সংসার চলত। এখন আমাদের সবকিছুই অনিশ্চিত। 

কাদেরের ডাকে সাড়া দেননি শেখ হাসিনা!

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
কাদেরের ডাকে সাড়া দেননি শেখ হাসিনা!
ওবায়দুল কাদের

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, দলের তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েক দফা চেষ্টা করেও শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি পাননি। কারণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার ওপরে প্রচণ্ড বিরক্ত। অনেকের মতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও। এ কারণে তিনি সাক্ষাতের অনুমতি দেননি।

অবশ্য ওবায়দুল কাদেরের ওপরে ক্ষুব্ধ দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীও। এ কারণে ভারতে অবস্থান করলেও নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে তিনি আত্মগোপনে আছেন। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, ভারতে অবস্থান করলেও কৌশলগত কারণেই শেখ হাসিনার অবস্থান কাউকে জানানো হচ্ছে না। তবে ফোনে তিনি ঘনিষ্ঠ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। সেই সূত্র ধরেই শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। তবে সফল হননি বলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন। 

যদিও এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দলটির নেতারা। তবে কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত আমাদের নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) তাদের দেশের প্রটোকল অনুযায়ী যথাযথ সম্মান দিয়েছে। নেত্রী যদি কারও সঙ্গে দেখা করতে চান, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। ইতোমধ্যে তার কন্যাসহ অনেকের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে আপনি (প্রতিবেদক) যার কথা (কাদের) বলেছেন তার সঙ্গে এখনো নেত্রীর দেখা হয়নি।’ এর বেশি কিছু ওই নেতা বলতে চাননি।

ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন তিনজন নেতার সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের। তাদের ভাষ্যে, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্ত্রীসহ একটি রিসোর্টে রয়েছেন। ভারতে প্রবেশের পর ফোন করে তিনি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনবার দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এখনো চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে দেখা করার অনুমতি পাননি।’ 

তারা জানান, ওই রিসোর্টে ওবায়দুল কাদের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ আনানো হয়েছে। তিনি প্রয়োজনে অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এর বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। তার অবস্থানের সঠিক ‘লোকেশন’ জানানো হচ্ছে না। কারণ কলকাতায় অবস্থানরত অনেক নেতা-কর্মী তার প্রতি ক্ষুব্ধ। এখানে তার সঠিক অবস্থান জানতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে।

২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। এরপর আরও দুবারসহ প্রায় আট বছর ধরে একই পদে রয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত এই নেতা। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে এখন এই নেতার অত্যন্ত নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরাও তার প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ রয়েছেন। সরকার পতনের পরপরই তিনি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গোপনে ভারতে চলে যান। গত ১১ নভেম্বর থেকে স্ত্রীসহ কলকাতায় অবস্থান করলেও তা গোপনই রেখেছেন ওবায়দুল কাদের। কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই তার সঠিক ‘লোকেশন’ সম্পর্কে অবগত নন বলে জানা গেছে।

সূত্রমতে, এটি জেনেই নেতা-কর্মীদের আক্রোশ কমানোর জন্য সময়ক্ষেপণ করছেন। সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন এই নেতা। পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। 

আওয়ামী লীগের সরকার পতনকে কেন্দ্র করে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের কারণে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ওপর নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সময় বেফাঁস কথাবার্তা বলে তিনি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন বলে আলোচনা আছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পেছনে কেউ কেউ তাকেও দায়ী করে থাকেন। 

করোনা-আন্দোলেনে শিক্ষায় অপূরণীয় ক্ষতি

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ এএম
করোনা-আন্দোলেনে শিক্ষায় অপূরণীয় ক্ষতি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

নানা কারণে দেশে শিক্ষায় ধাক্কা লাগছে প্রতিনিয়ত। কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবার কখনো মানবসৃষ্ট কারণে অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায়। ২০২০ সালে মহামারি করোনায় ব্যাহত হয় প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। ধাপে ধাপে এ অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা হলেও কোভিডের ক্ষতিকর প্রভাব এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। করোনার মতো ব্যাপক প্রভাব না পড়লেও ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের কারণে শিক্ষায় ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনোজগতে পরিবর্তন, পাঠ্যসূচিতে সংযোজন-বিয়োজন, পরীক্ষা না দেওয়ার প্রবণতা, উচ্চশিক্ষায় সেশনজট, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পাবলিক পরীক্ষা, অটোপাসসহ নানা কারণে ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ বাড়লে পর্যায়ক্রমে বাড়ে ছুটিও। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ জানায়, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মৌলিক সাক্ষরতা এবং গাণিতিক দক্ষতার ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষকদের মতে, মহামারির বহুমাত্রিক প্রভাবের মধ্যে শিখন ঘাটতি এবং শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার উচ্চহার ছিল ব্যাপক। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বিইডিইউ) সমীক্ষা অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায়, ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজি ও ৬৯ শতাংশ গণিতে প্রত্যাশিত দক্ষতার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গবেষণায়ও তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের তথ্য উঠে আসে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রকাশনা এডুকেশন ওয়াচ ২০২৩-এর তথ্য বলছে, ২০২০ সালে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ (দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে) এবং ৬ শতাংশ (ষষ্ঠ শ্রেণির ক্ষেত্রে) শিক্ষার্থী পরবর্তী বছর বিদ্যালয়ে যায়নি অর্থাৎ তারা ঝরে পড়েছে। এমনকি এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের ৫৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আর বিদ্যালয়ে ফিরতে চায় না। পাশাপাশি সংকটের সময় অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ডিভাইস না থাকার কারণে পিছিয়ে পড়ে।

সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ থাকলেও করোনার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চট্টগ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন মাজহারুল ইসলাম। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার জীবনে করোনার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। আমি যখন বিদ্যালয়ে যোগ দিই, তখন দেখতে পাই শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। করোনায় যারা স্কুল ছেড়েছে, তারা ফেরেনি। অনেকে আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারেনি।’ 

ঝরে পড়ার পাশাপাশি সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হয়েছে অনেকের। ফলে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় তারা অংশ নিতে পারেননি। চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩০ বছর নির্ধারিত থাকায় তাদের আবেদনের সুযোগও কমে আসে। যদিও সম্প্রতি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগও কমে যায়। কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বেড়ে যায়।

অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের কারণেও প্রায় এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। একই শিক্ষাবর্ষের হয়েও সবাই একই সঙ্গে অনার্স কিংবা মাস্টার্সের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। আবার অনেকের ফলও প্রকাশ হয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনেক বিভাগের শিক্ষার্থী সম্প্রতি ঘোষিত ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন না। আবার একই বর্ষের অনেক শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় তারা আবেদন করতে পারবেন। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল হক আবেদনের সময় জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

এই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের মনোজগতেও পরিবর্তন আসছে। নানা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ায় একটা অংশের মধ্যে নেতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। আবার অনেকে সহপাঠীকে হারিয়ে চরমভাবে ভেঙে পড়েন। অনেককে আন্দোলনে প্রাণ হারানো সহপাঠীর ছবির সঙ্গে ফুলের তোড়া রেখে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতেও দেখা গেছে। আবার আন্দোলন-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের আচরণ নিয়েও নানা প্রশ্ন তোলেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সহিংস হতে দেখা গেছে। হঠাৎ করেই নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন তারা। পরীক্ষা বাতিল এবং ফল পরিবর্তনের দাবিতে ফেল করা শিক্ষার্থীরাও সচিবালয়ের মতো জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হেনস্তার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে দাবি করে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালানো হয় ব্যাপক ভাঙচুর। নানা জটিলতায় পড়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থী।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, নেতিবাচক কর্মকাণ্ড যারা করছেন এই সংখ্যাটা বেশি নয়। এখানে কারও হয়তো ইন্ধনও থাকতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনো-সামাজিক কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

অটোপাসের ডামাডোল, পরীক্ষা না দেওয়ার প্রবণতা

করোনার কারণে ২০২০ সালের এইচএসসির পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের মাধ্যমে ফলাফল পায়। পরবর্তী বছর কম বিষয় ও কম নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালেও কম নম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০২৩ সালেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ণ বিষয় ও নম্বরে পরীক্ষা না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ঘাটতি তৈরি হয়। চলতি বছরও বন্যার কারণে সিলেট বিভাগে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুর্গত জেলাগুলোর শিক্ষা খাতে দেখা দিয়েছে বিপর্যস্ত অবস্থা। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ কয়েকটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শিক্ষা খাতে দেখা দেয় বিপর্যস্ত অবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে ভবন ও আসবাব ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক দিন পাঠদান করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তী সময়ে জুলাই আন্দোলনের কারণে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরীক্ষা বাতিল চেয়ে সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে একদল পরীক্ষার্থী। পরে পরীক্ষা বাতিল করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হয়। 

অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন কারিকুলাম বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিভাগ বিভাজন চালু করা হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালে নবম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য দশম শ্রেণিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চালুর কথা উল্লেখ করা হয়। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের একটি অংশ সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন দরকার।

>পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হয়নি
>ঘাটতি পূরণের পন্থা বের করতে হবে
>শিক্ষা নিয়েই সংস্কার কমিশন হওয়া উচিত

মাথার গুলি নিয়ে রুবেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১১ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
মাথার গুলি নিয়ে রুবেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
গুলিবিদ্ধ রুবেল মন্ডল

‘টাকার অভাবে ছেলের মাথার গুলি বের করতে পারছি না। তার নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। সে জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। আমি নিজে হার্টের রোগী। তারপরও এখন বাধ্য হয়ে এই শরীর নিয়ে ভ্যান চালাই।’

সোমবার (২ ডিসেম্বর) কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ রুবেল মণ্ডলের বাবা বাবলু মণ্ডল। 

তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বড় শিমুলতলা নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রুবেল ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়া এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।

সোমবার বড় শিমুলতলা নয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, রুবেল গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পড়ালেখা ছেড়ে তিনি ঢাকায় যান। সেখানে আশুলিয়া থানার ভাদাইল এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। গত ১১ বছর তিনি সেখানে চাকরি করেছেন। 

আহত রুবেল বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট আমি আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ-আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুড়ি ছুড়তে থাকে। এ সময় আমার মাথা, বাম হাত, পেটে ও ঘাড়ে কয়েকটি গুলি লাগে। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখনো ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। গুলির ভয়ে কেউ আমাকে উদ্ধার করতে আসেননি। অনেকে ভেবেছিলেন, আমি মরে গেছি। পুলিশ চলে গেলে ওয়াসিম নামের এক ছোট ভাই আমাকে উদ্ধার করে এক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা আমার শরীর থেকে ছয়টি গুলি বের করেন। এক দিন পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে আমাকে হাবীব ক্লিনিক নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমার অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর পরিবারের লোকজন আমাকে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে নেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা আমার মাথার দুটি গুলি বের করতে পারেননি। তারা বলেন, গুলি বের করতে অন্য হাসপাতালে নিতে হবে। টাকার অভাবে অন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে পারিনি। ২৪ দিন চিকিৎসা শেষে কিছু ওষুধপত্র নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। এখন গুলিগুলোর কারণে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলি বের করতে হবে। নয়তো বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।’

রুবেল মণ্ডলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘ছয় সদস্যের পরিবার। আমাদের পাঁচ ও তিন বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। সন্তানদের গ্রামে রেখে আমি আর আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করতাম। সামান্য কিছু জমানো টাকা ছিল। তা চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেছে। সে (রুবেল) আহত হওয়ায় তাকে নিয়ে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই কারণে এখন আমার চাকরি নেই। অভাবের সংসার। স্বামীর চিকিৎসা করানো তো দূরের কথা, এখন পরিবারের লোকদের মুখে খাবার তুলে দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমার স্বামীর সুচিকিৎসা প্রয়োজন। উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমাদের সামান্য খাদ্য ও কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে।’

শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে
পােশাক কারখানায় কাজ করছেন এক নারী। ছবি : খবরের কাগজ

দেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সাড়ে ৪ লাখ নারীর অংশগ্রহণ কমেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশক্তি প্রতিবেদন ২০২৩-এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে যেখানে দেশের শ্রমশক্তিতে ২ কোটি ৫৭ লাখ নারীর অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখে।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর শহরাঞ্চলে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৪৬ লাখ, যা তার আগের বছর ছিল ৪২ লাখের কিছু বেশি। অন্যদিকে গ্রামে এই অংশগ্রহণ কমতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ, যা গত বছর কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭ লাখে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। কারণ এর ফলে অধিকার আদায়ের দিক দিয়ে নারীরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছেন। তবে এর মূল কারণ কর্মক্ষেত্রে নারীর কর্ম-উপযোগী পরিবেশ তৈরি এবং নিশ্চিত না হওয়া। জেন্ডারভিত্তিক যে ভায়োলেন্সগুলো হয়, তার কোনো বিচার বা সমাধান না হওয়া। এর ফলে নারীরা আবার ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা ভুলে যাচ্ছি এ দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। ফলে অর্থনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি দেশকে এগিয়ে নিতে এই জনগোষ্ঠীর আর্থিক স্বনির্ভরতা প্রয়োজন।’ 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি  ডা. ফওজিয়া মোসলেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ কমে যাওয়া আমাদেরকে হতাশ করেছে। এটি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়। কারণ নারী যদি কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে পড়েন, তবে তার অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা থাকে না। ফলে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। এ জন্য নারীর কর্মক্ষেত্রে থাকা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’    

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, অবৈতনিক পারিবারিক কর্মে নিয়োজিত নারীর সংখ্যাও কমেছে অনেকটা। ২০২২ সালে যেখানে ৩১ লাখ নারী অবৈতনিক পারিবারিক কর্মে নিয়োজিত ছিলেন, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখে। এর মধ্যে গ্রামে নারী কর্মীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল ২৬ লাখ ৬ হাজার, যা ২০২২ সালে ছিল প্রায় ২৮ লাখ। আর শহরে ২০২৩ সালে ছিল ২ লাখের কিছু বেশি, যা ২০২২ সালে ছিল ৩ লাখের কিছু বেশি। এ ছাড়া ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুব শ্রমশক্তিতেও কমেছে নারীর অংশগ্রহণ।

এ বিষয়ে সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারী তার প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পাচ্ছেন না। তাদের বাচ্চাদের রাখার কোনো জায়গা নেই। এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি গ্রামাঞ্চলে। ফলে গ্রামে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। তারা কাজ ছেড়ে ঘরে চলে যাচ্ছেন।’ 

জনশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে তাকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারীকে কাজ করতে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। শিক্ষিত হয়ে অথবা তার স্কিল ডেভেলপ করে তাকে আধুনিক মেশিনারিজের সঙ্গে কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। তাহলে পোশাক কারখানাতেও নারীরা আগের মতো কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারেও উদ্যোগ নিতে হবে।’

নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীরা যেন কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারেন এবং আরও ভালো অবস্থানে যেতে পারেন, তার জন্য সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বিক একটি পরিকল্পনা নিতে হবে যেন নারীরা শিক্ষিত হয়ে বা দক্ষ হয়ে কাজে প্রবেশ করে সেখানে স্থায়ী হতে পারেন। ডে-কেয়ার তৈরিসহ নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিতে হবে।’  

চট্টগ্রামে আউটার রিং রোডের কাজ শেষ হয়নি ১৩ বছরেও

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
চট্টগ্রামে আউটার রিং রোডের কাজ শেষ হয়নি ১৩ বছরেও
চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোডের সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত অংশ। ছবি: খবরের কাগজ

সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের ক্ষয়ক্ষতি কমানো, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ একাধিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে ‘চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

তিন বছর মেয়াদের কাজটি শুরুর পর এরই মধ্যে চার দফা বাড়ানো হয়েছে। ৮৫৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি ১৩ বছরে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়নি!

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির মতে, প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি কাজ শেষ হতে সময় লাগলে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় হয়। কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সেটি সুপরিকল্পিত কি না তা যাচাই করা উচিত।

তবে প্রকল্প পরিচালক বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানিয়েছেন, কাজ শুরু হতে দেরি হওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের সঙ্গে নতুন কাজ যুক্ত হয়েছে। এতে কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে। এসব কারণে খরচও বেড়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে প্রথম অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৮৫৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি প্রথমবার সংশোধন করে ব্যয় এবং মেয়াদ দুটোই বাড়ানো হয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে তিনগুণ অর্থাৎ ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা হয়। তৃতীয়বার সংশোধন হয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ চতুর্থ সংশোধিত ব্যয় আরও বেড়ে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সিডিএ এখন ২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়াতে চায়। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২ হাজার ৮০৮.৭৬ কোটি টাকা (৮৪.৫ শতাংশ)। আর ভৌত অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ শতাংশ কাজ এখনো বাকি।

জানা গেছে, প্রকল্পটি করার পেছনে বেশ কিছু উদ্দেশ্য ছিল। এর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে চট্টগ্রাম শহরের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উপকূলীয় বাঁধ শক্তিশালী করা। বাঁধের ওপর রাস্তা তৈরি করে বাইপাস সুবিধার মাধ্যমে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় টানেলের সঙ্গে রাস্তার সংযোগ তৈরি করে ঢাকাগামী দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়িগুলোকে বাইপাস সড়ক ব্যবহারের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া শহর ও বাঁধের মধ্যবর্তী জায়গাকে পর্যটন, আবাসন ও রপ্তানিমুখী বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পের বিকাশে ব্যবহার করা।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে কারা লাভবান হয় তা সাধারণ মানুষ জানেন। দেশে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যাই বেশি। খোঁজ নিলে দেখা যাবে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পের তালিকাটি হবে খুবই ছোট। বর্তমান সরকার চাইলে এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করে ভবিষ্যতের জন্য গাইডলাইন তৈরি করে দিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি কাজ শেষ হতে সময় লাগলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় হয়। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে যারা সিদ্ধান্ত দেন তাদেরকে এটি সুপরিকল্পিত কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। এ ছাড়া কাজটি করতে কতদিন সময় লাগতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারলে করণীয় কী এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া দরকার।’

প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস খবরের কাগজকে বলেন, এ প্রকল্পের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড ও লালখান বাজার থেকে শাহ্‌ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থলে জংশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া রিং রোড প্রকল্পের সঙ্গে সিইপিজেড সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজের ডিজাইনের পরিবর্তন এবং রিং রোডসহ টানেলের জংশন উন্নয়ন নির্মাণ অংশে এলইডি স্ট্রিট লাইট অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনীর প্রয়োজন পড়ে।

কাজের দীর্ঘসূত্রতা এবং ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরুতে যখন ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পাঠাই তখন প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তা কমিয়ে ৮৫৬ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত থাকলেও সব ধরনের সার্ভে এবং পরিকল্পনা শেষে ২০১৮ সালে গিয়ে কাজ শুরু হয়। সময় যত গড়িয়েছে প্রকল্পের সঙ্গে নতুন নতুন কাজ যুক্ত হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে।’