ঢাকা ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চোখের সঙ্গে স্বপ্নও ঝাপসা আজমের

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
চোখের সঙ্গে স্বপ্নও ঝাপসা আজমের
মো. ইসমে আজম

ডান চোখে কিছুই দেখেন না। বাম চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা। ছিঁড়ে গেছে চোখের নার্ভ, কর্ণিয়া, রেটিনা। ফেটে গেছে মণি। মাথায় ৯টি রাবার বুলেটের ক্ষত। এসব নিয়ে চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইসমে আজম। গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হন তিনি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চোখের অবস্থা এর চেয়ে আর ভালো হবে না। এক চোখে দেখতে পাবেন না তিনি। বাম চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়েই জীবন কাটাতে হবে। এরই মাঝে দেখা দিয়েছে কোমরের সমস্যা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। গত ২০ দিনের মতো তিনি হাঁটাচলা করতে পারছেন না। হুইলচেয়ারই ভরসা।

গার্মেন্টকর্মী বাবা-মায়ের খুব আদরের ছেলে আজম। তার বড় একটি বোন আছে। নাম কানিজ ফাতেমা। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে চাকরি করবে। শেষ বয়সে হয়তো একটু স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। কিন্তু না। গাজীপুর সরাদগঞ্জ গ্লোরিয়াস মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমের লেখাপড়া অনিশ্চিত। তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরারও নিশ্চয়তা নেই। লেখাপড়া তো অনেক দূরের ব্যাপার। আজমসহ পরিবারের সবার স্বপ্ন এখন ঝাপসা হয়ে গেছে। 

ইসমে আজম দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার দক্ষিণ মরনাই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তার পরিবারের সবাই ঢাকার গাজীপুরের শ্রীপুর হাজি মার্কেট এলাকায় বাস করেন। আজমের মা-বাবা দুজনই গার্মেন্টকর্মী। মা আছেন প্রোডাকশনে। কাজ করলে বেতন, না করলে নেই। বাবা গার্মেন্টের অপারেটর। আজম আহত হওয়ার পর তার প্রভাব পড়েছে পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে। বেশির ভাগ সময় আজমকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ঠিকমতো চাকরি করতে পারছেন না তার মা। বেশির ভাগ সময়ে তাকেই থাকতে হচ্ছে ছেলের কাছে। কখনো বাবা থাকছেন ছেলের পাশে, মা যাচ্ছেন কর্মস্থলে। এভাবেই চলছে তাদের দিন।

গত ১ নভেম্বর পিজি হাসপাতালের কেবিন ব্লকে গিয়ে দেখা যায় হুইলচেয়ারে দক্ষিণমুখী হয়ে বসে আছেন ইসমে আজম। তার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। দীর্ঘসময় ধরে কথা হয় আন্দোলনে সক্রিয় এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। 

গত ১৪ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। গাজীপুরের বাসা থেকে আন্দোলনে অংশ নিতে প্রতিদিন যেতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করে বাসায় ফিরতেন। কেউ তাকে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কথা বলেনি। তিনি নিজেই আন্দোলনে যুক্ত হন।

২৮ জুলাই, সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হন আজম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান বেলা ১১টায়। কর্মসূচি পালন করে বেলা আড়াইটার দিকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। তার সঙ্গে আরও ৩০ থেকে ৪০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছিলেন। বাইপাইল মোড়ের সামনে এসে দেখেন সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। সঙ্গে পুলিশও আছে। ভয়ে আজমরা সবাই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সবাই দৌড়ে চলে যেতে পারলেও আজম পারেননি। পুলিশ বা ছাত্রলীগের কেউ আজমকে লক্ষ্য করে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ছুড়ে মারে। স্ট্যাম্প পায়ে এসে লাগে। তিনি পথের ওপর পড়ে যান। ছাত্রলীগের কয়েকজন আর পুলিশ এসে আজমকে ওই স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে ও পদপিষ্ট করে অনেকটা নিস্তেজ ফেলে রেখে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর অপরিচিত একজন লোক আজমকে পাশের ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে ওষুধ কিনে দেন। এরপর আজম বাসায় ফেরেন। এরকম আহত শরীর নিয়েও প্রতিদিন তিনি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। 

গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর আগ মুহূর্তে বিজয় মিছিলে অংশ নেন ইসমে আজম। মিছিল আশুলিয়া থানার সামনে এলে পুলিশ খুব কাছে থেকে গুলি করে। আজমের চোখে রাবার বুলেট লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে তার বন্ধু আশরাফুল তাকে চান্দুরার কাছে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে শুধু একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বাবাও পৌঁছে যান হাসপাতালে। 

ওখান থেকে আজমকে নেওয়া হয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। ওই রাতেই সেখানে তার চোখের সার্জারি হয়। সাত দিন পরে ফলোআপে এলে হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়। ততদিনে চোখে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে গেছে।

হাসপাতালে চার দিন রাখার পর ৩১ আগস্ট তাকে পিজিতে পাঠায়। ৪ সেপ্টেম্বর আবার চোখের অপারেশন হয়। ৭ সেপ্টেম্বর রিলিজ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। বাসায় যাওয়ার পর আজম কোমরে ব্যথা অনুভব করতে থাকে। সেই ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে। দশ দিন পর আবার পিজিতে ভর্তি হন। কোমরের ব্যথা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। ব্যথাটা শুরু হতো হঠাৎ-হঠাৎ। কিন্তু যখন ব্যথা শুরু হতো তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিত। এরকম পরিস্থিতিতে তাকে পিজির আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে আজম ছিলেন পাঁচ দিন। অবস্থার একটু উন্নতি হলে আইসিইউ থেকে বের করে কেবিনে নেওয়া হয়। ততদিনে আজম হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তার সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। এরপর সিএমএইচেও তাকে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক দিন এসডিইউ এবং এক দিন আইসিইউতে ছিলেন। এভাবে তিনি সিএমএইচে ছিলেন পাঁচ দিন। সেখান থেকে পরে থেরাপি দেওয়ার জন্য পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে। 

সিআরপিতে যাওয়ার পর প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকলে অক্সিজেন দিয়ে সারারাত রাখা হয়। গত ২৮ অক্টোবর তারা নিউরো সার্জারির চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দিয়ে পিজিতে পাঠিয়ে দেয়। গত ৩১ অক্টোবর থাইল্যান্ডের এক চিকিৎসকদল এসে আজমকে দেখেন। তারা কিছু টেস্ট করানোর কথা বলেন। টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর আজমের চিকিৎসার বিষয়ে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। 

ইসমে আজম জানালেন, ‘আমার চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করছে। তবে বারবার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যাওয়া-আসা করার খরচ নিজেরই বহন করতে হচ্ছে।’ শুধু সিআরপিতে যাওয়া-আসার জন্য তিনি অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিলেন। অন্য আনুষঙ্গিক খরচ পরিবারকেই বহন করতে হচ্ছে। 

দেশবাসীর কাছে আজম দোয়া চেয়েছেন, ‘সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন পুরোপুরি দুই চোখের দৃষ্টি ফিরে পাই। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারি। যেন ফিরে পাই আগের স্বাভাবিক জীবন।’

দুর্বল অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম
দুর্বল অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশের অর্থনীতিতে এখন স্বস্তি-অস্বস্তির প্রহর চলছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ছাড়া অন্য খাতের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। পাঁচ মাস ধরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। নভেম্বরে রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অর্থনীতির এই দুটি সূচক ছাড়া অন্য সব সূচক নেতিবাচক। দুই বছর ধরে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাপক কমে গেছে। বিনিয়োগে দীর্ঘ সময় ধরে খরা চলছে। রাজস্ব ঘাটতি বিশাল। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে।

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এখনো কাটেনি। জিডিপি বাড়ার অন্যতম চালিকাশক্তি উৎপাদন এবং কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি শ্লথগতি। রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ দূর হয়নি। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। এসব কারণে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অনেক ‘উপশাখাই’ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে। তার পরও অর্থনীতিকে সক্রিয় করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার সুফল এখনো সময়সাপেক্ষ।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, নানা চেষ্টার পরও দুর্বল অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের মতে, অর্থনীতি সচল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও সন্তোষজনক সুদের হারের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ (গত অক্টোবর) তথ্যানুযায়ী, শিল্প উৎপাদনে মন্দার কারণে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি প্রায় অর্ধেকে নেমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ এর আগের অর্থবছরে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই সময়ে কৃষি উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। বর্তমানে ঋণের চাহিদা একদম কমে গেছে। ফলে উৎপাদন খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়বে, যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে।’

খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একমাত্র অবলম্বন মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ১১ শতাংশের বেশি। কিন্তু নানামুখী সংকটের কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিবিএসের তথ্যানুয়ায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ অনেক কমে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ কমলে সেটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এই সময়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ার হার ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। চলতি অর্থবছরে জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। আর সেপ্টেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২০ শতাংশে। 

মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এখন তা কমে গেছে, এটা উদ্বেগজনক। বেসরকারি খাতে ঋণ কমলে সেটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকটিও দেখতে হবে। সে জন্য উৎপাদনশীল খাতে যাতে যথেষ্ট ঋণপ্রবাহ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দরকার একটা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আসবে।’ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সময়টায় নানা ঘটনা ঘটেছে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে পড়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি কমে গেলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। তবে শর্ত শিথিল করায় ধীরে ধীরে আমদানি বাড়ছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।’

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, জ্বালানি পণ্যের সংকট, সুদহার বৃদ্ধি ও দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে থাকবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহত থাকবে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমবে। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদানও কমে যেতে পারে।

বিশাল রাজস্ব ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কমে গেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এনবিআর আদায় করেছে ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এটি ৩০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা কম। অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সরকারের বড় আয়ের উৎস হচ্ছে এনবিআর। সরকারের আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয়ের চাপ বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাংকঋণ নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। 

সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুটি জায়গায় স্বস্তি আছে। একটি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। অন্যটি রপ্তানি। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ, রাজস্ব ঘাটতিসহ অন্য খাতে সূচকের অবস্থান ভালো নয়। সরকার চেষ্টা করলেও এখনো সুফল মেলেনি। এক কথায় বলা যায়, সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুর্বলতা কাটেনি অর্থনীতিতে। ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এখানে দেখতে হবে কোন অসুখ সারানোর জন্য কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। অসুখ নানা রকমের হতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি একটি বড় অসুখ। ২০২১ সালের পর থেকে এর উত্থান। আর থামেনি। দ্বিতীয় অসুখ হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। এটি দুর্বল হয়ে গেছে। ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। প্রকৃত মজুরি কমেছে। কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখতে হবে মুদ্রানীতি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবৃদ্ধির জন্য না মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। কারণ, দুটির জন্য একই ওষুধ কাজ করবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ওষুধ হচ্ছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ব্যবহার। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি। কিন্তু দুটির সাইড ইফেক্ট বা প্রভাব আছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবহার করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ব্যক্তিখাতে ঋণ বিতরণ কমবে। এতে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে।’

এখন দেখতে হবে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, এই মুহূর্তে মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান কাজ। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। জাহিদ হোসেন মনে করেন, অর্থনীতি সচল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা। এখানে খুব একটা উন্নতি হয়নি। অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

সওজের তিন নেতার হাতে লুট ১০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
সওজের তিন নেতার হাতে লুট ১০ কোটি টাকা

অধস্তন কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও আবাসন সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তিন কর্মচারী গত ১৩ বছরে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযুক্ত শ্রমিকনেতারা হলেন সড়ক ও জনপথ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বনানীর সড়ক উপবিভাগের কর্মচারী মো. ইউসুফ নবী, সওজের সার্কেল অফিসের কর্মচারী ও ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিঞা, মুন্সীগঞ্জের সওজ সার্কেলের কর্মচারী ও ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ গাজী মোস্তফা কামাল। ২০১১-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই তিন শ্রমিকনেতার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন সওজের সাধারণ কর্মচারীরা। 

জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম ভাঙিয়ে রাজধানীতে সওজের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেছেন এই তিন কর্মচারী। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা অনুষ্ঠানের নামেও কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন তারা, যার বেশ কিছু প্রমাণ খবরের কাগজের হাতে এসেছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাঁদাবাজির মামলায় ইউসুফ নবী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে বাকি দুই নেতা পলাতক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নানা অপকর্মের অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সওজ কর্তৃপক্ষ কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে। গত ২৮ অক্টোবর সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এই তিন শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। তবে সওজের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন শাখা, সম্পত্তি শাখা ও ঢাকা সার্কেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিন শ্রমিকনেতা সম্পর্কে ‘কিছুই জানেন না’।

১৩ বছরে ১০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি

সড়কের বিভিন্ন বিভাগের অধস্তন কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই তিন শ্রমিকনেতা সওজের সরকারি কোয়ার্টারের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বসতঘর, রিকশার গ্যারেজ, হোটেল ও দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এসব ঘরের ভাড়া বাবদ ৪ কোটি টাকা আয় করলেও সেই অর্থ সওজের কোষাগারে জমা দেননি। 

এ ছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার প্রলোভন দেখিয়ে ৩ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।

সওজের সাধারণ কর্মচারীদের সওজ কোয়ার্টারে বাসা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির নামে তারা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলে জানা গেছে। পুরোনো ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের সার্ভিস কাউন্টের নামে আনুমানিক ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এসেছে।

সম্প্রতি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ওই তিন শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্রমিকনেতা এ কে এম ছাইফুর রহমান। মামলার এজাহারে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্রমিকনেতাদের দৌরাত্ম্যে ভুক্তভোগী সওজের নিরীক্ষা ও হিসাব কার্যালয়ের গাড়িচালক মো. আব্দুস সালাম। তিনি বেশ কয়েক বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেছেন রাজধানীর মিরপুরের সড়ক গবেষণাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে। কিন্তু এ বছরের শুরুতে সড়ক গবেষণাগারের উন্নয়নের স্বার্থে স্টাফ কোয়ার্টারের টিনশেড বাসাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েন আব্দুস সালাম। নিরুপায় হয়ে তিনি সওজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শামীম মিঞা ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ নবীর কাছে যান। এই দুই নেতা আব্দুস সালামকে সরকারি কোয়ার্টারে বাসা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা উৎকোচ নেন। কিন্তু আব্দুস সালামকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কোনো টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।

শুধু আব্দুস সালাম নন; সওজের ঢাকা সার্কেল, মুন্সীগঞ্জ, রাজশাহীসহ অনেক জেলার অধস্তন কর্মচারীরা শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। সওজের প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ের কর্মচারী শহীদ উল্যাহ সওজের কোয়ার্টারে বাসা পেতে দিয়েছেন ২ লাখ টাকা। চাকরি স্থায়ী করতে সওজের রাজশাহী সার্কেলের কর্মচারী এ কে আজাদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও মো. সাঈদুর রহমান ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিন শ্রমিকনেতাকে। তবে অনেক পর অধস্তন কর্মচারীরা জানতে পারেন তাদের ঠকানো হয়েছে। একাধিকবার ধরনা দিয়েও সেই টাকা আর উদ্ধার করতে পারেননি তারা। 

অভিযোগ রয়েছে রিকশা গ্যারেজ, দোকানপাট ভাড়া দিতে এই তিন শ্রমিকনেতা ৩০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করতেন। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে সাধারণ কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো, ক্ষেত্রবিশেষে অফিসে তুলে নিয়ে আসা হতো।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মদদে ইউনিয়ন সভাপতি ইউসুফ নবী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিঞা মহাখালীর নাখালপাড়া ও আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা শ্রমিক লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা আদায় করতেন। 

কোনো তথ্য ‘জানেন না’ সওজ কর্মকর্তারা

অনুসন্ধানে জানা যায়, সওজের এই তিন কর্মচারী সওজের ঢাকা সার্কেল, প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগ, এস্টেট ও আইন শাখার কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও যোগসাজশে এই লুটপাট ও চাঁদাবাজি চালিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী সওজ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৩ বছরে সওজের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসব অপকর্মে ইন্ধন দিয়েছেন। 

সওজের এই তিন শ্রমিকনেতার বিষয়ে জানতে এ তিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবরের কাগজ। এই তিন নেতার বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা তথ্য জানেন না বলে তারা মন্তব্য করেন।

সওজের শ্রমিক ইউনিয়নের এই তিন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৮ অক্টোবর সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে সওজের প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

কিন্তু এ খবর জানে না সওজের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন সার্কেল। এই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো চিঠির বিষয়ে আমার কাছে বা আমার সার্কেলে কোনো তথ্য নেই। এই তিন শ্রমিকনেতার বিষয়ে ভালো বলতে পারবে ঢাকা সার্কেল অফিস।’ 

সওজের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকনেতারা জমি দখল করে কী করেছেন, তা আমার একদম জানা নেই। আমার কাছে ঢাকা সার্কেল অফিস থেকে লিখিত অভিযোগ আসেনি।’ 

ঢাকা সার্কেল অফিসে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমি জানি না এই তিন শ্রমিকনেতা কে কী করেছেন। জমি দখল করেছেন না চাঁদাবাজি করেছেন, তা বলতে পারব না।’ 

সওজের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খানও এই তিন নেতার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিন শ্রমিকনেতা জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণ করেছেন কীভাবে- জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তবে লতিফ খান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সরকারের ৬ চিনিকল চালু হচ্ছে চার বছর পর

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
সরকারের ৬ চিনিকল চালু হচ্ছে চার বছর পর
পঞ্চগড় চিনিকল। ছবি: সংগৃহীত

২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু থাকা সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন বিনা নোটিশেই স্থগিত করা হয়। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এসব কারখানা আধুনিকায়ন করে আবারও উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরেও এসব কারখানা চালু করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব কারখানা চালু করতে যাচ্ছে। শুধু তাই না, সরকারের বাকি ৯ চিনিকলের উৎপাদন বাড়াতেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ। 

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। চার বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার আবারও এসব চিনিকল চালু করবে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যে চিনিকলগুলো এখনো চালু আছে, কিন্তু কাঁচামালসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না, সেসব কারখানার উৎপাদন বাড়াতেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ 

শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি সব চিনিকল পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সারা বছর চালু রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে চিনির আমদানিনির্ভরতা কমবে।’ 

তিনি বলেন, ‘চিনিকলে অনেক মানুষ কাজ করেন। এসব কারখানা চালু থাকলে শ্রমিক কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনভাতা পাবেন। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা আসবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের ছয় চিনি কারখানা বন্ধ থাকায় বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। আমদানি বাড়াতে শুল্কসহ অন্যান্য রাজস্ব ছাড় দিতে হয়। রাজস্ব ছাড় দেওয়ায় সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। দেশি শিল্প থেকে চিনির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলে আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে সরকারের আয় বাড়বে।’ 

সাদা ও অপরিশোধিত- দুই ধরনের চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে দফায় দফায় শুল্ক কমানো হয়েছে। আর এতে গত এক অর্থবছরে গড়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। 

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে পরিচালিত কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় এবং শ্যামপুর চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বন্ধের সময় সরকারি ছয় চিনিকলে ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্থগিত আদেশ দেওয়ার পর শিল্পমন্ত্রণালয়ে নিজস্ব দপ্তরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে আধুনিকায়ন করে ছয় চিনিকল আবারও চালু করা হবে। বন্ধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চালু চিনিকলে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকে কাজ না পেয়ে এখনো বেকার হয়ে আছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছে। 

গত ১৬ নভেম্বর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান সেতাবগঞ্জ চিনিকল সফরে যান। এর আগে গত চার বছরে এসব কারখানা পরিদর্শনে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের কেউ যাননি। সফরকালে শিল্প উপদেষ্টা সেতাবগঞ্জ চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আখচাষি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান দীপিকা ভদ্র, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম। 

বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, সরকার যত দ্রুত সম্ভব ছয় চিনি কলের উৎপাদন পুনরায় শুরুর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজের অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তা নজরদারি করা হচ্ছে। 

১৫ নভেম্বর নাটোরে উত্তরবঙ্গ চিনিকলেও যান আদিলুর রহমান খান। এ সময় ওই চিনিকলের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। চিনিকলটির ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চিনিকলে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা হবে। 

২০২০ সালে আখ মাড়াইয়ের কিছু দিন আগেই ছয় চিনিকল বন্ধ করা হয়েছিল। বিনা নোটিশে চিনিকল বন্ধ করায় আখ বিক্রি হয়নি। অনেক চাষি মাঠেই আখ পুড়িয়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। 

অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আখের অভাবে বছরের সাত থেকে আট মাস বন্ধ থাকে সরকারের বাকি ৯ চিনিকল। এসব কারখানা সারা বছর উৎপাদনে রাখতে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও গত ১৫/১৬ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চালু সরকারি ৯ চিনিকল থেকে সারা বছর গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টন চিনি পাওয়া যাচ্ছে। এসব চিনি বাজারজাত করতেও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ গুদামেই ফেলে রাখা হয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সারা বছর গড়ে ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। অন্য মাসের তুলনায় রোজার এক মাসে চিনির চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে গড়ে ৩ লাখ টন হয়।

ওবায়দুল করিমের বনবিলাস

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পিএম
ওবায়দুল করিমের বনবিলাস
ছবি: খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকারি বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে রিসোর্ট, বাগানবাড়ি ও অবকাশকেন্দ্র গড়ে তোলার খবর দেশে নতুন নয়। প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, পেশিশক্তি ও অঢেল টাকার মাধ্যমে যুগের পর যুগ নানা কৌশলে অবৈধভাবে দখলে রাখছেন বিভিন্ন বনের জমি। বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম ময়মনসিংহের ভালুকায় সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) অন্তত ১০০ একর জমি অবৈধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বনবিলাস। সেখানে ওরিয়ন ফ্রিজ তৈরির কারখানা, ব্যক্তিগত প্রমোদ বাংলোসহ নির্মাণ করা হয়েছে নানা রকম স্থাপনা।

শুধু ওবায়দুল করিম নন, তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ও সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও একই বনের আরও ১০০ একর করে জমি দখল করেছেন। বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বন বা রিজার্ভ ফরেস্টে বিনা অনুমতিতে যে কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার ক্ষমতা রয়েছে বনপ্রহরীদের। অথচ ওরিয়নের অবৈধ দখল করা জমিতে স্থানীয়রা তো নয়ই, ফরেস্ট অফিসার বা বনকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেন না। ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের নিযুক্ত অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পায়নি। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ছয় থেকে সাতটি মামলা করেছেন, যা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ওবায়দুল করিম ও তার ভাই বিগত সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবে বছরের পর বছর মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে দখলে রেখেও তারা আজও আছেন বহাল তবিয়তে।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসের (সিডস্টোর বাজার) উল্টো দিকে অন্তত ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ওরিয়ন সাম্রাজ্য। ২০১৬ সালের দিকে বনের পাশে কয়েক বিঘা জমি কিনেই বন দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম। কয়েক দিন পর পর অল্প অল্প জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বনের ১০২ একর জমি দখলে নেন ওবায়দুল করিম। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) জায়গাও বাদ দেননি। এর মধ্যে রিজার্ভ ফরেস্ট ভালুকায় হবিরবাড়ি বিটের ১৫৪ দাগের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ওরিয়নের ফ্রিজ তৈরির কারখানা। ওবায়দুল করিমের ভাই বীকন গ্রুপের মালিক এবাদুল করিম একই বিটের ১৫৪ ও ১৮৫ দাগ এবং কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। তাদের আরেক ভাই রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও হবিরবাড়ি বিটের ১৮৫ ও কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। এসব দাগের মধ্যে ১৫৪ দাগে বনের মোট জমির পরিমাণ ২০১ একর, যা ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম অবৈধ দখলে রেখেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় এলে ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম ভালুকা বন বিভাগের জমি আগ্রাসনের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৬ সালের মধ্যে সেই চেষ্টা কিছুটা সফল হয়। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সোনার চেয়ে দামি জমিগুলো অনেকটা বিনা বাধায় দখল করেন। বন বিভাগ শুধু মামলা করেই দায় সেরেছে। এলাকাবাসী জানান, ওবায়দুল করিম ও অপর দুই ভাই ক্ষমতার দাপট, কখনো লাঠিয়াল বাহিনী, আবার কখনো বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করে জমিগুলো অবৈধভাবে দখলে নিতে সক্ষম হন।

এ বিষয়ে ভালুকা রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার (আরএফও) হারুনুর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভালুকা রেঞ্জে বনের মোট জমি রয়েছে ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে ৮ হাজার একর বেদখল হয়েছে। ওরিয়ন, বীকন, রিদিশা ছাড়াও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এসব জমি দখল করেছেন।

দুর্নীতি-অনিয়মে আলোচিত রেলওয়ের জিএম মামুনুল

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম
দুর্নীতি-অনিয়মে আলোচিত রেলওয়ের জিএম মামুনুল
মামুনুল ইসলাম

মামুনুল ইসলাম। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) তিনি। চালচলনে আছে আভিজাত্য। প্রথম দেখায় যে কেউ ভাবতে পারেন সহজ-সরল সুফি ব্যক্তি। অথচ ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের নজির সৃষ্টি করেছেন। অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিতে বাধ্য করাও তার স্বভাব। 

রেলওয়ের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্মতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামুনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের পাশাপাশি খবরের কাগজের হাতে এসেছে তার দুর্নীতি-অনিয়মের একটি ফোনকল রেকর্ড। সেই রেকর্ড করা কথোপকথনে শোনা গেছে, তিনি অধস্তন এক কর্মকর্তার কাছে রূঢ় ভাষায় ঘুষ দাবি করেন। প্রয়োজনে সরকারি প্রকল্পের টাকায় তার গাড়িতে জ্বালানি ভরে দিতে বলেন। মোবাইল ফোনে রেলের প্রকল্পে নিয়োজিত এক অধস্তন কর্মকর্তাকে প্রকল্পের টাকা দিয়ে তার অফিশিয়াল গাড়ির (রাজস্ব খাত) ট্যাক্স-টোকেন রেজিস্ট্রেশন করে দিতে চাপ দেন। তা ছাড়া তিনি (মামুনুল ইসলাম) ঢাকা আসবেন এবং ঘোরাফেরা করবেন, এ জন্য গাড়ির ট্যাং ভরে জ্বালানি (অকটেন) চেয়েছেন।

ফোনকল রেকর্ডের এক অংশে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মামুনুল ইসলাম তার অধস্তন কর্মকর্তাকে বলেন, ‘তোমাদের কাজ সব এমনি এমনি করে দিলাম। আমি এখনই… ইনস্পেকশন করে দিলাম। আমি এটা হস্তান্তর করব না। যতই দৌড়াদৌড়ি করো। আমি বানের জলে ভাইসা আসি নাই।’ 

কথোপকথনের একপর্যায়ে মামুনুল ইসলাম প্রকল্পের অধস্তন কর্মকর্তাকে বলেন, ‘তিনটা জিনিস বললাম। একটা হলো টাকা। দুই নম্বর হলো ১৯ তারিখ ট্যাক্স-টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, এটা এক বছরের জন্য করে দাও তোমাদের প্রকল্পের টাকা দিয়ে। আর তিন নম্বর হলো, গাড়ির ট্যাংক ফুল ভরে দাও। তোমার পিডির (প্রকল্প পরিচালক) সঙ্গে কথা বলবে না কার সঙ্গে বলবে, বলো। আমার জীবনের ওপর দিয়ে তোমাদের জন্য সর্বোচ্চটা করে দিয়েছি। বুঝছ? আমি কাউকে বলতে পারব না। তুমি বলো।’

এই কথোপকথনের পর জিএম মামুনুলের চাহিদামতো গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন ও জ্বালানি দিতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধস্তন কর্মকর্তা।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, মামুনুল ইসলামের (৩য় গ্রেড) বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। নানা অনিয়মের কারণে বিতর্কিত এই কর্মকর্তা। জুনিয়র হয়েও সম্প্রতি ছয় কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পশ্চিমাঞ্চল জিএম পদ বাগিয়ে নেন। মামুনুলের শ্বশুর আমজাদ হোসেন কয়েক বছর আগে রেলের মহাপরিচালক ছিলেন। শ্বশুরের প্রভাবে সেই সময়ে রেলের নিয়োগ, বদলি, পদায়নের মতো নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ও বিতর্কিত হন মামুনুল। আরও অভিযোগ রয়েছে যে মামুনুল ইসলাম সপরিবারে থাইল্যান্ডের নাগরিক। 

১৮-১২৮৯ নম্বরের এই জিপ গাড়িটি জিএম (পশ্চিম) পদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই গাড়িটি তাকে ঢাকায় ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু গাড়িটি রাজস্ব খাতভুক্ত পদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, তাই এই গাড়ির পেছনে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। তবে অধস্তন কর্মকর্তা মামুনুলের নির্দেশে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিদায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী খবরের কাগজকে জানান, ‘কোনো কর্মকর্তার রাজস্ব পদের অনুকূলে পরিবহন পুল থেকে যদি গাড়ি বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে সেটা তার পদ-পদবির বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকেই বরাদ্দ দেওয়া থাকে। এটাই নিয়ম। কাজেই কোনো কর্মকর্তা এই গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে বা তেল ভরতে চাপ দিয়ে থাকলে তা আইনের পরিপন্থি। এমন যদি কোনো কর্মকর্তা করে থাকেন, তবে তিনি অনিয়ম বা অনৈতিক কাজ করেছেন।’

যোগাযোগ করা হলে জিএম (পশ্চিম) মামুনুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, বরং যোগ্যতা অর্জনের ৯ মাস পর আমাকে পদোন্নতি (চলতি দায়িত্ব) দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া রেলের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ থাকলেও আমার বিরুদ্ধে কখনোই অভিযোগ ওঠেনি। যাদের ডিঙিয়ে আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা হচ্ছে, তারা সবাই জিএম পদমর্যাদার দায়িত্ব পালন করছেন। বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার কথা কখনোই সত্য নয়। আর ডিজি থাকা অবস্থায় শ্বশুর আমাকে অনেক বেশি বাইপাস (দূরে সরিয়ে রাখা) করে রেখেছিলেন।’