নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চট্টগ্রামের সবজির বাজার, ফলের আড়ত, মাছ বাজার, মুদি দোকান, ওষুধের ফার্মেসিসহ সব জায়গায় পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ১ নভেম্বর থেকে সরকার পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও সবার কাছে সেই তথ্য এখনো পৌঁছায়নি। অনেকে আবার সব জেনে বুঝেই পলিথিন ব্যবহার করছেন।
তারা বলছেন, পলিথিনের ব্যবহার যেভাবে তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সেটা চাইলেই হুট করে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য পলিথিনের বিকল্প সহজলভ্য করতে হবে। কিন্তু তা না থাকায় সবাই ইচ্ছামতো পলিথিন ব্যবহার করছেন।
শনিবার দুপুর দুইটা। চট্টগ্রামের ব্যস্ততম রিয়াজউদ্দিন বাজারে স্যুটেড-বুটেড এক ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। এরপর তিনি সবজির দোকানের দিকে এগিয়ে গেলেন। কাঁচা মরিচ, শসা, টমেটো, লাউ, শিম, বরবটিসহ বেশকিছু সবজি পাঁচটি পলিথিনে ভরে নিলেন। এরপর সোজা গাড়িতে উঠে চলে গেলেন। ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনের মধ্যেই পলিথিন নিয়ে কোনো সচেতনতা তখন লক্ষ্য করা যায়নি। বরং ওই বাজারেই তখন আরেক ক্রেতাকে প্রয়োজনের তুলনায় একটি বেশি পলিথিন দোকানির থেকে চেয়ে নিতে দেখা যায়। এ ছাড়া কেউ শুরুতে পলিথিনে বাজার নিতে না চাইলেও বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে তাকে এই কাজটিই করতে হয়।
শুধু সবজির দোকান নয়, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে মুরগি, মাছ, ডিম, পান-সুপারি, জর্দ্দা থেকে শুরু করে এমন কোনো ভোগ্য ও ব্যবহার্য পণ্য নেই যা নিষিদ্ধ পলিথিনে করে দেওয়া হচ্ছে না। বিক্রেতাদের ভাষ্য, শুধু পলিথিনের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলেই হবে না, বিকল্প ব্যবস্থা সহজলভ্য হতে হবে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে রাসেল নামে এক ব্যবসায়ী জানান, পলিথিন নিষিদ্ধের খবর তিনি শোনেননি। তা ছাড়া অন্য বিক্রেতারও পলিথিনে পণ্য দিচ্ছেন। তাই তিনিও দিচ্ছেন। কুতুব নামে আরেকজন বলেন, ‘আগে পাটের ব্যাগ আসুক তারপর বন্ধ হবে। বাজারে পলিথিন পাওয়া যাচ্ছে বলেই আমরা কিনে আনি।’
রাহাতুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘সবাই যদি বাসা থেকে কাপড়ের তৈরি ব্যাগ বা পাটের ব্যাগ নিয়ে আসি তাহলেই পলিথিন রোধ করা সম্ভব। একসময় কিন্তু পলিথিন ছিল না। তখনো মানুষ বাজার-সদাই করতেন। এখন আমরা প্লাস্টিকের প্লেট ও গ্লাস ব্যবহার করছি। আমরা এসব চালু করেছি। বন্ধ করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব।’
পলিথিনের ব্যবহার কেবল রিয়াজউদ্দিন বাজারেই নয়, নগরের দেওয়ানহাট, কাজীর দেউড়ি সিডিএ মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ প্রায় হাট-বাজার, ফুটপাতের ভোগ্যপণ্যের দোকানগুলোতে পলিথিন যেন এক অনিবার্য নাম।
এদিকে ১ নভেম্বর থেকে সারা দেশে পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এরপরও চট্টগ্রামে এর ব্যবহার থামানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতক্ষণ না ব্যক্তি পর্যায়ে পলিথিনের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া যাবে ততক্ষণ এটি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর ও অঞ্চলের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা পলিথিন বন্ধে নিয়মিত জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট প্রচার করছি। তাদের কাছে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরছি। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মজুতকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের অভিযান চলবে।’
জানা গেছে, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, গেল ২৯ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রত্যেককে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। প্রত্যেকের দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে বলা হয়েছে। নগরে আমাদের বড় ধরনের অভিযান শিগগিরই চালানো হবে।