ঢাকা ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দুই ভাইয়ের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
দুই ভাইয়ের চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছিলেন নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনের সংসদ সদস্য। আর তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। দুই ভাই ওপরে ওপরে বিরোধ দেখালেও ভেতরে ভেতরে একে অপরের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য।

১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। তখন ওই সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার ওই ক্ষমতার জোরে ছোট ভাই কাদের মির্জা হয়ে ওঠেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৯৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে নেন বসুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদ।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে ১ হাজার ৩৭১ ভোটে হারিয়ে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য’ নির্বাচিত হন। পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও পরিবর্তিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এক যুগের বেশি সময় একই পদে থেকে নিজের এবং পরিবারের আখের গুছিয়েছেন তিনি। তার প্রভাবে মন্ত্রণালয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এ ছাড়া ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী, ভাই, ভাগিনাসহ তাদের আত্মীয়স্বজন এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। এমনকি তার ব্যক্তিগত কর্মচারীরাও আজ শতকোটি টাকার মালিক।

২০১৮ সালে টানা তৃতীয়বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কাদের মির্জা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালের পর মিডিয়ায় বিভিন্ন কথা বলে আলোচনায় এসে ফেসবুক লাইভে ‘সবকিছু’ ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন ভাইকে। তবে ওপরে দুই ভাইয়ের বিরোধ দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে তারা গড়ে তোলেন চাঁদাবাজির মহাস্বর্গরাজ্য।

ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকার এমপিদের মনোনয়ন-বাণিজ্য, দলের জেলা-উপজেলা কমিটি-বাণিজ্য, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ থেকে টাকা আদায়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকাজ থেকে ১০ পারসেন্ট হারে কমিশন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকে ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে টাকা হাতিয়ে নিতেন কাদের মির্জা।

অভিযোগ রয়েছে, স্কুল মাস্টারের ছেলে ওবায়দুল কাদের ও তার পরিবারের সদস্যদের একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরালেও দুই যুগের ব্যবধানে তারা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। চতুর ওবায়দুল দেশের চাইতে বিদেশে সম্পদ গড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে আবদুল কাদের মির্জা নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে দেশে ব্যাপক সম্পদ গড়েছেন।

ওবায়দুল কাদেরের এপিএস বরিশালের আবদুল মতিন, পিএ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মো. জাহাঙ্গীর কবিরও শতকোটি টাকার মালিক। এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেওয়া চাকর নুরুল করিম জুয়েলও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন।

এ ছাড়া ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে ইস্কান্দার মির্জা শামীম ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন দপ্তর থেকে হাজার কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে আলী হায়দার রতন নামে কথিত এক ভাগিনাকে দিয়ে দেশের বড় বড় প্রকল্পের কাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে টাকা পাচার করে সম্পদ গড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আইয়ুব আলী, চরহাজারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগের বড় ভাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ এস এম মাঈন উদ্দিন পিন্টুর মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের ও কাদের মির্জা হাজার হাজার কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। মাঈন উদ্দিন পিন্টু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অ্যাংকর ট্রাভেলসের মালিক। অন্যদিকে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর ভাই জিয়াউর রহমান নিউইয়র্কের বড় ব্যবসায়ী। আইয়ুব আলীও ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন।

বড় ভাই ওবায়দুল কাদের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ার কারণে টানা সাড়ে ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকাকালে ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার কাছে জিম্মি ছিলেন গোটা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ। ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে কাদের মির্জা টানা তৃতীয়বারের মতো বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তার বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলেরই নেতা-কর্মীরা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের মতো কাদের মির্জারও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাইজ্যাক করা জমিতে আ.লীগ অফিস
ছোট ভাই কাদের মির্জাকে দিয়ে অন্যের জমি হাইজ্যাক করে নিজের এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানানোর অভিযোগ আছে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। বসুরহাট বাজারের আরডি শপিংমল দখলের হুমকি দিয়ে মার্কেটের মালিক নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর ওরফে হেলালকে কাদের মির্জার মাধ্যমে জিম্মি করে ৭ শতাংশ জমি টাকা ছাড়া নিজের নামে লিখে নেন তিনি। পরে হাইজ্যাক করা ওই জমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নামে দান করে দাতা সাজেন ওবায়দুল কাদের। 

নুর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতার দাপটে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা তার লোকজন দিয়ে আমার মার্কেট দখলের পাঁয়তারা করেন। পরে প্রাণভয়ে নিরুপায় হয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার জমি বিনা টাকায় তাদের নামে লিখে দিতে বাধ্য হই। গত ১৫ আগস্ট এ বিষয়ে আমি ওবায়দুল কাদের ও আবদুল কাদের মির্জাকে আসামি করে নোয়াখালী দেওয়ানি আদালতে মামলা করি। আমি আমার জমি ফেরত চাই।’

চাঁদা ছাড়া কাজ করা যেত না
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় যেকোনো উন্নয়নকাজ করতে গেলে কাদের মির্জাকে নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো ঠিকাদারদের। আবার এসব কাজের বেশির ভাগ পেতেন তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা। গত ১৫ বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও বসুরহাট পৌরসভায় মোট উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৫৭৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে পৌরসভায় উন্নয়নকাজ হয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকার। আর বাকি উন্নয়নকাজ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করে। প্রতিটি কাজে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিতেন কাদের মির্জা। সেই হিসাবে কমিশনের টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি।

বেশির ভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। পছন্দের ঠিকাদারের বাইরে কাজ পেয়ে বিপাকে পড়া এক ঠিকাদার নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর আবদুল জলিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার প্রতিষ্ঠান জলিল ট্রেডার্স কোম্পানীগঞ্জে ৪০ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কারের কাজ পায়। কাজ পাওয়ার খবর পৌঁছে যায় কাদের মির্জার কাছে। ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং দাবি করেন ৫ শতাংশ কমিশন। আবদুল জলিল বলেন, ‘কাদের মির্জার এক লোক আমাকে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখানে ৫ শতাংশ কমিশন চান কাদের মির্জা। বাধ্য হয়ে ২ লাখ টাকা দিতে হয় কাদের মির্জাকে।’

এদিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে কাদের মির্জাকে দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতেন ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালীর প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাকে চাঁদা দিয়ে মনোনয়নসহ এলাকার কাজ করতে হতো। ২০২১ সালে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর কাছ থেকে চাহিদামতো চাঁদা না পেয়ে আবদুল কাদের মির্জাকে দিয়ে শাসিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।

বেপরোয়া কাদের মির্জার মাধ্যমে এলাকার অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো সাত্তার ব্রাদার্স (সাত্তার বেকারি), ফখরুল ক্লথ স্টোর, হুমায়ূন টিম্বার, ফিরোজ অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফেন্সি হোটেল, আজমির হোটেল, গাজী অ্যান্ড সন্স, ছায়েদ ম্যানশন (৬ তলা বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবন), মাওলা শপিং সেন্টার, মডার্ন হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হেলাল হার্ডওয়্যার, সেলিম স্টোর, মেহরাজ প্লাজা। নানা অজুহাতে এগুলো বিভিন্ন সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে চাঁদা নিয়ে খুলে দেন।

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বসুরহাট বাজারের আমিন মার্কেটের মালিক আশিক-ই-রসুলকে কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান কাদের মির্জা। পৌর সচিব কাদের মির্জার নামে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই মার্কেটের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন কাদের মির্জা। আশিক-ই-রসুল বলেন, ‘টাকা দেওয়ার পর আমার মার্কেটের তালা খুলে দেওয়া হয়।’ 

এ ছাড়া পৌর এলাকায় আবু ছায়েদ নামের এক লন্ডনপ্রবাসীর চার ও ছয়তলার দুটি ভবন পাঁচ বছর আগে দখল করে নেন কাদের মির্জা। চারতলা ভবনটি কাদের মির্জা তার স্ত্রী আক্তার জাহান বকুলের নামে লিখে নেন। এসব ভবনের নিচে দোকান ও ওপরে আবাসিক ফ্ল্যাট। ছয়তলা ভবনটি থেকে পৌরসভার নামে ভাড়া তুলতেন কাদের মির্জা। তবে ৫ আগস্টের পর ভবনটি দখলমুক্ত করেছেন আবু ছায়েদ।

ফেরদৌস মাহমুদ নামে বসুরহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাদের মির্জা নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন। শত শত দোকান দখল করে পৌরসভার নামে ভাড়া তুলতেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের গত ১৫ বছরে যতবার নোয়াখালী গেছেন একবারও বাড়িতে কিংবা নোয়াখালী জেলার কোনো সার্কিট হাউসে ছিলেন না। তিনি ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর তত্ত্বাবধানে ফেনী সার্কিট হাউসে অথবা নিজাম হাজারীর বাগানবাড়িতে থাকতেন। দেশের বড় বড় ঠিকাদার ওই বাড়িতে গিয়ে বস্তায় ভরে টাকা দিয়ে আসতেন। 

হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনী গঠন
কোম্পানীগঞ্জের মানুষের কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল কাদের মির্জার হেলমেট ও হাতুড়ি বাহিনী। হেলমেট বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জা, বসুরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা রাসেল, হামিদ ওরফে কালা হামিদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মারুফ, সাধারণ সম্পাদক মো. তন্ময়, বসুরহাট পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিসান আহমেদ, শহিদ উল্যা ওরফে কেচ্ছা রাসেল, বাংলা বাজারের পিচ্চি মাসুদ ওরফে ডাকাত মাসুদ। কেচ্ছা রাসেল ও পিচ্ছি মাসুদ কোম্পানীগঞ্জের চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ মে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুরের অনুসারীদের দিকে গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে গ্রেপ্তার হলেও কাদের মির্জার তদবিরে কিছুদিন পরই কেচ্ছা রাসেল জামিনে ছাড়া পান।

এই বাহিনীর হামলার শিকার হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত খান, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান ওরফে রিপনসহ অনেকে।

মিজানুর রহমান বাদল বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করেও সব সময় আতঙ্কে ছিলাম। দুই ভাই মিলে পুরো এলাকাকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছেন।’

এদিকে বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাদের মির্জা ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে থাকলে তার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল দলের একাংশ। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চাপরাশির হাটে প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা চালায় কাদের মির্জার বাহিনী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন ওরফে মুজাক্কির। এ ঘটনায় মামলা হলেও কারও নাম উল্লেখ করার সাহস পায়নি মুজাক্কিরের পরিবার।

এ ছাড়া হেলমেট বাহিনী স্থানীয় সাংবাদিক প্রশান্ত সুভাষ চন্দর (৪৭) বাড়িতে হামলা চালায়। কুপিয়ে আহত করা হয় প্রশান্ত এবং তার মা ও ছেলেকে। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর মির্জা বাহিনীর সদস্যরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আরেক সাংবাদিক নাজিম উদ্দিনকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে কাদের মির্জার এক অনুসারী বাদী হয়ে নাজিমের বিরুদ্ধে উল্টো মাদক আইনে মামলা করেন।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারেননি। 

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০৩টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর কোম্পানীগঞ্জে ৬৯ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় হেলমেট বাহিনী। এই বাহিনীর অত্যাচারে বসুরহাট বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।

দখলেও সিদ্ধহস্ত কাদের পরিবার
উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় কাদের মির্জা ৬০০ একরের বেশি খাসজমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলের পর ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ওই জমি আবার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুছাপুর ক্লোজার এলাকার ছোট ফেনী নদী থেকে গত তিন বছরে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি দেখভাল করতেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী। দল ক্ষমতা হারানোর পর তিনিও পলাতক রয়েছেন।

২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পৌরসভার কলালিয়া এলাকায় কাদের মির্জার নেতৃত্বে হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। দুটি এক্সক্যাভেটর (খনন যন্ত্র) দিয়ে ভেতরের বিভিন্ন মালামাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে মেয়রের অনুসারীরা সেখানে ‘শিশুপার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখাসংবলিত একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।

হুমায়ূন টিম্বার মার্চেন্ট অ্যান্ড স মিলের মালিক ফিরোজ আলম মিলন বলেন, ‘ক্রয়সূত্রে আমরা জায়গার মালিক। সেই জমি ব্যাংকে বন্ধকও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ওই জমি ‘খাস’ দাবি করে আমাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলার পর আদালতের রায়ও অমান্য করেন কাদের মির্জা। পরে তিনি আবার আদালতে গেলে কাদের মির্জা দখল ছাড়েন।’

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে খাসজমি দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ও মুছাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার খাসজমি দখলকারীদের তালিকা তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দখলকারী যারাই আছেন, তাদের উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বড় ভাই প্রভাবশালী হওয়ায় কাদের মির্জার কাছে প্রশাসন ছিল অসহায়। শত অপকর্ম জানার পরও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বসুরহাট পৌরসভাকেন্দ্রিক যত উন্নয়নকাজ, তার সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন কাদের মির্জা। প্রতি মুহূর্তে প্রচণ্ড চাপে থাকতে হতো এখানে। একটু এদিক-সেদিক হলে গালমন্দ করতেন মির্জা। এখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনও জিম্মি ছিল।’

দুর্বল অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম
দুর্বল অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশের অর্থনীতিতে এখন স্বস্তি-অস্বস্তির প্রহর চলছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ছাড়া অন্য খাতের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। পাঁচ মাস ধরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। নভেম্বরে রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অর্থনীতির এই দুটি সূচক ছাড়া অন্য সব সূচক নেতিবাচক। দুই বছর ধরে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ব্যাপক কমে গেছে। বিনিয়োগে দীর্ঘ সময় ধরে খরা চলছে। রাজস্ব ঘাটতি বিশাল। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপি বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে।

ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এখনো কাটেনি। জিডিপি বাড়ার অন্যতম চালিকাশক্তি উৎপাদন এবং কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি শ্লথগতি। রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ দূর হয়নি। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। এসব কারণে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অনেক ‘উপশাখাই’ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে। তার পরও অর্থনীতিকে সক্রিয় করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার সুফল এখনো সময়সাপেক্ষ।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, নানা চেষ্টার পরও দুর্বল অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের মতে, অর্থনীতি সচল হওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ। রিজার্ভের স্থিতিশীলতা ও সন্তোষজনক সুদের হারের মাধ্যমে এ অবস্থার উত্তরণ হবে। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ (গত অক্টোবর) তথ্যানুযায়ী, শিল্প উৎপাদনে মন্দার কারণে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি প্রায় অর্ধেকে নেমে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ এর আগের অর্থবছরে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এই সময়ে কৃষি উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। বর্তমানে ঋণের চাহিদা একদম কমে গেছে। ফলে উৎপাদন খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বাড়বে, যা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়বে।’

খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একমাত্র অবলম্বন মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান ১১ শতাংশের বেশি। কিন্তু নানামুখী সংকটের কারণে এ খাতের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিবিএসের তথ্যানুয়ায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ অনেক কমে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণ কমলে সেটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এই সময়ে ঋণপ্রবাহ বাড়ার হার ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। চলতি অর্থবছরে জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। আর সেপ্টেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২০ শতাংশে। 

মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এখন তা কমে গেছে, এটা উদ্বেগজনক। বেসরকারি খাতে ঋণ কমলে সেটা অর্থনীতির স্থবিরতার লক্ষণ বলে গণ্য হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকটিও দেখতে হবে। সে জন্য উৎপাদনশীল খাতে যাতে যথেষ্ট ঋণপ্রবাহ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দরকার একটা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আসবে।’ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সময়টায় নানা ঘটনা ঘটেছে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত হয়ে পড়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি কমে গেলে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। তবে শর্ত শিথিল করায় ধীরে ধীরে আমদানি বাড়ছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।’

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, জ্বালানি পণ্যের সংকট, সুদহার বৃদ্ধি ও দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে থাকবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহত থাকবে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমবে। জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদানও কমে যেতে পারে।

বিশাল রাজস্ব ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কমে গেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এনবিআর আদায় করেছে ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এটি ৩০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা কম। অর্থাৎ ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, সরকারের বড় আয়ের উৎস হচ্ছে এনবিআর। সরকারের আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয়ের চাপ বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাংকঋণ নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। 

সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুটি জায়গায় স্বস্তি আছে। একটি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। অন্যটি রপ্তানি। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ, রাজস্ব ঘাটতিসহ অন্য খাতে সূচকের অবস্থান ভালো নয়। সরকার চেষ্টা করলেও এখনো সুফল মেলেনি। এক কথায় বলা যায়, সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুর্বলতা কাটেনি অর্থনীতিতে। ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এখানে দেখতে হবে কোন অসুখ সারানোর জন্য কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। অসুখ নানা রকমের হতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি একটি বড় অসুখ। ২০২১ সালের পর থেকে এর উত্থান। আর থামেনি। দ্বিতীয় অসুখ হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। এটি দুর্বল হয়ে গেছে। ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। প্রকৃত মজুরি কমেছে। কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখতে হবে মুদ্রানীতি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রবৃদ্ধির জন্য না মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। কারণ, দুটির জন্য একই ওষুধ কাজ করবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ওষুধ হচ্ছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ব্যবহার। আর জিডিপির প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি। কিন্তু দুটির সাইড ইফেক্ট বা প্রভাব আছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবহার করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ব্যক্তিখাতে ঋণ বিতরণ কমবে। এতে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে।’

এখন দেখতে হবে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, এই মুহূর্তে মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান কাজ। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। জাহিদ হোসেন মনে করেন, অর্থনীতি সচল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা। এখানে খুব একটা উন্নতি হয়নি। অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে, যা মোটেই কাম্য নয়।

সওজের তিন নেতার হাতে লুট ১০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
সওজের তিন নেতার হাতে লুট ১০ কোটি টাকা

অধস্তন কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও আবাসন সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তিন কর্মচারী গত ১৩ বছরে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযুক্ত শ্রমিকনেতারা হলেন সড়ক ও জনপথ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বনানীর সড়ক উপবিভাগের কর্মচারী মো. ইউসুফ নবী, সওজের সার্কেল অফিসের কর্মচারী ও ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিঞা, মুন্সীগঞ্জের সওজ সার্কেলের কর্মচারী ও ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ গাজী মোস্তফা কামাল। ২০১১-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই তিন শ্রমিকনেতার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন সওজের সাধারণ কর্মচারীরা। 

জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম ভাঙিয়ে রাজধানীতে সওজের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেছেন এই তিন কর্মচারী। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা অনুষ্ঠানের নামেও কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করেছেন তারা, যার বেশ কিছু প্রমাণ খবরের কাগজের হাতে এসেছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাঁদাবাজির মামলায় ইউসুফ নবী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে বাকি দুই নেতা পলাতক। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নানা অপকর্মের অভিযোগ উত্থাপিত হলেও সওজ কর্তৃপক্ষ কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি তাদের বিরুদ্ধে। গত ২৮ অক্টোবর সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ এই তিন শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। তবে সওজের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন শাখা, সম্পত্তি শাখা ও ঢাকা সার্কেলের কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিন শ্রমিকনেতা সম্পর্কে ‘কিছুই জানেন না’।

১৩ বছরে ১০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি

সড়কের বিভিন্ন বিভাগের অধস্তন কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই তিন শ্রমিকনেতা সওজের সরকারি কোয়ার্টারের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বসতঘর, রিকশার গ্যারেজ, হোটেল ও দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এসব ঘরের ভাড়া বাবদ ৪ কোটি টাকা আয় করলেও সেই অর্থ সওজের কোষাগারে জমা দেননি। 

এ ছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করার প্রলোভন দেখিয়ে ৩ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।

সওজের সাধারণ কর্মচারীদের সওজ কোয়ার্টারে বাসা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচির নামে তারা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলে জানা গেছে। পুরোনো ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের সার্ভিস কাউন্টের নামে আনুমানিক ২০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এসেছে।

সম্প্রতি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ওই তিন শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্রমিকনেতা এ কে এম ছাইফুর রহমান। মামলার এজাহারে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে।

শ্রমিকনেতাদের দৌরাত্ম্যে ভুক্তভোগী সওজের নিরীক্ষা ও হিসাব কার্যালয়ের গাড়িচালক মো. আব্দুস সালাম। তিনি বেশ কয়েক বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেছেন রাজধানীর মিরপুরের সড়ক গবেষণাগারের স্টাফ কোয়ার্টারে। কিন্তু এ বছরের শুরুতে সড়ক গবেষণাগারের উন্নয়নের স্বার্থে স্টাফ কোয়ার্টারের টিনশেড বাসাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েন আব্দুস সালাম। নিরুপায় হয়ে তিনি সওজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শামীম মিঞা ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ নবীর কাছে যান। এই দুই নেতা আব্দুস সালামকে সরকারি কোয়ার্টারে বাসা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা উৎকোচ নেন। কিন্তু আব্দুস সালামকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কোনো টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।

শুধু আব্দুস সালাম নন; সওজের ঢাকা সার্কেল, মুন্সীগঞ্জ, রাজশাহীসহ অনেক জেলার অধস্তন কর্মচারীরা শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। সওজের প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইংয়ের কর্মচারী শহীদ উল্যাহ সওজের কোয়ার্টারে বাসা পেতে দিয়েছেন ২ লাখ টাকা। চাকরি স্থায়ী করতে সওজের রাজশাহী সার্কেলের কর্মচারী এ কে আজাদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও মো. সাঈদুর রহমান ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন তিন শ্রমিকনেতাকে। তবে অনেক পর অধস্তন কর্মচারীরা জানতে পারেন তাদের ঠকানো হয়েছে। একাধিকবার ধরনা দিয়েও সেই টাকা আর উদ্ধার করতে পারেননি তারা। 

অভিযোগ রয়েছে রিকশা গ্যারেজ, দোকানপাট ভাড়া দিতে এই তিন শ্রমিকনেতা ৩০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা করতেন। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে সাধারণ কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো, ক্ষেত্রবিশেষে অফিসে তুলে নিয়ে আসা হতো।

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মদদে ইউনিয়ন সভাপতি ইউসুফ নবী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিঞা মহাখালীর নাখালপাড়া ও আগারগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা শ্রমিক লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা আদায় করতেন। 

কোনো তথ্য ‘জানেন না’ সওজ কর্মকর্তারা

অনুসন্ধানে জানা যায়, সওজের এই তিন কর্মচারী সওজের ঢাকা সার্কেল, প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগ, এস্টেট ও আইন শাখার কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ও যোগসাজশে এই লুটপাট ও চাঁদাবাজি চালিয়ে গেছেন। ভুক্তভোগী সওজ কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ১৩ বছরে সওজের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসব অপকর্মে ইন্ধন দিয়েছেন। 

সওজের এই তিন শ্রমিকনেতার বিষয়ে জানতে এ তিন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবরের কাগজ। এই তিন নেতার বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা তথ্য জানেন না বলে তারা মন্তব্য করেন।

সওজের শ্রমিক ইউনিয়নের এই তিন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৮ অক্টোবর সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে সওজের প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

কিন্তু এ খবর জানে না সওজের প্রধান কার্যালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন সার্কেল। এই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো চিঠির বিষয়ে আমার কাছে বা আমার সার্কেলে কোনো তথ্য নেই। এই তিন শ্রমিকনেতার বিষয়ে ভালো বলতে পারবে ঢাকা সার্কেল অফিস।’ 

সওজের জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকনেতারা জমি দখল করে কী করেছেন, তা আমার একদম জানা নেই। আমার কাছে ঢাকা সার্কেল অফিস থেকে লিখিত অভিযোগ আসেনি।’ 

ঢাকা সার্কেল অফিসে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমি জানি না এই তিন শ্রমিকনেতা কে কী করেছেন। জমি দখল করেছেন না চাঁদাবাজি করেছেন, তা বলতে পারব না।’ 

সওজের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খানও এই তিন নেতার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তিন শ্রমিকনেতা জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণ করেছেন কীভাবে- জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তবে লতিফ খান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সরকারের ৬ চিনিকল চালু হচ্ছে চার বছর পর

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
সরকারের ৬ চিনিকল চালু হচ্ছে চার বছর পর
পঞ্চগড় চিনিকল। ছবি: সংগৃহীত

২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু থাকা সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন বিনা নোটিশেই স্থগিত করা হয়। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এসব কারখানা আধুনিকায়ন করে আবারও উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরেও এসব কারখানা চালু করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব কারখানা চালু করতে যাচ্ছে। শুধু তাই না, সরকারের বাকি ৯ চিনিকলের উৎপাদন বাড়াতেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ। 

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। চার বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার আবারও এসব চিনিকল চালু করবে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যে চিনিকলগুলো এখনো চালু আছে, কিন্তু কাঁচামালসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না, সেসব কারখানার উৎপাদন বাড়াতেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ 

শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি সব চিনিকল পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সারা বছর চালু রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে চিনির আমদানিনির্ভরতা কমবে।’ 

তিনি বলেন, ‘চিনিকলে অনেক মানুষ কাজ করেন। এসব কারখানা চালু থাকলে শ্রমিক কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনভাতা পাবেন। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা আসবে। 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের ছয় চিনি কারখানা বন্ধ থাকায় বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। আমদানি বাড়াতে শুল্কসহ অন্যান্য রাজস্ব ছাড় দিতে হয়। রাজস্ব ছাড় দেওয়ায় সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। দেশি শিল্প থেকে চিনির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলে আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে সরকারের আয় বাড়বে।’ 

সাদা ও অপরিশোধিত- দুই ধরনের চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে দফায় দফায় শুল্ক কমানো হয়েছে। আর এতে গত এক অর্থবছরে গড়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি। 

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে পরিচালিত কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় এবং শ্যামপুর চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বন্ধের সময় সরকারি ছয় চিনিকলে ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্থগিত আদেশ দেওয়ার পর শিল্পমন্ত্রণালয়ে নিজস্ব দপ্তরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে আধুনিকায়ন করে ছয় চিনিকল আবারও চালু করা হবে। বন্ধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চালু চিনিকলে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকে কাজ না পেয়ে এখনো বেকার হয়ে আছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছে। 

গত ১৬ নভেম্বর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান সেতাবগঞ্জ চিনিকল সফরে যান। এর আগে গত চার বছরে এসব কারখানা পরিদর্শনে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের কেউ যাননি। সফরকালে শিল্প উপদেষ্টা সেতাবগঞ্জ চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আখচাষি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান দীপিকা ভদ্র, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম। 

বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, সরকার যত দ্রুত সম্ভব ছয় চিনি কলের উৎপাদন পুনরায় শুরুর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজের অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তা নজরদারি করা হচ্ছে। 

১৫ নভেম্বর নাটোরে উত্তরবঙ্গ চিনিকলেও যান আদিলুর রহমান খান। এ সময় ওই চিনিকলের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। চিনিকলটির ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চিনিকলে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা হবে। 

২০২০ সালে আখ মাড়াইয়ের কিছু দিন আগেই ছয় চিনিকল বন্ধ করা হয়েছিল। বিনা নোটিশে চিনিকল বন্ধ করায় আখ বিক্রি হয়নি। অনেক চাষি মাঠেই আখ পুড়িয়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। 

অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আখের অভাবে বছরের সাত থেকে আট মাস বন্ধ থাকে সরকারের বাকি ৯ চিনিকল। এসব কারখানা সারা বছর উৎপাদনে রাখতে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও গত ১৫/১৬ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চালু সরকারি ৯ চিনিকল থেকে সারা বছর গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টন চিনি পাওয়া যাচ্ছে। এসব চিনি বাজারজাত করতেও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ গুদামেই ফেলে রাখা হয়েছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সারা বছর গড়ে ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। অন্য মাসের তুলনায় রোজার এক মাসে চিনির চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে গড়ে ৩ লাখ টন হয়।

ওবায়দুল করিমের বনবিলাস

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ পিএম
ওবায়দুল করিমের বনবিলাস
ছবি: খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকারি বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে রিসোর্ট, বাগানবাড়ি ও অবকাশকেন্দ্র গড়ে তোলার খবর দেশে নতুন নয়। প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, পেশিশক্তি ও অঢেল টাকার মাধ্যমে যুগের পর যুগ নানা কৌশলে অবৈধভাবে দখলে রাখছেন বিভিন্ন বনের জমি। বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম ময়মনসিংহের ভালুকায় সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) অন্তত ১০০ একর জমি অবৈধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বনবিলাস। সেখানে ওরিয়ন ফ্রিজ তৈরির কারখানা, ব্যক্তিগত প্রমোদ বাংলোসহ নির্মাণ করা হয়েছে নানা রকম স্থাপনা।

শুধু ওবায়দুল করিম নন, তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ও সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও একই বনের আরও ১০০ একর করে জমি দখল করেছেন। বন সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বন বা রিজার্ভ ফরেস্টে বিনা অনুমতিতে যে কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে গুলি করার ক্ষমতা রয়েছে বনপ্রহরীদের। অথচ ওরিয়নের অবৈধ দখল করা জমিতে স্থানীয়রা তো নয়ই, ফরেস্ট অফিসার বা বনকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেন না। ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের নিযুক্ত অস্ত্রধারী নিরাপত্তাকর্মীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত পায়নি। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে ওবায়দুল করিম ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে ছয় থেকে সাতটি মামলা করেছেন, যা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ওবায়দুল করিম ও তার ভাই বিগত সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবে বছরের পর বছর মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে দখলে রেখেও তারা আজও আছেন বহাল তবিয়তে।

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসের (সিডস্টোর বাজার) উল্টো দিকে অন্তত ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ওরিয়ন সাম্রাজ্য। ২০১৬ সালের দিকে বনের পাশে কয়েক বিঘা জমি কিনেই বন দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম। কয়েক দিন পর পর অল্প অল্প জমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বনের ১০২ একর জমি দখলে নেন ওবায়দুল করিম। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) জায়গাও বাদ দেননি। এর মধ্যে রিজার্ভ ফরেস্ট ভালুকায় হবিরবাড়ি বিটের ১৫৪ দাগের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ওরিয়নের ফ্রিজ তৈরির কারখানা। ওবায়দুল করিমের ভাই বীকন গ্রুপের মালিক এবাদুল করিম একই বিটের ১৫৪ ও ১৮৫ দাগ এবং কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। তাদের আরেক ভাই রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিমও হবিরবাড়ি বিটের ১৮৫ ও কাঠালী বিটের ১০৭ দাগের জমি দখল করেছেন। এসব দাগের মধ্যে ১৫৪ দাগে বনের মোট জমির পরিমাণ ২০১ একর, যা ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম অবৈধ দখলে রেখেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় এলে ওবায়দুল করিম ও এবাদুল করিম ভালুকা বন বিভাগের জমি আগ্রাসনের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৬ সালের মধ্যে সেই চেষ্টা কিছুটা সফল হয়। তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সোনার চেয়ে দামি জমিগুলো অনেকটা বিনা বাধায় দখল করেন। বন বিভাগ শুধু মামলা করেই দায় সেরেছে। এলাকাবাসী জানান, ওবায়দুল করিম ও অপর দুই ভাই ক্ষমতার দাপট, কখনো লাঠিয়াল বাহিনী, আবার কখনো বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করে জমিগুলো অবৈধভাবে দখলে নিতে সক্ষম হন।

এ বিষয়ে ভালুকা রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার (আরএফও) হারুনুর রশীদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভালুকা রেঞ্জে বনের মোট জমি রয়েছে ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে ৮ হাজার একর বেদখল হয়েছে। ওরিয়ন, বীকন, রিদিশা ছাড়াও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এসব জমি দখল করেছেন।

দুর্নীতি-অনিয়মে আলোচিত রেলওয়ের জিএম মামুনুল

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪২ পিএম
দুর্নীতি-অনিয়মে আলোচিত রেলওয়ের জিএম মামুনুল
মামুনুল ইসলাম

মামুনুল ইসলাম। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) তিনি। চালচলনে আছে আভিজাত্য। প্রথম দেখায় যে কেউ ভাবতে পারেন সহজ-সরল সুফি ব্যক্তি। অথচ ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের নজির সৃষ্টি করেছেন। অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিতে বাধ্য করাও তার স্বভাব। 

রেলওয়ের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্মতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের পাশাপাশি রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামুনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের পাশাপাশি খবরের কাগজের হাতে এসেছে তার দুর্নীতি-অনিয়মের একটি ফোনকল রেকর্ড। সেই রেকর্ড করা কথোপকথনে শোনা গেছে, তিনি অধস্তন এক কর্মকর্তার কাছে রূঢ় ভাষায় ঘুষ দাবি করেন। প্রয়োজনে সরকারি প্রকল্পের টাকায় তার গাড়িতে জ্বালানি ভরে দিতে বলেন। মোবাইল ফোনে রেলের প্রকল্পে নিয়োজিত এক অধস্তন কর্মকর্তাকে প্রকল্পের টাকা দিয়ে তার অফিশিয়াল গাড়ির (রাজস্ব খাত) ট্যাক্স-টোকেন রেজিস্ট্রেশন করে দিতে চাপ দেন। তা ছাড়া তিনি (মামুনুল ইসলাম) ঢাকা আসবেন এবং ঘোরাফেরা করবেন, এ জন্য গাড়ির ট্যাং ভরে জ্বালানি (অকটেন) চেয়েছেন।

ফোনকল রেকর্ডের এক অংশে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মামুনুল ইসলাম তার অধস্তন কর্মকর্তাকে বলেন, ‘তোমাদের কাজ সব এমনি এমনি করে দিলাম। আমি এখনই… ইনস্পেকশন করে দিলাম। আমি এটা হস্তান্তর করব না। যতই দৌড়াদৌড়ি করো। আমি বানের জলে ভাইসা আসি নাই।’ 

কথোপকথনের একপর্যায়ে মামুনুল ইসলাম প্রকল্পের অধস্তন কর্মকর্তাকে বলেন, ‘তিনটা জিনিস বললাম। একটা হলো টাকা। দুই নম্বর হলো ১৯ তারিখ ট্যাক্স-টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, এটা এক বছরের জন্য করে দাও তোমাদের প্রকল্পের টাকা দিয়ে। আর তিন নম্বর হলো, গাড়ির ট্যাংক ফুল ভরে দাও। তোমার পিডির (প্রকল্প পরিচালক) সঙ্গে কথা বলবে না কার সঙ্গে বলবে, বলো। আমার জীবনের ওপর দিয়ে তোমাদের জন্য সর্বোচ্চটা করে দিয়েছি। বুঝছ? আমি কাউকে বলতে পারব না। তুমি বলো।’

এই কথোপকথনের পর জিএম মামুনুলের চাহিদামতো গাড়ির ট্যাক্স-টোকেন ও জ্বালানি দিতে বাধ্য হয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধস্তন কর্মকর্তা।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানান, মামুনুল ইসলামের (৩য় গ্রেড) বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ রয়েছে। নানা অনিয়মের কারণে বিতর্কিত এই কর্মকর্তা। জুনিয়র হয়েও সম্প্রতি ছয় কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে পশ্চিমাঞ্চল জিএম পদ বাগিয়ে নেন। মামুনুলের শ্বশুর আমজাদ হোসেন কয়েক বছর আগে রেলের মহাপরিচালক ছিলেন। শ্বশুরের প্রভাবে সেই সময়ে রেলের নিয়োগ, বদলি, পদায়নের মতো নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ও বিতর্কিত হন মামুনুল। আরও অভিযোগ রয়েছে যে মামুনুল ইসলাম সপরিবারে থাইল্যান্ডের নাগরিক। 

১৮-১২৮৯ নম্বরের এই জিপ গাড়িটি জিএম (পশ্চিম) পদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই গাড়িটি তাকে ঢাকায় ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু গাড়িটি রাজস্ব খাতভুক্ত পদের অনুকূলে বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, তাই এই গাড়ির পেছনে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। তবে অধস্তন কর্মকর্তা মামুনুলের নির্দেশে প্রকল্পের টাকা ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বিদায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী খবরের কাগজকে জানান, ‘কোনো কর্মকর্তার রাজস্ব পদের অনুকূলে পরিবহন পুল থেকে যদি গাড়ি বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়, তবে সেটা তার পদ-পদবির বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকেই বরাদ্দ দেওয়া থাকে। এটাই নিয়ম। কাজেই কোনো কর্মকর্তা এই গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করতে বা তেল ভরতে চাপ দিয়ে থাকলে তা আইনের পরিপন্থি। এমন যদি কোনো কর্মকর্তা করে থাকেন, তবে তিনি অনিয়ম বা অনৈতিক কাজ করেছেন।’

যোগাযোগ করা হলে জিএম (পশ্চিম) মামুনুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, বরং যোগ্যতা অর্জনের ৯ মাস পর আমাকে পদোন্নতি (চলতি দায়িত্ব) দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া রেলের অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ থাকলেও আমার বিরুদ্ধে কখনোই অভিযোগ ওঠেনি। যাদের ডিঙিয়ে আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনা হচ্ছে, তারা সবাই জিএম পদমর্যাদার দায়িত্ব পালন করছেন। বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার কথা কখনোই সত্য নয়। আর ডিজি থাকা অবস্থায় শ্বশুর আমাকে অনেক বেশি বাইপাস (দূরে সরিয়ে রাখা) করে রেখেছিলেন।’