ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পছন্দের জমি নিয়ে নিতেন নিক্সন চৌধুরী

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
পছন্দের জমি নিয়ে নিতেন নিক্সন চৌধুরী
নিক্সন চৌধুরী

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে টানা তিনবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী। নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে চটকদার বক্তৃতা আর হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করে তিনি লাইমলাইটে আসেন। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার কথা বিশ্বাস করে ভোট দেন ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন এলাকার মানুষ। হারিয়ে দেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরুল্লাহকে। 

এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্ষমতা। শেখ পরিবারের আত্মীয় পরিচয়ে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। বাড়তে থাকে সম্পদের পরিমাণ। 

অভিযোগ আছে, যে জমির দিকে তার চোখ পড়ত, কিছুদিন পর তিনি সেই জমির মালিক হয়ে যেতেন। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নামমাত্র মূল্যে স্থানীয়দের তার কাছে জমি বিক্রি করতে হতো। কেউ দ্বিমত পোষণ করলেই তাকে নিক্সন চৌধুরীর বাগানবাড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাতেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙ্গার আজিমনগরের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে নিক্সন চৌধুরী যে বাগানবাড়ি করেছেন, সেই জমিটিও নামমাত্র মূল্যে কিনেছিলেন। মহাসড়কের কাছাকাছি এসব ফসলি জমি বিঘাপ্রতি তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকায় কিনে নেন। কিন্তু তখন জমির প্রকৃত মূল্য ছিল কেনা দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি। 

ভাঙ্গার সূর্যনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিক্সন চৌধুরীর বাগানবাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই সড়কের দুই পাশে হাজারেরও বেশি বিঘা ফসলি জমি আর কিছু খাস জমি তিনি দখলে নিয়েছেন। জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়মান আইল্যান্ড’। 

এলাকাবাসী জানান, জমি দখলে নিতে নিক্সন চোধুরী বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতেন। তাদের বলা হতো, সেখানে হাসপাতাল, পার্ক ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। কিন্তু পরে তিনি মহাসড়কের পাশে, পদ্মা সেতুর কাছাকাছি জায়গাগুলো প্লট আকারে বিক্রি করতে শুরু করেন।

ওই এলাকার কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা জানান, আয়মান আইল্যান্ডের জন্য তাদের ফসলি জমি হারাতে হয়েছে। পরে তাদের বসতভিটাও চাওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক পালাবদল না হলে হয়তো বাড়িও ছেড়ে দিতে হতো। 

সম্রাট শিকদার নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হতো।’

এমপি হওয়ার পর বাড়তে থাকে সম্পদ
জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ১০ বছর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসন থেকে নির্বাচিত হন। ওই সময় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তার নামে কোনো জমি ছিল না। বর্তমানে আজিমনগর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়ায় ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ (২০ একর) জমির মালিক তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকার অনেক হিন্দু পরিবারের জমি তিনি নামমাত্র দাম দিয়ে কিনে নেন। তারা বিভিন্ন সময় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলেও তাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। 

নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নিক্সন চৌধুরী প্রথম পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) ৯৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ জমির মালিক হয়েছিলেন। পরের পাঁচ বছরে (২০১৮-২০২৩) ওই জমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১০৬৪ দশমিক ০৫ শতাংশ জমি। এখন ওই এলাকায় তার জমির পরিমাণ ২০৩৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় নির্মাণাধীন দোতলা ভবনসহ সম্পদ দেখিয়েছিলেন ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ওই ভবনের দাম দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি নতুন করে একতলা অফিস রুম, মিটিং রুম, রান্নাঘর, ডরমেটরি, সিসি রাস্তা, সীমানা প্রাচীর ও পুকুরঘাট বাবদ আরও ৩৪ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ দেখানো হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কৃষি জমির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছিল ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৯১০ টাকা, যা পাঁচ বছরে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩০ হাজার ২৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ১১ হাজার ১৬০ টাকায় দাঁড়ায়।

ফরিদপুরের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীর নামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার নামে রয়েছে একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে নীপা পরিবহন লিমিটেড, রিতা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, স্বাধীন বাংলা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিসিং স্টেশন, এন ডেইরি ফার্ম, এন ডাক ফার্ম ও এন ফিশারিজ ফার্ম অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে বলে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে নিজেকে তিনি অপ্রতিরোধ্য ভেবেছিলেন। ভিন্নমত দমনে তার আজিমনগরের বাড়িতে তৈরি করেছিলেন টর্চার সেল। তার কথা কেউ না শুনলে ওই বাগানবাড়িতে ধরে এনে শীতের রাতে পুকুরে চোবানো হতো। এর সঙ্গে চলত শারীরিক নির্যাতন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা কখনই মুখ খোলার সাহস পেতেন না। মাদারীপুরের শিবচরের লোকজন তার এই বাড়ি পাহারাদারের মতো ঘিরে বসে থাকতেন। শুধু এলাকাবাসী নয়, স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও ভয়ে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতেন না।

শেখ পরিবারের পরিচয়ে অপ্রতিরোধ্য
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এবং সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ছোট ভাই নিক্সন। শুধু শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাত্র ১৯ দিন আগে এসে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্যবনে যান। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন। এ পদ দিয়েই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় হয়ে ওঠেন এক এবং অদ্বিতীয় নেতা। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তার ছিল ব্যাপক প্রভাব। বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করে তার পক্ষে এক প্রবাসীকে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে দেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তারই প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী জাফরউল্লাহর এক কর্মী। দুজন ভাগ করে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ। 

তখন কথা ওঠে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মী জেলায় থাকার পরও কেন ‘অযোগ্যদের’ হাতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ তুলে দেওয়া হলো? এ ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তখন কথা বলে জানা যায়, দুজনকে এ পদ পাইয়ে দিতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ঠিক একই ভাবে জেলা যুবলীগের কমিটিতেও ভাগ বসান নিক্সন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে নিক্সন চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। এরই মধ্যে আদালত থেকে তার দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় তার নামে মামলা হয়েছে। তবে এখনো তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় অনেকেই তার সীমাহীন অত্যাচারের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তার পরও তারা নিক্সন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন।

তারা বলছেন, নিক্সনের অনেক টাকা। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা। তিনি হয়তো সব কিছু ম্যানেজ করে আবার ভাঙ্গায় ফিরে আসবেন। 

বন্ধ হচ্ছে রাঘববোয়ালদের ২২ কারখানা

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ এএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৮ পিএম
বন্ধ হচ্ছে রাঘববোয়ালদের ২২ কারখানা

সরকার ২২টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা সবাই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার মসনদের কাছাকাছি থাকা রাঘববোয়াল। এসব কারখানা বিগত সরকারের সময় জাল কাগজপত্র দিয়ে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা পাচার করেছে এবং ৭১১ কোটি টাকার প্রণোদনা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কারখানাগুলোর রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়েছে ৭৩৪ কোটি টাকা। এই ২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানই বেক্সিমকো গ্রুপের। এই ১৬ প্রতিষ্ঠান পাচার করেছে ৯৮৭ কোটি টাকা। 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর অনেক সাবেক নেতাই এসব কারখানার মালিক। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত তদন্তে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ভাই গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমানসহ মোট ২২টি প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির সব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ে তৈরি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পাচার করা অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। 

বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচারের অভিযোগ করে এসব মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। বিশেষভাবে অর্থপাচারের দায়ে বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেক্সিমকোসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনবিআর থেকেও মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। 

সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘কিছু কারখানায় অর্ডার নেই। এলসি খুলছে না। আয় নেই বললেই চলে। এসব কারখানা এখন সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চালু রাখতে সরকারকে অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। এসব কারখানা বন্ধ করা হবে।’

এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে করণীয় নির্ধারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন-ভাতাসহ অন্য খরচের অর্থ যোগাড়ের ব্যবস্থা নেই বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী এবং সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মোট ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সিআইডি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব আবেদন বিবেচনা করে দুদক, বিএফআইইউ, সিআইডি এবং এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা অনিয়মে নিমজ্জিত ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৯টিই তৈরি পোশাক খাতের কারখানা। ৪৯টির মধ্যে আবার ১৬টিই বেক্সিমো গ্রুপের। গত আগস্টের পর থেকে এই ৬৩টি কারখানারই আয় কমেছে। নতুন অর্ডার নেই বললেই চলে। পুরোনো অর্ডার অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না সেগুলো। শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্য খরচ যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। বাকি ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবাসন খাতের ৯টি এবং অন্য খাতের ৫টি প্রতিষ্ঠান। 

তদন্তে দেখা যায়, ৬৩ কারখানার মালিকরা বিগত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিল। তারা নিজেদের ব্যবসায় সেই প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারা অবৈধভাবে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা নিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা জাল কাগজপত্র দেখিয়ে কাজ করেছেন। বন্ড সুবিধার (শুল্কমুক্ত) আওতায় একটি অর্থ ব্যয় না করেও হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য এই অসৎ ব্যবসায়ীরা আমদানি করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার করেছেন, যার ফলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) এর (১৪) ও (২৬) ধারায় তারা অপরাধী, যা একই আইনের ৪(২)/৪(৪) ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান: তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছোট-বড়, নামে-বেনামে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানির সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের মোট ৩২টি প্রতিষ্ঠানের ১৬টি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে জনতা ব্যাংক মতিঝিলের দিলকুশা শাখা থেকে ৯৩টি ঋণপত্র বা বিক্রয় চুক্তির (এলসি/সেলস কন্ট্রাক্ট) বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করেছে। আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানির পরে রপ্তানিমূল্য চার মাসের মধ্যে দেশে আনার বাধ্যবাধকতা থাকলেও রপ্তানি মূল্য ৯৮৭ কোটি টাকার সমমূল্যের ডলার প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে আনেনি। 

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, পিংক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।

ঠাণ্ডাজনিত রোগে কাবু শিশুরা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
ঠাণ্ডাজনিত রোগে কাবু শিশুরা

‘আমার নানু গো...! নানু...! ও নানু ভাই...!’ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী শিশু হাসপাতালে ঢুকতেই কানে ভেসে আসে এমন রোনাজারি। সামনে এগিয়ে দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর বয়স্ক এক নারীর কোলে এক শিশুর নিথর দেহ। সেই দেহ দেখে বিলাপ করছিলেন এক মুরব্বি। কথা বলে জানা যায়, তিনি ওই শিশুর নানা। পাশে নির্বাক শিশুটির মা। বেলা ১২টার কিছুক্ষণ আগে শিশুটি মারা যায়। 

গত শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে স্বজনরা সাত মাসের খাদিজাকে নিয়ে আসেন রাজধানীর শিশু হাসপাতালে। শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে কাবু হচ্ছে শিশুরা। 

২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র-আইসিডিডিআরবি জানায়, দেশে বছরে অন্তত ২৪ হাজার শিশুর নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়। চলতি শীত মৌসুমে এখন পর্যন্ত কতজন আক্রান্ত ও কত জনের মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এক মাস ধরে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করে জানানো সম্ভব হবে। 

২ মাস ২৫ দিন বয়সী ঝিনাইদহের খালিদ সাইফুল্লাহকে গত ১৫ নভেম্বর শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো চলছে তার চিকিৎসা। সেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত খুব একটা অবস্থার উন্নতি হয়নি শিশুটির।

শীত আসার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বর্তমানে শীতের সঙ্গে বায়ুদূষণও যোগ হয়েছে। যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও রাজধানী ঢাকায় খুব একটা শীত পড়েনি। কিন্তু ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বেশ শীত পড়েছে। রাজধানীতে শীত কম হলেও রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, শুধু শীতে নয়; এখন বায়ুদূষণেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর-সর্দি-কাশি গলায় ইরিটেশন হচ্ছে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রংকিউলাইটিস এবং দু-বছরের বেশি বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে। যাদের অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শীতে শিশুদের ডায়রিয়ার ঝুঁকিও থাকে। 

অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শিশুদের তুলনামূলক পানি কম খাওয়ানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যাতে শিশুরা শীতে পর্যাপ্ত পানি পান করে। বাসায় বড়দের যদি জ্বর-সর্দি-কাশি হয়, তাহলে তারা যেন বাসায় মাস্ক ব্যবহার করেন। কারণ তারা যখন হাঁচি, কাশি দেবেন তা দ্বারা শিশুরা যেন সংক্রমিত না হয়। শিশুদের বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাডিনা ভাইরাস সংক্রমণের সন্দেহ করা হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক মাহবুবুল আলম বলেন, কিন্তু তা নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ দেশে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) শিশু রেসপিরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাবিলা আকন্দ বলেন, ‘নিউমোনিয়ার লক্ষণ হচ্ছে- কাশি, তার সঙ্গে জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে। খেতে না পারা, বমি করে দেওয়া।’ 

তিনি বলেন, ‘নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি মিনিটে ৬০ বার থাকে, নবজাতক পরবর্তী এক বছর বয়সী শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি যদি ৫০ বার বা তার অধিক হয় এবং এক বছর থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে যদি ৪০ বার বা তার বেশি হয় তাহলে অবশ্যই ঝুঁকি আছে ধরে নিতে হবে। শিশুর কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা দিলে বাসায় বসে না থেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।’ 

শীতকালে শিশুরা পরিবেশগত কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সময় স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। হাইজিন মেইনটেইন করতে হবে।’ 

ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরি উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, শুধু বুকের দুধপানে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। সময়মতো টিকাগুলো দিতে হবে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দুর্বল প্রকৃতির শিশু, যাদের নিউমোনিয়া বারবার হয় বা হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য সরকারি টিকার পাশাপাশি প্রতিবছর ইনপ্লুয়েঞ্জার টিকা নিতে পারলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।

টানাপোড়েনের সংসারে সাইমকে নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
টানাপোড়েনের সংসারে সাইমকে নিয়ে দুশ্চিন্তা
বিছানায় শুয়ে আছেন গুলিবিদ্ধ চট্টগ্রামের হাটহাজারীর তরুণ মো. সাইম। ছবি: বাসস

চট্টগ্রামের হাটহাজারী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন টগবগে তরুণ মো. সাইম। বয়স সবেমাত্র ১৯। ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের দুঃখ ঘোচাবেন। কিন্তু সব আশার গুড়ে এখন বালি। সারাদিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় দিন কাটছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মো. সাইমের। ক্রাচে ভর দিয়ে কোনোভাবে দাঁড়াতে পারলেও এখনো তিনি হাঁটতে পারেন না। আদৌ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার পরিবার।

হাটহাজারী উপজেলার ৮নং মেখল ইউনিয়নস্থ রুহুল্লাপুর গ্রামের বুধা গাজী বাড়ির মোহাম্মদ সিরাজ (৪৮) ও রাশেদা বেগম (৪৩) দম্পতির একমাত্র পুত্র মো. সাইম। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজো। ধারদেনা করে এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বড় বোন সাইমা আক্তারের (২৩) বিয়ে হয়েছে বছরখানেক আগে। ছোট বোন মরিয়ম আক্তার সাইফা (১২) স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সাইমের বাবা মোহাম্মদ সিরাজ ‘নিরাপত্তা প্রহরীর’ চাকরি করেন। স্বল্প আয়ের চাকরি করে অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করলেও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে কখনো কার্পণ্য করেননি তিনি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাইম ও তার বন্ধুরা শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। গত ৫ আগস্ট দুপুর ১২টায় তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে হাটহাজারী কলেজ মাঠে একত্রিত হন। হাটহাজারী কলেজ মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে তারা হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডের দিকে যান। দুপুর ২টার দিকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শত শত ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে মিছিল বের করেন। এ সময় মিছিলকারী ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে গুলি চালাতে থাকে। হঠাৎ একটি গুলি তার ডান পায়ের ঊরুতে এসে লাগে। বুলেটটি তার পকেটে থাকা মোবাইল ভেদ করে ঊরুর এক টুকরা হাড়সহ বেরিয়ে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় বন্ধুরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যান। ১২ দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করে ঊরুতে রড লাগানো হয়।

দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসা শেষে বাড়িতে এলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তিনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে সার্জিস্কোপ, সিএমএইচসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এখন ডাক্তাররা বলছেন, দ্রুত তার পায়ে পুনরায় অস্ত্রোপচার করাতে হবে। শরীরের অন্য স্থান থেকে হাড় নিয়ে তার ডান ঊরুতে লাগাতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কীভাবে অস্ত্রোপচারের খরচ জোগাবেন, তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার পরিবার।

ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন সাইমের মা রাশেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র আশার প্রদীপ সুস্থ ছেলেটি তিন মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছে। হাসপাতালে সরকারি খরচে অপারেশন হলেও ওষুধ ও চিকিৎসা বাবদ ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। চিকিৎসার খরচ মেটাতে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। আমার স্বামী যা রোজগার করেন তা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। ডাক্তাররা বলেছেন, দ্রুত আরেকটি অপারেশন করাতে না পারলে তার পা ঠিক হবে না। ছেলের চিকিৎসা বাবদ এত টাকা খরচ হলেও সমন্বয়কদের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা ছাড়া সরকারি-বেসরকারিভাবে আর কোনো সহযোগিতা পাইনি। এখন আমরা ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করব? নাকি ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাব?’

কথা হয় সাইমের বাবা মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে। নিদারুণ কষ্ট, অশান্তি আর হতাশার ছাপ তার চেহারায় ফুটে উঠেছে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, ‘আমার একটিমাত্র ছেলে। অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছি। আশা ছিল, ছেলে বড় হবে, চাকরি করে আমাদের দেখাশোনা করবে। এখন সে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে কি না তাও জানি না। ছেলেটার চিকিৎসা করাব সে টাকাও নেই। আমি যা রোজগার করি তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। মাস শেষে ধারদেনা করে চলি। তার চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ঋণ নিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন, আবার অপারেশন লাগবে। এই পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসার খরচ চালানো আমার জন্য দুর্বিষহ একটি ব্যাপার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে সে হাঁটতে পারবে। পাশাপাশি ছেলেকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, যাতে আমার অভাবগ্রস্ত পরিবারের সহায়তা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামান বলেন, ‘সাইমের বিষয়ে আমি অবগত। আন্দোলনে আহত হওয়ার কারণে সে ডিগ্রিতে ভর্তি হতে পারেনি। ভর্তির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে অবশ্যই তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে। বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও পরিবারটির পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ সূত্র: বাসস

অস্ত্র, গোলাবারুদের চালান ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
অস্ত্র, গোলাবারুদের চালান ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা

দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণায় অস্ত্র, গোলাবারুদসহ এ জাতীয় ক্ষতিকর পণ্য বিভিন্ন বন্দর দিয়ে প্রবেশ বন্ধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নজরদারি বাড়িয়েছে। 

এরই মধ্যে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি বন্দরকে সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরাও সতর্কতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের দিকে বেনাপোল, সোনা মসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দরে নজরদারি বেশি বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব জানা যায়। 

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় থেকেই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী প্রভাবশালীদের অনেকে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ওই সব ব্যক্তিরা কে কোথায় আছেন তার খোঁজ শুরু করে। বিশেষভাবে ভারত, নেপালসহ অন্য প্রতিবেশী দেশে কেউ আত্মগোপনে আছেন কি না তা জানার চেষ্টা করছে এসব সংস্থা। 

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এনবিআরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি করার কথা জানাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এই জাতীয় পণ্য ব্যবহারের আশঙ্কা করছে। তারা বলছে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পণ্য দেশের মধ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হতে পারে। এতে দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। কোনোভাবেই অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এ জাতীয় কিছু কেউ যাতে দেশে আনতে না পারে তার জন্য প্রতিটা বন্দরে সতর্কতা বাড়াতেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে। 

এনবিআর সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে কেউ যেন কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এ জাতীয় কিছু মিথ্যা ঘোষণায় আনতে না পারে তার জন্য আমরা সতর্কতা বাড়িয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে কোনো ঘটনা ঘটলে কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করলেও যেন ব্যর্থ হয় সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘ভেতরে কী আছে তা জানতে আমরা কার্টন, প্যাকেট বেশি করে স্ক্যানিংয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছি। কোনো প্যাকেট বা কার্টন নিয়ে সামান্য সন্দেহ হলেও তা খুলে দেখা হচ্ছে।’ 

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার গঠন করা হয়েছে। আমি এই সরকারের সময়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মিথ্যা ঘোষণার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কেউ কোনো অসাধু উদ্দেশ্যে দেশের মধ্যে কোনো কিছু প্রবেশের চেষ্টা করলে তা রোধ করা হবে। এনবিআর সতর্ক আছে।’ 

বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার‌ ব্যবহার করা হয়। বন্দরের কর্মকর্তাদের প্রতিজনের কম্পিউটারের জন্য নির্দিষ্ট একটি পাসওয়ার্ড থাকে। এসব পাসওয়ার্ড কোনোভাবেই যেন হ্যাকিং করা না যায় তাতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড চুরি করে বিশেষ কৌশলে পণ্য খালাসের চেষ্টা করা হয়। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুল্ক শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সম্প্রতি সংখ্যালঘু ইস্যুতে এবং এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিবেশী এক দেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা এসব করছে তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। কোনোভাবেই যেন দেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে বা কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে তার জন্য এনবিআর সতর্ক রয়েছে।’ 

এনবিআরে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি ওষুধ ও তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল দেশের নামিদামি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও বড় মাপের কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গোলাবারুদ বানানোর পাউডারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পণ্য দেশের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আনার চেষ্টা করা হতে পারে। এরই মধ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মদ, মাদক, রাসায়নিক, বিস্ফোরকের একাধিক চালান আটক করেছে বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা। 

এনবিআর থেকে বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো নির্দশে বলা হয়েছে, অনেক সময় কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য প্রবেশকালে প্যাকেটের বা কার্টনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না ভেতরে কী আছে। ছোট-বড় কার্টন, কন্টেইনার, প্যাকেটের ব্যাপারে ন্যূনতম সন্দেহ হলে খুলে দেখে যাচাই করে ছাড় করাতে হবে। 

প্রসঙ্গত, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে লোকবলের অভাবে এবং সব বন্দরে অটোমেশন না থাকায় পণ্য ভর্তি কার্টন, কন্টেইনার, প্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক খুলে ভেতরে প্রকৃতপক্ষে কোন জাতীয় পণ্য আনা-নেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ পণ্যের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র দেখে পণ্য ছাড় করে।

নতুন ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
নতুন ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম
সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও চালের দাম কমছে না। চাল ব্যবসায়ীদের দাবি গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করলে অবৈধ মজুদ রোধ হবে, দাম কমবে ধান ও চালের। ছবি: খবরের কাগজ

চালের দাম কমাতে সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। তার পরও আমদানি হচ্ছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় চালের দাম বেশি পড়ছে। দেশেই এর চেয়ে কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে নতুন ধান উঠলেও বাজারে চালের দাম কমেনি বরং কয়েক দিন আগে চিকন চাল কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।

পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলমালিকরা বেশি করে ঋণ নিয়ে গোডাউনে ধান মজুত করে রেখে ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। তাই ব্যাংকঋণ বন্ধ করতে হবে, গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তা নাহলে কমবে না চালের দাম। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কৃষক, মিলমালিক এবং পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। 

আগে চালের ওপর আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর ছিল। সব মিলিয়ে দিতে হতো ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক। সরকার গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে। কিন্তু তাতেও আমদানিকারকরা সাড়া দেননি। তাই আমদানি পর্যায়ে সব শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। তা আমলে নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও সাধারণ মানুষের কাছে চালের দাম সহজলভ্য করতে গত ১ নভেম্বর চাল আমদানিতে শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ বাদ দিয়ে শুধু ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রাখা হয়েছে। তাতে চালের আমদানি মূল্য কেজিপ্রতি প্রায় ৯ টাকা ৬০ পয়সা কমার কথা জানায় এনবিআর।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এ ব্যাপারে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাতুল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল লতিফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘মোটা চাল গ্রামে বেশি চলে। সরকার ভারত থেকে আমদানির সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ডলারের দাম বেশি। এ জন্য কুলিয়ে ওঠা যায় না। ভারতে চালের দামই বেশি পড়ছে। দেশে আনতে ৫১ থেকে ৫২ টাকা কেজি পড়ে যাচ্ছে। অথচ দেশেই মোটা চাল তার চেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ আগে অর্ডার দিলেও লোকশান গুনতে হয়েছে। তাই ভারত থেকে আর আমদানি করা হচ্ছে না।’ অন্য আমদানিকারকরাও একই তথ্য জানান। 

তাদের দাবির সত্যতা মিলেছে রাজধানীর কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ও কৃষিমার্কেটে। সেখানে সরেজমিনে গেলে পাইকারি ও খুচরা চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘ভারতের চাল আসে না। কারণ দেশেই এর চেয়ে কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স হাজি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. মাইনুদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের কোনো চাল নেই। চোখে দেখি না, গন্ধও পাই না। আমদানি হলে খবর পেতাম। তাদের লোক আসত। দেশেই তারচেয়ে কম দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। এ জন্যই হয়তো আসছে না ভারতের চাল।’ 

একই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মান্নান রাইস এজেন্সির আবদুল মান্নান, বাহার ট্রেডার্সের বাহার মিয়াসহ অন্য চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘সরকার যতই শুল্ক কমাক দাম কমবে না। কারণ ভারতে চালের দাম বেশি। আবার দেশে আমন ধান উঠলেও চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা। মিলাররা বলছেন, ধান নেই। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। লোকশান করে তো ব্যবসা করা যায় না। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে মিনিকেট ৭২-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা ও মোটা চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।’

এদিকে কৃষিমার্কেটের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স এম এম রাইস এজেন্সির ফিরোজ মাহমুদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘চালের বাজার চলে গেছে করপোরেট সিন্ডিকেটের পকেটে। তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। ধান নেই অজুহাতে কয়েক দিন ধরে করপোরেট ব্যবসায়ীরা বস্তায় দাম বাড়িয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক বস্তায় ৫০ কেজি চাল থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেশে পর্যাপ্ত ধান রয়েছে। বোরো ধান ওঠার পর থেকেই মিলমালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন। ব্যাংক থেকে বেশি করে ঋণ নিয়ে মিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করছেন। ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। এর প্রভাব ভোক্তাদের ওপর পড়ছে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ঋণের টাকায় মিলাররা বেশি করে ধান মজুত করছে তাই ব্যাংক ঋণ বন্ধ করতে হবে। তাহলে তারা সিন্ডিকেট করে ধান ও চাল মজুত করতে পারবে না। সপ্তাহের চাল সপ্তাহে সরবরাহ করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। তারা অভিযান চালালেই কমবে চালের দাম। সরকারকে এদিকে নজর বাড়াতে হবে।’ 

দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে আমন ধানের দাম কমছে। তবে চালের দামে এর প্রভাব নেই। এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার চাল কেনাবেচার বড় বাজার খড়িবাড়ি হাটের অপু রহমান বলেন, ধানের দাম ১ হাজার ৩৭০ টাকা মণ। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১৪০০ টাকা। এক মণে ২৬ কেজি চাল হলে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৫৩ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরেও ভালো হবে। তার পরও বাড়ছে চালের দাম।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });