ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান ও তল্লাশি চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছে সেনাবাহিনী। যৌথ বাহিনী যেখানেই অভিযান চালাচ্ছে, সেখানেই মুর্হূতেই পরিবেশ নীরব হয়ে যাচ্ছে। তাদের দেখে লোকজনের আনাগোনা কমে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিকল্প পথে গাড়ি চলাচল। অপরাধীরা দ্রুতই ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার ধরাও পড়ছে।
যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে দখলদাররা তাদের দখলদারত্ব ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তবে নিরীহ লোকজন যৌথ বাহিনীর অভিযানকে স্বাগত জানাচ্ছে। কেউ আবার সেনাসদস্যদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলছেন। তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কিছু বিষয়ে অভিযোগ করছেন সরাসরি। সেই সব অভিযোগ লিখে রাখছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানী ঢাকার ৩ এলাকায় সরেজমিনে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
মিরপুর-১ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, যৌথ বাহিনীর তিনটি গাড়ি শাহ আলী প্লাজার সামনে এসেছে।
সেনাবাহিনীর গাড়িতে একজনকে হান্ডকাফ পরা অবস্থায় দেখা গেল। তার কাছে স্বল্প পরিমাণ গাঁজা পেয়েছে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীর তিনটি গাড়ি দেখে ঘিরে ধরেছেন পথচারীরা। লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়। সেনাসদস্যরা তাদের চলে যেতে জোরে ধমক দিলে মুহূর্তেই মানুষের ভিড় কমে যায়। চার সেনাসদস্যের হাতে লাঠি দেখা যায়। তারা ওই লাঠি দিয়ে সড়কে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যদিকে এক সেনাসদস্য ও এক পুলিশের সদস্য গাড়ির কাগজপত্র দেখছেন।
সোহেল নামে এক মোটরসাইকেলচালকের কাগজ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে তাকে মামলা দিল ট্রাফিক পুলিশ। আরেক মোটরসাইকেলচালককে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। জানা গেল তার নাম সুমন। কেন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তার হেলমেটটি ভাঙা। গলায় বাঁধানোর ফিতা নেই। এ জন্য তাকে দাঁড় করানো হয়েছে। তিনি বারবার যৌথ বাহিনীর সদস্যদের কাছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কাকুতি-মিনতি করছিলেন, কিন্তু তাকে ছাড়া হয়নি।
তাকে বলা হয় দেড় ঘণ্টা একস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে। তবেই তাকে ছাড়া হবে। এর আগে তাকে ছাড়া হবে না। এ ছাড়া যৌথ বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে যানবাহনের কাগজ পরীক্ষা করতে দেখা গেল। গাড়ির ভেতর কোনো মাদক বা বিস্ফোরক পণ্য আছে কি না, তা তন্নতন্ন করে খোঁজ করলেন।
যৌথ বাহিনীতে পুলিশের সদস্য এসআই নাজমুল জানান, বর্তমানে অপরাধের মাত্রা কমানোর জন্য অভিযান চলছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য মানুষের মন থেকে ভয় দূর করা। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি অপরাধীদের কাছে বার্তা দেওয়া যে, কোনো ধরনের অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না।
আরিফ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ৫ বছর আগে এক ব্যবসায়ীর কাছে তিনি ৩ লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি ফেরত দিচ্ছিলেন না। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা আসার পরেই ওই ব্যবসায়ী তার দোকান বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত অক্টোবর মাস থেকে একটি প্রভাবশালী দল তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা বিষয়টি যৌথ বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছেন। কারা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন তাদের নাম জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার এনবিআরের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেল, যৌথ বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি বুলডোজার দিয়ে সেগুলো ভাঙা হচ্ছে। আতঙ্কে ওই ফুটপাত থেকে তাদের দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যরা। পাশাপাশি ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে তল্লাশি চালাতে দেখা গেল। সাদা রঙের একটি গাড়িকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
জানা যায়, ওই প্রাইভেট কারের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও চালকের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। এ জন্য তাকে দাঁড় করানো হয়েছে। তাকে একটি মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেল। স্থানীয় এক পান দোকানি জানান, ফুটপাতে কিছু দোকান থাকার কারণে পথচারীদের হাঁটতে কষ্ট হয়। বিষয়টি যৌথ বাহিনীর নজরে দিয়েছিল তারা।
গত রবিবার রাতে খিলক্ষেত এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, খিলক্ষেত থানার একটু দূরেই যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীর ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড, ট্রাফিক পুলিশ এবং খিলক্ষেত থানার পুলিশকে ওই অভিযানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ওই সড়কে চলাচলকারী সব গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। একাধিক গাড়িকে মামলাও দেওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব গাড়ি বিমানবন্দরে যাচ্ছে এবং বিমানবন্দর দিয়ে আসছে সেই সব গাড়িতে বিশেষ করে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।