ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ছাত্ররাজনীতির রূপরেখা দরকার

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ছাত্ররাজনীতির রূপরেখা দরকার
রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ফাইল ফটো

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় একটি অংশ ছাত্ররাজনীতি বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তবে এই দাবি বাস্তবায়নে এখনো কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাধারণ শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠনগুলোর নানা ইস্যুতে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হল প্রশাসন, কার্যকর ছাত্রসংসদ এবং সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ধারা বন্ধ হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে দীর্ঘমেয়াদে শৃঙ্খলা ফিরবে। তবে ছাত্ররাজনীতি একেবারে বন্ধের পক্ষের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। 

ছাত্ররাজনীতির কাঠামো বা রূপরেখা তৈরির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় গত মাসে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আমরা এক দফা বসেছি। শিগগিরই আবার বসব। আমরা ধাপে ধাপে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করব। একটি কমিটি গঠনের বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। সেই কমিটি পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের পরামর্শ দেবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি করার জন্য।’

অপরদিকে ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে বিশৃঙ্খলার সমাধান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি থাকবে। তবে এটাকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে হল প্রশাসনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে হবে। কার্যকর ছাত্রসংসদ থাকতে হবে। ফলে দুই পক্ষই একটা মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকবে। অনিয়মের সুযোগ কম থাকবে। আবাসিক সিট নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে রাজনীতি করানো যাবে না। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা বুঝে-শুনে রাজনীতি করবে। ছাত্ররাজনীতি থাকলেও প্রতিপত্তিমূলক প্রভাব কমে আসবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।’

জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করে ছাত্রলীগ। একপর্যায়ে ১৬ জুলাই মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। একই অবস্থা হয় রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৭ জুলাই ভোরে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ৫ হল, পরে ছাত্রদের হলগুলোতেও দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে নোটিশ দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে এসব নোটিশে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন তৎকালীন হল প্রাধ্যক্ষরা। একই সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সিট বরাদ্দ এবং গণরুম (এক কক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীর থাকার ব্যবস্থা), গেস্টরুম (ছাত্র নেতাদের কাছে জবাবদিহি) সংস্কৃতি বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে নোটিশ দেওয়ার দিনই সিন্ডিকেট আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে। সরকারও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ছুটি ঘোষণা করে। দেশব্যাপী আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষাঙ্গনে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা নিয়ে পদত্যাগ, বহিষ্কার ও হেনস্তার ঘটনা ঘটে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসে। 

আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গা-ঢাকা দেন। এ সময় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা সংগঠনগুলো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। দেশের একাধিক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রশিবির। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই আবাসিক হলগুলোকে রাজনীতিমুক্ত রাখার পক্ষে। ফলে ছাত্রলীগ-পরবর্তী ক্যাম্পাসে অন্য সংগঠনগুলোও শিক্ষার্থীদের মেজাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সতর্কভাবে কর্মসূচি পালন করছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ছাত্রদল হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। মধুর ক্যান্টিন-কেন্দ্রিক দলীয় ফরমও বিতরণ করেছে। তবে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ছাত্রদল ক্যাম্পাসজুড়ে পোস্টারিং করে। এরপরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। ৫টি আবাসিক হলে পোস্টারিং নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিবির আর ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়। আবার ছাত্রশিবিরও বিভিন্ন ইস্যুতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হলে অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে ছাত্রশিবিরও তাদের কমিটি প্রকাশ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা লিফলেট বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা।

পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসগুলোতে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। বিভিন্ন বাম ছাত্রসংগঠনও ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। তবে সংগঠনগুলো কৌশলী ভূমিকা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারার ছাত্ররাজনীতির সংস্কার দরকার। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর তিন মাস পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ভার্চু্য়ালি পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে নানা বিষয় সামনে আসছে।

সিটের বিনিময়ে বাধ্যতামূলক রাজনীতি থেকে মুক্তি চান শিক্ষার্থীরা

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসনসংকট এখনো চরম। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই। প্রতিটা হলে আসনসংকট থাকায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো হলের কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উঠিয়ে থাকে। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়ে হলে থাকায় তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। না গেলে নেমে আসে নির্যাতন। ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এই সংস্কৃতি থেকে মুক্তিলাভ করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। একাধিক হলে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করেছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। বৈধভাবে সিট পাওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। এই ধারায় আর ছেদ ঘটুক, চাচ্ছেন না তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা যখন প্রথম বর্ষে আসি, তখন আমাদের পুরো বছর বাধ্যতামূলকভাবে প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়েছে, যা আমাদের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু এবার সবাই বৈধভাবে সিট পেয়েছেন। সবাই নিজেকে স্বাধীন ভাবছেন। হলে রাজনীতির মাধ্যমে আবার সেটি ফিরে আসুক আমরা তা চাই না।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির খবরের কাগজকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হয়েছে। এটা গণআকাঙ্ক্ষার ফল। এখন একুশ শতক উপযোগী মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বিনির্মাণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ চলমান। আমরা হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। সেখানে শিক্ষার্থীরা যে আউটলাইন দিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা মনে করছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের রাজনৈতিক অংশীদার হবেন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরাও আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশীদার হবেন। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও গোপন রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্তরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চান। তাদের এক ধরনের মনোবাসনা রয়েছে। আমরা মনে করছি, শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আমাদের রাজনৈতিক রূপরেখা উপস্থাপন করব।’

গতি ফিরছে প্রশাসনে

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম
গতি ফিরছে প্রশাসনে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস পর এখন প্রশাসনে গতি ফিরতে শুরু করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইন অনুযায়ী কর্মসম্পাদনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে অধস্তনদের অনেকেই এখনো নির্ভার হতে পারছেন না। সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। সাবেক সরকারের ‘অপকর্মের’ সহযোগী শীর্ষ কর্তাদের অনেককেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। গত সরকারের শেষ সময়ে মাঠ প্রশাসনে জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের উঠিয়ে এনে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। তা ছাড়া সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কিছু কর্মকর্তার দপ্তর বদল করা হয়েছে।

এদিকে গত সরকারের আমলে বঞ্চিত অনেক কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। এক পক্ষ পদোন্নতি পাওয়ায় অন্য পক্ষে অসন্তোষ রয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের নীরবতা রয়েছে, চেনাজানা অনেকেই এখন আর খোলামেলা কথাবার্তা বলছেন না। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এদিন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রশাসনে কাজের গতি ফেরানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে সরকারের নীতি বা কর্মপদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে সারা দেশে প্রশাসন স্থবিরতা শুরু হয়। সেই সময়ে প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়কে ঘিরে শুরু হয় নানা পক্ষের দাবি-দাওয়া ও দাবি আদায়ের আন্দোলন। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও এবং অবরুদ্ধ কর্মসূচিও পালন করেন। দাবি আদায়ে অসহিষ্ণু আচরণ করায় গ্রেপ্তার হয়েছেন শতাধিক বিক্ষুব্ধ কর্মচারীসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এখন ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসের কার্যক্রমসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়ে (আগস্ট-অক্টোবর) সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১২ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৫, যুগ্ম সচিব পদে ২২৬, উপসচিব পদে ১২৫, অন্যান্য ক্যাডারে ২২১ এবং নন-ক্যাডারে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৯ জন ও সহকারী সচিব পদে ৩৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ৪৩ জন, গ্রেড-১ পদে ১১, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৭, যুগ্ম সচিব পদে ১৭৩, উপসচিব পদে ৩৯১, বিভাগীয় কমিশনার পদে ৪ এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদে ৩ জনকে বদলি করা হয়েছে। তা ছাড়া ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি, ১১৮ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ১৬৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব পদে ৪১৪ জন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার পদে ৮৩ জনসহ মোট ১ হাজার ৮৭০ জনের দপ্তর বদল করার পাশাপাশি ৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর, সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব পর্যায় পর্যন্ত ৮০ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি এবং ১০১ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন।

তবে প্রশাসনের বর্তমান স্থবিরতা নিয়ে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা-সমালোচনা থেমে নেই। আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসছে সাবেক সরকারের মদদপুষ্ট প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার দুষ্কর্ম। 

এদিকে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রশাসনে যেকোনো ধরনের বিভক্তি ও রেষারেশি বাড়লে নোংরা রাজনীতি শুরু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, সম্প্রতি একটি সরকারের হঠাৎ পরিবর্তনে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই একটা অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা, আতঙ্ক কাজ করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের গতি কম হবে। কারণ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় কাজের পরিবেশেরও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বভাবতই গত সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা বুঝতে কিছুটা সময় নিচ্ছে প্রশাসন। এ কারণে এই বিভাগে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এখন নেই। কিন্তু স্বাভাবিক রুটিন কাজে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে না। তাই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে প্রশাসনের কর্মকাণ্ড।

সংলাপকে সফল দেখছে সব পক্ষ

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ এএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ পিএম
সংলাপকে সফল দেখছে সব পক্ষ
প্রতীকী ছবি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপকে সফল মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে গত সোমবার হামলা করেন দেশটির হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনার পর সারা দেশের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন ধর্মের ৩২ জন প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপে বসেন।

বুধ ও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংলাপের উদ্দেশ্য ও সফলতা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে এই সংলাপ শতভাগ সফল হয়েছে। আর সংলাপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মতে, ৫ আগস্টের পর সংলাপের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে মেসেজ দেওয়া গেছে যে ছাত্র-জনতার ঐক্যে কোনো যড়যন্ত্র করে চিড় ধরানো যাবে না। প্রতিবেশী ভারতের আগ্রাসন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অনমনীয় জাতীয় ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের সংলাপে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে মৌলিকে সংস্কারের পর দ্রুত নির্বাচনের তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কয়েকজন শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) খবরের কাগজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষ ও বহির্বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হয়েছে- স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করবে না বাংলাদেশ। ভারতীয় আগ্রাসন ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রত্যেক নাগরিক আজ ঐক্যবদ্ধ। ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিজমের পুনরুত্থানের কোনো ধরনের অপতৎপরতা সফল হতে দেবে না। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে আগ্রসর হতে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পেক্ষাপটসহ নানা সংকটের কারণে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি সেই জাতীয় ঐক্যে সমর্থন জানিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। কারণ দেশের জনগণ নির্বাচনমুখী হলে দ্রুতই যড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এই সরকার ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। যারা জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং রাজনীতিতে বৈষম্য দূর করে গণতান্ত্রিক ধারা প্রবর্তন করবে।

নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে নাগাদ পেতে পারেন সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কিছু বলেছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সংলাপে আমরা আমাদের অভিমত দিয়েছি। সরকার কী করবে, কীভাবে বিবেচনায় নিয়েছে তা এখনই বলা যাবে না। আমরা সরকারের নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার অপেক্ষা আছি। রোডম্যাপের জন্য আমরা আরও কিছু দিন অপেক্ষা করব।’

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই সংলাপের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের কাছে মেসেজ দিতে পেরেছি- গত ৫ আগস্টের পর ছাত্র ও জনতার ঐক্যের ভিত্তিতে দেশ চলছে। এখানে কোনো বিভেদ-বিভাজন নেই। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এখানে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে লাভ হবে না। এই শক্ত মেসেজটাই বিশ্ববাসীর কাছে দিতে সক্ষম হয়েছি।’ 

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি নানা শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া এ সময়ে দেশি ও বিদেশি নানা শক্তি ছাত্র-জনতার ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে আসছে বলেও অভিযোগ।

প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবারের সংলাপ এটাই প্রমাণ করেছে যে, সব সক্রিয় রাজনৈতিক দল জাতীয় ইস্যুতে আক্ষরিক অর্থেই প্রধান উপদেষ্টার পাশে দাঁড়িয়েছে। এবারে আরও প্রমাণ হয়েছে, যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা জাতীয়ভাবে ঐক‍্যবদ্ধ। সংলাপ সফল হয়েছে।’

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা গণ-অভ্যুত্থানে দেশছাড়া হওয়ার পর ৮ আগস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। চার মাসের মাথায় এসে সরকার নানা সংকটে পড়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা বেকায়দায় সরকার। প্রথম থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার জাতীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। বিরাজমান সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বুধবার রাজনৈতিক দল এবং বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে এবারের সংলাপে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো দলই আমন্ত্রণ পায়নি। আমন্ত্রণ পেয়েও তালিকায় নাম না থাকায় সংলাপে অংশ নিতে পারেননি এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল অলি বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের দালাল হিসেবে আমরা কাউকে কাজ করতে দেব না। আমরা ভারতের বিপক্ষে না, যারা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তবে বাংলাদেশ নিয়ে কেউ মিথ্যাচার করলে কাউকে ছাড় দেব না।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাব বা পরামর্শ উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো- বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাসে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের সরিয়ে বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়া, গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ করা এবং স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করা; বাংলাদেশ ডে অথবা জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী সংহতি দিবস হিসেবে একদিন পতাকা হাতে পালন করা, জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন গঠন, আন্তর্জাতিক মহলের প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাবলিক রিলেশন সেল গঠন করা এবং বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে প্রকাশ করা, জাতীয় নিরাপত্তা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের সমঝোতা দলিল প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করাসহ আরও কয়েকটি প্রস্তাব। সংলাপে উঠে আসা এসব প্রস্তাবের বিষয়ে পদক্ষেপ বা প্ল্যানের ঘোষণা দু-এক দিনের মধ্যে আসতে পারে।

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংলাপে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবাই পরামর্শ দিয়েছি। কারণ প্রস্তাব দিলে সবাই মিলে লিখিত আকারে দেওয়া হতো। কিন্তু এসব পরামর্শ সরকার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে কি না এটা তাদের বিষয়। সংলাপে সবাই ভারতের আগ্রাসন এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।’ 

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক শ্রেণি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়াতে চেয়েছে এই অঞ্চলে। বাংলাদেশকে তারা একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করতে চেয়েছিল, সেই অভিলাষ তাদের পূরণ হয়নি। ভারতের আগ্রাসন মোকাবিলার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সব সংকট দ্রুত সমাধান করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। এটাই এই সংলাপের সফলতা। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ খবরের কাগজকে বলেন, সংলাপে ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্যে দেশের সংখ্যালঘুদের আসল চিত্র ফুটে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জুলুম-নির্যাতন নিয়ে ভারতের মিথ্যাচার বন্ধ হবে। জাতীয় ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল এক জায়গায় জড়ো হয়েছে- এটা ইতিবাচক।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমত জাতীয় ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েছে এটা বড় সফলতা। দ্বিতীয়ত, সাধারণত সরকারের ডাকে আগে কখনো একসঙ্গে সবা দল সংলাপে অংশ নেয়নি। দেশের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এক- এটা বহির্বিশ্বকে দেখাতে পেরেছি। এটা ইতিবাচক দিক।’

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বরফ গলানোই হবে মূল লক্ষ্য

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বরফ গলানোই হবে মূল লক্ষ্য
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের মধ্যে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে সম্পর্কের এই জটিল সমীকরণের মধ্যেই আগামী ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় শুরু হচ্ছে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠক। বৈঠকটি নিয়মিত বলা হলেও উভয় দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, কূটনীতিকরা মনে করছেন এই বৈঠকই হবে এ মুহূর্তে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের বরফ গলানোর টার্নিং পয়েন্ট। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। 

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র খবরের কাগজকে জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এবারের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্পর্কের বরফ গলানোই হবে বাংলাদেশের মূল টার্গেট। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে অর্থাৎ ৫ আগস্টের পর দুই দেশের মধ্যে যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হবে। পাশাপাশি এই ভুল-বোঝাবুঝির কারণে যেসব বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ ও ক্ষোভ রয়েছে, তা ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সামনে বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। পারস্পরিক সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আগ্রহ ও উদ্যোগের বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে। জানানো হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সরকার সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে আগ্রহী। গত কয়েক মাসে দিল্লির পক্ষ থেকে যেসব উদ্বেগ রয়েছে, তা নিরসনে আশ্বস্ত করা হবে। 

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এবারের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে যে জট লেগেছে তা উভয় দেশে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। উভয় দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা বেড়েছে। এ কারণে সম্পর্কের এই জট খুলতে বা বরফ গলাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাবে সেই চেষ্টা সফল হয়নি বরং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক ও উসকানিমূলক প্রচার সরকারি পর্যায়ে সংকট নিরসনে উদ্যোগের পরিবেশ সৃষ্টিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। অবশেষে সব বাধা পেছনে ফেলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়ন, সীমান্তহত্যা বন্ধ, চোরাচালান প্রতিরোধ, বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানায় সূত্র। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। বৈঠকে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন। 

পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকটি ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে সেটি ভারতকে মেনে নিতে হবে। এই বাস্তবতায় তিক্ততা না বাড়িয়ে কীভাবে লাভবান হতে পারে উভয় দেশ সেদিকে নজর দিতে হবে। দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা যত বাড়বে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তত উপেক্ষিত হবে এবং তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হিন্দু উগ্রপন্থিরা হামলা করেছে, যার প্রভাব সম্পর্কের ক্ষেত্রে পড়েছে। অথচ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে দুই দেশই যে লাভবান হবে, এই বিষয়টি অবশেষে বুঝতে পারায় বৈঠকে সম্মতি জানিয়েছে উভয় পক্ষ। এটাই প্রাথমিক অগ্রগতি। এরপর দুই দেশ বৈঠকে বসলে উভয়ের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবে দুই দেশ। 

ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এবারের বৈঠককে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের যে বৈঠক হতে যাচ্ছে তাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমতে পারে। উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের আলোচনা আরও চলতে থাকলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আরেকটি বিষয়, ভারত যদি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট মেনে নিয়ে বৈঠকে যোগ দেয় তাহলে সম্পর্কে গতিসঞ্চার হবে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে চলমান টানাপোড়েন নিরসনে আসন্ন পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ঢাকা ও দিল্লির পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সম্পর্ক ভালো থাকলে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে। বাইরে থেকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও উসকানিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এখন এসব বাদ দিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসায় উভয় দেশের লাভ হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই বৈঠকটি অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। এ ধরনের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তেজনা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে বৈঠকে ভারসাম্য বজায় রেখে আলোচনা হতে হবে, না হলে শুধু একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে কী হয়, তা আমরা দেখেছি।’ দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য পর্যায়েও দ্রুত এ ধরনের আলোচনা শুরু করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সয়াবিন তেল উধাও!

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম
সয়াবিন তেল উধাও!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ডিলাররা বোতলের সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না। তাই বিক্রি করতে পারছি না। কবে পাব তাও জানি না। দাম বাড়ানোর জন্যই পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’ বাজার থেকে তেল উধাও হওয়ায় এভাবেই হতাশার কথা জানান মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজারের মুদি ব্যবসায়ী খোকন স্টোরের স্বত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীর।

কারওয়ান বাজারের শাহপরান স্টোরের শাহজাহান আলীও হতাশা প্রকাশ করে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ডিলাররা বোতলজাত তেল না দিলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব? অন্য বাজারেও একই অবস্থা। ডিলাররা বলছেন, মিল থেকে দিচ্ছে না। তাই সংকট তৈরি হয়েছে। মিলাররা বলছেন, দেওয়া হচ্ছে কিন্তু পরিমাণে কম।’

এদিকে বাজারে নতুন আলু উঠলেও দাম কমেনি। ১১০-১২০ টাকার কমে মিলছে না। পুরোনো আলুও ৮০ টাকা কেজি। শুল্ক প্রত্যাহার ও আমন ধান উঠলেও কমেনি চালের দাম। নির্ধারিত দরেও মেলে না ডিম, মুরগি। সবজির দাম ধীরে ধীরে কমছে। সবজি ৫০-৮০ টাকার ঘরে। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, হাতিরপুল বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হঠাৎ করে তেলের সংকট কেন? জানতে চাইলে মেঘনা গ্রপের মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা তেল দিচ্ছি। অন্যরা কে কী করছে জানি না।’ কিন্তু আপনাদের ডিলাররাও তো পাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চাহিদার তো শেষ নেই। তাই হয়তো কারও কারও কাছে মনে হচ্ছে কম পাওয়া যাচ্ছে।’

দাম বাড়ানোর জন্যই কি এভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বৃহস্পতিবার (গতকাল) মিটিং হয়েছে। তারা মূল্য সংশোধনের ব্যাপারে প্রক্রিয়া যাচাই করছে। চূড়ান্ত হলে সেটা আমাদের জানানো হবে।’ সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। 

১ ও ২ লিটারের তেলের বোতল উধাও
গত সপ্তাহে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকায় ও পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ডিলাররা তেল দিচ্ছেন না। এ জন্য বিক্রি করতে পারছি না। তাদের কথা শুনে কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন পাইকারি দোকানি বলেন, মিল থেকে তেল দিচ্ছে না; যা দিচ্ছে তা খুবই সামান্য। এ ব্যাপারে সোনালি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। হাত বুকে নিয়ে বসে আছি। কারণ মাল (তেল) নেই। তীরের তেল নেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া আছে এক সপ্তাহ ধরে, তাও তেল পাচ্ছি না। গতকালও ডিলাররা তেল দেব-দিচ্ছি করেছেন কিন্তু দেননি। এ জন্য বিক্রি করতে পারছি না। তবে তীরের ক্যানোলা পাঁচ লিটার তেলের এমআরপি ৮৮০ টাকা। বেশি দামের কারণে অনেকেই এটা নেয় না।’

মেঘনা কোম্পানির ডিলার মেসার্স জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি থেকে মাল দিচ্ছে না। দিনে চাহিদা ১০০ কার্টন। আগে সেভাবেই বিক্রি হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার ৮০ কার্টন তেল পেয়েছি। এক কার্টনে থাকে ২০ লিটার তেল। এটা পাওয়া না পাওয়া সমান কথা। এভাবে ব্যবসা করা যায় না।’ সিটি গ্রুপের ডিলার এটিএন এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী সেলিম রায়হানও তেল না থাকার তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘তেল কিছু পাচ্ছি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই কম। তাই বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। তিন-চার দিনে এক গাড়ি তেল লাগে। পাওয়া যাচ্ছে ৮০ কার্টন। এ জন্য সবাই পাচ্ছে না।’

কমেনি চালের দাম
অন্তর্বর্তী সরকার চালের দাম কমাতে গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কমেনি দাম। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি মার্কেটের আজান এন্টারপ্রাইজের মনির হোসেন, কারওয়ান বাজারের হাজি এন্টারপ্রাইজের হাজি মো. মাঈনুদ্দিন, টাউন হল বাজারের চাল বিক্রেতা আবদুল মান্নানসহ অন্য চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘আমদানি করা চালের দাম বেশি পড়ে। তাই শুল্ক কমলেও বাইরের চাল দেশে আসে না। আবার নতুন ধান উঠলেও পর্যাপ্ত চাল আসেনি বাজারে। এ জন্য দাম কমে না। আগের মতোই বেশি দাম চালের। মিনিকেট ৭২-৭৬ টাকা, আটাশ চাল ৬০-৬২ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে ৫০ কেজির বস্তা কিনলে দাম একটু কম পড়ে। 

চড়া দামেই আলু বিক্রি
আগের সপ্তাহের মতো গতকালও বেশি দামে আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে খুচরা বিক্রেতাদের। তারা নতুন আলু ১১০-১২০ ও পুরোনো আলু ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেন। অথচ এই আলুর দাম কমাতে সরকার শুল্ক অর্ধেক কমিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার পরও কমছে না দাম। 

তবে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। ভারতের পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এর প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও সপ্তাহে ১০ টাকা কমে ১২০-১৩০ টাকায় নেমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। বিদেশি রসুন ২৬০ টাকা, দেশিটা ২৪০ টাকা এবং দেশি আদার কেজি ১৬০ ও চায়না আদা ২৬০ টাকা । 

কমছে সবজির দাম
সবজি বিক্রেতারা বলেন, প্রতি সপ্তাহে বেগুন, টমেটো, শিমসহ অধিকাংশ সবজির দাম কমছে। ফলে বেগুন ও শিমের কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে। টমেটোর দামও কমে ১৪০-১৬০ টাকায় নেমেছে। কাঁচা মরিচও ১০০-১২০ টাকা কেজি হয়েছে। বরবটি, কচুরলতি ৭০-৮০ টাকা কেজি। ঝিঙ্গা ও কচুরমুখী ৭০ টাকা, পটোল ৬০-৭০, ধুন্দুল ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৬০-৮০ টাকা। তবে কমে না পেঁপের দাম। আগের মতোই ৪০-৫০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা। কপি, লাউ, চালকুমড়ার পিসও ৪০-৬০ টাকার ঘরে। শাকের দামও কমছে। পুঁইশাক ও লাউয়ের ডগার আঁটি ৩০ টাকা, লাল, পালং, কলমি ও পাটশাক ১০-১৫ টাকা আঁটি বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

বেশি দামে মুরগি বিক্রি 
সরকার ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ ও সোনালি মুরগির দাম ২৭০ টাকা বেঁধে দিয়েছে। তার পরও গতকাল আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ ও সোনালি মুরগি ৩০০-৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কৃষি মার্কেটের পদ্মা ব্রয়লার হাউসের শাহিন করিম ও কারওয়ান বাজারের ভাই ভাই মুরগি হাউসের বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মোকামে বেশি দাম। তাই আমরাও আগের মতো ১৮০ টাকা ব্রয়লার ও ৩০০-৩১০ টাকা কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি করছি।’ গরুর মাংসও আগের মতো ৭০০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি। ডিমের দাম ১৪২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও ১৪০-১৫০ টাকা ডজন দামে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। 

কমেনি মাছের দাম 
নদী-খাল-বিলের পানি কমলেও অন্য পণ্যের মতো মাছের দামও কমছে না। মাছ বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই রুই-কাতলার কেজি ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কাজলি ১ হাজার টাকা, মলা ৫০০, ট্যাংরা ৫০০-৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি ২০০-২৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি। ইলিশের কেজি ২ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও জাটকা ১ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সম্পদের কমতি নেই সাবেক এমপি কমলের

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ এএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
সম্পদের কমতি নেই সাবেক এমপি কমলের
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। ছবি: খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জমি দখল, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, গরু-মাদক চোরাচালান কী করেননি তিনি! গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। দুবাইতে একাধিক গাড়ির শো-রুমের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলিয়ে কমলের রয়েছে ২০টির বেশি ফ্ল্যাট, একাধিক বাড়ি ও প্লট। এসব করার জন্য নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। ছিল টর্চার সেল। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব ধরে রাখতে তিনি ডাকাত বাহিনীকেও পালতেন। এলাকায় তার কথাই ছিল আইন। পুলিশও যার আঙুলের ইশারায় চলত। তিনি হলেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল।

২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন দলের একজন হুইপ হিসেবে মনোনীত হন। এমপি থাকা অবস্থায় তিনি এসব অপকর্ম করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কমল আত্মগোপনে চলে যান। এলাকায় তার আর কোনো ক্ষমতা নেই। তবে থেমে নেই তার অপরাধমূলক তৎপরতা। তার অনুগত লোকজন এখনো এসব তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

কমলের উত্থান যেভাবে

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্পাদক পর্যায়ের (প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন) এক নেতার সাহায্য নিয়ে কারসাজি করে মোস্তাকের মনোনয়ন বাতিলের ক্ষেত্র তৈরি করেন কমল। তখন ওই কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সুপারিশ করে কমলকে নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তবে নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনের ভোটাররা কমলের বিরুদ্ধে রায় দেন। লজ্জাজনক হার হয় তার। নিজের এলাকা রামুতেও অনেক কম ভোট পেয়েছিলেন কমল। ওই নির্বাচনে এমপি হন বিএনপি নেতা লুৎফুর রহমান কাজল।

কিন্তু তাতে হতোদ্যম হননি কমল। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী কানিজ মোস্তাক। এই নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ওই নেতার সাহায্যে কানিজের মনোনয়ন বাতিল করে নৌকা মার্কা বাগিয়ে নেন কমল। অনেকটা একতরফা নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নিজের বলয় তৈরি করে কক্সবাজারজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় নৈরাজ্য, জমি দখল, বিচারের নামে চাঁদাবাজি, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মারধর-হুমকি প্রদর্শন, মায়ানমার সীমান্তে গরু-মাদক চোরাচালান ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশও তার কথামতো চলত। বলতে গেলে এলাকায় তার কথাই ছিল আইন। রামু উপজেলার মণ্ডলপাড়ায় নিজের বাসভবনের দ্বিতীয় তলায় তৈরি করেন টর্চার সেল। সেই সেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে শায়েস্তা করা হতো। মতের বাইরে গেলেই ধরে নিয়ে টর্চার সেলে করা হতো অমানুষিক নির্যাতন। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে বিরোধীদলের লোকজনদের পাশাপাশি নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরও অত্যাচার, নিপীড়ন করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ওই নেতার প্রশ্রয়ে কমল এতসব অপকর্ম করার সাহস পেয়েছিলেন।

বেড়েছে সম্পদ, করেছেন অর্থ পাচার

টিআর/কাবিখা/কাবিটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন কমল। কক্সবাজারের পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন কমলের দুই শ্যালক। তার গাড়ির যত ব্যবসা রয়েছে সবই তার শ্যালকরা দেখাশোনা করতেন। চোরাচালান-চাঁদাবাজি ও মাদকের মতো অবৈধ ব্যবসার বিপুল অর্থ কমল যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রবাসী বোনের কাছে পাচার করতেন বলে জানা গেছে। তিনবারের এমপি কমলের অবৈধ অর্থের বড় অংশ দুবাইতে পাচার করেছেন। দুবাইতে কমলের একাধিক গাড়ির শো-রুম থাকার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলিয়ে কমলের রয়েছে ২০টির বেশি ফ্ল্যাট, একাধিক বাড়ি ও প্লট। 

নির্বাচনি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কমলের বার্ষিক আয়, নগদ টাকা, ব্যাংকের জমা করা অর্থ, বিনিয়োগসহ অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। পাশাপাশি তার স্ত্রীও জমি, গাড়িসহ বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩ টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় (২০২৪) সালে তা হয়েছে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার ২৮ টাকা। সে হিসেবে পাঁচ বছরে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সম্পদ বেড়েছে ১ দশমিক ৭৬ গুণ। ২০১৮ সালে তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৩ টাকা। ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার ১৩৪ টাকা। পাঁচ বছরে বেড়েছে ২ দশমিক ২৯ গুণ।

২০২৪ সালে নির্বাচনের সময় কমলের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ১৫ হাজার ২৮৮ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৪৬৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর বার্ষিক কোনো আয় না থাকলেও এবার দেখানো হয় ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৫ টাকা। এদিকে কমলের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮০ টাকা দেখানো হয়। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৫৬ হাজার ৯১৯ টাকার সম্পদ। পাঁচ বছর আগে কমলের ১ কোটি ২১ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ টাকার স্থাবর সম্পদ ছিল। বর্তমানে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৯৬০ টাকার। পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পদ না থাকলেও এখন রয়েছে ৩০ লাখ ৭৫০ টাকার সম্পদ।

কক্সবাজারজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কমলের ডাকাত বাহিনীর

কমলের এলাকা রামু পাশেই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। এই দুই উপজেলার বিভিন্ন অংশে মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। এসব অংশ দিয়ে অবৈধ পথে আসে বিষাক্ত মাদক ইয়াবা, গরু-মহিষ, সিগারেট, স্বর্ণসহ নানা পণ্য। এসব অবৈধ চোরাচালানের জন্য গড়ে ওঠে বিশাল সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সাবেক এমপি কমল। সে সময় তার হাতের লাঠি হয়ে ওঠেন চিহ্নিত ও আলোচিত ডাকাত সরদার ‘শাহীন’।

২০১৭ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে স্থানীয় শিবাতলী পাহাড়ের গোপন আস্তানা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কক্সবাজারের শীর্ষ ডাকাত শাহীনুল ইসলাম ওরফে শাহীন ডাকাত। প্রায় তিন বছর কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। প্রতি রাতে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পুরো পূর্বাঞ্চলে কায়েম করতেন ত্রাসের রাজত্ব। তার ইচ্ছার ওপর চলত রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির ৬ ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষ। ১২ মামলার আসামি শাহীন ডাকাতের মূল শক্তি ছিলেন সাইমুম সরওয়ার কমল। শাহীনকে প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করতেন স্থানীয় সাবেক এই এমপি।

কমলের নির্দেশে শাহীন প্রথমে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন, দোছড়ি, লেবুছড়ি এবং বাইশারি ইউনিয়ন, রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড় এলাকার অর্ধলাখ মানুষকে জিম্মি করেন। মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ববোমাংখিল, জাউসপাড়া, মাঝিরকাটায় সন্ধ্যা হলেই সশস্ত্র মহড়া দিতেন শাহীন গ্রুপের সদস্যরা। মাঝে মাঝে ফাঁকা গুলি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন সুজন, শাহজালাল ওরফে লালা, শফিউল আলম ওরফে লেদা পুতু ডাকাত, তারেক জিয়া, মোহাম্মদ আরাফাত, শোয়াইব, বদরু ডাকাত, নুরুল আমিন ওরফে রোহিঙ্গা আমিনসহ অর্ধশতাধিক ডাকাত সদস্য। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় জেলার বিভিন্ন স্থানের পলাতক অপরাধীরা। শাহীনের নেতৃত্বেই ঈদগড় বাইশারী সড়ক, নাইক্ষ্যংছড়ি, গর্জনিয়ায় নিয়মিত ডাকাতি হতো।

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাবুল, নুরুল আলম মেম্বার, ফিরোজ আহমদ মেম্বার, মহিউদ্দিন মেম্বার, গর্জনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হাফেজ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক শাহরান চৌধুরী মারুফ, সিনিয়র সহসভাপতি জিয়াউল হক জিয়াসহ আরও অনেক জনপ্রতিনিধি ও নেতা কমলের পাশাপাশি ডাকাতি করা টাকা-পয়সা ও জিনিসের ভাগ পেতেন। 

গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনি আলম মেম্বার, ‘শাহীন ডাকাত অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বাগান দখল করতেন এবং রাতে মানুষের বাড়ি থেকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে যেতেন। ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতেন না।’

আপন ভাইয়ের সঙ্গে দা-কুমড়া সম্পর্ক

ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক এমপি কমলের সঙ্গে তার আপন বড় ভাই রামু উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজলের দা-কুমড়া  সম্পর্ক তৈরি হয়। রামু উপজেলা নির্বাচনের সময় ভাই সোহেলকে নির্বাচনে হারাতে সবব্যবস্থাই করেন এমপি কমল। ২০১৯ সালে ওই অঞ্চলের রাজনীতিতে দুই ভাইয়ের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়। সে সময় রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, কমল সরকারদলীয় একজন এমপি হয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। হত্যা মামলার আসামিকে সঙ্গে নিয়ে চলার অভিযোগও করেন।

শতকোটি টাকার জমি দখল

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে জোয়ারিয়ানালা মহাসড়কের পাশে বর্তমানে স্বপ্নতরী পার্কের দক্ষিণ পাশের ধলিরছড়া মৌজার ৩০ একরের বেশি জায়গা দখলে নেন সাবেক এমপি কমল। এরপর দখল করা জায়গায় ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। দখলের ১৫ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত ওই জায়গায় কোনো ক্রীড়া কলেজ গড়ে ওঠেনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দখল করা বিশাল জায়গার একপাশে চার কক্ষবিশিষ্ট টিনশেডের একটি ভবন রয়েছে। যেটি এমপির প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ দিয়ে নির্মিত। এ ছাড়া জায়গার চারপাশে নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে সরকারি সোলার লাইট। নির্মিত ভবনের একটি কক্ষে আদর্শগ্রাম এলাকার এনামুল নামে এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। দখলে রাখা জায়গা দেখভালের জন্য কমল তাদের পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানান এনামুল। 

জমিটি দখলের আগে সেখানে সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার গাছে সবুজের সমারোহ ছিল। মাঝখানে বিশাল খোলা মাঠ এবং মাঠের চারপাশে ছিল ছোটবড় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষে অনবদ্য একটি দর্শনীয় স্পট। রশীদ নগর-জোয়ারিয়ানালা তথা রামুর মানুষজন কোলাহলমুক্ত পরিবেশ ও একটু প্রশান্তি পেতে ছুটে যেত এই স্থানে।

এ ছাড়া স্থানীয়দের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সংগঠনের মিলনমেলা ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে মানুষের সরব পদচারণ ছিল এ জায়গায়। অপূর্ব ছায়াঘেরা ও সবুজবেষ্টিত মহামূল্যবান সমতল পাহাড় শ্রেণির এই জায়গার ওপরই লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কমলের। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমিটি দখল করে সেখানে নামসর্বস্ব ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চার হাজারের বেশি গাছ কেটে প্রায় ১৫ একর মতো জায়গা খোলা মাঠ ও সমতল ভূমিতে রূপান্তর করেন। পরে দখল পাকাপোক্ত করতে ওই জায়গায় একটি ৪ কক্ষের টিনশেড ভবন নির্মাণ করেন। এ জায়গার পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে প্রায় ২০ একরের মতো জায়গা দখল করে খণ্ড খণ্ডভাবে প্লট আকারে বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
এলাকাবাসী জানান, সাবেক এমপি ও হুইপ কমলের অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভূমিদস্যুতাসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। দলবল সহকারে প্রকাশ্যে রশীদনগরে দখল করে নিয়েছেন শতকোটি টাকার সরকারি জায়গা। পাশাপাশি তার সাঙ্গপাঙ্গদেরও ভূমিদস্যুতায় পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এমনকি রামুতে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে একজন বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে সংবাদের শিরোনামও হন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কক্সবাজারের ত্রাস কমলের দুঃশাসনের অবসান ঘটে। তবে কমল আত্মগোপনে থাকলেও অপরাধ সাম্রাজ্য ধরে রেখেছেন তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা।