মাহবুবউল আলম হানিফ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং টানা তিন বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আর এই তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত চার জেলায় অনুসন্ধানে তার সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানা গেছে। মূলত রাজনীতির আড়ালে অর্থ আয় করা ছিল তার নেশা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন মাহবুবউল আলম হানিফ। তার দোসররাও পালিয়ে গেছে।
এদিকে হানিফের ক্ষমতাকে পুঁজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার বাড়ির কেয়ারটেকারের দায়িত্বে থাকা চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। মাত্র কয়েক বছরেই নিজের আখের গুছিয়েছেন তিনি। অল্পদিনেই হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। হাট ঘাট বা টেন্ডারবাজি সব ছিল তার দখলে। আতার ইশারা ছাড়া যেন কুষ্টিয়ার কোনো গাছের পাতাও নড়ত না। যার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী এবং দুর্দিনের কান্ডারিরা হয়ে পড়েন একঘরে। সরকার পতনের পর থেকে আতাও আত্মগোপনে চলে যান।
হানিফের উত্থান যেভাবে
মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম শেখ পরিবারের জামাই। সেই সূত্র ধরেই হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন পান তিনি। তবে পরাজিত হন। এরপর আরও একবার মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়নবঞ্চিত হন। মনোনয়ন দেওয়া হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে। দল ক্ষমতায় আসে। হানিফকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। ওই বছর দলীয় কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি। বাড়তে থাকে প্রভাব-প্রতিপত্তি। দলে তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয় একাধিকবার একই পদ পেয়ে যাওয়ার কারণে। যদিও মন্ত্রী হওয়ার খায়েস থাকলেও আশা পূরণ হয়নি নানা অভিযোগের কারণে।
দলের নেতা-কর্মীদের পাত্তা না দিলেও বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন। এভাবে গত ১৫ বছরে প্রচুর সম্পদের মালিকবনে গেছেন হানিফ। তার পুরো পরিবার থাকে কানাডায়। এ ছাড়া সেখানে তার কয়েকজন ভাইবোনও বাস করেন। কানাডায় হানিফের গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে।
নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়
হানিফের কপাল খুলে যায় শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার কারণে। দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই তার কাছে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক নানা কাজের তদবিরও করতেন। দলের পদ-পদবি দেওয়ার নামে যেমন অর্থ বাণিজ্য করেছেন তেমনি নানা তদবির, টেন্ডার বাণিজ্য, বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। হানিফের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল। কারওয়ান বাজারে বিএমটিসি ভবনে তার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অফিস। সেই অফিস ও কুষ্টিয়ার বাসায় বসেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হানিফের আয়ের টাকার বড় অংশ পাচার করেছেন কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। আর দেশে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এ ছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদের খবর পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়ায় হানিফ ও তার ভাই আতার নামে মার্কেট, দোকান ও শপিং মলে দোকান আছে বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া শহরের তমিজ উদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘খেলার মাঠের পাশে দুই তলা নতুন যে মার্কেট হয়েছে সেখানে ৮টি দোকান আছে তাদের নামে। দোকানের ভাড়াটিয়ারা জানান, প্রতি মাসে আতা টাকা তুলতেন।’
জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় মহাসড়কের পাশে ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তার ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে।
শহরের বহুতল বিপণিবিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। ভাড়া ওঠে প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা। এ ছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্ল্যাট। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হাউজিংয়ের জমির সঙ্গে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। আতার নামে হলেও এর পেছনে ছিলেন হানিফ। পিটিআই রোডে ৪ কাঠা জমির ওপর তিন তলা বাড়ি কাগজে-কলমে আতা ও তার স্ত্রীর নামে হলেও হানিফের অর্থে করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। প্রথম দিকে লালন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড এ বাড়িতে লাগানো হয়।
আতার সম্পদ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করার পর সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ার, ব্যাংকে ডিপোজিট আছে।
দল ও অন্য কয়েকটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ী অজয় সুরেকার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় কোটি কোটি লগ্নি করা আছে হানিফের। এসব কারণে অজয় সুরেকাকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ করেন হানিফ। এসব বিষয়ে জানতে মুঠো ফোনে অজয় সুরেকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জোর করে দলীয় পদ দেওয়া ছাড়া হানিফের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। আর ওই পদ-পদবির পরিচয়ও তিনি দিতেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হানিফ প্রভাব খাটিয়ে নদী খননের বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন সারা দেশে। তার নিজের একাধিক ড্রেজার আছে খননের জন্য। সর্বশেষ গড়াই খননের একটি কাজ বাগিয়ে নেন তিনি। সরকারি খরচের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খরচে তিনি কাজ করেন। এতে তার নিজের ৩টি ড্রেজার কাজে লাগান। প্রতি ড্রেজারের দাম ৩০ কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা আছে হানিফের। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হানিফের নগদ টাকার পরিমাণ বহু গুণ বেড়েছে বলে দেখা গেছে।
২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে একটি সাধারণ মানের গাড়িতে চড়লেও পরে তিনি একাধিক দামি গাড়ি ক্রয় করেন। যার প্রতিটির দাম কোটি টাকার ওপরে। রাজধানীর গুলশানে তার বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে, আছে বনানীতেও। এ ছাড়া খুলনায় তার মাছের ঘেরের সঙ্গে আছে রিসোর্ট। জমি আছে পাবনার ঈশ্বরদী, কক্সবাজারের টেকনাফে। পার্টনারে গাজীপুরে নির্মাণ করেছেন একাধিক রিসোর্ট।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিতর্কিত একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে বেনামে যৌথ ব্যবসা আছে তার। নদী খনন ও শাসনের কাজ করতেন তারা দুজন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের নামে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। তবে হানিফের কারণে পার পেয়ে গেছেন ঠিকাদার।
সর্বশেষ কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় পদ্মা নদীশাসনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়। কাজ ভাগাভাগি হয় হানিফের ঢাকার অফিসে বসে। সেখানে হানিফ একাই ৫০০ কোটি টাকার কাজ নিজের কবজায় নিয়ে নেন। এসব কাজ পরে কমিশনে বিক্রি করে দেন। এ কাজ থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ। তার সময় কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প, কুষ্টিয়া শহরে ফোর লেন করা, কুষ্টিয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ, শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতু নির্মাণ, মুজিবনগর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া সম্প্রতি পদ্মা নদীশাসনে বড় একটি প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিটি থেকেই হানিফ আগাম বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকার কমিশন। প্রতিটি প্রকল্প থেকে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ কমিশন আদায় হতো। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, বালুর ঘাটের কমিশনসহ অন্যান্য কাজ থেকে যে আয় হতো তা চাচাতো ভাই আতার মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন। সর্বশেষ কুষ্টিয়া মেডিকেলের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে হানিফের পছন্দের প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন হানিফ।
কুষ্টিয়ার সব ঠিকাদারি কাজ, হাট-ঘাটের ইজারা, সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতে নিয়োগ, পদ্মা ও গড়াই নদীর বালু মহাল থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্র থেকে কমিশন আদায় করেছেন হানিফ। এমন কি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পদ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে হানিফের বিরুদ্ধে।
প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন
হানিফের অত্যাচার নির্যাতন থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা যেমন বাদ যাননি তেমনি বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েন তার বাহিনী দিয়ে। জেলা যুবদল নেতা আল আমিন কানাই বলেন, গত নির্বাচনের আগে একজন কাউন্সিলর আমার বাসায় গিয়ে বলেন, হানিফের ভাই আতা সাহেব চা খাবেন। আমি বলি এত বড় নেতার সঙ্গে চা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর থেকে তারা আমার বাড়িতে মাস্তান পাঠিয়ে হেনস্তা করেছে, আমার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন আমি ব্রেন স্ট্রোকের রোগী। মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা আমাকেসহ দলের বহু নেতাকে গত ১৬ বছরে শেষ করে দিয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতন
আওয়ামী লীগ ও হানিফের নামে নিউজ করে মামলা ও হামলার স্বীকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-ছাড়া হয়েছেন একাধিক সংবাদকর্মী। মামলা দিয়ে জেলে পাঠান যুগান্তর প্রতিনিধি এ এম জুবায়েদ রিপনসহ বেশ কয়েকজনকে। এর বাইরে জুয়েল আহম্মেদ শাহিন ও অঞ্জন শুভ নামের স্থানীয় দুই সাংবাদিক হানিফের রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে যান।
৫ আগস্টের পর
হানিফ ও আতাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নামে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। গা-ঢাকা দিয়েছেন সব নেতা। এরপর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় বর্তমান পরিস্থিতি ও হানিফের বিষয়ে। বেশির ভাগই বলছেন, হানিফ রাজনীতি করার জন্য কুষ্টিয়ায় আসেননি। এসেছেন বাণিজ্য করতে।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন বলেন, হানিফ-আতা এই দুই ভাইয়ের কারণে কুষ্টিয়ার রাজনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। একক আধিপত্য বিস্তার করে আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছেন।
বিপুল সম্পদের মালিক আতা
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন আতা। ঘষলেই বেরুত টাকা। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামের প্রয়াত আবদুস সাত্তারের ছেলে। আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাবা আফসার আলীর চাচাতো ভাই। সেই সূত্রে হানিফ আর আতা চাচাতো ভাই। হানিফের পর আতা ছিলেন কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি। দুই ভাই মিলে জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সব সরকারি কাজ ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এভাবে আতা জিরো থেকে বনে গেছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। একসময় মোটরসাইকেলে চড়লেও এখন তার কোটি টাকা দামের একাধিক গাড়ি আছে। স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হলেও স্বামীর টাকায় তিনিও কোটিপতি। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে আতার।
দলের পদ-পদবি ও টেন্ডারে কাজ পেতে আতার কাছে ধরনা দিতে হতো সবাইকে। তার অত্যাচার ও নির্যাতনে দল ছেড়েছেন অনেকে। এমনকি ঠিকাদারি কাজও ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। অবৈধ বালুঘাট, হাট-বাজার, বিল ও বাঁওড় নিয়ন্ত্রণ করতেন আতা। তিনি এভাবে গত ১৬ বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আতা গা-ঢাকা দেন। তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে। একই অবস্থা হানিফের বাড়িরও। আতার স্ত্রীর নামে অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে দুনীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। আতার অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময় মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
২০২২ সালে আতার বিপুল অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে বলা হয়, ১০ বছরের ব্যবধানে বাড়ি-গাড়িসহ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিকবনে গেছেন আতা। এই অভিযোগ ওঠার পর ২০২২ সালে দুদক তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে।
আতা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া অফিস থেকে সাড়ে ৫ কাঠার প্লট নিয়েছেন। শহরের হাউজিং এলাকায় ওই জমিতে ৭ তলা ভবনের কাজ চলছে। স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রীর নামে তিনি ওই সম্পদ করেছেন। এখানে বিনিয়োগের ব্যাপারে আয়কর নথিতে দেখানো হয়েছে মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। অথচ ভবন করতেই খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। আতা-ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা এ তথ্য দেন।
আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এবং মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে মাহাবুবউল আলম হানিফ এবং তার ভাই আতাউর রহমান আতার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।