ঢাকা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চায় বিএনপি

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
নিজেদের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চায় বিএনপি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপি যে একমাত্র বড় রাজনৈতিক দল এবং ক্ষমতায় আসার জন্য তাদেরই একমাত্র সক্ষমতা রয়েছে- এ বিষয়টি নানাভাবে বোঝাতে চাইছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি একদিকে ধৈর্ষের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে জানান দেওয়ার মতো কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গত শুক্রবার ঢাকায় বড় শোডাউন করেছে দলটি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এটাই সবচেয়ে বড় কর্মসূচি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ শোভাযাত্রাটি প্রদক্ষিণ করে। এতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলো জনগণের সামনে আনতে, বিশেষ করে ৩১ দফা নিয়ে আগামী ১৪ নভেম্বর সেমিনার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রাজধানীর একটি হোটেলে এই সেমিনার হবে। ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, ‘নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা প্রভৃতি। ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনমত গড়তে জেলা ও মহানগরে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভা করবে দলটি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু খবরের কাগজকে বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা এখন এলাকায় এলাকায় যাচ্ছেন। আগামী দিনে বিএনপি কী করতে চায় এবং ৩১ দফা রূপরেখা জনগণের কাছে তুলে ধরছেন তারা। 

তিনি বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগের মতো বড় ধরনের ভুলত্রুটি বিএনপি করেনি। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ দেশের জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এখনো কাজ করছে। আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে স্বচ্ছ বিএনপিকে পাবে জনগণ। এ জন্যই শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে কী করবে, আগের ভুলত্রুটি সংশোধন করে কীভাবে এগোবে- এ বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায় বিএনপি। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে তারা ইতিবাচক বার্তা দিতে চান। বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে জনসাধারণের উন্নয়নের লক্ষ্যেই কাজ করবে। ইতোপূর্বে বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। সেই সময়ে ছোটখাটো অনেক বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হয়েছে, তা এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছেন নেতারা। ফলে সব ভুলত্রুটি দূর করে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোনোর পক্ষে দলটি। 

সূত্রমতে, দলের মধ্যে অতিরিক্ত দলবাজি, দুর্নীতি এবং ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করা সনাতন পদ্ধতি চালু রয়েছে- এখান থেকেও বেরিয়ে আসতে চায়। ইতোমধ্যে দখল ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১ হাজার ১০০-এর বেশি নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একধরনের বার্তা গেছে- আগের মতো একই কাজ করা যাবে না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যেসব দোষে সমালোচিত হয়েছে ওই ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা বা থামাতে চায় হাইকমান্ড। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই দলের কোনো রকমের দুর্নাম হোক চাইছেন না। ইতোমধ্যে প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শোকজ করা হয়েছে। যাদের উত্তর সন্তোষজনক হয়নি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজ করা যাবে না- এমন বার্তাও গেছে নেতা-কর্মীদের কাছে। 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত তিন মাসে যে পরিমাণ বহিষ্কার ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা বিএনপির ইতিহাসে ঘটেনি। আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন ছাত্ররা। কিন্তু বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলোর যে ভূমিকা রয়েছে তাও অস্বীকার করছেন না পর্যবেক্ষকরা। 

অবশ্য তারা এও বলছেন, একটি দেশের মূল বিষয় হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক চর্চা। আর গণতান্ত্রিক চর্চা মানে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। কিন্তু আগামী নির্বাচনে দলটি বড় শক্তি নিয়ে রাজনীতির মাঠে দাঁড়াতে পারবে- এটাও কেউ মনে করছেন না। ফলে বিএনপি হচ্ছে একমাত্র বড় রাজনৈতিক দল। যদিও বিএনপির সঙ্গে যেসব দল শেখ হাসিনার সরকার পতন আন্দোলনে ছিল তাদের আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে নির্বাচন বিএনপি এককভাবেই করবে বলে মনে হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপির সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা আছে এগুলোও বলছেন নেতারা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে এমনও আলোচনা রয়েছে- আওয়ামী লীগ বিগত তিন টার্ম নির্বাচনগুলো সঠিকভাবে দিলে এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ না করলে তাদের এ রকম পরিণতি ভোগ করতে হতো না। মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতো না। সুতরাং দ্রুত জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং তাদের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা- এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএনপি। তবে নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, এটি বিএনপি চাইছে না। যে কারণে সব ধরনের সংঘাত এড়ানোর পক্ষে। পাশাপাশি দলকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার পক্ষে। 

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতীতের ভুলত্রুটি শোধরানোর জন্য বিএনপি নিয়মিত ক্লাস করছে। সেই পরীক্ষার ফলই হলো রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা। এই ৩১ দফায় নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা ৩১ দফার আলোকে নিজেদের তৈরি করতে পারেন এবং আগামী দিনে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ 

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে বিএনপিকে জনগণ আরও স্বচ্ছভাবে পাবে। জনগণের কাছে আরও বেশি দায়বদ্ধ থাকবে বিএনপি। আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খবরের কাগজকে বলেন, গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। ফলে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা আগামী দিনে কাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাবে। তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারও কিছু সংস্কারের কথা বলেছে। তারা কিছু সংস্কারও করবে। বাকি কাজ নির্বাচিত সরকার করবে। বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করার আগে চার-পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে স্ট্যাডি করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রয়োজনে আরও কিছু সংস্কার বা সংশোধন করা হবে। আগামী দিনে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে পথচলা বিএনপির টার্গেট। 

সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় ঘটে। এরপর থেকেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে বিএনপি। এই সরকারে সুশীল সমাজের পাশাপাশি ছাত্রদের অংশীদারত্ব রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংবিধান সংশোধনসহ চলমান সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দেবে নাকি সবকিছু সংস্কার করে নির্বাচন দেবে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। 

গতকাল শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি। অর্ধলাখ মানুষ রক্ত দেয়নি। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিস্টেমগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অতিদ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে এক বছর নাকি আরও বেশি সময় লাগবে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের দাবিতে চাপ অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেহেতু এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নেই সেহেতু তারাই বড় দল। আজ বা কাল হোক নির্বাচন তো দিতে হবেই। বিএনপি নির্বাচনের দিন-তারিখ, বিশেষ করে রোডম্যাপের তাগিদ দেবে- এটা স্বাভাবিক বিষয়। তিনি মনে করেন, তারা ক্ষমতায় যেতেও প্রস্তুত। এ জন্য দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

৪০ বছর ঘুরে মামলায় জিতলেন হরেন্দ্রনাথ, পাবেন ২০ লাখ টাকা

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
৪০ বছর ঘুরে মামলায় জিতলেন হরেন্দ্রনাথ, পাবেন ২০ লাখ টাকা
হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র

আদালতের বারান্দায় ৪০ বছর ঘুরে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। অবশেষে গতকাল সোমবার আদালতে প্রমাণ হয়েছে তার বিরুদ্ধে করা সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলাটি ভুয়া ছিল। এ কারণে হরেন্দ্রনাথকে মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে আগামী তিন মাসের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন।

আইনি লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। বিশ্বাস ছিল আমি জিতব। আদালতের এই রায়ে মোটামুটি খুশি। ৪০ বছর আইনি লড়াই করে সর্বস্বান্ত হয়েছি। মামলা চালাতে ১০-১২ বিঘা ফসলি জমি বিক্রি করতে হয়েছে। ভিটেমাটি, ঘরও আমার নেই। এখন আমি ভূমিহীন। আমার দুই মেয়ে। ঢাকার গাবতলীতে বড় মেয়ের বাসায় থাকতে হচ্ছে। মামলা চালানোর সামর্থ্যও আমার ছিল না। দুই বছর আগে ভূমিহীন হিসেবে আবেদন করে সরকারি উকিল নিয়ে মামলা চালিয়েছি।’ 

হরেন্দ্রনাথ আরও জানান, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার আরও একটি মামলা রয়েছে। ২০১২ সালে করা সেই মামলায় ব্যাংকে চাকরির শুরু থেকে অবসর সময় (১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওনা ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা চেয়েছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা সেই রিটের শুনানি আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে বলেও জানান তিনি। 

আদালতে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান। আর হরেন্দ্রনাথের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। তিনি বিনামূল্যে সরকারি আইনি সেবায় নিযুক্ত হয়ে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে মামলায় লড়েছেন। মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, ‘এই বৃদ্ধ ব্যক্তি আজ ভারমুক্ত হলেন। ১৯৮৫ সালের একটি ঘটনায় তিনি জেলও খেটেছেন। এরপর সব আদালতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তবে প্রতিটি ধাপেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করেছে। আপিল বিভাগে সর্বশেষ আপিলেও জয়ী হয়েছেন হরেন্দ্রনাথ। আরজিতে আদালত হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ৪০ বছর আগে ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে হরেন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে। তবে সেই মামলায় খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করে মামলাটি জিইয়ে রাখে। এভাবে চার দশক কেটে গেলেও আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বিএ পাস করার পর ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় কাজ শুরু করেন হরেন্দ্রনাথ। চাকরিকালে রেমিট্যান্সসংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন্দ্রনাথসহ সবাই। একই বছর অপর এক মামলায় ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। 

আদালতের নির্দেশে সাজার পর অভিযুক্ত হরেন্দ্রসহ সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১৯৯০ সালে হরেন্দ্রনাথ জেল খেটে বের হন। 

মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হরেন্দ্রসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে আবেদন (মিস কেস) করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত আপিল গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেন। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট এ আপিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ এএম
প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি
প্রশাসনে আসছে বড় পদোন্নতি। খবরের কাগজ গ্রাফিকস

চলতি সপ্তাহেই প্রশাসনে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে বড় পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তাদের খসড়া তালিকা প্রস্তুতির কাজ সংশ্লিষ্ট শাখা শেষ করেছে। এখন সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সময় নির্ধারণ করে দিলে এ-সংক্রান্ত সভা আহ্বান করা হবে। সভায় পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

এবার পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ২৪ ব্যাচের উপসচিব পদের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব ও ৩০ ব্যাচের সিনিয়র সহকারী সচিব পদের কর্মকর্তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে।

তবে এবারই প্রশাসন ক্যাডার পদের বাইরে অন্য ক্যাডার পদ থেকেও কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য একই সভায় বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এর আগে সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার ও অন্য ক্যাডার পদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসএসবির ভিন্ন ভিন্ন সভায় বিবেচনা করা হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ও অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫৭২ জন কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী পদ থেকে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৩২৯ জন ও অন্য ক্যাডার থেকে ২২৩ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য এবার বিবেচনায় নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই কর্মকর্তা জানান, আসন্ন সভায় এর আগে পদোন্নতি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। যেহেতু এবার একসঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, তাই সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের তালিকা একসঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এসএসবি কমিটি পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করে দিলেই তালিকা প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

পদোন্নতিযোগ্য এসব কর্মকর্তা অনেক আগেই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার পদোন্নতি দেওয়া হলে এই পদেই অনুমোদিত পদ থেকে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা থাকবেন অনেক বেশি।

অনেক কর্মকর্তাই আলোচনাকালে জানান, পদোন্নতি পেলেও এসব কর্মকর্তার অনেকেই নির্ধারিত ডেস্ক ও দায়িত্ব পাননি এখনো। এমনও অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা ঊর্ধ্বতন পদে পদোন্নতি পেলেও দায়িত্ব পালন করছেন নিম্নতম পদে। এর বাইরে পদমর্যাদা অনুযায়ী উপযুক্ত পরিসরের কক্ষ না পেয়ে একটি কক্ষকে ভাগাভাগি করে অন্য কর্মকর্তার সঙ্গে স্বল্প পরিসরের কক্ষে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ রয়েছে। 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সবাই পদোন্নতি চান। কিন্তু সচিবালয়ের স্বল্প পরিসরের কোনো কক্ষে বসার ব্যবস্থা হলে আবার সমালোচনা হয়। আসলে প্রশাসনে অপ্রাপ্তির অভিযোগ বহুদিনের। সব অভিযোগই একবারে সমাধান করা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। এটাও কর্মকর্তাদের বিচেনায় রাখা উচিত বলে মনে করেন ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।

সবশেষ চলতি বছর গত আগস্টে ২০০ উপসচিব পদের কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। তাছাড়া এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে অন্য ক্যাডার পদের কর্মকর্তাসহ ২৩১ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনে যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত পদ প্রায় ৫০০টি। এসব পদে কর্মরত আছেন ৮৫৬ জন কর্মকর্তা। এ ছাড়া সুপারনিউমারারি পদসহ প্রশাসনে উপসচিবের অনুমোদিত পদ আছে ১ হাজার ৪২৮টি। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৫৯৩ জন কর্মকর্তা।

‘সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। উপসচিব পদে কমপক্ষে ৫ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছর বা উপসচিব পদে কমপক্ষে ৩ বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, বলা হয়েছে বিধিতে।

একই বিধিমালায় উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, পদোন্নতি হলেও পদোন্নতি পাওয়া বেশির ভাগ যুগ্ম সচিবকে আগের কর্মস্থলে ইনসিটু হিসেবে থাকতে হবে। এমনিতেই বর্তমানে অনুমোদিত পদ থেকে একই পদের কর্মকর্তা রয়েছেন অনেক বেশি। ফলে এসব কর্মকর্তার অনেকেই নিচের পদে কাজ করছেন। তাই পদোন্নতি পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকেই ইনসিটু হিসেবে আগের কর্মস্থলেই থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদ

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ এএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ এএম
মানবাধিকার উন্নয়নের তাগিদ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস

দেশে চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হওয়া মোট শিশুর সংখ্যা ১০৬২। আর বিভিন্নভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৬৯ জন নারী। একই সময়ে মব লিঞ্চিংয়ের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়েছেন ১০০ জন যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে হওয়া এসব ঘটনা যারা জাতির সামনে নিয়ে আসেন সেই সাংবাদিক শ্রেণির মধ্যে ৪৯৭ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যা উঠে এসেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এটিকে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষক আর মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন দেশের মানবাধিকার রক্ষায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই। আর এমন অবস্থার মধ্যেই আজ ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের এ দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এতে বলা হয় জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। এই ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিন ১০ ডিসেম্বরকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আসকের ওই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে শুধু হত্যার শিকার হয়েছে ৪৮২ শিশু। এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ২৮০ জন এবং শূন্য থেকে ৬ বছর বয়সী ৮২ জন। আর নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখ্যা ৫৮০। এ ছাড়া ওই সময়ে ৩৬৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে। 

বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ওই সময়ে মব লিঞ্চিংয়ের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়েছে ১০০ জন। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে মব লিঞ্চিংয়ের শিকার জয়েছেন ৫১ জন, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৬, ২০২১ সালে ২৮ জন এবং ২০২০ সালে ছিল ৩৫ জন।

মূলত যখন একজন ব্যক্তিকে অপরাধী বলে সন্দেহ করে একদল লোক ভিড়ের মধ্যে মারধর করে বা হত্যা করে সেটাকেই মব লিঞ্চিং বা মব জাস্টিস বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এ বছর মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণ হিসেবে তারা নানা ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত থাকা, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও জমানো ক্ষোভসহ আরও অনেক কারণের কথা বলছেন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মব লিঞ্চিংয়ে মানুষ হত্যা, গণপিটুনি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুট, অনেকেই চাকরিহারা ও পদহারা হয়েছেন। যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক ও কর্মজীবনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ সুবিধাবঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ফলে এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে কষ্ট আছে, ক্ষোভও আছে। এসব কারণে কিছু মানুষ সংঘবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাকে হেনস্তা করছে। কাউকে চাকরিচ্যুত বা পদচ্যুত করছে, তো কাউকে কিছু না জেনেই অন্য মানুষের সঙ্গে মিলে মারতে মারতে মেরে ফেলছে। যা আইনের শাসনের পরিপন্থি। তাই যেকোনো সমস্যাকে আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করাই সবার জন্য শ্রেয়। কারণ কেউ যদি তার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের বিচার নিজেই করেন তবে সমাজে একটি অস্থির অবস্থা তৈরি হয়। তখন সুযোগসন্ধানী মহল এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।’ 

মব লিঞ্চিং বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবসময়ই আমরা দেখে এসেছি সরকার পরিবর্তনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা বেড়ে যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এগুলো করছে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও প্রতিশ্রুতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি এমন ঘটনা না ঘটানোর জন্য জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আমি এটাকে মব জাস্টিস বলতে চাই না কারণ এটির সঙ্গে জাস্টিস কথাটি যুক্ত করলে আসলে জাস্টিস শব্দটির অবমাননা হয়। আমি এটাকে মব ভায়োলেন্স বলি। বর্তমানে এটির কারণে আমরা মানবাধিকারের দিক থেকে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। এটা থামানোর জন্য আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা বাড়াতে হবে এবং আইন হাতে তুলে নেওয়া যে সমান অপরাধ সেটা মানুষকে বোঝাতে এবং সচেতন করতে হবে। আর যখনই এমন ঘটনা ঘটবে তখন তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। 

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই
দুর্নীতি দমন কমিশন

দেশের কোথাও ঘুষ-দুর্নীতি থেমে নেই। গত এক মাসে হাজারও অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। কিন্তু দুদকের কর্মকর্তারা নিষ্ক্রিয়। গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করায় আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কমিশন পুনর্গঠন হলে এসব অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম কমিশনবিহীন দুদক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করতে যাচ্ছে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এই দিবস পালনে ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও প্রয়োজনীয় আলোচনা সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতি দিনই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা হচ্ছে। সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিড়ম্বনা, হয়রানি ও ঘুষ দুর্নীতির শিকার হয়ে দুদকে অভিযোগ দিচ্ছেন অনেকেই। বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, হাসপাতাল, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অবৈধ ঘুষ-দুনীতি ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছেই। কখনো দুদকের হটলাইন ১০৬ নম্বরে ফোন করে, আবার কখনো রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হচ্ছে লিখিত অভিযোগ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোতেও এ ধরনের অভিযোগ জমা হচ্ছে। কিন্তু কমিশনবিহীন দুদকের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগের আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আইন অনুযায়ী কমিশনের অনুমোদন ছাড়া এসব অভিযোগের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার দুদক কর্মকর্তাদের নেই। সরকারি দপ্তরে চলমান অনিয়ম-দুর্নীতি বা ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। কমিশন না‌ থাকায় সেই কাজ বন্ধ রয়েছে।

প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে সরাসরি ঘুষ লেনদেন ধরতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ২৩টি অভিযান চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। কিন্তু কমিশন পদত্যাগ করার পর শত অভিযোগ এলেও একটিও অভিযান হয়নি।

এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণত অভিযোগগুলো অনুসন্ধানযোগ্য কি না তা খতিয়ে দেখতে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি কাজ করে থাকে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করতে হলে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন। গত ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন পদত্যাগ করেছে। এখন যেহেতু কমিশন নেই, ফলে নুতন কোনো অনুসন্ধান, মামলা দায়ের বা আদালতে চার্জশিট দাখিলসহ এ ধরনের আইনগত কাজগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ (৯ ডিসেম্বর)। প্রতিবছর এই দিনটিতে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করে থাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা ও করণীয় সংক্রান্ত মূল্যবান আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকতেন রাষ্ট্রপতি। বিশেষ অতিথি থাকতেন প্রধান বিচারপতি। সভাপতিত্ব করতেন দুদক চেয়ারম্যান। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। কারণ, চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশন গত ২৯ অক্টোবর পদত্যাগ করেছেন। কমিশনবিহীন দুদকের এবারের আয়োজনে ততটা আড়ম্বর নেই। এবার দুদক সচিবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথি থাকবেন দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবছর এই আলোচনা সভাটি দুদক ভবন সংলগ্ন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে হয়েছে। এবার সেখানে হচ্ছে না। একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সেটি বরাদ্দ দেননি। ফলে এ বছর আলোচনাটি হবে কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে সকাল ৮টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠিত হবে। মিট দ্য প্রেসে দুদকের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরবেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। 

কমিশন পদত্যাগ করার পর চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম ও অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এই কমিটি কয়েক দফা মিটিং করেছেন। তারা ৬ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। এর মধ্যে তিনজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এবং তিন কমিশনারের মধ্যে একজনকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে কমিশন পুনর্গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। 

‘মরে গেলেই ভালো হতো এত যন্ত্রণা পেতাম না’

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ এএম
আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম
‘মরে গেলেই ভালো হতো এত যন্ত্রণা পেতাম না’
পেটে গুলিবিদ্ধ রবিউল ইসলাম। ছবি: খবরের কাগজ

রবিউল ইসলাম (১৯) একজন কোরআনে হাফেজ। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে দিনাজপুর সদর জজকোর্টের গোল ঘরের সামনে পেটে গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশের শটগান থেকে তার পেটে অসংখ্য ছররা গুলি লাগে। দিনাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গোসাইপুর করিমপাড়া মহল্লার হতদরিদ্র শহিদুল ইসলামের একমাত্র ছেলে রবিউল।

রবিউল বলেন, ‘৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজের খরচে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। এরপর ৯ দিন বিভিন্ন রকমের টেস্ট, ওষুধে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য অনেক ধার-দেনা করেছেন। এতেও আমার অবস্থার উন্নতি হয়নি।’
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।  পেটের ভিতরে থাকা তিন শরও বেশি ছররা গুলির মধ্যে ৫০টা গুলি বিভিন্ন সময়ে অপারেশন করে বের করা হয়। রবিউল বলেছেন, ‘সেখানে প্রায় টানা ২৫ দিন চিকিৎসা গ্রহণ করার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে ১৫ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দিনাজপুরে ফিরে আসি। ডাক্তার সেই সময় একটি মলম কিনে লাগাতে বলেছিলেন। দাম ১ হাজার টাকা। টাকার অভাবে সেই মলমটি পর্যন্ত কিনতে পারিনি। পেটের নাড়িভুঁড়িতে এখনো অসংখ্য গুলি লেগে আছে। এখনো মাঝে-মধ্যেই পেটের যন্ত্রণায় অস্থির লাগে। কোনো কাজ করতে পারি না। এমনকি অটোরিকশাও চালাতে পারি না।’ 

রবিউলের বৃদ্ধ বাবা তেমন কাজ করেন না। তাদের কোনো আয়-রোজগার নেই। রবিউল বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয় সেদিন যদি মৃত্যুটা হয়ে যেত তাহলে হয়তো আজকের এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। এ পর্যন্ত কেউ আর্থিক সহযোগিতা করেনি। এমনকি সরকারিভাবেও না। শুধু আশার বাণী আর আশার বাণী শুনতে হচ্ছে।’
রবিউলরা এক ভাই তিন বোন। তিনি সবার ছোট। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকে। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তার বাবা খুব কষ্ট করে তাকে স্থানীয় এতিমখানার মাদ্রাসায় রেখে হাফিজিয়া পড়িয়েছেন। তিনি নিজেও একজন কোরআনে হাফেজ।’

রবিউল জানালেন, বাবার আর্থিক দুরবস্থা দেখে ভাড়ায় একটি অটোরিকশা চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছিলেন। মায়ের কোমরের হাড় ক্ষয় যাওয়ায় মা তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। অটো চালিয়ে মায়ের প্রতিদিনের ওষুধ কেনার দুই শ থেকে আড়াই শ টাকা জোগান দিতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। রবিউলের কথায়, ‘এখন আমি নিজেই আহত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছি। হাঁটাচলা করতে পারলেও আয় রোজগার নেই। অটোরিকশাও চালাতে পারছি না। নতুন বাংলাদেশ নতুনভাবে অর্জন করেছি। দেশের প্রয়োজনে এবার আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বর্তমান সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমার কোনো কিছু হয়ে গেলে আফসোস নেই। তবে আমার পরিবারের পাশে যেন সরকার দাঁড়ায়।’ 

রবিউল বলেন, ‘আমার চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় চার-পাঁচ লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছে। পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত বাড়িতে আসছেন। তাদের দেখলেই দুঃখ-যন্ত্রণায় চোখের পানি টপটপ করে পড়তে থাকে। মনে হয় তাদের পাওনাটা শোধ করতে না পারলে আমি কবরে গিয়েও শান্তি পাব না।’ 

রবিউল ইসলামের মা লাইলী বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আমিও বাড়ির পাশেই একটি আলুর কোল্ডস্টোরে কাজ করি। ছেলে ৪ আগস্ট সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিল। দুপুরে আমি খবর পাই আমার ছেলে আন্দোলনে গেছে। পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এই খবরটি শোনার পর দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি, ছেলের লাশ দেখার জন্য। দৌড়ে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে গেছি। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দেখি আমার ছেলে কাতরাচ্ছে। রক্তে শরীর ভেসে যাচ্ছে। চিৎকার করেছি আর বলেছি আমার ছেলেকে বাঁচাও। আমি ছেলের জীবনটা ভিক্ষা চাই, আল্লাহ। আমি নিজে অসুস্থ। ছেলেকে চিকিৎসা করাব কী করে? সকালে খেলে দুপুরের খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় আমাদের। আর দুপুরে খেলে রাতে মাঝেমধ্যে এখনো না খেয়ে থাকতে হয়। সরকার যদি মুখ তুলে চাইত আমরা বাঁইচা যাইতাম।’

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });