ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

৩০০ আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত!

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
৩০০ আসনে জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। শুধু তাই নয়, দলটি ৩০০ আসনে প্রার্থীও ঠিক করে রাখছে। মাঠপর্যায়ে রোকনদের (শপথধারী সদস্য) মতামতের ভিত্তিতে এই প্রার্থী তালিকা নির্বাচিত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ওই তালিকা হাতে পেয়েছে। গোপন সেই তালিকাটি খবরের কাগজেরও হাতে এসেছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নিবে কি না, সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে পরিস্থিতি এমন হলে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠনের কোনো প্রয়োজন দেখছে না একসময়ের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও নির্বাচনি বোর্ড পরিচালনার সভাপতি অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল সারা দেশে বিভিন্ন নির্বাচনি আসনে গিয়ে রোকনদের মতামত নিয়ে দলটির প্রার্থী নির্বাচন করেছে। 

ওই তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনি গণসংযোগও শুরু করেছেন বলে গোয়েন্দা সংস্থাটি জানতে পেরেছে। কিছুদিন আগে দলটির কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালীর বাউফল এলাকায় নির্বাচনি গণসংযোগ করেছেন। নির্বাচন আগে, নাকি সংস্কার আগে, এ প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতের কিছুটা মতপার্থক্যের মধ্যেই দলটির প্রার্থী তালিকা বাছাই করার এই খবর জানা গেল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে জানান, ‘জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি দল। নির্বাচন এলেই জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে কাজ করবেন এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু জামায়াত কেন, যেসব দল নির্বাচন করে তারাও প্রার্থী নির্বাচন এবং নির্বাচনি গণসংযোগ করে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আরেক নেতা বলেন, যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে সেটি এক ধরনের প্রাথমিক তালিকা। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে ওই তালিকা আরও সংশোধন হতে পারে।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন, পঞ্চগড়-১ আসনে মাওলানা আবদুল খালেক, পঞ্চগড়-২ আসনে অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-১ মো. দেলোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁও-২ মো. আবদুল হাকিম, ঠাকুরগাঁও-৩ অধ্যাপক আবদুল কাশেম, দিনাজপুর-১ লোকমান হোসেন, দিনাজপুর-২ আফজালুল আনাম, দিনাজপুর-৩ অধ্যাপক আবুল কাসেম, দিনাজপুর-৪ মাওলানা আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৫ আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুর-৬ মো. আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-১ মাওলানা আবদুল হাকিম, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ এরশাদ হোসেন সাজু, লালমনিরহাট-২ অ্যাডভোকেট আবদুল বাতেন, লালমনিরহাট-৩ মাওলানা আজিজুর রহমান, রংপুর-১ আবদুল গনি, রংপুর-২ ওবায়দুল্লাহ সালাফি, রংপুর-৩ মাহবুবুর রহমান, রংপুর-৪ এ টি এম আজম খান, রংপুর-৫ শাহ হাফিজুর রহমান, রংপুর-৬ মো. গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম-১ আজিজুর রহমান স্বপন, কুড়িগ্রাম-২ হাবিবুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ প্রফেসর আবদুল জলিল, কুড়িগ্রাম-৪ নুর আলম মুকুল, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-২ আবদুল করিম, গাইবান্ধা-৩ মাওলানা নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৪ ডা. আবদুর রহিম সরকার, গাইবান্ধা-৫ অধ্যাপক ওয়ারেশ আলম দুদু, বগুড়া-১ অধ্যক্ষ, শাহাবুদ্দীন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, বগুড়া-২ অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামান সাবেক এমপি, বগুড়া-৩ আবদুল গণি মণ্ডল, বগুড়া-৪ অধ্যক্ষ মাওলানা তায়েব আলী, বগুড়া-৫ দবিবুর রহমান, বগুড়া-৬ আবিদুর রহমান সোহেল, বগুড়া-৭ গোলাম রব্বানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ড. মিজানুর রহমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ নুরুল ইসলাম বুলবুল। এ ছাড়াও নওগাঁ-১ অধ্যাপক সালেকুর রহমান, নওগাঁ-২ মো. ময়েন উদ্দিন, নওগাঁ-৩ মাওলানা মীর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ-৪ খ ম আবদুর রাকিব, নওগাঁ-৫ অ্যাডভোকেট আবু সাদাত মো. সায়েম, রাজশাহী-১ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, রাজশাহী-২ অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসাইন, রাজশাহী-৩ অধ্যাপক মাজিদুর রহমান, রাজশাহী-৫ আহম্মদ উল্লাহ, নাটোর-১ অধ্যাপক তাসনিম আলম, নাটোর-২ অধ্যাপক ড. মীর নুরুল ইসলাম, নাটোর-৩ অধ্যাপক বেলালুজ্জামান, নাটোর-৪ অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন, পাবনা-১ ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন (মতিউর রহমান নিজামীর ছোট ছেলে), পাবনা-২ মো. হেসাব উদ্দিন, পাবনা-৩ শাপিনূর ইসলাম, পাবনা-৪ অধ্যক্ষ আবু তালেব মণ্ডল, পাবনা-৫ মো. ইকবাল হোসেন, মেহেরপুর-১ মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ ও মেহেরপুর-২ রবিউল ইসলাম। 

জানা গেছে, কুষ্টিয়া-১ আসনে অধ্যক্ষ নূর কুতুবুল আলম, কুষ্টিয়া-২ আবদুল গফুর, কুষ্টিয়া-৩ অধ্যাপক ফরহাদ আলী, কুষ্টিয়া-৪ মাওলানা শামসুদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা-১ আনোয়ারুল হক, চুয়াডাঙ্গা-২ রুহুল আমীন, ঝিনাইদহ-১ কাজী মোতাহার হোসেন, ঝিনাইদহ-২ নূর মোহাম্মদ, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ-৪ হাবিবুর রহমান, যশোর-১ মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ শহিদুল ইসলাম, যশোর-৩ অধ্যাপক আবদুর রশীদ, যশোর-৪ অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর-৫ অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ অধ্যাপক মোক্তার আলীম মাগুরা-১ অধ্যাপক এম এ বাকের, মাগুরা-২ আবদুল বাতেন, নড়াইল-১ হাফেজ মোল্লা জাকারিয়া, নড়াইল-২ অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, বাগেরহাট-১ মাওলানা তৈয়বুর রহমান, বাগেরহাট-২ অধ্যাপক মুনঞ্জুল আহসান, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, খুলনা-১ প্রভাষক আজিজুর রহমান, খুলনা-২ মাওলানা এমরান হোসেন, খুলনা-৩ অধ্যক্ষ শাফায়াত আলী মিয়া, খুলনা-৪ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-১: অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পটুয়াখালী-১ মাওলানা আবদুল জব্বার আজাদী, পটুয়াখালী-২ ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, পটুয়াখালী-৩ অধ্যাপক শাহ আলম, পটুয়াখালী-৪ আজিজুর রহমান, ভোলা-১ হারুনূর রশীদ, ভোলা-২ আল্লামা কামাল উদ্দিন জাফরি, ভোলা-৩ অধ্যাপক শাহ আলম, ভোলা-৪ মাওলানা হারুনূর রশীদ, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছোট ছেলে), পিরোজপুর-২ আবদুল হাই মাতুব্বর ও পিরোজপুর-৩ মাওলানা আবদুর রশীদ প্রমুখ। 

আরও যারা প্রার্থী মনোনীত হলেন- ঝালকাঠি-১ ফরিদুল হক, ঝালকাঠি-২ শেখ নেয়ামুল করীম ব্যাপারী, টাঙ্গাইল-১ ইয়াহিয়া খান মারুফ, টাঙ্গাইল-২ মো. আল মোমিন, টাঙ্গাইল-৩ আহসান হাবিব, টাঙ্গাইল-৪ অধ্যক্ষ আবদুল্লাহ তালুকদার, টাঙ্গাইল-৫ আহসান হাবীব ইমরোজ, টাঙ্গাইল-৬ মাওলানা ইদ্রিস আলী আকন্দ, টাঙ্গাইল-৭ ড. হুমায়ুন কবীর, টাঙ্গাইল-৮ ড. জাকারিয়া মুমেন, ময়মনসিংহ-১ ডা. আবদুর রাজ্জাক, ময়মনসিংহ-২ রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ময়মনসিংহ-৩ শাহ আবদুল মালেক, ময়মনসিংহ-৪ আবদুল করীম, ময়মনসিংহ-৫ মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ-৬ অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, ময়মনসিংহ-৭ মো. হামিদ, ময়মনসিংহ-৮ মোজাম্মেল হক, ময়মনসিংহ-৯ মাওলানা আবদুস সালাম, ময়মনসিংহ-১০ কামরুল আহসান, ময়মনসিংহ-১১ অ্যাডভোকেট আমানুল্লাহ বাদল, জামালপুর-১ অ্যাডভোকেট নাজমুল হক, জামালপুর-২ ড. সামীউল হক ফারুকী, জামালপুর-৩ হারুনূর রশীদ, জামালপুর-৪ মির্জা আবদুল মাজেদ, জামালপুর-৫ জাকির হোসাইন, শেরপুর-১ হাসান ইকবাল ওয়ামী, শেরপুর-৩ নুরুজ্জামান বাদল, নেত্রকোনা-১ নাসির উদ্দিন নেত্রকোনা-২ শহীদ আলী, নেত্রকোনা-৩ মাওলানা আবদুল লতিফ, নেত্রকোনা-৪ হামিদুর রহমান, নেত্রকোনা-৫ মাওলানা ফারুক উদ্দিন, নড়াইল-১ আতাউর রহমান বাচ্চু, নড়াইল-২ অধ্যাপক আব্দুস সামাদ, মানিকগঞ্জ-১ মাওলানা তাজুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ-২ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মানিকগঞ্জ-৩ মাওলানা আবু তালেব, কুমিল্লা-১ মাওলানা খান রহমত উল্লাহ, কুমিল্লা-২ অ্যাডভোকেট গাজী রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লা-৩ অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান মজুমদার, কুমিল্লা-৪ সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিল্লা-৫ ড. মোবারক হোসেন, কুমিল্লা-৬ মাস্টার আমিনুল হক, কুমিল্লা-৭ জহিরুল ইসলাম, কুমিল্লা-৮ বেলাল উদ্দিন, কুমিল্লা-৯ মো. রফিক, কুমিল্লা-১০ মাওলানা ইয়াসিন আরাফাত, কুমিল্লা-১১ সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, মুন্সীগঞ্জ-১ আবদুল আওয়াল, মুন্সীগঞ্জ-২ আবদুল ওয়াহেদ ও মুন্সীগঞ্জ-৩ এ বি এম ফজলুল করীম। 

জানা গেছে, ঢাকা-১ আসনে নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-২ মাহফুজুর রহমান, ঢাকা-৩ শাহ মফিজুর রহমান, ঢাকা-৪ জিয়াউল হাসান, ঢাকা-৫ মাওলানা আবদুল হালিম, ঢাকা-৬ মোবারক হোসেন, ঢাকা-৭ আবদুল বারি, ঢাকা-৮ মাওলানা মুহিবুল্লাহ, ঢাকা-৯ মেসবাহ উদ্দিন, ঢাকা-১০ আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা-১১ কামাল হোসাইন, ঢাকা-১২ আবদুস সবুর ফকির, ঢাকা-১৩ শাহ আবদুল মান্নান, ঢাকা-১৪ আবদুর রহমান, ঢাকা-১৫ মো. সেলিম উদ্দিন, ঢাকা-১৬ লস্কর মো. তসলিম, ঢাকা-১৭ হাবিবুর রহমান, ঢাকা-১৮ মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ঢাকা-১৯ ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা-২০ আহমেদ আলী, নারায়ণগঞ্জ-১ মো. মমিনুল হক, নারায়ণগঞ্জ-২ মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জ-৩ জাকির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৫ আবদুল আহাদ, গোপালগঞ্জ-১ আজমল হোসাইন, গোপালগঞ্জ-২ আরিফ বিল্লাহ, গোপালগঞ্জ-৩ আবদুর রাজ্জাক, গাজীপুর-১ আফজাল হোসেন, গাজীপুর-২ আবুল হাসেম খান, গাজীপুর-৩ আশরাফুল আলম রাজু, গাজীপুর-৪ মো. মুহিউদ্দিন, গাজীপুর-৫ মুহাদ্দেশ আবদুল করিম, নরসিংদী-১ আ ফ ম আবদুস সাত্তার, নরসিংদী-২ উপাধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন, নরসিংদী-৩ আবদুল জব্বার, নরসিংদী-৪ আমজাদ হোসেন, নরসিংদী-৫ মো. পনির হোসেন, রাজবাড়ী-১ মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, রাজবাড়ী-২ শুক্কুর আহমেদ, ফরিদপুর-১ মো. দেলোয়ার হোসেন, ফরিদপুর-২ সরোয়ার হোসেন, ফরিদপুর-৩ মো. খালেস, ফরিদপুর-৪ হাসান জামিল, ফরিদপুর-৫ আরমান আলী, মাদারীপুর-১ গোলাম সারোয়ার, মাদারীপুর-২ আবদুস সোবহান, মাদারীপুর-৩ মাওলানা মোনাইমুল হক, শরীয়তপুর-১ মাওলানা তাজউদ্দিন, শরীয়তপুর-২ মো. সোহেল খান, শরীয়তপুর-৩ মাওলানা মোকাব্বির খান, সুনামগঞ্জ-১ মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান, সুনামগঞ্জ-২ হাফেজ নুরুল আলম সিদ্দিক, সুনামগঞ্জ-৩ মাস্টার নুরুল হাকিম, সুনামগঞ্জ-৪ অ্যাডভোকেট মো. শামসউদ্দিন ও সুনামগঞ্জ-৫ মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানী প্রমুখ। 

জানা গেছে, সিলেট-১ আসনে ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও সিলেট-২ আসনে অধ্যাপক আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ মাওলানা লোকমান আহমেদ, সিলেট-৪ প্রভাষক জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার-১ মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-২ অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, মৌলভীবাজার-৩ আবদুল হান্নান, মৌলভীবাজার-৪ আবদুল আওয়াল তরফদার, হবিগঞ্জ-১ মো. শাহজাহান আলী, হবিগঞ্জ-২ প্রফেসর আমজাদ হোসেন, হবিগঞ্জ-৩ কাজী মহসিন হোসেন, হবিগঞ্জ-৪ মাওলানা মোখলেসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ অধ্যাপক আমিনুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মাওলানা কুতুব উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সৈয়দ গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ গোলাম ফারুক, চাঁদপুর-১ মাওলানা হারুনূর রশীদ, চাঁদপুর-২ শাহজাহান মিয়া, চাঁদপুর-৩ বিল্লাহ হোসেন মিয়াজী ও চাঁদপুর-৪ অ্যাডভোকেট শেখ সালেহ উদ্দিন, চাঁদপুর-৫ ডা. আলম উদ্দিন প্রমুখ। 

এদিকে বরগুনা-১ আসনে আফজালুর রহমান শাহীন, বরগুনা-২ মাওলানা রফিকুল ইসলাম, বরিশাল-১ অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু, বরিশাল-২ আবু তাহের, বরিশাল-৩ জহির উদ্দিন বাবর, বরিশাল-৪ মাওলানা আবুল হাসেম, বরিশাল-৫ অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন ও বরিশাল-৬ শাহ মফিজুর রহমান জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। 

ফেনী-১ আসনে দিদারুল আলম মজুমদার, ফেনী-২ অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ফেনী-৩ ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, নোয়াখালী-১ মোহাম্মদ উল্লাহ এমএসসি, নোয়াখালী-২ মাওলানা আলাউদ্দিন, নোয়াখালী-৩ মাওলানা বোরহানউদ্দিন, নোয়াখালী-৪ ড. আলমগীর মোহাম্মদ ইউসুফ, নোয়াখালী-৫ হাফেজ শাহ মিজানুর রহমান মামুন, নোয়াখালী-৬ মো. নূরন্নবী, লক্ষ্মীপুর-১ মোমিন হায়দার, লক্ষ্মীপুর-২ মাস্টার রুহুল আমীন, লক্ষ্মীপুর-৩ ডা. আনোয়ারুল আজীম, লক্ষ্মীপুর-৪ ডা. রেদাওয়ান উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১ অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, চট্টগ্রাম-২ আবদুল জব্বার, চট্টগ্রাম-৩ আলাউদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৪ আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৬ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ ফয়সাল মোহাম্মদ ইউনুস, চট্টগ্রাম-৮ ড. রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-৯ মো. নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১০ শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ ড. শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১২ মো. মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রাম-১৪ জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম মাওলানা শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৬ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-১ এনামুল হক মঞ্জু, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ, কক্সবাজার-৩ সলিম উল্লাহ বাহাদুর কক্সবাজার-৪ অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী। এ ছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলায় অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল মোমেন, বান্দরবানে মাওলানা আবদুস আজাদ ও রাঙামাটি জেলায় অধ্যাপক আবদুল হালিম নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

ঢাকার গণপরিবহন সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ওজর আপত্তি বাসমালিকদের

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ওজর আপত্তি বাসমালিকদের
কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে যেতে নারাজ বাসমালিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প তথা ঢাকা নগর পরিবহনকে সক্রিয় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। 

রাজধানী ঢাকা ও শহরতলি ঘিরে ৩৮৮টি বাস রুটকে ৪২টি রুটে নামিয়ে আনা, তারপর সেই ৪২টি রুটে আলাদা আলাদা বাস কোম্পানি গঠন করে সড়কে বাসের রেষারেষি বন্ধ করা ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এতে বাদ সেধেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। 

ঢাকার বাসমালিকদের এই সংগঠনটি বলছে, কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে যেতে তারা নারাজ। ঢাকায় বাস চালাতে তারা বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটিকে মানতে নারাজ। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) রীতিমতো অগ্রাহ্য করে তারা এই সংস্থার প্রায় সব উদ্যোগ ভেস্তে দিতে চলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হতে বাসমালিকদের মধ্যে যারা আবেদন জানিয়েছিলেন, তাদের পরিবহনের অনেক বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে। আগামী মে মাসের মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো রাজধানীর সড়ক থেকে উঠিয়ে নিতে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মানতে একদম নারাজ তারা।
 
এগিয়ে গিয়েও থমকে গেল বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প 
ঢাকা নগর পরিবহন নামে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প শুরু হয় ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) থেকে ৩০টি এবং বেসরকারি অপারেটর ট্রান্স সিলভা থেকে ২০টি বাস চালু করা হয়েছিল। ৫০টি বাসের রুট ছিল কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, শাহবাগ, মতিঝিল হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত। এক বছর ঘুরতে না ঘুরতে ট্রান্স সিলভা পরিবহন তাদের বাসগুলো তুলে নেয়। বিআরটিসিও লোকসানের মুখে প্রথমে বাস কমিয়ে দেয়। পরে একেবারে বন্ধ করে দেয়। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বিআরটিসির কোনো বাস ঢাকা নগর পরিবহন রুটে চলাচল করছে না। 

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১১ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভার আয়োজন করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতাধীন রুটগুলোতে বাস চলতে হলে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় আসতে হবে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম খবরের কাগজকে জানান, সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা মহানগরের ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটসহ ৪২টি রুটে বাস পরিচালনায় আগ্রহীদের থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করতে শুরু করে ডিটিসিএ। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৪২টি রুটে দুই শতাধিক পরিবহন কোম্পানির মালিক আবেদন জানান। তারা এসব রুটে প্রায় তিন হাজার বাস পরিচালনা করতে চান। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা নগর পরিবহনের সবুজ গুচ্ছে (গ্রিন ক্লাস্টার) আবারও বাস চালু করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন তারা। 

এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও সংকট শুরু হয়েছে গত ২১ জানুয়ারি থেকে। ওই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সভাপতিত্বে ডিএমপি কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা ঢাকা নগর পরিবহনে কোনো বাস দিতে পারব না। ঢাকা নগর পরিবহন চালাতে হলে ডিটিসিএ নিজ উদ্যোগে দুই হাজার বাস এনে চালাক। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে আমরা বাধ্য নই। ঢাকা সড়ক পরিবহনে বাস চালাতে আমাকে বাধ্য করতে পারে না কেউ।’

সাইফুল আলম আরও বলেন, ‘আমি এই সড়কে বাস নামিয়ে কী লাভটা পাব? আমাকে কোনো ফ্যাসিলিটি না সাবসিডি দেওয়া হয়েছে? ডিটিসিএর মতো সংস্থা পরিবহন খাতের জন্য কী করেছে? তারা একের পর এক কনসালট্যান্সির নাম করে সরকারের টাকা খাচ্ছে।’ 

এ বিষয়টি পরে খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। এ সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী জুবায়ের মাসুদ বলেন, ‘আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় থাকতে চাচ্ছি না। আমরা পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মহোদয়ের সহযোগিতায় সড়কে বাস চালাব।’

ঢাকা নগর পরিবহনের প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায়, সে জন্য জোর প্রচেষ্টা করছে ডিটিসিএ। সংস্থাটির পরিচালক নীলিমা আখতার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসমালিকরা এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে গেছেন। আমরা তাদের নিয়ে আরও দু-তিনটি সভা করব। এরপরে কিছু ভালো খবর পাবেন।’

রুট পারমিট, ফিটনেস নেই, তবু বাসমালিকরা সেসব গাড়িই আনতে চান এই প্রকল্পে 
বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প তথা ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হতে গেলে আধুনিক, মানসম্পন্ন বাস দিতে হবে বাসমালিকদের। কিন্তু এই বাসমালিকদের বড় অপকর্ম ধরা পড়ে ডিএমপির একটি পরিসংখ্যানে। 

সেই পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) অনুমোদিত ঢাকার ১১০টি সচল রুটে এখন বাস চলছে ৪ হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩টি। এসব রুটে অনুমোদিত গাড়ির সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩। 
ডিএমপি, বিআরটিএর নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনো কোনো পরিবহনের ৯০-৯৫টি বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (২০ বছরের বেশি) ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। যেমন: এ-২২২ রুটে গাজীপুর পরিবহনের ব্যানারে বাসের সংখ্যা ২০৫। তবে বৈধ রুট পারমিটধারী বাসের সংখ্যা ১১০। এ পরিবহনে ২০ বছরের বেশি বয়সের বাস রয়েছে ৯৫টি। 

এ-২২০ রুটে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের বাসের সংখ্যা ১১৮। এর মধ্যে বৈধ রুট পারমিটধারী বাসের সংখ্যা ১০০। মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের সংখ্যা ১৮। অথচ এ পরিবহনের মালিক নতুন করে ২৬টি বাসের রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন। 

বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, নিজেদের রুট পারমিটবিহীন বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলমান রুট পারমিটবিহীন বাসগুলোকেও নিজস্ব ব্যানারে পরিচালনার তোড়জোড় শুরু করেছে এসব পরিবহন কোম্পানি। যেমন- দুলদুল পরিবহনের ২৯টি বাসের সবগুলোর রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি বাস তারা অন্য কোম্পানির ব্যানারে পরিচালনা করছে। এসব বাস নিজেদের ব্যানারে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অন্য রুটের ১৩টি বাসসহ মোট ৩৮টি বাস নিয়ে পুনরায় দুলদুল সার্ভিস চালু করতে তোড়জোড় করছেন মালিক। অনাবিল পরিবহনের ৫১টি বাসের মধ্যে ৪২টির রুট পারমিট নেই। তারাও নানা রুট থেকে বাস এনে এখন ৮৩টি বাস পরিচালনা করতে চাণ। এমন মালিকদের সংখ্যা ৫১ জন।

ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, ‘এই প্রকল্পে কোনোভাবেই যখন এসব বাসমালিককে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে, তখন তারা আমাদের প্রকল্প নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি করেছেন। সমন্বিত বাস পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আসবেন না বলে এখন আরটিসি সভায় গিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে চাইছেন।’

সমাধান তবে কোথায় 
ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে হলে সরকারি পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে হবে বলে মনে করেন পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞরা। 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরটিসির রুট আর ঢাকা নগর পরিবহনের রুট বিদ্যমান থাকায় এখন সংকট তৈরি হয়েছে। এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় না হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা থেকেই যাবে। একই সড়কে তো দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা চলতে পারে না।’ 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেসরকারি বাসমালিকদের ওপর ভরসা করে সড়ক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো যাবে না। তাদের লক্কড়ঝক্কড় বাস দিয়ে কোনো গণপরিবহনব্যবস্থা চলতে পারে না। সরকারকে এখন অন্তত চার হাজার নতুন বাস আনতে হবে। 

তিনি বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সেসব বাস সড়কে নামলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে। এতে সড়কে যানজট কমবে, বাসের ট্রিপের সংখ্যা বাড়বে, আয়ও হবে বেশি। এই ব্যবস্থাটি এই সরকারকে শুরু করে দিয়ে যেতে হবে। তার পরের সরকারকে এই ব্যবস্থা চলমান রাখতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে রাজধানীতে বেসরকারি মালিকদের গাড়ি চলে না। আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা শুরু করতে না পারলে কোনো উন্নতি দেখি না। 

সিফাত/

সংকটেও ঢাকায় ‘বিলাসী সার্কিট হাউস’

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৫ এএম
সংকটেও ঢাকায় ‘বিলাসী সার্কিট হাউস’
প্রতীকি ছবি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের অনেক অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাতিল করেছে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ে হিমশিম খেলেও দেশের অর্থনৈতিক সংকটের এই দুঃসময়ে ‘ঢাকায় বিলাসী সার্কিট হাউস’ প্রকল্প বাতিল করা হয়নি।

শেখ হাসিনার অনুমোদন করা সেই প্রকল্প ‘ঢাকা জেলায় বিদ্যমান সার্কিট হাউস ভবনের স্থলে নতুন অত্যাধুনিক সার্কিট হাউস ভবন নির্মাণ’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গোসল করার জন্য পাঁচ তারকা হোটেলের মতো সুইমিংপুল তৈরি করা হবে। তাতে খরচ করা হবে ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, গার্ডরুম তৈরি করতেও খরচ করা হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এভাবে আসবাবপত্র কেনা থেকে শুরু করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে ৩৩৪ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থনীতিতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা মোকাবিলা করতে এই সরকার আগের সরকারের অনেক অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী প্রকল্প বাতিল করেছে। তাই এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছাড়া এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প বাতিল বা স্থগিত করা দরকার। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।’ 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি গত ১৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাতিল করা হবে। তার এই নির্দেশনার পর ভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্পের তালিকা তৈরি শুরু করে। তার পরই ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, ঢাকার নবাবগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নসহ অসংখ্য প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

কিন্তু দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক পর্যায়ে চলে গেলেও ঢাকায় সার্কিট হাউস নির্মাণের মতো বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। গত বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা প্রকল্পটির অনুমোদন দেন। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ১৩ তলা ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে খরচ ধরা হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২৪-এর জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। 

সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শুরুতেই অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অনেক শিল্প-কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যায়। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প কার্যকর করতে যাচ্ছে। এই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশীষ কুমার সাহা গত ৫ জানুয়ারি প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছেন। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাজধানীর বেইলি রোডের পুরোনো সার্কিট হাউসের জায়গায় নির্মাণ করা হবে নতুন সার্কিট হাউস ভবন। এতে থাকবে আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা। পাঁচ তারকা মানের হোটেলে যা যা থাকে, তার সবটাই পাওয়া যাবে এখানে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা সরকারি কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সাময়িক রাত্রিযাপনের জন্য ভবনটি ব্যবহৃত হবে। নতুন সার্কিট হাউসে দুটি বেজমেন্টসহ একটি ১৩ তলা এবং আরেকটি ৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। 

সার্কিট হাউস ভবনের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক সব পণ্য। এতে খরচ করা হবে ১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া সুইমিংপুলও নির্মাণ করা হবে। এতে খরচ হবে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা খরচে জিমনেসিয়ামও করা হবে। অতিথিদের পাহারা দেওয়ার জন্য একটি গার্ডরুম নির্মাণে খরচ করা হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রকল্প পরিচালকের দুটি গাড়ির জন্য খরচ করা হবে ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া এসি, লিফট, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, স্যুয়ারেজ সিস্টেম, জেনারেটর এবং বিদ্যুৎবাবদ বাকি টাকা খরচ হবে। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও (এসটিপি) নির্মাণ করা হবে। তাতে খরচ করা হবে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এভাবে সব কাজ করতে ৩৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ঢাকায় আসতে হয়। তাদের সাময়িক রাত্রিযাপনের জন্য ঢাকা জেলা সার্কিট হাউসটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিদ্যমান সার্কিট হাউসটি অনেক পুরোনো। চাহিদা অনুযায়ী স্থান-সংকুলান সম্ভব হয় না। আবার পুরোনো সার্কিট হাউসটিতে তেমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। এ ছাড়া রাষ্ট্রের ভিভিআইপি অতিথিদের রাত্রিযাপনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত রেস্টহাউস নেই। তাই কর্মকর্তাদের ঢাকায় সাময়িক আবাসন সুবিধা বাড়ানোর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারেন। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে।

সিফাত/

লুটপাটে শতকোটি টাকার মালিক খালেক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩১ এএম
লুটপাটে শতকোটি টাকার মালিক খালেক
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক

২০০৮ থেকে ২০২৪। ১৬ বছর। এই সময়ে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ৮৩২ গুণ। ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনের সময় তার কাছে নগদ টাকা ছিল মাত্র ৫৭ হাজার ৫৫০ টাকা। ২০২৩ সালে তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে তার জমা ছিল আরও ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকা অবস্থায় নিয়ম ভেঙে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়ান তিনি। খুলনার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে থেকে অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কয়েক বছরের মধ্যেই ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাটে কৃষি-অকৃষি জমি, মৎস্যঘের, রাজউকের পূর্বাচল, কেডিএ ময়ূরী আবাসিক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মুজগুন্নি আবাসিকে প্লটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে তালুকদার আব্দুল খালেক ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে ওঠেন।

অভিযোগ রয়েছে, খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি থাকায় সবকিছু একক নিয়ন্ত্রণে ছিল তালুকদার আব্দুল খালেকের। অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার আর লুটপাটের মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। 

সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২১ জানুয়ারি দুদকের খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে অনুসন্ধান টিম গঠন করে সংস্থাটি। এর মধ্যে তালুকদার খালেক ও তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারের আয়কর রিটার্ন, কর নির্ধারণী আদেশসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, তার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত ঠিকাদারদের তথ্য, মেয়র হয়ে রামপাল-মোংলায় যাতায়াতের জন্য কেসিসির গাড়ি ব্যবহার, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অর্থ আত্মসাতের বিষয়েও অনুসন্ধান করছেন দুদক কর্মকর্তারা।

জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়েও প্রায়ই তিনি ব্যক্তিগত কাজে খুলনা থেকে মোংলা ও রামপাল যেতেন। তিনি খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ২০১৮ ও ২০২৩ সালে দুটি নির্বাচনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খালেক তালুকদার তার পক্ষে প্রচার চালাতে বাধ্য করেন। প্রচারকাজে ব্যয় মেটাতে প্রচুর টাকা তোলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে।

সিটি করপোরেশনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন ট্রেডার্স, তাজুল এন্টারপ্রাইজ ও আজাদ ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে খালেক তালুকদারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকাদারি কাজের যাবতীয় তথ্য ও পরিশোধিত বিলের পরিমাণ জানতে চেয়ে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ কাজ পেয়েছেন খালেকের আস্থাভাজন ঠিকাদাররা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে তার কাছে নগদ ৫৭ হাজার ৫৫০ টাকা থাকার তথ্য দেন। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে আয় ২ লাখ ১০ হাজার, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার, বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ৯১ হাজার, সঞ্চয়পত্র থেকে আয় ৬ লাখ ৮২ হাজার, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর। তার দুটি গাড়ি, ২৩ বিঘা কৃষিজমি, তিন কাঠা অনাবাদি জমি আছে। জমিসহ নগরীর কাস্টমঘাটের একটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার দাম ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। 

৫ আগস্টের পর থেকে তালুকদার খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন। দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে। বর্তমানে তিনি কোথায় তা কেউ জানে না। কাস্টমঘাটের বাড়ি দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হলফনামা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে খালেকের নগদ টাকা ছিল ৪ কোটি ৭৯ লাখ। চারটি ব্যাংকে জমা ছিল ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। তবে এই টাকা তিনি কীভাবে আয় করেছেন পলাতক থাকায় তার কাছ থেকে জানা যায়নি। 

সচেতন নাগরিকদের সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, বিগত সরকারের সময় যে বা যারা কালোটাকার মালিক হয়েছে, দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী হাবিবুন নাহারসহ তাদের সহযোগীদের দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যাপারে দুদক যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে নাগরিক সংগঠন স্বাগত জানায়। একইভাবে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি তালুকদার খালেক কীভাবে ঠিকাদারি সিন্ডিকেটে জড়িত হলেন এবং তার সহযোগী আরও যারা এভাবে আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন, প্রত্যেকের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।

দুদকের খুলনার উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ খবরের কাগজকে জানান, সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। তার ও সহযোগীদের আর্থিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীতে বিদ্যালয় ঘেঁষে ইটভাটা, শ্বাসকষ্টে ভুগছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২০ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২২ এএম
রাজশাহীতে বিদ্যালয় ঘেঁষে ইটভাটা, শ্বাসকষ্টে ভুগছে শিক্ষার্থীরা
গোদাগাড়ী কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষেই ইটভাটার কালো ধোঁয়া উড়ে আসছে। ছবি : খবরের কাগজ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি ছিমছাম, পরিপাটি। শুধু তাই নয়, এর সীমানাপ্রাচীর থেকে শ্রেণিকক্ষ- সব স্থানেই নান্দনিকতার ছাপ রাখা হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের মাধ্যমে পড়ালেখা শেখার সব আয়োজন রয়েছে। ক্লাসরুমের দেয়ালে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন চিত্র। লাল ইটের প্রাচীরঘেরা বিদ্যালয়ের ভেতরে সুবজ খেলার মাঠ। রয়েছে দোলনাসহ খেলাধুলার নানা উপকরণ। চত্বরে লাগানো হয়েছে নানা ধরনের ফল-ফুলের গাছ। অথচ শিশুপার্কের মতো সুন্দর এই বিদ্যালয়টির পেছনের সীমানা ঘেঁষেই দাউ দাউ করে জ্বলছে ইটভাটার আগুন। আর সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে সড়কে চলছে ইট ও মাটির ট্রাক। এ ছাড়া ইট ও মাটি রাখা হচ্ছে বিদ্যালয়টির দেয়াল ঘেঁষেই। এতে ভাটায় ইট পোড়ানোর কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ধুলাবালি বিদ্যালয় ভবনে ঢুকে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। পাশাপাশি জীবনের প্রথম পাঠের স্থানে এসে দিন দিন শ্বাসকষ্টসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে কোমলমতি শিশুরা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলপথ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। অথচ সেই আইন না মেনে কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পেছনে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে পশ্চিম পাশে মেসার্স এম এস ব্রিকস্ নামে একটি ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ইট। আবার প্রায় সমান দূরত্বে উত্তর পাশেও রয়েছে মুন হাওয়া ব্রিকস নামে অপর একটি ভাটা। সব মিলিয়ে এ বিদ্যালয়কে মাঝখানে রেখে দুটি ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ইট। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, ইটভাটার দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক বিবেচনা করে ভাটার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে সেখান থেকে এখনো কোনো প্রতিকার মেলেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০০ সালে স্থাপিত গোদাগাড়ীর কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ভাটায় দিনে-রাতে সমানতালে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি থেকে বাঁচতে বিদ্যালয়ের চারটি শ্রেণিকক্ষেই জানালা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। আবার ক্লাস শেষ হলেই শিশুরা বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলায় মেতে উঠছে। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে অসুস্থ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইট পোড়ানোর চুল্লির ধোঁয়া, ইট কাটার মাঠের (ফরাস) ধুলা এবং মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রলি গাড়ির শব্দে ভারী হয়ে ওঠে স্কুল কম্পাউন্ডের পরিবেশ। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমাইরা আফরিন বলেন, ‘ভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের জানালাগুলো সব সময় বন্ধ রাখা হয়। এতে আলো-বাতাস না পেয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আবার, জানালা খুললে চোখ মেলে চলাফেরা করা যায় না। কালো ধোঁয়া এসে শ্রেণিকক্ষে গন্ধ ছড়ায়। বেঞ্চে কালি হয়ে যায়। আমরা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছি।’ 

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ বলেন, ‘স্কুলের পাশে ভাটা থাকায় বাতাসে ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়া আমাদের নাক-মুখে ঢুকে যাচ্ছে। এতে অনেকের হাঁচি-কাশিসহ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।’ 

স্কুলের শিক্ষিকা কামরুন নেসা বলেন, ‘স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় এখানকার প্রায় সব শিক্ষার্থীই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। তারা এখানে পড়ালেখা করতে এসে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আবার অর্থের অভাবে তাদের চিকিৎসা নিতেও কষ্ট হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।’ 

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ইমাম হোসেন বলেন, ‘ভাটাগুলো একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছে। অন্যদিকে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, স্কুল এক-দুই দিন বন্ধ থাকার পর খুললেই চেয়ার-টেবিলসহ সব আসবাবপত্র ধুলাবালি ও কালির আস্তরণে পরিত্যক্ত ভবনের মতো হয়ে যায়। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।’ 

এ বিষয়ে মুন হাওয়া ব্রিকস নামে ভাটার মালিক মো. আফজাল হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে মেসার্স এমএস ব্রিকসের মালিক ওবাইদুল্লাহ দাবি করে বলেন, ‘ভাটা স্থাপনের পর স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এ বিষয়ে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন)-২০১৯ এর ব্যত্যয় ঘটেনি।’ তবে ভাটা কত সালে নির্মাণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনটি কেটে দেন। পরে আবারও কল করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হায়াতকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি। এতে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কাদিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ওই দুটি ভাটা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ভাটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই দুটির বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে মত-ভিন্নমত

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৭ এএম
দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে মত-ভিন্নমত
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা উপযোগী কি না, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একাধিক সংস্কার কমিটি বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনতে কাজ করছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন হলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ে ফেডারেল রাষ্ট্রকাঠামো তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা গঠিত হবে। গত ২০ বছরে নির্বাচনি ইশতেহারসহ নানা সভা-সেমিনারে রাজনীতিবিদসহ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মত দিয়েছেন। আবার দেশের আয়তন, জাতি ও ভাষাগত বড় পার্থক্য না থাকায় অনেকেই এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি এটার সঙ্গে একমত নই। কারণ এটা ব্যয়বহুল হবে। আমাদের দেশটা ছোট আর এত বৈচিত্র্য নেই। এটি বহু সমস্যা তৈরি করবে। এমনিতে আমাদের দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে সমস্যা। আরও নির্বাচনি প্রতিনিধি সৃষ্টি মানে আরও সমস্যা সৃষ্টি করা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. দিল রওশন আরা জান্নাত খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটি একটি অবাস্তব পরিকল্পনা। এত ছোট একটা দেশে কোন ক্রাইটেরিয়াতে দেশটা ভাগ হবে? ভাগ করতে হলে একটা ক্রাইটেরিয়া লাগে। আমাদের দেশ তো একসঙ্গে লাগানো। এখানে তো দূরত্বের কিছু নেই। মানুষের মধ্যেও বিভেদ নেই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতির সংখ্যা এক ভাগের নিচে।’

তিনি বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রদেশ করার দরকার পড়ে না। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করলে এমনিতেই করা যায়। আমাদের যে কাঠামো সেখানে যদি উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করি, ইউনিয়নকে শক্তিশালী করি, অটোমেটিকালি বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে যায়। প্রদেশ করার বিষয়টি অদূরদর্শী পরিকল্পনা।’

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও। দলটির নেতারাও এটাকে অবাস্তব হিসেবে দেখছেন। প্রদেশ করলে আঞ্চলিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হতে পারে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এ রকম উদাহরণ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী বণ্টন করা থাকে। যুক্তরাজ্যের লেখক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলবার্ট ভেন ডাইসির মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এমন এক কাঠামো, যেখানে জাতীয় সরকারের সঙ্গে প্রাদেশিক সরকারের অধিকারের সামঞ্জস্যপূর্ণ সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়।’ এই ক্ষমতার বণ্টনটা এমনভাবে হয়, প্রত্যেকেই নিজ এলাকায় স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। সেখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকে। বাকি বিষয়গুলো স্ব স্ব প্রাদেশিক সরকারের কাছে থাকে।’

পৃথিবীর ৭টি বৃহৎ ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আর্জেন্টিনা। এই দেশগুলোতে ফেডারেল ধরনের সরকারব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতানী আমল, মোগল, ব্রিটিশ আমলেও এ ধরনের প্রাদেশিক সিস্টেম চালু ছিল। বর্তমান ভারতে ২৮ রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। যেখানে জনসংখ্যা ১৪৬ কোটির বেশি। আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে বাংলাদেশের চেয়ে কম আয়তন ও জনসংখ্যার দেশ নেপালেও সাতটি প্রদেশ রয়েছে। আমাদের দেশের শাসনকাঠামো বা প্রশাসনিক স্তর নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন- এসব ভাগে বিভক্ত। আর ৬৪ জেলা ৮ বিভাগের আওতাধীন। এতে উন্নয়নের সুষম বণ্টন হয় না বলে মনে করেন অনেকে। অধিকাংশ কার্যক্রম রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ৪৪ হাজার ৫০০ লোকের বসবাস।

প্রাদেশিক সরকারের পক্ষে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রবিউল ইসলাম। বিভিন্ন দেশের সংবিধান অধ্যয়ন এবং উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার সূত্রে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বিশদ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন বাংলাদেশ একটা ছোট স্টেট (রাষ্ট্র) আর ভারত একটা বড় স্টেট (রাষ্ট্র)। ছোট স্টেটে ফেডারেল স্ট্রাকচার থাকতে পারে না। এটা একটা প্রাথমিক ধারণা। আসলে সুইজারল্যান্ডের মতো ছোট দেশ, যেখানে লোকসংখ্যা অল্প, সেখানেও ভাগ (ক্যানটন) আছে। একটা রাষ্ট্র মানুষকে শাসন করে, তার ভূমিকে নয়। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ফেডারেল স্ট্রাকচারে ভাগ না করলে কখনো সুশাসন দেওয়া যাবে না। আজকে না করলেও আগামী ২০ বছর পরে হলেও এটা করতে হবে। এটা লাগবেই।’ 

তিনি বলেন, ‘ফেডারেল স্ট্রাকচার এক জিনিস, বিকেন্দ্রীকরণ আরেক জিনিস। বর্তমান কাঠামোতে দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ আছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। আমরা ২০০০ সাল থেকে দেখে আসছি যারা ক্ষমতায় যায় তারা একচেটিয়া যায়। এর অন্যতম কারণ পলিটিক্যাল ফেয়ার কম্পিটিশন হয় না। যদি ফেডারেল গভর্নমেন্ট থাকত, তাহলে নর্থ বেঙ্গলের জন্য আলাদা অনেক স্ট্রং পলিটিক্যাল পার্টি হতো। সেই পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে সেন্ট্রাল পার্টির ফাইট করে জিততে হতো। এটা সেন্ট্রাল লেভেলে পার্টিকে স্ট্রং করত, জবাবদিহির জায়গা বাড়ত। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করলে জবাবদিহি তৈরি হতো। দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করলে জবাবদিহির জায়গা থাকে না। সেন্ট্রালের (কেন্দ্রের) হাতে সব ক্ষমতা থাকলে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।’

দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বণ্টন হয় না উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জাকের পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও অর্থনীতির অধ্যাপক সায়েম আমির ফয়সাল। ২০২২ সালের ১৪ জুন এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘দেশের সব মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমানভাবে নিশ্চিত করতে হলে প্রাদেশিক সরকার চালু করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা গত অর্থবছরে বরাদ্দ হলেও সমানভাবে কি দেশের ৬৪ জেলায় বণ্টন হয়েছে? আমার জেলা ফরিদপুরে ব্যয় করা হয়নি, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। ফরিদপুরে সমবণ্টন হলে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হতো, তাহলে ১০-১৫টি আইসিইউ বেড করা যেত, হাসপাতালের মানোন্নয়ন করা যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।’

জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একসময় এ নিয়ে একটা রূপরেখা দিয়েছিলেন। তার দল জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকটি নির্বাচনি ইশতেহারেও প্রদেশ করার কথা বলা হয়েছে। দলের সর্বশেষ ইশতেহারে উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদ্বীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ, চট্টলা প্রদেশের কথা বলা হয়েছে। সরকার কাঠামো হবে দুই স্তরবিশিষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। থাকবে ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য। আর প্রদেশ চালাবে প্রাদেশিক সরকার। থাকবে প্রাদেশিক সংসদ সদস্য। প্রতিটি উপজেলা কিংবা থানাকে প্রাদেশিক সরকারের আসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দপ্তর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল। 

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশকে ন্যূনতম পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করে একটি ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। নিজের একটি নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে দুটি করে চারটি প্রদেশ ও বৃহত্তর ঢাকাকে নিয়ে আরেকটি প্রদেশ করা যেতে পারে। কেন্দ্রের হাতে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, সীমান্ত ও সমুদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। বাকি বিষয়গুলোতে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধান থাকলেও প্রদেশগুলো ব্যবস্থাপনায় থাকবে। 

এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তার মতে, বাংলাদেশকে প্রদেশে বিভক্ত করা হলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ জন্য প্রাদেশিক সরকার ও কেন্দ্রের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন হবে। এসব না করে বর্তমান কাঠামোকে শক্তিশালী করে জনগণকে সুশাসন উপহার দেওয়া যাবে।