ঢাকা ২৭ মাঘ ১৪৩১, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১

ঢাকার গণপরিবহন সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ওজর আপত্তি বাসমালিকদের

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৫ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৬ এএম
সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ওজর আপত্তি বাসমালিকদের
কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে যেতে নারাজ বাসমালিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প তথা ঢাকা নগর পরিবহনকে সক্রিয় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। 

রাজধানী ঢাকা ও শহরতলি ঘিরে ৩৮৮টি বাস রুটকে ৪২টি রুটে নামিয়ে আনা, তারপর সেই ৪২টি রুটে আলাদা আলাদা বাস কোম্পানি গঠন করে সড়কে বাসের রেষারেষি বন্ধ করা ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এতে বাদ সেধেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। 

ঢাকার বাসমালিকদের এই সংগঠনটি বলছে, কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে যেতে তারা নারাজ। ঢাকায় বাস চালাতে তারা বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটিকে মানতে নারাজ। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) রীতিমতো অগ্রাহ্য করে তারা এই সংস্থার প্রায় সব উদ্যোগ ভেস্তে দিতে চলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হতে বাসমালিকদের মধ্যে যারা আবেদন জানিয়েছিলেন, তাদের পরিবহনের অনেক বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গেছে। আগামী মে মাসের মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো রাজধানীর সড়ক থেকে উঠিয়ে নিতে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মানতে একদম নারাজ তারা।
 
এগিয়ে গিয়েও থমকে গেল বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প 
ঢাকা নগর পরিবহন নামে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প শুরু হয় ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। তখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) থেকে ৩০টি এবং বেসরকারি অপারেটর ট্রান্স সিলভা থেকে ২০টি বাস চালু করা হয়েছিল। ৫০টি বাসের রুট ছিল কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, শাহবাগ, মতিঝিল হয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত। এক বছর ঘুরতে না ঘুরতে ট্রান্স সিলভা পরিবহন তাদের বাসগুলো তুলে নেয়। বিআরটিসিও লোকসানের মুখে প্রথমে বাস কমিয়ে দেয়। পরে একেবারে বন্ধ করে দেয়। 

সরেজমিন দেখা গেছে, বিআরটিসির কোনো বাস ঢাকা নগর পরিবহন রুটে চলাচল করছে না। 

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ১১ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রশাসক ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম পরিবহন খাতসংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভার আয়োজন করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতাধীন রুটগুলোতে বাস চলতে হলে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় আসতে হবে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম খবরের কাগজকে জানান, সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা মহানগরের ২৪, ২৫, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুটসহ ৪২টি রুটে বাস পরিচালনায় আগ্রহীদের থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করতে শুরু করে ডিটিসিএ। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৪২টি রুটে দুই শতাধিক পরিবহন কোম্পানির মালিক আবেদন জানান। তারা এসব রুটে প্রায় তিন হাজার বাস পরিচালনা করতে চান। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা নগর পরিবহনের সবুজ গুচ্ছে (গ্রিন ক্লাস্টার) আবারও বাস চালু করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন তারা। 

এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গেলেও সংকট শুরু হয়েছে গত ২১ জানুয়ারি থেকে। ওই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সভাপতিত্বে ডিএমপি কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা ঢাকা নগর পরিবহনে কোনো বাস দিতে পারব না। ঢাকা নগর পরিবহন চালাতে হলে ডিটিসিএ নিজ উদ্যোগে দুই হাজার বাস এনে চালাক। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে আমরা বাধ্য নই। ঢাকা সড়ক পরিবহনে বাস চালাতে আমাকে বাধ্য করতে পারে না কেউ।’

সাইফুল আলম আরও বলেন, ‘আমি এই সড়কে বাস নামিয়ে কী লাভটা পাব? আমাকে কোনো ফ্যাসিলিটি না সাবসিডি দেওয়া হয়েছে? ডিটিসিএর মতো সংস্থা পরিবহন খাতের জন্য কী করেছে? তারা একের পর এক কনসালট্যান্সির নাম করে সরকারের টাকা খাচ্ছে।’ 

এ বিষয়টি পরে খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। এ সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী জুবায়ের মাসুদ বলেন, ‘আমরা বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় থাকতে চাচ্ছি না। আমরা পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মহোদয়ের সহযোগিতায় সড়কে বাস চালাব।’

ঢাকা নগর পরিবহনের প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায়, সে জন্য জোর প্রচেষ্টা করছে ডিটিসিএ। সংস্থাটির পরিচালক নীলিমা আখতার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসমালিকরা এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে গেছেন। আমরা তাদের নিয়ে আরও দু-তিনটি সভা করব। এরপরে কিছু ভালো খবর পাবেন।’

রুট পারমিট, ফিটনেস নেই, তবু বাসমালিকরা সেসব গাড়িই আনতে চান এই প্রকল্পে 
বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প তথা ঢাকা নগর পরিবহনে যুক্ত হতে গেলে আধুনিক, মানসম্পন্ন বাস দিতে হবে বাসমালিকদের। কিন্তু এই বাসমালিকদের বড় অপকর্ম ধরা পড়ে ডিএমপির একটি পরিসংখ্যানে। 

সেই পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) অনুমোদিত ঢাকার ১১০টি সচল রুটে এখন বাস চলছে ৪ হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩টি। এসব রুটে অনুমোদিত গাড়ির সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩। 
ডিএমপি, বিআরটিএর নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনো কোনো পরিবহনের ৯০-৯৫টি বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (২০ বছরের বেশি) ফুরিয়ে গেছে অনেক আগে। যেমন: এ-২২২ রুটে গাজীপুর পরিবহনের ব্যানারে বাসের সংখ্যা ২০৫। তবে বৈধ রুট পারমিটধারী বাসের সংখ্যা ১১০। এ পরিবহনে ২০ বছরের বেশি বয়সের বাস রয়েছে ৯৫টি। 

এ-২২০ রুটে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের বাসের সংখ্যা ১১৮। এর মধ্যে বৈধ রুট পারমিটধারী বাসের সংখ্যা ১০০। মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের সংখ্যা ১৮। অথচ এ পরিবহনের মালিক নতুন করে ২৬টি বাসের রুট পারমিটের জন্য আবেদন করেছেন। 

বিভিন্ন নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, নিজেদের রুট পারমিটবিহীন বাসের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলমান রুট পারমিটবিহীন বাসগুলোকেও নিজস্ব ব্যানারে পরিচালনার তোড়জোড় শুরু করেছে এসব পরিবহন কোম্পানি। যেমন- দুলদুল পরিবহনের ২৯টি বাসের সবগুলোর রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি বাস তারা অন্য কোম্পানির ব্যানারে পরিচালনা করছে। এসব বাস নিজেদের ব্যানারে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অন্য রুটের ১৩টি বাসসহ মোট ৩৮টি বাস নিয়ে পুনরায় দুলদুল সার্ভিস চালু করতে তোড়জোড় করছেন মালিক। অনাবিল পরিবহনের ৫১টি বাসের মধ্যে ৪২টির রুট পারমিট নেই। তারাও নানা রুট থেকে বাস এনে এখন ৮৩টি বাস পরিচালনা করতে চাণ। এমন মালিকদের সংখ্যা ৫১ জন।

ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, ‘এই প্রকল্পে কোনোভাবেই যখন এসব বাসমালিককে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে, তখন তারা আমাদের প্রকল্প নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি করেছেন। সমন্বিত বাস পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আসবেন না বলে এখন আরটিসি সভায় গিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে চাইছেন।’

সমাধান তবে কোথায় 
ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে হলে সরকারি পরিবহনব্যবস্থা চালু করতে হবে বলে মনে করেন পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞরা। 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরটিসির রুট আর ঢাকা নগর পরিবহনের রুট বিদ্যমান থাকায় এখন সংকট তৈরি হয়েছে। এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় না হলে সড়কে বিশৃঙ্খলা থেকেই যাবে। একই সড়কে তো দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা চলতে পারে না।’ 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেসরকারি বাসমালিকদের ওপর ভরসা করে সড়ক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো যাবে না। তাদের লক্কড়ঝক্কড় বাস দিয়ে কোনো গণপরিবহনব্যবস্থা চলতে পারে না। সরকারকে এখন অন্তত চার হাজার নতুন বাস আনতে হবে। 

তিনি বলেন, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত সেসব বাস সড়কে নামলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে। এতে সড়কে যানজট কমবে, বাসের ট্রিপের সংখ্যা বাড়বে, আয়ও হবে বেশি। এই ব্যবস্থাটি এই সরকারকে শুরু করে দিয়ে যেতে হবে। তার পরের সরকারকে এই ব্যবস্থা চলমান রাখতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে রাজধানীতে বেসরকারি মালিকদের গাড়ি চলে না। আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা শুরু করতে না পারলে কোনো উন্নতি দেখি না। 

সিফাত/

ভুল পথে যাচ্ছে উঠতি বয়সীরা, অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায়

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:০৬ পিএম
ভুল পথে যাচ্ছে উঠতি বয়সীরা, অভিভাবকরা উৎকণ্ঠায়
প্রতীকী ছবি

বাবা-মা তথা স্বজনদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে শিশু-কিশোর বা উঠতি বয়সীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবাধ অপব্যবহার ও পারিবারিক-সামাজিক উদাসীনতায় ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে কিশোর বয়সীরা। মনোজগতের পরিবর্তনে তারা অনেক সময় নিজের বাবা-মা, পরিবার, স্বজন, সহপাঠী-বন্ধু সবকিছুর মায়া বা বলয় ত্যাগ করে ভিন্ন কোনো নতুন পথকে বেছে নিচ্ছে অনায়াসে। এ যেন গোলকধাঁধার চক্করে পড়ার মতো অবস্থা।

ঢাকার আদাবর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের সূত্রে এক যুবকের সঙ্গে ১১ বছরের আরাবি ইসলাম সুবার আত্মগোপনে যাওয়ার ঘটনা সবাইকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। যাদের ঘরে শিশু-কিশোর বয়সী সন্তান রয়েছে, তাদের মনে এই ঘটনা চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু উঠতি বয়সী শিশুদের ভুল পথে পা বাড়ানোর জন্য দায়ী কে বা কারা, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের ভুল পথে পা বাড়ানোর পেছনে এককভাবে কেউ দায়ী নন। বাবা-মা, পরিবার, সমাজ- সবারই দায় আছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার অন্যতম সমস্যা। সঙ্গদোষে বা নানা কারণে উঠতি বয়সী শিশু-কিশোররা অনেক সময় বিপথগামী হয়ে উঠছে। ফলে স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, কোনো ভুলে জড়িয়ে যাচ্ছে কি না, সেগুলো ভালোভাবে তাদের সঙ্গে মিশে দেখভাল করতে হবে। শিশুদের মানসিক বিকাশের বাধাগুলো দূর করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার আদাবর থেকে আত্মগোপনে যাওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবাকে গত মঙ্গলবার নওগাঁর এক যুবকের বাসা থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধারের পর সুবা বলছিল, বাসায় তার ভালো লাগে না, তাই মোমিনের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিল। টিকটকের সূত্রে নওগাঁর বাসিন্দা মোমিন হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। এমনকি বাবা-মাসহ স্বজনদের উৎকণ্ঠায় ফেলে এভাবে আত্মগোপনে যাওয়ার পরও সুবা কথা বলতে গিয়ে বারবার খিলখিল করে হাসছিল। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু সুবার এই ঘটনায় মূলত সারা দেশেই সচেতন অভিভাবকদের মনে নতুন উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সুবাকে প্রতীক ধরে অনেকে নিজের সন্তানের বিষয়েও চিন্তায় পড়ে গেছেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলে এটা জানা গেছে। 

এ প্রসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের বাবা আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা ফজলুল হক গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান সময় ও প্রেক্ষাপটে অভিভাবক বা বাবা হিসেবে সন্তানদের নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় সময় পার করতে হচ্ছে। ফেসবুক, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অভিভাবকদের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু অনেক অভিভাবক এসব বিষয়ে উদাসীন। সন্তানরা ছোট মানুষ হিসেবে ভুল করতে পারে, ভুল চিন্তাকে সঠিক ভাবতেই পারে, সেখানে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের যে ভূমিকা পালন করার কথা, সেটা আমরা অনেকেই করি না। এই উদাসীনতার কারণে অভিভাবকদের কখনো কখনো বড় খেসারত দিতে হয়।’

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, পারিবারিক বন্ধন, অনুশাসন, মায়াসহ গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো ধীরে ধীরে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিশু থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীসহ সবার মধ্যে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশু-কিশোরদের মনোজগতেও বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে। কোনটি ইতিবাচক আর কোনটি নেতিবাচক, সেটা তারা বুঝতে পারছে না। সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য বাবা-মাকে বাগানের মালির মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। সব সময় পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটা হয় না। আবার অনেক সময় পরিচর্যা বা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে শিশুদের ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন। বাধ্য করছেন বা অধিক কঠোরতা দেখাচ্ছেন। এগুলো শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য-বিকাশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।

শিশু সুবার প্রসঙ্গ টেনে ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিশুটি বলছিল তার বাসায় ভালো লাগছিল না।’ এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ শিশুটির বাসা-বাড়িতে ভালো লাগছিল না কেন, সেটা উদ্ঘাটন করা দরকার। কেবল সুবার ক্ষেত্রে নয়, সব শিশু-কিশোরের বিষয়ে বলব, এটি গুরুত্বপূর্ণ। মোটকথা, শিশু-কিশোরদের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। এককভাবে কাউকে দায়ী না করে বরং পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবারই এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, শিশু-কিশোরদের ভুল পথে যাওয়া বা অপরাধে জড়ানোর ক্ষেত্রে মূলত সমাজ ও পরিবারের দায় সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে সমাজ ও পরিবারের মধ্যে এখন নানা বিভাজন দেখা দিয়েছে। আগে গোত্রীয় বা বংশগত একধরনের বিভাজন দেখা যেত, আর এখন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ভয়ানক রকম ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বা যোগসূত্র না থাকায় শিশু-কিশোররা ভুলপথে পা বাড়াচ্ছে। কিশোর অপরাধ বা কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে। 

এসব ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মা তথা পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে হবে। সন্তানের মনোজগতে কী হচ্ছে, সেটা উপলব্ধি করতে হবে। পরিবার ও সমাজের প্রতি মূল্যবোধ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের বাধাগুলো দূর করতে পারলেই তারা ভুল পথে যাবে না বা উদ্বেগের কারণ হবে না। 

এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (সাবেক আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, ‘শিশু-কিশোর বা উঠতি বয়সীদের পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বা প্রধান ভূমিকা পরিবারের। যখন কোনো শিশু-কিশোর অপরাধে জড়িয়ে যায় কিংবা কোনো কারণে নিখোঁজ হয়, তখন সেখানে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা থাকে। তারপরও সচেতনতার অংশ হিসেবে শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে পুলিশেরও কাজ করার সুযোগ আছে। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে উঠান বৈঠক হয়। সমাজের গণ্যমান্যদের নিয়ে সভা-সেমিনার হয়, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নানা আয়োজন হয়ে থাকে। এসব আয়োজনে উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মানসিক বিকাশ, তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নানা কার্যক্রম চালানো যায়। যদিও এ ধরনের কিছু কাজ পুলিশ করেও যাচ্ছে বলেও শুনে থাকি।’

ধোবাউড়ায় হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৮ এএম
ধোবাউড়ায় হাসপাতাল আছে, চিকিৎসক নেই
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি: খবরের কাগজ

ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া। ময়মনসিংহ সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এই উপজেলার অবস্থান। এখানকার গ্রামের রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। চাইলেই কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে উপজেলা কিংবা জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারেন না। কেউ অসুস্থ হলে তার শেষ ঠিকানা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

এক যুগ আগে এই হাসপাতালটি ৩০ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তখন উপজেলার দুই লাখের বেশি বাসিন্দা আশায় বুক বেঁধেছিলেন- হয়তো বাড়বে চিকিৎসক, মিলবে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু তা আর হয়নি! উল্টো বেড়েছে ভোগান্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসেন। তবে তাদের সুচিকিৎসার জন্য এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই।

হাসপাতালের অনেকগুলো দরজা প্রতিদিন তালাবদ্ধ থাকে। রোগীদের চিকিৎসা দেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বেশির ভাগ সময় ইনডোর ও আউটডোরে সেবা দেন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার। তখন রোগীদের চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু সেই সংখ্যার অনুপাতে এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৮টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাসুদ রানা ও নুসরাত জাহান নামে দুই চিকিৎসক। 

আগে আরও সাতজন চিকিৎসক থাকলেও তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে এ এলাকার রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কথা হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। হাসপাতালে এসে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা পাইনি। যদি চিকিৎসক না থাকেন, তা হলে হাসপাতাল রেখে লাভ কী?’ 

উপজেলার প্রত্যন্ত কলসিন্দুর গ্রাম থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মরিয়ম বেগম। ঘরের কাজ করার সময় তার হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। কিন্তু এখানে এসে তিনি দেখতে পেলেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রচুর রোগী চিকিৎসা পাওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা শেষে তিনি চিকিৎসাসেবা পান।

স্থানীয়রা জানান, এই হাসপাতালটি এলাকার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগীরা এখানে এসে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

মাহমুদুল হক নামে ওই উপজেলার এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সংকটটি কেবল হাসপাতালের সেবার মানেই প্রভাব ফেলছে না, বরং এটি রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ করে এখানকার সেবার মান উন্নত করা প্রয়োজন। ভাবা যায়, এখানে হাসপাতাল আছে, কিন্তু চিকিৎসা নেই! আমরা হতভাগ্য বলেই যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত চিকিৎসক সংকট দূর হবে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফয়সল আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই হাসপাতালের সাতজন চিকিৎসক সংযুক্তিতে আছেন। তাই যারা সেখানে কর্মরত আছেন, তারা রোগীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। সংযুক্তি আদেশ বাতিল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

সয়াবিন তেল নিয়ে লুকোচুরি, পকেট কাটছে ভোক্তার

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫০ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
সয়াবিন তেল নিয়ে লুকোচুরি, পকেট কাটছে ভোক্তার
ছবি: সংগৃহীত

‘কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। মাঝেমধ্যে সিটি গ্রুপ থেকে এক কার্টন বোতলজাত সয়াবিন তেল দিলেও সঙ্গে ১০ কেজি পোলাওয়ের চাল ধরিয়ে দিচ্ছে। তা নিতে না চাইলে ডিলাররা তেল দেন না।’ কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের আল বারাকা স্টোরের স্বত্বাধিকারী এমরান হোসেন। এমন অভিযোগ শুধু এই বাজারের এমরান হোসেনের একার নয়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই অভিযোগ। সামনে রমজান, তাই সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ইচ্ছা করে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সঙ্গে তারা পোলাওয়ের চাল, ডাল, আটা, ঘি নিতে বাধ্য করছে। খোলা তেলও ১৭৫ টাকার কমে মেলে না। তবে ঢাকার বাইরে খুলনাসহ অন্য বিভাগে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে খোলা তেলের লিটার। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মাসে গড়ে লাগে দেড় লাখ টন। অর্থাৎ দিনে লাগে ৫ হাজার টন। রমজানে চাহিদা দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ হাজার টন লাগে। কিন্তু সিটি গ্রুপেরই দিনে উৎপাদন হচ্ছে ৩ হাজার টনের বেশি। মেঘনা, টিকে গ্রুপেরও এ রকম উৎপাদন হচ্ছে। বসুন্ধরা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির রূপচাঁদা তেল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও বাজারে তেলের সংকট লেগে থাকছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দামের অজুহাতে মিলমালিকরা চাপ দিলে সরকার গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা, খোলা তেল ১৬৭ টাকা ও খোলা পামতেলের দাম বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করে। ওই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছিলেন, ‘তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি, বাজারে আর তেলের ঘাটতি হবে না।’ কিন্তু প্রায় দুই মাস পার হলেও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। সংকট কাটছে না। বিভিন্ন কোম্পানির পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের তেল মেলে না। আবার কোথায় পাওয়া গেলেও আটা, সুজি, ডাল ছাড়া বিক্রি করতে চাচ্ছেন না পাইকারি বিক্রেতা ও ডিলাররা। গত ৬ ও ২১ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন আবার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

দামের ব্যাপারে হাতিরপুল বাজারের মুদি বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানি থেকে দেয় না।’ কারওয়ান বাজারের লক্ষ্মীপুর স্টোরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর পরও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আবার এক কার্টন তেল দেওয়া হলে পুষ্টি কোম্পানির পাইকারি বিক্রেতারা (ডিলার) আটা ধরিয়ে দিচ্ছেন। আবার তেলের দামও বেশি নিচ্ছেন। পাঁচ লিটারের পুষ্টি তেলের দাম রাখা হচ্ছে ৮৫০ টাকা। যার গায়ে লেখা খুচরা মূল্য ৮৫২ টাকা। এভাবে বেশি দামে কিনে আমরা কী লাভ করব। মিল থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ডিলাররাও বেশি দাম নিচ্ছেন।’

টাউন হল বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রয়কর্মী তামিম হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন পর তীরের একজন ডিলার এক কার্টন তেল দিয়েছেন। সঙ্গে ১০ কেজি পোলাওয়ের চাল ধরিয়ে দিয়েছেন। এই চালের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ১৬৫ টাকা। ক্রেতারা এটা নিতে চান না। এভাবে কোম্পানি পকেট কাটছে ভোক্তাদের। সরকারের এটা দেখা দরকার।’

তার এমন অভিযোগের ব্যাপারে সিটি গ্রুপের ডিলার মেসার্স তাসমিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা বলেন, ‘দেশে কী হয়েছে জানি না। তবে মিল থেকে তেলের সরবরাহ প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এ জন্য আমরাও আগের মতো সরবরাহ করতে পারছি না। কোম্পানি থেকে তেলের সঙ্গে পোলাওয়ের চালও দিচ্ছে। এ জন্য আমরাও খুচরা বিক্রেতাদের নেওয়ার জন্য বলে থাকি। ১০ কার্টনে হয়তো ৫ কেজি চাল দিয়ে থাকি। তবে কাউকে বাধ্য করি না। তবে কোম্পানি লিটারে এক টাকা কমিশন কমিয়ে দিয়েছে। এ জন্য আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।’

টাউন হল বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের ইমতিয়াজ বলেন, ‘তেল নেই বলা যায়। কারণ শুধু মেঘনা গ্রুপের ২ লিটারের ফ্রেশ তেল আছে। ১ ও ৫ লিটারের নেই। অন্য কোনো কোম্পানির তেল পাওয়া যায় না।’

আসলে সংকট কোথায় তা জানতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। কারণ আমরাই দিনে ৩ হাজার টনের বেশি উৎপাদন করে সরবরাহ করছি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তা মনিটরিং করছে। গতকালও ৩ হাজার ২০০ টন উৎপাদন করেছি। মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানিও রয়েছে। তাদেরও সক্ষমতা আমাদের মতো। এত সরবরাহ করার পরও সংকট কেন, একমাত্র সরকার বলতে পারবে। সিটি গ্রুপের তীর ক্যানোলা তেলের দাম বেশি। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কানাডিয়ান ক্যানোলা ফিড থেকে ভালো কোয়ালিটির এই তেল দুই মাস ধরে উৎপাদন করা হচ্ছে। এ জন্য লিটারে ১৫ টাকা বেশি অর্থাৎ ১৯০ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে।’ তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা বাজে কথা। যার দরকার সে কিনবে।’

ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘আমরা কোনো শর্ত দিয়ে তেল বিক্রি করি না। আমরা (টিকে গ্রুপ) আগের মতোই তেল সরবরাহ করছি। অন্য কোম্পানি কী করছে, তা আমার জানা নেই। রমজানের জন্য সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। তেলের কোনো ঘাটতি দেখছি না।’

খাতুনগঞ্জে লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা

চট্টগ্রামে সরবরাহ সংকটে উধাও হয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। খাতুনগঞ্জে একেবারে লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে পণ্যটির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনে নতুন করে লিটারে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ১০ দিন আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১৬৫ টাকায়। বর্তমানে তা ১৭৫ টাকা হয়েছে। এরপরও ক্ষান্ত হননি মিলমালিকরা। ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন।

মেঘনা গ্রুপের জিএম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছে। আমাদের দিক থেকে কোনো ধরনের সমস্যা নেই সেটা বলতে পারি। অন্যরা কী করছে বা বাজারে সরবরাহ সংকট কেন, সেটা বলতে পারব না।’

নগরের কাজীর দেউড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে বোতলজাত তেলের সংকট। খোলা সয়াবিনের সরবরাহও কম দেখা গেছে। বর্তমানে লিটারপ্রতি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভোজ্যতেলের আমদানি বাড়লেও বাজারে সরবরাহ কম। তাই পণ্যটির দাম বেড়েছে।’ 

রাজশাহীতে তেলের সংকট

রাজশাহীতে সয়াবিন তেলের দাম গত ১ মাসে প্রতি লিটারে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ টাকার বেশি। তারপরও দেখা দিয়েছে বোতলজাত তেলের সংকট। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। ক্রেতারা সিন্ডিকেটের দোষ দিলেও বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, ডিলার ও কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর জন্য এমনটা ঘটেছে।

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার ও বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির হার নাগালের মধ্যে থাকলেও সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন। গত এক মাসেই প্রতি লিটারে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ টাকার ওপরে। তা ছাড়া ৫ লিটারের কম বোতলজাত তেল অধিকাংশ দোকানেই নেই।

সাহেব বাজার এলাকার শামীম স্টোরের মালিক শামীম হোসেন বলেন, ‘আমরা ডিলারদের কাছ থেকে তেল কিনে বিক্রি করি। তারা খোলা তেলের দাম আগের তুলনায় ২২ টাকা বেশি নিচ্ছে। বোতলজাত তেলের সাপ্লাই বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’ 

খুলনার বাজারে তেল উধাও

খুলনার বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো কোম্পানি বাজারে সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রূপচাঁদা কোম্পানির ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় সরবরাহ করেন। তারপরও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। একই সঙ্গে তেলের সঙ্গে ওই কোম্পানির সরিষার তেলসহ অন্যান্য পণ্য নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।

শেখপাড়া বাজারের বিক্রেতা নূর ইসলাম জানান, বর্তমানে কোনো কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ নেই। কয়েকটি কোম্পানি বিক্রেতাদের সয়াবিন তেলের পাশাপাশি তাদের প্রতিষ্ঠানের চাল, ডাল, সুজি, মসলার মতো অন্য পণ্য নিতে বাধ্য করছে।

রংপুরে খোলা সয়াবিন ২১০ টাকা

কয়েক মাস ধরে রংপুরের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, হাতে গোনা দুই-তিনটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি খোলা সয়াবিনেরও সংকট বাজারে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

রংপুর সিটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিছু দোকানে সয়াবিন আছে আবার কিছু দোকানে নাই। কেউ বলছেন দাম বেশি, কেউ বলছেন সয়াবিনের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে হবে। এ সময় নাঈমুল ইসলাম জানান, রমজান আসতে না আসতেই বাজারে এমন শুরু হয়ে গেছে। তাহলে রমজানে কী হবে তা চিন্তার বিষয়।

সিলেটে কিছু না নিলে তেল দেন না ডিলার

সিলেটের কালীঘাট এলাকায় জেরজেরি পাড়ার হাবিব স্টোরের প্রোপাইটর বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এক কার্টন সয়াবিন তেল কিনতে এক বস্তা চাল কিনতে হয়েছে আমাকে। এক বস্তা চাল না কিনলে ডিলার তেল বিক্রি করছেন না। অন্য খুচরা বিক্রেতারাও বলেন, সয়াবিন তেল কিনতে হলে ডিলাররা চিনিগুঁড়া চাল, দুধ, ঘিসহ যে পণ্যগুলো বাজারে সহজে চলে না সেগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে। নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার স্বপ্না স্টোরের প্রোপাইটর মিশন তালুকদারও বলেন, পাইকারি বাজার থেকে তেল কিনতে হলে চাল, ঘি কিনতে বাধ্য করছে। এই বাজারের মেসার্স জননী ভাণ্ডারের প্রোপাইটর অলক পাল বলেন, টিকে গ্রুপের এক কার্টন সয়াবিন তেল কিনতে ১ হাজার ৩৫০ টাকার ঘি কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অফ আইটেম কিনতে বাধ্য করছে।

ময়মনসিংহে সয়াবিন তেলের সংকট

ময়মনসিংহ শহরের মেছুয়া বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, এক দোকানে তেল আছে তো আরেক দোকানে নেই। যেসব দোকানে তেল রয়েছে, তা ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় কম। তারা অভিযোগ করে বলেন, তেল নিতে চাইলে অনেক পরিবেশক পোলাওয়ের চাল, হলুদ-মরিচের গুঁড়োসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন। তবুও পর্যাপ্ত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট অন্তত দুই মাস ধরে। এই বাজারের মুদি দোকানি ফিরোজ হোসেন বলেন, পরিবেশকরা জানিয়েছেন কোম্পানিগুলোতে তেলের উৎপাদন কমে গেছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। চাহিদা অনুযায়ী দোকানে তেল না থাকায় ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।

বরিশালেও তেলের সংকট 

বরিশালের বাজারে চাহিদামতো মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। পাড়া-মহল্লায় এ সংকট আরও প্রকট। বিক্রেতারা বলছেন, ১৫ দিন ধরে কোম্পানি থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল দেওয়া হচ্ছে না। আগরপুর রোডের সুপ্তি জেনারেল স্টোরের প্রোপাইটর মো. নুরুল হক বলেন, এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজার তো দূরের কথা, কোনো ডিলারের কাছেও সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। 

বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, রমজান সামনে রেখে কোনো ব্যবসায়ী যদি তেল, চিনি, ডালসহ নিত্যপণ্যে মজুত করেন বা দাম বৃদ্ধি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরোর তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরোর এনায়েত করিম, খুলনার মাকসুদ রহমান, রংপুরের সেলিম সরকার, সিলেটের শাকিলা ববি, ময়মনসিংহের কামরুজ্জামান মিন্টু এবং বরিশালের মঈনুল ইসলাম সবুজ।

প্রত্যাশা প্রাপ্তির মিল-অমিল, অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
প্রত্যাশা প্রাপ্তির মিল-অমিল, অনৈক্যের সুর রাজনীতিতে
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগবিরোধী বলে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐক্য তৈরি হলে গত ছয় মাসে অনৈক্যের সুর দেখা গেছে। 

সরকারবিরোধী আন্দোলনে একসময় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে যথেষ্ট সমঝোতা ছিল। দল দুটি একই জোটে থেকে শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে এই দল দুটির সক্রিয় সমর্থন ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজপথে বেশ কাছাকাছি ছিল এই তিনটি পক্ষই। তবে হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাস পর এখন জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির একধরনের দূরত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একধরনের সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী বলে পরিচিত দলগুলোর মধ্যে ঐক্য কিছুটা হলেও বিনষ্ট হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তমনে খোলামেলা কথা বলা যাচ্ছে, রাজনীতির জন্য এটাই সবচেয়ে বড় উপাদান। জনগণ সাহস করে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারছেন। এটা তো রাজনীতির জন্য বড় পাওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক নির্যাতন-নিপীড়নও নেই।’ তিনি বলেন, ‘যাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে, তারা তো ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ছিলেন। তারা তাদের অপরাধ অনুযায়ী আইনি শাস্তি পাবেন, এটা তো স্বাভাবিক। তবে গত ছয় মাসে রাজনৈতিক বিতর্ক বেড়েছে।’

ড. মাহবুব উল্লাহ আরও বলেন, “আমি মনে করি, অনেক ক্ষেত্রে এই বিতর্ক অপ্রত্যাশিত। মূলত, রাজনৈতিক অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় না থাকার কারণে এসব বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু এই বিতর্কগুলো বড় কোনো বিতর্ক নয়, আলাপ-আলোচনা করলেই সমাধান হয়ে যাবে। এই বিতর্ক না থাকলে ভালো হতো। কারণ ভারতে বসে শেখ হাসিনা তার ‘হারানো স্বর্গ’ উদ্ধার করতে নানা ষড়যন্ত্র করছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে, সেগুলো দ্রুত সমাধান করে ফেলা উচিত।” 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। মনে রাখা দরকার, এই সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে একটা ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে। বিশেষ করে আমাদের নির্বাচনিব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, গণতান্ত্রিকব্যবস্থা অকার্যকর, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠাগুলো দলীয়করণ হয়ে পড়েছে, ব্যাংক লুটসহ সবকিছুই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই সরকার সবকিছু ভালো করেছে, নিঃসন্দেহে তা না।’ 

তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো করেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। ফলে সরকারের আরও সতর্ক থাকা দরকার।’ 

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য যা করণীয় তা তারা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের কারণে সরকার তাদের দায়িত্ব বা ইচ্ছামতো কাজ করতে পারছে না। ফলে মানুষের মধ্যে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন। ইতোমধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবে। দ্রুতই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দিকে যেতে হবে এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন- জনগণ তা মোকাবিলা করবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত বা প্রক্রিয়াগত কারণে সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না- তা কিন্তু নয়। নানা মত ও পথ থাকবে। তবে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবাইকে একমত থাকতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। এখনো তো দেশে রাজনীতি নেই। কার বিরুদ্ধে রাজনীতি করব। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সরকার নয় বলে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা সমালোচনা করতে পারছি না। তবে জনগণের চাওয়া একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবী বদলে গেছে, তুমি আর আমি আগে যা ছিলাম, তাই আছি। সচিবালয়সহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। তদবির বাণিজ্য চলছে। ফলে এসব সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। দুর্নীতির লাগাম টানতে না পারলে রাজনীতিতে হিংসা-প্রতিহিংসা ও সহিংসতা রোধ করা যাবে না। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না হলে যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরে থাকব।’ 

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সবার মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন ৬ আগস্ট রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছাত্রনেতৃত্ব ও তিন বাহিনীর প্রধান করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার সিদ্ধান্ত হয়। ৮ আগস্ট দুপুরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. ইউনূস এবং রাত ৯টা ১৫ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন তিনি। এরপর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের দল জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে সব দলই অন্তর্বর্তী সরকারকে সাপোর্ট ও সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। গত ছয় মাসে বিভিন্ন ইস্যুতে তিন দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

গত ছয় মাসে বেশ কিছু ইস্যু সামনে আসে। নির্বাচন না সংস্কার- কোনটি আগে? রাষ্ট্রপতির অপসারণ, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রসহ কয়েকটি ইস্যুতে সরকার ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে এই বিভেদ বা মতবিরোধ আরও কিছুটা স্পষ্ট হয়। ছাত্রদের দল গঠনের বিষয়ে ড. ইউনূসের সর্বশেষ মন্তব্যে বিষয়টি আরও একটু স্পষ্ট হয়। তবে বিএনপির কৌশলের কারণে ইস্যুটি এখনো তীব্র মতবিরোধে রূপ নেয়নি। রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বিএনপি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ের পক্ষে। কারণ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে নেতা-কর্মীরা মনে করেন। 

জামায়াত নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে বেশি সময় দিতে চায়। দলটি মনে করে, অনেক দেরিতে নির্বাচন হলে বিএনপির ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়বে। বিএনপি বেকায়দায় থাকলে জামায়াতের ভোট বাড়বে বলে মনে করেন ইসলামপন্থি এই দলের নেতারা। এই কারণে আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের পক্ষে জামায়াত। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল যেহেতু ভিন্ন, তাই দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তবে জাতীয় স্বার্থে দলীয় স্বার্থ না দেখাই ভালো। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য থাকতে হবে। যারা গত ছয় মাসের জাতীয় ঐকমত্য ধরে রাখতে পারেনি এটা তাদের ব্যর্থতা। কেন পারেনি এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐকমত্য জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই ঐকমত্য অটুট রাখা দরকার।’ 

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন উপদেষ্টা এখনো সরকারে রয়েছেন। নতুন দল গঠন করে তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইছেন। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি এবং বিএনপির আগের সরকারের কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ তাদের গ্রহণ করতে পারে। 

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব আশাব্যঞ্জক নয়। ছাত্রদের নতুন দল আসছে। তবে রাজনৈতিক যে ঐক্য ছিল তা অনেকটাই বিনষ্ট হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য ধরে রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্বার্থরক্ষার জন্যই দরকার। আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীলভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে।’ 

এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে কিছুটা অস্থিরতা রয়েছে। যদিও এমন অস্থিরতা প্রত্যাশিত ছিল না বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো করতে হবে। একটা সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।’ 

গত ছয় মাসে নির্বাচন আগে- নাকি সংস্কার আগে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিন দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। জানা গেছে, শেখ হাসিনার পতনে একজোট হয়ে আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দিন দিন বাড়ছে দূরত্ব। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। আলাদা বলয় গঠনে নিজেদের মতো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দল দুটি। নতুন দল গঠনের দ্বারপ্রান্তে ছাত্রনেতৃত্ব। তবে নির্বাচন নিয়ে অশ্চিয়তা দেখছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও প্রধান উপদেষ্টা গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকেই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। 

দাবি অনেক: দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
দাবি অনেক: দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে দাবিদাওয়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট দমন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং গণহত্যার বিচার ছিল আলোচনার শীর্ষে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার শুরু থেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছে। তবে উত্থাপিত এসব ইস্যুতে পূর্ণাঙ্গ সফলতা পেতে সরকারের পক্ষ থেকে আরও নিখুঁত পরিকল্পনা সুচারুরূপে নিষ্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ছয় মাসে অর্থনীতির অবস্থা ভালোর দিকে গেছে। আগে তো দেউলিয়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার তো মাত্র ছয় মাস দায়িত্ব পালন করছে। ১৭ বছরের জঞ্জালমুক্ত করতে অন্তত ১৭ মাস তো লাগবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ট্র্যাকে আসতেও সময় লাগবে। কারণ এখানে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল। শিক্ষায়ও নানা অনিয়ম হয়েছে। সব ঠিক করতে আরও সময় এবং পরিকল্পনার দরকার আছে।’

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। দীর্ঘ ১৭ বছরের আওয়ামী শাসনের পতনে দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসে। নানান জায়গায় ছিল মবের প্রবণতা। পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটে একাধিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চুরির অভিযোগে পিটুনিতে প্রাণ যায় তোফাজ্জ্বলের। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে মেডিকেল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। এটিকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন পরিস্থিতিতে অস্থিরতা এবং মনোজগতের পরিবর্তন হিসেবে বিশ্লেষণ করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার ধীরে ধীরে এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। পুলিশের মধ্যেও একধরনের পরিবর্তন আসছে। 

অন্যদিকে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি ওঠে। সরকার সাধ্যমতো বাজার মনিটরিং করছে। সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন উপদেষ্টারা। প্রথমদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কম থাকায় দেশের নানা স্থানে চুরি-ডাকাতি বাড়ে। রাজধানীতে বেড়ে যায় ছিনতাই। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটে। মনোবল বাড়ে পুলিশের। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ট্রাফিক ব্যবস্থায়ও শৃঙ্খলা ফিরে আসে।

সরকার জুলাই আন্দোলনে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে মূল অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে শহিদ পরিবারের সদস্যরা রাজপথে কর্মসূচি পালন করেছেন। বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দাবি জানানো হয়েছে। সরকার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ও জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ সর্বস্তরে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিগুলো তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। আর্থিক খাতে অনিয়ম তদন্তে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। যারা বিগত সময়ের আর্থিক অনিয়মগুলো তুলে ধরে। 

দাবিদাওয়া নিয়ে অস্থিরতা

অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসে দাবিদাওয়া নিয়ে অস্থিরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবির কারণে সরকারকে বেগ পেতে হয়। এসব দাবির আন্দোলন সামাল দিতে মধ্যরাতে উপদেষ্টাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও হাজির হতে হয় রাস্তায়। সরকার পরিবর্তনে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার দাবি নিয়ে সরব হন আন্দোলনকারীরা।