ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

আবারও আলোচনায় ব্যাংক মার্জার!

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৫৫ এএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম
আবারও আলোচনায় ব্যাংক মার্জার!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতের প্রকৃত ক্ষত আড়াল করতে জোরপূর্বকভাবে ব্যাংক মার্জারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এ জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পদ্মা-এক্সিমসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক মার্জারের প্রাথমিক চুক্তিও করা হয়েছিল। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটা না হওয়ার অভিযোগে এবং সরকার পরিবর্তনের পর সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি। এ সময় ব্যাংক খাতের আরও গভীর ক্ষত সামনে চলে এসেছে। বাস্তবতা বিবেচনায় গভর্নর ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট পরিচালনার কাজ শুরু করেন। কাজ চলাকালেই আবারও আলোচনায় এসেছে ব্যাংক মার্জার প্রসঙ্গ।

সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘স্পেশাল রেজল্যুশন অ্যাক্ট অনুযায়ী কাজ চলছে, কিছু ব্যাংক মার্জ করা হবে। আরও অনেক কিছু করা যাবে, করা হবে।’

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘সেমিনারে অনেক কিছু মাথায় রেখে অনেক সময় আগে থেকেই অনেক উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে হয়তো গভর্নর এমন কথা বলেছেন। তবে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে নিরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেটা শেষ হলে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র পাওয়া যাবে। তারপর ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সমন্বিত নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ বিধান প্রণয়ন করেছে। এই বিধানবলে ব্যাংক কোম্পানি ও ব্যাংকিং নীতিমালার উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করেছে, যারা নির্দিষ্ট ব্যাংকে গভীর নিরীক্ষা চালাবে। ২০২৪ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পেশাল রেজল্যুশন অ্যাক্ট চালু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইন অনুযায়ী এই বিশেষ বিধান চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রায় ১২টি ব্যাংকে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থার মাধ্যমে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। 

রেজল্যুশন অ্যাক্টে বলা হয়েছে, ব্যাংকের সমন্বিত নিরীক্ষা বা তার অংশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। সমন্বিত নিরীক্ষাকাজের জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলো যাতে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে তথ্য জানায়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ এই বিধানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে সাধারণ অনুমতি দিয়েছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেবে। চুক্তি অনুসারে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর গভর্নর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের কাছে পেশ করবেন।

বিশেষ বিধানে সমন্বিত নিরীক্ষার সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে ঝুঁকিভিত্তিক বিস্তারিত নিরীক্ষা করা হবে, যার মধ্যে থাকবে সম্পদের মান পর্যালোচনা, করপোরেট সুশাসন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং ব্যাংকের নীতি, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া এবং আইন ও নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধানের পরিপালন বিষয়ে পর্যালোচনা। এই বিধান জারি করার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দেশের বেশ কিছু ব্যাংক বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে সম্পদের মান, করপোরেট সুশাসন, নীতিমালা এবং আইন ও বিধিবিধানের পরিপালনের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর সাধারণভাবে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাতের বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যাংক মার্জার হচ্ছে একটা বিকল্প। সে রকম আরও অনেক বিকল্প রয়েছে। ব্যাংক মার্জ করা হবে, নাকি বিলুপ্ত করা হবে, নাকি যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে, তা নির্ভর করবে ব্যাংকগুলোতে সম্পদের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য যে নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে, তার ফলাফলের ওপর। কেননা এর পরই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ব্যাংক মার্জার আইন এবং আমানতকারীদের সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এগুলোর কাজ চলছে। ফলে নিরীক্ষা কার্যক্রম এবং আইন প্রণয়ন না করে ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।’

এদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যাংক খুবই নাজুক দশায় রয়েছে। এগুলোর অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা নেই। তাই এগুলোকে বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে। মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালিত কিছু ব্যাংক নাজুক দশায় রয়েছে। এসব ব্যাংক লাইফ সাপোর্টে, গ্রাহকরা ঝুঁকিতে। এসব ব্যাংকের অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামলানোর সক্ষমতা নেই। এ জন্য সার্বিক দিক বিবেচনায় লাইফ সাপোর্টে রাখা ব্যাংক বন্ধ করা যেতে পারে।’

নিহত রিকশাচালকের ৬ মেয়ের দায়িত্ব নেবে কে?

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ এএম
নিহত রিকশাচালকের ৬ মেয়ের দায়িত্ব নেবে কে?
রিকশাচালক রুহুল আমিনের ছয় মেয়ে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌর সদরে একটি পূরবী বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক রুহুল আমিন। তার ঘরে কোনো ছেলেসন্তান না থাকলেও রয়েছে ছয় মেয়েসন্তান। এখন জনমনে প্রশ্ন, অভাব-অনটনের সংসারে বড় হওয়া এ ছয় মেয়েসন্তানের দায়িত্ব নেবে কে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের জনমনে।

এক স্ত্রী ও ছয় মেয়ের ভরণপোষণের একমাত্র ভরসা ছিলেন রুহুল আমিন। সারা দিন পরিশ্রম করে রিকশাচালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে চলত সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখার খরচ। মৃত্যুর আগে ছয় মেয়েকে ঈদের নতুন জামা-কাপড়ও কিনে দিয়ে যেতে পারলেন না তিনি। বাবার মৃত্যুর শোকে ছয় মেয়ের কান্না যেন থামছেই না।

জানা যায়, একটি ছেলেসন্তানের আশায় একের পর এক ছয় মেয়েসন্তানের জন্ম হয়েছে রিকশাচালক রুহুল আমিনের সংসারে। তার ছয় মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে উম্মে সোলতানা চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সোলতানা রিপা দোহাজারী জামিজুরী গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তৃতীয় মেয়ে আলিফা পড়ে জামিজুরী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে। চতুর্থ মেয়ে ওয়াকিয়া পড়ে একই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে। পঞ্চম মেয়ে ফাতেমার বয়স আড়াই বছর ও ষষ্ঠ মেয়েটির বয়স মাত্র ২৫ দিন। এখনো পর্যন্ত ষষ্ঠ মেয়ের নামও রাখা হয়নি।

নিহত রিকশাচালক রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ দুই কক্ষবিশিষ্ট ছোট্ট একটি সেমিপাকা ঘরে স্ত্রী ও ছয় মেয়ে নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করে আসছিলেন রিকশাচালক রুহুল আমিন। তার ছয় মেয়ে ঘরের এক পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন বাবার শোকে। কিছু বোঝার বয়স না হলেও অন্য বোনদের কান্নায় বড় বোন উম্মে সোলতানার কোলে অবিরাম কান্না করছে মাত্র ২৫ দিন বয়সী শিশুটিও। আড়াই বছরের শিশু ফাতেমা, দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ওয়াকিয়া এবং চতুর্থ শ্রেণির আলিফাও কাঁদছে বড় বোন উম্মে সোলতানা ও মেঝো বোন তাসফিয়া সোলতানা রিপার পাশে দাঁড়িয়ে। তারা ছয় বোনের কান্না যেন থামছেই না। তাদের আর বুঝতে বাকি নেই যে সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল বাবা তাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

নিহত রিকশাচালক রুহুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল কাদের বলেন, ‘আমার বড় ভাই প্রায় তিন বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ ও ছয় মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করে আসছিলেন। অন্য দিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও তিনি যাত্রী নিয়ে দোহাজারী পৌর সদরে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামমুখী একটি পূরবী বাস আমার বড় ভাইয়ের রিকশার পেছন থেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার সংসারে ছয় মেয়ে রয়েছে। এখন তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাদের পড়ালেখার খরচ কে চালাবে?’

থমকে আছে বিএনপির শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:২০ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০৪ এএম
থমকে আছে বিএনপির শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদ পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই হাইকমান্ডের। খুব শিগগির দলের কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ফলে এসব শূন্য পদে যোগ্য নেতাদের পদায়নও হচ্ছে না। তবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের বর্ধিত সভার পর অনেকে ভেবেছিলেন এবার হয়তো কেন্দ্রীয় কমিটির শতাধিক শূন্য পদ পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় প্রকৃত যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু তাও থমকে আছে বলে জানা গেছে।

দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এরই অংশ হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের বর্ধিত সভা হয়েছে। মূলত এটি দলের ছায়া কাউন্সিল। তাই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ ক্ষমতাবলে এসব শূন্য পদে পদায়ন করা জরুরি। তাদের দাবি, পুরো কেন্দ্রীয় কমিটি রিভিউ করে একসঙ্গে সব পদ পূরণ করলে দল আরও শক্তিশালী হবে। নির্বাচনেও নতুন উদ্যমে দল মাঠে নামবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খবরের কাগজকে বলেন, দলে বহু যোগ্য নেতাই রয়েছেন। আগামী দিনে দল তাদের চিন্তা করতে পারে। বর্তমানে ১১ জন সদস্য দিয়ে স্থায়ী কমিটি চলছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দলে যখন যেটা করার দরকার, তখন সেটা পূরণ করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু খবরের কাগজকে বলেন, শূন্য পদ পূরণের এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের ভূমিকা ছিল, তাদের তিনি মূল্যায়ন করবেন। তবে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

৯ বছর আগে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা। সেই অনুযায়ী ছয় বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে না ফেরা পর্যন্ত দলের সপ্তম কাউন্সিল হওয়ার সম্ভবনাও কম। এই সময়ের মধ্যে দলের অনেক নেতা মারা গেছেন, অনেকে দল ত্যাগ করেছেন, অনেকে স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসরে গেছেন। আবার অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। অনেকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির শতাধিক পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির ৩টি, ভাইস চেয়ারম্যান ১৫টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৯টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর কয়েকটি পদে পদায়ন করা হয়েছে।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ এবং এম কে আনোয়ার। ২০১৮ সাল থেকেই গুরুতর অসুস্থ ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। সেই থেকেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রয়েছেন। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করেনি বিএনপি। স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে গত বছরের ১৬ আগস্ট দুজন ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনটি স্থায়ী কমিটির পদ শূন্য রয়েছে। এই তিন পদে আসার আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন (কায়কোবাদ), আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুস সালাম পিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এবার প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও আইনজীবী এই তিন ক্যাটাগরিতেও স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করা হতে পারে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটির ৩টি শূন্য পদসহ অন্যান্য পদ পূরণ করা প্রয়োজন। তবে তাদের নিয়োগ দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পরও অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না। আবার সম্প্রতি অনেককে মূল্যায়ন করা হয়েছে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে দক্ষতা দেখিয়েছেন এমন নবীন-প্রবীণ নেতাদের আগামীতে তাদের যোগ্য পদে পদায়ন করা হবে।

এবার ভাইস চেয়ারম্যান পদেও পদায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী নার্গিস বেগমকে। এর আগে গত বছরের ২০ আগস্ট সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম মনিকে ভাইস চেয়ার‌ম্যান পদে পদায়ন করা হয়। এরপরও ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের পদের মধ্যে ১৫টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে স্থায়ী কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। ১০ জন মারা গেছেন, একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং দুজন পদত্যাগ করেছেন। মারা যাওয়া ১০ জন হলেন বিচারপতি টি এইচ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, অধ্যাপক এম এ মান্নান, আবদুল মান্নান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মো. আমিনুল হক। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও মোসাদ্দেক আলী ফালু দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে বিএনপির সাবেক এই দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবারও দলে ফেরার চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন লবিং-তদবির চালাচ্ছেন। শওকত মাহমুদকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া অসুস্থ রয়েছেন কয়েকজন ভাইস চেয়ারম্যান। এরা হলেন আলহাজ অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, বেগম রাবেয়া চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান।

সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসিন ও ড. জিয়াউদ্দীন হায়দার। এরপর ৮২ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যেও আরও ৯টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। মারা যাওয়া ৯ জন উপদেষ্টা হলেন হারুনার রশীদ খান মুন্নু, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ফজলুর রহমান পটল, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাফরুল হাসান, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, রোজী কবির, এম এ হক, অ্যাডভোকেট কামরুল মনির। এ ছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের পদ স্থগিত রয়েছে।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৫০২ সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজন মারা গেছেন। কয়েকজনকে বহিষ্কার আর কয়েকজন স্বেচ্ছায়ও পদত্যাগ করেছেন। আবার কয়েকজনকে পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনো শতাধিক পদ শূন্য। তবে এসব শূন্য পদ কবে পূরণ হবে, তা নিশ্চিত নয়। তা ছাড়া বয়সের কারণেও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতাবলে এসব পদে পদায়ন করা সম্ভব। বর্তমানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এক জায়গায় আছেন। সুতরাং শূন্য পদে কাউকে পদায়ন করা বা বড় কোনো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তারাই নিতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্যসহ কয়েকটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে।’

টানা আন্দোলন-কর্মসূচিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
টানা আন্দোলন-কর্মসূচিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী
ছবি: খবরের কাগজ

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নানা দাবিতে ২০০-এর বেশি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এসব কর্মসূচি পালনের সময় গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করায় ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর। সপ্তাহের অধিকাংশ কর্মদিবসে এসব কর্মসূচির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলকে দাবি আদায়ের মোক্ষম সময় বলে মনে করেছেন আন্দোলনকারীরা। 

যৌক্তিক-অযৌক্তিক ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর এসব কর্মসূচি ঘিরে দুর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। টানা এসব কর্মসূচির কারণে বিরক্ত হয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত সোমবার বনানীতে অবরোধ করা হয়। গুগল ম্যাপে দেখলাম অফিসে যাওয়ার সব রাস্তায় রেড কালার। সর্বত্র যানজট। রোজার দিনে এসব কর্মসূচি আমাদের ভোগান্তিতে ফেলছে।’

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দাবিতে সরব নানা পক্ষ। চাকরি স্থায়ীকরণ, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ভাতা বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, এমপিওভুক্তিসহ নানা দাবি জানাচ্ছেন তারা। সরকারের প্রথম ৪৬ দিনে ঢাকা শহরে ৬৪টি সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩৬০টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলো বিবেচনায় নিলে দাবির সংখ্যা হাজারের বেশি।

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি অবরোধ করা হয় শাহবাগ মোড়। গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়ের আশপাশে রয়েছে একাধিক হাসপাতাল। কর্মসূচির কারণে এসব হাসপাতালের রোগীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফেব্রুয়ারিতেই নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রাথমিক শিক্ষক, এনটিআরসিএর সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক, শহিদ পরিবারের সদস্যরা শাহবাগ অবরোধ করেন। চলতি মাসেই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। চাকরি ফিরে পেতে বিডিআর সদস্যরাও শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

রাজধানীর একটি স্পটে অবরোধ করা হলে প্রধান সড়কের পাশাপাশি তার প্রভাব পড়ে অলিগলিতেও। কর্মসূচির কারণে সচিবালয়ে আটকা পড়েন কর্মকর্তারা। দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে অনেকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগেন। যান চলাচল বন্ধ হয়ে হওয়ার কারণে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন। যাদের সঙ্গে মালপত্র ছিল, দ্বিগুণ হয় তাদের কষ্ট। বাধ্য হয়ে বাসেই বসে থাকতে হয়। রাতেও প্রায় একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় রাস্তায় বের হওয়া যাত্রীদের। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের কারণে গুলশান-বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মগবাজার এলাকায় তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। জুলাই আন্দোলনে আহতরাও পঙ্গু হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করেন। তাদের কর্মসূচির কারণে হাসপাতালে আসা রোগীরাও হয়রানির মুখে পড়েন। 

শাহবাগের পরই বেশি কর্মসূচি পালন করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাব ও সচিবালয় এলাকায়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের আশপাশে এসব কর্মসূচি যেমন যানজট তৈরি করে, তেমনি সচিবালয়ে কর্মরতদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একাধিকবার ঘেরাও করা হয় সচিবালয়। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তো সচিবালয়ে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা বাতিল করার দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে। আবার পরীক্ষার ফলের পর ফেল করা শিক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি জানিয়েও সচিবালয় ঘেরাও করে। অভ্যুত্থানের পর পরই আনসার সদস্যরা সচিবালয় ঘেরাও করলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়ার দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সচিবালয় অভিমুখে কর্মসূচি পালন করেন। বাদ যাননি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ট্রাস্টি বোর্ডের অনিয়ম বন্ধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় প্রেসক্লাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি কর্মচারীদের মতো একই হারে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবিতে টানা আন্দোলন করেন শিক্ষকরা। পরে শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও টানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। 

আন্দোলন করেন বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকরাও। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে তারা কর্মসূচি পালন করেন। হাইকোর্টের রায় ঘিরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা ঢাকার একাধিক পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতেও ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণকে। প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করার দাবিতে প্যাডেলচালিত রিকশার চালকরাও রাস্তায় নামেন। অন্যদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা দুই দফায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। গাড়ির দাম ও দৈনিক জমা কমানোর দাবিতে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ মিটারে গাড়ি না চালালে জরিমানার বিধান বাতিলের দাবিতে তারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করলে বিআরটিএ সেই বিধান বাতিল করে।

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা ছিল দেশজুড়ে। তারা সড়ক অবরোধের পাশাপাশি মহাখালীতে রেললাইনও অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ঢিলে রক্তাক্ত হন শিশুসহ ট্রেনের যাত্রীরা। টানা এই কর্মসূচি ঘিরে নগরবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। পরে সরকার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। আবার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল ইস্যুতে সংঘর্ষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিকার সংঘর্ষের কারণে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ট্রেইনি চিকিৎসকরা তাদের ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক দফায় আন্দোলনে নামেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইরশাদ মাহমুদ বলেন, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলা হচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া সুশৃঙ্খলভাবে জানানো উচিত।

তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি জানানোর বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীনের মতে, মানুষ দীর্ঘদিন দাবি-দাওয়া আদায়ের সুযোগ না পাওয়ায় সরকার পরিবর্তনে এসব বেড়েছে। তাই সরকারকে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অন্যদিকে জনদুর্ভোগ তৈরি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। তিনি বলেন, কেউ দাবি আদায়ের নামে রাস্তা আটকাবেন না। সামনে ঈদ, সড়ক অবরোধ করে জনগণের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বয়ে আনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার
সভা-সমাবেশের ওপর ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর রাজধানীর শাহবাগে ডিবি পুলিশের টহল। ছবি: খবরের কাগজ

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে এবার কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ, জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি, পুলিশের ওপর হামলা, ছিনতাই-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে অনুসারে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) থেকে রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

অন্যদিকে গাজীপুরে শিল্প-পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, দাবি আদায়ের নামে রাস্তা অবরোধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ৯ মার্চ সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘কোর সভা’ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যেকোনো আক্রমণ বরদাশত করা হবে না। এখন থেকে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর একের পর এক হামলা-অবজ্ঞা, কথায় কথায় আন্দোলন, দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ, জনভোগান্তি সৃষ্টি, প্রকাশ্যে বেপরোয়া ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনার প্রেক্ষাপটে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতির প্রয়োজনে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাবে পুলিশ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। 

পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর ২৩০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭০টির মতো ঘটনা বেশি আলোচনায় আসে। এসব ঘটনার বাইরেও সড়কে পুলিশ সদস্যরা হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকেও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা হয়। যদিও সেদিন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীও বেশ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়। সেখানেও পরে পুলিশ কঠোর ‘অ্যাকশন’ চালায়। মূলত এখন থেকে ধীরে ধীরে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর খবরের কাগজকে বলেন, আইনেই বলা আছে- আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ওপর হামলা বা সরকারি কাজে বাধা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অপরাধকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন অনুযায়ী এসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুলিশ যে ধাক্কা (৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট) খেয়েছে, সেখান থেকে উঠে আসার জন্য যা করা দরকার তা নানা কারণে পুলিশ করতে পারছে না। তাদের মনোবল একেবারেই ভঙ্গুর। প্রতিনিয়তই তারা বিভিন্নভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এগুলো আমরা দেখছি। এই অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্য বাহিনীর সবাই যেভাবে চেষ্টা করছেন, সেই চেষ্টাটা আরও একটু দৃশ্যমান করতে হবে। অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের দৃশ্যমান অ্যাকশন এই মুহূর্তে খুব দরকার। এই দৃশ্যমান অ্যাকশনগুলো যদি খুব ভালো হয় বা শক্ত হয় বা কঠিন হয়, তাহলে অপরাধীরা মেসেজ পাবে যে এগুলো আর করা যাবে না।’

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পুলিশের কাছ থেকে একাধিক মামলার আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আলম মুন্নাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মো. আকবর হোসেন নামে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেন তার পরিবার ও স্বজনরা। ওই হামলায় মো. কামরুল ইসলাম নামে এক এএসআই আহত হন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চেকপোস্টে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলী ১০-১৫ জনের মবের শিকার হন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার একটি টহল দল কারওয়ান বাজারে মাদক কারবারি শাহীন আলমকে মাদকসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করলেও মাদক কারবারিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার পর পুলিশ একটি মামলা করলে প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। 

এ বিষয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যথেষ্ট সময় চলে গেছে, এখন কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। যে পরিস্থিতির জন্য যেমন ভূমিকা দরকার, তেমনই পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশকে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মব ভায়োলেন্স, ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধের বিষয়ে পুলিশকে কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে।’

সচিবালয়, যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ডিএমপি অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬)-এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, মিন্টো রোড) যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’

রাস্তা অবরোধ করলে কঠোর ব্যবস্থা: আইজিপি

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরে শিল্প-পুলিশ-২-এর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। 

এই সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘কেউ দাবি আদায়ের নামে রাস্তা আটকাবেন না। সামনে ঈদ, সড়ক অবরোধ করে জনগণের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বয়ে আনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের কার্যক্রম যারা করবেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাববেন না। পুলিশের ওপর আক্রমণ করবেন না। আমাদের দেশের সেবা করার সুযোগ দিন।’ তিনি পোশাককর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। ভাঙচুর করে নিজেদের কর্মস্থলের ক্ষতি হতে দেবেন না।’

রাতে চলছে ডিএমপির বিশেষ অভিযান

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বুধবার দিবাগত রাতে ৬৬৭টি টহল টিম ও ৭১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। এই রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে ৭ জন ডাকাত, ১৩ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৩ জন চাঁদাবাজ, ১২ জন চোর, ২৩ জন মাদক কারবারি, ৩৭ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ৬৬৭টি টহল টিম ও ৭১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করে। সে রাতেও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৭ জনকে।

এদিকে মাঠপর্যায়ে ডিএমপির একাধিক থানার অফিসার্স ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের সদস্যরা হামলার শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে অনেকেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আইনি কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে বাহিনী থেকে বলা হয়েছে- পুলিশের ওপর হামলা করা হলে সে যেই হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে সরকারি কাজে বাধা বা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা দিলে আমরা সেই বিষয়েও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছি। এ ছাড়া পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানাগুলোতে মামলা নেওয়া হচ্ছে। 

এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম খবরের কাগজকে বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য সবার আগে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা দরকার। তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য সবাইকে একমত হতে হবে। পুলিশকেও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকে তার কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পরিষ্কার বার্তা থাকতে হবে। 

একই প্রসঙ্গে আরেক সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা খবরের কাগজকে বলেন, দেশের বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তার উন্নয়ন করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় দৃশ্যমান হতে হবে। প্রতিরোধমূলক গ্রেপ্তার অর্থাৎ ‘প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্টের’ ব্যবস্থা করতে হবে। কঠোর পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে মবসহ বেআইনি কর্মকাণ্ডগুলো। সাধারণ মানুষ যখন দেখবে যে অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, তখন অপরাধের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।

সমুদ্র জয়ের সুফল এখনো অধরা

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:০৩ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:২৪ এএম
সমুদ্র জয়ের সুফল এখনো অধরা
ছবি: সংগৃহীত

‘মায়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে আইনি লড়াইয়ে অর্জিত সমুদ্র সীমানার যথাযথ ব্যবহার হয়নি দীর্ঘদিনেও। কিছু নীতিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে তেমন কোনো সুফল পাচ্ছে না দেশ। ফলে সমুদ্র জয়ের কাঙ্ক্ষিত সুফল এখনো মেলেনি। সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আর্থিক সমৃদ্ধি লাভ করতে পারিনি।’

২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ের মাধ্যমে মায়ানমারের সঙ্গে মামলায় বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র এলাকার দখল পায়। সেই হিসাবে আজ ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো দেশের সমুদ্র বিজয়ের ১৩ বছর হয়েছে। আর এর প্রায় দুই বছর পরে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার আনুমানিক ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটারের অধিকার পায় বাংলাদেশ, যা দ্বিতীয় সমুদ্র বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এতে দেশের পর্যটন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য এবং জ্বালানি খাতের বিপুল সম্ভাবনা বাড়লেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি নেই। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্লু-ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির মাধ্যমে সমুদ্রতলের গ্যাস, মৎস্যসহ অন্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে যথোচিত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্র থেকে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। কিন্তু সমন্বিত জরিপ, কার্যকর সমুদ্রবান্ধব নীতি, দক্ষ জনশক্তি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং মেরিন রিসোর্সভিত্তিক পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব সমুদ্র অর্থনীতি বিকাশের পথে অন্যতম অন্তরায় বলে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল।

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। বিশ্বব্যাপী ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। 

বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি জোন তথা বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাংলাদেশকে যেমন দিতে পারে আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তা, তেমনি বদলে দিতে পারে সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা। 

কিন্তু পর্যাপ্ত নীতিমালার ও সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, সম্পদের পরিমাণ ও মূল্য সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব, মেরিন রিসোর্সভিত্তিক পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়া, ব্লু ইকোনমি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাবে সমুদ্র অর্থনীতির সুফল ভোগ করতে পারছে না দেশ। 

বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ ব্লু-ইকোনমি থেকে আসে। এটার পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার। অথচ সমুদ্রের মাছ রপ্তানি থেকেই ১০-১২ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

সমুদ্রবিরোধ নিরসনের পরে ‘সেভ আওয়ার সি’-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছর বঙ্গোপসাগর থেকে ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছেন মাত্র ৭ লাখ টন মাছ। দেশে বছরে যে পরিমাণ মাছ অহরণ হয়, তার মাত্র ১৫ শতাংশ আসে গভীর সমুদ্র থেকে। উপকূলীয় এলাকার ৫০ লাখের বেশি মানুষের আয়ের প্রধান উৎস সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ। কিন্তু তারা এখনো মূলত প্রচলিত পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমুদ্রগামী ট্রলারগুলোর জ্বালানি, পরিচালন, জেলেদের খোরাকি ব্যয়, বরফ, মজুরি মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে ৭০ শতাংশ। ফলে আহরিত মাছ বেচে ব্যয় তুলে লাভ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ খাতে জ্বালানি ভর্তুকি নেই, ব্যাংক ঋণের সুবিধা অবারিত নেই, সরকারি পর্যায়ে জেলেদের বিমা ও মজুরি কাঠামোও নির্ধারণ করা হয়নি। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে প্রয়োজন অত্যাধুনিক ট্রলার ও জাহাজ। সেই সক্ষমতাও বাড়েনি। ফলে দেশের নৌযানগুলো গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ করতে পারছে না।