ঢাকা ২ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫
English

পিছিয়ে গেছেন বাসমালিকরা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০০ এএম
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
পিছিয়ে গেছেন বাসমালিকরা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সরকার নির্ধারিত কোনো বাস কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা করতে এই বছরের শুরুতে বেশ আগ্রহ দেখালেও এখন আর তাতে রাজি নয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) আর দুই সিটি করপোরেশনের বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি নিয়ে তাই এখন অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়ন করা যাবে কি না তা নিয়েও নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি ভেস্তে গেলে সরকারের ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা গচ্চা যাবে।

রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুট পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হয়েছিল বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে। ঢাকার ৩৮৮টি রুটকে সমন্বয় করে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুটে পুনর্বিন্যাস করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বাস মালিকদের চরম অসহযোগিতায় এই প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখবে না বলেও মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার সড়ক পরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন বা ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্প শুরুতে প্রশংসা কুড়ায় নগরবাসীর। নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে ওঠানামা করার সুবিধার পাশাপাশি বাসে বাসে রেষারেষি বন্ধ, যাত্রী নেওয়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ায় এ প্রকল্প নিয়ে উচ্চাশা প্রকাশ করেছিলেন বাসযাত্রীরা।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাস রুটকে ৯টি ক্লাস্টারে (৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের) বিভক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ২২টি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাবও এসেছিল। গোলাপি রঙের গুচ্ছে চারটি, নীল গুচ্ছে চারটি, লাল গুচ্ছে পাঁচটি, কমলা গুচ্ছে ছয়টি, সবুজ গুচ্ছে আটটি, বেগুনি গুচ্ছে ছয়টি, নর্থ গুচ্ছে তিনটি, নর্থ ওয়েস্ট গ্রুপে তিনটি, সাউথ গুচ্ছে দুটি রুট পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৯ সালে এসে সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। এই প্রকল্পের মডেল রুটগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচল করায় ঢাকা নগর পরিবহন ক্রমাগত লোকসানে পড়ে। এখন ঢাকা নগর পরিবহনে খোদ বিআরটিসিই বাস পরিচালনা করছে না।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ’ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় গ্রিন ক্লাস্টারের ৯টি রুটে বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। নগরের পরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে এ প্রকল্পের গুরুত্বারোপ করেন সড়ক খাত সংশ্লিষ্টরা।

এরপর গত ১২ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির ২৮তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডিটিসিএ ২৪, ২৫, ২৭ এবং ২৮ নং রুটে নতুন করে বাস পরিচালনায় আগ্রহী মালিকদের কাছ থেকে আবেদন নেবে। পাশাপাশি ঢাকার অন্য ৩৮টি রুটেও নির্দিষ্ট বাস কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা করতে আগ্রহী মালিকদের আবেদনপত্র জমা দিতে নির্দেশনা আসে ওই সভা থেকে।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার ৪২টি রুটে ২৫০টিরও বেশি কোম্পানি থেকে বাস পরিচালনার আবেদন পাওয়া গেছে। সম্মিলিতভাবে এসব বাসের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এরপর গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এসব বাসের মালিকদের সঙ্গে তিন দফায় সভা করেছে ডিটিসিএ। ডিসেম্বর মাসে একটি গণশুনানিরও আয়োজন করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাস মালিকরা বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে বাস চালাতে দারুণ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় ১৫ জানুয়ারির পরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যে বাস মালিকরা যেসব বাসের আবেদন করেছিলেন, সেসব বাসের অধিকাংশের ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট নেই। রুট পারমিট ও ফিটনেস সনদবিহীন এই সব বাস নিয়ে যখন আপত্তি উঠে প্রকল্পের সভায়, তখন বাস মালিকরাও বেঁকে বসেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভায় ২০ বছরের বেশি বয়সী বাসগুলো ঢাকার সড়ক থেকে তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাস মালিকরা বলেন, হুট করে বললেই এসব বাস সড়ক থেকে তুলে নিলে সড়কে গণপরিবহন সংকট শুরু হবে। আর ঢাকার সড়কে বাস চলাচলের জন্য তারা ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) অনুমোদন নিয়েছেন।

গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভা শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, ঢাকার বাস মালিকরা কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে বাস চালাবেন না। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে। সেই ডিটিসিএর কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন বাস মালিকরা।

এরপর বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায়, সেজন্য জোর চেষ্টা করছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একাধিক সভায় আহ্বান জানানোর পরেও বাস মালিকদের কেউ আসেননি। কয়েকজন বাস ব্যবসায়ী ব্যক্তিগতভাবে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘বাস মালিক সমিতি থেকে আমাদের এখানে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকার বাস রুটকে শৃঙ্খলায় আনতে এলে কোনো প্রকল্প নয়, দরকার একটি সরকারি গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ। ঢাকার সব বাস নির্দিষ্ট রুটে পরিচালনা করা ডিটিসির কাজ নয়। তারা গণপরিবহ5ন চলাচলে যেসব কর্তৃপক্ষ কাজ করে তাদের মধ্যে সমন্বয় ধরে রাখবে। তাদের এত জনবল নেই যে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনার কাজটি পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখানে একটি নতুন বিজনেস মডেল তৈরি করতে হবে; যেখানে বাস মালিকদের লাভ দেখতে হবে।’

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘বাস মালিকরা ডিটিসির অধীনে বাস রুট পরিচালনা করতে দেবেন না, ভালো কথা। নিজেরা করতে চাইছেন; তো করুক। তাতে সমস্যা নেই। তবে একটা শৃঙ্খলায় তো আসতে হবে তাদের।’

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে বাস চালাতে গেলে ভর্তুকির দাবি জানিয়েছেন বাস মালিকরা। এ বিষয়ে নীলিমা আখতার বলেন, ‘প্রকল্পে আমরা সাবসিডির বিষয়টি উল্লেখ করি নাই। সেখানে ব্যাংক লোনের কথা বলা আছে। তবে বাস মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে সাবসিডি দেওয়া যায়, সেটার জন্য একটা আলাদা পরিকল্পনা নিতে হবে।’

প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায় সে লক্ষ্যে বেসরকারি বাস মালিকদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক মেয়াদকাল রয়েছে, এমন সব বাস চাওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক। তিনি আশা করছেন, বাস মালিকদের পাশাপাশি এখন বৃহৎ কোনো দাতা প্রতিষ্ঠান এ খাতে যুক্ত হবেন।

স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদবাজার সামর্থ্য কম, তবুও প্রিয়জন সাজুক নতুন পোশাকে

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
সামর্থ্য কম, তবুও প্রিয়জন সাজুক নতুন পোশাকে
গুলিস্তানে স্বল্প আয়ের মানুষের ঈদবাজার। ছবি: খবরের কাগজ

ছোট্ট মেয়ে তানিয়ার বয়স চার, বড় মেয়ে জিনিয়া সবে সাত পেরোল। ছোট মেয়েটা ফ্রক আর বড় মেয়ে বায়না করেছে সালোয়ার কামিজের। বাবা মোহাম্মদ মহসীনও তা-ই এ দোকান ওই দোকান ঘুরে দেখছেন মনের মতো পোশাকের জন্য।‍ লাল টুকটুকে একটা ফ্রক পছন্দ করলেও দাম বেজায় বেশি চেয়ে বসলেন দোকানি। অগত্যা অন্য দোকানে যেতে হলো। এমন করে চারটি দোকান ঘুরে মিলল পছন্দের ফ্রক, দামে একটু বেশি। তাতে কী! ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ছোট্ট তানিয়ার পরনে এ লাল ফ্রকটি দেখে চোখ জুড়াবেন তিনি। 

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানের খদ্দের বাজার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ফুটপাতে কথা হয় মোহাম্মদ মহসীনের সঙ্গে। পেশায় দিনমজুর এই বাবা জানান, দুই মাস ধরে একটু একটু করে টাকা সঞ্চয় করেছেন যেন মেয়েদের আবদার পূরণ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘বড় মেয়েটা প্রথমে শাড়ি পরবে বলে বায়না করেছিল। কিন্তু ভালো একটা শাড়ি কিনে দেওয়ার মতো পয়সা তো হবে না আমার। ওর মা ওরে অনেক বুঝিয়েছে। পরে সে সালোয়ার কামিজ পরবে বলেছে মাকে। তা ছাড়া ওদের মায়ের জন্যও তো একটা নতুন শাড়ি কেনা লাগে। তাই টাকায় কুলাবে না বলে একটু কম কম বাজার করছি।’

কথা বলতে বলতে দেখা গেল মহসীনের শার্টের একপাশ ছিঁড়ে গেছে। নিজের জন্য কী কিনবেন জানতে চাইলে একগাল হেসে সালাম দিয়ে বিদায় নিলেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের এই বাসিন্দা। 

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর শপিংমলগুলোই শুধু নয়, বিভিন্ন সড়কের মোড়ে রিকশাভ্যানে নানা পোশাক, জুতা আর টুপির সমাহার সাজিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছে এই অস্থায়ী দোকানগুলো। পছন্দসই পোশাক, আতর, টুপি, জুতাসহ প্রসাধনীর নানা সামগ্রী মিলছে এখানে। ক্রেতা জানেন এই পোশাকগুলো হয়তো বেশি টেকসই হবে না, কিন্তু সামর্থ্য সীমিত বলে অন্য কোনো উপায়ও নেই শ্রমজীবী মানুষের। 

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের একটি ভ্যান থেকে ভাতিজির জন্য পোশাক কিনছিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বাসিন্দা গার্মেন্টকর্মী পারভেজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজির বয়স আট মাস। ওর জন্য জামা-কাপড় কিনতে এসে দেখি দাম অনেক। কিন্তু ওর জন্য কিছু না নিয়ে গেলে মনটা খারাপ লাগবে।’ 

রমনা ভবন মার্কেটের সামনে কথা হয় নীলফামারীর জলঢাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও মায়ের জন্য একটি শাড়ি কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আব্বা-আম্মাকে তো সারা বছর তেমন কিছু দিতে পারি নাই। তাই ঈদ এলেই একটু নতুন জামা-কাপড় কিনে দিই।’

গার্মেন্টকর্মী রত্না বেগম ঈদে যাবেন হবিগঞ্জের মাধবপুরে; সেখানে তার শ্বশুরবাড়ি। তার স্বামী উত্তরবঙ্গে একটি খাবার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী। তাই পুরো পরিবারের ভার এখন রত্নার ওপর। রত্না বলেন, ‘স্বামী আর ছেলের জন্য দুটি শার্ট কিনলাম। আর জিন্সের প্যান্ট যদি একটা পাই, যদি দামে মেলে তবে ছেলেটারে পরাব। ওদের জন্য নতুন কিছু কিনতে পারলেই শান্তি।’

ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী মো. লিটন মিয়া বলেন, ‘গতবারের ঈদের চেয়ে এবারের বিক্রি অনেক কমেছে। গত বছর ১৫ রোজার আগে ৫০-৬০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করেছি। এখন সেটা নেমে গেছে ১০-১২ হাজার টাকায়।’ একই কথা জানালেন আরেক বিক্রেতা মো. শান্ত ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে মানুষের হাতে টাকা-পয়সা কম। কাপড় বিক্রি করে আমাদের লাভের টাকা তো দূরে থাক, যে টাকায় পোশাক কিনেছি সে টাকাও উঠে আসবে কি না সন্দেহ আছে।’ গুলিস্তানের জিপিওর সামনে বেল্ট বিক্রি করেন মোহাম্মদ কাউসার। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেই বিক্রি ভালো ছিল। এখন তেমন বিক্রি নেই। এবার ঈদে কী নিয়ে বাড়ি যাব ভাবছি।’

গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় রিকশাভ্যানে গজ কাপড় বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ সোহেল। তিনি বলেন, ‘ঈদ এলে আগে অনেকেই গজ কাপড় নিতে আসতেন নতুন শার্ট বানাবেন বলে। এখন তো তৈরি পোশাকের বাজার। আর এখন দর্জির দোকানেই কাপড় বিক্রি করে। এখন আমাদের কাছে কেউ আসেন না।’ 

কালের সাক্ষী ওয়ালী বেগ খাঁ মসজিদ

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
কালের সাক্ষী ওয়ালী বেগ খাঁ মসজিদ
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ শাহি জামে মসজিদ। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের চকবাজারে গেলেই চোখে পড়ে বিশাল আকৃতির ছয়টি গম্বুজবিশিষ্ট পুরোনো দেওয়ালের একটি ভবন। ভবনটি সড়ক থেকে সাড়ে চার ফুট ওপরে। দেয়ালের পুরুত্ব কমপক্ষে তিন ফুট। দেয়ালের গায়ে এক হাত পরপর জানালামসর মতো খাঁচ। সেখানে জমেছে শেওলা, লোহায় পড়েছে মরিচা। দেখলে যে কেউ ভাববেন আধুনিক শহরে বুঝি পুরোনো কিছুর ছোঁয়া। বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে অবস্থিত নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ শাহি জামে মসজিদের কথা, যা সাড়ে তিন শ বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থাপনা এই মসজিদটি।

মসজিদটি অনেক দূর থেকেও দৃশ্যমান হয়। বহুতল ভবনের ওপর থেকে গোলাকৃতির গম্বুজগুলো দেখতে অসাধারণ লাগে। কাছে গেলে ধরা পড়ে এর চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে পরতে পরতে গাঁথা ইতিহাস। ভবনটির অবয়বই বলে দেয় এটি কয়েক শ বছরের প্রাচীন নিদর্শন। নতুন পথচারীরাও এটি দেখে থমকে দাঁড়ান। আর ভাবেন কী এটি? এই মসজিদের ইট-পাথরে মিশে আছে মুঘল আমলের নানা ইতিহাস। এখনো স্থানীয়দের মাঝে এর প্রতি রয়েছে আলাদা শ্রদ্ধা, আবেগ, অনুভূতি। তবে আগের মতো মসজিদটির অপরূপ সৌন্দর্য বাইরে দেখে আর তেমন বোঝা যায় না। ফলে নতুন প্রজন্মও জানতে পারে না এই মসজিদের ইতিহাস। যদিও ভেতরটা এখনো চমকপ্রদ।

১৭১৩-১৭১৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুঘল সম্রাটরা চট্টগ্রাম বিজয়ের নিশান হিসেবে এ অঞ্চলে কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার মধ্যে নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ শাহি জামে মসজিদ অন্যতম। মুঘল ফৌজদার নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ মুঘল সম্রাটের নির্দেশে মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে তার নামেই এটির নামকরণ করা হয়। নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ ওই সময় মুঘল সাম্রাজ্যের এই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। কেউ বলেন এই মসজিদটি সাড়ে তিন শ বছরের পুরোনো। আবার কেউ বলেন, এটি ৩১৩ বছরের পুরোনো। তবে এর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। অসংখ্য বাণ্যিজ্যিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে ওয়ালি বেগ খাঁ শাহি জামে মসজিদ অনন্য।

চকবাজার মোড়ে মসজিদের মূল ভবন ৬-৭ শতক জমির ওপর বিস্তৃত হলে মসজিদের নিজস্ব ১৮ শতক জমি আছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এটির ছয়তলা ভবন নির্মাণাধীন।

ভেতরে গেলেই নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ মসজিদের সৌন্দর্যে চোখ আটকাবে যে কারোরই। জানা গেছে, এটির দেওয়ালগুলোর পুরুত্ব ১-৩ ফুট। দেওয়ালের আছে ছোট-বড় অসংখ্য খোপ, যা মুঘল আমলের নির্মাণশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ওই খোপগুলোতে কোরআর শরিফ, ইসলামি কিতাবগুলো সাজানো আছে। আছে চেরাগের খোপও। মসজিদের ভেতরে কয়েকটি পুরোনো কাঠের আলমারি, জুতার বাক্স, ঘড়িও চোখে পড়ল। মসজিদের মেঝেতে অন্য রকম প্রশান্তি।

ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই রোজার দিনে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মসজিদের ভেতরে বিশ্রাম করছেন। কেউ কেউ মসজিদটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। আর অবাক চিত্তে ভাবছেন এত সুন্দর করে কে নির্মাণ করেছেন এই মুসলিম স্থাপনা।

ছয়তলার ওপরে উঠতেই ধরা দিল মসজিদের মূল আকর্ষণ হালকা কমলা রঙের বড় বড় গম্বুজ। একসময় গম্বুজগুলোতে কালো শেওলা জমে ছিল। ফলে প্রকৃত রং কী তা জানা যায়নি। কয়েক বছর আগে মসজিদ কমিটি এগুলোতে কমলা রং লাগান বলে জানা গেছে। ছয়টি গম্বুজ পাশাপাশি লাগোয়া। গম্বুজগুলোর শিরোভাগে ছয়টি ছোট মিনার রয়েছে। আর সামনে তিনটি বড় মিনার থাকলেও পেছনের তিনটি মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মসজিদের পেশ ইমাম মোহাম্মদ মাশহুদ বলেন, মসজিদের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে খুব ‍সুন্দর পুরোনো তিনটি মিনার ভেঙে ফেলা হয়। আগেও রাস্তার কারণে মসজিদটি ছোট করে দেওয়া হয়। এটি আরও অনেক প্রশস্ত ছিল। প্রত্নতত্ব বিভাগ এটিকে আগের স্থানে ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিলেও সেটির বাস্তবায়ন হয়নি।

সুদিনের অপেক্ষায় দেশের অর্থনীতি

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:১০ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম
সুদিনের অপেক্ষায় দেশের অর্থনীতি
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

রাজধানীর তালতলার বাসিন্দা শিউলি আক্তার একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। স্বামীর আয়ে সংসার আর চলছে না। টানাটানির সংসারে কষ্ট করে পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। একবছর না যেতেই গত জানুয়ারিতে তা বিক্রি করে দেন শিউলি আক্তার। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আর পারছি না। সংসার তো চালাতে হবে। তাই শেষ সম্বল সঞ্চয়ের ওপর হাত দিতে হলো।’ শিউলি আক্তারের মতো এরকম অনেকেই বর্তমানে সঞ্চয়পত্র ভেঙে জমানো টাকা খরচে করে সংসার চালাচ্ছেন।

উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহার মানুষ। কেউ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন, কেউ সংসার চালাচ্ছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করে। সব মিলিয়ে কষ্টে আছেন সাধারণ মানুষ। এরকম অবস্থা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। সম্প্রতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

প্রয়াত জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের একটি জনপ্রিয় বাক্য আছে- ‘খারাপ সময় চিরকাল থাকে না, আল্লাহ চাইলে সুদিন ফিরবে ইন্‌শাআল্লাহ।’ অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ‘সুদিন আসবে না, এ কথা বলা ঠিক হবে না। ইতিহাস বলে আমরা চাইলে পারি। এখন আমরা একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আছি। এটা ঠিক হতে সময় লাগবে। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত কয়েক দশকে আমাদের অগ্রগিত হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন- জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে।’ অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল অর্থ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে ভয়াবহভাবে। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে।’

সরকার বাজার পরিস্থিতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শুধু অন্তর্বর্তী সরকারই নয়, কোনো সরকারই তা পারেনি। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ আছে। তারপরও দাম বাড়ছে।

গত আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চমূল্যস্ফীতি। এতে জিনিসপত্রের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। তবে আশার আলো হচ্ছে, সম্প্রতি মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং খাদ্যমূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

সাবেক সচিব গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার বলছে মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে। আমি মনে করি আগামী এক বছরের মধ্যে ওই পর্যায়ে কমার সম্ভাবনা নেই। উৎপাদনব্যবস্থায় এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আমাদের উচিত ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেও দাম বাড়াতে না পারে।’

গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে সরকার চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের শুল্ক কমিয়েছে। শুল্ক কমালে পণ্যের দাম কমবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনা ঘটছে উল্টো। দাম আরও বেড়েছে। শুল্ক ছাড়ের সুবিধা গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। এবার রোজার আগে খেজুর, সয়াবিন তেলসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। তার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন খবরের কাগজেকে বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শুল্ক-কর কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা যায়নি। বরং মাঝখান থেকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।’ বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখেন ব্যাংকে। তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙানোর হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না। সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার ব্যাংকের আমানতের সুদ বা মুনাফা আকর্ষণীয় নয়। বর্তমানে আমানতের সুদ মূল্যস্ফীতিরে চেয়ে কম। আবার অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। এসব কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙাচ্ছেন অনেক গ্রাহক।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মানুষের যখন আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হয়, তখন সঞ্চয় করেন। এখন অনেকেরই আয় নেই। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। ফলে তারা সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করেন মধ্যবিত্তরা। বিগত কয়েক বছর উচ্চমূল্য স্ফীতির কারণে মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ বেড়েছে। কাজেই সঞ্চয়পত্রে দীর্ঘসময় ধরে বিনিয়োগ করতে হয়। দীর্ঘসময় বিনিয়োগ করার জন্য যে ধরনের আর্থিক সংগতি দরকার, মধ্যবিত্তের এখন সেটা নেই। কাজেই নতুন করে তাদের সঞ্চয়পত্র কেনার সক্ষমতা নেই।’

আমদের কী সুদিন আসবে না, এই দুঃসময় কত দিন থাকবে? –এ প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে আমাদের বর্তমান আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। এখন আমরা একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আছি। অর্থনীতির বিধ্বস্ত অবস্থা কেটে যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সব কিছু একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। বিনিয়োগ করার জন্য যা দরকার সেই পরিবেশ নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী কেউই এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন না। এ অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? কর্মসংস্থান না বাড়ালে আয় বাড়বে না। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবে যাদের আগে সঞ্চয়পত্র ছিল, তারা ভাঙিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার নির্বাহ করছেন।’

বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে ব্যাপক। নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত আমানত রয়েছে। যে কারণে আমানতের সুদহার কম। আগে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণীয় হারে মুনাফা দিত। যে কারণে গ্রাহকরা ব্যাংকে বেশি টাকা রাখত এবং মুনাফা দিয়ে সংসার চালাত। এখন আমানতের সুদহার কম থাকায় গ্রাহকরা ব্যাংকমুখী হন না। আবার শেয়ারবাজারের মন্দাভাবের কারণে অনেকে বড় ধরনের পুঁজি হারিয়েছেন। বিশেষ করে যারা ঋণ করে বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আয় না থাকলে সঞ্চয় ভাঙানো বাড়বে। আয় বৃদ্ধির তুলনায় ব্যয় বেশি হলে সঞ্চয়ের ওপর হাত পড়বে। গত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতি যে দুর্বল একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে, বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রকৃত মজুরি ধারাবাহিকভাবে নিম্নগামী, কর্মসংস্থানে স্থবিরতা- এসব জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না।’ ২০১৬ সালের পর থেকে শ্রমবাজারে এ ধরনের একটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের পথ কী? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উত্তরণের কথা বলতে গেলে আগের কথাই বলতে হয়। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ জন্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। ব্যাংক খাতের দুরবস্থা কাটাতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার জোগান যথাযথভাবে নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ব্যবসা চালু করতে গেলে যেসব নিয়ম-কানুনের জটিলতা আছে, সেগুলো নিরসন করতে হবে।’

মানুষের সামনে যে দুঃসময় তা কি শিগগিরই কাটবে না? সুদিন কী আসবে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আসবে না বললে ঠিক হবে না। কারণ ইতিহাস বলে আমরা চাইলে পারি। কী করতে হবে, কেন করতে হবে সেটা পুনরায় আবিষ্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন কথাটা হচ্ছে করার সদিচ্ছা আছে কি না এবং কীভাবে করব- সেটা নির্ধারণ করতে হবে। সেটা হবে কি না বা কবে হবে তার জন্য অপেক্ষা আর প্রার্থনা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।’

কূটনৈতিক লবিং জোরদারে জামায়াত

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩০ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম
কূটনৈতিক লবিং জোরদারে জামায়াত
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আওয়ামী লীগ যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিদেশিদের কাছে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করে কোণঠাসা রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে দলটি। এরপরই রাজনীতির পাশাপাশি কূটনৈতিকপাড়ায় লবিং বাড়িয়েছে জামায়াত। কূটনীতিকদের কাছেও বেড়েছে গ্রহণযোগ্যতা। বিশ্বের প্রভাবশালী ও উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী দলটি। সেই লক্ষ্যে গত ৭ মাসে অন্তত ১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি প্রভাবশালী ৫টি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল। এর মধ্য দিয়ে জামায়াত নিজেদের নতুনভাবে উপস্থাপন করছে বলে জানিয়েছেন দলটির কূটনৈতিক উইংয়ের দায়িত্বশীল নেতারা।

তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫টি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন দলটির আমির ও শীর্ষ নেতারা। সেই সঙ্গে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন এবং একান্ত বৈঠক করেছেন। গত ৮ মার্চ ইফতার মাহফিলে ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় সব দেশের কূটনীতিকদের এক টেবিলে বসিয়েছিল জামায়াত। সর্বশেষ শনিবার (১৫ মার্চ) বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতে ইসলামীর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় আমাদের কোনো স্পেস দেওয়া হয়নি। আমাদের অফিসে ডিপ্লোম্যাটিক কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল, কোথাও প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি। নেতাদের নিরাপত্তা ছিল না। এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীকে দুনিয়াব্যাপী কূটনীতিকদের সামনে নিয়ে যাওয়ার আমাদের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করছি। জামায়াতে ইসলামী যে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তার গঠনমূলক নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি জানাচ্ছি। কূটনীতিককদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারাও আমাদের কাছে আসছেন। দেশে-বিদেশে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দেশ গঠনে জামায়াতের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মকাণ্ডে কূটনীতিকরা অত্যন্ত ইমপ্রেসড, সন্তুষ্ট। কেননা, তারা জামায়াতের কাছে অনেক কিছু আশা করেন। আমরা চেষ্টা করছি।’

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জামায়াতের বিরুদ্ধে নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ওই দিনই দীর্ঘ ১৪ বছর পর দলের মগবাজারে কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর কার্যালয় খোলেন জামায়াতের নেতারা। একই দিনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও খোলা হয়। এরপরই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি করে জামায়াত।

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত সবার প্রথমে জামায়াতের অফিস পরিদর্শন করেন। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এরপর গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, ১৪ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) নার্দিয়া সিম্পসন, ১৬ অক্টোবর ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান, ২৬ নভেম্বর তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন এবং ১০ ডিসেম্বর ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসুর চাভোশি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন। পরে আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সব রাষ্ট্রদূত। এরপর চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি জামায়াতের আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস ফেরেস। এ ছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দোহাইলান, ১১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, গত ১০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দুই কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোভিচ, ১১ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং গত ১৩ মার্চ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন কার্যালয় পরিদর্শন করেন। পরে রাষ্ট্রদূতরা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর সর্বশেষ গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা।

এ ছাড়া সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তার মধ্যে জামায়াত আমির ব্রিটেন, মালয়েশিয়া, কুয়েত সফর করেছেন। আর সেক্রেটারি জেনারেল জাপান ও তুরস্ক সফর করেছেন। শীর্ষ নেতাদের একটি দল চীন সফর করেছে।

জামায়াতের কূটনৈতিক উইংয়ে কাজ করে এমন একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে ১৬ বছর ধরে তারা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পালন করাটাই যেখানে দুঃসাধ্য ছিল, সেখানে কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রাখা আরও দুষ্কর ছিল। ফলে বরাবরই কোণঠাসা করে রাখার মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে জামায়াতে ইসলামীকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী জামায়াতে ইসলামী। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। তারা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নসহ সব অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্ব বাড়িয়েছি। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করছি। ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে আমরা বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে ভালো এবং ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি।’

দীর্ঘ ১১ বছর পর গত ৮ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সসহ কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেদিন ঢাকায় নিযুক্ত প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। পরে ইফতার মাহফিলে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান কূটনীতিকদের কাছে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-নিপীড়নের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। ইফতার মাহফিলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার, চীনের রাষ্ট্রদূত, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, ইরানের রাষ্ট্রদূত, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক, পাকিস্তানের হাইকমিশনার, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত যোগ দেন। এ ছাড়া মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।

নিহত রিকশাচালকের ৬ মেয়ের দায়িত্ব নেবে কে?

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫২ এএম
নিহত রিকশাচালকের ৬ মেয়ের দায়িত্ব নেবে কে?
রিকশাচালক রুহুল আমিনের ছয় মেয়ে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌর সদরে একটি পূরবী বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক রুহুল আমিন। তার ঘরে কোনো ছেলেসন্তান না থাকলেও রয়েছে ছয় মেয়েসন্তান। এখন জনমনে প্রশ্ন, অভাব-অনটনের সংসারে বড় হওয়া এ ছয় মেয়েসন্তানের দায়িত্ব নেবে কে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের জনমনে।

এক স্ত্রী ও ছয় মেয়ের ভরণপোষণের একমাত্র ভরসা ছিলেন রুহুল আমিন। সারা দিন পরিশ্রম করে রিকশাচালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে চলত সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখার খরচ। মৃত্যুর আগে ছয় মেয়েকে ঈদের নতুন জামা-কাপড়ও কিনে দিয়ে যেতে পারলেন না তিনি। বাবার মৃত্যুর শোকে ছয় মেয়ের কান্না যেন থামছেই না।

জানা যায়, একটি ছেলেসন্তানের আশায় একের পর এক ছয় মেয়েসন্তানের জন্ম হয়েছে রিকশাচালক রুহুল আমিনের সংসারে। তার ছয় মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে উম্মে সোলতানা চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সোলতানা রিপা দোহাজারী জামিজুরী গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তৃতীয় মেয়ে আলিফা পড়ে জামিজুরী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে। চতুর্থ মেয়ে ওয়াকিয়া পড়ে একই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে। পঞ্চম মেয়ে ফাতেমার বয়স আড়াই বছর ও ষষ্ঠ মেয়েটির বয়স মাত্র ২৫ দিন। এখনো পর্যন্ত ষষ্ঠ মেয়ের নামও রাখা হয়নি।

নিহত রিকশাচালক রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ দুই কক্ষবিশিষ্ট ছোট্ট একটি সেমিপাকা ঘরে স্ত্রী ও ছয় মেয়ে নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করে আসছিলেন রিকশাচালক রুহুল আমিন। তার ছয় মেয়ে ঘরের এক পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছেন বাবার শোকে। কিছু বোঝার বয়স না হলেও অন্য বোনদের কান্নায় বড় বোন উম্মে সোলতানার কোলে অবিরাম কান্না করছে মাত্র ২৫ দিন বয়সী শিশুটিও। আড়াই বছরের শিশু ফাতেমা, দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া ওয়াকিয়া এবং চতুর্থ শ্রেণির আলিফাও কাঁদছে বড় বোন উম্মে সোলতানা ও মেঝো বোন তাসফিয়া সোলতানা রিপার পাশে দাঁড়িয়ে। তারা ছয় বোনের কান্না যেন থামছেই না। তাদের আর বুঝতে বাকি নেই যে সন্তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল বাবা তাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

নিহত রিকশাচালক রুহুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল কাদের বলেন, ‘আমার বড় ভাই প্রায় তিন বছর ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ ও ছয় মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করে আসছিলেন। অন্য দিনের মতো গত বৃহস্পতিবারও তিনি যাত্রী নিয়ে দোহাজারী পৌর সদরে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামমুখী একটি পূরবী বাস আমার বড় ভাইয়ের রিকশার পেছন থেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার সংসারে ছয় মেয়ে রয়েছে। এখন তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাদের পড়ালেখার খরচ কে চালাবে?’