আর মাত্র একটি জয়। তাতেই নিশ্চিত হবে কোপা আমেরিকার ফাইনাল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা মঞ্চে যেতে উন্মুখ হয়ে আছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। প্রথমবারের মতো ফাইনালে যেতে মরিয়া কানাডাও। কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-কানাডার লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৬টায়।
তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। কোপায় উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বাধিক ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন আলবিসেলেস্তারা। ধারে-ভারে কানাডার চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে মেসিরা। সেমিতে তাই আর্জেন্টিনার জয়ের পক্ষে বাজি ধরার লোকই বেশি। তাই বলে কানাডাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিলে তা হবে মারাত্মক ভুল। দল হিসেবে মোটেও দুর্বল নয় তারা। ইতিহাস অন্তত তাই বলে।
কানাডার শক্তিমত্তা
প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকায় খেলছে কানাডা। অভিষেক আসরেই সেমিতে নাম লিখিয়ে ইতোমধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে উত্তর আমেরিকার দলটি। কোপা আমেরিকা মূলত দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এর বাইরে যেসব দল আসে, তারা আমন্ত্রিত। কানাডাও তেমনি। তবে উত্তর আমেরিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর কনকাকাফ গোল্ড কাপে কিন্তু কানাডার রয়েছে উজ্জ্বল ইতিহাস। নিজ মহাদেশে এই কানাডা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন (১৯৮৫, ২০০০)। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নের পর অবশ্য ফাইনাল খেলা হয়নি দলটির। সেমিফাইনাল খেলা হয়েছে তিনবার, কোয়ার্টার চারবার।
মুখোমুখি অবস্থান
হেড টু হেডে কানাডার চেয়ে শতভাগ এগিয়ে আর্জেন্টিনা। এখন পর্যন্ত দুই দল মোকাবিলা করেছে দুটি ম্যাচে। দুটিতেই জয় পেয়েছে মেসিরা। প্রথম জয় ২০১০ সালে। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৫-০ গোলে। দ্বিতীয় ও সর্বশেষ জয় চলমান কোপা টুর্নামেন্টেই। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে। যেখানে কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
যেভাবে দুই দল সেমিতে
এ গ্রুপে তিন ম্যাচেই জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় আর্জেন্টিনা। শুরুটা কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে। এরপর চিলির বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়। শেষ ম্যাচে পেরুকে ২-০ গোলে হারায় স্কালোনি শিবির। তিন ম্যাচে চার গোল লাউতারো মার্তিনেজের। গোলের দেখা পাননি লিওনেল মেসি। যদিও ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলেননি মেসি। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় ইকুয়েডরের। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ছিল ১-১ গোলে ড্র। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জেতে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের অসাধারণ দক্ষতায়। টাইব্রেকারে প্রথম শট মিস করেন মেসি।
কানাডা হার দিয়ে মিশন শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকে হারায় ১-০ গোলে। শেষ ম্যাচে চিলির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে শেষ আটে নাম লেখায় কানাডা। আর্জেন্টিনার মতো কানাডাও কোয়ার্টারের বৈতরণী পার করে টাইব্রেকারে। প্রতিপক্ষ ছিল ভেনেজুয়েলা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে ড্র। টাইব্রেকারে কানাডা জেতে ৪-৩ ব্যবধানে।
আর্জেন্টিনার টানা পঞ্চম
কোপা আমেরিকা ফুটবলে টানা পঞ্চমবারের মতো সেমিতে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে উঠতে পারলে তা হবে টানা দ্বিতীয়, সব মিলিয়ে ৩০তম। চলমান টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে একটি মাত্র গোল হজম করেছে স্কালোনি শিবির। গোলপোস্টে রীতিমতো চীনের দেয়াল হয়ে আছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আর্জেন্টিনার জয়ের হার বেশ ভালো। মেজর টুর্নামেন্টে মার্কিন মুলুকে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ হার ১৯৯৪ বিশ্বকাপে। যেখানে রোমানিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরেছিল ম্যারাডোনা শিবির। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা এর মধ্যে গোল হজম করেছে মাত্র তিনটি।
ইতিহাসের সামনে কানাডা
আর্জেন্টিনার সঙ্গে গ্রুপ পর্বে হারার পর মাত্র এক গোল হজম করেছে কানাডা। কনকাকাফ অঞ্চল থেকে তৃতীয় দল হিসেবে সেমিতে পা রেখেছে দলটি (হন্ডুরাস ও মেক্সিকো)। জেসে মার্শ শিবিরের সামনে প্রথমবারের মতো ফাইনালে যাওয়ার হাতছানি। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে কানাডার এটি পঞ্চম সেমিফাইনাল। আগের চারটির মধ্যে দুই বারই সেমি অতিক্রম করতে পেরেছে তারা। ২০০০ সালে গোল্ড কাপে, ত্রিনিদাদ এন্ড টোব্যাগোর বিরুদ্ধে ১-০ গোলে। দ্বিতীয়বার ২০২৩ সালে নেশনস লিগে পানামার বিরুদ্ধে ২-০ গোলের জয়ে।
২০০১ সালের পর কনকাকাফ অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো কোনো দল ফাইনালে যাওয়ার প্রতীক্ষায়। ২৩ বছর আগে উরগুয়েকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল মেক্সিকো। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে দলটি ১-০ গোলে হেরেছিল কলম্বিয়ার কাছে।
দুই দলের হালহকিকত
ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন মেসি। কোয়ার্টারে আক্রমণভাগে তার সঙ্গী ছিলেন লাউতারো মার্তিনেজ। পরে লাউতারোর বদলি হিসেবে নামেন হুলিয়ান আলভারেজ। ইকুয়েডরের বিপক্ষে শেষ আটের ম্যাচে বদলি হিসেবে দেখা যায়নি ডি মারিয়াকে। দ্বিতীয়ার্ধে এনজো ফার্নান্দেজের বদলি হিসেবে খেলেছিলেন নিকোলাস ওতামেন্ডি। এই ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম গোলের দেখা পান লিসান্দ্রো মার্তিনেজ। গোলপোস্টে অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে আছেন এমি মার্তিনেজ। খুব বেশি রদবদল হয়তো হবে না আর্জেন্টিনার একাদশে।
সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কানাডা হয়তো পাবে না তাজন বুকাননকে। ইন্টার মিলানের হয়ে খেলা এই ফুটবলার ইনজুরিতে পড়েন কোয়ার্টারে ভেনেজুয়েলার ম্যাচের ঠিক এক দিন আগে। কোয়ার্টারে কানাডার একাদশে নতুন মুখ হিসেবে দেখা গিয়েছিল আল আহমেদকে। কানাডার হয়ে চলতি টুর্নামেন্টে দুটি গোল করা জ্যাকব শাফেলবার্গ বড় ভরসার জায়গা।
সম্ভাব্য একাদশ
আর্জেন্টিনা: এমি মার্তিনেজ, মলিনো, রোমেরো, লাসিন্দ্রো মার্তিনেজ, তাগলিয়াফিকো, ডি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার, সেলসো, গঞ্জালেজ, মেসি, লাউতারো মার্তিনেজ।
কানাডা: ক্রেপিউ, জনস্টন, বম্বিতো, কর্নেলিয়াস, ডেভিস, ওসোরিও, ফাসতাকিও, লারেয়া, ডেভিড, শেফেলবার্গ, লারিন।