দীর্ঘ ১৪ মাস পর এশিয়া কাপ দিয়ে আবার জাতীয় দলে ফিরেছেন ৩১ বছর বয়সী তারকা জাহানারা আলম। গত মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত আসরে দুটি ম্যাচ খেলেছেন অভিজ্ঞ এই পেসার। দেশে ফিরে খবরের কাগজের মুখোমুখি হয়ে শুনিয়েছেন নিজের ফিরে আসার গল্প আর আগামীর স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ
লম্বা সময় পর দলে ফিরে এশিয়া কাপে খেললেন। এই ফিরে আসার অনুভূতির কথা জানতে চাই প্রথমে…
শুকর আলহামদুলিল্লাহ। প্রথমেই আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক শুকরিয়া আদায় করি। আসলে পরিশ্রম তো সবাই করে। কিন্তু ভাগ্যেরও ব্যাপার থাকে। আমার কাছে মনে হয় এটা আল্লাহ অশেষ রহমত যে আমি কামব্যাক করতে পেরেছি, আমি আবার বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি। এই দিক থেকে খুবই খুশি আমি।
ক্যারিয়ারে এত লম্বা সময় কখনো জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন?
নাহ, এত দীর্ঘ সময় কখনোই না।
এই যে লম্বা সময় বাইরে থাকা, কেমন ছিল সময়টা?
আসলে এটা একটু কঠিন। তবে সব সময় পরিশ্রম ও কাজের মধ্যে ছিলাম। পজিটিভ মাইন্ডসেটের মধ্যে ছিলাম যে ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে। তাই সময়গুলো ভালোভাবেই কেটে গেছে। তবে কঠিন ছিল, এটা সত্যি।
গত বছর ভারত সিরিজে আপনি বাদ পড়েন। সেই সময় থেকে দল বেশ ভালো করছিল। বাইরে থাকার সময়ে কি হতাশা কাজ করেনি?
সত্যি কথা বলতে হতাশা কখনো কাজ করেনি। হতাশা কাজ করলে আমার জন্য কামব্যাক করা হয়তো আরও দীর্ঘ ও কঠিন হত। তবে খারাপ লাগত যে আমি দলের বাইরে আছি। দল ভালো করছিল, এই দিকটায় বেশ ভালো লাগত। আমি সব সময় বলে এসেছি, এখনো বলি, দল সবার আগে। দল যখন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো খেলল, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ভালো খেলল, সবকিছু মিলিয়ে ভালোলাগা সব সময়ই ছিল। আমি সব সময় দলকে উইশ করেছি। ভালো করার পর সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছি।
সর্বশেষ ঢাকা লিগে আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট নিয়েছিলেন। এই পারফরম্যান্স আপনার দলে ফেরায় বড় ভূমিকা রেখেছে। লিগে ভালো করে এশিয়া কাপেই দলে ফিরতে হবে, এমন কোনো লক্ষ্য নিয়ে খেলেছিলেন?
সত্যি বলতে এরকম সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য ছিল না। গত বছরের জুলাই মাসের ভারত সিরিজ থেকেই আমি দলের বাইরে ছিলাম। তখন থেকেই আমি চেষ্টা করছিলাম। প্রত্যেকটা দিন কাউন্টেবল ছিল আমার জন্য। নিজেকে আমি প্রস্তুত রাখতে চেয়েছি, যেন যখনই আমাকে প্রয়োজন হবে, তখনই যেন প্রস্তুত অবস্থায় নিজেকে মেলে ধরতে পারি। এজন্যই আসলে সম্ভব হয়েছে। ইতিবাচক মানসিকতার মধ্যে থাকাটাই আমার কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছি সব সময়।
যখন বাদ পড়লেন, তখনকার জাহানারা আর এখনকার জাহানারার মধ্যে পার্থক্য কী?
খুব বেশি পার্থক্য আমি বলব না। তবে ২০০৮ সাল থেকে সাড়ে ১৫ বছর আমি বাংলাদেশকে টানা প্রতিনিধিত্ব করেছি। এরপর ১ বছর দলের বাইরে থাকা। এমনিতেই আমি একটু বেশি পরিশ্রম করতে পছন্দ করি। তবে বাইরে থাকার এই সময়ে আমার কঠোর পরিশ্রমের মাত্রা দ্বিগুণ ছিল। এই দিকটায় বলতে পারেন একটু পরিবর্তন এসেছিল। এর বাইরে অন্য কোনো পরিবর্তন নেই। ব্যক্তি জাহানারার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগে যেমন ছিল, তেমনই আছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাদ পড়ে গেলে তো ফিরে আসা কঠিন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যদের জন্য কী বলবেন?
দেখুন, বাদ পড়লে শুধু আমাদের দেশে না, পৃথিবীর সব জায়গাতেই একই রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হবে। যখন আপনাকে দলের প্রয়োজন হবে, তখন সরাসরি কল করে নেবে, না হলে আপনাকে ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণ করে আসতে হবে। অথবা কোনো একটা সিলেকশন ম্যাচ হলে সেখানে আপনাকে পারফর্ম করে আসতে হবে। এটা পৃথিবীর সব জায়গাতেই দেখবেন। বাদ পড়ে আবার টিমে ব্যাক করা, আমার জন্য এমন অভিজ্ঞতা তো এবারই প্রথম হলো। যারা এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েন, তাদের জন্য বলব, কঠোর পরিশ্রম ছাড়বেন না। আফসোস করে, হতাশায় ভুগে চুপচাস বসে থাকার কোনো মানে নেই। আপনার অসময়ে কিন্তু কেউ হাত বাড়িয়ে দেবে না। কেউ আপনাকে পেছন থেকে পুশও করবে না। যা করার আপনাকেই করতে হবে। পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। তাহলেই আপনি একমাত্র কঠোর পরিশ্রম করার স্পৃহা পাবেন। হ্যাঁ, ভাগ্যেরও বিষয় থাকে। ওপর আলার সহায়তা লাগে। তবে এটার জন্য আপনাকে পজিটিভ থাকতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এই দুটির সমন্বয়ে এগোলে আমার মনে হয় না আল্লাহ কাউকে ফিরিয়ে দেন। আমি নিজে এর প্রমাণ পেয়েছি। আমার বিশ্বাস যে বাকি সবাই পাবে।
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ফের মাঠে নেমে দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেয়েছেন। ভাগ্য মনে হচ্ছে আপনার পক্ষেই কথা বলছে…
(হেসে) এটা আল্লাহর রহমত। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে যখন খেলার সুযোগ পেলাম, চাচ্ছিলাম যেন ভালো পারফর্ম করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ, ১০৫ এর জায়গায় ১০৬টা আন্তর্জাতিক উইকেট হলো। এটা আমার জন্য পজিটিভ মোটিভেশন।
মালয়েশিয়ার পর ভারত, সবমিলিয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। এই দুই ম্যাচে নিজের পারফম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?
হয়তো আরেকটু ভালো হতে পারত। হয়তো দলের জন্য আরেকটু ভালো পারফম্যান্স করতে পারতাম। তবে পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা প্রতিদিনই শিখি। ম্যাচ বাই ম্যাচ শিখি। এত দিন ক্রিকেট খেলার পরও আমাদের প্রতিদিনই শেখার আছে। কারণ শচীন টেন্ডুলকার তার শেষ ম্যাচেও শিখেছেন, এটা আমরা তার বিদায়ী ম্যাচের ভাষণেই পেয়েছি। আমি মনে করি উন্নতির আরও অনেক জায়গা আছে। ইনশাআল্লাহ, যদি আমি আবারও খেলার সুযোগ পাই, চেষ্টা করব নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করে যেন আরও ভালো পারফর্ম করতে পারি।
সামনে বিশ্বকাপ। নিজের লক্ষ্য কী থাকবে?
মাত্র তো এশিয়া কাপ শেষ হলো। বিশ্বকাপের এখনো দুই মাস বাকি। এর আগে জাতীয় লিগ আছে। ধাপে ধাপেই ভাবা উচিত। আর যদি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাই, আল্লাহ যদি ভাগ্যে রাখেন, তবে ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করব সেরাটা দিয়ে যেন দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারি। চাইব আমাদের দলীয় র্যাঙ্কিংটা যেন এগিয়ে আসে। সেটা সম্ভব, যদি আমরা দলগতভাবে পারফর্ম করতে পারি। আমরা যদি কমপক্ষে দুটি ম্যাচ জিততে পারি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার হবে বলে আমি মনে করি।