২০১৬ রিও অলিম্পিকটা ছিল সোনায় সোহাগা। জিমন্যাস্টিকসের দলগতসহ চারটি ইভেন্টেই স্বর্ণ জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিমোনে বাইলস। অথচ চার বছর পর টোকিও অলিম্পিকে মুদ্রার উল্টো রূপ দেখেছিলেন তিনি। জিততে পারেননি একটি স্বর্ণও। একটি রুপা এসেছিল দলগত ইভেন্টে। ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন ব্যালান্স বিমে। ধূসর এমন পারফরম্যান্সে অলিম্পিকের মাঝপথেই দেশে ফিরেছিলেন বাইলস। টোকিও অলিম্পিকে যেটি ছিল তুমুল আলোচিত ঘটনা। যদিও নেপথ্যে ছিল তীব্র মানসিক অবসাদ। রাগে-হতাশায় অবসরেই যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অদম্য বাইলস শেষ পর্যন্ত তা করেননি। দুই বছর অনেকটা আড়ালে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। যার ফল তিনি পাচ্ছেন চলমান প্যারিস অলিম্পিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে জিমন্যাস্টিকসের দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জেতার পর এবার অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টেও স্বর্ণ জিতেছেন বাইলস। সব মিলিয়ে অলিম্পিক আঙিনায় তার সোনার পদক দাঁড়াল ৬টি। প্যারিসে দ্বিতীয় স্বর্ণ জেতার পর সবটুকু আলো যেন ছিল তার ওপর। বাইলসের এক হাতে ছিল স্বর্ণ পদক, আরেক হাতে ছাগলের আকৃতির একটি লকেট। যে লকেটটি ৫৪৬টি হীরার টুকরো দিয়ে তৈরি। তবে এই ছাগল সেই ছাগল নয়, ইংরেজিতে গোট বললেও, যার পূর্ণ রূপ গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (সর্বকালের সেরা)। কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর এই নামে ডাকা হয় লিওনেল মেসিকেও। বিশ্ব জিমন্যাস্টিকসে বাইলসও অনেকটা তেমনই।
প্যারিস অলিম্পিকটা বাইলসের জন্য ছিল শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাওয়ার মঞ্চ। দুটি স্বর্ণ জিতে সে পথেই হাঁটছেন ২৭ বছর বয়সী এই মার্কিন অ্যাথলেট। অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে ৫৯.১৩১ স্কোর গড়ে সোনা জেতেন তিনি। ব্রাজিলের রেবেকা ৫৭.৯৩২ স্কোর নিয়ে রুপা ও বাইলসের স্বদেশি সুনিসা লি ৫৬.৪৬৫ স্কোর গড়ে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে বাইলসের রয়েছে ২৩টি সোনা জয়ের অবিশ্বাস্য কীর্তি। অলিম্পিক ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ মিলিয়ে তার মোট পদক এখন ৩৯টি। বিশ্বের তৃতীয় অ্যাথলেট হিসেবে অলিম্পিকের অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে দুটি সোনা জিতে তিনি বসেছেন ভেরা কাসলাভস্কা ও লারিসা লাতিনিনার পাশে।
সোনা জিতে বাইলস বলেন, ‘আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, সব কিছু ভালো হলে আমি এই গোট নেকলেস পরব। জানি, এটা নিয়ে কথা হবে। কিন্তু এটা হওয়ার মতোই। বিশ্বের সেরা অ্যাথলেট বলা হচ্ছে আমাকে। কিন্তু আমি নিজেকে টেক্সাসের সেই বাইলস মনে করি, যে ফ্লিপ করতে ভালোবাসে।’
রিওতে ঝলমলে থাকলেও টোকিওতে বাইলস ছিলেন ধূসর। প্যারিস অলিম্পিকে আসার যাত্রাটা ছিল বাইলসের জন্য তাই বেশ কঠিন। যার পেছনে কাজ করেছে কঠিন মানসিক অবসাদ। মাঝে দুটি বছর ঐকান্তিক লড়াই আর প্রবল অধ্যবসায়েই নতুন করে ফিরে এসেছেন বাইলস। যদিও এই যাত্রাটা তার জন্য সুখকর ছিল না। কারণ তিনি ভুগছিলেন ‘টুইস্টিজ’ নামে এক ধরনের মানসিক অবসাদে। যেটির কারণে জিমন্যাস্টদের উঁচুতে থাকা বা বাতাসে ভেসে থাকার সময় স্থানিক মনোযোগ সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। টোকিও অলিম্পিকের পর দুই বছর নিয়েছেন চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। আর একাকী করেছেন নিবিড় অনুশীলন। সব মিলিয়ে নিজেকে সেরা প্রমাণ করার তাগিদ নিয়েই প্যারিসে পা রেখেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে বাইলসের এই প্যারিস অলিম্পিককে বলা হচ্ছে ‘রিডেম্পশন ট্যুর’।