একটি করে অলিম্পিক আসে। বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। খরচ করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। কিন্তু পদক জেতা আর হয় না। ফিরে অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ করে। ১৮ কোটি জনগণের দেশে একটি অলিম্পিক পদক জেতার মতো কোনো অ্যাথলেট এখনো জন্ম নিতে পারেনি। অথচ জনসংখ্যায় ও জিডিপিতে বাংলাদেশের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকার পরও উগান্ডা অলিম্পিকে পদকশূন্য থাকেনি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি আর উগান্ডার জনসংখ্যা ৫ কোটির মতো। বাংলাদেশের জিডিপি ১.৬২০ (উইকিপিডিয়া অনুযায়ী) ট্রিলিয়ন, সেখানে উগান্ডার জিডিপি ১৪৫.১৫৭ বিলিয়ন। উগান্ডা আগের চারটি স্বর্ণপদকের সঙ্গে এবার পেয়েছে একটি। এবার ১০ হাজার মিটার ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন জশুয়া চেপতেগেই। তিনি শুধু স্বর্ণ জিতেই থেমে থাকেননি। গড়েছেন নতুন অলিম্পিক রেকর্ডও। সময় নিয়েছেন ২৬.৪৩.১৪ সেকেন্ড। যেখানে আগের অলিম্পিক রেকর্ড ছিল ২৭ মিনিট ১.১৭ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ডও তার। যেখানে তিনি সময় নিয়েছিলেন ২৬ মিনিট ১১ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে তিনি ৩ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটি ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রথম তিনটি আসর পদকশূন্য থাকার পর চতুর্থ আসরে ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকে তারা প্রথম দেখা পায় পদকের। জিতেছিল ২টি পদক। ২টি পদকই ছিল ছেলেদের বক্সিংয়ে। তবে সেখানে ছিল না কোনো স্বর্ণ। জিতেছিল ১টি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকেই তারা পেয়ে যায় স্বর্ণের দেখা। ৪০০ মিটার হার্ডলসে জন আকি-বোয়া দেশকে এনে দিয়েছিলেন এই স্বর্ণ।
এখন পর্যন্ত তারা যে ৫টি স্বর্ণ জিতেছে তার সব কটিই অ্যাথলেটিকসে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ছেলেদের ম্যারাথনে জেতেন স্টিফেন কিপরোটিচ। গতবার টোকিও অলিম্পিকে তারা জিতেছিল ২টি স্বর্ণ। মেয়েদের ৩০০০ মিটারে পিরুথ চিমুথাই ও ছেলেদের ৫০০০ মিটারে এই জশুয়া চেপতেগেই। এবার তিনি যে ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন, গতবার এই ইভেন্টে জিতেছিলেন রৌপ্য। ৫টি স্বর্ণের পাশাপাশি তারা ৪টি রৌপ্য ও ৩টি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। তাদের সব কটি পদকই এসেছে অ্যাথলেটিকস এবং বক্সিংয়ে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ১টি রৌপ্য ও ২টি ব্রোঞ্জ এবং বক্সিংয়ে ৩টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জ।
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে। প্রথমবার ১টি মাত্র ইভেন্টে অংশ নিলেও এরপর থেকে প্রতিবারই একাধিক ইভেন্টে অংশ নিয়ে আসছে। সর্বোচ্চ ৭টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে। ১৯৮৮ সালে সিউল, ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা ও গতবার টোকিও অলিম্পিকে ৬টি করে ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিল। ৫টি করে ইভেন্টে অংশ নিয়েছে দুবার: ২০০৮ সালে বেইজিং ও ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। ৪টি করে ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল যথাক্রমে ১৯৯৬ সালে আটলান্টা, ২০০৪ সালে অ্যাথেন্স অলিম্পিকে। এবার নিয়েছে ৫টি ইভেন্টে। কিন্তু ফলাফল অন্তঃসারশূন্য। পদক জয়তো দূরে থাক, ন্যূনতম সম্ভাবনাও গড়তে পারেনি।
তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও অলিম্পিকে স্বর্ণ জিততে না পারার আক্ষেপ ছিল জশুয়ার। গতবার তিনি পদক জিততে পারেননি ইথিওপিয়ার সেলেমন বারেগার জন্য। ২৭ মিনিট ৪৩.২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে বারেগা জিতেছিলেন স্বর্ণ। জশুয়া সময় নিয়েছিলেন ২৭ মিনিট ৪৩.৬৩ সেকেন্ড। জিতেছিলেন রৌপ্য। এবারও স্বর্ণ জেতার পথে তিনি ইথিওপিয়ার দৌড়বিদদের সামনে প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়েছিলেন। গতবারের স্বর্ণ পদক জয়ী সেলেমন বারেগা এবার ২৬ মিনিট ৪৪.৪৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সপ্তম হলেও রৌপ্য জিতেছেন স্বদেশি বেনু আরগাউই। তিনি সময় নেন ২৬ মিনিট ৪৩.৪৪ সেকেন্ড। এই দুজন ছাড়াও ইথিওপিয়ার ইউমিফ কেজেলচাও ছিলেন লড়াইয়ে। তিনি ২৬ মিনিট ৪৪.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে ষষ্ঠ হয়েছেন। ব্রোঞ্জ জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রান্ট ফিশার। তিনি সময় নেন ২৬ মিনিট ৪৩.৪৬ সেকেন্ড।
এভাবেই উগান্ডা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অলিম্পিকে পদক জেতায়, আর বাংলাদেশ ফিরছে রিক্ত হস্তে শুধু অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে!