ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান শেখ হাসিনা। পরে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দেন রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা। শেখ হাসিনার বিদায়ের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি)। সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দেন বিসিবির বেশির ভাগ পরিচালক। তাদের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া বিসিবি চালাতে নতুন রূপরেখা সাজানো হচ্ছে বলে জানান ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
বিকেএসপির ক্রিকেট বিভাগের সাবেক প্রধান ও বিসিবিতে নানা সময় নানা ভূমিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতায় ভরপুর নাজমুল আবেদীন ফাহিম। বিসিবির ক্যাটাগরি-৩ থেকে সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিততে পারেননি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এসব কাজ করতে চাওয়ার কথা জানান তিনি। রূপরেখার ব্যাপারে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘এটা (রূপরেখা) নিয়েই তো আমরা বছরের পর বছর চিন্তাভাবনা করেছি, বিশেষ করে আমি। কোন জায়গায় কী করলে আরেকটু এগোনো যায়, কোন জায়গায় ঘাটতি আছে, আমাদের কী রিসোর্স আছে, যা দিয়ে আমরা ওভারকাম করতে পারি। সামনে হয়তো এটা নিয়ে আমি আলাপও করব। কোন জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি, অথচ সে জায়গায় আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই।’
ক্রিকেট বোর্ডে কাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন ছিল ফাহিমের কাছে। তার কথায়, ‘সত্যিকার অর্থেই যারা ক্রিকেটে ভালো চায়, আর ক্রিকেট বাংলাদেশকে যেভাবে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করে, এখানে কিন্তু ফাঁকি দেওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানে সঠিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আছে, দেশের বাইরে অনেক লোক আছে, যারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাদের নিয়ে যদি কিছু চিন্তাভাবনা করা হয়, তা হলে তারা তাদের মতো করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।’ রূপরেখা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতেও আপত্তি নেই তার। তার কথায়, ‘সেখানে যদি ইনপুট দেওয়ার সুযোগ থাকে, অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। শুধু আমার কথা নয়, যারা এসব বিষয়ে অবগত আছেন, তাদের কাছ থেকে আইডিয়া নেওয়া দরকার। তা হলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’
ফাহিম যোগ করেন, ‘আমি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করি, আমি নিশ্চয়ই আলাপ করব। আমি চাইব বিস্তারিত একটা রূপরেখা নিয়ে আসতে। যেন আমরা, যারা দায়িত্বে আছেন তাদের সাহায্য করতে পারি। আমি আবারও বলি, এটা আমার ব্যাপার নয়। উপদেষ্টাদের কথা বললেন, তারা চান সিস্টেমটাকে ঠিক করতে। যারা সিস্টেম ভালোভাবে চালাতে পারবেন, সেই ক্রিকেট বোর্ডে আসার যোগ্যতা রাখেন।’
রূপরেখা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে তখন কপালে যুক্ত হচ্ছে চিন্তার নতুন ভাঁজ। কারণ, বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ পূর্ণ হতে এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি রয়েছে। এমন সময় বিসিবিতে সরকারের হস্তক্ষেপ পড়লে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। ফলে রূপরেখায় এটা নিয়েও থাকতে হবে বাড়তি আলোচনা। ওই দিকে সরকার পতনের পর বিসিবির বেশির ভাগ বোর্ড পরিচালক আছেন আত্মগোপনে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘তারা যদি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থেই সেবক হতেন, তা হলে কিন্তু তারা আসতেন। আমার মনে হয় না তারা ক্রিকেটের সেবক ছিলেন। তাদের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল। সে এজেন্ডাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা দেখেছি, ক্রিকেটের কী হয়েছে। ক্লাব ক্রিকেট বলি, পুরো ক্রিকেট খেলাটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তার কথায়, ‘আমার মনে হয় দায়টা সবচেয়ে বেশি নেতৃত্বের। নেতৃত্ব যদি ঠিক থাকে তা হলে বাকি জিনিসগুলো এমনিতেই চ্যানেলাইজ হয়ে যায়। আমরা চাই এমন একটা বোর্ড হোক, যেখানে ভালো একজন লিডার থাকবে, যার ভিশন থাকবে, যার মধ্যে বড় স্বপ্ন থাকবে। সে জন্য স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন, সেগুলো থাকবে। সে রকম অনেক মানুষই আমাদের দেশে আছে। অনেক দিন ধরে যারা কোনো কাজ করার সুযোগই পাননি।’