পাকিস্তানকে ধবলধোলাইয়ের পর বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে বাংলাদেশ। প্রথমবার পাকিস্তানকে সিরিজ হারানোর সুযোগ পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্তর দল প্রতিপক্ষকে করে হোয়াইটওয়াশ। এমন সাফল্যের পর অনেকে টেস্ট জয়ে ক্রিকেটারদের পাশাপাশি কৃতিত্ব দেন জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। টেস্ট জয়ের পর গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কথা উঠতেই খানিকটা হতাশা ফুটে উঠল বাংলাদেশ টাইগার্সের সঙ্গে কাজ করা এক কোচের। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরা (বিদেশি কোচ) তো শুধুমাত্র দেশে আসে, কয়েক দিন কাজ করে দল নিয়ে খেলতে নেমে যায়। এভাবে তো আর সিরিজ জেতা যায় না। টেস্ট জিততে তো আসলে অনেক লম্বা প্রস্তুতির দরকার হয়। সেটা এবার হয়েছে।’
ওই কোচের চোখেমুখে কেন হতাশা কাজ করেছে সেটা খানিকটা স্পষ্ট। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুম শেষে লাল বলের জন্য ক্রিকেটাররা প্রস্তুত হয়েছেন দেশীয় কোচদের অধীনে। দেশের মাঠে ক্রিকেটাররা যখন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন জাতীয় দলের কোচরা ছিলেন বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপ শেষে ছুটি কাটাতে ফিরে যান নিজ নিজ দেশে। তারা বাংলাদেশে ফেরেন দলের প্রস্তুতির একদম অন্তিম মুহূর্তে। বাংলাদেশে ফিরলেও দেশে তৈরি হওয়া উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাদেরকে থাকতে হয়েছে হোটেলবন্দি। বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত সোহেল ইসলাম-তারেক আজিজদের অধীনে নিজেদের প্রস্তুত করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অর্থাৎ পাকিস্তানে পাওয়া সাফল্যের ভিত দেশি কোচদের গড়ে দেওয়া। এমন সাফল্যে দেশি কোচদের টপকে বিদেশি কোচরা কৃতিত্ব পেলে তাদের মন যে খারাপ হবে সেটা তো নিশ্চিত।
ক্রিকেটারদের এই লম্বা প্রস্তুতির শুরুটা তীব্র সমালোচনার কারণে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাজে হারের পর তৈরি হয় এই সমালোচনা। শ্রীলঙ্কা সিরিজে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালে অভিজ্ঞ মমিনুল হক বলেন, টেস্ট ম্যাচের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সুযোগ থাকে না। তার দাবি ছিল টেস্ট ম্যাচ কিংবা সিরিজের আগে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পান না ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামে ওই ম্যাচের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোখে আঙুল দেখিয়ে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যকার পার্থক্য বুঝিয়ে দেন। সব মিলিয়ে লাল বলের ক্রিকেটের প্রস্তুতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া বিসিবি ক্রিকেটারদের জন্য প্রস্তুতির পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় দলের বিশ্বকাপ মিশনের সময় টেস্ট স্কোয়াডের সম্ভাব্য ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেছেন বাংলা টাইগার্সের হয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট- তিন ভেন্যুতে হয় তাদের প্রস্তুতি। পূর্ণ মনোযোগে ছিল অনুশীলনের প্রস্তুতি। ফলে এটা স্পষ্ট পাকিস্তান বধ মিশনে দেশি কোচদের অবদান কোনো অংশে কম না।
বিসিবির উদ্যোগের কারণে লাল বলের ক্রিকেটাররা অনুশীলন করেছেন দেশি কোচদের সঙ্গে। বেশির ভাগ ক্রিকেট বোদ্ধার মনে এই সাফল্যের মূল কারিগর দেশি কোচরা। তবে বাংলা টাইগার্সের দায়িত্ব পালন করা কোচ সোহেল ইসলাম অবশ্য এই কৃতিত্ব নিতে চান না, বরং মনে করে টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব ক্রিকেটারদের। গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টাইগার্স ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের নিয়ে কীভাবে কাজ হয়েছে সেটা জানান তিনি। তার কথায়, ‘যারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিল না তারা দেশে ছিল। ওই খেলোয়াড়দের লাল বলের জন্য প্রস্তুত করতে আমাদের কাছে বেশ ভালো সময় ছিল।’ টাইগার্সের ক্যাম্পের উদ্দেশ ওই টেস্ট সিরিজ ছিল বলে জানান সোহেল। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা (টেস্ট সিরিজ জয়) মাথায় রেখে অনুশীলন কার্যক্রমগুলো চালানো হয়েছে। এখানে যারা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তাদেরও কিছু নির্দেশনা ছিল। নির্বাচকরাও নির্দেশনা দিয়েছিল। আমরা সমন্বিতভাবে চেষ্টা করেছি।’
ক্রিকেটারদের প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেশীয় কোচদের কাঁধে থাকলেও পাকিস্তান বধে মূল কৃতিত্বটা খেলোয়াড়দেরকে দিতে চান সোহেল। তার কথায়, ‘ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট ছিল ক্রিকেটারদের। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট দিব ক্রিকেটারদের।’