বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আসন্ন নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন মেজবাহ উদ্দিন। আগের চারটি নির্বাচনেও তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। অর্থাৎ এ নিয়ে টানা পঞ্চবার এই দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
আগামী ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাফুফের নির্বাচন।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বাফুফের নির্বাহী কমিটির ১১তম নিয়মিত সভায় মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যদের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন কমিশান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সুরাইয়া আক্তার জাহান ও এ কে এম এহসানুর রহমান। এরা সবাই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের আপিল কমিটিও। নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো জটিলতা তৈরি হলে বা কারও কোনো অভিযোগ জমা পড়লে এই কমিটি সেটা নিরসন করবে। যার চেয়ারম্যান করা হয়েছে ড. মোহাম্মদ জাকরিয়াকে। সদস্য হিসেবে থাকবেন এস এম হারুনুর রশিদ ও মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। এ ছাড়া ১৩৩ জনের ভোটার তালিকা অনুমোদন হয়েছে সভায়।
এবার ভোটার সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১৩৭। কিন্তু বেশ কয়েকজনের কাউন্সিলশিপ নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছিল। এ নিয়ে গত বুধবার রাতে দীর্ঘ আপিল শুনানি হয়। সেই শুনানি শেষে ৪ জেলার ভোটাধিকার বাতিল হয়। তাতে বৈধ ভোটার সংখ্যা নেমে আসে ১৩৩-এ। নির্বাহী কমিটির সভায় এই সংখ্যাটাই অনুমোদন পেয়েছেন। কোনো কাটছাঁট হয়নি।
কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাহী কমিটির মেয়াদ বৃহস্পতিবারই শেষ হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী নতুন নির্বাচিত কমিটির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার আগে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে। যেহেতু বৃহস্পতিবার নির্ধারিত মেয়াদের শেষ দিন ছিল, তাই ধারণা করা হচ্ছিল ১১তম সভাটিই হয়তো সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিনের শেষ সভা হতে যাচ্ছে। কারণ আগেই তিনি জানিয়েছেন, আসছে নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না।
তবে সালাউদ্দিনের কমিটি আসছে নির্বাচনের আগে আরও একটি সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব ঠিক থাকলে পরবর্তী সেই সভাটি হবে সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিনের শেষ সভা।
গত ১৬ বছর ধরে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থায় সর্বোচ্চ পদে আছেন সালাউদ্দিন। তার শেষ সভা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার বাফুফে ভবনে সংবাদকর্মীদের মধ্যে বাড়তি কৌতুহল ছিল। বিশেষ করে বিদায়ী কোনো বার্তা তিনি তুলে ধরেন কি না, এটাই ছিল সবার আগ্রহের বিষয়। কিন্তু বৃহস্পতিবারের সভা শেষে সালাউদ্দিন আর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি। সভায় আলোচিত বিষয় ও বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলো সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন নির্বাহী কমিটির সদস্য সত্যজিৎ দাস রুপু।
এ সময় তিনি জানান, পরবর্তী মিটিং শেষে বাফুফে সভাপতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তাদের জানিয়েছেন।
তবে বাফুফে সভাপতি বৃহস্পতিবারের সভা শুরু করেছিলেন বিদায়ী বার্তা দিয়েই।
সত্যজিৎ দাস রুপু বলেন, ‘আমরা যখন বোর্ড মিটিংটা শুরু করেছি, উনি উনার প্রারম্ভিক সম্ভাষণে এটা উপস্থাপন (বিদায়ী প্রসঙ্গ) করেছিলেন। কিন্তু মিটিংয়ের বিভিন্ন আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি মিটিং হওয়ার বিষয় আসে। উনি শুরুতেই বলেছেন, আমি দীর্ঘ সময় ছিলাম। এই সময়ে আমি শুধু একটি জিনিসই বুঝি, সেটা হচ্ছে ফুটবল। আমার অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি ফুটবলের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’
আরেকটি বোর্ড সভার কেন প্রয়োজন পড়ছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুপু বলেন, ‘মূলত আগামী বছরের বাজেট আসছে এজিএমে উপস্থান করতে হবে। এটা আমরা আমাদের ফাইন্যান্স কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি আরও পর্যবেক্ষণ করে উপস্থাপন করার জন্য। উনারা এটা উপস্থাপন করলে সভাপতি সাহেব সেটা অনুমোদনের জন্য সভা ডাকবেন।’
নির্বাচন কমিশন কবে নাগাদ দায়িত্ব শুরু করবে এবং কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা হতে পারে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুপু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আজ গঠিত হলো। আজকে বোর্ড থেকে অনুমোদন করা হয়েছে, এটা আমরা উনাদের অবহিত করব। নির্বাচন কমিশন সভা ডাকবেন। এরপর তারা উনাদের কার্যক্রম আপনাদের কাছে তুলে ধরবেন।’
বাফুফের বৃহস্পতিবারের সভায় আরও কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ মাসেই নেপালে হতে যাওয়া মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের অংশ গ্রহণ ও নভেম্বরে ছেলেদের জাতীয় দলের প্রীতিম্যাচ খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে এএফসি স্টেডিয়াম প্রজেক্টের আওতায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বাফুফে ভবন সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।