মাত্র ১৪ বছর ৩ মাস বয়সে ফিদে মাস্টার থেকে আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছেন মনন রেজা নীড়। কিংবদন্তি নিয়াজ মোরশেদের ৪৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার এখন তিনিই। যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তাতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের রেকর্ডটাও তার দখলে যেতেই পারে। যদিও রেকর্ড নিয়ে খুব একটা ভাবেন না এই কিশোর দাবাড়ু। গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট খেলতে বর্তমানে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে রয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই খবরের কাগজকে নিজের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ
আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে ছিলেন। হাঙ্গেরিতে সেই লক্ষ্যটা পূরণ হয়ে গেল। কেমন লাগছে?
অবশ্যই ভালো লাগছে। যেহেতু আইএম (আন্তর্জাতিক মাস্টার) হতে পেরেছি। কিন্তু আবার খারাপও লাগছে। কারণ জিএম নর্মটা মিস হয়ে গেছে। এখানে সিক্স ডেইজ বুদাপেস্ট টু ইয়ারস-২০২৪ গ্র্যান্ডমাস্টার ‘এ’ প্রতিযোগিতার অষ্টম রাউন্ডে আমি তিন নম্বর আইএম নর্মটি পেয়েছি। নবম ও শেষ রাউন্ডে জিততে পারলে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মটাও পেয়ে যেতাম। কিন্তু ম্যাচটা ড্র হয়েছে। যদিও প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হয়েছি। কিন্তু গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম মিস হওয়ায় খারাপ লাগছে। তো মিশ্র অনুভূতি বলতে পারেন।
তার মানে আইএম নর্ম পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসটা আগে থেকেই ছিল?
আমি মূলত জিএম নর্মের জন্য এসেছিলাম এখানে (হাঙ্গেরি)। আর আশাবাদী ছিলাম যে অন্তত আইএম হব। জিএম নর্ম পাওয়ার এখনো সুযোগ আছে। এখানে আরও একটি টুর্নামেন্টে আমরা খেলছি। চেষ্টা করব এখান থেকে একটা জিএম নর্ম পেতে।
আইএম হওয়ার ক্ষেত্রে তো আপনি কিংবদন্তি নিয়াজ মোরশেদের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। সেটাও আবার ৪৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড। বিষয়টা ভাবতে কেমন লাগছে?
আমি এসব রেকর্ড নিয়ে অতটা মাথা ঘামাইনি। (রেকর্ড) হয়েছে ভালো কথা। তবে ভালো খেলতে পেরেছি এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার। ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলতে চাই।
এ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আপনি। এবার আন্তর্জাতিক মাস্টার হলেন। নিজের স্বপ্নের পথে ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, এটা তো বলাই যায়…
হ্যাঁ, আমি আমার লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছি… চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এই এগিয়ে চলা কতটা কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
একটা সময় খুব কঠিন মনে হতো। তবে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি যে আমি আরও ভালো করতে পারব। আমার মধ্যে সেই ক্ষমতাটা আছে।
বাংলাদেশে গ্র্যান্ডমাস্টারের সংখ্যা এখন ৫ জন। ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের জন্য অপেক্ষা অনেক দিনের। দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনি এই আক্ষেপ দূর করতে পারবেন বলে মনে হয়?
আমি আমার চেষ্টাটা তো অবশ্যই করব। তবে এ জন্য অনেক সাপোর্ট দরকার। বিশেষ করে আর্থিক সাপোর্ট। অন্তত একটা স্পন্সরশিপ চাই, কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা চাই। আসলে এগিয়ে যেতে হলে প্রোপার ট্রেনিংটা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো দাবাড়ুরই এটা হয় না। প্রোপার ট্রেনিংয়ের গুরুত্বটাই কেউ সেভাবে অনুধাবন করে না। সবাই মনে করে খেললেই হলো।
বিদেশে যাদের সঙ্গে খেলেন তারা তো এসব দিকে অনেক এগিয়ে। ওদের দেখে আক্ষেপ হয়?
ওরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়। এগুলো দেখে খারাপ লাগে যে অন্যরা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, আমি পাচ্ছি না। তবে এখন এগুলো মানিয়ে নেওয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই। আমাদের খেলোয়াড়দের একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খুবই ভালো হয়। তাহলে আর্থিক চাপটা আর থাকে না। টাকার অভাবে আমরা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কিছু দিন আগে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমি। এরপরও আর্থিক কারণে এখানে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। দাবা অলিম্পিয়াডে খেলতে মূলত জাতীয় দলের হয়ে হাঙ্গেরি এসেছি। এরপর আমরা কয়েকজন দাবাড়ু আরও কয়েকটি টুর্নামেন্ট এখানে খেলছি। তবে সেটা নিজেদের ব্যবস্থাপনায়। আমি যেমন এখানে খেলতেই পারতাম না, যদি না মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান আঙ্কেল ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক স্যার স্পন্সর না করতেন। তাই আবারও বলছি, এই সাপোর্টগুলো আমাদের খুব দরকার। ট্রেনিংয়ের অভাবের জন্যই মূলত আমরা এগিয়ে যেতে পারি না। যদি প্রোপার ট্রেনিং পাই, তাহলে আমি নিজেকে নিয়ে অন্তত আত্মবিশ্বাসী যে ভালো করব।
কত সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চান?
আমি চেষ্টা করব ২ বছরের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হতে।
আপনার বয়সী ছেলেরা তো ক্রিকেট-ফুটবলে মেতে থাকে। আপনি সেখানে আরও অনেক ছোট থেকে দাবা বোর্ডে মেতে আছেন…
আমার কিন্তু ফুটবল অনেক পছন্দ। আমি এর আগে অনেক সাক্ষাৎকারে এটা বলেছিও। দাবার থেকেও আমার ফুটবল বেশি ভালো লাগে। আমি প্রতিদিনই ফুটবল খেলি। দেশে থাকলে এক দিনও ফুটবল খেলা মিস যায় না।
আপনি এটাও অনেকবার বলেছেন যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন আপনার। আইএম হওয়ার ক্ষণে আপনার প্রধান লক্ষ্যের কথা নতুন করে শুনতে চাই।
স্বপ্ন তো সেই একই আছে। আমি অবশ্যই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই। বাংলাদেশে শুধু গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে তো কোনো লাভ নেই। এটা সত্যি কথা। তবে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আর্থিক সাপোর্টটা লাগবে। এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই সাপোর্ট পেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারব, এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে।