আফগনিস্তানের কাছে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের হারকে অনেকেই অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এরকম নানা বিশেষণ ব্যবহার করে আখ্যায়িত করছেন। আফগানিস্তানের ২৩৫ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ একপর্যায়ে ২৫.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১২০ রান করেছিল। জয়ের ভীত তৈরি হয়ে হেছে। এখন শুধু দেখার পালা সেই জয়টা আসে কীভাবে? হাতে ৮ উইকেট নিয়ে করতে হবে ১১৬ রান। ওভার বাকি ২৪.২টি। ওভারপ্রতি পাঁচের কম করে রান। সেখান থেকে বাংলাদেশের ছন্দপতন ঘটে। সেই ছন্দপতন ছিল খুবই দ্রুত। যা শেয়ারবাজারের পতনকেও হার মানাবে। ২২ গজে ব্যাটারদের অবস্থান হয়ে উঠে কচু পাতার পানি। শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল।
৮.৫ ওভারে ১৬ রানে পড়ে ৮ উইকেট। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার গতি বাড়তে থাকে। ৩.৫ ওভারে ১১ রানে পড়ে ৭ উইকেট। ২.৫ ওভারে ৮ রানে পড়ে ৬ উইকেট। ২.২ ওভারে ৭ রানে পড়ে ৫ উইকেট। ১.৫ ওভারে ৫ রানে পড়ে ৪ উইকেট। ১ বল পড়ে আরও ১ উইকেট। এভাবেই শেষ হয় ১০ উইকেটের পতন। যখন বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে রান শোভা পাচ্ছে মাত্র ১৪৩।
সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশ ওয়ানডে ছাড়া টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি যত ম্যাচ খেলেছে, সেখানে শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ টেস্টের সিরিজ বাদ দিলে সর্বত্রই ছিল ব্যাটারদের হতাশার চিত্র। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৩ রান তাড়া করতে পারেনি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছিল ৪ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৪ রান পাড়ি দিতে যার পরনাই কষ্ট করতে হয়েছিল। নেপালের বিপক্ষে মাত্র ১০৬ রান করে আবার ম্যাচ জিতেছিল বোলারদের দাপটে। সুপার এইটে আফগানিস্তানের করা ১১৫ রান টপকাতে পারেনি। হোঁচট খেয়েছিল ১০৫ রানে অলআউট হয়ে। সুপার এইটে অপর দুই ম্যাচে হেরেছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে।
টেস্ট ক্রিকেটে সম্প্রতি ঘরের মাঠে দুই টেস্টের চার ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১০৬ ও ৩০৭ এবং ১৫৯ ও ১৪৩। ভারত সফরেও দুই টেস্টের চার ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ১৪৯ ও ২৩৪ এবং ২৩৩ ও ১৪৬। এই সফরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের রান ছিল যথাক্রমে ১২৭. ১৩৫/৯ ও ১৬৪/৭। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটিং ব্যর্থতা সংক্রামিত হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটেও এসে ভর করেছে। যার প্রমাণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশ দল তিন ফরম্যাটে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি। এমনকি ন্যূনতম কোনো লড়াইও করতে পারেনি। ব্যাটারদের এ রকম অমাজর্নীয় ব্যর্থতায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে বোলারদের বিশেষ কীর্তি। ব্যাটারদের এ রকম ধারাবাহিক ব্যর্থতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে এটাই বাংলাদেশের ব্যাটিং সামর্থ্য। বর্তমান দলের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা বাতুলতা মাত্র।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ টি-টোয়েন্টি। কিন্তু সেই খেলাও ফুটবল, হকি ভলিবল, কাবাডি, বাস্কেটবলের চেয়ে দ্বিগুণ সময় বেশি লাগে শেষ হতে। যে কারণে ক্রিকেটে যেকোনো সময় বিপর্যয় আসতেই পারে। তা আবার সামাল দিয়ে উঠার সক্ষমতাও থাকতে হবে। অব্যাহত ব্যর্থতার মাঝে বাংলাদেশ দল হঠাৎ করে কোনো ম্যাচে রান করে ফেলে। কিন্তু পরের ম্যাচে গিয়ে আবার মুখ থুবড়ে পড়ে। এটা সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ! কিন্তু সামর্থ্য যদি এর থেকে বেশি থাকত, তাহলে ব্যর্থতার জাল ছিন্ন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত। যেটা আবার করে দেখিয়েছে আফগানিস্তান। ৩৫ রানে ৪, ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও তারা নিজেদের সক্ষমতা বা যোগ্যতা দেখিয়েছে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে অলআউট হওয়ার আগে ভাণ্ডারে যোগ করে ২৩৫ রান। এটা তাদের সক্ষমতা। বাংলাদেশ দলে একবার মড়ক লাগলে, ঘুরে দাঁড়ানোর নজির কম। ২ উইকেটে ১২০ রান থেকে ১৪৩ রানে অলআউট।
এভাবে একটি করে ম্যাচ আসে, ভরাডুবির মাধ্যমে শেষ হয়। আর ম্যাচ শেষে অধিনায়ক, কোচ কিংবা দলের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলতে আসা ক্রিকেটারের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে আসে আগামীতে ভালো করার প্রত্যয়। ভুল সংশোধনের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এ সবই কথার কথা হয়ে থাকে। পরের ম্যাচে এসে আবারও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। আবারও ম্যাচ শেষে শুনা যায় পুরোনো রেকর্ড। কিন্তু পরিবর্তনের ছাপ আর চোখে পড়ে না। এবার আফগানিস্তানের কাছে এভাবে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠ দিয়ে বের হয়েছে সেই পুরোনো রেকর্ড, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল। কিন্তু আজ আমাদের দিন ছিল। না। আশা করি আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’