তিন কাঠির খেলায় বাংলাদেশ দলের সামনে এখন একটি প্রশ্ন চলে আসে যে, তাদের সামনে কত রানের টার্গেট দিলে তারা জিততে পারবে? দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা এতটাই গভীরে চলে গেছে যে, সেখান থেকে তাদের তুলে আনতে সাধারণ ক্রেনেও কাজে দেবে না। তার চেয়ে শক্তিশালী কিছু লাগবে। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বোলারদের সব সাফল্য ম্লান হচ্ছে। যত কম রানেই প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা হোক না কেন, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনীর সামনে সেই রান টপকানো পাহাড়সমান হয়ে উঠছে। সেই রান আর টপকানো সম্ভব হচ্ছে না। পা পিছলে পড়ে হোঁচট খাচ্ছে। উপহার দিচ্ছে লজ্জার হার! তারপর সর্বত্র বিদ্ধ হতে হচ্ছে সমালোচনার তীরে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা প্রতিফলিত হয়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। বাকি ছিল ওয়ানডে। যেখানে আবার বাংলাদেশ দল তুলনামূলক অন্য দুই ফরম্যাট থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কিন্তু টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং ব্যর্থতা সংক্রমিত হয়ে ওয়ানডেতেও প্রভাব ফেলেছে। ফলে ওয়ানডেতেও ব্যাটিং ব্যর্থতার দৃশ্য চিত্রায়িত হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল যেভাবে হেরেছে, তা ছিল রীতিমতো অবাক করার মতো। আফগানিস্তানের ২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের রান ছিল একপর্যায়ে ২ উইকেটে ১২০। সেখান থেকে ঘটে ছন্দপতন। এরপর ২৩ রানে বাকি ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ জেতা ম্যাচ হারে ৯২ রানে! আল্লাহ মোহাম্মদ ঘাজানফারের ঘূর্ণি বলে কুপোকাত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। ঘাজানফার ২৬ রানে নেন ৬ উইকেট। এমন ব্যাটিং ব্যর্থতার কোনো কৈফিয়তই চলে না!
বাংলাদেশ যেমন ভালো অবস্থান থেকে ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে ম্যাচ হারে, ঠিক বিপরীত অবস্থা ছিল আফগানিস্তানের। তাদের রান ছিল একপর্যায়ে ৪ উইকেটে ৩৪। পরে ৫ উইকেটে ৭১। সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়ায়। ২ বল বাকি থাকতে অলআউট হওয়ার আগে করে ২৩৫ রান। আর এই ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে ইনিংস মেরামতের কাজটি করেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী ও অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। দুজনে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১০৪ রান যোগ করেন। শহিদী ৫২ ও নবী ৮৪ রান করেন। তাসকিন ও মোস্তাফিজের ৪টি করে উইকেট নেওয়া ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ব্যাটারদের কারণে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন যেখানে ৩০০ রানও নিরাপদ নয়। সেখানে ২৩৫ রান খুব বেশি বড় টার্গেট নয়। কিন্তু দলটি যখন বাংলাদেশ হয়, তখন সেই রানও পাহাড়সমান হয়ে যায়। আর ৯২ রানে হার যেন সেই নির্মম সত্যটিকেই মনে করে দেয়। যে কারণে প্রশ্ন উঠছে আসলে বোলাররা কত কম রানের টার্গেট দিলে শান্তরা সেই রান অতিক্রম করতে পারবেন।
তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়ে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে। সিরিজে টিকে থাকতে হলে আজ জয়ের বিকল্প নেই। দুই দেশের প্রথম ম্যাচটি ছিল শারজাহ স্টেডিয়ামের ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। মাইলফলকের ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর এবার সিরিজ যাতে হাতছাড়া না হয়, সেই চেষ্টায় ব্রত হতে হবে শান্তকে তার বাহিনী নিয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজের লক্ষ্যও তাই। গতকাল শারজাহতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো সুযোগ আছে। একটা ম্যাচ হেরেছি। এখনো দুটি ম্যাচ আছে। যেহেতু আমরা একটু ব্যাকফুটে আছি, তাই দুটি ম্যাচ চিন্তা না করে পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।’
প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের হাতে অপশন ছিল কম। ভিসা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন পরে জাতীয় দলে ফেরা বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ ও প্রথমবারের মতো একদিনের দলে ডাক পাওয়া গতিসম্পন্ন পেসার নাহিদ রানা দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি। ফলে ১৩ জনের দল থেকে সেরা একাদশ সাজাতে হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টকে। নাসুম ও নাহিদ ভিসা হওয়ার পর শারজাহ গিয়েছেন প্রথম ম্যাচের পর শনিবার। এই দুজন দলে যোগ দিলেও ১৫ জনের দল থেকে আজ সেরা একাদশ নির্বাচন করার সুযোগ নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। কারণ প্রথম ম্যাচে কিপিং করার সময় বাঁ হাতের তর্জনিতে ব্যথা পেয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তার পরিবর্তে দেশ থেকে বিকল্প কাউকে পাঠানো হয়নি। যে কারণে আজকের ম্যাচে মুশফিকের পরিবর্তে একাদশে একটি পরিবর্তন হতেই যাচ্ছে। সেই পরিবর্তনের সুযোগে একাদশে ঢুকতে পারেন জাকের আলী অনিক ও জাকির হাসানের যেকোনো একজন। জাকির হাসান এর আগে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। জাকের আলী অনিকের এখনো অভিষেক হয়নি। দুজনের মাঝে জাকের আলীর খেলার সম্ভাবনা বেশি। কারণ মুশফিক ব্যাটিং করে থাকেন মিডল অর্ডারে। এদিকে জাকির হাসান সাধারণত ওপেনিং করে থাকেন, না হলে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেন। আর জাকের আলী ব্যাটিং করেন মিডল অর্ডারে। এই বিবেচনায় জাকের আলীরই খেলার সম্ভাবনা বেশি।
শারজাহতে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে খেলতে নেমেছিল ১৯৯৫ সালের পর। আর সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিল এ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তিন ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। এই দুটি বিষয়কেই মিরাজ আজকের ম্যাচের আগে সামনে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওডিআই খেলেছি ৭-৮ মাস আগে। আবার এই মাঠের ব্যাপারে একটা ধারণা হয়েছে। ভালো মোমেন্টাম কীভাবে নিতে হবে, সেটা অনুশীলন করছি।’
প্রথম ম্যাচে ২৩ রানে ৮ উইকেট হারানোর কারণ হিসেবে মিরাজ হঠাৎ করে উইকেটের পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আর শান্ত যখন ব্যাট করছিলাম, তখন আমাদের দুজনের কাছে উইকেট সহজ মনে হচ্ছিল। কিন্তু ২০ ওভার পর হঠাৎ করেই বাঁকটা বেশি নেওয়া শুরু হয়। আমি আর শান্ত মাঝে ভুগেছি। আমি শান্তকে বারবার বলছিলাম, আমাদের দুজনের যেহেতু সমস্যা হচ্ছে খেলতে, তাই পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক কঠিন হবে। আগে থেকে ধারণা করা যায়নি কোন বল সোজা আসবে, কোন বল বাঁক নেবে।’