ক্যারিবিয়ানের নীল সমুদ্রে অনেক কিছুই বিসর্জন হয়। এবার সেখানে নতুন করে বিসর্জন হয়েছে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতার পর ঘরে-বাইরে টানা আরও তিন সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছিল লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বলা যায় ওয়ানডে সিরিজ এক প্রকার নিজেদের করে নিয়েছিল।
এভাবে টানা চারটি (দুইটি বাংলাদেশে, দুইটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে) সিরিজ জেতার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আরও কিছু ম্যাচ জেতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৮ সালের পর টানা ১১ ম্যাচ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিন্তু এই অর্জনকে তারা চুইংগামের মতো টেনে আর লম্বা করতে পারেনি। দুই টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করার পর নিজেদের কমফোর্ট জোনে এসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচই হেরে সিরিজ বিসর্জন দিয়েছে ক্যারিবিয়ান সাগরের নীল জলে। বাংলাদেশকে নীল সাগরে ডুবিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ বছর পর সিরিজ পুনরুদ্ধার করেছে। সর্বশেষ তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে ২০১৪ সালে নিজেদের মাটিতে। নীল সাগরে ডুবে যাওয়ার পর এখন বাংলাদেশের সামনে ওয়াইটওয়াশ হওয়ার শঙ্কা। ২০১৪ সালে তারা সর্বশেষ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। এরপর টানা ৪ সিরিজ জেতার পথে বাংলাদেশ সর্বশেষ দুই সিরিজে করেছিল তাদের হোয়াইটওয়াশ। নিজেদের হোয়াইটওয়াশের হাত থেকে রক্ষা পেতে আজ সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবে সেই সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে।
সিরিজ ধরে রাখার মিশনে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ বেশ ভালোই করেছিল। ৫ উইকেটে ২৯৪ রান করে যদিও ম্যাচ জিততে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরে যায় সেই ব্যাটিং ব্যর্থতার মহামারিতে। মাত্র ২২৭ রান করে অলআউট হয়ে যায়। ২৯৪ রান করেও যেখানে শেষ রক্ষা হয়নি, সেখানে মাত্র ২২৭ রান করে কি আর সম্ভব ম্যাচ বাঁচানো? সম্ভব হয়নি। ১৩.১ ওভার ও ৭ উইকেট হাতে রেখে শোচনীয় হার মেনে নিতে হয়।
প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হারের পর দ্বিতীয় টেস্ট জিতেছিল বোলারদের অসম্ভব দৃঢ়তায়। প্রথম ইনিংসে ১৬৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রান করেও যে ম্যাচ জেতা যায়, সেটি করে দেখিয়েছিলেন দলের বোলাররা। কিন্তু সব সময় কি আর সম্ভব এত অল্প রানের পুঁজিকে জয়ে রূপান্তর করা। সিরিজ হারানোর পর হোয়াইটওয়াশ এড়াতে হলে অন্তত বোলারদের হাতে লড়াই করার মতো পুঁজি তুলে দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ব্যাটিং ব্যর্থতাই যেন নিয়মিত চিত্র। ভালো ব্যাটিং মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। যেটি তারা করে দেখাতে পেরেছিলেন প্রথম ওয়ানডেতে। প্রথম ম্যাচে তানজিদ তামিম (৬০), মেহেদি হাসান মিরাজ (৭৪), মাহমুদউল্লাহ (৫০*), জাকের আলী (৪৮) রান পেয়েছিলেন। পরের ম্যাচে রানের দেখা পান মাহমুদউল্লাহ (৬২) ও তানজিদ তামিম (৪৬)। সঙ্গে যোগ হয়েছিলেন তানজিম সাকিবও ৪৫ রান করে। মাহমুদউল্লাহ টানা দুই ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেন। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডেতেও তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। ২ রানের জন্য বঞ্চিত হয়েছিলেন সেঞ্চুরি থেকে। কিন্তু দুটি ম্যাচেই চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হন ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। অফ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারকে কেন দলে রাখা হয়, সেরা একাদশে খেলানো হয়, তা প্রথমে নির্বাচকরা, পরে টিম ম্যানেজমেন্টই ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে সিরিজ হারের পর অন্য সব অধিনায়কের মতোই মিরাজের ভাষ্য ছিল গতানুগতিক, ‘আমাদের রান বেশি ছিল না। ৩০০ রানের বেশি হওয়া দরকার ছিল। মাঝের ওভারগুলোতে আমরা ব্যাটিং ভালো করতে করিনি। ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে করেছিলাম ঘুরে দাঁড়ানোর কিন্তু একের পর এক উইকেট পড়েছে। বড় কোনো জুটি হয়নি। মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব (তানজিম) ভালো খেলেছে। তবে ভুলটা আমাদেরই।’