ঢাকা ৩০ মাঘ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

বর্ণবাদী আচরণের শিকার বার্সার খেলোয়াড়

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
বর্ণবাদী আচরণের শিকার বার্সার খেলোয়াড়
ছবি : সংগৃহীত

গেটাফের মাঠে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে ফিরেছে বার্সেলোনার। পয়েন্টস টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে হোঁচট খেয়েছে কাতালানরা। এই নিয়ে লা লিগার টানা চার ম্যাচেই জয়হীন বার্সা।

পয়েন্ট খোয়ানোর চেয়ে বড় আলোচনার বিষয় এখন বর্ণবাদ বিতর্ক। গেটাফের বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর রাতে গ্যালারি থেকে বর্ণবাদী আচরণের কারণে কিছুক্ষণ খেলাও বন্ধ রাখেন রেফারি।

বর্ণবাদী আচরণের ঘটনায় বার্সেলোনার ডিফেন্ডার আলেহান্দ্রো বালদে জানান, গেটাফের গ্যালারি থেকে তাঁকে বর্ণবাদী আক্রমণ করা হয়েছে।

মুভিস্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বালদে বলেন, ‘এখানকার দর্শকের কাছ থেকে আমাকে কয়েকবার বর্ণবাদী আক্রমণ করা হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক যে এমন কিছু ঘটেছে। আমি প্রথমার্ধেই রেফারিকে বিষয়টি বলেছি। তিনি দ্বিতীয়ার্ধে লিগ প্রটোকল কার্যকর করেছেন। তবে এটা ঠিক কীভাবে কাজ করে আমি জানি না।’

মাঠের খেলোয়াড়রদের বর্ণবাদী আক্রমণ হওয়া থেকে বিরত রাখতে লা লিগার প্রটোকল অনুযায়ী, রেফারি চাইলে খেলা বন্ধ করে রাখতে পারবেন। বার্সার বালদের অভিযোগের পর গতরাতে সেটাই করেছিলেন রেফারি পাবলো গঞ্জালেঞ্জ ফুয়েরতেস। 

খেলা থামিয়ে স্টেডিয়ামের সাউন্ড বক্সে কারণ জানিয়ে বলা হয়, বর্ণবাদী আচরণ চলতে থাকলে ফুটবলাররা মাঠ ছেড়ে যাবেন।

বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক এমন বর্ণবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলেন, ‘ফুটবলে বা দৈনন্দিন জীবনে বর্ণবাদের কোনো স্থান থাকতে পারে না। ওই মানুষগুলোর বাড়িতে থাকা উচিত, ফুটবল মাঠে নয়। আমাদের তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’

গত রাতে স্প্যানিশ ফুটবলে বর্ণবাদের আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় বিভাগের দল এলচে জানায়, স্পোর্তিং গিজনের মাঠে তাদের একজন খেলোয়াড় বর্ণবাদী আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ এক ব্যক্তিকে চিহ্নিতও করেছে।

নামসর্বস্ব বিদেশিরা মাঠেও ছিলেন নিষ্প্রভ

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৬ এএম
নামসর্বস্ব বিদেশিরা মাঠেও ছিলেন নিষ্প্রভ
সংগৃহীত

এবারের বিপিএলে মানহীন ক্রিকেটারে ভরপুর থাকার পরও চার-ছক্কার বৃষ্টি দর্শকদের মন জয় করেছিল। কিন্তু সেখানে মানহীন ক্রিকেটাররা নিজেদের মানসম্মত করে তুলতে পারেননি। দেশি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি, মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটাররা জমিয়ে তুলেছিলেন আসর। এবারের মতো এত বেশি পরিমাণে মানহীন ক্রিকেটার অতীতে বিপিএলে কখনো খেলতে দেখা যায়নি। যে কারণে কোনো দল একাধিক ক্রিকেটারকে এক ম্যাচের বেশি খেলাতে সাহস করেননি। মানহীন ক্রিকেটার সবচেয়ে বেশি খেলেছেন সিলেট ও ঢাকায়। অন্য দলগুলোতেও কম-বেশি নামসর্বস্ব ক্রিকেটার খেলেছেন। শুধু রংপুরে নামসর্বস্ব ক্রিকেটার খেলতে দেখা যায়নি কাউকে। এক নজরে চোখ বুলিয়ে দেখা যাক এসব নামসর্বস্ব ক্রিকেটারের মাঠের পারফরম্যান্সের।

ফরচুন বরিশাল 
চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের বিদেশি ক্রিকেটার খেলেছে মোট ৯ জন। মানহীন ক্রিকেটার বলতে গেলেন ছিলেন একজনই পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ ইমরান। পাকিস্তানের বাইরে বিপিএলই ছিল তার প্রথম কোনো টুর্নামেন্ট। তিনি এসেছিলেন পাকিস্তানের ঘরোয়া ৫৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। বরিশালের হয়ে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটি শুধু খেলেছিলেন। ৪ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে উইকেট শূন্য নিতে পারেননি।

চিটাগং কিংস
রানার্সআপ চিটাগং কিংসে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মোট ১০ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। নামসর্বস্ব ক্রিকেটার ছিলেন শ্রীলঙ্কার লাহিরু মিলানথা ও দক্ষিণ আফ্রিকার থমাস ও’কনেল। লাহিরুর শ্রীলঙ্কার বাইরে যুক্তরাস্ট্রের মেজর লিগ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বিপিএলে খেলতে এসেছিলেন ৪৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে। চিটাগং তাকে  ১টি ম্যাচ খেলিয়েছিল। রান করেছিলেন ৬। অস্ট্রেলিয়ার থমাস ও’কনেল বিপিএলে খেলার আগে অস্ট্রেলিয়াতে মাত্র ৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন। বিগব্যাশে তার দল মেলবোর্ন স্টার্স। তাকেও ১টি ম্যাচ খেলানো হয়েছিল খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। ব্যাট হাতে প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন। বল হাতে ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। আফগানিস্তানের জোবায়েদ আকবারিকেও অনেকটা একই কাতারে ফেলা যায়। দেশের হয়ে ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে তিনি রান করেছিলেন মাত্র ৮। তার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ২৭টি। ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১টি ম্যাচ ওপেনিংয়ে নেমে ২৩ রান করেছিলেন। এরপর চুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত এই তিন ক্রিকেটারই দলের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তাদের কোনো ম্যাচ আর খেলানো হয়নি।

খুলনা টাইগার্স
সবচেয়ে বেশি ১১ জন ক্রিকেটার খেলেছেন খুলনা টাইগার্সে। দলের ইংল্যান্ডের পিটার শিবলীকে মানহীন ক্রিকেটারের তালিকায় ফেলা যাবে না। কারণ তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে ২২টি টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো ম্যাচ খেলেননি। তার টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ৪৬টি ম্যাচের। সব কটিই  ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট টুর্নামেন্টে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তিনি দেশের বাইরে বিপিএলেই প্রথম খেলেছেন। চিটাগংয়ের বিপক্ষে ১টি ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ৩।

দুর্বার রাজশাহী
এবারের আসরে সবচেয়ে বিতর্কিত দল রাজশাহীর  রায়ান বার্ল ও মোহাম্মদ হারিসকে বাদ দিলে বাকি সবাই ছিলেন নামসর্বস্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মার্ক দিয়াল বিপিএল খেলতে এসেছিলেন ৪৬টি ম্যাচ খেলে। তবে সেগুলো জাতীয় দলের হয়ে নয়। বিপিএলে ৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩ রান করেন। মিগুয়েল কামিন্স ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৪ টেস্ট ও ১১ ওয়ানডে খেললেও কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। এবার ১ ম্যাচ খেলে ৮ রান করেন, উইকেট নেন ১টি। শ্রীলঙ্কার হয়ে ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ধর্সানা সামারাক। বিপিএলেও তিনি ১ ম্যাচ খেলে রানও করতে পারেননি,উইকেটও পাননি। আফতাব আলম আফগানিস্তানের হয়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ১২টি। সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৮ সালে। বিপিএলে ৩ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ৩টি।

ঢাকা ক্যাপিটালস 
মানহীন ক্রিকেটার খেলানোর ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে ছিল এবারের বিপিএলের সবচেয়ে আলোচিত দল ঢাকা ক্যাপিটালস। যে কারণে তাদের ভরাডুবিও হয়েছে। ভারতে জন্ম নেওয়া সুবহাম রঞ্জন  মূলত যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ খেলে থাকেন। কিন্তু পরিসংখ্যান জানান দেয় খুব একটা ভালো করতে পারেননি। বিপিএলে খেলতে এসেছিলেন ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে। যেখানে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস ছিল মাত্র একটি। এবার ৩ ম্যাচ খেলে ৬২ রান করেন, উইকেট নেন  ৩টি। আফগানিস্তানের ফারমানউল্লাহকে কেন নিয়ে আসা হয়েছিল, তা ঢাকা ক্যাপিটালসের কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। আফগানিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট ৩৭টি ম্যাচ খেলেছেন।  ৩৮৬ রানের পাশে উইকেট আছে ১২টি। এমন ক্রিকেটারকে এনে ঢাকা ৭টি ম্যাচ খেলিয়েছিল। দলকে উপহার দিয়েছেন তিনি ৫৫ রান ও ৫টি উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার স্টিফেন এসকিনাজি ১১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও দেশের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। এমন কি নিজ দেশে এসএ২০ টুর্নামেন্টেও খেলার সুযোগ পাননি। বিপিএলে ৪ ম্যাচ খেলে ৬৮ রান  করেন।

সিলেট স্ট্রাইকার্স 
মানহীন ক্রিকেটার খেলানোর ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। পয়েন্ট টেবিলে সবার তলানিতে ছিল। এতেই বুঝা যায় তারা কী মানের দল গড়েছিল? পাকিস্তানের আহসান ভাট্টিকে নিয়ে এসেছিল, যার অভিজ্ঞতা ছিল ঘরোয়া মাত্র ২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের।  সিলেটও তাকে ২টি ম্যাচ খেলিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজরে লুক জাগেসার বিপিএল খেলতে আসার আগে ঘরোয়া ২১ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে বিপিএলেই তার প্রথম কোনো টুর্নামেন্ট। কোনো বিবেচনায় এ রকম ক্রিকেটারকে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলভুক্ত করেছেন, সে ব্যাখ্যা তারাই ভালো দিতে পারবেন। ৫ লাখ টাকার ওপরে শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে তাকে উড়িয়ে এনে মাত্র ১টি ম্যাচ খেলানো হয়। রান করেন ৫ রান ও উইকেট নেন ২টি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার খাদেম আলিয়ান। ৩ ম্যাচ খেলে তিনি রান করেন মাত্র ১০। তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঘরোয়া  মাত্র ১৮টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থেকে। কোনো হাফ সেঞ্চুরি  ছিল। না।  কিন্তু তবুও তাকে মনে ধরেছিল সিলেটের মালিকদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ক্রিকেটার রাকিন কর্নওয়েল। খেলা দিয়ে নয়, বিশাল শরীর দিয়ে তিনি ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডই তাকে শুধু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বিবেচনা করে থাকে। অথচ সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে টি-টোয়েন্টির জন্য মহামূল্যবান মনে করেছেন! এমন নয় যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে তার সুখ্যাতি আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে বিপিএলেই তার একমাত্র ঠিকানা।

মানহীন বিদেশিদের পুনর্বাসন!

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫২ এএম
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
মানহীন বিদেশিদের পুনর্বাসন!
সংগৃহীত

প্লেয়ার্স ড্রাফটের পর চিটাগং কিংসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল বিপিএল চলাকালীন মঈন আলী তাদের হয়ে খেলতে আসবেন। এমন কি আরও বড় তারকারাও আসবেন খেলতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মঈন আলী কিংবা অন্য কোনো বড় তারকা তাদের দলে পরে আর খেলতে আসেননি। মঈন আলী দক্ষিণ আফ্রিকায় এসএ২০ আসরে জুবার্গ সুপার কিংসের হয়ে খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। বিপিএল চলাকালীন এসএ২০ আসর ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএলটি২০ আসরও চলমান ছিল। যে কারণে শুধু মঈন আলী নয়, এ রকম বিশ্বমানের অনেক ক্রিকেটারের পক্ষেই বিপিএল খেলা সম্ভব হয়নি। যারা ছিলেন বিপিএলের নিয়মিত মুখ। এই দুই আসরের কারণে এবারের বিপিএলে মান সম্মত বিদেশি ক্রিকেটারদের শূন্যতা দেখা দেয়।

বিদেশি ক্রিকেটারদের কোটা পূরণ করতে গিয়ে বিপিএলের এক একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মানহীন বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে এসেছেন। হাতে গোনা কয়েকজন ক্রিকেটার বাদ দিলে বাকিরা ছিলেন চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এ সব মানহীন ক্রিকেটারদের পদচারণে বিপিএল হয়ে উঠেছিল যেন বিদেশি ক্রিকেটারদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। এ রকম অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাদের বিপিএল দিয়েই দর্শকরা জানতে পেরেছেন যে তারা ক্রিকেট খেলেন!

এবারের বিপিএলে চিটাগংয়ে ১০ জন, খুলনায় ১১ জন, বরিশাল, ঢাকা ও সিলেটে ৯ জন করে, রংপুরে ৮ জন ও রাজশাহীতে ৬ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলেছেন। এসব দলে নামসর্বস্ব এমন অনেক ক্রিকেটার খেলেছেন, যাদের এক ম্যাচের বেশি খেলাতে সাহস করেননি ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এ রকম ক্রিকেটার ছিলেন বরিশালের মোহাম্মদ ইমরান, চিটাগংয়ের লাহিরু মিলানথা, থমাস ও’কনেল, রংপুরের টিমোথি হেইস ডেবিড, রাজশাহীর ধর্সানা সামারাক, আফতাব আলম, সিলেটের লুক জাগেসার।

এদের ছাড়াও একাধিক ম্যাচ খেলাও অনেক ক্রিকেটার আছেন যাদের নাম আগে কখনো শুনা যায়নি। যেমন ঢাকার স্টিফেন সিন এসকিনাজি, সোবহাম সুবাস রঞ্জন, ফারমানউল্লাহ সাফি, খুলনার আলেকজান্ডার আয়ান রোজ, রংপুরের স্টিভন টেইলর,সিলেটের আহসান ভাট্টি। আবার অনেক ক্রিকেটারকে দলভুক্ত করা হয়েছে যারা দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেললেও কখনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি। এ রকম ক্রিকেটার ছিলেন সিলেটের বিশালদেহের অধিকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের রাকিন কর্নওয়েল, ইংল্যান্ডের পিটার শিবলী, রাজশাহীর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিগুয়েল কামিন্স।

শুধু তাই নয় এমন অনেক অখ্যাত ক্রিকেটার আনা হয়েছে, যাদের দেশে ক্রিকেট এখনো সেভাবে প্রচলন হয়নি, আবার হলেও আছে দুর্বল অবস্থানে, সেই সব দেশ থেকেও ক্রিকেটার আনা হয়েছে। এ রকম ক্রিকেটার হলেন রংপুরের হয়ে একটি ম্যাচ খেলা সিঙ্গাপুরের টিমোথি হেইস ডেবিড, ঢাকার হয়ে ৩ ম্যাচে ২২ রান করা নামিবিয়ার জিন পিয়েরি কোটজি। তিনি দেশের হয়ে ৪৪ ম্যাচে ৭৯০ রান করেছেন। আবার এ রকম কিছু ক্রিকেটার খেলতে এসে নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছেন। যেমন বরিশালের মোহাম্মদ আলী মাত্র ২ ম্যাচ খেলে ৬ উইকেট নেন। যার ৫টিই ছিল আবার এক ম্যাচে। চিটাগংয়ের পাকিস্তানের খাজা নাফি (৫ ম্যাচে ২০১ রান) ও দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়াম ক্লার্ক (১৪ ম্যাচে ৪৩১ রান), খুলনার অস্ট্রেলিয়ার বসিস্তো (১০ ম্যাচে ২৯৮ রান ও ২ উইকেট), পাকিস্তানের সালমান ইরশাদ (৭ ম্যাচে ৯ উইকেট), রংপুরের পাকিস্তানের আকিফ জাভেদ (১১ ম্যাচে ২০ উইকেট)।

তারকা ক্রিকেটারদের মাঝে নিজেদের মান ধরে রাখতে পেরেছেন বরিশালের ইংল্যান্ডের ডেবিড মালান (৯ ম্যাচে ৩১৬ রান), ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্স (৭ ম্যাচে ২০৯ রান ও ৫ উইকেট), ঢাকার শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা (১২ ম্যাচে ২১২ রান ও ৪ উইকেট। অপরাজিত ১০৩ রানের একটি সেঞ্চুরিও আছে), রংপুরের পাকিস্তানের খুশদিল শাহ (১০ ম্যাচে ২৯৮ রান), ইংল্যান্ডের আলেক্স হেলস (৬ ম্যাচে ২১৮ রান) পাকিস্তানের ইফতেখার আহমেদ (১২ ম্যাচে ৩০৫ রান ও ৫ উইকেট),খুলনার মোহাম্মদ নেওয়াজ (১২ ম্যাচে ৮৮ রান ও ১০ উইকেট)।

খুশদিল শাহ ও অ্যালেক্স হেলস আসরের মাঝপথে চলে যান। জেসন রয় চলে যান ২ ম্যাচ খেলে। তারকা ক্রিকেটারদের মাঝে হতাশ করেন বরিশালের আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী। ১১ ম্যাচ খেলে ব্যাটে মাত্র ৫৭ রান ও বল হাতে ৮ উইকেট নেন। একই দলের হয়ে খেলা পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি হতাশ করেন সবাইকে। তিনি ৫ ম্যাচে ৩৫ রান করার পাশাপাশি উইকেট নেন মাত্র ৪টি। অথচ অতীতে বিপিএলে বিশ্বমানের অনেক তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতি ছিল নিয়মিত।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা ক্রিস গেইল থেকে শুরু করে, ডি ভিলিয়ার্স, রাইলি রুশো, শহিদ আফ্রিদি, রশিদ খান, মজিবুর রহমান, ড্যারেন সামি, বাবর আজম, মোহাম্মদ সামি, সাঙ্গাকারা, তিলকরত্নে দিলশান, অজন্তা মেন্ডিস, ব্রান্ডেন টেলর, সোহেল তানভীর, স্কট স্টাইরিস, ব্রাড হজ, আহমেদ শেহজাদ, জেসন রয়, ডুয়াইন ব্রাভো, মুরালিধরন, মারলন স্যামুয়েলস, চন্দরপল, হার্সলে গিবস, আন্দ্রে রাসেল, আজহার মাহমুদ, পোলার্ড, ইমরান নাজির, নাসির জামসেদ, কামরান আকমল, হ্যামিলটন মাসাকাদজা, রবি বোপারা, জ্যাকব ওরাম, শন টেইট, ডোয়াইন স্মিথ, মোহাম্মদ নবী, শোয়েব মালিক, স্যামুয়েলস, নিকোলাস পুরান, মোহাম্মদ শাহজাদ, জোফরা আর্চার, লাসিথ মালিঙ্গা, ব্রান্ডেন ম্যাককুলাম, সুনীল নারিন, জস বাটলার, এভিন লুইস, আদিল রশিদ, উপল থারাঙ্গা, আন্দ্রে ফ্লেচার, জনসন চার্লস, থিসারা পেরেরা, সিকান্দার রাজা, মোহাম্মদ হাফিজ, ডেবড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, মোহাম্মদ আমির, ডেডিব মালান, ফজলহক ফারুকী, করিম জানাতের মতো ক্রিকেটাররা খেলে গেছেন।

বিপিএল যে তারকা ক্রিকেটারদের পছন্দের তালিকায় পেছনের কাতারে চলে গেছে তা বোঝা যায় ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মায়ার্সের দিকে ফিরে তাকালে। তিনি শুরুতে বরিশালের হয়ে খেললেও আইএলটি২০ আসরে আবুধাবী নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে চলে যান সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই আসর শেষ হলে তিনি আবার বিপিএলে খেলতে চলে আসেন। তারপর খেলেন ফাইনাল পর্যন্ত।

মানহীন নামসর্বস্ব যেসব ক্রিকেটারকে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলিয়েছেন, তাদের পেছনে কিন্তু টাকা ঠিকই ব্যয় করতে হয়েছ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে এ রকম যেসব ক্রিকেটার নিয়ে আসা হয়েছে তাদের পেছনে শুধু বিমান ভাড়া বাবদ ৫ লাখ টাকার ওপরে গুনতে হয়েছে। তারপর থাকা-খাওয়া, দৈনিক ভাতার সঙ্গে পারিশ্রমিক তো আছেই। কিন্তু এই ক্রিকেটারদের না এনে ভালোভাবে হোম ওয়ার্ক করলে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড এমনকি অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক ভালো খেলোয়াড় আনা সম্ভব হতো বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‌‘মানহীন বিদেশি ক্রিকেটার না এনে সেরা একাদশে প্রয়োজনে একজন বিদেশি কম খেলিয়ে দেশি একজন বেশি খেলানো যেত পারে। তা ছাড়া ভালোভাব হোম ওয়ার্ক করলে পাকিস্তানের পিএসএল, ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট, এমন কি অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ থেকেও এ সব ক্রিকেটারের চেয়ে অনেক ভালো ক্রিকেটার নিয়ে আসা সম্ভব।’

নারী ফুটবলে বিদ্রোহ দ্রুতই সংকট কাটবে, আশা বাফুফের

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম
দ্রুতই সংকট কাটবে, আশা বাফুফের
সংগৃহীত

কোচ-ফুটবলার দ্বন্দ্বে নারী ফুটবলে যে সংকট, আজ পর্যন্তও তা নিরসন হয়নি। অথচ বিশেষ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কেটে গেছে পুরো তিন দিন। মূলত বাফুফে সভাপতির দিকেই তাকিয়ে সবাই। প্রায় এক মাসের লন্ডন সফর শেষে গত সপ্তাহেই তিনি দেশে ফিরেছেন। এ সপ্তাহেই ফের তার লন্ডন যাওয়ার কথা। বাফুফে কর্তারা প্রত্যাশা করছেন এই সময়ের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে।

গতকাল রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাফুফের সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ আরেফ বলেছেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আল্লাহর রহমতে সব সমস্যার সমাধান অবশ্যই হয়ে যাবে। সভাপতি খুবই পজিটিভ। তিনি সবকিছু ঠিক করছেন।’ ব্যক্তিগতভাবে আরেফ আশা করছেন, কোচ-ফুটবলার দ্বন্দ্বে দুই পক্ষই তাদের ভুল বুছতে পারবে। তার কথায়, ‘যার যার ভালো তাকে বুঝতে হবে। মেয়েরা আমাদের জাতীয় অহংকার, এটাও ভাবতে হবে। কোচ কোচের জায়গায় থাকবে, খেলোয়াড়রা খেলোয়াড়দের জায়গায় থাকবে। কোচের দায়িত্ব প্রশিক্ষণ দেওয়া, মেয়েদের দায়িত্ব প্রশিক্ষণ নেওয়া। যার যার ইমেজ, তাকেই ধরে রাখতে করতে হবে। দুই পক্ষ তাদের ভুল বুঝতে পারবে বলে আমার মনে হয়।’

এদিকে ১৮জন বিদ্রোহী ফুটবলারকে বাইরে রেখে বাকিদের সঙ্গে বাফুফে চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে আরেফ বলেন, ‘সমস্যা সমাধান হওয়ার পর চুক্তি হবে। আমরা একসঙ্গে সব সিদ্ধান্ত নেব। কাউকে এখন করব, কাউকে পরে করব- সেই পদ্ধতিতে আমরা যাচ্ছি না।’

গতকাল বাফুফেতে এসেছিলেন সভাপতি তাবিথ আউয়াল। সাব্বির আহমেদ আরেফ জানিয়েছেন। এদিন মূলত ফাইন্যান্স কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন সভাপতি। সেখানে কেবল আলোচনা হয়েছে অডিট নিয়ে। নারী ফুটবলের সংকট নিয়ে ওই বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি।

ভারত ম্যাচের প্রাথমিক দলে হামজা-ফাহামেদুল

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
ভারত ম্যাচের প্রাথমিক দলে হামজা-ফাহামেদুল
সংগৃহীত

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে ভারত ম্যাচ সামনে রেখে প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ৩৮ সদস্যের দলে আছেন ইংলিশ ক্লাব শেফিল্ড ইউনাটেডে খেলা হামজা চৌধুরী। এই প্রবাসী ফুটবলারের থাকাটা অবশ্য অনুমিতই ছিল। তবে কাবরেরার স্কোয়াডে চমক ইতালি প্রবাসী মিডফিল্ডার ফাহামেদুল ইসলাম। ইতালির চতুর্থ স্তরের দল ওলবিয়া সেলসিওর হয়ে খেলেন এই ১৮ বছর বয়সী। ফেনীতে জন্ম তার। তবে বাবা-মার সঙ্গে খুব ছোট বয়সেই পাড়ি দিয়েছেন ইতালিতে, ফুটবল চর্চা তার সেখানেই।

হামজা ও ফাহামেদুলের বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এই দুজন ছাড়াও স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে মোহামেডান গোলরক্ষক সাকিব আল হাসান, ডিফেন্ডার জাহিদ হাসান শান্ত ও ফরোয়ার্ড আরিফ হোসেন এবং পুলিশ এফসির ফরোয়ার্ড আল আমিন প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন। চুক্তি জটিলতায় লিগের প্রথম পর্বে খেলতে না পারা জামাল ভূঁইয়াকেও স্কোয়াডে রেখেছেন কাবরেরা। নিয়মিত মুখদের মধ্যে চোটের কারণে নেই ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ।

আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। এ মাসের শেষ দিকে ঢাকায় শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প। কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য আগামী মাসের শুরুতে দল নিয়ে সৌদি আরবে যাবেন কাবরেরা। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরবে দল, ২০ মার্চ যাবে শিলংয়ে।

প্রথমিক দলে ডাক পেলেন যারা
গোলরক্ষক: মিতুল মারমা, সুজন হোসাইন, আনিসুর রহমান, মেহেদী হাসান শ্রাবণ, সাকিব আল হাসান।
ডিফেন্ডার: মুরাদ হাসান, মেহেদী হাসান, শাকিল আহাদ তপু, রহমত মিয়া, শাকিল হোসাইন, ঈসা ফয়সাল, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, তপু বর্মণ, সাদ উদ্দিন, সুশান্ত ত্রিপুরা, ইয়াসিন খান, জাহিদ হাসান।
মিডফিল্ডার: মোহাম্মদ হৃদয়, পাপন সিং, সৈয়দ শাহ কাজিম, সোহেল রানা, চন্দন রয়, মাহবুবুর রহমান জনি, শেখ মোরছালিন, জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী।
ফরোয়ার্ড: ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, রাকিব হোসেন, রাব্বি হোসেন, রফিকুল ইসলাম, শাহারিয়ার ইমন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আরিফ হোসেন, আল আমিন, পিয়াশ আহমেদ নোভা, ফাহমেদুল ইসলাম।

ব্যাটারদের ব্যর্থতা নিয়েই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
ব্যাটারদের ব্যর্থতা নিয়েই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
সংগৃহীত

দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসর। হাইব্রিড মডেলে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে ৮ দলের এই আসর। বাংলাদেশ খেলবে ‘এ’ গ্রুপে পাকিস্তান, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। অপর গ্রুপে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। দুই গ্রুপের সেরা ২ দল খেলবে সেমিফাইনালে। ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই আসরে তারা প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাংলাদেশও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে তাদের সেরা সাফল্য দেখিয়েছিল সেমিফাইনালে উঠে। সেমিতে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরে থেমে গিয়েছিল বাংলাদেশের সেই অগ্রযাত্রা।

৭ বছর পর আবার যখন এই আসর শুরু হতে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। কারণ একসময় তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের মাঝে একমাত্র ওয়ানডেতেই বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু এখন আর সে সুদিন নেই। ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের অবস্থা ভালো না। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তারা তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। এরপর তারা আর কোনো ওয়ানডে ম্যাচ খেলেনি। তাই কোনো রকম ওয়ানডে ম্যাচের প্রস্তুতি ছাড়াই তারা খেলতে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

তাই বলে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যে ম্যাচ খেলায় ছিলেন না, তা কিন্তু নয়। বিপিএল খেলেই তারা প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে বিপিএলের সাতটি দলের হয়ে সবাই খেলেছেন। সবচেয়ে বেশি ৫ জন ছিলেন বরিশালের। তারা হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তাওহীদ হৃদয় ও রিশাদ হোসেন। খুলনা, ঢাকা ও সিলেটের হয়ে খেলেছেন দুজন করে। তারা হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ ঢাকার, নাহিদ রানা ও সৌম্য সরকার রংপুরের ও জাকের আলী অনিক ও তানজিদ হাসান তামিম সিলেটের। এ ছাড়া চিটাগং থেকে পারভেজ হোসেন ইমন ও রাজশাহী থেকে তাসকিন আহমেদ খেলেছেন।

একমাত্র অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ছাড়া বাকি সবাই-ই ছিলেন নিয়মিত খেলার মাঝে। কিন্তু সেখানেও তারা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি, বিশেষ করে ব্যাটাররা। দুই-তিনজন ব্যাটারের কথা বাদ দিলে বাকি সবাই অনেকটা রান খরায় ভুগেছেন। তবে বোলারদের আবার সেই কাতারে ফেলা যাবে না। তারা ব্যাটারদের তুলনায় মোটামুটি সফল ছিলেন।

একজন অধিনায়কের কাছে দল যেমন সঠিক নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে থাকে, তেমনি তার কাছ থেকে পারফর্মও চায়। এখানে অধিনায়ক ব্যর্থ হলে তার প্রভাব দলের মাঝে খুবই বাজেভাবে পড়ে। এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বেশ ভুগার শঙ্কা আছে। বরিশালের হয়ে নাম লেখানো নাজমুল শান্ত এবার খেলেছেন চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের হয়ে। কিন্তু তিনি সেরা একাদশেই জায়গা করে নিতে পারেননি। মাত্র ৫টি ম্যাচ খেলে রান করেন মাত্র ৫৬।

অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। মুশফিক ১৪ ম্যাচে ১৮৪ রান ও মাহমুদউল্লাহ ২০৬ রান করেন। মাহমুদউল্লাহর একটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস থাকলেও মুশফিকের কোনো হাফ সেঞ্চুরি ছিল না। অবশ্য ওয়ানডেতে দলীয় ব্যর্থতার মাঝেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন সফল। সর্বশেষ চার ম্যাচেই আছে তার হাফ সেঞ্চুরি। একই দলের হয়ে খেলা অপর ক্রিকেটার তাওহীদ হৃদয় শুরুতে ছিলেন একেবারে ব্যর্থ। একটু বিলম্বে তিনি কিছুটা রানের দেখা পান। ৮২ রানের অপরাজিত একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৪ ম্যাচে তিনি রান করেন ৩১২।

তাওহীদের মতোই শুরুতে রানের দেখা পাননি রানার্সআপ চিটাগং কিংসের ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। আসরের শেষের দিকে তার ব্যাটে রানের দেখা মিলে। দুটি হাফ সেঞ্চুরি ও সে সময় পাওয়া। ১৩ ম্যাচ তার রান ৩৩৮। পয়েন্ট টেবিলে সবার তলানিতে থাকা সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলা জাকের আলীও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ১২ ম্যাচ খেলে কোনো হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। রান করেন ২৪৭।

সেই তুলনায় মেহেদী হাসান মিরাজ অনেক ভালো করেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট জাতীয় দলে যেখানে তার স্থান পাওয়াই কঠিন, সেখানে তিনি ১৪ ম্যাচ খেলে দুই হাফ সেঞ্চরিতে রান করেন ৩৫৫। জাতীয় দলের ব্যাটারাদের মাঝে তার রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সবার ওপরে আছেন এবারের আসরের সবচেয়ে আলোচিত দল ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে খেলা ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ১২ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও চার হাফ সেঞ্চুরিতে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮৫ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১০৮ রানের।

জাতীয় দলের ব্যাটারদের মাঝে একমাত্র তার ও মিরাজের ব্যাটেই ছিল আস্থার চিহ্ন। আস্থা রাখা যেতে পারে সৌম্য সরকারের ওপরও। ইনজুরির কারণে প্রথম দিকে খেলতে না পারলেও শেষের দিকে চার ম্যাচ খেলে ১০৫ রান করেন। যেখানে ছিল ৭৫ রানের একটি ইনিংসও। ব্যাটারদের মতো অবস্থা আবার বোলারদের নয়। তাসকিন তো ছিলেন সেরা ফর্মে। ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে খেলে এক ম্যাচে ১৯ রানে ৭ উইকেট নেয়া ছাড়াও আসরের সবচেয়ে ২৫ উইকেটের মালিক তিনি।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে তানজিম হাসান সাকিবও নিজের প্রস্তুতিটা ভালো সেরে নিয়েছেন। এরপর ১৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। মোস্তাফিজ আবার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্য আশার আলো। গতি দিয়ে নজর কাড়া নাহিদা রানাকে নির্বাচকরা শুধু টেস্টের জন্য বিবেচনা না করে সব ফরম্যাটেই যাচাই করে দেখছেন। নাসুম ছিলেন মন্দের ভালো। টি-টোয়েন্টিতে নাহিদ রানা বেশ ভালোভাবেই সেই পরীক্ষায় উতরে গেছেন ১২ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে। তবে হতাশ করেছেন রিশাদ হোসেন ১১ ম্যাচে মাত্র ৭ উইকেট নিয়ে।

একেত ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সময় ভালো যাচ্ছে না, সেখানে আবার প্রস্তুতির জন্য খেলেনি কোনো ম্যাচ, তার ওপর ব্যাটারদের ব্যাটে নেই রান- সব মিলিয়ে এবারের আসর বাংলাদেশ দলের জন্য বেশ ভাবনার!