হেলিকপ্টার তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নাজমুল খান নামে খুলনার এক কলেজছাত্র। দেশীয় প্রযুক্তি আর চায়না ইঞ্জিনে তৈরি এই হেলিকপ্টার তৈরিতে কোটি টাকা নয়, বরং খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা।
খুলনার ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের ছাতিয়ানি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম খানের ছেলে নাজমুল। পড়াশোনা করছেন বিএল কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে গত তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন এক আসনবিশিষ্ট হেলিকপ্টার। নিজের স্বপ্ন থেকে নাজমুল ইন্টারনেট ঘেঁটে জ্ঞান অর্জন করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন ব্যয়বহুল। তাই নিজস্ব মেধায় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন আধুনিকায়ন করে এটি তৈরি করেছেন তিনি। পরিবারের মা-বাবার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে তিন বছরের চেষ্টায় সফল হয়েছেন নাজমুল।
সরেজমিন দেখা যায়, হেলিকপ্টারটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ ফুট। এর দুটি পাখা সাড়ে ৮ ফুট লম্বা এবং চওড়া ২১ মিটার। চায়না ইঞ্জিনের আরপিএম সাড়ে ৬ হাজার থেকে ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ৯ হাজার আরপিএমে। এক লিটার অকটেনে এটি ১৮ থেকে ২০ মিনিট চলবে। প্রাথমিকভাবে ৪০ থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে উড্ডয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ১ দশমিক ৩ ও ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার এসএস পাইপ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হেলিকপ্টারটি এখন পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
নাজমুল খান বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে হেলিকপ্টার তৈরির কাজ শুরু করি। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করি। এরপর দেশীয় প্রযুক্তিতে কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর চায়না থেকে সংগ্রহ করা একটি ইঞ্জিন মডিফাই করে সক্ষমতা বাড়ানো হয়। এখনই হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে আরেকটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এখন অল্প কিছু দিনের মধ্যে খোলা জায়গায় এটি নিয়ে উড্ডয়নের ইচ্ছা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং বৃষ্টি কমলে হেলিকপ্টারটি ওড়ানো সম্ভব হবে।’
জানা যায়, নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম খান পেশায় একজন কৃষক। একই সঙ্গে তার একটি ছোট মুদি দোকান রয়েছে। দরিদ্র্যের মাঝেও ছেলের উদ্ভাবনী ইচ্ছাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। বর্তমানে হেলিকপ্টারটি কাজ করায় গর্বিত নজরুল ইসলাম।
নাজমুলের উদ্ভাবনীক্ষমতা যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেখানে তাকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা করলে দেশেই কম খরচে হেলিকপ্টার তৈরি সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। নাজমুলের হেলিকপ্টার বানানোর ঘটনায় গর্বিত তারা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন এই যন্ত্রটি দেখার জন্য।
এ বিষয়ে উপজেলার জামিরা বাজার আসমোতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবীর বলেন, ‘নাজমুল আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। তিন বছর ধরে সে হেলিকপ্টার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে নাজমুল হেলিকপ্টারটি আকাশে ওড়াতে পারবে।’
ফুলতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীম জাহান বলেন, ‘গ্রামীণ এই পরিবেশে হেলিকপ্টার তৈরি করা অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমরা তার নিরাপত্তা ও ভালোভাবে যেন কাজটি শেষ করতে পারে, সেই বিষয়ে নজর রাখছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। হেলিকপ্টার ওড়ানোর সময় ফায়ার সার্ভিসসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’