হ্যাপটিক প্রযুক্তির হেডসেট প্রদর্শন ডটলুমেনর। ছবি: সংগৃহীত
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার উন্মোচন করেছে রোমানিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডটলুমেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রযুক্তিপণ্যের মেলা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স শো ২০২৫ (সিইএস ২০২৫)-এ হ্যাপটিক প্রযুক্তির হেডসেট নিয়ে হাজির হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এটি এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যা স্পর্শের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করে বা ব্যবহারকারীর শরীরে স্পর্শের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি একটি ‘সেলফ-ড্রাইভিং’ সিস্টেম, যা চলার পথে বাধা এড়াতে ব্যবহারকারীকে সাহায্য করে। এটি মূলত একটি ইলেকট্রনিক গাইড ডগের মতো কাজ করে।
হেডসেটটি দেখতে ভিআর গিয়ারের মতো, সামনের অংশটি কপাল ও চোখের ঠিক ওপরে থাকে। পেছনে একটি ভারী পাওয়ার ও প্রসেসিং ইউনিট রয়েছে। ভারসাম্য বজায় রাখতে ডিজাইনটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে এটি সহজেই বহনযোগ্য হয়।
হেডসেটের সামনের দিকে ছয়টি কম্পিউটার ভিশন ক্যামেরা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কাছাকাছি দূরত্বের এবং বাকি তিনটি দূরের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে। এই সিস্টেমের ধারণাটি এসেছে টেসলার ক্যামেরা সিস্টেম থেকে।
হেডসেটটিতে ছোট ছোট কম্পনকারী মোটর যুক্ত আছে, যা ব্যবহারকারীর কপালে স্পর্শের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এই কম্পনগুলো ব্যবহারকারীকে পথের বাধা, যেমন- অন্য মানুষ বা কোনো বস্তু সম্পর্কে সতর্ক করে। যদি কম্পন কপালের মাঝখানে থাকে, তা হলে সামনের পথ নিরাপদ। আর কম্পন একপাশে সরে গেলে, ব্যবহারকারীকে সে অনুযায়ী ঘুরতে হয়।
হেডসেটে একটি ভয়েস গাইডও রয়েছে, যা জনাকীর্ণ এলাকা সম্পর্কে সতর্ক করে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, হেডসেটটি একবার চার্জে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলবে। প্রয়োজনে ইউএসবি-সি ব্যাটারি প্যাক সংযোগ করেও এটি চালানো সম্ভব।
সিইএস ২০২৫ প্রদর্শনীতে ডটলুমেনের হেডসেট পরীক্ষা করা হয়েছে। ভিড়ে ঠাসা প্রদর্শনীস্থলে চোখ বাধা অবস্থায় হেডসেট ব্যবহার করে পরীক্ষক পথ চলেছেন। চলার পথ সরু হয়ে গেলে হেডসেটটি সতর্ক করেছে।
ডিভাইসটি ব্যবহারকারীদের সংঘর্ষ এড়িয়ে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিতে পেরেছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে প্রযুক্তিটি সম্ভাবনাময় মনে হয়েছে। এর কার্যকারিতা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার নিশ্চিত করতে আরও গবেষণার প্রয়োজন হলেও এটি জীবনমান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডটলুমেন শিগগিরই ইউরোপে হেডসেটটি বাজারজাত করবে। এর দাম ১০ হাজার ইউরোর নিচে রাখা হবে বলে জানা গেছে। যদিও এটি অনেক ব্যয়বহুল মনে হচ্ছে, তবে একটি গাইড কুকুর প্রশিক্ষণের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রে একটি গাইড কুকুর প্রশিক্ষণে প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হয়।