ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের পটপরিবর্তন নতুন প্রজন্ম যেভাবে নেতৃত্ব দিল

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
নতুন প্রজন্ম যেভাবে নেতৃত্ব দিল

সাহস ও একতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাংলাদেশের তরুণরা সম্প্রতি পরিবর্তনের শক্তিশালী এজেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত এক দশকে তরুণরা বেশ কয়েকটি প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছে, যা জাতিকে তার নিষ্ক্রিয় মনোভাবের মূলে নাড়া দিয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংস্কার চাইতে বাধ্য করেছে। কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বৃহত্তর আহ্বান বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তনকারী মুহূর্ত ছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির জন্য একটি ন্যায্য এবং আরও মেধাভিত্তিক ব্যবস্থার দাবি করেছিল। এই আন্দোলন একটি অন্যায্য হিসেবে বিবেচিত সিস্টেমের ওপর হতাশা থেকে শুরু হয়, যা দ্রুত দেশব্যাপী সমর্থন লাভ করে। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হলেও পরে তা বৃহত্তর এবং জাতীয় আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের অন্যতম শক্তি ছিল কিশোর-কিশোরীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কিশোর-কিশোরীরা ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করে, যা সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

শুধু প্ল্যাকার্ড, স্মার্টফোন এবং দৃঢ়সংকল্পকে পুঁজি করে কিশোর-ছাত্ররা রাস্তায় সমাবেশের আয়োজন করে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমবয়সীদের সাথে সমন্বয় করে এবং অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মিডিয়া ও সরকারের কাছে তাদের সমর্থন তুলে ধরে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা বাংলাদেশের শহর ও শহরের রাস্তায় কিশোর-কিশোরীরা সংহতির তরঙ্গ তৈরি করে, যা উপেক্ষা করা অসম্ভব ছিল।

কেন তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মেহেরুন্নেছা, দিনাজপুর পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিমুলসহ একাধিক কিশোর-কিশোরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা শুধু তাদের একার জন্য ছিল না। আমাদের জন্যও ছিল। আমরা কিছুদিন পর একই বৈষম্যের শিকার হতাম। ওরা আমাদের জন্য লড়াই করে আমাদের পথ পরিষ্কার করেছে- যেন আমরা মেধার ভিত্তিতে চাকরি করতে পারি। দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মৌনতা আক্তার মৌ বলেন, আন্দোলন শুরু হয়েছিল কোটা না মেধা নিয়ে, আমরা সবাই জানি যে কোটার জন্য মেধা চাপা পড়ে যাচ্ছে। বড় ভাইয়ারা এটি বুঝতে পেরেছিল, এজন্য তারা শুরু করেছে। আবু সাঈদ ভাইয়া যে বুক পেতে দিয়েছেন, তিনি তো নিজের কথা ভাবেন নাই, পরবর্তী প্রজন্মের কথা, আমাদের কথা ভেবেছেন। কত ভাইবোন মারা গেছে, আমরা কীভাবে বসে থাকতাম! 
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে দেখে আমাদের ছোটরাও এটা শিখতে পারল। তাদের মধ্যে দেশপ্রেমটা জাগ্রত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের এই সংগঠিত, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের শক্তির প্রমাণ হিসেবে সরকার কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। হাইকোর্টের রায়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিফলন থাকলেও, সরকার কর্তৃক শিক্ষার্থী হত্যাসহ নানাবিধ দমন-পীড়নের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সুদৃঢ় অবস্থান শেষ পর্যন্ত একটি উল্লেখযোগ্য বিজয়ের দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যায়। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমুল ইসলামের ভাষায়, আমাদের ভাইদের লাগাতার শহিদ হওয়া আমাদেরকে এক দফার দিকে নিয়ে যায়। আমাদের সবার মধ্যে একতা, আবেগ এবং আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে।

এই আন্দোলনে একপর্যায়ে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণ-যুবাসহ আপামর জনসাধারণ আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘস্থায়ী শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। সরকারকে স্বৈরাচারী আচরণের জন্য অভিযুক্ত করে এবং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দাবিতে সব বয়সের ছাত্ররা মাঠে নামে। কিশোর-কিশোরীরা যাদের ভাবা হতো মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া আর টিকটক প্রজন্ম, তারা রাস্তায় নেমে বাকস্বাধীনতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠে।

এই আন্দোলনে কিশোর এবং তরুণ প্রজন্ম তাদের বয়সের বাঁধা পেরিয়ে অসাধারণ নেতৃত্ব এবং সাহসিকতা দেখিয়েছে, বৃহৎ আকারের প্রতিবাদের সমন্বয় সাধন করেছে। তাদের কণ্ঠস্বরকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছে এবং দমন-পীড়নের মুখে পিছিয়ে যেতে অস্বীকার করেছে।

পটুয়াখালীর শিক্ষার্থী নুরসাবা বীথি বলেন, সরাসরি মাঠে নেমে অংশ নিতে না পারার আক্ষেপ তার এ জীবনে যাবে না। তবে সরব ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সক্রিয়ভাবে জনমত গঠনে এবং নিজের মত প্রকাশে সোচ্চার ছিলেন। কোটা আন্দোলনের দাবি নিয়ে সরকারের হাসি-ঠাট্টা তাকে ব্যথিত করেছে। ভাইবোনদের মৃত্যু এবং তাদের প্রতি অত্যাচার বীথি মেনে নিতে পারেননি। তার মতে, কোনো হৃদয়বান মানুষ এমন নৃশংসতা মেনে নিতে পারে না।

এই আন্দোলনের বিজয় শুধু কোটা পদ্ধতির সংস্কারের মতো সুনির্দিষ্ট পরিবর্তনই নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক সংস্কারের আহ্বান করে তরুণ সমাজ এই বার্তা দিয়েছে যে, একটি জাতির তরুণরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন তারা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারে। এটি করে তারা কেবল নিজেদের জন্য বিজয় নিশ্চিত করেনি, বরং বাংলাদেশে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং সামাজিক পরিবর্তনের একটি নতুন যুগের মঞ্চ তৈরি করেছে।

আন্দোলনপরবর্তী সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ নতুনরূপে সেজেছে। কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই শুধু তরুণ প্রজন্মের ইচ্ছা ও উদ্যোগে দেশ রঙিন হয়ে উঠেছে। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে গ্রাফিতি, ক্যারিক্যাচার, দেয়াল লিখন, নান্দনিক সব আর্টওয়ার্ক।

কেন এই গ্রাফিতি? উত্তরে তরুণদের বক্তব্য- আন্দোলনের সময় দেয়ালে অনেক গ্রাফিতি করা হয়েছিল, এর ফলে দেয়াল খারাপ দেখাচ্ছিল। আমরা চেয়েছি দেয়ালে দেয়ালে ইতিহাস তুলে ধরতে, যেন সবাই জানতে পারে। গ্রাফিতিগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম সবাই দেখুক এবং তা ইতিহাস হয়ে থাকুক। আমরা দেশকে নতুনরূপে প্রকাশ করেছি। দেশটিকে অনেক সুন্দর আর গোছানো লাগে এখন।

আন্দোলনে পাওয়া এই দেশের কী কী পরিবর্তন দেখতে চাই?- এ প্রশ্নের উত্তরে মেহেরুন্নেছা বলেন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই, চাই সবাই আইন মেনে চলবে, স্বাধীনভাবে কথা বলবে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলবে, নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে। আমাদের স্বৈরশাসন দরকার নাই। আমাদের কেউ জোর করতে পারবে না। আমি একজন সাধারণ ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে সুষ্ঠু-সুন্দর অপরাধমুক্ত দেশ চাই।  

শিমুল ইসলাম বলেন, আমরা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করে দেখিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সব কন্ট্রোলে চলে আসছে। রাস্তাঘাট সব পরিষ্কার। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, দেশও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন চাই।

মৌনতা আক্তার মৌ বলেন, বিজয় অর্জন করার পর এখন আর মেধায় আমরা আটকে নেই। আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই। মন খুলে কথা বলতে চাই। একদিনে সব সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে সব হবে। আগের কাজ আর এখনকার কাজে অনেক পার্থক্য আছে। আপনারা দেখেন, আমরা যখন রাস্তায় ছিলাম তখন সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে। বাকস্বাধীনতাটা বেশি জরুরি। কোনো অন্যায় হলে যেন মানুষ রুখে দাঁড়াতে পারে; প্রতিবাদ করতে পারে। কারও ভয়ে যেন চুপ হয়ে না থাকে- এইটাই বড় চাওয়া। দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, এতে গরিব ও মধ্যবিত্তরা ভালো থাকবে। যাতায়াতের ভাড়াটাও এমন নিয়ন্ত্রণ চাই। আমি আশা করি, বাংলাদেশ আরও অনেক ভালোভাবে এগিয়ে যাবে। আমরা আছি আমাদের দেশের সাথে।
নুরসাবা বীথি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাই। সরকার থেকে যে সেবা আমার প্রাপ্য, তা যেন আমাকে ঘুষ দিয়ে নিতে না হয়। সম্প্রতি মেট্রোরেলের উদাহরণ টেনে বীথি বলেন, আমরা প্রথমে শুনলাম মেট্রোরেল মেরামতে ৩০০ কোটি টাকা লাগবে, যা এখন ৫০ কোটিতে সম্ভব। এই যে ২৫০ কোটি টাকার গরমিল হিসাব- এটা আমরা দেখতে চাই না। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন চাই। শুধু সার্টিফিকেট নয়, সঠিক শিক্ষা চাই। আরও চাই প্রকৃত ইতিহাস বইয়ে থাকুক আর মিথ্যা সব দূর হয়ে যাক। শিক্ষার্থীদের জন্য পার্টটাইম কাজের সুযোগ থাকা দরকার। এতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে মেয়েরা শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারবে। চাকরির ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতাও তৈরি হবে।

তরুণ এ প্রজন্ম প্রমাণ করেছে যে, তারা এমন একটি শক্তি- যাকে অগ্রাহ্য করা সবচেয়ে বড় বোকামি। তারা যেকোনো শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম এবং আরও ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে।

জাহ্নবী

 

ভালো লেখক হতে চাইলে

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
ভালো লেখক হতে চাইলে
ছবি সংগৃহীত

আপনি হয়তো প্রতিদিনই লেখালেখি করেন, কিন্তু আপনি কি নিজের লেখা গদ্যকে সবার সামনে একটু আলাদা করে তুলে ধরতে চান? এটার কোনো গ্যারান্টি নেই যে আপনি পরবর্তী ম্যান বুকার বা পুলিৎজার পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন কিংবা পরবর্তী চিমামান্ডা নগোজি অ্যাডিচে বা এমিলি ব্রন্টি হতে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি যদি একজন ভালো লেখক হতে চান তাহলে আপনাকে কিছু নির্দেশনা মানতেই হবে। দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ভাষা গুরু হিসেবে পরিচিত লেন গ্রিন, যিনি সাবেক আর্টস সম্পাদক এবং কলামিস্ট, তিনি ভালো লেখক হওয়ার সাতটি টিপস দিয়েছেন।  

উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু করুন
আপনি যে বিষয়ে যুক্তি দিতে চান বা যে বিষয়টি নিয়ে গল্পটি বলতে চান তার মোদ্দা কথাটি আপাতত ভুলে যান। শুরু করুন কোনো একটি বর্ণনা বা উদাহরণ দিয়ে, যা পাঠককে আপনার লেখা পড়তে সঠিক মেজাজটি এনে দেবে। ‘অনেক বছর পর, যখন তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে পড়তে হলো...’ এভাবে নিজের বিখ্যাত রচনা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড’ বা ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ শুরু করেছিলেন লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে কে রয়েছে এবং কেনই-বা রয়েছে? এর চেয়ে শক্তিশালী কোনো জিজ্ঞাসা দিয়ে কোনো রচনা শুরু করা সম্ভব নয়।

বাক্য সংক্ষিপ্ত রাখুন
সংক্ষিপ্ত বাক্যে লিখলে তা আসলে পাঠকের মেধাকে ছোট করা বোঝায় না। তবে এটা করাটা অতটা সোজাও নয়। কিন্তু এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো স্টাইল নয়, কিন্তু মানুষের জৈবিক বৈশিষ্ট্য মাত্র। কারণ, এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে। দীর্ঘ একটি বাক্য, বিশেষ করে যেসব বাক্যে একাধিক অধীনস্থ বাক্যাংশ থাকে, সে ধরনের বাক্য বুঝতে হলে পাঠককে ব্যাকরণের পাশাপাশি মূল বিষয়টিকে মাথায় একসঙ্গে রাখতে হয়। যা অনেক কঠিন এবং পাঠককে আপনার লেখার ব্যাকরণ নিয়ে ব্যস্ত রাখারও কোনো মানে হয় না।

একই সঙ্গে, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের বাক্যও লিখতে হবে
আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, ‘সবকিছুরই পরিমিতি বোধ থাকা উচিত, এমনকি পরিমিতিরও পরিমিতি বোধ থাকা জরুরি।’ যেখানে ছোট ছোট বাক্যে লেখাটাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা উচিত, তবে সব বাক্যই যদি ছোট লেখা হয় এবং আর কোনো ধরনের বাক্য যদি না থাকে তাহলে তা আপনার লেখায় এক ধরনের কাটা কাটা ভাব অর্থাৎ রসহীন করে তুলবে। এক ধরনের র‍্যাট-টাট-টাট অনুভূতি দেবে পাঠককে, যা হয়তো আপনি বাস্তবে দিতে চাননি এবং এটা পাঠকের জন্য বিরক্তির কারণও হতে পারে। তাই সব ধরনের বাক্যই লিখতে হবে।

সঠিক শব্দ ব্যবহার করুন
সঠিক শব্দের ব্যবহার পাঠককে দেখা, গন্ধ নেওয়া, স্বাদ নেওয়া কিংবা পায়ের আঙুল দিয়ে স্পর্শ করার মতো অনুভূতি দেয়। এটা পাঠককে এমন কিছু দেয় যা দিয়ে তারা তাদের মনের চোখ দিয়ে এক ধরনের ছবি আঁকে। এই ছবি এবং শব্দ মিলে, আপনার বার্তাকে স্মরণীয় এবং আকর্ষণীয় করে তুলবে পাঠকের কাছে।

বিমূর্ত শব্দ এড়িয়ে চলুন
বিশেষ করে এগুলোকে মাঝে মাঝে বলা হয়ে থাকে ‘মনোনীত করণ’ বা আরও ভালো ভাবে বললে- ‘জম্বি নাউন বা ভৌতিক বিশেষ্য’ বলা যায়। এগুলো অনেক বেশি প্রাণহীন শব্দ যেমন- ঘটনা, ফেনোমেনা, স্তর বা পর্যবেক্ষণ। ফেনোমেনা শুনতে আসলে কেমন শোনায়? পর্যবেক্ষণকে কীভাবে অনুভব করা যায়? প্রাতিষ্ঠানিক, আমলাতান্ত্রিক এবং অন্যান্য প্রাচীন লেখার ধরনে এমন শব্দের প্রাচুর্য থাকে। এর পরিবর্তে স্পষ্টভাবে কল্পনা করা যায় এবং নির্দিষ্টভাবে বিষয় বস্তুকে তুলে ধরে এমন শব্দ বাছাই করা উচিত।

নিজের লেখাটি জোরে জোরে পড়ুন
শুধু নিজে নিজে লেখা, পুনরায় লেখা এবং সম্পাদনাই যথেষ্ট নয়, বরং জোরে জোরে পড়ুন। যখন আপনি পড়বেন তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে, লেখার সময় আসলে আপনি কোন ধরনের শব্দটি ভুলে গেছেন বা মিস করেছেন। যদি এটা বলতে কষ্ট হয়, তাহলে এটা পড়তেও কষ্ট হবে। এ ছাড়া কোথায় ছন্দপতন হয়েছে সেটিও আপনি সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন।

দৃঢ়ভাবে শেষ করুন
শেষের জন্য আপনার জানা সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ বা বাক্য গুচ্ছ ব্যবহার করুন। আপনি কোন ধরনের শব্দ বাছাই করছেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। এমনকি শক্তিশালী বা জোর রয়েছে এমন সিলেবল দিয়ে শেষ করার চেষ্টা করুন। শেষের শব্দগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের কথা শুনে বিশ্বাস না করলেও আইরিন নেমিরভস্কির কথা তো নিশ্চয়ই এড়িয়ে যেতে পারবেন না। নিজের রচনা স্যুট ফ্রেঞ্চাইজিতে তিনিও একই কথা বলেছেন।

সূত্র বিবিসি

 

মেহেদী আল মাহমুদ

টিনএজারদের জন্য শিক্ষামূলক অ্যাপ

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৮ পিএম
টিনএজারদের জন্য শিক্ষামূলক অ্যাপ
ছবি সংগৃহীত

বর্তমানে টিনএজারদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। বিনোদন কিংবা পড়াশোনায় তাদের সঙ্গী স্মার্টফোন। এই স্মার্টফোনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলা যায়। তেমনি কিছু অ্যাপ সম্পর্কে জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির

ফটোম্যাথ
ফটোম্যাথ হলো এমন এক অ্যাপ, যেখানে ধাপে ধাপে গাণিতিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। এই অ্যাপে গাণিতিক সমস্যার ছবি তুলে আপলোড দিলেই তার সমাধান করে দেবে। কিশোর বয়সে গণিতকে জয় করতে গাণিতিক সমস্যার প্রতিটি ধাপ বোঝার বিকল্প নেই। তাই অ্যাপের মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান দেবে ফটোম্যাথ অ্যাপ। অ্যাপের ইন্টারফেসে ছবি স্ক্যান করার অপশন আসবে। যেখানে প্রশ্নের ছবি আপলোড দিতে হবে। তারপর পাটিগণিত, ক্যালকুলাস, বীজগণিত সব ধরনের প্রশ্নের ধাপে ধাপে সমাধান দেবে অ্যাপটি। গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে ফটোম্যাথ।

কোড একাডেমি গো
কিশোর বয়সে প্রোগ্রামিং শেখার বাতিক ওঠে অনেকেরই, কিন্তু কম্পিউটার বা ল্যাপটপ না থাকায় তা আর শেখা হয়ে ওঠে না। এ ধরনের প্রার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে কোড একাডেমির এই অ্যাপটি। কোড একাডেমি মূলত প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার প্ল্যাটফর্ম। তাদের অ্যাপ কোড একাডেমি গো। তাদের ওয়েবসাইটের মতো অ্যাপেও সহজ উপায়ে শেখা যাবে প্রোগ্রামিং। অ্যাপে করা যাবে প্রোগ্রামিং প্র্যাক্টিস। যারা প্রোগ্রামিং শুরু করতে চায় তাদের জন্য এই অ্যাপটি আদর্শ হতে পারে। অ্যাপটি পাওয়া যাবে প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোরে।

কাহট
কাহট বা কাহত। এই অ্যাপটি মূলত কুইজের গেম। এই অ্যাপে কুইজ খেলা যাবে এবং কুইজ 
বানানো যাবে। পড়াশোনা মনে রাখার কাজে হোক কিংবা অবসর কাটাতে গেম খেলা হোক, 
দুটোই করা যাবে এই অ্যাপে। কাহটে বিভিন্ন ফ্ল্যাশকার্ড, গাণিতিক কুইজ, সাহিত্য, ইতিহাস সব 
বিষয়ে কুইজ খেলা যাবে। বানানো যাবে নিজস্ব কুইজ গেমও। অ্যাপটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে এবং অ্যাপ স্টোরে।


নাসা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এক্সপ্লোরার
মহাকাশবিষয়ক বিভিন্ন ছবি ভিডিও সব এক অ্যাপে এনেছে নাসা। মহাকাশ এবং পৃথিবী সম্পর্কে জানার অন্যতম একটি সহায়ক অ্যাপ হতে পারে এটি। নাসার মহাকাশযানের বিস্তারিত বিবরণ, এর ভেতরকার খুঁটিনাটি তথ্যসহ পাওয়া যাবে। আবার সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন গ্রহের বায়মণ্ডল, পৃষ্ঠ সম্পর্কে তথ্য ইত্যাদি ছবি, ভিডিও আকারে চিত্রায়িত থাকবে অ্যাপটিতে। নাসা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এক্সপ্লোরার নামে অ্যাপটি পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোরে।


কুইজলেট
পড়াশোনার কাজে সাহায্য করার আরেকটি অ্যাপ কুইজলেট। এটি মূলত পড়া মুখস্থ রাখা এবং তথ্য মনে রাখার কাজে সহায়তা করে। ইতিহাস, গণিতের সূত্র কিংবা রসায়নের সমীকরণ মনে রাখার কাজে ব্যবহার করা যাবে অ্যাপটি। এই অ্যাপে ফ্ল্যাশকার্ড বানিয়ে নোট করা যাবে। প্রায় ৭০০ মিলিয়নের মতো ফ্ল্যাশকার্ড আছে এই অ্যাপে। তাছাড়া পড়া অনুশীলনে কুইজের মাধ্যমে যাচাই করা যাবে নিজেকে। কুইজলেট অ্যাপ পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপ স্টোরে।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১০ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা
সাপসহ অন্যান্য বিপদগ্রস্ত বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও অবমুক্ত এবং রাস্তায় অসুস্থ কুকুর-বিড়াল উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে রংপুর শহরে বেশ পরিচিত হয়েছেন প্রান্ত।

নাম লিজেন আহম্মেদ প্রান্ত। ছোটবেলা থেকেই পশুপাখির প্রতি গভীর ভালোবাসা তার। জন্ম নওগাঁ সদর উপজেলার শেখপুরা গ্রামে। রংপুর সরকারি সিটি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বর্তমানে রংপুর ডেলটা কম্পিউটার সায়েন্স কলেজে বিবিএ প্রথম সেমিস্টারে পড়ছেন তিনি।

সাপসহ অন্যান্য বিপদগ্রস্ত বন্যপ্রাণী উদ্ধার অবমুক্ত এবং রাস্তায় অসুস্থ কুকুর-বিড়াল উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে রংপুর শহরে বেশ পরিচিত হয়েছেন প্রান্ত। শহর কিংবা গ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন করেন তিনি।

বিভিন্ন প্রজাতির ১০০টির বেশি সাপ উদ্ধার করে বন বিভাগের নির্ধারিত বনে ছেড়ে দিয়েছেন প্রান্ত। এগুলোর মধ্যে আছে অজগর, খৈয়া গোখরা, পদ্ম গোখরা, গ্রিন পিট ভাইপার, লেসার ব্ল্যাক ক্রেইট, শঙ্খিনী, হেলে, বেত আঁচড়া, জলঢোঁড়া এবং মেটে। ছাড়া তিনি অসুস্থ বনবিড়াল, শিয়াল, কোকিল, প্যাঁচাসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণী উদ্ধারের পর চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে অবমুক্ত করেন।

বর্তমানে লিজেন আহম্মেদ প্রান্ত ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সাপসহ সব ধরনের বন্যপ্রাণী আমাদের খাদ্যশৃঙ্খল প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখে। প্রতিটি প্রাণীরই সমানভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে বলে মনে করেন প্রান্ত।প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা এবং প্রকৃতি রক্ষায় সামান্য অবদান রাখার জন্য আমি কাজ করি। ভবিষ্যতে মানুষকে সাপ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন করতে চাই। কারণ, সচেতনতাই পারে সাপে-মানুষে সংঘাত কমাতে।

ছেলের কাজের বিষয়ে প্রান্তর মা লিজা আখতার জানান, তারা প্রথমে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না ছেলের কাজকর্ম। অবশ্য বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবার প্রান্তর পাশে দাঁড়ায়। তারাও প্রান্তর মতো কাজ করেন এখন।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন নাঈম

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন নাঈম
কিছু সুহৃদের অর্থায়ন ও সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা শরুব ইয়ুথ টিমের অর্থের মূল উৎস।

 

শ্যামনগর সরকারি মহসিন ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম জান্নাতুল নাঈম। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবেশ জলবায়ু নিয়ে কাজ করে আজ সবার পরিচিত মুখ তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী, মানবিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন কাজ। এর স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন নানান সম্মাননা পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিএসও বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২৩- জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন, ইউএসএআইডি আয়োজিত আইডিয়া কমপিটিশনেসেভিং মাদার নেচার, সেভিং আস২০২৩ ক্যাম্পেইনে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন। নাঈমের সংগঠনের নামশরুব ইয়ুথ টিম

নাঈমের জন্ম সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। শৈশব থেকে নিজ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, সুপেয় পানির সংকট ইত্যাদি তাকে খুব নাড়া দিত। স্নাতক পর্যায়ে আসতেই চারদিকে দেখা দেয় করোনার প্রাদুর্ভাব। অন্য সবার মতো নাঈমও গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। দুরন্ত চটপটে নাঈমের কাছে ঘরে বন্দি থাকা বেমানান ঠেকল। ফেসবুকে খুলে ফেললেনশ্যামনগরের রূপ বৈচিত্র্যনামে একটি গ্রুপ। সেখানে নিজের জন্মস্থান শ্যামনগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরবেন বলে ঠিক করলেন।

শ্যামনগর সুন্দরবন এলাকার বৈচিত্র্যময় আলোকচিত্র গ্রুপে পোস্ট করতে শুরু করলেন। বেশ সাড়াও মিলল। সে গ্রুপের সদস্য এখন ১৫ হাজার।

প্রকৃতির ছবি গ্রুপে পোস্ট করা থেকেই প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় আসে নাঈমের। সে জন্য ২০২১ সালের ২৫ জুলাই গড়ে তোলেনশরুব ইয়ুথ টিমনামে একটি সংগঠন। অল্প কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে নিয়েই যাত্রা শুরু। ছয়জন সদস্য নিয়ে শুরু হওয়া সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ৩১০ জন। দুর্যোগকালীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়া, নলকূপ স্থাপন, নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, ক্লাইমেট স্ট্রাইক, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠশালা, মাদকবিরোধী কার্যক্রম, পরিবেশ আন্দোলনসহ নানান কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরুব ইয়ুথ টিম।

কিছু সুহৃদের অর্থায়ন সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা শরুব ইয়ুথ টিমের অর্থের মূল উৎস। ছাড়া অনেক সময় সংগঠনের পাওয়া সম্মাননার অর্থ স্বেচ্ছাসেবামূলক মানবিক নানান কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। পরিবেশ জলবায়ুকেন্দ্রিক কাজ করলেও সংগঠনটির সদস্যরা বন্যায় ত্রাণ নিয়ে ছোটেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে। দুর্যোগে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন খাদ্যসামগ্রী।

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ২৫টি নলকূপ স্থাপন করেছেশরুব ইয়ুথ টিম সম্প্রতি একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে বড় একটি পানির ড্রাম স্থাপন করেছে সংগঠনটি। সে ড্রাম ২০০ শিক্ষার্থীর পানির কষ্ট দূর করেছে। ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শ্যামনগরের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফলে নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলার চেষ্টা করছে সংগঠনটি। জন্য ৯টি পরিবারকে সেলাই মেশিন দিয়েছেন নাঈম তার সংগঠনের সদস্যরা। পরিবেশ ভালো রাখতে তারা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নানান জাতের গাছ লাগিয়েছেন। সংগঠনের সদস্যরা ১০ হাজারের মতো তালবীজ রোপণ করেছেন বিভিন্ন রাস্তার পাশে। পরিবেশ জলবায়ু সম্পর্কে বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নাঈম তার সংগঠনের সদস্যরা প্রতি শুক্রবার ক্লাইমেট স্ট্রাইক করে থাকেন। সুন্দরবনের প্রকৃতিবিধ্বংসী কাজের বিরুদ্ধেও নানান আন্দোলন করে সংগঠনটি। শরুব ইয়ুথ টিমের সদস্য হেমাদ্রি রাজ হিমু বলেন, ‘আমরা সবাই জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ভুক্তভোগী। একজন কথা বলার চেয়ে সবাই মিলে কথা বললে ফল হয়। সে জন্য পরিবেশবিষয়ক সংগঠনে যুক্ত হয়েছি।এহসানুল মাহবুব তানভীর জানান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া ঠেকাতে সংগঠনটিরআশার আলোনামে একটি পাঠশালা রয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবেশ আন্দোলনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চান নাঈম।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

 

মন যখন পড়ার টেবিলে বসতে চায় না

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
মন যখন পড়ার টেবিলে বসতে চায় না
ব্যায়াম বা খেলাধুলা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে খুব কার্যকর।

পড়াশোনা আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। উপযুক্ত শিক্ষা যেমন মানুষকে একটি চমৎকার জীবন দিতে পারে, ঠিক তেমনি পড়াশোনা না করলে জীবনে সফলতা পাওয়ার হার অনেকাংশে কমে যায়। বর্তমানে যেকোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গেলে, শিক্ষকতা করা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যা- আমরা হতে চাই না কেন উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া তা কখনোই সম্ভব হবে না। যথাযথ পড়াশোনা এবং ডিগ্রি অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমেই আমরা যেতে পারব কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে। তবে এর প্রাথমিক ধাপ অবশ্যই একাডেমিক পড়াশোনা। লিখেছেন ফারজানা আলম

পড়তে বসলেই যেন মন উড়াল দিয়ে কোথাও চলে যায়এই কথাটা যেন আমাদের শিক্ষা জীবনের অন্যতম কমন বাক্য। পড়ার সময় মনকে বেঁধে রাখা হয়ে পড়ে বেজায় কঠিন। সে বারবার অন্য দুনিয়ায় মজে যেতে চায়। তবে কি তাকে কাবু করার উপায় একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। আজ আমরা আলোচনা করব কীভাবে আমরা পড়ার প্রতি আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারি এবং বৃদ্ধি করতে পারি।

 

সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে পড়তে বসুন

সবসময় চেষ্টা করুন পড়ার সময় প্রয়োজন হবে এমন সবকিছু নিয়ে পড়তে বসার। কলম, খাতা, পেন্সিল, রাবার, জ্যামিতি বক্স, স্ট্যাপলার, গ্রাফ পেপার, প্রয়োজনীয় নোট সবকিছু পড়ার আগেই গুছিয়ে পড়ার টেবিলে রাখতে হবে যাতে করে পড়ার সময় ব্যাঘাত না ঘটে বা বারবার পড়া থেকে উঠে যেতে না হয়।

 

নিজেকে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করুন

নিজেকে সবসময় উৎসাহিত করুন পড়ার জন্য। নিজেকে উৎসাহিত করলে আপনার পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। নিজেকে বলুন যে আপনি পারবেন, এটি অসম্ভব কিছু নয়। এতে করে হতাশা কাজ করবে না এবং আপনি ভালোভাবে পড়তে পারবেন।

 

কঠিন পড়াগুলো আগে পড়ে ফেলুন

সবসময় চেষ্টা করুন কঠিন পড়াগুলো আগে পড়ে ফেলতে। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক বুঝতে পারবে সামনের পড়াগুলো সহজ হবে এবং এতে আপনার মস্তিষ্ক রিল্যাক্স থাকবে। আপনি যদি কঠিন পড়াগুলো পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দেন, তাহলে সেটি আপনার মস্তিষ্ক অনবরত ভাবতে থাকবে এবং সেটি মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আপনার জন্য পড়াটি তখন আরও বেশি কঠিন মনে হবে এবং সময় বেশি লাগবে।

 

পড়ার নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন

পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বের করে নিন। যে সময় আপনি পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারবেন। পড়ার একটি নির্দিষ্ট সময় না থাকলে পড়া রেগুলার হয় না। এতে করে পড়ার ফ্লো নষ্ট হয়। সকালবেলার দিকে পড়তে বসতে পারেন। কারণ সেসময় আমাদের মস্তিষ্ক একদম রিল্যাক্স থাকে এবং সহজেই পড়া গ্রহণ করতে পারে।

 

পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন

পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে আমরা কখনোই মনোযোগ দিতে পারব না পড়ায়। পড়ার স্থান, পরিবেশ নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় লক্ষ রাখুন। যেমন যেখানে পড়তে বসবেন সেখানে যেন আপনার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন কিছু না থাকে। পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট করে রাখুন এবং হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। ফোনে পড়া থাকলে শুধু সেই অ্যাপসটি খুলে রাখুন।

 

পড়ার সময় বারবার টেবিল ত্যাগ করবেন না

পড়ার সময় বারবার টেবিল ত্যাগ করবেন না। এতে করে মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে এবং পড়ার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। পড়ার সময় বিরক্ত করতে পারে, এমন সবকিছু এই সময়ে এড়িয়ে চলুন।

 

পড়ার বিষয়ে বৈচিত্র্যতা রাখুন

পড়ার একঘেয়েমিতা দূর করতে পড়ার বিষয়ে বৈচিত্র্যতা আনুন। সবসময় এক টপিক টানা না পড়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়ার বিষয় পরিবর্তন করুন। রুটিন করে একেকদিন বা একেক সময় একেক বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করুন।

 

পড়তে বসার ভঙ্গি ঠিক করুন

পড়ার সময় টেবিলে বসে পড়ার অভ্যাস করুন। অনেকেই বিছানায় বসে বা শুয়ে পড়েন। বিছানায় বসে বা শুয়ে পড়লে একটা সময় আলস্য কাজ করে বা ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে। এতে করে পড়ার মনোযোগ চলে যায় এবং পড়ার ক্ষতি হয়। তাই টেবিলের বসার অভ্যাস করুন।

 

ছোট ছোট থেকে বড় প্ল্যান করুন

শুরুতেই অতিরিক্ত প্ল্যান করলে মস্তিষ্কে চাপ পড়বে বেশি। এতে করে আমাদের ঠিকমতো পড়া হবে না। ছোট ছোট সময় নির্ধারণ করুন প্রথমে, যেমন- প্রথম দিন ২০ মিনিট টানা পড়লেন। এরপর ব্রেক নিন। কয়েকদিন পর তা ৩০ মিনিট পড়লেন এবং এরপর ব্রেক নিলেন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক প্রেশার পড়বে না এবং আপনার মনোযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।

 

নিজেকে পুরস্কৃত করুন

ডেইলি পড়ার একটি লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেটি পূরণ করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এতে করে আপনার নিজের লক্ষ্য অর্জনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। আপনি উৎসাহ বোধ করবেন কাজের প্রতি এবং ভালো একটি ফলাফল আশা করতে পারবেন।

 

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো অবশ্য কর্তব্য। একজন মানুষের দৈনিক থেকে ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে আমাদের পড়ার প্রতি আগ্রহ মনোযোগ দুটোই কমে যাবে।

 

নিয়মিত পানি পান করুন

পড়ার সময় আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু অনেক খাটনি করে থাকে আর এই খাটনির সময় তার প্রয়োজন হয় প্রচুর পানি। তাই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেয়ে তাকে আর্দ্র রাখুন।

 

স্টাডি মিউজিক শুনতে পারেন

ইউটিউবে Study Music লিখে সার্চ করলেই আপনি সন্ধান পেয়ে যাবেন অসংখ্য মিউজিকের লিস্ট। পড়ায় মনোযোগ বাড়াতে এগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এখন থেকে তবে পড়ায় মনোযোগ না বসলে যেকোনো একটি মিউজিক চালু করে পড়তে বসুন।

 

প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন

মেডিটেশন আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। তবে যদি আপনার সময় কম থাকে, আপনি কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। ঘুম থেকে উঠে মিনিট যেকোনোএকটি আওয়াজের প্রতিমনোনিবেশ করুন।

 

নিয়মিত খেলাধুলা করুন

ব্যায়াম বা খেলাধুলা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে খুব কার্যকর। সারা দিন একটা সময় অন্তত এক ঘণ্টা ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা করুন। এতে মাইন্ড ফ্রেশ থাকে এবং পড়াশোনায় অধিক মনোযোগী হওয়া যায়।

 

অবচেতন মন চেতন মনের সমন্বয় করুন

অবচেতন মনে সাধারণ আপনি সেই কাজগুলো করেন যেগুলো করতে আপনারআলাদা মনোযোগদিতে হয় না। চেতন মনে বিষয়টি এমন নয়। এখানে আপনি সেই কাজগুলো করেন যেগুলো করতে আপনারআলাদা মনোযোগদিতে হয়। আপনার নিজেরমনকে বোঝাতে হয়যে আমি কাজটি করছি। পড়াশোনা করার কাজটি ঘটে চেতন মনে। অতএব, পড়ার সময় এমন কোনো কাজ করবেন না, যেটা করতেও পড়ার মতোই চেতন মনের প্রয়োজন হয়। যেটা করতে আপনার মস্তিষ্ককে আলাদা মনোযোগ দিতে হয়। যেমন- পড়ছেন এবং পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এমন করলেই আপনার ব্রেইন দুই দিকে ফোকাস করার চেষ্টা করবে এবং ফলশ্রুতিতে কোনোটাতেই ফোকাস হবে না। অতএব পড়ার সময় শুধুই পড়ুন। তবে অনেক সময় কিছু লেখার সময় বা অঙ্ক করার সময় স্টাডি মিউজিক শুনতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আলাদা করে গানের প্রতি মনোযোগ দিতে হয় না এবং ফোকাস ঠিক থাকে।

উল্লিখিত বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনার পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে অধিকতর সহজ হবে এবং মস্তিষ্ক অলস হয়ে পড়বে না।

 

মেহেদী আল মাহমুদ