কবিতা ভালোবাসে না এমন টিনএজ খুঁজে পাওয়া বিরল। তবে এদের মধ্যে আবার অনেকেই কবিতা লেখার চেষ্টা করে। কিন্তু কীভাবে কবিতা লিখতে হবে, তা না জানার কারণে সেটা আর লেখা হয়ে ওঠে না। কবিতা লিখতে গেলে, কবিতা লেখার নিয়ম জানতে হবে। হতে পারে, আপনি কি প্রথমবারের মতো কবিতা লিখতে বসছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কবিতা কীভাবে লিখতে হয়?
কবিতা লেখার নিয়ম জানা না থাকলে, কবিতা লেখা অনেক কষ্টের বিষয়। কবিতা লেখার সময় কিছু সাধারণ নিয়ম-কানুন জানা থাকলে, আপনি সহজেই আপনার মনের ভাব কবিতা দ্বারা প্রকাশ করতে পারবেন।
এটা সত্য, নিয়মের বেড়াজালে মনের ভাবকে আটকানো ঠিক না। এর ফলে সঠিকভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটাও সত্য, যুগ যুগ ধরে সব কবি কিছু নিয়ম অনুসরণ করে এসেছেন। আর সেজন্য আজকে আমরা, কবিতা লেখার নিয়ম ও আধুনিক কবিতা লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কবিতা কী?
কবিতা লেখা শুরু করার আগে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে, কবিতা কী। কবিতা হলো শব্দের সংগ্রহ বা বিন্যাস, যারা মনের ভাব এবং ধারণা সহজে প্রকাশ করা যায় ছন্দ বা কল্পনার দ্বারা। মনে রাখতে হবে, কবিতা ছোট ছোট লাইনে লেখা হয় এবং বড় বড় রচনা লিখলে কবিতা হবে না।
পূর্ণ এবং অপূর্ণ লাইন কবিতায় ব্যবহার করা যায়। বিশেষভাবে মনে রাখার বিষয় হলো, সব কবিতায় ছন্দের প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু কবিতার ছন্দ দিয়ে লেখা হয় আর কিছু কিছু কবিতার ছন্দ ছাড়া লেখা হয়।
কবিতা লেখার উদ্দেশ্য
কবিতা লেখার সময় আপনাকে বুঝতে হবে, কেন আপনি কবিতা লিখতে চান এবং কেমন মনের ভাব প্রকাশ করতে চান। কবিতা লেখার উদ্দেশ্যের মধ্যে যা যা পড়বে-
কবিতা লেখার ধরন (Style)
কবিতা বড় হবে না ছোট (Size)
কোন ভাষায় কবিতা লিখবেন (Language)
কার জন্য কবিতা লিখবেন (আপনি নিজের জন্য অথবা অন্য কারও জন্য কবিতা লিখতে পারেন অথবা প্রকাশ করার জন্য লিখতে পারেন)
কবিতার বিষয় নির্ধারণ
কবিতা লেখার শুরুতে আপনাকে একটি বিষয় নির্ধারণ করে নিতে হবে। কবিতা লেখার আগে ঠাণ্ডা মাথায় একটি বিষয় ঠিক করতে হবে। যে বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আপনি কবিতাটি লিখবেন। কবিতা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা যায়। সচরাচর যেসব বিষয়ে কবিতা লেখা হয়, তার মধ্যে আছে-
আবেগ (Emotion): আপনি নিজের আবেগ প্রকাশের জন্য কবিতা লিখতে পারেন। যেমন- ভালোবাসা বা ভয়।
ব্যক্তি, স্থান (Person, Place): আপনি যেকোনো ব্যক্তি বা স্থানের গুণ বা রূপের বর্ণনা দিয়ে কবিতা লিখতে পারেন।
সত্য বা কাল্পনিক (Real or friction): আপনি সত্যিকারের জীবন কাহিনি বা কাল্পনিক কাহিনি দিয়ে কবিতা লিখতে পারেন।
মনের ভাব (Feeling): আপনি নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কবিতা লিখতে পারেন।
বস্তু বা প্রাণী (Object or animal): আপনি কোনো বস্তু বা প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বা জীবন নিয়ে কবিতা লিখতে পারেন।
সময় (Time): আপনি যেকোনো সময়ের ওপর কবিতা লিখতে পারবেন। যেমন- অতীত, ভবিষ্যৎ বা বর্তমান।
কবিতার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করা
আপনার বিষয় নির্ধারণ করা শেষ হলে। সেই বিষয় নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে এবং কীভাবে আপনার কবিতাটি আপনি ফুটিয়ে তুলবেন তা ভাবতে হবে। প্রথমে আপনাকে ভাবতে হবে কিছু শব্দ, যা দিয়ে আপনার পুরো কবিতাটি সাজাবেন। শব্দগুলোর আপনার কবিতার বিষয়ের সঙ্গে মিল থাকতে হবে। কবি যখন কবিতা লেখে, প্রথমে সে কবিতার বিষয় নিয়ে কল্পনা করে। মনে মনে তার কবিতা সাজিয়ে ফেলে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কবিতা লেখার নিয়ম। যেমন- আপনি একটি চেয়ার নিয়ে কবিতা লিখতে চান, প্রথমে আপনাকে কল্পনা করতে হবে চেয়ারটি যদি জীবিত হতো তাহলে, তার চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা বা ভাবনা শক্তি কেমন হতো। আপনার কল্পনার জগতে আপনি বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করতে পারেন। সেসব কল্পনা আপনার কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন মানুষের কাছে।
কবিতা লেখার ধরন নির্ধারণ করতে হবে
আপনি কোন ধরনের কবিতা লিখতে চান তা নির্ধারণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কবিতা কোন ধরনের হবে, তাতে ছন্দ থাকবে কি না, এসব বিষয় চিন্তা করে কবিতার ধরন নির্ধারণ করা উচিত। কবিতা লেখার নিয়ম হিসেবে এই নিয়মকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
কবিতার ধরন
Acrostic: কবিতা প্রথম শব্দের প্রথম অক্ষরটি প্রত্যেক লাইনে উচ্চারণ হবে।
Free verse: কোন নিয়ম-কানুন ব্যবহার না করে, নিজের মতো কবিতা যেকোনো কিছু লিখে মনের ভাব প্রকাশ করা।
Haiku: এটি একটি সংক্ষিপ্ত কবিতা এবং এর নির্দিষ্ট সংখ্যার সিলেবল ব্যবহার করা হয় প্রত্যেক লাইনে।
I Am: সম্পূর্ণ কবিতাটি নিজের সম্পর্কে লেখা এবং অন্য কোনো নিয়মকানুন ব্যবহার না করা।
Narrative: সম্পূর্ণ কবিতাটি একটি গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করা।
Rhyming couplets: কবিতার ২টি লাইনের শেষ শব্দ, ছন্দ হিসেবে ব্যবহার হয়।
টাইটেল এবং কবিতার প্রথম লাইন দেখতে হবে
কবিতা লেখা শুরু করার আগে আপনাকে কবিতার একটি টাইটেল চিন্তা করে নিতে হবে। যখন আপনি কবিতার বিষয়, লেখার ধরন এবং ফরম্যাট পেয়ে যাবেন, তারপর আপনাকে কবিতার টাইটেল সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, কবিতার টাইটেল দেখে মানুষ আপনার কবিতা পড়বেন, তাই টাইটেলটি হতে হবে কবিতার বিষয়ের সঙ্গে মানানসই।
এরপর আপনাকে কবিতার প্রথম লাইন লিখতে হবে। কবিতা লেখার সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে কবিতার প্রথম লাইন গুছিয়ে লেখা। অনেক সময় আপনার কবিতা প্রথম লাইনটি আপনি আপনার কবিতার টাইটেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথম লাইনটি লেখা হয়ে গেলে, আপনি দ্রুত কবিতা শেষ করতে পারবেন।
কবিতার বাকি অংশ লিখতে হবে
কবিতার প্রথম লাইন লেখা হয়ে গেলে আপনি খুব দ্রুত কবিতা সম্পূর্ণ করতে পারবেন। কারণ, প্রথম লাইনের সঙ্গে বাকি সব লাইনের সম্পর্ক থাকে। কবিতার বাকি অংশ লেখার সময় আপনি পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করবেন, না অপূর্ণ বাক্য ব্যবহার করবেন, তা ভেবে নিতে হবে। কবিতা ছোট হবে না, বড় হবে তা বাকি অংশ লিখলে বুঝতে পারবেন।
কবিতার ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়া
যখন আপনার কবিতা লেখা শেষ হয়ে যাবে তখন আপনাকে কবিতাটি ভালো করে পড়তে হবে বারবার। কারণ, কবিতা বারবার পড়লেই আপনি আপনার ভুল-ত্রুটি ধরতে পারবেন। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, বানান ভুল থাকলে শুদ্ধ করা। ছন্দ এবং তাল ঠিক রাখা। কঠিন শব্দ ব্যবহার না করে সহজ শব্দ ব্যবহার করা। ধরন ঠিক রাখা। কবিতার বিষয়বস্তু ঠিক রাখা। মূলভাব প্রকাশ হয়েছে কি না, তা বিশ্লেষণ করা।
পরিশেষে
আশা করি কবিতা লেখার নিয়ম নিয়ে তেমন কোনো সংশয় নেই। কবিতা লেখার জন্য আপনাকে সাধারণ কিছু নিয়মকানুন জানতে হবে, নাহলে আপনার কবিতা ভালো হবে না এবং আপনি আপনার মনের ভাব মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারবেন না। আরও বিশদভাবে কবিতা লেখার নিয়ম জানতে চাইলে লাইব্রেরিতে এ সম্পর্কিত অনেক বই আছে, সেগুলো পাঠ করতে পারেন।
জাহ্নবী