একজন সফল উদ্যোক্তার গুণাবলি আসলে কী! আপনি যদি সফল উদ্যোক্তাদের জীবনী পড়েন তাহলে দেখবেন প্রত্যেকের মাঝে কমন কিছু গুণাবলি রয়েছে। আর তাদের ব্যবসায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে এই গুণাবলি ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আপনিও যদি সফল হতে চান, তাহলে একজন সফল উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য আপনাদের মাঝে ধারণ করতে হবে। লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
সফল উদ্যোক্তারা জানে কখন ‘না’ বলতে হয়
আপনি যখন একজন উদ্যোক্তা হবেন, তখন আপনার সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সুযোগ হাতছাড়া করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবে, কোন সুযোগটি নিতে হবে আর কোনটি বাদ দিতে হবে এটা জানা জরুরি। পৃথিবীতে অনেক উদ্যোক্তা ব্যর্থ হয়েছে শুধু ‘না’ বলতে না পারার কারণে। তারা সুযোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে চিন্তা করেনি, এটা তাদের জন্য উপকারী কি না। যাই হোক, এক্ষেত্রে মাস্টার ছিলেন সফল উদ্যোক্তা স্টিভ জবস। স্টিভ জবস জানতেন কখন ‘না’ বলতে হয়। ১৯৯৭ সালে অ্যাপেল কোম্পানিতে তিনি যখন পুনরায় আগমন করেন, তখন কোম্পানির ৩৫০টি পণ্য ছিল। কিন্তু জবস দুই বছরে ১০টির মতো প্রোডাক্ট বাদ দেন। তিনি ওই ১০টি প্রোডাক্ট ‘না’ করার মাধ্যমে অ্যাপেলের লাভবান প্রোডাক্টগুলোয় ফোকাস করতে পেরেছিলেন।
সফল উদ্যোক্তারা জানে কীভাবে ভালো টিম গঠন করতে হয়
যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান, তাহলে খুব দ্রুত বুঝতে পারবেন আপনি নিজেই সবকিছু করতে পারবেন না। একজন মানুষের পক্ষে কখনো সব বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া যেকোনো মানুষ, সে যতই বুদ্ধিমান, শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ হোক না কেন, নিজেদের দ্বারা কখনো সফলভাবে কোম্পানি চালানোর সম্ভব নয়।
সফল উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই বিশ্বস্ত, সৃজনশীল এবং দক্ষ মানুষের টিম গড়ার মাধ্যমে সফলতা পেয়েছেন। এই টিম হতে পারে দুজন কিংবা তারও বেশি। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অন্যদের সঙ্গে কাজ করা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। আমরা এখন যে উবার দেখি, এটা কিন্তু পাঁচ বন্ধু ফিলিপ ক্রিম, নিল পারিখ, টি লিউক শেরউইন, গ্যাব্রিয়েল ফ্ল্যাটম্যান এবং জেফ চ্যাপিনের উদ্যোগ।
মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়েই। তার টিম ওয়ার্ক সফল হওয়ার পরও বাদ যায়নি। অনিক্কা ফ্রেগোডট নামে নারী ইঞ্জিনিয়ার সাত বছর ধরে তার সহকারী ছিলেন। মার্ক জাকারবার্গ সফলতার অংশীদার। তাইতো তিনি তাকে, ফেসবুকের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। অ্যাপল সিইও, টিম কুকের কথাই ধরুন। তিনি খুব ক্যারিশমেটিক নেতা ছিলেন না, কিন্তু তারপরও স্টিভ জবস কুকের ওপর নির্ভর করেছিলেন। এটাই টিমওয়ার্ক।
সফল উদ্যোক্তারা প্রত্যেকের পরামর্শের গুরুত্ব দেন
যারা স্টিভ জবসের জীবনী পড়েছেন, তারা জানেন, তিনি কতটা কঠিন সময়ে কাজ করেছেন। এই কঠিন সময়গুলোয় তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছিল তার মেধাবী টিম তথা সহকর্মীরা। তার সহকর্মীরা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। যারা পর্দার অন্তরালেই কাজ করতেন। স্টিভ জবসকে পরামর্শ ও আইডিয়া দিতেন। রিচার্ড ব্র্যানসন তার তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের নীতির থেকে বলেন, ‘অন্যের কাছ থেকে শোনা আমাদের একে অপরের কাছ থেকে শিখতে সক্ষম করে।’
সফল উদ্যোক্তারা ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত থাকে
আপনি যদি অবিবেচক হন তাহলে, আপনি কখনো সাফল্য পাবেন না। আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। সবসময় মেনে নিতে হবে যে সেখানে ব্যর্থতা থাকবে, পাশাপাশি সফলতাও থাকবে। প্রায় প্রত্যেক সফল উদ্যোক্তার জীবনের কিছু ব্যর্থতার গল্প থাকে। স্টিভ জবসকে একপর্যায়ে অ্যাপল বোর্ড সিইও হিসেবে বহিষ্কার করেছিলেন। বহিষ্কার-পরবর্তী সময় তিনি নেক্সট এবং পিক্সার উন্নয়নে ব্যয় করেছিলেন। তারপর তিনি অ্যাপেলের মন জয় করেছিলেন এর মাধ্যমে।
স্টিভ জবস তার নির্মিত সফল কোম্পানি থেকে ব্যর্থ হয়ে মন হারায়নি। এটা শুধু তাকে ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে এবং আরও সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
অত্যন্ত কৌতূহলী
থমাস এডিসন থেকে আমরা কখনোই ফোনোগ্রাফ, মোশন পিকচার ক্যামেরা কিংবা দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাল্ব পেতাম না, যদি তিনি কৌতূহলী না হতেন। ইনোমের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও নবীন জৈন, তার পোস্টে এই বৈশিষ্ট্যের সারমর্ম তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো যারা বড় স্বপ্ন দেখে। সবসময় নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, পাগলাটে আইডিয়া থেকে সফলতার শুরু হয়। কৌতূহল যেকোনো সফল উদ্যোক্তার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সফল উদ্যোক্তারা তাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ডের প্রতি উদাসীন হয়ে থাকে না। তারা, নতুন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকে। নতুন কিছুতে বিনিয়োগ করে কৌতূহলের অবসান ঘটায়।
শেখার মধ্যে থাকেন
সফল উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো, তারা প্রায়ই অহংকারী হয় এবং বিশ্বাস করে যে তারা সবকিছু জানে। আপনার মধ্যে যদি এই ধারণা থাকে তাহলে, আজই তা পরিহার করুন। এটা সত্য, অধিকাংশ সফল উদ্যোক্তা প্রথম স্বীকার করেন যে তারা এটা জানেন না। কিন্তু তারা সেই অজানা বিষয়টিকে খুব দ্রুত আয়ত্তে নিয়ে আসেন। সত্যিকার অর্থে সফল হতে হলে জীবনে অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হয়। নতুন কিছু শেখার মানসিকতা থাকতে হয়। রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, শেখা এবং নেতৃত্ব একসঙ্গে যায়। সাফল্যগুলো ঘটে কাজ করা এবং শেখার মাধ্যমে।
সফল উদ্যোক্তারা পরিবার ও ব্যবসার মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে পারেন
সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে, তাদের ব্যবসা চালানোর চেয়ে জীবনে অনেক বেশি কিছু আছে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গেও আনন্দময় ও গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করেন। তারাও বিরতি নেন এবং ছুটি উপভোগ করেন। ওয়ারেন বাফেটকে একবার এক সভায় এমবিএ শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞেস করছিলেন, তার সাফল্যের কারণ। তিনি বলেছিলেন, আমার সফলতার নিজেকে সময় দেওয়া এবং ঘুরে বেড়ানো। আপনার জীবনের সম্পূর্ণ সময়টা ব্যবসার পেছনে দিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো আপনি ব্যবসায় হয়তো সফল কিন্তু জীবনের দিক দিয়ে ব্যর্থ। কারণ মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে আপনি বঞ্চিত হয়েছেন।
পরিশেষে
রিচার্ড ব্র্যানসন, স্টিভ জবস, ল্যারি পেজ, ওয়ারেন বাফেট এবং বিশ্বের সবচেয়ে সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে উপরে উল্লেখিত প্রতিটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। সফল হতে, আপনিও নিজের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসুন।
জাহ্নবী