টিনএজাররা বদলে দিচ্ছে পৃথিবী। প্রযুক্তির পৃথিবীতে আবিষ্কার করছে নানান কিছু। তেমনি কিছু টিনএজারের উদ্ভাবন নিয়ে জানাব আজকে।
সিসা পরীক্ষায় টেস্ট কিট
আমেরিকার মিশিগানের টিনএজার গীতাঞ্জলি রাও। মিশিগানের একটি বড় সমস্যা ছিল পানিতে সিসার উপস্থিতি । খাবার পানিতে সিসা সেখানে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। সিসা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। গীতাঞ্জলি এটা পরিবর্তনে কিছু করতে চেয়েছিল। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী গীতাঞ্জলি পানি পরীক্ষার জন্য এক ধরনের টেস্ট কিট আবিষ্কার করে, যা দিয়ে স্মার্টফোনের সাহায্যে পানি পরীক্ষা করা যাবে। টেথিস নামে এই উদ্ভাবনটি কার্বন ন্যানোটিউব সেন্সরের সাহায্যে পানিতে থাকা সিসা শনাক্ত করে এবং শনাক্ত করার পর টিউবের আরডুইনো প্রসেসর ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে ফলাফল পাঠায় মোবাইলে। এভাবেই জানা যায় পানিটি নিরাপদ কি না। গীতাঞ্জলি রাও চেয়েছিল কীভাবে সস্তায় পানিতে থাকা সিসা শনাক্ত করা যায়। কেননা সিসা শুধু মিশিগানে নয়, পৃথিবীর আর অনেক জায়গার জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। গীতাঞ্জলি রাও মাত্র ১১ বছর বয়সে এটি উদ্ভাবন করেছিল। এই উদ্ভাবনের জন্য সে ২০১৭ সালে ডিসকভারি এডুকেশন থ্রি-এম ইয়াং সায়েন্টিস্ট চ্যালেঞ্জ জিতেছে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্মার্ট জুতা
ভারতের আসাম রাজ্যের এক টিনএজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বানিয়েছে এক বিশেষ জুতা। অঙ্কুরিত কর্মকার নামে এ টিনএজারের বাড়ি আসামের করিমগঞ্জে। দশম শ্রেণির এই ছাত্র উদ্ভাবন করেছে স্মার্ট জুতা। এই স্মার্ট জুতা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পথ চলতে সাহায্য করবে। দেখতে সাধারণ জুতার মতোই। তবে এই স্মার্ট জুতায় সংযোজন করা হয়েছে কিছু প্রযুক্তি। অঙ্কুরিত এখানে স্থাপন করেছে এক ধরনের সেন্সর। এই সেন্সর জুতা সামনের বাধা শনাক্ত করতে পারে। পথের বাধা শনাক্ত করে এই সেন্সর একটি অ্যালার্ম বাজাবে। জুতার নিচে স্থাপন করা এই সেন্সর চালাতে লাগবে ব্যাটারি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় অঙ্কুরিত এই জুতা বানায়। এই টিনএজার জানায়, তার জীবনের লক্ষ্য বিজ্ঞানী হওয়া। সে বিজ্ঞানী হয়ে আরও ভালো কিছু করতে চায় যা মানুষকে সাহায্য করবে।
আলঝেইমার রোগে অ্যাপ
আলঝেইমার এক ধরনের বার্ধক্যজনিত রোগ। বৃদ্ধদের প্রায়ই এই রোগে ভুগতে দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবকিছু ভুলে যায় এবং পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারেন না। সাত বছর বয়সী এমার দাদিরও একই রোগ হয়। প্রায়ই তার দাদি সবকিছু ভুলে যেত। তাই অল্প বয়সে কোডিং শেখা এমা ইয়াং সিদ্ধান্ত নেয় আলঝেইমার রোগীদের সাহায্যের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করবে। তারপর সে একটি অ্যাপ তৈরি করে, যার নাম টাইমলেস। এই মোবাইল অ্যাপ আলঝেইমার রোগীদের তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সাহায্য করে। এই অ্যাপে আলঝেইমার রোগীরা তাদের পারিবারিক ছবিগুলো স্ক্রল করবে। তার বন্ধুবান্ধবদের ছবি স্ক্রল করতে পারবে এবং এসব ছবিতে তাদের নাম-পরিচয় থাকবে, যাতে রোগীরা বারবার ভুলে না যায়। এই অ্যাপের গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো মুখ শনাক্তকরণ। যদি রোগীরা কাউকে চিনতে না পারে তবে সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যাপ দিয়ে ছবি তুললে তার চেহারা শনাক্ত করে দেবে। এআই এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধারণাটি বাস্তবে রূপ দিয়েছে এমা। তাছাড়া ফোন নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য থাকবে এই অ্যাপে। এমা ইয়াংয়ের বয়স যখন ১৪ বছর তখন সে এই অ্যাপ ডেভেলপ করে। এমা ইয়াংয়ের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা টেকনোভেশন চ্যালেঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এবং বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। যে একজন কোডার এবং উদ্ভাবক। সে এমন প্রযুক্তি বানাতে চায় যা মানুষের উপকারে আসবে।
মেহেদী আল মাহমুদ