টিনএজারদের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় চলে টপাটপ ছবি তোলা। কিন্তু সেই ছবিটা কি মানসম্পন্ন হয়? অনেক সময় হয় না, তাই তো? চিন্তা নেই। কিছু নিয়ম জানা থাকলে স্মার্টফোনেও ভালো ছবি তোলা সম্ভব হবে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
স্মার্টফোনে যারা ছবি তোলেন তাদের জন্য এই পরামর্শগুলো প্রয়োজন হতে পারে। এগুলো মনে রাখলে ভালো মানের ছবি তুলতে পারবেন।
লেন্স রাখুন পরিষ্কার
স্মার্টফোন সাধারণত অনেকক্ষণ হাতে, পকেটে বা ব্যাগে থাকে। তাই লেন্সের ওপর তেল-ময়লা জমতে পারে। ছবির ওভারল্যাপিং বন্ধ করতে ছবি তোলার আগে লেন্স পরিষ্কার করুন। লেন্স পরিষ্কার করার সময় যাতে দাগ না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকুন।
হাত কাঁপলে ছবি ভালো হয় না
ঝড়ো আবহাওয়া বা তীব্র শীতে হাত কাঁপে! হাত কাঁপলে ছবি ভালো হবে না। ছবি তোলার সময় স্থির হয়ে ছবি তুলুন। ছবি তোলার সময় ফোনটির ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি।
আলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ
স্বাভাবিক আলো ছবির জন্য ভালো। কিন্তু অনেক সময় স্বাভাবিক আলো অন্য বস্তুর ওপর ছায়া ফেলে। ছবির অতিরিক্ত আবছাভাব দূর করতে দিনের বেলাতেও ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ক্যামেরায় যদি পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী আলো ঠিকঠাক করে নেওয়ার সুবিধা থাকে, তবে অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিন। এতে আপনার ছবি হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে নিতে পারবে।
বিভিন্ন কোণ থেকে চেষ্টা করুন
যখন আলো নিয়ে আপনার বিশেষ কিছু করার থাকবে না বা আপনার পছন্দ অনুযায়ী শট নিতে পারবেন না, তখন ভিন্ন কোণ থেকে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, যদি একই বস্তু বা দৃশ্যের একাধিক ছবি তোলার সুযোগ থাকে, তখন বিভিন্ন কোণ থেকে তা করা উচিত। এতে আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবিটি ঝাপসা বা অনেক বেশি আবছা এলেও বিভিন্ন কোণ থেকে তোলা ছবি ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে, যা কাজে লাগবে।
ফোনের ক্যামেরার সর্বোচ্চ রেজুলেশন নিন
আপনার স্মার্টফোনে যদি ছবির আকার বাড়ানো-কমানোর অপশন থাকে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাপের ছবি তুলুন। সাধারণত ছবি যত বড় হবে, তত বেশি ডিটেইল আপনার ছবিতে ধারণ করতে পারবেন। ছবি রিসাইজের সুবিধা পেতে এবং ঝকঝকে পরিষ্কার ছবি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ রেজুলেশনের ছবি তোলার বিকল্প নেই।
ডিজিটাল জুমকে না বলুন
তত্ত্বের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জুম ভালো একটি ধারণা হতে পারে, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ডিজিটাল জুম করে তোলা ছবিটি আশানুরূপ নাও হতে পারে। পক্ষান্তরে আপনি যে বস্তুর ছবি তুলছেন তার কাছে গিয়ে আপনার সাবজেক্টের ছবি তুলতে পারেন এবং যদি ক্ষুদ্র কোনো বস্তুর পরিষ্কার ছবির ক্লোজ শট দরকার হয়, তখন তার কাছে গিয়ে জুম ব্যবহার করতে পারেন। যতটা সম্ভব কাছাকাছি গিয়ে ছবি তোলা ভালো।
ক্যামেরার মোড দেখে নিন
কোনো ক্ষুদ্র বস্তুর পরিষ্কার ছবি তোলার সময় ম্যাক্রো মোডে তুলতে পারেন। ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনে এই মোডটি পাবেন। তবে ল্যান্ডস্কেপ বা পোর্টেট মোডে ছবি তোলার সময় ম্যাক্রো মোডটি বন্ধ করতে ভুলবেন না। কিছু ক্যামেরা অ্যাপ্লিকেশনে ম্যাক্রো মোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রথমবারে ছবি তোলার সময় ক্যামেরা মোড পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। ম্যাক্রো মোড ছাড়াও ডেলাইট, ফ্লুরোসেন্ট প্রভৃতি মোডও ক্যামেরায় পাবেন।
রেসপন্স টাইম সম্পর্কে ধারণা নিন
আপনার স্মার্টফোনে ছবি তোলার সময় ডিজিটাল শাটার বাটন চাপ দেওয়ার এবং ছবি ওঠার সময়ের মধ্যে কিছুটা সময়ের পার্থক্য থাকে। বাটন চাপার কিছুক্ষণ পর ছবি ওঠে। এই ক্ষুদ্র সময়টুকু কতক্ষণ সেটা জানা থাকলে ভালো ছবি ও ঘোলাটে ছবির মধ্যে পার্থক্য বের করতে পারবেন। কয়েকটি ছবি পরীক্ষামূলকভাবে তুলে আপনার স্মার্টফোনের রেসপন্স টাইম জেনে রাখুন। এতে সুন্দর ছবি তোলার সময় শাটার বাটন চাপার পর আপনাকে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে তার ধারণা পাবেন।
অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিতে পারেন
আপনি যদি আশানুরূপ ছবি তুলতে না পারেন এবং ছবি তোলার সময় যদি দ্রুত শেষ হয়ে যেতে থাকে, তবে অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন ছাড়াও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের জন্যও অ্যাপ্লিকেশন পাবেন। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ‘ক্যামেরা ফর অ্যান্ড্রয়েড’, ‘স্ন্যাপ ক্যামেরা এইচডিআর’, ‘ক্যামেরা৩৬০আল্টিমেট’, ‘বেস্ট এইচডিআর ক্যামেরা’; আইফোনের জন্য ‘সাইক্লোরোম্যারিক’, ‘ক্যামেরা প্লাস’, ‘ফটোসিনথ’, ‘ভ্যাসকোক্যাম’, ‘ক্যামেরা প্রো’ উইন্ডোজের জন্য ‘সুপারক্যামেরা’, ‘লেজিলেন্স’, স্কেচক্যামেরার মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলো কাজে আসতে পারে। এসব অ্যাপ্লিকেশন রঙ, কোণ ঠিকঠাক করে বেঠিক ছবিকেও সুন্দর করতে পারে।
মোবাইল ধরবেন যেভাবে
নতুন মোবাইল ফোন হাতে নিয়েই ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। স্মার্টফোনের নতুন চিত্রগ্রাহকরা তার হ্যান্ডসেটটি ঠিকমতো ধরলে উন্নতমানের ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে পারবেন। গবেষকদের পরামর্শ হচ্ছে, ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময় অবশ্যই মোবাইল ফোনটি আনুভূমিকভাবে বা আড়াআড়ি ধরবেন।
ছবি এবং ভিডিও তোলার ক্ষেত্রে ফ্রেমিং
মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল এবং ভার্টিক্যাল ফ্রেম ব্যবহার করা । হরাইজেন্টাল ফ্রেমে ছবি তুললে দুই পাশের অনেক বেশি বিষয়বস্তু রাখা সম্ভব। আর ভার্টিক্যালের ক্ষেত্রে ওপর থেকে নিচে অর্থাৎ লম্বা বিষয়বস্তুর ছবি তোলার ক্ষেত্রে ভালো হবে। কিন্তু ভিডিও করার ক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল ফ্রেম ব্যবহার করা উচিত। এতে ভিডিওধারণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভিডিও আপলোডের ক্ষেত্রে হরাইজেন্টাল ফ্রেমকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বর্তমানে মোবাইলের ছবি তোলার সুবিধাকে মাথায় রেখে স্কয়ার ফ্রেমেও ছবি তোলা হয়ে থাকে। যেমন ইনস্টাগ্রামের ফ্রেমটা হচ্ছে স্কয়ার ফরম্যাটের। মোবাইলের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই ছবি তোলা এবং ভিডিও করা এই অপশনগুলো বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেহেদী আল মাহমুদ