নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন ‘কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন’-এর আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার-২০২৪-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন ফাতিন সাদাব লিয়ান। শিশুদের নোবেল পুরস্কারখ্যাত এই শান্তি পুরস্কারে বাংলাদেশ থেকে সে স্বাস্থ্য বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য এবং রক্তের অভাব মোকাবিলায় রক্তদানে বিশেষ অবদান রাখায়। ফাতিন সাদাব লিয়ান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৭ বছর বয়সী ফাতিন সাদাব লিয়ান শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে।
করোনা মহামারিতে অধিকাংশ মানুষ যখন অর্থনৈতিক দুর্দশায় মানসিক হতাশায় ভুগে, তখন বিষয়টি ফাতিনকে ভাবায়। বন্ধুদের বিষণ্নতা তাকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবায়। একজন প্রতিবেশী এবং একজন স্কুল সিনিয়রের আত্মহত্যার কথা শোনার পর, সে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হতাশা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সোলাস টু ইয়ুথ নামক একটি সংস্থা শুরু করেছিল। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ইতিবাচকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শুরু করল ব্লগ। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক ব্লগের পাশাপাশি, উদীয়মান তরুণ তারকাদের ইচ্ছা ও কর্ম অভিজ্ঞতা তুলে ধরতো ব্লগের মাধ্যমে। তারা স্কুল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্যাম্পেইন ও পরিসংখ্যান করে।
২০২১ সালে করোনা মহামারিতে অধিকাংশ মানুষ যখন নানা কারণে মানসিক হতাশায় ভুগছেন, তখন নিজের বন্ধুদের বিষণ্নতার কথা শুনে অনেকটা চমকে উঠে ফাতিন। মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শুরু করেন ব্লগ। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক ব্লগের পাশাপাশি, উদীয়মান তরুণ তারকাদের ইচ্ছা ও কর্ম অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ব্লগের মাধ্যমে। ২০২১ সালের প্রায় শেষে নিজের স্কুল সিনিয়রের আত্মহত্যার কথা শুনে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য সোলাস টু ইয়ুথ নামক সংগঠন শুরু করে। সে স্কুল পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্যাম্পেইন ও পরিসংখ্যন করে। সোলাস টু ইয়ুথের যাত্রাকে অন্যমাত্রায় পরিণত করতে কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ফাতিন ও তার সংগঠন। ফাতিনের ইচ্ছা, কিশোর-কিশোরীদের সমস্যা তুলে ধরার মতো ব্যবস্থা করা। মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও গুরুত্ব দিতে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ মনোবিজ্ঞানীদের নিয়ে আলোচনা সভা করে কিশোর-কিশোরীদের সমস্যা সবার সামনে তুলে ধরা এবং এর সমাধান করা। তাছাড়া সে বাংলাদেশে সাইবার বুলিং সমস্যা মোকাবিলার জন্য একটি সংগঠন ‘টিনস ফর বিডি’ প্রতিষ্ঠা করে।
ফাতিনের আরেকটি উদ্যোগ ব্লাডব্যাগ। ২০২২ সালে তার স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশুর রক্তবিষয়ক সমস্যার কথা জানতে পেরে, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র রিজওয়ানুল হক এবং ময়মনসিংহের ফজলে রাব্বিকে নিয়ে রক্তদান প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, জনপ্রিয় এবং রক্তদানকারী এবং গ্রহীতার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরু করেন ব্লাডব্যাগ। ব্লাডব্যাগ এখন ওয়েব অ্যাপভিত্তিক আকারে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামে। ব্লাডব্যাগের সেবাকে আরও উন্নত করে, ব্লাডব্যাগকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চায় ফাতিন। ব্লাডব্যাগ ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান The Resolution Project থেলে ফেলোশিপ পায় এবং ২০২২ সালে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে ব্লাডব্যাগ।
ফাতিন বলে, ‘একটি উন্নত বিশ্ব তৈরি করতে চাইলে অবশ্যই আমাদের শিশুদের মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তাদের মধ্যে ভালো আচরণ এবং সহানুভূতি তৈরি করতে হবে।’ তাছাড়া সে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের শিশুদের সৃজনশীলতাকে সামাজিক এবং উন্নয়নমূলক কাজে লাগালে সব সমস্যার জয় হবে।
আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন পাওয়ায় ফাতিন ও তার সহকর্মীরা কাজের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য মানসিক শক্তি পাবে বলে আশা করে সে। এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তাকর্মী সাদাত রহমান আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পায়। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুরস্কার ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের শিশু অধিকার কর্মীরা শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। চলতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক শিশুকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। উল্লেখ্য নভেম্বরে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
মেহেদী আল মাহমুদ