বেশির ভাগ টিনএজার এখন ইউটিউবার হতে চায়। কেউ পাকাপাকিভাবে তো কেউ শখের বশে। তবে চাইলেই তো আর সফল ইউটিউবার হওয়া যায় না। সেজন্য চাই যথাযথ গাইড। আজ আমরা জানব সফল ইউটিউবার হওয়ার কিছু উপায়। জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
বিষয় নির্ধারণ করুন
ইউটিউবার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার আগে নির্ধারণ করুন কোন বিষয়ে আপনি ভিডিও করবেন। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী, সে বিষয়ে কাজ করলে ভালো হবে। ধরুন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে এক্সপার্ট তাহলে এ সম্পর্কে ভিডিও তৈরি করে টাকা রোজগার করতে পারেন। এক কথায় আপনি যা পারেন, যে বিষয়ে দক্ষ বা ভালো পারেন সে বিষয়ে আপনি অন্যকে শিখাতে পারবেন।
অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন
আপনাকে জানতে হবে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা। কত বছর বয়সী মানুষের জন্য আপনি ভিডিও তৈরি করছেন এবং আপনার ভিডিওর বিষয়বস্তু কতটা উপকারী হবে অডিয়েন্সের জন্য। এটাও জানতে হবে যে, আপনার বিষয়ে অডিয়েন্স কী কী জানতে চাচ্ছে। তাদের কোন বিষয় পছন্দ আর কোন বিষয় পছন্দ না। সঠিক অডিয়েন্স বেছে নেওয়ার মাধ্যমে সফলতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।
আপনার কম্পেটিটর কারা তা জানুন
আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে জানার পর আপনার প্রথম কাজ হলো আপনার বিষয়ে কারা অলরেডি ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করেছে তাদের সম্পর্কে জানা। তারা হচ্ছে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী। খুঁজে বের করুন তাদের সফল হওয়ার রহস্য। তাদের ওয়েবসাইট দেখুন, আর্টিকেলগুলো পড়ুন। তাদের ভিডিওগুলো মনোযোগ সহকারে দেখুন। তাদের দুর্বলতাগুলো বের করুন। তাদের ভালো দিকগুলো বের করুন। এবার চিন্তা করুন কীভাবে আপনার প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে আপনার ভিডিও প্রমোট করবেন। কোন বিষয়গুলো অ্যাড করলে অতি সহজে প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে আপনি সফল হতে পারবেন তা জানুন।
নিজের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ করুন
জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ইউটিউব একটি। সুতরাং ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্মে ভালো করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল মানুষ হতে হবে। আপনার চ্যানেলের জন্য নতুন নতুন আকর্ষণীয়, মজাদার ইউনিক ভিডিও তৈরি করতে হবে, যা ইতোমধ্যে কেউ তৈরি করেনি। আপনার ভিডিও বা কনটেন্টের ভেতরে ইউনিকনেস আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। তাই নিজের মধ্যে সৃজনশীলতা খুঁজুন এবং তা বের করে ছড়িয়ে দিন, জানিয়ে দিন বিশ্বকে।
এসইও ও ট্যাগ করুন
সবার জানা যে এসইও হলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। একমাত্র এসইও ফর্মুলাই পারে আপনার ভিডিওকে ভাইরাল করতে এবং অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে আপনার ভিডিও পৌঁছে দিতে। সহজভাবে ইউটিউব এসইও করা যায়। ইউটিউব এসইও বলতে, ভিডিওর টাইটেল, ট্যাগ, থাম্বনেইল, কি-ওয়ার্ড রিসার্চ, ডেসক্রিপশন এগুলো বুঝিয়ে থাকে। আপনাকে অবশ্যই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে টাইটেল এবং ডেসক্রিপশন সুন্দর করে লিখতে হবে।
হাই কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করুন
আপনি যে ভিডিও তৈরি করুন না কেন তা অবশ্যই হাই কোয়ালিটির হতে হবে। হাই কোয়ালিটি বলতে Full HD (1080p/4k) হতে হবে এমন কিছু না। যদি টাইটেল, থাম্বনেইল, ট্যাগ, ডেসক্রিপশন, ভিডিও টপিক, সাউন্ড কোয়ালিটি ইত্যাদি ঠিক থাকে তাহলে 360p/480p রেজল্যুশনের ভিডিও কাজে দিতে পারে। অনেক ট্রাফিক আসতে পারে। মজার বিষয় হচ্ছে, যদি আপনার কনটেন্ট ভালো না হয় তাহলে ট্রাফিক এসেও লাভ হবে না। তাই ট্রাই করুন কনটেন্ট এর মান বৃদ্ধি করার।
ভিডিও লেন্থের দিকে লক্ষ রাখুন
ভিডিও অবশ্যই ১০ মিনিটের বেশি হতে হবে। কারণ ইউটিউব ভিউ টাইম দেখে। দর্শক বেশি সময় ধরেই ভিডিও দেখুক, ইউটিউব তা পছন্দ করে। ধরুন আপনি ১০ মিনিটের একটি ভিডিও অনেক কষ্ট করে তৈরি করছেন এবং ইউটিউবে সাবমিট করছেন, তবে ভিউয়াররা শুধু ৩০ সেকেন্ড বা ৫০ সেকেন্ড অথবা ১ মিনিট দেখে তার পর আস্তে করে ভিডিও থেকে চলে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন আপনার রিচ কমে যাচ্ছে। তখন ইউটিউব তার এলগারিদম দিয়ে বুঝতে পারছে যে, আপনার ভিডিওতে বিশেষ কিছু নেই যা দেখে দর্শকরা বেশিক্ষণ থাকছে না। অন্যদিকে ২০ মিনিটের ভিডিওটি অন্তত পাঁচ সাত মিনিট ধরেই লোকেরা দেখলে তখন ইউটিউব অনেক মানুষের সামনে সাবমিট করবে। ফলে আপনার ভিডিওটি অতি তাড়াতাড়ি ভাইরাল হয়ে যাবে। এর এজন্য ভিডিও লেন্থের দিকে লক্ষ রাখুন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এত বেশি যে, কারা ব্যবহার করে না তা বের করা সম্ভব। আপনি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে ভিডিও শেয়ার করুন। এতে করে কী হবে জানেন? আপনার ভিডিও কতটা ভালো বা কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়েছে বুঝতে পারবেন। কীভাবে? তা হচ্ছে যদি আপনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে না চান, তাহলে ধরেই নিতে হবে আপনার নিজের পছন্দ হয়নি। একটু ভাবুন তো যে ভিডিও আপনার পছন্দ না, সেই ভিডিও কি অন্য মানুষের পছন্দ হবে? এজন্য নিজের কাছে ভালো লাগে এমন কনটেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।
ধৈর্য ধরুন
দু-একটি ভিডিও তৈরি করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দিলেন এরপর স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন যে আপনি এখন সফল ইউটিউবার হয়ে যাবেন, এমন স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেন। এখানে সফল হতে অনেক ধৈর্য ধরেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ধৈর্যের মতো মূল্যবান অভ্যাস যদি আপনার না থাকে, তাহলে এটা আপনার জন্য না।
মেহেদী আল মাহমুদ