ঘড়ির কাঁটা রাত ১১টা ছুঁতে চলল। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য এখনো কয়েকটি প্যাকেট রয়ে গেছে। এগুলো বিতরণ শেষ করেই বাড়ি ফিরতে হবে। আকস্মিক বন্যায় নিজ এলাকা মেঘা ও তার আশপাশের অঞ্চলের মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রায়ই মধ্যরাতে বাড়ি ফেরা হয় শাকিলের।
বিগত বছরগুলোর বন্যার চেয়ে এবারের মতো খারাপ পরিস্থিতি শুধু শাকিলই নয়, চাটখিলবাসীও দেখেনি। যে কারণে একদমই কাছ থেকে তিনি পানিবন্দি মানুষের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করেছেন। ছুটে গেছেন মানুষের সেবায়, বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে। তার মানবিকতাবোধ নাড়া দেয় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের। তাদের ফান্ডিং আর শাকিলের স্বেচ্ছাশ্রম মিলেই চলে সামাজিক সব সেবামূলক কার্যক্রম। নিজ দায়িত্বে সকাল কিংবা রাত, হাঁটু থেকে কোমর পানি ভেঙে একাই কাঁধে নিয়ে সাত শতাধিক মানুষের কাছে উপহারসামগ্রী পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছেন। এলাকায় শাকিল একজন রিয়্যাল হিরো। যেকোনো দুর্যোগে পাশে দাঁড়ানোর সারিতে প্রথমেই আসে শাকিলের নাম।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার উত্তর পশ্চিম সীমান্তের গ্রাম মেঘার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন শাকিল চাটখিল সরকারি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০১৮ সাল থেকেই তার মানবিক কর্মকাণ্ড আজ অবধি চলমান। জীবনে প্রথম রক্তদান করে বাবার হাতে মার খেয়েছিলেন শাকিল। এতে তার জেদ বেড়ে যায়। প্রতিজ্ঞা করেন আজীবন মানুষের পাশেই থাকবেন। এর পর জার্নি শুরু হয় চক্ষু রোগীদের ছানি অপারেশনে সার্বিক সহায়তা দানের মধ্য দিয়ে। এ পর্যন্ত উপজেলার চার শতাধিক চক্ষু রোগীকে ঢাকার লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে এনে সেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় রক্তদান, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, শীতবস্ত্র বিতরণ, গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বিবাহ কার্যক্রমে ফান্ড সংগ্রহে সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রম করেছেন।
শাকিলের স্বেচ্ছাসেবায় এতদূর আসার পেছনে মাইনুদ্দিন জিল্লাল মুন্সির অবদান অনস্বীকার্য। দিন বা রাত যখনই শাকিলের ফোনে কোনো আবদার আসে কিংবা স্বেচ্ছাসেবার ডাক আসে তখনই তিনি ছুটে যান নির্দ্বিধায়। স্বেচ্ছাসেবার অর্ধ যুগে বিভিন্ন সময় স্টুডেন্ট ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, অল অব ওয়ান বিডি, ব্লু ফোরাম চাটখিল, বিডি ক্লিন চাটখিলের সঙ্গে কাজ করেছেন। নিজ হাতে কারও সহযোগিতা করতে পেরে নিজে যেমন আনন্দ পান, পাশাপাশি সেবামূলক কার্যক্রমে কেউ খুশি হয়ে যখন মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দেয় তখন আরও খুশি হন। শতগুণ উদ্যম নিয়ে এগিয়ে যান আরও সামনে।
মেহেদী আল মাহমুদ