শখের বসে মানুষ কত কিছুই না করে। কেউ ছবি আঁকে, গান গায়, কবিতা আবৃত্তি করে। আরও কত কী। নেহাত শখের বসে তার ছবি তোলার শুরু। কাকা ছবি তুলতেন। সেটা দেখেই তার ইচ্ছে হয়। এমন সুন্দর ছবি আমিও তো তুলতে পারি। এ ইচ্ছেটাই তাকে ছবিতে একের পর এক সফলতার মুখ দেখাচ্ছে। ছবি তুলে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার প্রাইজবন্ড পেয়েছেন তিনি। এতক্ষণ যে মানুষের কথা বলা হলো, তিনি হলেন আবুল হাসনাত রিজভী। নোয়াখালী সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এ সৌন্দর্য রিজভীকে খুব টানে। তাই যখন সময় পান ছুটে যান প্রকৃতির কাছে। একের পর এক ক্যামেরার ক্লিক তাকে অন্য জগতে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ছবি তুলে আমার দেশের সৌন্দর্য পুরো বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে আমি ছবি তোলা বেছে নিয়েছি।
ছবি তুলতে তুলতেই রিজভীর ছবি তোলা শেখা। ইউটিউব, গুগল থেকে সাহায্য নেন সবসময়। আবার প্রয়োজন মনে করলে অভিজ্ঞদের সঙ্গে টুকটাক আলাপ করে নেন। ছবি নিয়ে এ পর্যন্ত অনেকগুলো এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন রিজভী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার দর্পণ এক্সিবিশন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এক্সিবিশন।
ছবি তুলতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় রিজভীকে। নানা মানুষের, পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় হয়। আবার ক্যাম্পাসে তার এক ভিন্ন পরিচয় গড়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো তার ভালো লাগে। ভালো ছবি তুললে তো পুরস্কার পাওয়ারই কথা। রিজভী ছবির জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ছবিতে তার প্রথম পুরস্কার ছিল প্রথম আলো বিজ্ঞান চিন্তা ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার পুরস্কার, যেটা পেয়েছেন ডিসেম্বর ২০২৩-এ। এর বাইরে ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ Best Bengal Mobile Photography একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০০ ছবি জমা পড়ে এবং সেরা ১০ নির্বাচন করা হয়। এই সেরা দশে রিজভী একজন। আবার ২০২৩ সালে তোমার চোখে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় নোয়াখালীর হয়ে আইফোন পুরস্কার জেতেন রিজভী। এ প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে ১ হাজার ১৪০টি ছবি জমা পড়ে। প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এ ছাড়া রিজভী প্রথম আলো, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, রয়্যাল ডিস্ট্রিক্ট নোয়াখালী কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন।
ফেসবুকে রিজভীর ছবিগুলোয় শত শত লাইক, কমেন্ট পড়লেও সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিল একটা মসজিদের ছবি। যেটিতে ১০ হাজারের ওপর লাইক পড়েছিল। এত অর্জন থাকলেও রিজভী শুরুতে নানা কথা শুনেছেন। বন্ধু, এলাকার অনেকেই বলত, এসব ছবি তুলে কী হবে। শেষমেশ পড়াশোনা গোল্লায় যাবে। এসব কথায় রিজভী কান দেননি। কারণ, আত্মবিশ্বাস ছিল তিনি ছবি তোলায় ভালো করবেন। ছবি তোলার অনেক গুণ আছে। যা পড়াশোনর জন্য, মেধা বিকাশের জন্য ভালো। রিজভী বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের কাজ মেধা বিকাশ করে। মাদক ও বাজে আড্ডার মতো কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে। দেশের আনাচে-কানাচে আরও ঘুরবেন। দেশের সৌন্দর্য পুরো পৃথিবীতে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন। এমনটাই তার আগামী দিনের পরিকল্পনা।
মেহেদী আল মাহমুদ