ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিক্ষকতা করতে চান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাঈম

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ পিএম
শিক্ষকতা করতে চান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাঈম
নাঈম হোসাইন

দেখতে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মনে হলেও আর দশজন মানুষের মতো নন নাঈম হোসাইন। জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন তিনি। অন্য সবার মতো সুন্দর এই পৃথিবীকে একনজর দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। চোখে দেখতে পান না বলে কি স্বপ্ন দেখতে পারবেন না? তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এবং স্বপ্ন দেখেই চলেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল তাকে নিয়ে গেছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। অনেকটা দুঃসাধ্য সাধন করে নাঈম ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন তিনি স্বপ্ন দেখেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষক হওয়ার।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাঈম হোসাইন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে নাঈম সবার ছোট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শুধু নাঈম নন, তার অন্য ভাইবোনেরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জন্মের পর এই পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য দেখতে পারেননি কেউই। তবে শারীরিক সেই প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা প্রত্যেকেই ভর্তি হয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাঈমের বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। আর বড় বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
ছোটবেলা থেকে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন নাঈম হোসাইন। নাঈম নিজের অদম্য মনোবলকে পুঁজি করে এগিয়ে গেছেন স্বপ্ন জয়ের কণ্টকাকীর্ণ পথে। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি।
নাঈম যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন, তখন তার এলাকার এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। পিতা-মাতার অনুপ্রেরণা ও শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়ার সার্বিক সহযোগিতায় তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বন্ধুদের সহযোগিতায় চলাফেরা করতে হয় তাকে। মোবাইল ফোনে স্ক্রিন রিডার অ্যাপসের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মোবাইল ফোনে পিডিএফ বই পড়েন নাঈম। একবার কোনো জায়গায় গেলে দ্বিতীয়বার একাই যেতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি একা করতে পারেন। কারও সহযোগিতাও প্রয়োজন হয় না তার। তবে পরীক্ষার সময় শ্রুতলেখক হিসেবে কারও সাহায্য নিতে হয় তাকে।
নাঈম হোসাইন বলেন, ‘আমি মোবাইল ফোনের স্ক্রিন রিডার অ্যাপের মাধ্যমে পড়াশোনা করি। আর পরীক্ষায় বিভাগের জুনিয়র কিংবা অন্য বিভাগের বন্ধুকে শ্রুতলেখক হিসেবে নিয়ে আসি। প্রশ্নের উত্তর আমি মুখে বলি, তারা লিখে দেয়। আমার বই পড়তে খুব ভালো লাগে। তাই আমি মোবাইল ফোনে পিডিএফ বইগুলো পড়ি। কিন্তু সব বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ পাওয়া যায় না। ফলে আমাকে একটু ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’

 

মেহেদী

ডাঙায় পা রাখেনি যে কিশোররা

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
ডাঙায় পা রাখেনি যে কিশোররা
ব্রুনেই দেখা মেলে বাজাউ উপজাতির। ছবি: সংগৃহীত

রূপকথার কোনো মৎস্যকন্যা বা মৎস্যমানব নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজাউ উপজাতিরা আমাদের মতোই মানব সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তাদের দেখা মেলে না পৃথিবীর স্থলভাগে। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মাছের মতোই সমুদ্রে বাস করেন তারা।

বৈচিত্র্যময় জীবন
বাজাউদের দেখা মেলে ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন উপসাগরে। সুলু, জাভা, ফ্লোরেস, সাভু এসব সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় তারা। সমুদ্রে অগভীর জায়গায় বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করে অস্থায়ী ঘর। মোবাইল ব্যাগের মতো এসব ঘর কিছুক্ষণের মধ্যেই খুলে স্থানান্তরিত করা যায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। খাবারের জন্য সমুদ্রের গভীরে গিয়ে ধরে আনে স্কুইড, অক্টোপাস ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ। সমুদ্রের এসব প্রাণীই বাজাউদের প্রধান খাবার। টাকা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া আমাদের পক্ষে হয়তো এক দিনও টিকে থাকা সম্ভব নয়। বাজাউদের অভিধানে টাকা ও প্রযুক্তি বলে নেই কোনো শব্দ। সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষদের মাছের বিনিময়ে নিজেদের জন্য জামাকাপড় সংগ্রহ করে তারা।

ব্যতিক্রমী শরীরী বৈশিষ্ট্য
বাজাউ কিশোররা বড় হয়ে উঠে সমুদ্রের নিচে খেলতে খেলতে। বাজাউ নারী-পুরুষ সবার রয়েছে পানির নিচে বেঁচে থাকার আশ্চর্য ক্ষমতা। ডুবুরিরা আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ ছাড়া ১০-১৫ মিনিট পানির নিচে ডুবে থাকতে পারেন না। সেখানে বাজাউ নারী-পুরুষ কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই সাগরের গভীরতম জায়গায় অবস্থান করতে পারেন ১৫ মিনিটেরও বেশি সময়। বাজাউদের এই অদ্ভুত ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক মেলিডা ইয়ার্সো ও রাসমুস নিয়েলসেন। বাজাউদের শরীর পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের প্লিহা সাধারণ মানুষের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি বড়। তারা যখন জলের নিচে থাকে তখন হৃৎপিণ্ড প্রাকৃতিকভাবেই কাজ কমিয়ে দিয়ে অক্সিজেন সংরক্ষণ করতে পারে। যা তাদের পানির নিচে লম্বা সময় বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। বাজাউদের ডিএনএ বৈশিষ্ট্যও আমাদের থেকে আলাদা। তাদের ডিএনএ-তে এমন উপাদান রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পানির নিচে থাকার সময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে শরীরের যেখানে অক্সিজেন প্রয়োজন সেখানে সরবরাহ করতে পারে। হাজার বছর ধরে পানির সঙ্গে বসবাস বাজাউদের শরীরে এই অভিযোজন ক্ষমতা ঘটিয়েছে। এমনকি সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, জলোচ্ছ্বাসেও টিকে থাকতে পারে বাজাউ কিশোররা।

নেই কোনো দেশ 
বাজাউরা কি কখনো ডাঙায় আসতে চায়? আসতে চাইলেও সেই উপায় নেই তাদের। কখনো ডাঙায় এসে বসলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে আটকে রাখে জলের ভিতর। বিভিন্ন দেশের সমুদ্রের জলে বাস করলেও কোনো দেশই স্বীকৃতি দেয়নি নাগরিক হিসেবে। বাজাউরা যেন আজীবন সমুদ্র শরণার্থী। গোষ্ঠীর কেউ মারা গেলে বাজাউরা ভাসিয়ে দিয়ে আসে গভীর সমুদ্রে। সমুদ্রমানব বিলীন হয়ে যায় সমুদ্রের জলেই।

স্কুল পালিয়ে জলবায়ুকর্মী

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পিএম
স্কুল পালিয়ে জলবায়ুকর্মী
জলবায়ুকর্মী সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: সংগৃহীত

সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ এখন একুশ বছরের তরুণী। তবে জলবায়ুকর্মী হিসেবে গ্রেটা যখন বিশ্বের নজর কাড়েন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র পনেরো বছর। ঘটনার শুরু ২০১৮ সালের মে মাসে। গ্রীষ্মে স্থানীয় এক সুইডিশ পত্রিকা আয়োজন করে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পান কিশোরী গ্রেটা। এর তিন মাস পরই স্কুল পালিয়ে গ্রেটা হাজির হন সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে। দাবি, সুইডিশ সরকারকে কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে।

এরপর প্রতি শুক্রবার স্কুল পালিয়ে সবুজ আন্দোলনের লক্ষ্যে কিশোরী গ্রেটাকে দেখা যেত পার্লামেন্টের সামনে। ছোট গ্রেটার হাতে দেখা যেত বড় ব্যানার, ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট।’ প্রতিবাদের প্রথম দিন গ্রেটা ছিলেন একা। দ্বিতীয় দিন ছিল গুটিকয়েক মানুষ। তবে তার এই অভিনব আন্দোলনের পদ্ধতি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের মানুষ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দলে দলে বিভিন্ন বয়সী মানুষ গ্রেটার সঙ্গে যোগ দিতে থাকে পার্লামেন্টের সামনে। শুধু সুইডেনই নয়, বিভিন্ন দেশের মানুষ অনলাইন ও রাস্তায় নেমে সমর্থন জোগায় এই সবুজ আন্দোলনে। গ্রেটার ব্যানারে সে সময় মাঠে নেমেছিল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশের ২০ হাজার শিক্ষার্থী।

গ্রেটার যত প্রতিবাদ

২০১৯ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র যান গ্রেটা। সুইডেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছাতে সময় লেগেছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। গ্রেটা যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছান একটি রেসিং ইয়টে। বিমানের জ্বালানি দূষণরোধে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানান গ্রেটা। পরে কিশোরী গ্রেটা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে তাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় জনতার প্রতিবাদ। 
জাতিসংঘের সম্মেলনে কিশোরী গ্রেটার বক্তব্য এখনো জনপ্রিয়। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের কত দুঃসাহস! আমার এখন স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু তোমরা আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছো।’

সবুজ আন্দোলনের লক্ষ্যে গ্রেটা কথা বলেছেন বিভিন্ন দেশের নেতাকর্মী ও আইনপ্রণেতাদের নিয়েও। গ্রেটার ভাষায়, ‘রাজনীতিবিদরা আমাদের শৈশব চুরি করেছেন। আমাদের মিথ্যা বুলি শুনিয়ে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ফেলে দিচ্ছেন। পরিবেশ বাঁচাতে তারা তরুণদের ওপর নির্ভর করে আছেন।’ গ্রেটার এই বক্তব্য সাড়া ফেলে বিশ্বের তরুণ-কিশোরদের মধ্যে। সম্প্রতি আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন নিয়েও প্রতিবাদ করেন গ্রেটা। গ্রেটা বলেন, ‘আজারবাইজান একটি নিপীড়ক ও দখলদার দেশ। মানুষের ওপর তারা অনেক দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করে এই ঘটনা তারা চাপা দিতে চায়।’

গ্রেটা মনে করেন, সবুজ পরিবেশ পেতে যুদ্ধ, মানবিক বিপর্যয় বন্ধ করতে হবে। ইহুদিদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ভাঙচুর, হত্যার প্রতিবাদে সম্প্রতি গ্রেপ্তারও হন গ্রেটা।

প্রাপ্তি ও সমালোচনা

কয়েক বছর আগের ১৫ বছর বয়সী গ্রেটা এখন শুধু কিশোর-তরুণদের প্রতিনিধিই নন। বরং জলবায়ু আন্দোলনে বিশ্বের রোল মডেল। প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো গ্রেটার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘তুমি পৃথিবীকে জাগিয়ে তুলেছো। তোমার কাজে আমরা গর্বিত।’ সবুজ পরিবেশ আন্দোলনের কনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতিও আছে গ্রেটার ঝুলিতে। 
তবে গ্রেটার সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন রাজনীতিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন, গ্রেটার উত্তেজনাপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। জনসাধারণকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময় পরিবেশ আন্দোলনের মাঠে গ্রেপ্তারও হন এই তরুণী। গ্রেটা মনে করেন, পরিবেশ দূষণরোধে বিশ্বনেতারা দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে।

/আবরার জাহিন

 

‘আমা দাবালাম’ জয়ীর গল্প

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম
‘আমা দাবালাম’ জয়ীর গল্প
তানভীর আহমেদ শাওন। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর বিপজ্জনক পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে অন্যতম নেপালের ‘আমা দাবালাম’। সম্প্রতি সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন কিশোরগঞ্জের তরুণ তানভীর আহমেদ শাওন। ‘আমা দাবালাম’ জয় ও পর্বতারোহী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন শাওন। লিখেছেন তাসনিম তাজিন

শুরুর গল্প

২০১৪ সালে প্রথম বান্দরবান পাহাড়ে ঘুরতে যান পর্বতারোহী তানভীর আহমেদ শাওন। এরপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে অথবা বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেকিংয়ে যেতেন নিয়মিত। ট্রেকিং ছিল তার কাছে নিজের যোগ্যতা পরীক্ষার রাস্তা। পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পরিচয় হতো নতুন বন্ধু, মানুষ ও পর্বতারোহীদের সঙ্গে। এভাবেই ২০১৭ সালে পরিচয় হয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিকাল ড্রিমার্সের সঙ্গে। সেই থেকে বড় পর্বতারোহণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন শাওন। ২০১৮ সালে ভারতে প্রথম ‘দেও তিব্বা’ পর্বতারোহণ করেন শাওন। দেও তিব্বার উচ্চতা ছিল ৬ হাজার ১ মিটার। আমা দাবালামের আগে নেপালের রামজাক ও চুল্লু ফারইস্ট পর্বতারোহণ করেন শাওন।

প্রথম সামিটে ‘আমা দাবালাম’

শাওন বলেন, বেশ কয়েকটি পর্বতে গেলেও আক্ষেপ ছিল এখন পর্যন্ত কোনো পর্বতের চূড়ায় সামিটে পৌঁছানোর সৌভাগ্য হয়নি তার। ২০২৩ সালে সামিটের উদ্দেশ্যে চুল্লু ফারইস্টে গেলেও প্রকৃতি সহায় না হওয়ায় আশা অপূর্ণ রেখেই ফিরে আসতে হয়েছিল সেবার। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন, দুর্গম কোনো পর্বতকেই বেছে নেবেন সামিটের জন্য। অবশেষে ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবালাম পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পা রাখেন শাওন। তিনি বলেন, আমা দাবালাম পর্বতকে বাংলায় বলা হয় ‘মায়ের গলার হাড়।’ এই পর্বতের এক জায়গায় গলার হাড়ের মতোই দুই পাশে ছড়ানো রিজের মাঝখান দিয়ে গেছে গিরিশিরা। এ জায়গাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ জন পর্বতারোহী মারা গেছেন আমা দাবালামে। এরকম পর্বত আরোহণের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রথম সামিট শুরুর ব্যাপারটাই রোমাঞ্চকর। এরপর হেসে বলেন, চূড়ায় প্রথম পা রেখে অনুভূতি ছিল শূন্য। আমি আর শেরপা শুধু খাবার পানি খুঁজছিলাম। চূড়ায় উঠার পথে বোতলের পানি ফুরিয়ে যাওয়ায় অনেক বরফও খেয়েছি।

উঁচুতে উঠে নত হওয়ার শিক্ষা

শাওনকে পর্বত কেন এত টানে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এর দুটি কারণ। প্রতিবারই আমি আগের চেয়ে বেশি দুর্গম পর্বত আরোহণের জন্য বেছে নিই। আমি নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে ভালোবাসি। নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে ভালোবাসি। তবে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অহংকার বোধ হয় না। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যত উঁচুতে উঠি তত প্রকৃতির কাছে নত হতে শিখি। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে সাদাসিধে জীবনযাপনের ইচ্ছা জাগে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, চূড়ায় উঠার ইচ্ছা থাকলেও কতবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। পর্বতারোহণ এভাবেই প্রতিকূলতা মেনে নিতে, পারস্পরিক সহিষ্ণুতা শিখায়। 

পর্বতারোহণ নিয়ে ভাবনা

শাওন বলেন, তরুণদের মধ্যে পর্বতারোহণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এখন অনেক পর্বতারোহণ ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে পর্বতারোহণের সুযোগ আছে। সরকারিভাবেও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। ক্রিকেট, ফুটবল অন্যান্য খেলায় যেমন খেলোয়াড়রা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তেমনি পর্বতের চূড়ায় যখন কোনো বাংলাদেশি দেশের পতাকা হাতে পা রাখেন তখন এ দেশের মানুষও যে দৃঢ়, সাহসী সেটাই প্রমাণ হয়। তাছাড়া আমাদের দেশ এখনো প্রকৃতিবান্ধব না। পর্বতারোহণে চর্চা বাড়লে প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। আমা দাবালাম-পরবর্তী পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে এই তরুণ বলেন, পৃথিবীতে ১৪টি ৮ হাজার মিটার উচ্চতার পর্বত আছে। সামনে এর ভেতর কোনো পর্বতে বাংলাদেশের পতাকা হাতে পা রাখতে চাই।

হাসান

টিনএজ বয়সের শখ

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম
টিনএজ বয়সের শখ
লাইব্রেরীতে পছন্দের বই খুঁজছেন একজন কিশোরী। ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনা আর একঘেয়ে জীবনযাপনে আনন্দের খোরাক জোগায় শখের কাজ। প্রতিটি মানুষের শখের জায়গা অন্যজন থেকে ভিন্ন। কিশোর বয়স থেকে সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। নিজের ভালো লাগা অনুযায়ী শখের কাজ হিসেবে এমন কোনো কাজ বেছে নিলে ব্যক্তিত্ব বিকাশেও সেটি সহায়ক হয়। কিশোর বয়সের এমন কিছু শখের কাজ নিয়ে লিখেছেন টি এইচ মাহির।

লাইব্রেরি 

ছুটির দুপুরে বা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে থ্রিলার কিংবা ভ্রমণ কাহিনি পড়তে পড়তে কল্পনার জগতে ভেসে বেড়ায় কিশোর মন। কেউ আবার পড়তে ভালোবাসেন কবিতা, উপন্যাস বা অনুপ্রেরণামূলক জীবনী। পছন্দের বইগুলো নিজের সংগ্রহে রাখতেও কাজ এক অন্যরকম আনন্দ। নিজের সংগ্রহে থাকা বইগুলো দিয়েই বসার ঘর কিংবা নিজের পড়ার ঘরের এক কোণে বানাতে পারেন ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। এতে সংগ্রহে থাকা বই যেমন যত্নে থাকবে তেমনি বই পড়ায়ও উৎসাহ বাড়বে। তা ছাড়া আপনি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শখের বশে বানানো ছোট লাইব্রেরিটাই কিন্তু একসময় বিশাল লাইব্রেরিতে পরিণত হতে পারে।

অরিগ্যামি 

শৈশবে কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসানো কিংবা প্লেন বানিয়ে ওড়ানোর চেষ্টা কমবেশি আমরা সবাই করেছি। ছবি আঁকা, শৌখিন জিনিস তৈরি করার আগ্রহ থাকলে কিশোর বয়সে শৈশবের এই খেলাই হতে পারে কিশোর বয়সের শখের কাজ। বিভিন্ন কৌশলে কাগজ ভাঁজ করে প্রাণী, ফুল বা অন্য কোনো জিনিসের আকার দেওয়ার এ শিল্পকেই বলা হয় অরিগ্যামি। অরিগ্যামি করতে প্রয়োজন হয় সৃষ্টিশীল কল্পনাশক্তির। তাই যারা সৃষ্টিশীল কাজ করতে ভালোবাসেন তারা অবসরে চর্চা করতে পারেন অরিগ্যামি। ইন্টারনেটে অরিগ্যামি নিয়ে অনেক কনটেন্ট, ভিডিও রয়েছে। সেখান থেকেও শিখতে পারেন এই শখের কাজ।

ফটোগ্রাফি

সুন্দর মুহূর্তকে বন্দি করে রাখতে কে না ভালোবাসে! নিজের একটি মুঠোফোন থাকলে আপনিও গড়ে তুলতে পারেন ছবি তোলার অভ্যাস। বাড়ির আশপাশের প্রকৃতি কিংবা চলতি পথের দৃশ্য, ঘটনার ছবি তুলেই শুরু করতে পারেন ফটোগ্রাফির যাত্রা। কিশোর ও তরুণদের জন্য অনলাইন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ফটোগ্রাফির কোর্স। কিশোরদের তোলা ছবি নিয়ে হয়ে থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, প্রতিযোগিতা। এসব জায়গায় নিজের তোলা ছবি প্রকাশ করে নিজের ভাবনা ও দক্ষতা যাচাই করতে পারেন আপনিও।

লেখালেখি

অনেকের দিনলিপি লেখার অভ্যাস রয়েছে। এতে করে নিজের প্রতিদিনের কাজ, ভাবনাগুলো পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়। তা ছাড়া কিশোর জীবনের স্মৃতি ধরে রাখতে দিনলিপি হতে পারে চমৎকার মাধ্যম। পাশাপাশি গল্প, পত্রিকা, ম্যাগাজিন কিংবা জার্নালের কিশোর পাতায় গল্প, কবিতা, মতামত লিখে পাঠাতে পারেন এখন থেকেই।

হাইকিং এবং ক্যাম্পিং

যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন তারা পাহাড়ে কিংবা বনে-জঙ্গলে ক্যাম্পিং করতে পারেন দলবেঁধে। কিশোর বয়স থেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে উপরে উঠা, নদীর তীর বা জঙ্গলের ভেতর তাঁবু করে থাকা শুধু রোমাঞ্চই দেয় না। বরং যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকা, মানিয়ে নেওয়া শেখায়। ফলে আত্মবিশ্বাস ও সাহসও বাড়ে। তবে কোনো জায়গায় হাইকিং ও ক্যাম্পিংয়ের আগে সে জায়গা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া ও দলবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।

হাসান/নাবিল/

লিলির ক্যাঙ্গারু কাপ

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
লিলির ক্যাঙ্গারু কাপ
লিলি বর্ন। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন  লিলি বর্নের গল্পটা শুরু হয় প্রায় এক যুগ আগে। লিলির বয়স যখন মাত্র সাত বছর, তার দাদা আক্রান্ত হন পারকিনসন্স রোগে। স্নায়ুজনিত এই রোগের কারণে কোনো জিনিস ধরতে সমস্যা হতো তার। ছোট্ট লিলি লক্ষ্য করে, পানির গ্লাস ধরতে গিয়ে প্রায়ই দাদা পানি ছিটিয়ে ফেলছেন কিংবা গ্লাস ভেঙে ফেলছেন। আর বৃদ্ধ দাদিও বারবার মেঝেতে পানি পরিষ্কার করে যাচ্ছেন। ছোট মস্তিষ্কে তার কল্পনায় আসে, গ্লাসেরও যদি ক্যাঙ্গারুর মতো পা থাকত তাহলে গ্লাস বা পানি কিছুই মেঝেতে পড়ত না! 

তবে আর ১০ জন শিশুর মতো কল্পনা করেই থেমে যায়নি লিলি। দাদা-দাদির দুঃখ ঘোচাতে ক্লে দিয়ে সত্যিই কাপ বানানোর পরিকল্পনা করে সে। তার এই উদ্যোগে সঙ্গী হন বাবা জো বর্ন। মেয়ের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে মেয়েকে নিয়ে কাপ বানানোর বিভিন্ন উপাদান ঘুরে ঘুরে দেখেছেন জো। বাবার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতেই কাপ বানানোর কৌশলে পরিপক্ব হয়ে ওঠে লিলি। অবশেষে কয়েক বছর চেষ্টার পর ২০১২ সালে বাজারজাতের উদ্দেশ্যে লিলি তৈরি করে ফেলে পাযুক্ত কল্পনার সেই ক্যাঙ্গারু কাপ। বাবার সহায়তায় ইমাজিরো ডটকম নামের ব্র্যান্ডের অধীনে শুরুর দিকেই বিক্রি করে ফেলে ২০ হাজার ডলারের কাপ।

ক্যাঙ্গারু কাপের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় লিলির আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাসও বাড়তে শুরু করে। প্রথমে দাদার অসুখের কথা মাথায় রেখে কাপের ডিজাইন করলেও পরে শিশু, বৃদ্ধ ও শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে অক্ষম সব রোগীর কথা মাথায় রেখে কাপকে কীভাবে আরও মজবুত করা যায়, সেই পরিকল্পনা করতে শুরু করে কিশোরী লিলি। এজন্য বাবার সঙ্গে ঘুরেছে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে। কাপ বানানোর উপাদান, ডিজাইন ঘুরে ঘুরে দেখেছে বাজার-কারখানায়।

লিলি কাপ তৈরির ক্ষেত্রে মাথায় রাখে পরিবেশের কথাও। পরিবেশবান্ধব সিরামিক ও হালকা ওজনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় এই কাপগুলো। ১০ বছরে উদ্যোক্তা হওয়া লিলি এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালনা করছে এ ব্যবসা। ব্যবসার লভ্যাংশের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার কাজে। কিশোরী লিলি শুধু বিশ্বব্যপী সফল উদ্যোক্তাই নয় বরং কিশোর-তরুণদের অনুপ্রেরণা।

হাসান

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });