দেখতে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মনে হলেও আর দশজন মানুষের মতো নন নাঈম হোসাইন। জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন তিনি। অন্য সবার মতো সুন্দর এই পৃথিবীকে একনজর দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। চোখে দেখতে পান না বলে কি স্বপ্ন দেখতে পারবেন না? তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এবং স্বপ্ন দেখেই চলেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল তাকে নিয়ে গেছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। অনেকটা দুঃসাধ্য সাধন করে নাঈম ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন তিনি স্বপ্ন দেখেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষক হওয়ার।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাঈম হোসাইন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে নাঈম সবার ছোট। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শুধু নাঈম নন, তার অন্য ভাইবোনেরাও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। জন্মের পর এই পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য দেখতে পারেননি কেউই। তবে শারীরিক সেই প্রতিবন্ধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা প্রত্যেকেই ভর্তি হয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাঈমের বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। আর বড় বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন।
ছোটবেলা থেকে অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ছিলেন নাঈম হোসাইন। নাঈম নিজের অদম্য মনোবলকে পুঁজি করে এগিয়ে গেছেন স্বপ্ন জয়ের কণ্টকাকীর্ণ পথে। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি।
নাঈম যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন, তখন তার এলাকার এক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। পিতা-মাতার অনুপ্রেরণা ও শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ভূঁইয়ার সার্বিক সহযোগিতায় তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বন্ধুদের সহযোগিতায় চলাফেরা করতে হয় তাকে। মোবাইল ফোনে স্ক্রিন রিডার অ্যাপসের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মোবাইল ফোনে পিডিএফ বই পড়েন নাঈম। একবার কোনো জায়গায় গেলে দ্বিতীয়বার একাই যেতে পারেন। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ তিনি একা করতে পারেন। কারও সহযোগিতাও প্রয়োজন হয় না তার। তবে পরীক্ষার সময় শ্রুতলেখক হিসেবে কারও সাহায্য নিতে হয় তাকে।
নাঈম হোসাইন বলেন, ‘আমি মোবাইল ফোনের স্ক্রিন রিডার অ্যাপের মাধ্যমে পড়াশোনা করি। আর পরীক্ষায় বিভাগের জুনিয়র কিংবা অন্য বিভাগের বন্ধুকে শ্রুতলেখক হিসেবে নিয়ে আসি। প্রশ্নের উত্তর আমি মুখে বলি, তারা লিখে দেয়। আমার বই পড়তে খুব ভালো লাগে। তাই আমি মোবাইল ফোনে পিডিএফ বইগুলো পড়ি। কিন্তু সব বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ পাওয়া যায় না। ফলে আমাকে একটু ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
মেহেদী