
১৭ বছর বয়সী কানাডিয়ান টিনএজার গ্যাভিন ম্যাকনিল ভালোবাসতেন নিজের আধুনিক ফিচার সম্পন্ন আইফোনে গান শুনতে, ভিডিও দেখতে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটাতে। তবে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে ১১ গ্রেডে ওঠার পর প্রিয় আইফোনটি বদলে ব্যবহার করতে শুরু করেন ফিচার বিহীন পুরোনো যুগের বাটন ফোন।
টিনএজারদের প্রিয় সেলফোনের কথা উঠলেই হয়তো তালিকায় চলে আসবে স্যামসাং, অ্যাপল, গুগল পিক্সেলের মতো কোম্পানির নতুন মডেলের অত্যাধুনিক সব স্মার্টফোনের নাম। তবে অবাক করার বিষয় ম্যাকনিল এর মতো বাটন ফোন ব্যবহার করা টিনএজার ও তরুণদের সংখ্যাও এখন কম নয়। আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিজেদের উদ্যোগেই বাটন ফোন ব্যবহার করতে শুরু করেছে টিনএজাররা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি ও স্ক্রিন টাইম কমিয়ে সময় বাঁচাতে এই পথ বেছে নিয়েছে অনেকে।
বাটন ফোন নামে বেশি পরিচিত এই মোবাইল ফোনকে ফ্লিপ ফোনও বলা হয়। ২০০০ সালে বাজারে আসা ফ্লিপ ফোনের রাজত্ব ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। নম্বর প্যাডযুক্ত এসব ফোনে কথা বলা, বার্তা পাঠানো, ম্যাপ দেখার মতো কাজগুলোর বাইরে আর কোনো কাজই করা যেত না। পরে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক স্মার্টফোন জায়গা করে নেয় বাজারে। এমনকি শিশুরাও ফ্লিপ ফোনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে শুরু করে স্মার্টফোন।
এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি এবং অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম থেকে শারীরিক মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে বাটন ফোনে আগ্রহী হচ্ছে টিনএজাররা। ১৬ বছর বয়সী আরেক কানাডিয়ান কিশোর লুক মার্টিন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে মার্টিন বলে, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আসক্তি দিন দিন তাকে অন্য সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন, হতাশ করে দিচ্ছিল। একসময় সে ও তার বন্ধু দৈনিক ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা স্মার্টফোনে সময় কাটাত। বাটন ফোনে এখন দৈনিক সময় কাটানো হয় গড়ে মাত্র ২০ মিনিট। সে মনে করে, এখন শুধু প্রয়োজনবশতই ফোন ব্যবহার করা হয়। এতে সময় ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মার্টিনের মতো স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানোর কারণে মানসিক সমস্যার শিকার অনেক টিনএজার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, টিনএজে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের সময় মস্তিষ্কের যে অংশ উদ্দীপিত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও ওই একই অংশ উদ্দীপিত হয়। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসক্তি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে টিনএজারদের মধ্যে।
এ ছাড়া স্মার্ট ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে টিনএজারদের চোখের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা, অবসাদ ও বিষণ্নতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন গবেষক ও চিকিৎসকরা। এমন সময় টিনএজারদের বাটন ফোনে ফিরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত সাধুবাদ জানান মা-বাবা ও গবেষকরা।