ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান
লাউচাপড়া পিকনিক স্পট। ছবি: সংগৃহীত

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত, কৃষিপণ্যে সমৃদ্ধ জেলা জামালপুর; যা ময়মনসিংহ বিভাগে অবস্থিত। এই জেলার দর্শনীয় স্থান এবং জনপ্রিয় খাবার সম্পর্কে জানাচ্ছেন মোহনা জাহ্নবী

সদর উপজেলা

-লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক

মেলান্দহ উপজেলা

-গান্ধী আশ্রম
-ঝিনাই নদীর উৎসমুখ

বকশীগঞ্জ উপজেলা

-লাউচাপড়া পিকনিক স্পট
-গারো পাহাড়

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা

-বাঘারচর ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়
-বাহাদুরাবাদ ঘাট ও রেলওয়ে স্টেশন

সরিষাবাড়ি উপজেলা

-প্রজাপতি পার্ক
-দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান

এছাড়া পুরো জামালপুর জেলায় নকশীকাঁথার অনেক গ্রাম পাবেন। তা ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। 

জামালপুর জেলার বিখ্যাত খাবার

-মিল্লি বা পিঠালি বা মেন্দা

জাহ্নবী

নান্দনিক স্থাপনা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০০ পিএম
নান্দনিক স্থাপনা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
ছবি সংগৃহীত

ষাট গম্বুজ মসজিদ খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মসজিদটির কোনো শিলালিপি না থাকায় ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে খান-ই-জাহান ১৫০০ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এ মসজিদে ব্যবহৃত পাথরগুলো রাজমহল থেকে আনা হয়েছিল। ইউনেসকো ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।


ষাট গম্বুজ মসজিদের গঠন ও বিবরণ
মসজিদটি বাইরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১০৪ ফুট লম্বা। আর ভেতরের দিক দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৪৩ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮ ফুট লম্বা। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮ দশমিক ৫ ফুট পুরু। মসজিদটির পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে ১১টি বিরাট খিলানযুক্ত দরজা। অন্য দরজাগুলো থেকে মাঝখানের দরজাটি সবচেয়ে বড়। আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে দরজা আছে ৭টি করে ১৪টি। মসজিদের চারকোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের চূড়ায় রয়েছে একটি করে গোলাকার গম্বুজ। ছাদের কার্নিশের চেয়ে মিনারগুলোর উচ্চতা একটু বেশি।
মসজিদের সামনের দিকের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা এবং অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা। মিনারের ভেতরে রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়ি। আগে এই মিনার থেকে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মসজিদের অভ্যন্তরে মোট ষাটটি স্তম্ভ বা পিলার আছে। স্তম্ভগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ছয় সারিতে মোট ১০টি করে বিন্যস্ত আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথরের তৈরি তবে পাঁচটি স্তম্ভ ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। স্তম্ভগুলোর চারপাশের ছাদের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। ষাট গম্বুজ মসজিদে ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। আর মিনারের ওপর চারটি গম্বুজসহ মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১টি। মসজিদের মিহরাবের মধ্যবর্তী সারিতে সাতটি গম্বুজ ছাড়া বাকি ৭৪টি গম্বুজই অর্ধগোলাকার।
মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহরাব আছে ১০টি। মাঝখানের মিহরাবটি বড় ও কারুকার্যপূর্ণ। দক্ষিণ দিকে পাঁচটি এবং উত্তর দিকে চারটি মিহরাব রয়েছে। উত্তর পাশে মিহরাবের বদলে একটি ছোট দরজা আছে। অনেকের মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদকে দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন আর এই দরজা ছিল তার প্রবেশপথ। ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রায় ৫০০ মিটার পেছনে রয়েছে বিবি বেগনির মসজিদ। হাতে সময় থাকলে ফুলের কারুকার্যময় মসজিদটি দেখে আসতে পারেন। বিবি বেগনি মসজিদের ৫০০ মিটার পেছনের দিকে রয়েছে চুনাখোলা নামের আরেকটি মসজিদ। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে রয়েছে সিঙ্গাইর মসজিদ।


প্রবেশের টিকিট মূল্য
ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। বিদেশি দর্শনার্থীর জন্য টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা।

 
ষাট গম্বুজ মসজিদ খোলা ও বন্ধের সময়
রবিবারে পূর্ণ দিন কেল্লা বন্ধ থাকে এবং সোমবার খোলা হয় দুপুর ২টা থেকে। গরমকালে কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শীতকালে কেল্লা খোলা হয় সকাল ৯টায় থেকে আর বিকেল ৫টায় বন্ধ করা হয়। শীত ও গরমকাল উভয় সময়ই দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ রাখা হয়। তবে শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কেল্লা বন্ধ থাকে।


কীভাবে যাবেন ষাট গম্বুজ মসজিদ
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফুল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহনের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, সাকুরা, হানিফ, কমফোর্ট লাইন, দোলা পরিবহন ও ঈগল পরিবহনের গাড়ি ছাড়ে। এই বাসগুলোতে জনপ্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া লাগে। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় ষাটগম্বুজ মসজিদে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন। খুলনা থেকে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মতো।


কোথায় থাকবেন
বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল আছে। এ ছাড়া সরকারি গেস্টহাউস আছে। এখানে রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলে সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামুটি ভালো এবং খরচও একটু বেশি। এই হোটেলের আশপাশে থাকার জন্য আরও কিছু হোটেল রয়েছে। খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন হোটেল অভিতে। বাগেরহাটে থাকার জন্য হোটেলের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন এবং কর্মকার পট্টিতে হোটেল মোহনা আছে। খুলনা থেকে বাগেরহাটে আসতে এক ঘণ্টা লাগার কারণে খুলনাতেও থাকা যায়।


খাবার সুবিধা
এখানে কিছু মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নেবেন।


বাগেরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান
সুন্দরবনে বাঘের বাস, দাড়টানা ভৈরব পাশ, সবুজ শ্যামলে ভরা নদী বাঁকে বসত যে হাট তার নাম বাগেরহাট। বাগেরহাট জেলা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের জন্য বেশ ভূমিকা পালন করে আসছে। খান জাহান আলীর মাজার, সুন্দরবন, মোংলা বন্দর, রেজা খোদা মসজিদ, জিন্দা পীর মসজিদ, ঠাণ্ডা পীর মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, বিবি বেগনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, কোদলা মঠ, রণবিজয়পুর মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবন রিসোর্ট, বারাকপুর, চন্দ্রমহল, রনজিতপুর ইত্যাদি এই জেলার জনপ্রিয় স্থান।


ভ্রমণে যা মেনে চলবেন
আপনি কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন ও সেখানকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, সে বিষয়ে আগেই জেনে নিন। আপনি যদি একাই ঘুরতে যান, তাহলে সেখানে পরিচিত কাউকে খুঁজে বের করুন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। ভ্রমণে আরামদায়ক পোশাক পরার বিকল্প নেই। এ সময় সুতির কাপড়ের বিকল্প নেই। যতটা সম্ভব খোলামেলা পোশাক পরুন। লাগেজে মনে করে প্রয়োজনীয় ফার্স্ট এইড বক্স বা ওষুধ সঙ্গে নিয়ে নেবেন। বিশেষ করে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, স্যালাইন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন।
মোবাইলের চার্জারসহ পাওয়ার ব্যাংক, ক্যামেরা সঙ্গে নিয়েছেন কি না চেক করে দেখুন। সঙ্গে ভারী কোনো খাবার নয় বরং হালকা খাবার নিন। বিস্কুট, কেক, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি নিতে পারেন। বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
অচেনা কোনো স্থানে প্রথমবার যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিন। প্রয়োজনে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগাযোগের নম্বর নিয়ে রাখতে পারেন। ভ্রমণে কত টাকা খরচ করবেন, সে ব্যাপারটি আগে থেকেই হিসাব করে নিন। তারপর বাজেট অনুসারে খরচ করুন। তবে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়া ভালো।

দানিউব নদীতে নাইট রিভার ক্রুজ

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:১২ পিএম
দানিউব নদীতে নাইট রিভার ক্রুজ
দানিউব নদীর উপড় চেইন ব্রিজ

সূর্য অস্ত গিয়ে অন্ধকার নেমেছে ঘণ্টাখানেক আগে। বেশ ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। মাঝে মাঝে বাতাসের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে খানিকটা অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। পুরো লাইনে বাদামি বা কালো চামড়ার আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। 
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বিখ্যাত দানিউব নদীতে নাইট রিভার ক্রুজ বা নৈশ নৌবিহারের জন্য অপেক্ষা করছি। ইউরোপের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের শহর বুদাপেস্টে সারা দিন টই টই করে ঘুরে এখন এসেছি রিভার ক্রুজ করতে। ৩০ ইউরোর বিনিময়ে ক্রুজের টিকিট কেটেছি। সময়সীমা এবং সার্ভিসের ওপর নির্ভর করে ক্রুজের ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। দামি ক্রুজগুলোতে বিশেষায়িত সেবা এবং রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা আছে, আমারটা শুধুই দানিউবের বুকে কিছু সময় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবে। 
খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ক্রুজ চলে এলো। ঝটপট ক্রুজে উঠে বাম দিকে একটা আসন গ্রহণ করলাম। ক্রুজের দুপাশ পুরোটাই কাচের, তাই যেকোনো জায়গা থেকে ভালো ভিউ পাওয়া যাচ্ছে। ক্রুজটা খুব বড় নয়। দুপাশের বসার ব্যবস্থা আর মাঝখানে একটা লম্বা করিডোর। একেবারে সামনের দিকে একটা করিডোর,  নাকের ওপর এক রাউন্ড সোফা, সেখানে একটা গ্রুপ বসেই কি নিয়ে আলোচনায় শুরু করল, আর কোনো কিছুর দিকেই তাদের নজর নেই। অনেকে আবার ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়ার জন্য ছাদে গিয়ে বসেছে। আমার কিছুটা পেছনে একটা স্ন্যাকস বার। সেখানে থেকে অনেকেই স্ন্যাকস এবং ড্রিংকস কিনে নিয়ে নিয়ে এসে আসন গ্রহণ করছে। আমি নৌবিহার শেষ করে ডিনার করব বলে কিছু নিলাম না। 
কিছুক্ষণ পর মোটামুটি শান্ত সৌম্য দানিউবের বুকে আমাদের জলদানবটা কিছুটা ভোঁতা শব্দ করে এগোতে শুরু করল। নদীর তীরবর্তী স্থাপনাগুলোতে এমন সুন্দর লাইটিং করা যে বিমোহিত না হয়ে উপায় নেই। আমরা উত্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। হাতের বাম পাশের পাহাড়ি এলাকাটা বুদা ডিস্ট্রিক্ট আর ডান দিকের অপেক্ষাকৃত সমতল এলাকাটা পেস্ট ডিস্ট্রিক্ট। এই দুই ডিস্ট্রিক্ট মিলিয়েই কিন্তু বুদাপেস্ট শহর।  
অন্ধকারে কালো জল কেটে ক্রুজটা এগিয়ে যাচ্ছে। পথে অন্যান্য ক্রুজকে পাশ কাটিয়ে চমৎকার লাইটিং করা সব ব্রিজের নিচ দিয়ে আমাদের বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রুজটা। বুদা ও পেস্টকে সংযুক্ত করে এমন মোট ১৩টি ব্রিজ আছে দানিউবের ওপর। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চেইন ব্রিজ। খানিক বাদে বাম দিকে পাহাড়ের ওপর একটা অতি উজ্জ্বল ইমারত ‘বুদা ক্যাসেলে’ চোখ আটকালো। ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বুদা ক্যাসেল দিনেও যেমন সুন্দর, রাতেও তেমন আকর্ষণীয়। বুদা ক্যাসেল দেখতে দেখতে আমরা বিখ্যাত চেইন ব্রিজের নিচে চলে এলাম। আগে বহুবার হিন্দি সিনেমায় দেখা ব্রিজটা রাতের আলোয় অন্য রকম মোহময়ী লাগছে। 
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডেকে বসে এক মনে নদীতীরবর্তী শহুরে জীবন দেখছি আর ইউরোপের জীবনযাত্রায় এই নদীর সরাসরি অবদানের কথা ভাবছি। জার্মানির ব্ল্যাক পয়েন্ট এলাকায় উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে রোমানিয়ার কৃষ্ণসাগরে পতিত হয়েছে। ইউরোপের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ দানিউবকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত।
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর চেয়ার ছেড়ে ছাদে গেলাম। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা। তার পরও ছাদে যতগুলো চেয়ার ছিল তার একটাও খালি নেই। কেউ এক মনে পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করছে, আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। কারও ঠোঁটে বিয়ারের বোতল কিংবা কারও প্রেয়সীর ঠোঁট। আমাদের পাশাপাশি আরেকটা ছোট ক্রুজ চলছে। সেখানেও অনেক ভ্রমণকারী, তবে ছাদে কাউকে দেখলাম না। কিছুক্ষণ বাদে পাশের ক্রুজটা আমাদের অতিক্রম করে চলে গেল। ঠাণ্ডার কারণে খানিকটা অস্বস্তি লাগছিল বিধায় নিচে চলে আসতে বাধ্য হলাম। 
আজ এই নদীকে ঘিরে কতই না বিনোদনের ব্যবস্থা অথচ এই নদী একটা বড়সড় দুঃখগাথা বয়ে বেড়াচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাজার হাজার ইহুদিকে গুলি করে দানিউবে ফেলে দিয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনী। তাদের স্মৃতিতে এবং ঘটনার স্মরণে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে নদীর পাড়ে একটা জায়গায় জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে প্রতীকী স্মারক তৈরি করে রাখা আছে। 
ক্রুজটা খুব ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নদীর দুধার বেশ আলোকিত, বিল্ডিংগুলোর লাইটিং অন্যরকম দ্যুতি ছড়াচ্ছে। খানিকটা দূরে একটা বড়সড় ইমারাত নিজেকে আলাদা করে চেনাচ্ছে। এ পথের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই ইমারতটা হচ্ছে হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবন। এত সুন্দর লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ইমারতটা দিনের বেলায় যেমন সুন্দর, রাতের বেলার তার থেকেও বেশি সুন্দর। ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই পার্লামেন্ট হাউস ইউরোপের বৃহত্তম এবং সারা বিশ্বে এর অবস্থান তৃতীয়। পার্লামেন্টের সামনে ক্রুজটা বেশ খানিকক্ষণ অবস্থান করে চকচকে সোনালি আলোয় উদ্ভাসিত ইমারতটা ভালো করে দেখিয়ে সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। বেশ খানিকটা এগিয়ে ক্রুজটা ফিরতি পথ ধরল। ফিরতে পথে ক্রুজ যখন ইনারসিটি এরিয়ায় এলো তখন দেখালাম রাস্তায় অনেক লোকের সমাগম। এলাকাটা রাতের বেলায় ট্যুরিস্টে ঠাসা থাকে। দুনিয়ার প্রায় সকল ব্র্যান্ডের শোরুম আছে এখানে, আছে অনেক রেস্টুরেন্ট ও বার। ক্রুজ ভ্রমণ শেষ করে আমি এখানেই আসব। সারা দিন অনেক ধকল গেছে, ইনারসিটির নাইটলাইফ দেখব আর ডিনার করব।

সৌন্দর্যের সঙ্গে ইলিশের স্বাদ

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
সৌন্দর্যের সঙ্গে ইলিশের স্বাদ
ভোলা সদরে মেঘনার তীরঘেঁষে গড়ে ওঠা ইলিশ বাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

জেলা সদর ভোলার ইলিশ বাড়ি এখন পর্যটকদের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। নামটি শুনে কিছুটা অবাক হলেও এটি এখন অনেকেরই প্রিয় জায়গা। এর একদিকে মেঘনা অন্যদিকে সবুজ বন। মাঝখানে রং-বেরংয়ের কুঁড়েঘর আর বাহারি গাছের সারি যেন ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এখানকার প্রকৃতির নির্মল বাতাসে বসে প্রশান্তির ছোঁয়ায় মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের।

গ্যাসসমৃদ্ধ ভোলার পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে ইলিশ বাড়ি। সূত্রমতে, ২০২২ সালের ১০ জুলাই উদ্বোধনের পর থেকে তেমন সাড়া না জাগলেও ধীরে ধীরে এখন এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যা প্রতিদিনই নজর কাড়ছে পর্যটকদের। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন মানুষ। বিশেষ করে শীতের আগমনী বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানে যেন ঢল নেমেছে পর্যটকদের।

ইলিশের জন্য দ্বীপজেলা ভোলা বিখ্যাত হলেও ইলিশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভোলায় কোনো স্থাপনার নাম নেই। তাই একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা ইলিশের সঙ্গে ভোলাকে আরও বেশি পরিচিত করে তুলতে মেঘনার তীরঘেঁষে গড়ে তুলেছেন ইলিশ বাড়ি নামের একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখন ইলিশ বাড়ি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। এখানে এসেই মুগ্ধ তারা।

এখানে ঘুরতে আসা খুলনার পর্যটক আতাউর রহমান ঢালির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ভোলার অন্য দর্শনীয় স্থানের মতো এটিও অনেক সুন্দর। তবে কিছুটা আলাদা। এক স্থানে বসেই সব কিছুর দেখা মিলবে। 

বরিশাল থেকে এখানে সপরিবারে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী গৃহিণী আয়শা বেগম বলেন, ‘সু-বিশাল মেঘনা নদীর পাড়ে এত সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যময় পর্যটন স্পট দক্ষিণের জনপদে খুবই বিরল।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ একর জমির ওপর সম্পূর্ণ কাঠ ও গাছগাছালি দিয়ে মেঘনার বুকে নির্মাণ করা হয় এ পর্যটন কেন্দ্রটি। বেশ কয়েকটি কুঁড়েঘর নির্মাণ করা হয়েছে, বাহারি লাভ পয়েন্ট চারপাশের আলোকসজ্জা আর খুব কাছ থেকে প্রকৃতি দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য ছাড়াও জেলেদের ইলিশ ধরার দৃশ্য, নদীর উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস আর অপরূপ প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যায় এখানে বসেই।

ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানালেন, এখানে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেখার পাশাপাশি তাজা ইলিশের স্বাদ নেওয়া যায়। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি খাবারও।

ইলিশ বাড়ির উদ্যোক্তা এম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ইলিশ বাড়ি চালু হওয়ার পর থেকে আমরা পর্যটকদের অনেক সাড়া পাচ্ছি। এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চাই।’

এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ইলিশ বাড়িসহ জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রয়েছে পুলিশের নজরদারি।

ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, ‘জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারেন সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও।’ সূত্র: বাসস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চালন্দা গিরিপথ

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চালন্দা গিরিপথ
চালন্দা গিরিপথ

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবসময় অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের অপূর্ব সম্মোহনে কাছে টেনে নেয়। প্রকৃতির নিপুণ হাতে সাজানো পাহাড়-অরণ্যে ঘেরা চট্টগ্রামের এক বৈচিত্র্যময় ভ্রমণ গন্তব্যের নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ১৭৫৩ একর আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আছে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর স্থান। চালন্দা গিরিপথ তেমনি এক অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ জায়গা।
চালন্দা গিরিপথের প্রতিটি পদক্ষেপে অদ্ভুত শিহরণ-জাগানিয়া রোমাঞ্চ অনুভব করা যায়। চারদিকের সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে স্বচ্ছ পানির ধারা মনকে প্রশান্ত করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ঝুপড়ির পাশের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার উৎপত্তিস্থল বা ছড়ার পানি ধরে পশ্চিম দিকে ঘণ্টাখানিক হেঁটে গেলে প্রাকৃতিক বিস্ময় চালন্দা গিরিপথের দর্শন পাওয়া যায়। গিরিপথের ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে হিমশীতল অনুভূতি শরীরকে ছুঁয়ে যায়। দুই পাহাড়ের মাঝখানে প্রকৃতির তৈরি রাস্তায় এগিয়ে যেতে সমানভাবে হাত-পায়ের ব্যবহার করতে হয়। পাহাড়ের ঢালে ঢালে প্রকৃতির বর্ণিল চিত্র যেন অজানা রহস্যের গোলকধাঁধা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পাশে ঝুপড়ি। পেছনেই ছড়া। এই ছড়ার পানি দিয়ে হাঁটতে হবে। হাঁটা সহজ না। কাদা, পানি- কখনো পা ফসকে যাওয়ার ভয়। ৫০ মিনিট হাঁটার পর ছড়ার বামে বা দক্ষিণে চোখে পড়বে পথটা। এটাই চালন্দা গিরিপথ। পাশাপাশি দুটি পথ। একটি চালন্দার দিকে গেছে, অন্যটি সীতাকুণ্ডের দিকে। তাই ঠিক পথের ধারণা না থাকলে সীতাকুণ্ড চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
গিরিপথের পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে পানি। কোথাও ভেজা, কোথাও শুকনো। গিরির ভেতরে ঢুকতেই শরীরটা কেমন যেন হিমশীতল হয়ে ওঠে। দুই পাহাড়ের মধ্যে হাত ও পায়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দুই পাশে পাহাড়ের খাঁজ। কোথাও পাহাড়ের খাঁড়া ঢাল বেয়ে যেন নেমেছে রোদ। খাঁজে খাঁজে রোদের বর্ণিল চিত্র।
কোথাও কুয়াশার মতো আবছা আঁধার। তবে এসবের ভেতরেও কানে আসবে পাখির কিচিরমিচির। গিরিপথে প্রায় আধ কিলোমিটার ঝুঁকিহীনভাবে যাওয়া যায়। কিন্তু আরেকটু ভেতরের দিকে যেতেই দেখা দেবে ভয়। মনে হবে একটা ভূতুড়ে পরিবেশে এসে পড়েছেন। পথচলাও কঠিন হয়ে পড়বে। ক্রমেই বাড়বে ঝুঁকি। একটু অসতর্ক হলে ঘটতে পারে বড় রকমের বিপদ। তাই চলতে হবে বেশ সাবধানে।
এখন এই গিরিপথে অনেকেই আসেন। কিন্তু চালন্দা নামটি খুব বেশি দিন আগের নয়। যারা পথের নামকরণ করেছেন, তাদের একজন মইনুল ইসলাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের ছাত্র মইনুল বলেন, ২০১১ সালে আমরা ১১ বন্ধু ক্যাম্পাস থেকে পাহাড় দিয়ে হেঁটে ভাটিয়ারী যাওয়ার পরিকল্পনা করি। যাওয়ার সময় একজন কৃষক ছড়া দিয়ে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যান। এক সময় চোখে পড়ে একটি ছোট সরু জায়গা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি আসছে। সেই ঠাণ্ডা পানির খোঁজে আমরা ঝোপের ভেতর ঢুকে পড়ি। দেখি ঠাণ্ডা হিম হিম বাতাস এবং আঁধারে ছাওয়া এই গিরিপথ। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। ভেতরে যত যাই, ততই মুগ্ধ হই। পরে ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়ের সঙ্গে চ যোগ করে ‘চালন্দা’ নামকরণ করি। এই নামটা আসার কারণ আছে। আমরা ইতিহাসের ছাত্র। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস পড়ার সময় স্যার বারবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলতেন। নামটা মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে একদিন একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করি। বেশ সাড়া পড়ে। এর পর সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চবির এই চালন্দা গিরিপথ।’

 

কীভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো স্থান থেকে বাস অথবা সিএনজিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া যায়। অথবা চট্টগ্রামের বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে চড়ে ক্যাম্পাসে আসা যায়। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এসে সেখান থেকে টমটমে করে কলা অনুষদের ঝুপড়িতে চলে যান। ঝুপড়ি হতে ৭-৮ মিনিট হাঁটার পরই পানির ছড়া পাবেন। ছড়া ধরে ঘণ্টাখানেক হাঁটলেই চালন্দা গিরিপথে পৌঁছে যাবেন।


কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ। যারা চট্টগ্রামে ঘুরতে আসেন, তারা চাইলেই আত্মীয়ের বাড়িতে উঠতে পারেন। এতে সাশ্রয় হয় বটে। কারণ চট্টগ্রামে ২ স্টার হোটেলে উঠলেও খাওয়া-দাওয়াসহ জনপ্রতি দৈনিক ২ হাজার টাকা খরচ হবে। ২ স্টার নিচেরগুলো থাকার উপযোগী নয়। তবে যাদের একটু সামর্থ্য আছে তাদের হোটেলে ওঠাই ভালো। মধ্যবিত্তরা ২৫০০ টাকার মধ্যে চট্টগ্রামের জিইসি ও আর নিজাম রোডের রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ার হোটেল এম্বাসাডরে উঠবেন। ২৫০০ টাকার মধ্যে সিংগেল বেডের রুম এবং ৩২০০ টাকার মধ্যে ডাবল বেডের রুম পাবেন। বাজেট আরেকটু বেশি থাকলে একই স্থানে হোটেল ওয়েল পার্কে উঠতে পারেন। তবে এখানে খাবার খুবই এক্সপেন্সিভ। চট্টগ্রামের জিইসি এরিয়াটা ঢাকার গুলশান-বনানীর মতো। পেনিনসুলা হোটেলে উঠতে পারেন। এটা ৪ তারকা হোটেল। এই হোটেলের রুফটপে আড্ডা দেওয়া যায়। পরিবেশ, বিহেভিয়ার, ফুড কোয়ালিটি ১০/১০। জিইসি ছাড়া অন্যান্য এলাকায় থাকার হোটেল আছে। কিন্তু পরিবেশ অত উন্নত না। স্টেশন রোড, জিইসি মোড় এবং আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল মিসখা, হোটেল হিল টন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সাফিনা ও হোটেল সিলমন উল্লেখযোগ্য।

 

খাওয়া-দাওয়া
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাতঘর, ঢাকা হোটেল, মওয়ের দোকানসহ বেশকিছু সুলভমূল্যে খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে এসেও প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারবেন।

 

সতর্কতা
চালন্দা গিরিপথ ভালো দর্শনীয় স্থান হলেও, 
এখানে ঘুরতে এসে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই 
ছিনতাইয়ের শিকার হন। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না। তাই 
নিরাপত্তার স্বার্থে দুর্গম এ এলাকায় শিক্ষার্থীদের না যাওয়াই ভালো। অথবা অনেকজন একসঙ্গে যাওয়া উচিত।

 

প্রয়োজনীয় ভ্রমণ পরামর্শ
ছড়ার পানি ধরে যাওয়ার সময় দুটি পথ পাবেন। এদের মধ্যে একটি চালন্দায় যাওয়ার পথ এবং অন্যটি সীতাকুণ্ড যাওয়ার পথ। তাই সঠিক পথে যাচ্ছেন কি না এ ব্যাপারে সজাগ থাকুন। দলগতভাবে ভ্রমণ করুন এবং চলাচলের সময় প্রত্যেকে লাঠি ব্যবহার করুন। অনেক উপকার পাবেন। নিজেদের সঙ্গে শুকনো খাবার ও প্রয়োজনমতো পানি বহন করুন। কোনো প্রকার ময়লা ফেলে গিরিপথ নোংরা করবেন না।

 

চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। পাহাড় ও সমুদ্রে ঘেরা চট্টগ্রাম জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। তাই চট্টগ্রাম জেলাকে প্রাচ্যের রানি হিসেবে ডাকা হয়। 
চট্টগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, ফয়’স লেক, ওয়ার সিমেট্রি, ভাটিয়ারী লেক, ডিসি হিল, বাটালি হিল, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, চন্দ্রনাথ পাহাড়, বাঁশখালী ইকোপার্ক, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর, বাঁশখালী চা-বাগান, মহামায়া লেক, মহুরি প্রজেক্ট, খৈয়াছড়া ঝরনা, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, পারকি সমুদ্রসৈকত ও সন্দ্বীপ ইত্যাদি।

ঘুরে আসুন লাক্কাতুরা চা বাগান

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম
ঘুরে আসুন লাক্কাতুরা চা বাগান
ছবি সংগৃহীত

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উত্তর পাশে টিলার ওপর লাক্কাতুরা চা বাগান অবস্থিত। ২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩ হাজার ২০০ একরজুড়ে এর অবস্থান। মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগান পাশাপাশি। ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ আর ওপাশ। শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে লাক্কাতুরা চা বাগান কখনো কখনো মালনীছড়া চা বাগানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাগানে হাঁটলেই চোখে পড়বে কমলা, কাঁঠাল ও সুপারি বাগান। এ ছাড়া ট্যাং ফল, আগর, রাবার, চন্দনসহ অনেক ঔষধি-শোভাবর্ধক বৃক্ষ। বাগানের সব পথের ধারে উঁচু-নিচু টিলার ভেতর দিয়ে চলে গেছে মাটির রাস্তা। হেঁটে ভেতরে গেলে একেকটি রাস্তা ধরে প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটা যায়।
চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা এবং টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে টিলা বেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে ছুটে গেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ।
কোনো যান্ত্রিক দূষণ নেই। কোথাও আবার ধাবমান পথে ছুটে চলছে রুপালি ঝরনাধারা। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে। এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে সিলেটের চা বাগান। 
দেশের মোট চায়ের ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। এজন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্য এক ভালো লাগার ধারক হয়ে আছে সিলেটের চা বাগান। তাই ছুটির অবসরে কিংবা বৈকালিক বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাতে তারা ছুটে যান চা বাগানের সবুজ অরণ্যে। সারা বিকেল চলে সবুজের ভেতর লুকোচুরি, হইহুল্লোড় আর আনন্দে অবগাহন।
ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে আনন্দ ভ্রমণ কিংবা উচ্ছল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান হলো মালনীছড়া ও লাক্কাতুরা চা বাগান। সিলেট শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় চা বাগান দেখতে পর্যটকরা প্রথমেই ছুটে যান এখানে। মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগানের প্রবেশদ্বার বেশ কয়েকটি। চাইলে যেকোনো একটি পথ দিয়েই চা বাগান দর্শনের কাজ শুরু করা যায়। তবে ঝামেলা এড়াতে বাগানে প্রবেশের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তারপর ঘুরে দেখেন বাগানের এপাশ থেকে ওপাশ। দেখে আসতে পারেন বাগানের বাংলো। মালনীছড়ার পাশেই রয়েছে আলী বাহার চা বাগান। ঘুরে আসতে পারেন ওখান থেকেও।
মালনীছড়া আর লাক্কাতুরা চা বাগান পাওয়া যাবে একই যাত্রাপথে। ব্যবধান শুধু রাস্তার এপাশ ওপাশ। নগরীর চৌকিদেখি আবাসিক এলাকা পেরোনোর পর গলফ ক্লাবের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চলে যাবেন বাগানের মাঝখানে। বাগানের এপাশ ওপাশ ঘুরে গলফ ক্লাবের সুন্দরম টিলার ওপরও হতে পারে আনন্দ আয়োজন। আরেকটু সামনে এগোলেই পেয়ে যাবেন সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। চারপাশে চা বাগান আর মাঝখানে স্টেডিয়াম, সত্যিই অসাধারণ! এমন সবুজ প্রকৃতির ভেতর স্টেডিয়াম পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই।
প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণায় প্রতিনিয়ত মুখর থাকে চা বাগান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অন্য এক ভালো লাগার আবেশ সৃষ্টি করে চা বাগান। আপনার আগামীর জন্য এখানেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। সিলেট, যেন সবুজ প্রকৃতির অভয়াশ্রম! আর সব সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের জন্য সেরা পছন্দের স্থান চা বাগান। প্রকৃতির সব বিচিত্র সৌন্দর্য মিশে আছে চা গাছের সবুজ পাতায়। তো এই অপরূপ চায়ের দেশে আপনি চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন। নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে লাক্কাতুরা, মালনীছড়া আর তারাপুর চা বাগানে নারী শ্রমিকদের চা পাতা তোলার দৃশ্য। স্থির হয়ে যায় পর্যটকের চোখ।


কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে সিলেট যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, এস আলম, এনা, শ্যামলী পরিবহনের বাসে সিলেট যেতে পারবেন। নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে উপবন, কালনী, জয়ন্তিকা ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট যায়। ট্রেনের জনপ্রতি টিকিটের মূল্য শ্রেণিভেদে ৩৭৫ থেকে ১২৮৮ টাকা। এ ছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নভোএয়ার, ইউএস বাংলা কিংবা বিমান বাংলাদেশের মতো ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে সিলেটে যেতে পারবেন। সিলেট থেকে স্থানীয় পরিবহনে সহজে লাক্কাতুরা চা বাগানে পৌঁছানো যায়। 

 

কোথায় থাকবেন
লাক্কাতুরা চা বাগানের ভেতরে চমৎকার একটা গেস্ট হাউস আছে। নিরিবিলি এই গেস্টহাউসে রাত্রিযাপন অনেকটা অন্য গ্রহে থাকার মতোই অ্যাডভেঞ্চারাস। এখানে তিনটি রুম, কিচেন এবং গেস্টরুম আছে। বারবিকিউ এবং ক্যাম্পফায়ারের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। যারা এখানে থাকতে চান, ঢাকায় ন্যাশনাল টি বোর্ডের হেড অফিস থেকে আগেই অনুমতিপত্র জোগাড় করে নিয়ে যাবেন।
এ ছাড়া সিলেটে থাকার মতো অনেক হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হলো- হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে। হোটেল অনুরাগ-এ সিঙ্গেল রুম ৪০০ টাকা (দুজন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০ টাকা (নরমালি চারজন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য মাজার/দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া সিলেটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক, নির্ভানা ইন, হোটেল সুপ্রিম, রোজ ভিউ হোটেল, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন, হোটেল ফরচুন গার্ডেন, হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে। 

 

কোথায় খাবেন
সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, বিগ বাইট রেস্টুরেন্ট, রেইনবো চাইনিজ, আড্ডা রেস্টুরেন্ট, স্পাইস কিচেন, হাংরী স্টেশন, প্রেসিডেন্ট রেস্টুরেন্ট, পালকি ও ট্রিট গ্যালারিসহ অসংখ্য ফাস্টফুড, চাইনিজ ও বাঙালি খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ হলে সিলেটের জনপ্রিয় সাতকড়ার আচার এবং আখনি বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

 

ভ্রমণ পরামর্শ
বাংলো ও ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখতে হলে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
শুধু বাগান ঘুরে দেখার জন্য সাধারণত বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে অনুমতি নিলে গাইড নিয়ে পুরো বাগান ও চারপাশ ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন।
নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলুন।
চা বাগানে জোঁক ও পোকামাকড়ের উপদ্রব রয়েছে এক্ষেত্রে সতর্ক।

 

সিলেটের দর্শনীয় স্থান
সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলং, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, লোভাছড়া, হজরত শাহ্‌জালাল (র.) ও হজরত শাহ্‌ পরান (রহ.) এর মাজার, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, তামাবিল, জিতু মিয়ার বাড়ি, আলী আমজদের ঘড়ি, পান্থুমাই ঝর্ণা, লক্ষনছড়া, ক্বীন ব্রিজ, মালনীছড়া চা বাগান, জৈন্তা হিল রিসোর্ট, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, নাজিমগড় গার্ডেন রিসোর্ট, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, লালাখান, হাকালুকি হাওর ও ডিবির হাওর অন্যতম।