ঢাকা ১০ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ২৫ আগস্ট ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান ইউজিসির

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৪ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান ইউজিসির
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে আর্থিক শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ইউজিসিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট পরিপত্র ও অর্থনৈতিক কোডসংক্রান্ত দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রফেসর আলমগীর বলেন, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। ইউজিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট পর্যবেক্ষণের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৪৮টি ও সর্বনিম্ন ৩টি অডিট আপত্তি রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনোভাবেই অডিট আপত্তি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ ব্যয়ে সরকারের বিধান ও নিয়মের ব্যত্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান করা সম্ভব হয় না। তাই নিজস্ব আয় বাড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের অনুদান কমানো হবে না।

ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপপরিচালক মো. এমদাদুল হকের সঞ্চালনায় ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকসহ ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসসের।

বন্যার্তদের উদ্ধার, তহবিল সংগ্রহ ও ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় চবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম
বন্যার্তদের উদ্ধার, তহবিল সংগ্রহ ও ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় চবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ছবি: খবরের কাগজ

সম্প্রতি ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। খুইয়েছেন বসতভিটা, গবাদি পশু-পাখিসহ শেষ সহায়সম্বলটুকু। এমন পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, অর্থ-তহবিল তোলা ও ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দও। প্রদান করেছেন তাদের একদিনের বেতন। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গণত্রাণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বানভাসিদের উদ্ধারের জন্য শুরু থেকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ছুটে যায় শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাস এবং চট্টগ্রাম নগরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের সহায়তায় তহবিল, ত্রাণ সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন পানিবন্দি মানুষের কাছে। 

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য বন্যাকবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে একদিনের বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

এ বিষয় চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান খবরের কাগজকে বলেন, বন্যাকবলিত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে একদিনের বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের ফান্ডে টাকা প্রদান করবেন শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়াও আমাদের আলাদা ফান্ড আছে। সম্ভবত ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকার মতো সংগ্রহ হতে পারে বলে আমরা আশা করছি। এ টাকা আমরা প্রধান উপদেষ্টার ফান্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরশেদ ইসলাম জনি বলেন, বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ফান্ড কালেক্ট করে ত্রাণ ক্রয় করি এবং তা পোঁছে দেওয়ার জন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় যাচ্ছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজ বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন।

অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, এ বন্যায় আগাম সতর্কতার ব্যাপারে না জানার ফলে প্রায় অনেক পরিবারই গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। তাদেরকে উদ্ধারের জন্য অন্যান্যদের মতো মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে শুকনা খাবার অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। যদিও সকলের কাছে পৌঁছানো সম্ভব না হলেও আমরা তাদের জন্য কিছুটা করার চেষ্টা করি। পাশাপাশি আমরা তহবিল সংগ্রহ করে তহবিলের অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। 

এদিকে বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তার জন্য গণত্রাণ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে এ কর্মসূচি পালন করছে তারা। গণত্রাণ কর্মসূচিতে আর্থিক অনুদানসহ, শুকনা খাবার, পোশাকসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্য অনুদান করছেন সাধারণ জনগণ।

মাহফুজ শুভ্র/এমএ/ 

কেমন বাংলাদেশ চাই

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
কেমন বাংলাদেশ চাই

একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধশালি ও সুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমাদের সবার। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের সবারই একযোগে কাজ করতে হবে। ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ -এই প্রশ্ন আজ সবার মনে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, নারীর অধিকার, পরিবেশ, গণতন্ত্র- এসব বিষয়ে আমাদের সবার মধ্যে তীব্র আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন স্তরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে দেশবাসী। ছাত্রছাত্রী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সবাই নিজ নিজ মতামত দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই আলোচনা ব্যাপকভাবে চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কেমনবাংলাদেশচাই’ হ্যাশট্যাগটি ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এই জনমতকে আরও গভীরভাবে বুঝতে এবং দেশের উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। 


বাংলাদেশ হবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র
মহসিন
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র একটি দেশ হলেও তার রয়েছে গৌরব করার মতো নানা ইতিহাস। এ গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে এ দেশের মানুষকে। যদিও সুন্দর এ দেশটি স্বাধীন হওয়ার পরও সম্ভাবনার হাতছানিতে এসেছে স্বৈরাচারের থাবা। স্বৈরাচারের দোসরদের পাশবিকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সুন্দর একটি দেশ গঠনে প্রয়োজন পড়ে নানা সংস্কারমূলক কাজের। নতুনভাবে ২০২৪ পরবর্তী দেশ সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ হবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কী? যে রাষ্ট্র নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে, তাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। যেখানে শুধু রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয় বরং সামগ্রিক উন্নয়নে নজর দেওয়া হবে। সামগ্রিক উন্নয়ন বলতে একটি দেশের অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানবসম্পদের উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে প্রধান অন্তরায়গুলো যেমন: বৈষম্য, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, লবিং, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষা ও চিকিৎসার গুণগতমানের অভাব, যানজট ও তথ্যপ্রযুক্তির অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এগুলোর অপসারণ করা সম্ভব হবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠিত হলে জনকল্যাণ সাধন হবে। রাষ্ট্র নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, রাষ্ট্র নাগরিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করবে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবে, জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করবে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, শ্রমসংস্থান ও শ্রমআইন বাস্তবায়িত হবে, কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি সাধন হবে, স্বাধীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষিত থাকবে, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি থাকবে চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, রাষ্ট্রে চালু থাকবে অক্ষম বৃদ্ধ এবং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য সেবা।  তাই ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গঠনে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন
তাসনীয়া তাবাসসুম 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘বাংলাদেশ’ দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশ। অপরূপ সুন্দর এ দেশটি জন্মলগ্ন থেকেই নানা শোষণ, অন্যায়, নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আসছে। কখনো ইংরেজদের অত্যাচার, আবার কখনো বা পাকিস্তানিদের নিপীড়ন। এতদসত্ত্বেও বীরের জাতি বাঙালি বারবার শত্রুদের রুখে দিয়েছে নব নব উদ্যমে। ফলশ্রুতিতে আমরা ’৭১-এ পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতা আবার নতুন রূপ লাভ করেছে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কাজেই এ স্বাধীনতা ধরে রাখতে এবং স্বাধীন দেশের সুফল পেতে এখনো পাড়ি দিতে হবে সুদীর্ঘ পথ।

আমাদের দেশটি এখন পর্যন্ত বেকারত্ব, দারিদ্র্য, চুরি, ডাকাতি, অশিক্ষা, দুর্নীতি, যানজটসহ নানা রকম সমস্যায় পর্যুদস্ত। দেশের উন্নয়নের পথে বড় রকমের অন্তরায় এগুলো। বেকারত্ব এ দেশে রীতিমতো অভিশাপ। বেকারত্বের কবলে যুব সম্প্রদায় আজ হতাশাগ্রস্ত। বেকারত্ব যেন দারিদ্র্যতাকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে। এ ছাড়া দেশে সুশিক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্নীতি, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা আরও ছড়িয়ে পড়ছে। আজও এই স্বাধীন দেশের রাস্তায় একা বের হতে ভয় পাই, মত প্রকাশের আগে দুবার ভাবতে হয়। অথচ আমাদের বীর যোদ্ধারা একটি স্বাধীন, নিরাপদ, উন্নত দেশের স্বপ্নে মোহিত হয়ে আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন আমরা কতটুকুই বা করতে পেরেছি!

আমি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে বেকারত্বের অভিশাপ থাকবে না। এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে মুখস্থবিদ্যার বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশের প্রতিটি মানুষ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। একই সঙ্গে বাস্তব জীবনেও এই সুশিক্ষার প্রয়োগ করতে পারবে। নতুন বাংলাদেশে একা একটি মেয়ে রাস্তায় বের হতে ভয় পাবে না, যেখানে জানমালের নিরাপত্তা থাকবে। দেশে কোনো স্বৈরশাসন থাকবে না, থাকবে বাক প্রকাশের স্বাধীনতা, থাকবে সুবিচার ও স্বচ্ছতা। সবাই বৈষম্য ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বলতে পারব, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলিম, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান আমরা সবাই বাঙালি’। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সময়, দৃঢ় মনোবল, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং যথাযথ পরিকল্পনা।

সরকারের কাছে প্রাধান্য পাক ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থ 
মহিউদ্দিন
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বুয়েট

জুন মাসে যৌক্তিক কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দ্রুতই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে রূপ নেয়। যার শেষ হয় ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে। অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি। তাই ভবিষ্যতে কোনো শাসক যেন স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় সংস্থার ওপর সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। যেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করে, একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না করে। এ ছাড়া নির্বাচনে কারচুপি, বাকস্বাধীনতা হরণ ও সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, যার মাধ্যমে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। নতুন বাংলাদেশে বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং সশস্ত্রবাহিনী যেন সরকারপ্রধান ও সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত থেকে সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদমাধ্যমকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে।

সব নাগরিক যেন বাকস্বাধীনতা ও তথ্য অধিকারসহ সংবিধান প্রদত্ত সব নাগরিক অধিকার বৈষম্যহীনভাবে ভোগ করতে পারে। সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেন একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি হতে না পারে তা বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও সরকারপ্রধান সর্বোচ্চ কত মেয়াদ থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ ও কার্যক্রম সরকারি প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হোক, যেন নিয়োগ প্রক্রিয়া, কার্যক্রম ও আর্থিক লেনদেনের সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। অর্থনৈতিক নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে দেশের মুদ্রাস্ফীতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। আশা করি, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে জনগণের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে।

মূলধারার গণমাধ্যমে ফিরে আসুক বাক ও লেখার স্বাধীনতা

আদিবা নওমী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

দীর্ঘ ১৫ বছর পর স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এতগুলো বছরে এ দেশে যেমন বেড়েছে নানা দুর্নীতি তেমন সংঘটিত হয়েছে বহু অপরাধ। এখন যেহেতু নতুন করে এই দেশকে সাজানোর সময় এসেছে, তাই আমরা সবাই চাই এ দেশে কিছু কার্যক্রমে পরিবর্তন আসুক। নতুনভাবে এই দেশকে চাই বিশ্ব দরবারে পরিচয় করাতে। সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা চাই, দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে ফিরে আসুক বাকস্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতা।

এ ছাড়া সব সময় এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উন্নত রাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য গিয়েছে। তবে আমাদের দেশে বহির্বিশ্ব থেকে তেমন কেউ আসেনি। তাই আমি চাই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য বহির্বিশ্বের নিকট পরিচিতি লাভ করুক। এ ছাড়া আমরা যদি লক্ষ্য করি, তা হলে দেখতে পাব প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ রোগী ভারতে যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য। এতে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা কতটুকু উন্নত তা অনুমেয়। তাই বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আরও উন্নত করা হোক। আবার দেখা যায়, সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমে অনেক সময় লাগে। এ জন্য দেশের নাগরিকদের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব অনিয়ম বন্ধ করে সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা হোক।


বন্ধ হোক অর্থ পাচার

মুনঈম মোর্তজা
যন্ত্রকৌশল বিভাগ,বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই দেশের আপামর জনগণ শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী। শান্তিপ্রিয় বলেই অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথা নত করে না তারা। তারা চায় দেশকে এগিয়ে নিতে, দেশের কল্যাণে কাজ করতে। তবে তাদের সেই চাওয়া মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের কিছু রাজনৈতিক চক্রান্তের কারণে। এই চক্রান্তমুক্ত থাকবে আমাদের এই স্বাধীন দেশ। দুর্নীতিমুক্ত হবে বাংলাদেশ। প্রশাসনে থাকবে জবাবদিহি। প্রতিটা মানুষ সবার জায়গা থেকে দেশের অগ্রগতির জন্য কাজ করবে। দেশটা তখনই সাম্যের হবে, যখন দেশের অগ্রগতি সাধনে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর একজন সচিব উভয়ের ভূমিকাকে সাধারণ মানুষ স্বীকার করবে। দমন-পীড়ন উঠে গিয়ে দেশে রাজনৈতিক মতাদর্শের দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হোক।

দেশের বাজারব্যবস্থাতে স্থিতিশীলতা আসুক। সকল প্রকার দালাল আর সিন্ডিকেটমুক্ত হবে আমাদের দেশ। দেশের টাকা দেশেই থাক। বন্ধ হোক অর্থ পাচার। অর্থ পাচার বন্ধ হলে স্বাধীন দেশে বিনিয়োগের অভাব কখনো হবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ হবে অন্যায়ের প্রতিবাদকারী। যেখানে অন্যায় দেখবে সেখানেই জনতা প্রতিবাদ করবে। বাংলাদেশ হবে বাকস্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের রোল মডেল। বিচারব্যবস্থা থাকবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীন দেশে কাউকে অকালে প্রাণ দিতে হবে না, স্বাধীন দেশে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার থাকবে না।

কূটনৈতিক দক্ষতাসম্পন্ন বাংলাদেশ চাই 

মিফতাউল জান্নাত জ্যোতি 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ভূ-রাজনৈতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায়। এ কারণে যেকোনো একটি ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ। এ ক্ষেত্রে দক্ষ কূটনীতি হতে পারে বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম হাতিয়ার। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশ বরাবরই দক্ষ কুটনীতির পরিচয় দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের কূটনীতিতে আরও উন্নত করার জায়গা রয়েছে। আগামীতে আরও দক্ষ কূটনীতিকের সম্ভাব্য সংখ্যা বাড়ানো হোক। যেন বিশ্বের বড় বড় দেশ, যারা আমাদের জন্য হুমকি বা অদূর ভবিষ্যতে হুমকি হতে পারে। তাদের সঙ্গে শক্তিতে না পারলেও দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা যেতে পারে। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্যান্য রাষ্ট্রের কূটনৈতিক খাতের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তারা এখানে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ খাতে যেটাকে আমরা জেনারেশন গ্যাপ বলে থাকি, সেটা যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেছে তারা।

নতুন যে সরকার গঠিত হয়েছে এবং অদূর ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তাদের উচিত প্রত্যেকটি খাত নতুনভাবে সংস্কার ও সমন্বয় করা। এখনই সময় বাংলাদেশের নিজেকে নতুনভাবে, নতুন উদ্যমে কূটনীতি তৈরি করার।

সোনার বাংলাদেশ হবে ধর্ম, বর্ণ, জাত নির্বিশেষে

ফারিহা ঐশী
শিল্পকলার ইতিহাস ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম, বর্ণ, জাত নির্বিশেষে সবাই এ দেশে সমান অধিকার নিয়ে থাকবে। সমাজের সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে একটি বৈষম্যহীন দেশ গড়ে উঠবে। এই বৈষম্যহীন দেশ গড়ার পেছনে শক্ত ভূমিকা পালন করবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে উন্নত শিক্ষানীতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অন্যতম সমস্যা হলো বেকারত্ব, তাই শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তা হলে বেকারত্বের মানসিক চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া আমাদের সম্ভাবনাময় আগামীর বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত। যেখানে প্রত্যেকের সব কাজের জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি আমাদের দেশের অর্থনীতি কেবল একক কোনো খাতের ওপর নির্ভরশীল হবে না। অর্থনীতি নির্ভর করবে বহুমুখী শিল্পের ওপর।  সর্বশেষ বলতে চাই, নতুন বাংলাদেশ গঠনে ধর্ম, বর্ণ ও মতের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, তেমনি আগামীর বাংলাদেশে সবাই সবার প্রতি সহনশীল হোক। এভাবেই সোনার বাংলাদেশ গঠন হবে এ আশাই ব্যক্ত করি।

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হোক গবেষণা নির্ভর

মো. মোছাদ্দির হোসেন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আগামী দিনের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হোক গবেষণানির্ভর, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান বিশ্বে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু পাঠ্যবইয়ের গতানুগতিক জ্ঞান দিয়ে নয়, বরং গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে। গবেষণানির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে প্রথমে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোনিবেশ করার জন্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিকশিত হবে। তারা একদিকে যেমন আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান আয়ত্ত করতে সক্ষম হবে, তেমনি অন্যদিকে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

বিশেষ করে, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিল্প খাতে গবেষণার ফলে নতুন নতুন উদ্ভাবন সম্ভব হবে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।

একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশ দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেবে।

দেশপ্রেমই হবে উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার

নিশাত নাজনীন শিমু
রসায়ন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই কি স্বাধীন দেশ? বিজয়ের ৫৩ বছরে দাঁড়ানো এই বাংলাদেশকে নিয়ে কত স্বপ্ন আমাদের! সময়ের সমান্তরালে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূর্ণতা পায়নি। এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে দেশপ্রেমই হবে উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। এখানে অস্ত্র কী তা জানবে না কেউ, শিক্ষা মূল ভূমিকা রাখবে দেশের সব ক্ষেত্রে। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’- এই নীতিতে সবাই লিপিবদ্ধ থাকবে। সবাই মানুষ, এটাই হবে একমাত্র পরিচয়। এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান হবে না, দুর্নীতি গোড়া থেকে নির্মূল করতে হবে। কারণ এটা কত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তা আমাদের কারোরই আর অজানা নয়। এমন একটি বাংলাদেশ হবে যেখানে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পারব মুক্ত পাখির মতো, থাকবে না কোনো ভয়, যেখানে লিঙ্গভেদে মানুষ থাকবে নিরাপদ, রাস্তায় বের হওয়ার পর ‘দিন-রাত’ বলে কোনো কথা থাকবে না। সমাজের সব স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমেই এমন একটি সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ‘কপি-পেস্ট’ নিয়ম চলবে না
মোস্তফা কামাল ইমরোজ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি হোক, এটাই একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার চাওয়া। তবে এই অগ্রগতি প্রসঙ্গে যে সংস্কার কাজ হয়, তাতে প্রায়শই দেখা যায় উন্নত দেশগুলোর কিছু নিয়ম ‘কপি-পেস্ট’ করে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের চর্চার ফলে অদূর ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক নিজস্বতাও বিলীন হওয়ার হুমকিতে পড়বে।

এ জন্যই আমার চাওয়া, নতুন কাঠামোগত পরিবর্তনটা হবে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে। যেখানে মৌলিকত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অগ্রগতি হবে সমানুপাতিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানবিক উন্নয়নের পার্থক্য হ্রাস হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অতীতে চলমান অস্থিরতার পেছনের মূল কারণগুলো বের করে, তা সমাধানের জন্য সরকার কাজ করবে। বাংলাদেশের আদিবাসী সমাজকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে মূলধারার স্রোতে আনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। বাংলাদেশকে এমনভাবে গোছাতে হবে যেন একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।


কর্মক্ষেত্রে অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়

তানভীর আহমেদ
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ,হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে ফিরে আসুক শান্তি। এমন বাংলাদেশ গড়ার অনুরোধ রইল, যে দেশে কাউকে কর্মক্ষেত্র ছাড়তে হবে না, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে হবে না। যে সরকারই আসুক, আমাদের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চাওয়ার পূরণ হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা হবে গবেষণা এবং উদ্ভাবন নির্ভর। বিসিএস ও ক্যাডারভিত্তিক চাকরি হবে সত্যিকারের প্রায়োগিক জ্ঞানের ওপর, মুখস্থ বিদ্যার ওপরে নয়। চাকরি, পড়াশোনা বা কোনো ধরনের সেবা পেতে সবার থাকবে সমান অধিকার। সব জায়গায় জবাদদিহির বিধান থাকবে।

সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি জবাবদিহি এড়িয়ে না যায়, তা হলে যে কোনো সাধারণ মানুষ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন করতে পারবে, তথ্য নিতে ও দিতে পারবে। দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রচুরসংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে সরকার। আইটি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম, ব্যবসা এবং প্রবাসী কল্যাণে যেসব বিভাগ থাকবে, সেখানে সত্যিকারের দক্ষ ব্যক্তি বা এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন এমন মানুষদের স্থান পাবে। বিচার বিভাগে সরকারি দল বা কোনো আমলার হস্তক্ষেপ থাকবে না।

কলি

শাবির হলে নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা, বিক্ষোভ

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
শাবির হলে নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা, বিক্ষোভ
ছবি : খবরের কাগজ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বন্যা ও দেশের এই সংকটের সময়ে নিরাপদে হলে থাকার জন্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। তারা বর্তমানে নিজ দায়িত্বে হলে থাকলেও প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ পরান হলের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মুক্তমঞ্চে জড়ো হন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আন্দোলন শেষে সমন্বয়করাই আমাদের হলে আসতে বলেন। যাতে  হল খালি পেয়ে অন্য কেউ দখল করতে না পারে। এখন আবার তারাই আমাদেরকে হল ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশের এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকের বাড়ি বন্যাকবলিত এলাকায় এবং অনেকের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আমরা নিজ দায়িত্বে হলে থাকতে একমত হয়েছি। এরপরে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা নিজেদের দায়ভার নিজেরা নেব। তবে আমাদের সমস্যার ব্যাপারে যদি সমন্বয়করা একাত্মতা পোষণ করেন, আমরা অবশ্যই তাদের কথা মেনে নেব। কারণ তাদেরও আন্দোলনে অনেক ভূমিকা ছিল।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সমন্বয়কসহ সবাই আলোচনা করুন, হলে যদি কোনো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থাকেন, প্রমাণসাপেক্ষে আমরা তাদের হল থেকে বের করে দেব।’

এ সময় বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জুনায়েদ হোসেন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাকিম বিল্লাহ প্রমুখ। 

এর আগে গত ২২ আগস্ট রাতে ছেলেদের হলগুলোতে দুর্বৃত্তদের মোটরসাইকেলে মহড়া এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে রাত ৩টার দিকে  তারা হলে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রায় সব প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাদের পদত্যাগের পর থেকেই অভিভাবকহীনতায় ভুগছে শাবিপ্রবি। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা।

ইসফাক আলী/অমিয়/

পমেক শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৪ এএম
পমেক শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি
ছবি: খবরের কাগজ

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের (পমেক) এক শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষের অফিসের সামনে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক রেজোয়ানুল করিম শামীম কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে কর্মরত আছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যাপক রেজোয়ানুল করিম শামীম দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে নারীশিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালান।

শিক্ষার্থীরা এ সময় গত ১৬ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। ওই ঘটনায় এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এখান থেকে চলে যেতে বদলির আবেদন করবেন।’ ১৬ আগস্টের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

টিএসসির গণত্রাণ কর্মসূচি: একদিনে সংগ্রহ ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৪ এএম
টিএসসির গণত্রাণ কর্মসূচি: একদিনে সংগ্রহ ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা
ছবি: খবরের কাগজ

বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চলমান গণত্রাণ কর্মসূচিতে শুধু শুক্রবারে অনলাইন ও নগদ ১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ১৭২ টাকা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। 

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হিসাব করে টাকার এ পরিমাণ জানা যায়। এ তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম।

এর আগে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ১৪ লাখ ৬০ হাজার ১৭৩ টাকা সংগ্রহ করে।

এর আগে বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যাকবলিত জেলায় রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু এবং পাবলিক ফান্ড রেইজিং উদ্যোগ শুরুর কথা জানায়।

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/