সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন ওরফে ঐশী পরীক্ষা না দিয়ে পাস করার অভিযোগ ওঠে একই বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন ছাড়াও ওই বিভাগের আরও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ওই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করে একাধিক সূত্র বলছে, এই ঘটনায় ওই বিভাগের আরও দুই সিনিয়র শিক্ষকের ক্রমাগত চাপে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন। এমনকি ওই দুই শিক্ষকের চাপে ঐশীকে চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন, যদিও পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ওই পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণ করেনি ঐশী।
সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া নানা কাণ্ডে বিতর্কিত ওই বিভাগের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম এবং তার ঘনিষ্ঠ আরেকজন সিনিয়র শিক্ষকের ক্রমাগত চাপ ও সুপারিশে প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন কঠোর গোপনীয়তায় সবার অগোচরে কোনো একজন শিক্ষকের বাসায় পরীক্ষাটি নিয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিনের বক্তব্যে এমনটিই আভাস পাওয়া যায়, যদিও তিনি মিডিয়ার সামনে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। ধারণা করা হচ্ছে, তদন্ত কমিটির কাছে বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরবেন ওই শিক্ষক। এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালকের পদ হতে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই ঘটনায় প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিনকে আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন উপাচার্যের সময় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান নিশ্চিতকরণ সেল আইকিউএসির পরিচালক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যও রয়েছেন পরিবারের সদস্য। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন নিজেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত দাবি করছেন। এ ছাড়া গত বছর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গান রচনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুরসালিন মুন্না বলেন, এগুলোর কলকাঠি নাড়ছে হাফিজুর রহমান সেলিম স্যার। উনি সেদিন ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। ওনার মতো করে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোনও দিয়েছিলেন। তবে ওনার সামনে শিক্ষার্থীরা যায়নি। যতদূর শুনেছি সিআররা হয়তো-বা গেছে।
তিনি আরও বলেন, গণিত বিভাগে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, পরীক্ষা না দিয়েও মার্ক পাওয়ার ঘটনা আছে আরও।
এ ব্যাপারে ড. আর এম হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তো দেশেই ছিলাম না। এখন কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে, এ ব্যাপারে আর কি বলব!
এ ব্যাপারে ড. মো. রুহুল আমিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
গাজী আজম/জোবাইদা/