ঢাকা ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
English
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান
অলংকরণ: মাসুম

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং এই সাফল্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কৃতিত্ব বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত নারীদের। গ্রামীণ কৃষি থেকে শুরু করে শহুরে শিল্প এবং অনানুষ্ঠানিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, নারীরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিতে অনস্বীকার্য শক্তি হয়ে উঠেছে। সামাজিক এবং কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তাদের অংশগ্রহণ পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় অর্থনীতিকে পরিবর্তন করেছে। আজকের এই লেখায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা, তাদের অবদান, তাদের চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নারী: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালক

শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৩৬ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। কৃষি, তৈরি পোশাকশিল্প (আরএমজি), ক্ষুদ্র উদ্যোগ এমন নানাবিধ ক্ষেত্রে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাদের কাজ দারিদ্র্য হ্রাস, পরিবারের আয় বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে।

তৈরি পোশাকশিল্প

অর্থনীতিতে নারীদের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) শিল্পে দেখা যায়, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি। এই সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ, যা এমন একটি শিল্পের বৃদ্ধিকে সচল রেখেছে, যেখানে বাংলাদেশ চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আরএমজি সেক্টর লাখ লাখ নারীকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা থেকে যারা কাজের সন্ধানে শহরে পাড়ি জমান। এই নারীরা কেবল তাদের পরিবারকেই সাপোর্ট করেন না বরং উপার্জনের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখেন।

আরএমজি সেক্টরের সাফল্যকে প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট শিল্পে নারীর ক্ষমতায়ন কীভাবে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারে তার একটি কেস স্টাডি হিসেবে দেখা হয়। এটি সামাজিক পরিবর্তনকেও ত্বরান্বিত করেছে, লিঙ্গ সমতার উন্নতি ঘটিয়েছে, উন্নত কাজের পরিবেশ এবং উন্নত মজুরি দাবি করার জন্য নারীদের একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।

কৃষিতে নারী

শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে রয়ে গেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জিডিপি- উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রাখে। নারীরা এই সেক্টরে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে জীবিকা নির্বাহ, ফসল উৎপাদন এবং পশুপালন ব্যবস্থাপনায়। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) তথ্য অনুসারে,  কৃষি শ্রমশক্তিতে ৫০ শতাংশের বেশি। তারা প্রায়শই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা বেতন ছাড়াই বপন, ফসল কাটা এবং ফসল-পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের মতো কাজে নিযুক্ত থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিতে নারীদের অবদানকে স্বীকৃত ও আনুষ্ঠানিক করার লক্ষ্যে নানারকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়ন গ্রামীণ উন্নয়নকেও উৎসাহিত করে, যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো গ্রামে বসবাস করে।

উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্রঋণ

ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলো নারীদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু এবং ব্যবসার প্রসার এ মূলধনের জোগান দিয়েছে। এই উদ্যোগগুলো লাখ লাখ নারীকে স্বাবলম্বী হতে, তাদের জীবিকা উন্নত করতে এবং সমাজের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম করেছে। নারী উদ্যোক্তারা এখন হস্তশিল্প ও টেইলারিং থেকে শুরু করে পোলট্রি ফার্মিং, পোশাক বিক্রি, প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের খুচরা বিক্রেতার বিস্তৃত পরিসরে নিজেদের যুক্ত করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা যখন আয় নিয়ন্ত্রণ করে তখন তারা এমন ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেয়, যা পারিবারিক কল্যাণ বাড়ায়, ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে অর্থপূর্ণ প্রভাব তৈরি হয়।

অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে নারীর চ্যালেঞ্জ

যদিও নারীরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখছেন, তবুও তারা সুযোগসুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। কিছু স্থায়ী বাধা হলো শ্রমজীবী নারীর মজুরি ব্যবধান, শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, যা নারীর গতিশীলতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে।

মজুরি বৈষম্য: বাংলাদেশের নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম উপার্জন করেন, এটি বিভিন্ন শিল্পে একটি সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের গড় মজুরি ২১ শতাংশ কম। এই মজুরি ব্যবধান নারীদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে সীমিত এবং সামগ্রিকভাবে হ্রাস করে।

শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার: যদিও বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবুও উচ্চশিক্ষায় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক মেয়ে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক চাপ বা বাল্যবিবাহের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। উচ্চশিক্ষার সুযোগের অভাব প্রকৌশল, প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের চাকরিতে নারীদের প্রবেশকে সীমাবদ্ধ করে।

সামাজিক মনোভাব: আমাদের সমাজ এখনো এটি বিশ্বাস করে যে নারীরা প্রাথমিকভাবে গৃহস্থালির কাজ এবং পরিবারের যত্ন নেওয়ার সব দায়িত্ব পালন করবে। কাজ এবং গৃহজীবনের ভারসাম্যের এই ‘দ্বৈত বোঝা’ নারীদের শ্রমশক্তিতে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার 
ক্ষমতা হ্রাস করে, তাদের কর্মজীবনের অগ্রগতিকে সীমিত করে।

নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: এগিয়ে যাওয়ার পথ

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের অব্যাহত অবদান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে অবশ্যই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে যা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে।

নীতিগত হস্তক্ষেপ: সরকারকে অবশ্যই জেন্ডার-সংবেদনশীল নীতিগুলোর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চালিয়ে যেতে হবে যা নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সমান কর্মসংস্থানের আরও ভালো সুযোগ প্রদান করবে। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করতে শ্রম আইন শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: নারীদের জন্য আর্থিক সুবিধাগুলোতে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এই সুবিধা তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য বড় পরিসরে ঋণ, বিমা এবং সঞ্চয়ের মতো বিকল্পগুলো প্রদানের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। ব্যাংকগুলো নারীদের ঋণদানে আরও সহজ শর্ত এবং আন্তরিকতা দেখাতে পারে।

শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন: নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (STEM) ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের চাকরির দরজা খুলে দিতে পারে। নারীদের প্রয়োজনের জন্য তৈরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলো আইটি এবং ফিন্যান্সের মতো উদীয়মান সেক্টরে তাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে পারে।

সামাজিক নিয়মের পরিবর্তন: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য সাংস্কৃতিক বাধাগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে, বিশেষ করে যা তাদের গতিশীলতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করে। সমাজভিত্তিক কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং লিঙ্গ সমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সবশেষে
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য এবং এ অবদান দিনে দিনে বাড়ছে। গার্মেন্টশ্রমিক থেকে উদ্যোক্তা, কৃষক থেকে নীতিনির্ধারক, নারীরা সক্রিয়ভাবে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠন করছেন। যাই হোক, নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে আরও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নারীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

জাহ্নবী

৬ বীরকন্যার গল্প

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
৬ বীরকন্যার গল্প
(বাঁ থেকে) মোছা. এলেজান (এলিজান নেছা), মোছা. দোলজান নেছা, মোছা. মাছুদা (মাসুদা খাতুন), মোছা. মোমেনা খাতুন, রাবেয়া খাতুন ও মজিরন নেছা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু যে পুরুষরাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন, তা নয়। বরং অনেক নারীও সেই যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন। কিছুসংখ্যক নারী যুদ্ধ করেছিলেন অস্ত্র দিয়ে, কেউ শত্রুপক্ষের আস্তানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে তা সরবরাহ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, কেউ নিজের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, পরম স্নেহে তাদের পাতে তুলে দিয়েছেন খাবার, কেউ আবার অত্যাচার সহ্য করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে। কুষ্টিয়ার এমনই ছয়জন বীরকন্যা সম্পর্কে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী

বীরকন্যা মজিরন নেছা

মজিরন নেছার আবাস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নাতুড়িয়া গ্রামে। তিনি নিজ জেলাতেই যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের প্রয়োজনে কখনো ধরেছেন ছদ্মবেশ, সংগ্রহ করেছেন শত্রুপক্ষের গোপন খবর। কখনো আবার সময়ের প্রয়োজনে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন হাতে। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছেন, সব আত্মত্যাগকে তখন সার্থক মনে হয়েছে। যুদ্ধের অনেক বছর পর বীরকন্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আরও সম্মানিত বোধ করেছেন বীরকন্যা মজিরন নেছা।

বীরকন্যা রাবেয়া খাতুন

রাবেয়া খাতুনের জন্ম কুষ্টিয়ার করিমপুরে। বর্তমানে তিনি সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের বংশীতলা গ্রামে বসবাস করেন। যখন দেশজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে, তখন তিনি নববধূ, বয়স মাত্র ১৬ বছর। ওইটুকু বয়সেই তাকে দেখতে হয়েছিল জীবনের সবচেয়ে নির্মম রূপ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ভয়ানকভাবে নির্যাতন করেছিল। যখন যুদ্ধের তাণ্ডবে আর ভয়ে তার এলাকার সব নারী পালিয়ে গিয়েছিলেন, তার স্বামী তাকে যেতে দেননি। বলেছিলেন, ‘তুই চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত রান্না করবে কে?’ আজ তার স্বামী নেই, স্বামীর ছোট্ট ভিটেতেই বসবাস করেন রাবেয়া। তার আফসোস, তার স্বামী আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি, যদিও তিনি বীরকন্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক পরে।

বীরকন্যা মোছা. মোমেনা খাতুন

কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোমেনা খাতুন। ১৯৭০ সালে যখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর, তখন তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর তারপরের বছরেই তো দেশজুড়ে যুদ্ধ লেগে গেল। যুদ্ধের সময় মোমেনা খাতুন যখন মা-বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, তখন তাদের গ্রামে একদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে। যে যার মতো জীবন নিয়ে পালাতে থাকে। তার ছোট বোনও পালিয়ে যান। কিন্তু তিনি থেকে যান তার মা-বাবার সঙ্গে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার মা-বাবাকে উঠানে দাঁড় করিয়ে রেখে কয়েকজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে বীরকন্যা নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বীরকন্যা মোছা. দোলজান নেছা

দোলজান নেছার জন্ম কুমারখালী উপজেলার এলঙ্গীপাড়া গ্রামে। দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন তার কোলে তিন মাসের এক কন্যা। যেদিন তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে পাকিস্তানি সেনা আসে, সবাই রুদ্ধশ্বাসে পালাতে থাকে। কিন্তু তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি, তার আগেই পাকিস্তানি সেনারা তাদের বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। একপর্যায়ে তিনি বুদ্ধি করে দৌড়ে পালিয়ে যেতেও শুরু করেছিলেন, কিন্তু কোলে সন্তান থাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দৌড়ে পারেননি। তারা তাকে ধরে ফেলেছিল। সন্তানসহ মাটিতে ফেলে দিয়েছিল তাকে। তারা রাজাকারের মাধ্যমে জেনে গিয়েছিল, তার স্বামীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের যোগাযোগ আছে। তাই স্বামীর সামনেই তাকে করেছিল পৈশাচিক ধর্ষণ। বেয়োনেট দিয়ে বাঁ স্তন খুঁচিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছিল। তার শাশুড়ি আর স্বামীকেও খুব মেরেছিল। এসব কথা সন্তানদের কাছে দীর্ঘজীবন গোপনই রেখেছিলেন দোলজান নেছা। পরবর্তী সময়ে তারা সব জানতে পেরেছেন।

বীরকন্যা মোছা. এলেজান (এলিজান নেছা)

কুমারখালী উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের বাসিন্দা এলিজান নেছা। যুদ্ধের সময় তিনিও ছিলেন নববধূ। চোখে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু যুদ্ধের কবলে সব স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে গেল তার। এলিজান নেছার স্বামী পদ্মা নদীতে মাছ ধরতেন। তার নৌকাতে মুক্তিযোদ্ধারা যাতায়াত করতেন, থাকতেনও। এমনকি তাদের বাড়িতেও আসতেন। সে খবর জেনে তাদের বাড়িতে ১৫-২০ জন পাকিস্তানি সেনা এসে হামলা করে। এলিজান নেছা এক বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাকে সেখান থেকেই ধরে আনা হয় এবং অনেকে মিলে ধর্ষণ করে। এসব নিয়েই কষ্টেসৃষ্টে জীবন কেটে যাচ্ছিল তাদের। কিন্তু ১৯৯২ সালে যখন তাকে গণ-আদালতে সাক্ষ্য দিতে নিয়ে যাওয়া হলো, তারপর থেকে তাদের জীবন আরও বিভীষিকাময় হয়ে যায়। সমাজ তাদের কটু কথা শোনায়, বাঁকা চোখে দেখে, কাজের সুযোগ দেয় না। যারা দেশের জন্য এত ত্যাগ করল, তাদের জীবনেরই এমন করুণ পরিণতি।

বীরকন্যা মোছা. মাছুদা (মাসুদা খাতুন)

কুমারখালী উপজেলার হাসিমপুর গ্রামের আরও এক বীরকন্যার নাম মাসুদা খাতুন। যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১৮-১৯ বছর। বিয়ে হয়েছিল তারও প্রায় বছর দশেক আগে। তার স্বামী মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। একাত্তরে একদিন তাদের বাড়িতে দুজন পাকিস্তানি সেনা আসে। তাকে জোর করে ঘরে নিয়ে গিয়ে একজনের পর একজন ধর্ষণ করতে থাকে। বিছানায় তখন তার ছোট ছেলেকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল।  পাকিস্তানি সেনারা তার সেই ছোট্ট শিশুকে তুলে নিয়ে কাছের এক ডোবায় ফেলে দেয়। ধর্ষণের পর মাসুদা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন শরীরজুড়ে প্রচণ্ড ব্যথায় ঠিকমতো হাঁটতে পারেননি, খেতে পারেননি। অভাব-অনটনের জীবনে নিতে পারেননি চিকিৎসাও। পরবর্তী সময়ে শরীরের এই দুর্দশা তাকে বহুকাল বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তার সঙ্গে এমন নোংরা ঘটনা ঘটে যাওয়াতে স্বামী তাকে প্রথম প্রথম মেনে নিতে পারেননি। পরে মেনে নিয়েছেন আবার, অথবা মানিয়ে নিয়েছেন। রাজাকাররা লুট করেছে তাদের সোনাদানা, টাকা-পয়সার সামান্য সঞ্চয় যা ছিল। এমনকি দুটি গরু ছিল তাদের, সেসবও নিয়ে গেছে।

যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনেও তারা ভালো থাকতে পারেননি। তার সন্তানদের মানুষ ‘মিলিটারির ছাওয়াল’ বলে উপহাস করে। ১৯৯২ সালে গণ-আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলে আরও অনেক মানুষ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা জানতে পারেন। ফলে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন তাদের একঘরে করে রাখা হয়। তার ছেলেদের কাজ থেকে বের করে দেয় লোকজন। তাদের কেউ কাজ দেয় না। তাদের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনার কথা তার সন্তানরা কেউ জানত না। কিন্তু গণ-আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার পর তারাও জেনে গেছে। এই জানাটা তাদের কাছে ছিল অসম্মানের। 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার
বই: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া গৌরবের ৫০ বছর
লেখক: ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন এবং 
ড. সারিয়া সুলতানা

জাহ্নবী

 

উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস: জারিন সালসাবিল সামিহা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস: জারিন সালসাবিল সামিহা
জারিন সালসাবিল সামিহা। ছবি: সংগৃহীত

জারিন সালসাবিল সামিহা। বর্তমানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তার অনলাইন পেইজের নাম আহর্সি। খবরের কাগজের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প।

আহর্সির শুরুর গল্পটা বলুন। 

ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল দেশের বাইরে বাংলাদেশের পণ্য উপস্থাপন করার। এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে আমি ঠিক করি, বিজনেস করব। টিফিন, রিকশা ভাড়া, ঈদের সালামির জমানো টাকা দিয়ে প্রথমে শুরু করি। আমি চাচ্ছিলাম এমন কিছু করতে, বাজারে কারোর কাছে থাকবে না, ইউনিক হবে, আমার নিজস্ব পণ্য হবে। আমার আঁকাআঁকির ও ছবি তোলার গুণকে কাজে লাগিয়ে কাঠের গহনা নিয়ে কাজ শুরু করি। এসএসসি পরীক্ষার পরে পুরোদমে কাজ করি। স্কুলের বান্ধবী ও আপুরা অর্ডার করতেন, প্রশংসা করতেন। ফেসবুক গ্রুপগুলোতে পোস্ট করতাম। এর পর কোভিড মহামারি আসে। আমি তখন পুরো ঘরে বসা। সময় নষ্ট না করে কাঠের গহনা বানানোর কাজেই সম্পূর্ণ সময় দিলাম। সেপ্টেম্বরে প্রথম মালয়েশিয়া থেকে অর্ডার আসে কাঠের কাস্টমাইজড পণ্যের। ডিসেম্বরে এসে আমি আমার ডিজাইন করা শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করি। শুরু থেকেই ভালো রেসপন্স ছিল। কোয়ালিটির সঙ্গে কখনো আপস করিনি আর দামও রিজনেবল রেখেছি সবসময়।

বর্তমানে কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

বর্তমানে আহর্সিতে আমার ডিজাইন করা ব্লক ও অ্যামব্রয়ডারির শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউস পিস, কাঠের গহনা, কামিজ সেট, পাঞ্জাবি, বেবি স্টিচড শাড়ি, ফ্রক ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া বাচ্চাদের কামিজ কাস্টমাইজড করে নেওয়ারও সুযোগ আছে।

আহর্সি নামকরণের কারণ?

আমি চাচ্ছিলাম একটু ইউনিক নাম দিতে, যার অর্থটাও সুন্দর হবে। আহর্সি অর্থ রাজা। আমি বিশ্বাস করি, একদিন আহর্সি দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডের মধ্যে রাজত্ব করবে।

উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কোন ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল?

আমি আত্মনির্ভর হতে চাই, নিজে কিছু  করতে চাই- এ থেকে শুরু। আমি ছোট থেকে দেখেছি আমার নানি তার সংসার সামলানোর পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে শিক্ষকতাও করেছেন। আমার মা-ও সকালে উঠে বাসার কাজ গুছিয়ে চাকরি করতে যেতেন। চাকরি করা আমার পছন্দ নয়। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করি। উদ্যোক্তা জীবনে ঝুঁকি থাকলেও আমিই আমার বস। এখানে স্বাধীনতা আছে।

পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন?

শুরুতে তারা একদমই বিজনেস করাটা পছন্দ করতেন না। কিন্তু এখন অনেক সাপোর্ট দিচ্ছেন।

এখন কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে নিয়মিত অর্ডার আসছে। ক্রেতারাও পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট।

আহর্সি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

দেশের বাইরে আরও বিস্তৃত পরিসরে পণ্য বিক্রি করা আর আহর্সির একটি আউটলেট দেওয়া। এর পর আস্তে আস্তে সারা দেশে আহর্সির আউটলেট করা। 

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবেশ কতটুকু অনুকূল বলে মনে করেন?

শুরুর দিকে তো সবাই নিরুৎসাহিত করতেন, কটু কথা বলতেন। তাদের নেতিবাচক কথাকে আমি শক্তি হিসেবে নিয়েছি। আজ তারাই আসেন, বিজনেস কীভাবে শুরু করবেন সেই পরামর্শ নিতে। 

যারা নতুন উদ্যোক্তা বা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে ইচ্ছুক, তাদের কোনো পরামর্শ দিতে চান?

শুরু করাটাই মূল। তার থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। লেগে থাকলে সফলতা আসবে। অনেক চড়াই-উতরাই এলেও হার মানা যাবে না। 

জাহ্নবী

 

ড. ফেরদৌসী কাদরী ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ঝুলিতে

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পিএম
ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর ঝুলিতে
ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার গ্রহণ করছেন ড. ফেরদৌসী কাদরী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী; যিনি ২০২১ সালে এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসাই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এবার তিনি ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন। কলেরা, টাইফয়েড এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) সুলভ মূল্যের টিকা উদ্ভাবনে অবদান রাখার জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

তিনি কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে টিকা সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের হো গুওম অপেরা হাউসে ভিনফিউচারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি ভিনফিউচার ২০২৪ স্পেশাল পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ভিনফিউচার পুরস্কার দুটি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়। একটি গ্র্যান্ড প্রাইজ, আরেকটি স্পেশাল প্রাইজ। এ বছর ভিনফিউচার পুরস্কারের বিষয়বস্তু ছিল রিজিলিয়েন্ট রিবাউন্ড বা অদম্যের ঘুরে দাঁড়ানো। ফেরদৌসী কাদরীর কাজে এ বিষয়টি ফুটে উঠেছে। বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশের প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এ বছর।

পুরস্কার গ্রহণের সময় ফেরদৌসী কাদরী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবন বিভাগে ভিনফিউচার পুরস্কার পাওয়ায় আমি গভীরভাবে সম্মানিত বোধ করছি। চার দশক ধরে আমি সংক্রামক রোগ, বিশেষ করে কলেরা, টাইফয়েড এবং এইচপিভির টিকা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য সুলভমূল্যে উদ্ভাবনের কাজে মনোনিবেশ করেছি। শিশু ও নারীদের জন্য এটা বিশেষভাবে কাজে লেগেছে।’

১৯৫১ সালের ৩১ মার্চ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন ফেরদৌসী কাদরী। তিনি তার অবদানের জন্য আরও কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিক রোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি থেকে গোল্ড মেডেল পান। ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির বার্ষিক সি এন রাও পুরস্কার পান, যেটা নিউ মেক্সিকোর শহর টাওস থেকে দেওয়া হয়। একই বছর তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারও দেওয়া হয়। তার বৈজ্ঞানিক সাফল্য বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য যেমন উপকারের, তেমনি গর্বের।

জাহ্নবী

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ এএম
প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি সহায়তা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রধান সরকারি সহায়তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সহায়তা হলো:

প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান করে থাকে। এটি মূলত অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী নারীদের মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য নির্ধারিত কিছু শর্ত থাকে, যেমন: বয়সসীমা, আর্থিক অবস্থার মানদণ্ড, প্রতিবন্ধীতার ধরন ইত্যাদি।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়তা

বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের শিক্ষা সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করেছে। বিশেষ স্কুল, সহায়ক প্রযুক্তি, শিক্ষা উপকরণ প্রদান এবং বিশেষ শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি প্রদান করা হয়, যাতে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

কর্মসংস্থান সুযোগ

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। যেমন:

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করছে।

প্রতিবন্ধী কর্মীদের জন্য কোটা

সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষিত আছে, যাতে তারা সহজে সরকারি চাকরির সুযোগ পেতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয়। এসব স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, এবং অন্যান্য সহায়ক সেবা অন্তর্ভুক্ত।

আইনি সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করেছে, যাতে তারা তাদের অধিকার এবং সুরক্ষা পায়। বিশেষভাবে, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা আইন এবং প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন কার্যকর রয়েছে।

প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রকল্প

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে খাদ্য সহায়তা, বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত।

বিশেষ সহায়ক প্রযুক্তি

সরকার প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি সরঞ্জাম প্রদান করে থাকে, যেমন ব্রেইল পুস্তক, হিয়ারিং এডস, হুইলচেয়ার ইত্যাদি, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করে।

এনজিও এবং দাতা সংস্থার সহায়তা

সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং দাতা সংস্থাও প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সহায়ক প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে, যা সরকারের সহযোগিতায় বা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়।

এছাড়া, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে, যাতে তাদের সামাজিক অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো সব মিলিয়ে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য একটি নিরাপদ, উন্নত এবং আত্মনির্ভরশীল জীবন নিশ্চিত করতে সহায়ক।

জাহ্নবী

নারীরা যেসব ভার্চুয়াল হ্যারেসমেন্টের শিকার হয়ে থাকেন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ পিএম
নারীরা যেসব ভার্চুয়াল হ্যারেসমেন্টের শিকার হয়ে থাকেন
ছবি: সংগৃহীত

নারীরা বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল হ্যারেসমেন্টের শিকার হয়ে থাকেন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি সাধারণ ধরনের হ্যারেসমেন্ট নিম্নরূপ:

অনলাইন স্টকিং

অনেক নারী সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে stalked (অনলাইনে অনুসরণ) হন। stalkers তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনুসন্ধান করে, তাদের ছবি বা পোস্টে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করেন বা তাদের জীবনে নাক গলানোর চেষ্টা করেন।

সাইবার বুলিং

এটি মানসিক নির্যাতন বা অপমানজনক মন্তব্যের মাধ্যমে ঘটে। অশালীন বা আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণ নারীদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তামাশা, হিংসা বা অপবাদ দেয়া হয়।

সেক্সটিং

অনলাইনে সেক্সটিং বা অশ্লীল ছবি বা ভিডিও পাঠানো একটি গুরুতর সমস্যা। এটি তাদের ব্যক্তিগত জীবনকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে।

নগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রচার

কখনও কখনও নারীদের অশ্লীল ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফিশিং ও স্ক্যাম

নারীদের লক্ষ্য করে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের ফিশিং স্ক্যাম চালায়। এতে তারা নারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে, যা পরে তাদের বিরুদ্ধে অপব্যবহার হতে পারে।

অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং

নারীদের সোশ্যাল মিডিয়া বা ইমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা এবং সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানি করা বা অপবাদ ছড়ানো হয়।

হেট স্পিচ

নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বৈষম্যমূলক ভাষা ব্যবহার করে হেট স্পিচ করা হয়, যা তাদের মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই ধরনের ভার্চুয়াল হ্যারেসমেন্টের শিকার হওয়া নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে এই ধরনের হ্যারেসমেন্ট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

জাহ্নবী

 

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });